তোমাতে,পর্ব:৪+৫

#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ৪/

জিসান ভাই টেবিলে সজোরে বারি দেন কয়েকবার। আত্মা কেঁপে উঠে। ধ্যান ভেঙে ধরফরিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াই।

“এগুলো কার লেখা?”

“কোনগুলো?”

তিনি খাতা বাড়িয়ে দেন। নিসার লেখা এবড়োখেবড়ো লেখাগুলো খাতায় যেন জ্বলজ্বল করছে। ছিঃ কি বিশ্রী লাগছে দেখতে। ঢোক গিলি, বলি, “কেন আমার বাড়ির কাজ লেখাও আমারই হবে।”

তিনি সন্দিহান চোখে তাকান। উনার ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত হয়েও স্বাভাবিক হয়ে যায়। পেজগুলো উল্টে যেতে থাকেন এক নাগারে। একসময় হাত থামান, বলেন, “তো এটা কার?”

“এটাও আমার!”

“দুই ধরনের লেখা লিখতে পারিস দেখি।”

দাঁতালো হাসি, “ঐ তাড়াতাড়ি আর আস্তে লিখতে গেলে লেখার ধরন পালটে যায়।”

তিনি সুবোধ বালকের মতো মাথা নাড়েন। পেজ উলটে সাদা পৃষ্ঠা বের করেন। বলেন, “নে এখানে আমাকে তোর দুধরনের লেখা লিখে দেখা তো।”

এবার হাসিটা মিলিয়ে গেল। ভয়, আর পরবর্তীর উত্তেজনায় আড়চোখে একবার দরজার দিকে তাকালাম। আরেকবার উনার দিকে। তিনি স্বাভাবিক মুখভঙ্গিতে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেন। চোখের ইশারায় আবার তাগাদা দেন। দাঁড়িয়ে থেকেই কুজো হয়ে খাতা টেনে নিলাম। তিনি দুহাতের ওপর মাথাটা রেখে সটান আরেকটু হেলে বসেন। চোখ বন্ধ করেন। বলেন, “বোস, বসে লিখ।”

নিজের লেখা তো লিখলামই কিন্তু নিসার হাতের লেখা এত চেষ্টা করি তবু লিখতে পারি না। ভয়ে ভয়ে উনার দিকে একবার তাকালাম। বুক এত জোড়ে ধুকধুক করছে মন চাইছে এখুনি দৌড় লাগাই। তিনি একসময় চোখ খুলে সরাসরি আমার দিকে তাকালেন। নিশব্দে খাতাটা টেনে নিলেন। একবার খাতায় চোখ বুলিয়ে শান্তচোখে তাকান আমার দিকে। বলেন, “ভাল করে জিজ্ঞেস করছি লেখাটা কার? শুধু বল তোর না অন্য কারো আমি কিচ্ছু বলব না তোকে!”

আমতা আমতা করে বলি, “আমার বান্ধবীর।”

তিনি তাকিয়ে থাকেন শান্ত দৃষ্টিতে। এই নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশেও আমি ঘামতে থাকি। বিভ্রান্ত, অসহায় বোধ করি। মাথা নিচু করে ফ্লোরে নখ খুটতে থাকি। তিনি একসময় বলেন, “তোর কোন এইম নেই ঝুম?”

মাথা তুলে তাকাই, তিনি ক্লান্ত সপ্রশ্ন চোখে তাকিয়ে। উত্তর দিতে পারলাম না।

“তুই যে হারে কোচিং বাঙ্ক দিচ্ছিস, পড়া ফাঁকি দিচ্ছিস তাতে তুই এবারও ফেল করবি। সেকেন্ড ইয়ারে উঠেই পাংকু হয়ে গেছিস। এখন যদি পড়াশোনার এই অবস্থা হয় বাকি দিনগুলো তো পরেই আছে! তোর মামা প্রতিদিন ফোন করছেন। খোজ নিচ্ছেন। আর তুই! সামনে যে সেমিস্টার আসছে, গাদাগাদা টেস্ট পরিক্ষা হবে এভাবে চললে শুধু ফিজিক্স কেন তুই সব সাব্জেক্টে সগৌরবে লাড্ডু এনে ঘরে তুলবি। বই ধরা হয়? খালি পারিস মানুষকে গালাগালি করে অন্যের কাছে চিঠি পত্র দিতে!”

কান গরম হয়ে এল কথাগুলোয়। অপরাধবোধে হৃদপিন্ডের রক্ত ছলকে উঠল। অনেকদিন ঝিমিয়ে থাকা কান্নাও পেল। তিনি শব্দ করে খাতা বই বন্ধ করেন। বলেন, “যা, কাল থেকে আর পড়তে আসবি না আমার কাছে!”

আমি বিস্মিত চোখে উনার দিকে তাকালাম। তিনি ভাবলেশহীন। নিষ্প্রভ চক্ষুজোড়া মেলে ধমকে উঠেন, “উঠছিস না কেন? যেতে বলছি না?”

চোখ খিচে বন্ধ করে ঠায় বসে থাকি। গাল গড়িয়ে পরে তপ্ত ফোটা। হাতের উল্টোপিঠে সেগুলোকে মুছে কাঠ হয়ে রই। জিসান ভাইয়ের ক্লান্ত কণ্ঠ আসে, “শুনলাম পড়তে চাইছিস না আমার কাছে। যা বাসায় সানন্দে লাফালাফি কর গিয়ে।”

নাক টেনে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলি, “সরি ভাইয়া আর হবে না।”

তিনি ভ্রু কুচকান, বলেন, “আশ্চর্য উঠছিস না কেন? বললাম না তোকে আর পড়াব না!”

“আপনি না পড়ালেও পড়ব। এবার থেকে দশবার, বিশবার একশবার যতবারই দেন বাড়ির কাজ করে আসব।”

“ওসব আর হচ্ছে না। এখন থেকে তোর পেয়ারে ইফাজের কাছে পড়বি। আমি ওকে বলে দিব।”

আমি হতবাক হয়ে উনার দিকে তাকাই। এখানে ইফাজ আসছে কেন? নাক ফুলিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থাকি।

“আমার পড়া আছে। সামনে এমন তব্দা মেরে না থেকে বাসায় যা।”

জেদি কণ্ঠে বললাম, “এসেছি এখানে এখনো আধা ঘন্টাই হয়নি। আমি দুই ঘন্টার আগে যাব না।”

তিনি ত্যক্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন, “ঠিকাছে!” বলে নিজের মোটাসোটা বইয়ে মুখ গুজেন। অনেকক্ষণ হচ্ছে এক নাগারে পড়ে যাচ্ছেন তিনি। একবারও আমার দিকে তাকাচ্ছেন না। আমার অসহায় লাগে। বিভ্রান্ত বোধ করি। কি করব বুঝতে না পেরে নিজেও ফিজিক্স বইটা টেনে নিলাম। আজকে যে চাপ্টারটা ক্লাসে স্যার বুঝিয়েছেন সেটা বের করে সূত্রে কিছুক্ষণ চোখ বুলাই। আমার একটা অত্যাশ্চর্য গুণ আছে আমি একবার যেকোন পড়া মন দিয়ে পড়লে তা মনে রাখতে পারি। সেটা অনেকদিন পর্যন্ত মস্তিষ্কে সেটে থাকে। এতদিন এই করেই পাশ করে আসছিলাম। ভাই-বোন বুঝল বেশি। ব্রেন ভাল বলে সাইন্সে ভর্তি করাল। ফিজিক্স কি আর মুখস্তের বিষয়! সিটি পরিক্ষায় না পড়ে বিজ্ঞের মতো গেছি, সূত্র মনে আছে প্রয়োগের নিয়ম জানি না। খাতা খালি রেখে আসলাম বেপরোয়াভাবে। স্যাররাও বেপরোয়া হয়ে ফেল মার্ক দিয়ে দিলেন। কলম কামড়ে স্যারের ল্যাকচার মনে করলাম কিছুক্ষণ। বইয়ের পাতায় সেগুলোকে দেখে নিজে টেস্ট পেপারের একটা সৃজনশীলের গ, ঘ ট্রাই করলাম। প্রথমবারে মিলল না। দ্বিতীয়বারেও মিলল না। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম উদ্দীপকের দিকে। একসময় ভাবতে ভাবতে মনে হলো আস্তে আস্তে প্রমাণ করে যাই। মিললে মিলবে, না মিললে রেখে দিব। সূত্র দিয়ে একটা একটা করে ধাপ পেরিয়ে একসময় মনে হলো এই যে এখন যে ধাপে আছি সে ধাপটা পার করলেই প্রশ্নে যা চেয়েছে তা পেয়ে যাব। দ্রুত ক্যালকুলেটরে ফলাফল বের করলাম। তাড়াতাড়ি টেস্ট পেপারের উত্তর দেখি! মিলেছে! প্রাপ্তিতে চেঁচিয়ে উঠলাম। জিসান ভাই ধমকে উঠেন, “হচ্ছে কি?”

চুপসে গেলাম। তিনি বলেন, “দেখি খাতা দে। কি এমন করেছিস দেখি!”

মুখে আবার হাসি ফুটল। সানন্দে খাতা বাড়িয়ে দিলাম। তিনি খাতা দেখে একবার অবাক চোখে তাকালেন। আরেকবার খাতার দিকে। বললাম, “নিয়ম কি হয়নি?” তিনি উত্তর দেন না। বলি, “কিন্তু উত্তর তো মিলেছে! নিয়মে কি হলো? সাজিয়ে লেখা ঠিক হয়নি না? আমার এই সাজিয়ে লেখাতেই যত সমস্যা..”

আমাকে থামিয়ে সুচালো দৃষ্টিতে বলেন, “এইমাত্র কি এই অংকটাই করলি?”

বিস্মিত হই, “অবশ্যই আপনার সামনেই তো করলাম।”

“অসম্ভব!”

গাল ফুলিয়ে বললাম, “কেন?”

“আমাদের পরিক্ষায় প্রায় বেশির ভাগ ছাত্রই এটা দেয়নি মিলাতে না পেরে।”

আমি গৌরবে হাসি, “ও এই কথা। আপনি পারেননি বলে কি আমি পারব না? আমি কিন্তু আপনার থেকে বেশি বুদ্ধিমান আছি!”

“আচ্ছা, বুঝলাম। এখন আমাকে বুঝিয়ে দে। কিভাবে করলি, কেন এবং কোনটা কিসের জন্য এনেছিস!”

বিরক্ত লাগল। নিজের সত্যতা বোঝাতে উনাকে বুঝিয়ে দিলাম। তিনি বিস্ময়ে তাকালে ভ্রু নাচালাম।

“মাথা তো ভালই পরিষ্কার। তবে তুই অংকটা ঘুরিয়েছিস বেশি। এর শর্টকাট নিয়মে গেলে এত সময় ব্যয় হত না। বুদ্ধি যা পেয়েছিস তা হেলায় ফেলায় না নষ্ট করে পড়াশোনায় ধ্যান দিলেই পারিস।”

কুটিল হাসি, “মানছেন তো আমি ব্রিলিয়ান্ট!? আচ্ছা শর্টকাট নিয়মটা আপনি জানেন?”

তিনি গম্ভীরমুখে অংকটা করে দেখালেন। আমি থ মেরে চেয়ে রইলাম। এটা কেন আমার মাথায় আসেনি! কি সহজ! বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি দিয়েছিলেন পরিক্ষায় এই অংকটা?”

তিনি সম্মতিতে মাথা নাড়েন। উনি কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলেন এসময় উনার ফোন বেজে উঠল। তিনি ফোন চেক করে ভ্রু কুচকান। বিরক্ত হয়ে একবার আমার দিকে তাকান। চোখ ফিরিয়ে রুম লাগোয়া বেলকনিতে চলে যান। দরজাটা চাপিয়েও দেন। আমি তাকিয়ে থাকি সেদিকে। অবাক হলাম ছেলেরাও এত কথা বলতে পারে! আমার জানামতে উনার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই! অবশিষ্ট থাকল ফ্রেন্ডরা! ঘড়ি দেখলাম। বিশ মিনিট অতিক্রম হচ্ছে। অবশেষে পাক্কা চল্লিশ মিনিটের কথা শেষে তিনি রুমে এলেন। গেছিলেন ত্যক্ত মুখে। ফিরলেন চোখে মুখে জেল্লা নিয়ে। আশ্চর্যের বিষয় যা তিনি কালেভদ্রে করেন সেটাও করে বসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতালো হাসলেন। আমি অবাক বিস্ময়ে উনার ডেবে যাওয়া গাল আর হাসির ঝলকানিতে আবারও মুগ্ধ হলাম। বেমালুম ভুলে গেলাম কারোর দিকে এতক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থাকা অনুচিত। মনে প্রশ্ন জাগল কি এমন বলেছে ফোনের ওপাশের মানুষটা যাতে তিনি আচমকা অত্যধিক খুশিতে ঝুমঝুম করছেন!

“আজ আর পড়াব না। যে অংকটা আজ করলি তাতে তোর ওপর খুশি হয়ে ছুটি দিয়ে দিলাম। বাসায় যা।”

মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, “আপনি আমার ওপর খুশিও হন?”

“বেশি কথা বলবি না তো বাসায় যা। আমার অনেক পড়া বাকি।”

দৃষ্টি সংযত করে বললাম, “কালকে তাহলে আসব?”

নিশব্দে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। বললেন, “সেটা তোর ইচ্ছে।”

আমি বই খাতা নিয়ে উঠে পরলাম। মেজাজ খারাপ হওয়ার আগেই সটকে পরতে হবে। দরজার কাছে পৌছেছি তিনি পেছন থেকে ডাকলেন, “ঝুম, শোন!”

পিছু ফিরি। তিনি সামনের চুলগুলোকে আলতো হাতে পেছনে চালান করেন। কর্তৃত্বের সুরে বলেন, “১২টায় ছাদে আসবি। তোর সাথে হিসেব নিকেশ বাকি আছে।”

চোখজোড়া আমার বিস্মিত। তোতলানো কণ্ঠে বলি, “রাত বারোটায় আবার কিসের হিসেব?”

“বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাব। এখন সামনে থেকে যা বড্ড বিরক্ত করিস।”

বাসায় এলাম চিন্তিতমুখে। নিসা, মিশেল আপুর সাথে তখন হেসে হেসে গল্প করছে। রুমে এলে ওরা কথা থামায়। উৎসুক চোখে আমার দিকে তাকায়। আমি পড়ার টেবিলে বই খাতা শব্দ করে রাখলাম। গোমড়া মুখে ওদের থেকে উলটো হয়ে চেয়ারে বসে গেলাম। আপু পেছন থেকে জিজ্ঞেস করে, “আজকে আবার কি অকাজ করে এলি?”

উত্তর দেই না। নিসা বিছানা থেকে উঠে আসে। টেবিলে হেলান দিয়ে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়, “কি রে কি হয়েছে? এমন মরামুখ করে আছিস কেন?”

নিসার দিকে অসহায় চোখে তাকালাম। সে ভ্রু নাচাল। ঘাড় ফিরিয়ে আপুকে বলি, “তুই তোর রুমে যা তো। আমার পার্সোনাল কথা আছে নিসার সাথে।”

আপু মুখ ভেঙচায়, “যে না আমার বয়স এখুনি পার্সোনাল কথা আসে!” ধমকে উঠে, “আমার সামনে বলতে কি সমস্যা?”

বিরক্ত মুখে বললাম, “তুইই সবচেয়ে বড় সমস্যা। যা না নিজের রুমে!”

আপু রাগ রাগ চেহেরায় শাসায়, “আরেকবার আপু আপু বলে কিছু চাইতে আসিস পার্সোনাল কথা গিলিয়ে দেব একদম।”

প্রতি উত্তরে মুখ বেকাই। আপু রুমের দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে চলে যায়। নিসা হাসতে হাসতে সেদিক থেকে মুখ ফেরায়, “তোরা দুই বোন একটু অদ্ভুত কিসিমের আছিস। এতক্ষণ আপু আমাকে তোর গল্প শোনাচ্ছিল তুই আসলি আর চেহেরা পালটে গেল!”

“বাদ দে ওর কথা। তুই সচরাচর কখন ঘুমিয়ে পরিস?”

“এগারোটা, সাড়ে এগারোটা। কেন?”

আমি দুঃখী দুঃখী চেহেরায় জিসান ভাইয়ের কাছে পড়া শুরু করা থেকে উনার এক একটা আজব অত্যাচারের কথা বর্ণণা করি। নিসার চোখ মুহূর্তে বড় বড় হয়! গল্পের মগ্নতায় টেবিলে পা ঝুলিয়ে বসে। একসময় আমায় থামিয়ে বলে, “তুই এগুলো তোর ভাই’কে বলিস না কেন? কি খচ্চর উনি!”

“কিভাবে বলব। বলার মতো আমার সাথে এমন কিছু করেননি।”

“কি বলিস এগুলো কিছু না?”

আমি বিরক্ত হই, বলি, “কোনটা কিছু সুস্পষ্টভাবে বল তো!”

নিসা নিজেও ধাধায় পরে। ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু না পেয়ে বলে, “তাই তো। উনি তোকে একবারও অশ্লীলভাবে ছোঁননি। অশ্লীল কিছু করেননি। কিন্তু কিন্তু..”

“কিন্তু উনি যা করেন তা’কে সরাসরি কিছু বলা যাচ্ছে না। সে সুযোগে তিনি আরও ঠান্ডা মাথায় উদ্ভট শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে।”

“উনার দৃষ্টি কি তখন লুচু লুচু থাকে?”

বিরক্তিতে ধমকে উঠি, “কি বলিস এগুলো! উনার দৃষ্টিতে আমি কখনো খারাপ কিছু দেখিনি!”

নিসা মুখ বেকায়, “আমার মনে হচ্ছে তুই উনার প্রেমে পরেছিস!”

খাতা মোচরাচ্ছিলাম তখন চিন্তায়। ওর কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে সেই গোলাকার খাতা দিয়ে ওর বাহুতে মারলাম কয়েক ঘা।

“শুধু শুধু মারবি না তো।”

“তুই সব সময় বাজে বকিস আজকাল!”

নিসা টেবিল থেকে নেমে পরে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নেড়ে বলে, “একটা কথা ভেবেছিস? তুই কোনমতেই উনাকে বাজে ভাবতে পারছিস না। উনি যা যা করেন নিসন্দেহে এগুলোর বিরুদ্ধে কিছু একটা অভিযোগ আনা যায়। কিন্তু সেই কিছু একটা খোজার ধারে কাছেও ঘেষছিস না। উনাকে আরও ভাল সাজিয়ে মহান মানুষ করতে চাইছিস!” মুখ গম্ভীর করে, “ছেলেদের দৃষ্টি বুঝিস না কি ছাতামাথার মেয়ে তুই!”

বিরক্তিতে আমিও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। ধমকে বললাম, “এখানে এসেছিস যে বই নিয়ে বসেছিলি? বসিসনি। যা হাত-মুখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে বস। তুই ফেল করলে কলেজের মান ইজ্জত যাবে!”

“আজকে পড়বি তুই? কালকে না শুক্রবার!”

“গুলি মারি শুক্রবারে! পড়তে বস। সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছিস নাক মুখ বন্ধ করে শুধু পড়বি।”

কথা শেষে ওয়াশরুমে চলে এলাম। হাসফাস লাগছে। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে আয়নাতে তাকাই! সত্যিই কি প্রেমে পরেছি? খুটিয়ে খুটিয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ শুরু করি। মুখের কোথাও মনে হলো না বাড়তি সৌন্দর্য এসেছে। বরং চোখের নিচে কালি পরেছে। নিসার যুক্তিগুলো সব বুজরুকি! ফেলনা! প্রেমে পরলে যে সৌন্দর্য আসে সেটা আমার বেলায় আসবে না এটা হয়? বেরিয়ে দেখলাম নিসা সত্যি সত্যিই বই নিয়ে বসেছে। মুখ গোমড়া। বায়োলজি পড়ছে গুনগুনিয়ে। হাসি পেল আমার। বলদ, চরম বলদ। টেবিলের ওপর কোণায় চেয়ার টেনে বসি। ও একবার মুখ তুলে তাকিয়ে আবার বইয়ের দিকে তাকায়। একসময় বিরক্ত হয়ে বলি, “তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড নাকি অন্যকিছু। আমি চিন্তায় মৃতপ্রায় আর তুই দিব্যি বায়োলজি মূখস্ত করছিস!”

“তুইই তো বললি পড়তে।”

মুখ বেকালাম। এসময় রেনু খালা খেতে ডাকতে এলেন। প্রিয় খাবারগুলোয় টেবিল সজ্জিত। জহুরি চোখে ভাইয়ার দিকে তাকাই। ভাইয়া মধুর হাসে, “রাগ করে থাকিস না আর। এখন থেকে মিটিং হলেও তোকে নিয়ে যাব। ফ্রিজে কিন্তু আরও আছে।”

ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে ভাইয়ার পাশের চেয়ারে বসি। ভাইটা কি সোজা সরল। আপুটা হয়েছে জাদরেলের একশেষ!

রুমে পায়চারি করছি। নিসা চিন্তিত মুখে বসে। বলল, “আমি সাথে গেলে কেমন হয়?”

“তো তোকে ছাড়া যাব? জিন্দেগিতেও না। সিড়ির কোন চিপায় চাপায় ভুত থাকবে কে জানে!”

নিসা দাঁতালো হেসে বিছানায় সুয়ে পরতে পরতে বলে, “তাহলে ঘুমিয়ে পরি এখন। কি বলিস?”

নাক-মুখ কুচকাই, “মানে?”

“রাত ১২টা পর্যন্ত জেগে থাকা কি সম্ভব? এর চেয়ে ঘুমিয়ে পরি। এলার্ম দিয়ে রাখ ১২টায় উঠে দুজনে ছাদে যাব!”

কঠিন মুখে বললাম, “কক্ষনো না ঘুমালে তুই আর উঠতে পারবি না। সোজা বসে থাক। একদম মেরুদন্ড সোজা।”

নিসা করুণমুখে নির্দেশ মেনে নিল। সময় যত বাড়ছে ওর মুখটা ছোট হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আমার থেকে ওর চিন্তা বেশি। একসময় কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল, “কি করেছিস তুই? আমার হাত ঘামা শুরু করেছে। আর ভাবতে পারি না।”

রাগ লাগল। ত্যক্ত কণ্ঠে বললাম, “ভাবিস না। শুধু জেগে থাক।”

মেয়েটা অবাধ্য হয়। আরও বেশি চিন্তা করতে থাকে। একসময় চিন্তা এল আচ্ছা আমি করেছিটা কি? চিন্তিত মুখে চেয়ারে বসে যাই। এত ভাবি তবু কি করেছির উত্তর মিলে না। আনমনে ফিজিক্স বইটা নাড়ছিলাম। বই গলে হঠাৎ কিছু একটা পরল। দেখি সেদিনের ঘিয়া রঙা খাম। আশ্চর্য বোধ করলাম।

“আরে এটা এখানে কেন?”

তাড়াতাড়ি খামটা খুলি। আমার চিঠিটা বেরোয়। এটা যেন কই থাকার কথা? ভাবতে ভাবতে মাথায় হাত! সর্বনাশ! চিঠিটা তো জিসান ভাইয়ের কাছে ছিল। তিনি কি পড়েছেন এটা? শেষ, সবশেষ। আমি পত্র লিখতে জানি না। এই পত্র লেখা না জানা আমি সেদিন ক্রাশের নিকট পত্রে যে লেখাগুলো লেখেছি তা বেশির ভাগই উনার স্তুতি আর উনার বন্ধুর প্রতি ক্ষোভ, ভর্ৎসনা প্রকাশ! এ সময় বসার ঘরের ঘড়িটা হালকা জোরে ডংডং করে বেজে উঠল। তড়িতে টেবিল ক্লকের দিকে তাকালাম। বারোটা বেজে গেছে। যাওয়া না যাওয়ার দুটো অপশনে দোদুল্যমান অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিলাম থাক বলেছে যখন যাবই। সাথে তো নিসা থাকছেই। হয়ত চড় থাপড়া মেরে গাল সপ্তাহের নামে বেকিয়ে দিবেন। এর বেশি কি? বেঁচে আছি এটাই বেশি। পেছনে ফিরে আমি স্তব্ধ। নিসা বিছানায় কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। বিস্মিত হয়ে দ্রুত ওকে ধাক্কিয়ে ডাকতে লাগলাম। মেয়েটা শুধু ঘুমের ঘোরে হু হু করছে। একসময় আমার হাতটা ঝারা মেরে উলটো হয়ে সুয়ে পরল। মন চায়ল ধাক্কা মেরে ওকে বিছানা থেকে ফেলে দেই। খেয়াল করলাম হাতে থাকা ফোনস্ক্রিন জ্বলে উঠে নিভে গেল। লক খুললাম। নোটিফিকেশন বারে জিসান ভাইয়ের মেসেজ দেখা যাচ্ছে, “ঝুম না এলে কিন্তু তুলে আনব!”

আলমারি খুলে শাল গায়ে জড়িয়ে কয়েকবার দম টেনে নেই। মাথা থেকে ঝেরে ফেলি ভয়। উনার সামনে শক্ত থাকব। ভিতু হলে চলবে না! ফোন হাতে পা টিপে টিপে রুম থেকে বেরিয়ে আসি। ড্রয়িং রুম পেরনোর সময় ভয় লাগছিল বেশি। রেনু খালা বা ভাইয়া লাইট জ্বেলে প্রশ্ন করলে? এমন কিছু ঘটে না। আমি সদর দরজা চাপিয়ে নির্বিঘ্নে সিড়িতে পা দেই। সিড়ি ভাঙতেও ভয়। নিচ থেকে কেউ পা টেনে ধরলে? বারবার পিছু ফিরে নিশ্চিত হচ্ছি কোন অশরীরী আমার পিছু নেয়নি। অবশ্য কোন অশরীরীকে শরীরী অবস্থায় দেখলেও হয়ত ভাবলেশহীন থাকতাম। যে অশরীরীর ভয় এখন লাগছে সে অশরীরীর কাছে এরা খুচরোসম। ছাদে যাওয়ার শেষ ধাপের সিড়িগুলোয় পৌছেছি। দেখি ছাদের দরজায় লম্বাদেহের অবয়ব। চাঁদনী রাতের ঠিকরে আসা সাদাটে আলোয় চিনতে কষ্ট হয় না! কাছাকাছি হতে তিনি সরে দাঁড়ান। আমি উনাকে অতিক্রম করে ছাদে আসি। ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে উনার দিকে তাকাই। তিনি পকেটে হাত রেখে এগিয়ে আসছেন। আমার বিক্ষুব্ধ চিন্তা ভাবনা চাঁদের ওপরও ক্ষুব্ধ। তিনি যেন জানতেন এই শয়তানটা আমাকে ছাদে আনাবে। তাই নিজের সাদাটে আলোয় পৃথিবীর সব কিছুকে মুড়িয়ে নিতে চাইছেন।

“ছাদের কর্ণারে চল।”

নিশ্চুপে উনার কথা মতো ছাদের কর্ণারে আসি। নিচু হাত খোপা করার পরও কিছু চুল অবাধ্য হয়ে কপালে পরে আছে। হালকা শীতল হাওয়ায় তাই সেগুলো মাঝে মাঝে সুরসুরি দিয়ে যাচ্ছে। তিনি মাঝখানে দূরত্ব বজায় রেখে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ান। এক হাতের কনুইয়ে রেলিঙে ভর রাখা। দৃষ্টি আমাতে নিবদ্ধ। আমি বাড়ির সামনের রাস্তা, বন্ধ দোকানপাটে চোখ বুলাচ্ছি। একসময় তিনি গমগমে কণ্ঠে বলেন, “আমি খাটাশ, অসভ্য আর নিরামিষ। আমার জন্ম হয়েছে গুমরে থেকে মানুষকে অহেতুক চোখ রাঙানো, উঠতে বসতে থাপড়ানো, সবসময় আদেশের উপরে রেখে নাচানোর জন্য। আরও আছে হয়ত!”

চুল কিছু কানে গুজে উনার দিকে ফিরি। হাওয়ার মাতনে আমার বেরিয়ে থাকা চুল যেমন উড়ছে তেমনি উনার চুলেও বইছে তান্ডব। ঝাকরা চুলগুলো মাঝে মাঝেই কপাল ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যট কি অপার্থিব সুন্দর! উনাকে কি বলব কথাটা? অনুভূতিদের জেরবার করা অবস্থাটা গিলে ফেলে মোহাবিষ্ট আমি সম্মতিতে মাথা নাড়ি।

“কি অসভ্যতামি করেছি তোর সাথে? এই অসভ্য ছেলেটার সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে ভয় লাগছে না?”

নিরীহ মুখভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকি। উত্তর দেই না। তিনি মাঝে থাকা দূরত্ব অতিক্রম করেন। তড়িতে কাছে এসে দাঁড়ান। চমকে উঠি। তিনি পৈশাচিক হেসে বলেন, “আমাকে ভয় লাগে না তাই না?”

চঞ্চল দৃষ্টিজোড়া মুহূর্তে পালানোর পথ খুজতে লাগল। তিনি আমার ভাবনাদের হয়ত বুঝতে পারলেন। দুহাত রেলিঙে রাখলেন। মাঝে আবদ্ধ আমি। উনার আমার দূরত্ব এক কি দুই ইঞ্চি। দুইহাত রেখে দাঁড়ানোয় উনাকে কুজো হতে হয়েছে। কুজো হয়েও তিনি আমার থেকে মাথায় লম্বা। স্থির পলকহীন এই গভীর দৃষ্টির সামনে ভয়ে কাঁপতে লাগল আমার ঠোঁট। মৃদু হাওয়ার তালে কাঁপতে লাগল সামনের ছোট ছোট চুল। উনার গভীর দৃষ্টিটায় মনে হচ্ছে আমার ভেতরের সব ভাবনা তিনি পড়ে ফেলছেন। প্রমাদ গুনলাম। এর থেকে যে কষানো ওই থাপ্পড়গুলো শ্রেষ্ঠ শাস্তি! তিনি ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে আনেন কপালের কাছে। আর হৃদপিন্ডটা হুরোহুরি লাগিয়ে দেয়। ভয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকি। তিনি কপালের কাছে ঠোঁট ছুইছুই অবস্থায় থেমে গেলেন। অবাক করে দিয়ে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিলেন সামনের চুলগুলো। ঠোঁট প্রসারিত করে হালকা হাসলেন যেন। চোখ পিটপিট করি! এহ, ভাবলাম কি করলেন কি! দিনদিন আমার বোধ বুদ্ধির অধপতন হচ্ছে দেখি! এত কাছাকাছি উনার মুখ দেখে পেছনে হালকা এলালাম। তিনি মুখ এগিয়ে আনেন।

“ক কি করছেন জিসান ভাই?”

তিনি নিরুত্তর। মুখটা আরও গালের কাছাকাছি আনেন। আমি ঠোঁট টিপে থরথর করে কাঁপতে থাকি। তিনি গাল বরাবর সেই একই অবস্থায় কিছুক্ষণ স্থির থাকেন। চাদরের কোণ মুঠোয় চেপে ধরি। তিনি গালে নিজের মোছের সুরসুরি দিয়ে কানে ধীরস্বরে ফিসফিসান, “এখনো ভয় লাগছে না?”

ভিতু অবস্থা জাহির না করতে আমি দুদিকে মাথা নাড়ি। সেই রকম অবস্থাতেই তিনি ফিসফিসান, “তাহলে চোখ খোল।”

একচোখ খুলে তাকিয়ে আবার বন্ধ করে ফেলি। উনার হাসির শব্দ আসে। বিস্মিত হলাম। চোখ খুললাম। তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। আগের দুরত্বে। প্রথমে ঠোঁটের কাছ ঘেষা ডেবে থাকা অংশ নজরে পরল। তারপর কপাল ছোঁয়া ঐ নরম চুলগুলোতে। আমার মনের বেহায়া তোতাপাখি বখাটে ইভটিজারদের মতো বিশ্রীভাবে সুর টেনে বলে উঠে, “কি হে জিসান আজকে শ্যাম্পু করেছিস না? সুন্ধর খুশবু আসছে। আমাকেও কিনি দিবি তো। সেগুলো ব্যবহার করে একদিন সুন্দর হয়ে যাব। তুই তখন আমাকে দেখবি আর মাটিতে লুটিয়ে মৃগীরোগীদের মতো কাঁপতে কাঁপতে মূর্ছা যাবি! আহা!” বেহায়া তোতাপাখি মনের মধ্যে উনাকে টিজ করেই ক্ষান্ত হলো না। সশব্দে জোর গতিতে ডানা ঝাপ্টাতে লাগল। ডানা ঝাপ্টানির শব্দে অনুভূতিরা গাঢ় হলো। মিয়ানো সেই সকালের সুগন্ধটা হালকা কিন্তু সূক্ষ্মভাবে পেলাম। চোখে চোখ পরল। তড়িতে অবচেতন মনের সতর্ক সংকেত সাবধান করল সমস্ত ইন্দ্রিয়কে। সংকেত বারবার সক্রিয় মস্তিষ্ককে ঘনায়মান প্রলয়ংকরী ঝড়ের কথা বলছে। অনুভূতিরা সেই সংকেত বুঝতে পেরেও ভাল লাগায় বুদ। অবুঝ। হঠাৎ মনে হলো আশ্চর্য আমার ভয় লাগছে আর আগের মতো। তিনি যে স্থির গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তা’কে আরও সময়বন্দি করে রাখতে মন চাইছে। বেহায়াভাবে তোতাপাখিটা সমস্বরে আকুল হয়ে উনাকে আবার আগের মতো দাঁড়াতে অনুরোধ করছে। দৃষ্টি বিনিময় কতক্ষণ হলো জানি না একসময় তিনি উনার থ্রি কোয়ার্টারের পকেট থেকে ফোন বের করেন। সময় দেখে বলেন, “যা অনেক রাত হলো।”

আমি পুতুলের মতো সম্মতি দিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে থাকলে তিনি হাত টেনে ধরেন। পিছু ফেরার আগেই আছড়ে ফেলেন নিজের বুকে। আমি তখন পুতুল। ইন্দ্রিয়ের কোন বার্তাই আমার কাছে পৌছোচ্ছে না। তিনি একহাতে পিছু মুড়িয়ে কোমড়ে টেনে আরও কাছ ঘেষান।

“আমার স্বাধিকার যেটাতে ঐটা শুধুই আমার। অযথা বাড়াবাড়ি করে রাগাবি না শুধু শুধু।”

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বিস্ময়ে উনার দিকে তাকালাম। তিনি কপালের চুলগুলোকে সরিয়ে সত্যিই এবার ঠোঁট ছোয়ালেন কপালে। আকস্মিক ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটল আমি ধাতস্থ হবারও সময় পেলাম না। বুঝে উঠার আগেই দরজার কাছ থেকে উনার ধমক আসে, “ছাদে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছে আছে?”

~চলবে❤️

#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ৫/

সারারুমে ড্রিম লাইটের হালকা নীলচে আলোদের বিচরণ। সেই আলোয় মিটিমিটি হাসছি। অনুভূতিরা পাগল করে দিচ্ছে আমাকে। কিছুক্ষণ পর পর লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢাকি। আবার হাত সরিয়ে আশপাশে তাকাই। দৃষ্টি জোড়া হঠাৎ এক ম্যাজিকের আশা করে। নয় এক অতিপ্রাকৃত ঘটনার। বোকাসোকা এই অবাস্তব চিন্তাগুলো আক্ষেপ করে জিসান ভাই কেন অতিপ্রাকৃত কিছু হলেন না? এমন কিছু যা দেয়ালের ইট, সিমেন্ট, কংক্রিটের মধ্যে অদৃশ্য শক্তির সাহায্যে হঠাৎ রুমে এসে চমকে দিবে। কি ভাল হত তাহলে! কিছু কঠিন কথা শুনিয়ে ঝাঝ মিটাতাম। তিনি তাতে অপরাধীর হাসি হাসতেন! আসলেও কি হাসতেন? নিজের এসব উদ্ভট চিন্তাগুলোয় যখন সচেতন ভাবনারদের উঁকিঝুকি মিলছে তখন নিজের বোকামিতে গুটিয়ে যাচ্ছি। অযৌক্তিক ভাবনায় লজ্জারাঙা হয়ে পরছি। সময় কত গড়িয়েছে জানি না। হঠাৎ ড্রিম লাইটের আলো ছাপিয়ে রুমের লাইট জ্বলে উঠে। তীব্র আলোর ঝলকানিতে চোখ খিচে বন্ধ করি। রেনু খালার বিস্মিত কণ্ঠ আসে, “এ কি অবস্থা!?”

চোখে আলো সয়ে আসতে সময় নিল। উঠে বসলাম চোখ কুচকে। তখনের কথা ভেবে আবার ঠোঁটে হাসি এল। রেনু খালা বিস্ময়ে বলেন, “আম্মা কি হয়ছে? হাসতেছ কেন? নিসা মামনী কেন তোমার পায়ের কাছে?”

পায়ের দিকে থাকা নিসার দিকে একবার তাকাই। ওর থেকে চোখ সরিয়ে ঠোঁট টিপে বলি, “ও ঘুমিয়ে গেছে গল্প করার সময়। ভাল করে ঘুমোতে বললাম। এখন নড়ছে না।”

খালা তীব্র দৃষ্টিতে তাকান। বলেন, “তুমি এতক্ষণ একা একা কথা বলতাছিলা?”

ঠোঁট প্রসারিত রেখেই মাথা নাড়ি। বলছিলাম না। খালার দৃষ্টি আরও সুচাতুর হয়। তীব্র কণ্ঠে বলেন, “আমি স্পষ্ট শুনছি তোমার কণ্ঠ।”

ভড়কে গেলাম এবার, “কি শুনেছেন খালা?”

খালা কেমন চোখে যেন তাকালেন। মুখটা গম্ভীর। রুমের আলোটা নিভিয়ে আবার ড্রিম লাইটের আলো জ্বাললেন। নিসাকে টেনে ঠিক জায়গায় আনলেন। আমি তখনো বসে। নিসাকে ঠিক করার পর ঘুরে আমার পাশে এলেন। বললেন, “কতক্ষণ পর সকাল হইব। তুমি ঘুমাও। আমি মাথায় হাত বুলাই দিতাছি।”

সুয়ে পরলাম। তিনি মাথার কাছে বসে চুলে বিলি কাটতে লাগলেন। এক সময় ঘুমিয়ে পরি।

ঘুম ভাঙে বেশ কয়েকজনের কণ্ঠস্বরে। তাদের মধ্যে রেনু খালার কণ্ঠই প্রকট। উঠে বসি। চোখ কচলে ভাল করে তাকাই। আমার রুমে সবাই দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। তবে নিসার মুখটা করুণ বেশি। ভীতগ্রস্তও। অবাক হয়ে বললাম, “কি হয়েছে?”

ওরা একে অপরের দিকে তাকায়। রেনু খালা কি যেন বলতে চাইলেন। ভাইয়া ধমকে থামিয়ে দেয়। খালা চুপসে যান। ভাইয়া বিছানায় আমার পাশে এসে বসল। বলল, “তোর নাকি শরীর খারাপ?”

মাথা নাড়ি, “না! কে বলেছে?”

ভাইয়া খালার দিকে তাকায়, “খালা তুমি বরং খাবার আনো ওর জন্য।”

খালা আমার ওপর সতর্ক দৃষ্টি ফেলে চলে যান। ভাইয়া মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলে, “কালকে ঘুম হয়েছিল?”

আমি প্রত্যেকের মুখের দিকে একবার করে তাকাই। হ্যা বোধক মাথা নাড়ি। আপু পেছন থেকে চিন্তিত মুখে বলে, “ভাইয়া একবার শাফিকে দেখালে হয় না?”

ভাইয়া চিন্তিত মুখে আপুর দিকে তাকায়, “শুধু শুধু দেখাতে যাবি কেন? ও তো ঠিকই আছে।”

“ঠিক থাকলে তো ভালই। একবার দেখালে দোষ কি। সে তো উপরের তলাতেই থাকে।”

ভাইয়া উঠে পরল, “যা মনে করিস।” আমার দিকে ফিরে, “তোর কি ঘুম হয়েছে? খালা বলল তুই ভোরেও জেগে ছিলি। না হলে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরিস আবার!”

সদ্য ঘুম থেকে উঠা মস্তিষ্কে ওদের কথাবার্তা প্যাচালো লাগে। উলটো প্রশ্ন করাকে ঝামেলা মনে হয়। সায় দিয়ে তাই উঠে পরি। ফ্রেশ হয়ে বেরই। নিসা তখন চিন্তিত মুখে খাটের কোণে বসে। আমাকে দেখে ফ্যাকাশে হাসল। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তুই কি কোন কারনে আমাকে ভয় পাচ্ছিস?”

নিসা তাড়াতাড়ি মাথা নাড়ে। ভয় পাচ্ছে না। রুমে চোখ বোলালাম। আপুও চলে গেছে। বললাম, “এমন আজব ব্যবহার করছিস কেন তাহলে?”

নিসা তোতলায়, “তুই কালকে বারোটায় ছাদে গেছিলি?”

সম্মতি দেই। ওর মুখটা আরও ফ্যাকাশে হয়, “ত তোর ক কি মাথা ঝিমঝিম করছে? মনে হচ্ছে যে অন্য কেউ ভর করে আছে?”

চোখ-মুখ কুচকে বলি, “সোজা ভাষায় বল। কিসের কথা বলছিস!”

ঢোক গিলে, “বুঝে নে না। তেনাদের নাম নাকি মুখে আনতে হয় না।”

সুচালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। রাগ লাগে। অযথাই মাথা নেড়ে সম্মতি দেই। নিসা কাঁদোকাঁদো মুখে দাঁড়িয়ে যায়, “সর্বনাশ খালার কথাই সত্যি তাহলে! একা ছাদে যেতে গেলি কেন?”

“তো তোমার মতো হুশজ্ঞান হারিয়ে পরে থাকতাম?”

নিসা হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে। এক সময় কাছে এসে ফিসফিসায়, “উনি কি এখন তোর সাথে আছে?”

বিরক্তি নিয়ে সম্মতি দিলাম। নিসা ছিটকে সরে গেল। কিছুক্ষণ ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রুম ছাড়ল। আমি ছোট্ট শ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরই। ভাইয়ার রুমের সামনে এসে দাঁড়াই। চাপানো দরজার ফাঁক গলে কিছুটা দেখা যাচ্ছে। ভাইয়া খাটের মধ্যে বসে ল্যাপটপে কারোর সাথে কথা বলছে। দরজা ঠেলে মুখ বাড়িয়ে তাকালাম। ভাইয়া ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে তাকায়, “তুই দরজায় দাঁড়িয়ে কেন? আয় রুমে আয়।”

গুটিগুটি পায়ে ভাইয়ার পাশে এসে বসি। ভাইয়া মৃদু হাসিতে বলেন, “মুখ এমন চিমসে করে রেখেছিস কেন?”

“ওরা আমাকে ভয় পাচ্ছে কেন ভাইয়া?”

ভাইয়া এবার সশব্দে হাসতে থাকে, বলে, “কে ভয় পাচ্ছে?”

ঠোঁট উল্টাই, “ঐ যে নিসা, আপু..”

“রেনু খালা বলেছে তোকে নাকি জ্বিনে, ভুতে ধরেছে। কাল ভোর রাতে তুই বিছানায় চুল এলোমেলো করে বসে ছিলি। আর বারবার, ‘উনার স্বধিকারে আমি’ কথাটা জপছিলি হেসে হেসে।”

ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম। এই কথাটা কখন বললাম? না বললে খালা এই স্বধিকার কথাটা বলত কিভাবে?

“থাক বাদ দে। তোর আপুর সাথে কথা বলবি?”

“না তোমার বোন খুব জাদরেল। সেও নিশ্চয় বিশ্বাস করে নিয়েছে!”

ভাইয়া আবার সশব্দে হাসে, “আরে তোর ভাবীর কথা বলছি।”

ভাইয়া ল্যাপটপ এগিয়ে দিল। ল্যাপটপের ওপাশে রূপবতী এক আপু হাসোজ্জল মুখে হাই দিল। আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আরেকবার আপুর দিকে। বললাম, “এই ভাইয়া এত রূপবতীকে পটিয়েছিস কেন? তোর সাথে যায় আপুর?”

ভাইয়া ঘাড়ে হাত রেখে মৃদু হাসে। ওপাশের আপুটা খিলখিলিয়ে হাসছে।

বেলা গড়িয়েছে বেশ। আমি তখন পিঠের নিচে বালিশ রেখে আধশোয়া। শীর্ষেন্দুর “ফুল চোর” পড়ছি। রুমের দরজাটা চাপানো ছিল। সেটা খুলে সাদা পাঞ্জাবি পরনে জিসান ভাই ঢুকল। পেছনে রেনু খালা, তার সৈন্য সামন্ত। রেনু খালারা একটা গ্রুপ হয়ে গেছেন। রুমে এলে তিনজনই একসাথে আসছেন। বেরলে তিনজনই একসাথে বেরিয়ে যাচ্ছেন। নিসার ওপর আমি তাই চরম বিরক্ত। আমার সাথে গল্প করতে এসে আমাকেই এড়িয়ে চলা হচ্ছে! রুম থেকে একবার পানি খেতে বেরিয়ে ছিলাম। ওরা তিনজন রান্নাঘরে তখন গুজুরগুজুর করছে। রেনু খালা গম্ভীর মুখে ভাষণ দিচ্ছেন। আপু, নিসা ফ্যাকাশে কৌতুহলে সেসব মনোযোগ দিয়ে শুনছে। আমি উঁকি দিতেই চুপ করে গেল। অভিমানে কিছু বলিনি। চুপ করে নিজের রুমে এসে গেছি। জিসান ভাই এসে জিজ্ঞেস করেন, “কি হয়েছে তোর?”

তিনজোটের দিকে একবার তাকালাম, “কিছুই না।”

তিনি জহুরি চোখে আমাকে পর্যবেক্ষণ করেন। রেনু খালার দিকে ফিরেন। বলেন, “কি যেন হয়েছে বলছিলেন?”

“তোমার কাজ কারবার না। সাদ’রে কইলাম আমি গ্রামের থেকে..”

জিসান ভাই মুখ বেকান, বলেন, “ওর সমস্যাটা আসলে কি? আমি তো সম্পূর্ণ সুস্থ দেখছি।”

“না মামনী সুস্থ নাই। ও রাতের বেলা হাসতেছিল কইতাছিল ‘উনার স্বধিকারে আমি!’, ঘুমানোর পরও শব্দ কইরা হাসছে। একই কথা বলছে। আমি দোয়া দুরুদ পইড়া ফু দিয়া একখান ধাক্কা মারলাম তারপর ঘুমায় গেছে!”

জিসান ভাই কেশে উঠেন। বিস্মিত হতবুদ্ধ আমি লজ্জায় উনার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নুইয়ে ফেলি। জিসান ভাইয়ের গম্ভীরস্বর আসে, “মাথায় ভুতটা দেখি ভাল ভাবেই চেপেছে!”

রেগে উনার দিকে তাকালাম। তিনি থুতনিতে আঙুল বোলাচ্ছেন। মিটিমিটি হাসছেনও। খালাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, “ওর সাথে একা কথা বলতে পারব? ওর সমস্যাটা সত্যিই ভৌতিক কিছু কিনা পরখ করে দেখব।”

রেনু খালা গাম্ভীর্য নিয়ে মাথা নাড়েন। উনার সৈন্য সামন্তকে ইশারা করেন। নিসা আপত্তি করছিল। আপুর হাতের টানে বেরিয়ে গেল। ওরা বেরিয়ে গেলে জিসান ভাই চেয়ার টেনে মুখোমুখী বসেন। তীর্যক চোখে তাকিয়ে থাকি।

“তুই তাহলে সত্যিই সেই ছেলেটার প্রেমে পরলি!”

ঠোঁটের কোণ প্রসারিত। ঠোঁট টিপে হাসি আটকাতে চাওয়ায় ঠোঁটের দুপাশ ডেবে টোল মুহূর্ত পর পর উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। লজ্জায় কুকড়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। তিনি চিন্তিত কণ্ঠে বলেন, “তোর মাথার প্রেম ভুত কি আমার পক্ষে নামানো সম্ভব? ডাক্তারি শাস্ত্রে পাইনি এসব প্রেমভুত নামানোর কিছু! এখন কি হবে? খালাকে বরং বলি উনার গ্রামের বাবাদের ডেকে এনে ঝাটার বাড়ি দিয়ে তোর মাথার ভুত দূর করাক!”

“একদম মজা নিবেন না। সব আপনার জন্য হয়েছে!”

বিস্ময়ে, “আমার জন্য? তুই আমার প্রেমে পরেছিস?”

রাগ নিয়ে উনার দিকে তাকালাম। তিনি মৃদু মৃদু হাসছেন। চোখাচোখিতে চোখ টিপে বলেন, “আয় তাহলে তোর প্রেমরোগের ট্রিটমেন্ট দেই। প্রেমভুত একেবারে চলে যাবে!”

লজ্জায়, রাগে দিকভ্রান্ত হয়ে বলি, “আপনি একটা যাচ্ছে তাই!”

তিনি নিশব্দে হাসতে থাকেন। সারাদেহ ঝাকিয়ে হাসছেন। হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টায় বলেন, “এসব আর বলিস না জনসম্মুখে!”

গাল ফোলাই, “আমি বলিনি সে কথা।”

“আচ্ছা? তাহলে রেনু খালা কিভাবে স্ব__অধিকার শব্দটা জানলেন?”

লজ্জায় এবার কুকড়ে গেলাম। এদিক সেদিক তাকাতে গিয়ে দরজার পর্দায় চোখ পরে। তা অস্বাভাবিকভাবে দুলছে। ভ্রু কুচকে আসে। নিচে তাকিয়ে থ হয়ে গেলাম। পর্দার নিচে দুজোড়া পা দেখা যাচ্ছে। সুচাতুর চোখে পর্দায় তাকিয়ে থেকে আবিষ্কার করলাম নিসা আর মিশেল আপু পর্দার পেছনে লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছেন। জিসান ভাইও পেছনে তাকান। বলেন, “কে ওখানে?”

পর্দার নিচের পাগুলো সরে যায়। দৌড়ানোর ধুপধাপ শব্দ হতে থাকে। জিসান ভাই হতবুদ্ধ হয়ে উঠে দাঁড়ান, “তোদের বাসায় সবাই দেখি জোচ্চুরি করে! ভাগ্যিস নিজের নাম বলিনি তখন!”

আড়চোখে তাকিয়ে, “কমই বা কি বলেছেন?”

জিসান ভাই বেরিয়ে পরেন রুম থেকে। আমিও পেছনে বেরই। তিনি সরাসরি ভাইয়ার রুমে এলেন। কি কুমন্ত্র ঢালেন তা শুনতে আমিও পেছন পেছন এলাম। কুশলাদি বিনিময় শেষে দুজনের দৃষ্টি আমার ওপর পরল।

“ওর মধ্যে সত্যিই সমস্যা দেখা দিচ্ছে?”

জিসান ভাই প্রশ্নটায় আমার দিকে তাকান। এবং শব্দ করে হেসে ফেলেন, বলেন, “না ভাই। কমবয়সী আবেগের ব্যাপার স্যাপারকে ভুতুড়ে করে ফেলেছে খালা।”

ভাইয়া বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকাল। মনে হলো এই মুহূর্তে আমার কেটে পরা উচিত। করলামও তাই। তবে রুমের বাইরে রয়ে গেলাম। জিসান ভাই ভাইয়াকে বললেন আমার রিফ্রেশমেন্টের প্রয়োজন। বাইরে ঘুরিয়ে আনলে ভাল হয়! সিরিয়াসলি!? সোজা সরল ভাইটাও এই ভন্ড ইন্টার্নের কথায় নেচে নেচে উঠছে! রাগে ফুসতে ফুসতে কানটা আরও এগিয়ে দিলাম।

“কিন্তু আমার তো সময় নেই আজকে। নেহাকে ঘুরতে নিয়ে যাব বলেছি।”

জিসান ভাইয়ের হাস্যরাত্মক কণ্ঠ আসে, “বোনকে নাহয় সঙ্গে নিলা। মাঝে মাঝে মেয়েরা ডেটের সময় ছোট বোনকে আনে না? তুমি ছেলে হয়ে নিবা। ব্যতিক্রম হও মিয়া!”

ভাইয়া হয়ত জিসান ভাইকে হালকা হাতে মারল। শব্দ হলো। বলল, “হুশ মজা নিস না। বোন এখন তিন চার বছরের হলে একটা কথা ছিল!”

“নিজের রোমান্টিসিজমের জন্য বোনের সুস্থতা দেখছ না?”

“আজকেই নিতে হবে? আগামী শুক্রবারে নিলে হয় না?”

“ওর পাগলামি আরও বাড়বে তাতে। রেনু খালা নিজে মন্ত্র পড়ে তখন ঝাটার বারি দিবেন।”

আমি গাল ফোলালাম। কি নাটক পারে! দুজনের হাসির শব্দ আসছে রুম থেকে। ভাইয়া করুণকন্ঠে বলল, “নেহাকে মানা করব তাহলে?”

“তুমি চাইলে আমি তোমার বোনকে ঘুরিয়ে আনতে পারি। এমনিতেও ফ্রি আছি।”

বিস্ময় কণ্ঠে, “তুই নিয়ে যাবি?”

জিসান ভাইয়ের কৌতুকপূর্ণ কণ্ঠ আসে, “কেন ভাই তোমার বোনকে পালিয়ে নিয়ে যাবার ভয় পাচ্ছ?”

“হুস! পালিয়ে আর যাবি কই? থাকিস তো আমাদের বিল্ডিংয়েই!”

আরেক দফা হাসির শব্দ। রুমে এসে পরি। রাগ হলেও খুশি খুশিও লাগছে। আজগুবি রোগের কথা বলায় ঘুরতে তো যেতে পারব! জিসান ভাই এসময় রুমে উঁকি দেন। বলেন, “এই প্রেমবানু ঘুরতে যাবি?”

আমি নিশ্চুপে তাকিয়ে থাকি। তিনি সপ্রশ্ন চোখে তাকিয়ে। সম্মতিতে মাথা নাড়ি। তিনি এক গাল হাসেন। বলেন, “বিকেলবেলা রেডি হয়ে থাকিস।”

আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেই। তিনি চলে যান। বালিশ জড়িয়ে বিছানায় লাফিয়ে গিয়ে পরি। আহা! চারপাশে কেমন সুখ সুখ ঘ্রাণের অনুভূতি হচ্ছে। উনার ব্যবহারে আজকে পরিবর্তন পরিবর্তন ছিল না? হ্যা অবশ্যই ছিল। কি সুন্দর ঐ হাসি, ঝাকরাচুলো ঐ ছেলেটা! আমি ঝটপট উঠে বসি। আয়নার সামনে এসে নিজেকে খুটিয়ে দেখতে থাকি। আক্ষেপ হয়! উনি এত কেন সুন্দর হতে গেলেন? সৌন্দর্যের মাপ কাঠিতে কি আমাদের পাশাপাশি মানাবে? বড্ড চিন্তার বিষয়।

~চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here