তোমাতেই বিমোহিত পর্ব -০৭+৮

#তেমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ৭(সারপ্রাইজ পর্ব)
#লেখিকা আরোহি জান্নাত(ছদ্মনাম)

“তুমি কোথায় আছো রাফসান? আমি তোমাকে কত খুজেছি জানো?”

চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ইহান।

“আমি এত দিন জেলে ছিলাম মি. ইহান।”

ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠল রাফসান নামের এক যুবক।

রাফসানের কথায় অবাক হয়ে গেল ইহান।

“এসব তুমি কি বলছ? তুমি জেলে ছিলে কিন্তু কেন?”(ইহান)

“কাউকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। এটায় আমার অপরাধ মি. ইহান।আর আমি জেলে ছিলাম না।এখন ও আছি।অনেক কষ্ট করে আপনার নম্বর জোগাড় করেছি। একজন কে ঘুস দিয়ে ফোনের ব্যবস্থা করেছি।আমি তার সাথে একবার কথা বলতে চায় মি. ইহান। শুধু একবার।তিন বছরের জেল হয়েছে আমার।কেবল ১বছর এর একটু বেশি সময় পার হলো এখন ও অনেকটা দিন বাকি।আমাকে একবার তার সাথে কথা বলিয়ে দেবেন মি. ইহান।প্লিজ?”

নিশ্চুপ রইল ইহান।কি বলবে সে।

“আমি যে তোমার আমানতের হেফাজত করতে পারিনি রাফসান।আমি তো তাকে সারাজীবন মতো হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু সে কথা তোমাকে কি করে বলব আমি।”

কথা গুলো মনে মনে ভাবল ইহান।

” আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই রাফসান।তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে। এখন কিছু বলব না। শুধু একটা কথা জেনে রাখো আল্লাহ কারো কাছ থেকে কিছু কেড়ে নিলে তাকে আবার কিছু না কিছু দেয়। তোমার ক্ষেত্রে ও একই ঘটনা ঘটেছে।”

নিশ্চুপ রইল রাফসান। ইহান কি বলতে চাইল ঠিক বুঝতে পারল না রাফসান।কিন্তু সে কোন জেলে আছে সেটা জানালো ইহান কে।

ফোন কেটে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইহান।

সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরল ইহান।অন্য দিনের মতে আজ ও লতা বেগম দরজা খুলে দিলেন।ইহান চুপচাপ নিজের ঘরে গেল। সে জানত আরোহি ঘরে থাকবে না।হলো ও তাই। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে গেল ইহান। বাড়িটা বড্ড নিশ্চুপ লাগছে।লতা বেগমকে পানি দিতে বলল সে।লতা বেগম পানি নিয়ে আসলে তাকে জিজ্ঞেস করল,

“বাড়িতে কেউ নেই ফুফু?”

“না ইহান বাবা।সবাই ও বাড়িতে গেছে মানে আরোহি বউমাদের বাড়ি। তুমি ফিরলে তোমাকে ও যেতে বলেছে।”

বললেন লতা বেগম।

“কেন ফুফু কোনো সমস্যা হয়নি তো? “(ইহান)

“আরে না না।কোনো সমস্যা হয়নি। আসলে তোমার খালামনি মানে তোমার শ্বাশুড়ি আজ সকলকে রাতের খাবারের জন্য দাওয়াত দিয়েছে তাই। তুমি ও চলে যেও।আমি এতক্ষণ তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।আমি এবার বাড়িতে ফিরব ইহান বাবা।”( লতা বেগম)

” আচ্ছা ফুফু তুমি যাও। আমি একটু পরে যাবো।”(ইহান)

আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল লতা বেগম। আর লতা বেগম চলে যাওয়ার একটু পর ইহান রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল আরোহিদের বাড়ির উদ্দেশ্য।

ইহান কে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন আতশি বেগম। বোনের ছেলে হিসেবে যখন ইহান আসত তখন ও কোনো যত্নের ত্রুটি করতেন না আতশি বেগম। আর আজ তো ইহান তার জামাই। কোনো রকম যত্নের অভাব রাখছেন না তিনি।আরোহি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তার মায়ের কাজ আর তাচ্ছিল্য হাসছে।

ইহান যাওয়ার পরপরই রাতের খাবারের ব্যাবস্থা করেন আতশি বেগম। কিন্তু বিপত্তি বাধে খাওয়া শেষে বাড়ি ফেরার সময়। আতশি বেগম আর আজমল সাহেব কিছুতেই কাউকে বাড়ি ফিরতে দেবেন না।তাদের অনুরোধ আজ রাতে সবাইকে একসাথে এ বাড়িতে থাকতে হবে। তবে ইহান এর বাবা মা থাকতে চাচ্ছিলেন না।অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো আরোহি আয়ান আর ইহান আজ আতশি বেগমদের বাড়ি থাকবেন আর ইহানের বাবা মা বাড়িতে ফিরে যাবেন।

নিজের ঘরে বসে আছে আরোহি।আয়ান ঘুমাচ্ছে কিন্তু আরোহি গভীর চিন্তায় মগ্ন। আরোহির ঘরে একটা সিঙ্গেল সোফা আর সেখানে সারা রাত একটা মানুষ কিভাবে থাকবে সেটাই ভাবছে আরোহি। ইহানের সাথে বেড সেয়ার আরোহি কখনোই করবে না।কিন্তু থাকবে কোথায়? সেটাই ভাবছে আরোহি।

তখনই ঘরে ঢোকে ইহান। আরোহিকে চিন্তা করতে দেখে হালকা কাশে।ইহানের কাশির শব্দে ধ্যান ভাঙে আরোহির। তবে চমকে যায় ইহানের হাতে চাবি দেখে।এই চাবিটা আরোহিদের গেস্ট রুমের চাবি।কিন্তু ইহান এর কাছে কেন ভাবতে লাগে আরোহি।

ইহান আরোহির দিকে কিছুক্ষন দেখে বলে ওঠে,

” আমি রাতে গেস্ট রুমে ঘুমাবো। আসছি।”

আরোহি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইহানের দিকে। মনে মনে বলে ওঠে,

“এই লোকটা এত অদ্ভুত কেন।কেন সব সময় আমার সমস্যার কথা বুঝে যান আপনি।কিন্তু আফসোস যখন আমার মনের কথা বোঝা খুব দরকার ছিল তখন আপনি বুঝলেন না ইহান।”

কথাগুলো বলেই শুয়ে পড়ল আরোহি। ওই স্বার্থপর, রাগি জেদি মানুষটার কথা আর ভাবনে না আরোহি।

গেস্ট রুমে এসে শুয়ে পড়ে ইহান।চাবি নিতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে ইহানকে।আতশি বেগমকে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল ইহান কাল রাফসানকে কি বলবে।কি করে রাফসানকে জানাবে মায়া আর পৃথিবীতে নেয়।আর যখন তার থেকে ও বড় সত্যি টা রাফসান জানবে তখন কি রিয়াকশন হবে রাফসানের। এসব ভাবছে ইহান তখনই মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা যেদিন ইহানের বিয়ের দিন ছিল, যেদিন ইহানের বাসর রাত ছিল।

অতীত,

আরোহির সাথে কথা বলে নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছিল ইহানের। ওই দিকে আরশি বেগম বারবার ফোন দিচ্ছিলো ইহানকে বাড়ি ফেরার জন্য। অবশেষে ইহান সিদ্ধান্ত নিলো বাড়ি ফিরে মায়া বলে মেয়েটার সাথে কথা বলবে । তাকে কখন ও মেনে নিতে পারবে না এটা ও জানিয়ে দেবে।এতে হয়তো মায়ার সাথে অন্যায় করা হবে তবে তার থেকে বেশি অন্যায় হবে মায়াকে ধোয়াসার মধ্যে রাখলে।

১২ টার পর নিজের ঘরে ঢুকল ইহান। মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কি হবে সেটা ভাবতে ও ভয় করছে কিন্তু ঘরে ঢুকেই ইহান অবাক হয়ে গেল।মায়া খাটে বসে কাঁদছে। ইহানকে দেখেই দৌড়ে গেল মায়া। ইহানের পা জড়িয়ে কাঁদতে লাগল।মায়ার এমন কান্ডে হতভম্ব হয়ে গেল ইহান। কি করবে, কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না।কোনো রকম মায়াকে তুলে দাড় করায় ইহান।কিছু বলার আগেই মায়া বলে ওঠে,

“আমাকে দয়া করুন। আমাকে ছোবেন না আমি আপনার বউ নই।”

মায়ার এমন কথায় ভ্রু কুচকে গেল ইহানের। মায়াকে শান্ত করে বসাল তারপর বলল,

“আপনি চিন্তা করবেন না।আমি আপনাকে স্পর্শ করব না।তার আগে এটা বলুন তো আপনি কেন বললেন আপনি আমার বউ নন।”

মায়া চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না।কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,

“মাস খানেক আগে আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করেছি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে। আমার বাবা আর ভাই আমাকে খুঁজে বের করে চার দিন আগে।আমাকে জোর করে নিয়ে আসে বাড়িতে। আজকে আপনাকে বাধ্য করে বিয়ে করতে কিন্তু আমাদের বিয়েটা বৈধ না আমার আর রাফসানের ছাড়াছাড়ি হয় নি।তাহলে কি করে আমি আপনার বউ হই বলুন।আমি এই বিয়েটা করতে চায় নি।কিন্তু আমার ভাই রাফসানকে মেরে ফেলত যদি আমি রাজি না হতাম। আমাকে এমনটাই বলেছে।আপনি দয়া করে আমার সাথে খারাপ কিছু করবেন না।আমাকে রাফসানের কাছে যেতে দিন।”

বলেই আবার কান্না করতে লাগল মায়া।

“আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে রাফসান বলে ওই ছেলেটা মানে আপনার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেব। আসলে আমি ও একজনকে খুব ভালোবাসি।আর তার ওপর রাগ করেই আপনাকে বিয়ে করেছি।এতক্ষণ খুব অপরাধ বোধে ভুগছিলাম যে আপনাকে বিয়ে করে আপনাকে ঠকালাম না তো কিন্তু এখন আপনার কথা শুনে আমি নিজে ও স্বস্তি পাচ্ছি। আচ্ছা আপনার স্বামীর নম্বর জানেন আপনি? কথা বলবেন তার সাথে?”

মায়ার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো ইহানের কথায়।মায়ার কাছ থেকে নম্বর নিয়ে রাফসানকে ফোন করল ইহান।মায়া আর ইহান রাফসানকে সবটা বুঝিয়ে বলল।ইহান আসতে বলল রাফসানকে। রাফসান এলে মায়াকে রাফসানের হাতে তুলে দেবে এমনটা ওয়াদা করল ইহান।আর ভাবল মায়া রাফসানের বিষয় টা সমাধান করে আরোহির কাছে ক্ষমা চাইবে ইহান।কিন্তু রাফসান পরের দিন এলো না।সারাদিন মায়া আর ইহান অপেক্ষায় ছিল এই বুঝি রাফসান এলো।কিন্তু রাফসান আসেনি।মায়া আশায় ছিল রাফসান আসবে কিন্তু সে আশা পুরোন হয় নি।দুই দিন কেটে গেল। ইহান সিদ্ধান্ত নিলো মায়াকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবে। কারণ ধর্মীয় মতে মায়া ইহানের বিয়ে হয়নি।এক স্বামী থাকতে আর একজনকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।আর এভাবে অন্য একটা মেয়ের সাথে এক ঘরে থাকা ও ইহানের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই চাকরির বাহানা দিয়ে বাড়ি থেকে দূরে চলে এলো ইহান।সিদ্ধান্ত নিলো রাফসান যেদিন ফিরবে সেদিনই মায়াকে তার হাতে তুলে দেবে।কারন মায়ার বাবা আর ভাই এর কাছে ফিরে যাওয়া সম্ভব ছিল না।এর মধ্যে ইহান অনেকবার আরোহির সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু পারে নি।আরোহি বলে নি।অনেক বার আরোহিদের বাড়িতে গিয়েছে ইহান কিন্তু আরোহি ইহানের সামনে আসেনি।

এভাবে কেটে যায় এক মাস।মায়া নিজের মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে। তাই ডাক্তারের কাছে যায় সে আর গিয়ে জানতে পারে সে মা হতে চলেছে। মায়া খুব ভালো করে জানে এই সন্তান রাফসানের। কারন ইহান আর মায়ার মধ্যে এমন কোনো সম্পর্ক হয়নি।মায়া ইহানকে জানায় নিজের প্রগনেন্সির বিষয়টা।এমন একটা খবর শুনে ইহান কি করবে বুঝতে পারে না।আর না পারে কিছু করতে কারন তার আগেই ইহানের বাবা মা জেনে যায় মায়া প্রেগনেন্ট।

মায়া যে হসপিটালে টেস্ট করাতে যায় সেখানে ইহানের বাবার বন্ধু চাকরি করেন। আর তিনিই ইহানের বাবকে জানিয়ে দেয়।আর বাকিরা ও ব্যাপার টা জেনে যায়।ইহান বাধ্য হয়ে বলে সে এই সন্তানের বাবা।না হলে মায়ার চরিত্রে দাগ লাগত। তবে সব কিছু ঠিক হলেও ইহান আরোহির কাছে কঠিন অপরাধী হয়ে গেল। আর সেটাও সারাজীবন এর জন্য। সেই ঘটনার পর থেকে ইহান আর আরোহির সামনে যেতো না।ভাগ্য ভেবে মেনে নিয়েছিল সব।তবে আয়ানের জন্মের সময় মায়া মারা গেল।আর মৃত্যুর সময় আরোহির হাতে আয়ানকে তুলে দিল।আরোহিকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিল সে যেন কোনো মতে আয়ানকে নিজের কাছ ছাড়া না করে।

অতীতের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল ইহান।কালকে সে মুখোমুখি হবে রাফসান এর।#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ৮
#লেখিকা আরোহি জান্নাত( ছদ্মনাম)

শুরু হলো একটা নতুন দিন। একটা নতুন সকাল।আরোহিদের বাড়ি থেকে একটু আগেই নিজের বাড়িতে ফিরেছে ইহান।আতশি বেগম না খাইয়ে ছাড়েন নি ইহানকে।তবে ইহান একা ফিরেছে।আরোহি আর আয়ান পরে ফিরবে।ইহান ও কিছু বলতে পারেনি।কি বা বলবে! আরোহি তো কথাই বলে না ইহানের সাথে। একটা মানুষের সাথে থাকতে গেলে যতটুকু কথা না বললে নয় ততটুকুই কথা বলে আরোহি। ইহান ও জোর করে কথা বলার চেষ্টা করে না।ভাবে আরোহি যদি এতেই খুশি থাকে তাহলে থাকুক।মেয়েটা কে চোখের সামনে ই দেখতে পায়। এটাই অনেক।

আজ অফিসে যাওয়ার আগে রাফসানের সাথে দেখা করবে।কিভাবে সবটা বলবে সেটা ভেবেই অস্থির হয়ে যাচ্ছে ইহান।
_______________________
জেলের মধ্যে মুখোমুখি বসে আছে ইহান আর রাফসান।রাফসান এর চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।

একটু আগে ইহানের কাছ থেকে সব সত্যি শুনেছে সে।তার মায়া আর এ পৃথিবীতে নেয়,একথা শুনেই রাফসান এর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় মনে হচ্ছে রাফসানের। আজ সে এক সন্তানের বাবা। অথচ একটু আগে অবদি এ কথা জানতো না সে।নিজের সন্তান কে একবারের জন্য চোখে ও দেখতে পেল না।আর পরিচয় তো অনেক দূর।

সেদিন রাতে ইহান আর মায়ার সাথে কথা হয় রাফসানের। রাফসান পরের দিনই ইহানদের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরের দিন ভোর বেলায় মায়ার ভাই পুলিশ নিয়ে হাজির হয় রাফসানের বাড়ি।মিথ্যা কেস দিয়ে জেলে পাঠায়।আর সেটার মেয়াদ ৩ বছর । মায়ার ভাই মুহিব এর থেকে ও বেশি দিন রাফসান কে জেলে রাখার পরিকল্পনা করে কিন্তু পারে না।মুহিব ভেবেছিল তিন বছর রাফসান জেলে থাকলে মায়া তাকে ভুলে যাবে।আর তাই এমনটা করে সে।

বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে ইহান বলে ওঠে,

“কালকে তোমার জামিন হয়ে যাবে রাফসান।আমি উকিল এর সাথে কথা বলেছি।তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?”

“আপনি সত্যি আমার জামিন করাবেন মি. ইহান?”

অবাক হয়ে বলে ওঠে রাফসান।

“হুম।”(ইহান)

“আমাকে একবার আমার ছেলেকে দেখাবেন মি.ইহান।”

আবেগ জড়িত কন্ঠে বলে ওঠে রাফসান।সাথে নিজের ছেলেকে দেখার আকুতি।

“অবশ্যই। কালকেই তোমাকে নিয়ে যাবো আয়ানের কাছে।”

কৃতজ্ঞতার হাসি হাসল রাফসান ইহান এর এর কথা শুনে।
___________
আজ অনেক দিন পরে নিজেকে বেঝা মুক্ত মনে হচ্ছে ইহানের। রাফসানকে সবটা জানাতে পেরে শান্তি লাগছে। সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে আজ আগে নিজের মায়ের ঘরে গেল ইহান। উদ্দেশ্য আগে আয়ানকে কোলে নিয়ে আদর করবে। ছেলেটা এতদিন পর নিজের আসল বাবাকে দেখতে পারবে ভাবতেই ইহানের ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটে উঠল। তবে নিজের মায়ের ঘরে গিয়ে হতাস হলো ইহান।অন্য দিন আরোহি আর আয়ান তার মা এর ঘরে থাকলেও আজ নেই। তবে কি ইহানের ঘরে ওরা।আরোহি কি একটু একটু করে ঘরটাকে আপন করে নিচ্ছে। তবে কি এক সময় ইহানকে ও আপন করে নেবে।এরকম হাজার জল্পনা কল্পনা করে নিজের ঘরে গেল ইহান। তবে আবার ও হতাস হলো। আরোহি নেই। তবে কি ঐ বাড়ি থেকে ফেরে নি ওরা।চিন্তা করতে করতে ফ্রেশ হয়ে নিলো ইহান।যদি ওরা না ফিরে থাকে তাহলে ওদের কে আনতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ও নিয়ে নিলো ইহান।

ড্রয়িং রুমে বসে আছেন ইহানের মা।ইহান ও পাশে বসে আছে।একটু আগে মায়ের কাছ থেকে শুনেছে ইহানের ধারণাই ঠিক।আরোহি আর আয়ান ফেরে নি ও বাড়ি থেকে। ইহানের ইচ্ছা করছে এক ছুটে গিয়ে আরোহি আর আয়ান কে নিয়ে আসতে কিন্তু মায়ের সামনে সেটা প্রকাশ করতে ইতঃস্তত করছে ইহান।
আরশি বেগম অনেকক্ষণ ধরে দেখছেন ইহান ছটফট করছে কিছু একটা বলার জন্য তবে বলতে পারছে না। ইহান কি বলতে চাইছে সেটা ও ভালো করে বুঝতে পারছেন তিনি। মুখ টিপে হাসলেন ছেলের এমন অদ্ভুত কান্ডে।আবার মনে মনে খুশি ও হলেন। তার ছেলে আর আরোহি যে স্বাভাবিক হচ্ছে। চর পাঁচজন স্বামী স্ত্রী এর মতো একে অপরকে সব সময় পাশে রাখতে চায়ছে।

“কিছু বলবি ইহান?”

আরশি বেগম স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করল ইহানকে।মায়ের প্রশ্নে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেল ইহান। মুখ ফুটে যখনই ও বাড়িতে যেতে চাই বলতে যাবে তখনই খেয়াল করল তার মা মুখ টিপে হাসছেন। বিষয়টি বুঝতে সময় লাগল না ইহানের। এখন যদি মায়ের সামনে ও বাড়ি যাওয়ার কথা বলে তাহলে সেটা ইহানের জন্য খুবই অপ্রস্তুত একটা বিষয় হবে।সবটা বুঝে ভদ্র ছেলের মতো বলল,

“না মা কিছু না।কেনো বলো তো?”

ছেলের কথায় আর কিছু বললেন না আতশি বেগম। তার ছেলেকে যে এত সহজে অপ্রস্তুত করা যাবে না সেটা ও বুঝতে পারলেন।তাই নিজে থেকে বলে উঠলেন,

“ওরা তো ও বাড়িতে আছে। তোর খালামনি আসতে দেয় নি।তুই এক কাজ কর।ওদের কে গিয়ে নিয়ে আয়।”

মা এর কথাটা যেন গায়ে মাখল না ইহান। গা ছাড়া ভাব দিয়ে বলল,

“একটু পরে গিয়ে নিয়ে আসব, ঠিক আছে! ”

আরশি বেগম আর কথা বাড়ালেন না। টিভির দিকে মনোযোগ দিলেন।

আরোহিদের বাড়িতে এসেছে ইহান। আতশি বেগম আজ ও আপ্যায়ন এর কোনো ত্রুটি রাখলেন না। রাতের খাবার খেয়ে ও বাড়ি থেকে বের হলো আরোহি, আয়ান আর ইহান। কিন্তু মাঝপথে দেখা মিলল সেই ছেলের যে সকল এর সামনে আরোহি কে অপমান করেছিল।এমন কি আরোহিকে পতিতা-দের সাথে তুলনা করেছিল।তবে আজ আরোহিকে দেখেই ছেলেটি দৃষ্টি নামিয়ে রাখল। বারবার ঢোক গিলছে সে।কেমন যেন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরোহি একটু অবাক হলো কিন্তু কিছু বলল না।চুপচাপ ইহানের
সাথে বাড়ি ফিরে গেল।

রোজকার মতো আজ ও ইহানের সাথে কোনো কথা বলল না আরোহি। চুপচাপ ঘরে এসে শুয়ে পড়ল। ইহান ও সোফায় শুয়ে পড়ল কোনো কথা না বলে।

তবে একটু বাদেই ইহান ঘর থেকে বের হয়ে গেল। এটা খেয়াল করল আরোহি। টি টেবিলের উপর তাকিয়ে দেখল ঘরে পানি আছে তাহলে কোথায় গেল ইহান। প্রশ্ন জাগল আরোহির মনে। আয়ান ঘুমাচ্ছে তাই আস্তে করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো আরোহি। তবে মেইন দরজা খোলা দেখে আরো বেশি অবাক হয়ে গেল। ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো আরোহি। বাড়ি থেকে কিছু দূরে ইহান দাঁড়িয়ে আছে। তবে তার পায়ের কাছে কেউ একজন।কিছু টা এগিয়ে গেল আরোহি। আড়ালে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করল কি হচ্ছে এখানে।তবে ইহান এর পায়ের কাছে ঐ ছেলেটাকে দেখে অবাক হলো।এ তো সেই ছেলেটা যে আরোহি কে অপমান করেছিল। ভালো করে শুনতে চাইল আরোহি। এই ছেলেটির সাথে ইহান কি কথা বলছে। শুনতে পেল,

“ভাই বিশ্বাস করেন আমি আজ ভাবির দিকে বাজে নজরে দেখি নি।সেই দিন আপনি যে মার মেরেছেন আমার পুরো ২৭ হাজার টাকা ডক্টর খরচে চলে গেছে। শুধু ভাবি কেনো আমি এখন কোনো মেয়ের দিকেই তাকায় না বিশ্বাস করেন।আমাকে ছেড়ে দিন ভাই। এবার থেকে কখোনো ভাবিকে দেখলে সাথে সাথে চোখ বুজে নেব আমি, কিন্তু আমাকে আর মারবেন না।”

কাদোঁ কাঁদো স্বরে বলে উঠল ছেলেটি।

“আমি জানি আজ তুই আরোহির দিকে খারাপ নজরে দেখিস নি।কিন্তু তোকে আমি ঠিক বিশ্বাস করি না রে রাজ! তাই তুই কালকে সকালেই এই শহর ছেড়ে চলে যাবি।না হলে কি হবে সেটা তো তুই জানিসই ”

বাঁকা হেসে বলল ইহান।

“ঠিক আছে ভাই। তাই হবে। আমি কালকেই চলে যাবো আপনি শুধু আমাকে আর মারবেন না।”

বলল রাজ নামের ছেলেটি।

“হুম।তুই যা এখন।আর আমাদের মধ্যে যা কথা হয়েছে সেটা যেন কেউ না জানে।এই কথাগুলো বলতেই তোকে ডেকেছিলাম।”

“আচ্ছা ভাই। যায় তাহলে।”

বলে চলে যেতে যাচ্ছিল রাজ নামের ছেলেটি। তবে তার আগে ইহান ওকে আটকালো। কিছু টাকা দিয়ে বলল,

“এখানে ২০ হাজার টাকা আছে।জানি তোর আরো বেশি খরচ হয়েছে কিন্তু ওটা তোর শাস্তি। আসলে আরোহির সাথে ঘটা ঘটনা টা শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছিল। তাই রাগের মাথায় তোকে ওভাবে মেরেছিলাম।তবে এটা ভাবিস না আমি অনুতপ্ত।আমি যেটা করেছি একদম ঠিক করেছি আর ভবিষ্যতে প্রোয়োজনে আবার ও করব।”

শেষের কথাটা বেশ শাসিয়ে বলল ইহান।

ইহানের কথা শুনে আবার ও ভয় পেয়ে গেল রাজ।কোনো রকম টাকাটা নিয়ে এক প্রকার পালিয়ে গেল।

রাজ চলে যাওয়ার পর ইহান ও ফিরে এলো।ইহানকে ফিরতে দেখে আরোহি ও তারাতাড়ি বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে আরোহি।একটু আগে কি শুনল ও।ইহান ছেলেটাকে ওর জন্য মেরেছে।ভাবতেই মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করতে লাগল আরোহীর। তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না।পরক্ষনেই মনে পড়ে গেল মায়ার কথা।এই মেয়েটা ইহানের জীবনে সব।আরোহি কিচ্ছু না।মায়া ইহানের সন্তানের মা হয়েছে। ইহান যেটা করেছে শুধু কর্তব্য আর কিছু না।এসব নিজেকে বোঝাতে বোঝাতে ঘুমে তলিয়ে গেল আরোহি।

চলবে,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here