তোমাতে,পর্ব:৬+৭

#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ৬/

“এই ঝুম দুহাতে জড়ায় ধর। একহাতে ধরেছিস কেন? ও, একহাতেও দেখি জড়ায় ধরিস নাই।”

নিসার ফিসফিসানোয় রেগে ঘাড় ঘোরাই। নিসা ফিচেল হাসে। বাইক চলছে। আমার চোখ রাঙানিতে হাসি আরও প্রসারিত হয়, “মিঙ্গেল হয়েও মরার জন্য একহাতে ধরেছিস। তুই পরলে আমিও পরব। কুইক দুহাতে ভাইয়াকে জড়ায় ধর!”

জিসান ভাই কথাগুলো শুনছে কিনা সে চিন্তায় লজ্জারাঙা হয়ে একহাতে নিসার পায়ে চিমটি বসালাম। নিসা ব্যাথাদায়ক শব্দ করেও গা জ্বালানো হাসে।

“তোরা এভাবে নড়াচড়া করছিস কেন? বাইকের ব্যালেন্স নষ্ট হচ্ছে!”

নিসা এবার একহাতে মুখ চেপে ধরে। তবু হাসির শব্দ আসতে থাকে। আমি গাল ফুলিয়ে বসে রই। নিসা এবার সিরিয়াস কণ্ঠে ফিসফিসায়, “ভাইয়া কি তোকে প্রপোজ করেছে?”

অসম্মতিতে মাথা নাড়ি। সে ভাবুকমুখে বলে, “রিলেশনের আগেই এখানে সেখানে নিয়ে যায় রিলেশন হলে বোধহয় তোরা ডিরেক্ট হানিমুনে চলে যাবি!”

বিষম খেয়ে কেশে উঠি। ওর কণ্ঠটা এবার বেশ জোরে ছিল। জিসান ভাই নিশ্চিত শুনেছে! মনে মনে একটা কথা জপছি, ‘রাস্তা শেষ হচ্ছে না কেন!’ নিসার দিকে আড়চোখে তাকাই। জব্দ করতে পারায় ওর মুখে পৈশাচিক হাসি। আমাকে আড়চোখে তাকাতে দেখে চোখ টিপ মারে, “আমাকেও নে না একটু পরখ করি বেস্টফ্রেন্ডের ফার্স্ট ডেট!”

“নিসা তুই কিন্তু বেশি বেশি করছিস।”

“তুমি ফন্দিফিকির করে না বলে রিলেশনে যাবা আর আমি একটু দেখতে চাইলেই দোষ!”

“তুই ব্যাপক ঠোঁটকাটা অসভ্য হয়ে গেছিস।”

“সেটাই সেটাই। আর কতদিন সিঙ্গেল থাকব! সিঙ্গেল মন হাহাকার করে! নিয়ে যা না। তোদের রোমেন্স দেখে হাহাকার যদি কিছু কমে!”

“কি বারবার রিলেশন রিলেশন করছিস। আমি রিলেশনে যাই নাই!”

নিসা ঠোঁটকাটা মুখে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। এসময় বাইকটা ওদের বাসার সামনে থামে। স্বস্তির শ্বাস ফেলি। নিসা নামল নিতান্ত অনিচ্ছায়। নামার ইচ্ছে যেন সত্যিই নেই। হয়ত আশা করছে ভদ্রতা দেখিয়ে জিসান ভাই সাথে আসতে বলবেন। কথাটায় নিজেই ঠোঁট টিপে হাসি। ইনি তো আরেক অসভ্য। অবশেষে নিসাই প্রশ্ন করে, “ভাইয়া আমাকে নিবেন সাথে?”

জিসান ভাই ওর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন, “কেন? তোমাকে তো ভুতে ধরেনি!”

নিসা মুখ বেকায়। যুক্তিতে কিছু বলার আগেই জিসান ভাই বলেন, “হানিমুনে নিয়ে যাবনি। এখন গিয়ে কাজ কি?”

নিসা হতভম্ব। ওকে হতভম্ব রেখেই বাইক ছুটল। আমি লজ্জায় নিসার দিকেও তাকাতে পারিনি। আস্তে আস্তে ধাতস্থ হলাম। সময় গড়িয়ে লজ্জা কিছু কমল। কিন্তু স্বাভাবিক হতে পারছি না। উনার সাথে স্বাভাবিক কথপোকথনও শুরু করতে জড়তা আসছে। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য নিজেই নিজেকে মোটিভেশন দিচ্ছি। লম্বা লম্বা দম নিচ্ছি। নিজের মোটিভেশনে কাজ হয়েছে বোঝাতেই যেন একটু বেশি জোর গলায় কথাগুলো বেরিয়ে এল, “জিসান ভাই কোথায় যাচ্ছেন?”

“কই ঘুরতে চাস?”

আত্মবিশ্বাস একটু মিইয়ে গেল। কিন্তু সুপ্ত ইচ্ছেরা নাছোড়বান্দা। ওদের পূরণ হবার লোভও প্রচন্ড। মিয়ানো সেই আত্মবিশ্বাসে গলার জোড় কমল। ছাড়াছাড়া ভাবে বলি, “বাইক থামিয়ে চলেন রাস্তায় লক্ষ্যহীন হাঁটি। ফুটপাতে দাঁড়ানো কোন এক ফুচকার দোকানে ফুচকা খাই। দুজনে কম্পিটিশন করি। শখানেক কথার ঝুরি উপচে পরুক। আপনি গল্প না করলেও অংশগ্রহণ করতে মাঝে মাঝে চোখ রাঙালেন। ফুটপাতের বাহারি দোকানগুলোয় ঢু মারব। এমনি দর কষাকষি করব। আপনি মিথ্যে বিরক্ত হবেন। এমন ভাব করবেন যেন পকেটে খুচরো পর্যন্ত নেই। থাকলেও ছাড়তে রাজি নন। দুঃখিনী আমি গাল ফুলিয়ে, ঠোঁট উলটে দোকানদারদের সামনে হালকা ঝগড়া করলাম। মিথ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কোন ঠেলাগাড়িতে সবজি বিক্রতার পাশে দাঁড়িয়ে বা তাকে সরিয়ে নিজেরাই সবজি বিক্রেতা হয়ে ফটোশুট করলাম। করলাম রাস্তার মাঝে কোন পাগলামি। মেইনরোডে দাঁড়িয়ে চলন্ত গাড়িগুলোকে থামিয়ে অতি শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাল আছেন?’ হিহিহি ঠিক কি অভিব্যক্তি ফুটবে সেই গাড়ি চালকদের? হয়ত কেউ গালি গালাজ করবে, কেউ পাগল ভাববে এই পাগলামিতে যে আনন্দ তাতে জীবনের স্বাদ আরেকভাবে পাব। ভাল না? নয়ত কোন পথচারীকে দাঁড় করিয়ে চমকে দিব এই বলে, ‘এই আপনি অমুক না? আরে চিনছেন না? সেদিনই তো পরিচয় হলো!’ কেউ উত্তর দিবে। কেউ হয়ত দিবে না। কিন্তু আনন্দটা আমাদের স্মৃতিপটেই জমা রইল। আচ্ছা এসব কি আপনার ব্যক্তিত্বে আঙুল তুলবে?”

কখন যেন বাইক থেমেছে। কথা বলতে বলতে খেয়ালে করিনি। কণ্ঠটা একটু বেশি আগেবমাখা হয়ে গেছিল। তিনি হ্যালমেট খুলে হাতে রেখেছেন। তাকিয়ে আছেন একদৃষ্টে। প্রতিত্তরে মধুর হাসি হাসেন। মুগ্ধতা, ভাল লাগায় আমাকে অনুভূতিদের ঢল আরও পেয়ে বসে। তিনি নেমে যান বাইক থেকে। বলেন, “নেমে আয়। দেখি ইচ্ছেগুলো পূরণ করা যায় কিনা।”

খুশিতে ঝুমঝুম করে উঠল সমস্ত সত্তা। আমি ঝলমলে চেহেরায় নেমে পরি। জিসান ভাই কাউকে কল করেন। কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দেন। পাশেই একটা চা-নাস্তার হোটেল। জিসান ভাই বাইকটা সাইডে রেখে লক করলেন। আমরা হোটেলে এসে ঢুকলাম।

“কয়েক মিনিট বস। নিশান এসে বাইকটা নিয়ে যাক। পরে পুরো শহর উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরব আজ।”

আমি একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। বেহায়া মন ভদ্রতার আপন নিয়ম বানাল। মোহনীয় সুন্দরকে অবহেলা করতে নেই। এদেরকে দেখারও নির্দিষ্ট সময়সীমা বাধা নেই। বিনা দ্বিধায় মনভরে শুধু দেখবে। অবহেলায় হারালে কোন একদিন হয়ত আফসোস লাগবে! ভাল লাগার সাথে আমি নতুন করে নতুন অনুভূতিদের সাথে পরিচিত হচ্ছি। উনাকে যত দেখি তত সুখব্যাথাদের আনাগোনা টের পাই। আবেগে কান্না পায়। মন চায় একে একান্ত আপন মালিকানায় নিয়ে নেই। সারাক্ষণ ঝাপ্টে রেখে দুনিয়াকে শাসিয়ে বলি, “এই যে শুনো তোমরা এই মানুষটা আমার, একান্তই আমার। কেউ চোখ তুলেও যদি তাকিয়েছ খারাপ হবে খুব!” এক সময় এক ভাইয়া এলেন। আমার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে টুকটাক প্রশ্ন করেন। বাইকের চাবি নিয়ে চলে যান। আমরা রাস্তায় নামি। জিসান ভাই হাঁটতে হাঁটতে একসময় আমার হাতটা নিজ মুঠোয় নিলেন। আমি সপ্রশ্ন চোখে তাকাই। তিনি তখন সামনে তাকিয়ে হাঁটছেন। যেন নিত্যকার ব্যাপার। ভাল লাগার শিহরণ আরেকবার বয়ে গেল সারাদেহে। আমার জীবনের নির্দিষ্ট নিয়মে, রুটিন মাফিক ঋতুগুলোয় বসন্ত যেন নতুন করে যুক্ত হলো। পুরনো রুটিনগুলোকে নিংড়ে নিয়ে নতুনের সূচনা করল। আমার ইচ্ছেদের ভিড়ে এটাও ছিল ছোট্ট এক কল্পনা। এখন মনে হচ্ছে এটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশাল বাকিগুলো জোড়াতালিতে বড় হয়েছে। ফুটপাতের এক ফুচকার দোকানে কম্পিটিশন করলাম দুজনে। ঝাল না খেতে পারা আমি উত্তেজনায় কম্পিটিশনে নতুন মাত্রা আনতে দোকানিকে বলে ফেললাম ঝাল ঝাল করে দিতে। জিসান ভাই ভ্রু বেকিয়ে তাকিয়ে ছিলেন। কিছু বললেনি। চোখে পানি নিয়েও আমি সেগুলো গিলেছি। একসময় জিসান ভাই কেড়ে নেন প্লেট। আমি ঝালটা তখুনি বেশি টের পাই। দোকানীর দোকান থেকে একের পর এক গ্লাসের পানি পেটে চালান করি ঝাল আর কমে না। দোকানি মামা তখন হাসছেন। জিসান ভাই কোথা থেকে আইসক্রিম এনে দিলেন। তাতে ঝাল কিছু কমল। দাম মিটিয়ে বেশ বকাঝকাও করলেন আমায়। মাথা নিচু করে আইসক্রিম খেয়ে তখন শুধু হেসেছি। একে একে প্রত্যেকটাই পূরণ হলো। দ্বিতীয় বেগতিক অবস্থা হলো চলন্ত গাড়িকে থামিয়ে। আরেকটু হলে আমার ওপর দিয়ে যেত গাড়িটা। এ নিয়েও বকা খেলাম। ড্রাইভারও ঝাড়লেন আচ্ছা মতো। সব মিলিয়ে তখন খুশি খুশি মনে জিসান ভাইয়ের পাশে হাঁটছি। জিসান ভাই এখনো হাতটা শক্ত করে ধরে। কথা বলছি এসময় পেছন থেকে মেয়েলি কণ্ঠ আসে, “আরে শাফি না?”

দাঁড়িয়ে যাই। পেছন ফিরি। হাসোজ্জল চেহেরায় লম্বা গড়নের এক আপু দাঁড়িয়ে। হাতে কিছু ব্যাগ। জিসান ভাই সৌজন্যের হাসিতে তাকিয়ে থাকেন। তখনো হাতটা ছাড়েননি। ছাড়াতে চাইলে বরং মুঠোটা শক্ত করেছেন আরও। কাছে এসে মেয়েটার দৃষ্টি প্রথমেই আমাদের মুঠোবন্দি হাতজোড়ার ওপর পরে। আমি বিভ্রান্ত হই। জিসান ভাই নিষ্প্রভ।

“কি ব্যাপার জামাই? বউ ছেড়ে পরকিয়া করছিস যে!”

আমি বিস্মিত হয়ে একবার আপু একবার জিসান ভাইয়ের দিকে তাকাই। জিসান ভাই বলেন, “ঠাটিয়ে লাগাব চড়! আমি তোর কোন জন্মের জামাই?”

“হ্যা, হ্যা পাশে সুন্দরী থাকলে আমাকে চিনবাই না!”

“জিনিয়া মার খাবি!”

মেয়েটা এবার সশব্দে গা দুলিয়ে হাসে। মাথা মুন্ডু না বুঝে আমি শুধু তাকিয়ে থাকি। মেয়েটা আমার দিকে চোখ নাচিয়ে প্রশ্ন করে, “কে হয়?”

জিসান ভাই এক পলক চায়লেন আমার দিকে, “প্রতিবেশি।”

“প্রতিবেশীর হাত কেউ এভাবে ধরে?”

“কৈফিয়ত দিতে আগ্রহী নই।”

আপুটা কৌশলে মুখ বেকায়। সৌন্দর্যের ছাচে সেটাও অপরূপ লাগে। মনে সংশয় পাক খায়। মেয়েটা আমাকে বলে, “লাইনে আমি সবার প্রথমে। কোন যোচ্চুরি চলবে না। পরে এসেছ পেছনে থাকবে!”

জিসান ভাই হেসে ধমকালেন। আমি কুন্ঠিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি ওদের দিকে। কথা শুনে মনে হচ্ছে একই কলেজের ইনারা। জিসান ভাইয়ের ফ্রেন্ডসার্কেলের একজন। ফ্রেন্ড দাবি জানালেও আমার ভাল লাগেনি মেয়েটির কথাগুলো। কেমন কর্তৃত্বের অহং মিশে ছিল। জিনিয়া মেয়েটিকে বিদায় করে যখন হাঁটছি তখন সন্ধ্যে নামছে। মনের কোণ রাগে মাঝে মাঝে ফুসে উঠছে। তিনি একসময় প্রশ্ন করেন, “কি হয়েছে তোর?”

উত্তর দেই না। হাত ঝারা মেরে ছাড়িয়ে নেই। গাল ফুলিয়ে হাঁটতে থাকি। তিনি হাত টেনে পাশের রাস্তায় চলে আসেন। চারপাশ তাকিয়ে দেখি পার্ক জাতীয় এলাকা। পার্কের ভেতরে পাথুরে মাচাং জাতীয় উঁচু জায়গায় আমাকে বসিয়ে দিলেন। সামনে দাঁড়িয়ে সুচালো দৃষ্টিতে বলেন, “এমন গোমরা মুখো হয়ে আছিস কেন? তোর সব ইচ্ছেদেরই তো পূরণ করলাম।”

এবারও উত্তর দেই না। তিনি ভ্রু কুচকান। আগের ফর্মে চলে আসেন। ধমকে বলেন, “তব্দা হয়ে আছিস কেন? বল কি হয়েছে!”

মাচাং থেকে লাফিয়ে নামলাম। অভিমান, আক্রোশে অন্ধপ্রায় আমি ছুটে গেলাম উনার দিকে। উনার বুকে লাগাতার কিল, ঘুষি মারছি। কখন চোখের জল গাল গড়িয়েছে টের পাইনি। একসময় তিনি একহাতেই আমার দুহাত বন্ধ করেন। আমাকে উলটো ঘুরিয়ে জড়িয়ে নিলেন। বিস্মিত হয়ে বললেন, “হয়েছেটা কি তোর? কাঁদছিস কেন? আমাকেই বা মারছিস কেন?”

উনার হাতে কাঁমড় বসালাম। ছেড়ে দিলেন হাত। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকেন। ফুসতে ফুসতে তেড়ে যাই, “ঐ মেয়েটা আপনাকে কেন জামাই বলবে হ্যা? বলেছে বলেছে মানা করে কাহিনী শেষ করবেন। ওর সাথে কিসের এত হাসাহাসি! অন্যের জামাই হয়ে থাকলে আমাকে স্বধিকারে নিচ্ছেন কেন!?”

উনার মুখভঙ্গির পরিবর্তন হলো। মৃদু হাসিতে বলেন, “আমার ফ্রেন্ডসার্কেলের একজন। স্বাভাবিক কিছু কথাবার্তা বলেছি শুধু। আরে ও তো তোর সাথে মজা করেছে!”

“মজা না ছাই! ভুলভাল বোঝাতে আসবেন না একদম। তাছাড়া আপনার সাথেও আমার কিছু নেই। যান ঐ আপুটা লাইনে আগে আছে রিলেশন করুন গিয়ে।”

তিনি মৃদু মৃদু হাসছেন। বলেন, “কিছু নেই তো কাঁদছিস কেন?”

“জানি না কান্না পাচ্ছে আমার। সামনে থেকে সরুন। আপনাকে আমার দুচোখে দেখতে ইচ্ছে করে না।”

তিনি সরলেন না বরং আরও কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমি ঘাসের ওপরই বসে পরি। আকুল হয়ে কাঁদতে থাকি। ছোট এ বিষয়ে কাঁদার কি আছে খুজে পাই না। তবু কাঁদতে থাকি। একসময় তিনিও আমার সামনে বসলেন। টিস্যু এগিয়ে দিলেন। উনার হাতটা সরিয়ে দিলাম সামনে থেকে।

“কান্না বন্ধ কর।”

হেচকি তুলতে তুলতে বলি, “আপনি সরুন সামনে থেকে।”

তিনি আমার একহাত টেনে ধরেন। মুখটা ওপরে তুলে বলেন, “আমার দিকে তাকা।”

অভিমানে হাত ঝারা মারতে গেলাম। তিনি আরেক হাতে আটকালেন। ধমকে উঠলেন, “তাকাতে বলেছি না?”

আমি তাকাই। তিনি দুহাতে চোখ দুটো আলতো করে মুছে দেন। বলেন, “জিনিয়া আমার ক্লাসমেট। কলেজে একই সাথে আড্ডা দেয়া হয়, ফ্রেন্ডসার্কেলের অন্যতম তাই স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছি। এতে ইমোশনাল হচ্ছিস কেন?”

“আপনি বুঝবেন না। ওর কথার ধরনে কিছু ছিল! উনি তবু ফ্রেন্ড আমি তো কিছুই না!”

তিনি কৌতুকে হাসেন, “কেন তুইই তো বেশি। আমার প্রতিবেশি, ছাত্রী আর..”

সপ্রশ্ন চোখে তাকাই। তিনি কথাটা অসমাপ্ত রাখেন। বলেন, “নিসার মতো তুইও প্রপোজে বিশ্বাসী?”

সরাসরি এ প্রশ্নে থমকে গেলাম। বলেন, “ওসব চিন্তা ঝেরে ফেল মাথা থেকে। আমি ওসব প্রপোজ টপোজ করতে পারব না। সম্পর্কে সরাসরি না বললে কি বোঝা যায় না?”

আমি চুপ করে তাকিয়ে থাকি। তিনি টিস্যু বাড়িয়ে দেন, “চোখের পানি মুছে ফেল।” দ্বিরুক্তি করলাম না। তিনি মৃদু হাসেন। ফিসফিসিয়ে বলেন, “আমার অধিকার ফেলনা নীতিমালায় চলে না যে সবার জন্য উদারভাবে দিব।”

~চলবে❤️

#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল

/পর্ব ৭/

ইদানিং ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটে। স্মৃতি ধারালো। মূখস্তের বই তাই কম পরিশ্রমে শেষ হয়। গত মাসগুলোর সময় নষ্ট করিনি। প্রতিদিন দুই ঘন্টা আর প্রয়োজনীয় সময়টুকু বাদে বইয়ে মুখ গুজে থেকেছি। জিসান ভাইয়ের মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার ইচ্ছে। প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। যখন আলসেমি লাগে তখন সেদিনের জিনিয়া মেয়েটার কথাগুলো মনে করি। হিংসা, জেদ, হারানোর ভয়ে আলসেমি চলে যায়। নতুন উদ্যমে পড়তে থাকি। এত বদলানোয় মাঝে মাঝে আপু মশকরা করে। বলে, “আমিও রাত ১২টায় ছাদে গিয়ে ভুতগ্রস্ত হব। পড়ার ইচ্ছে চাঙ্গা হয়ে যাবে!” মাঝে মাঝে পড়াকু বলে ক্ষেপায়। ভাইয়া অনুপ্রেরণা দেয়। দিনের ৫টা থেকে ৭টা সময়টা কাটে গড়িমসি করে। বাধা দুঘন্টা জিসান ভাইকে ত্যক্ত করি। তিনি এখন বিরক্ত হন না। বরং নিজে গল্প জুড়েন। জড়তা কেটে যাওয়ায় তিনি কখনো বিস্মিত কণ্ঠে বলেন, “তোকে আমি খুব লাজুক ভাবতাম!” আমি খিলখিলিয়ে হাসি। সেদিনের ঘটনা, নির্দিষ্ট সময়ে বই খাতা নিয়ে উনার রুমে এসেছি। উনি মনোযোগ দিয়ে মোটা বই পড়ছেন। আমি এসেছি খেয়াল করেননি। নয়ত খেয়াল করেও তাকাননি। উনার মুখোমুখী বসে বার কয়েক কাঁশলাম। তিনি বই থেকে মুখ তুলে তাকান, বলেন, “কালকে আমার পরিক্ষা। পড়তে দে।”

বিস্মিত কণ্ঠে বলি, “আপনি তো আমাকে ছুটি দেননি।”

“আমি পড়ব তুই চুপচাপ সামনে বসে থাকবি। আজকাল সারাক্ষণই তো পড়িস। দুই ঘন্টা বসে থাক।”

কথা শেষে আবার বইয়ে মুখ গুজেন। সানন্দে কথাগুলো মেনে নেই। নিজ চেয়ারে বসে উনাকে দেখতে থাকি। টেবিলে ভর দিয়ে দুগালে হাত রাখা। তিনি কিছু সময় পর পর পড়তে পড়তে মুখ তুলে তাকান। চোখাচোখিতে প্রত্যেকবার হেসে মাথা নুয়িয়ে বইতে মনোযোগী হন। খুটিয়ে দেখতে দেখতে পুরনো অভ্যাসটা পেয়ে বসল। মনের তোতাপাখি জোর গলায় বলতে লাগল, “কি হে জিসান, রূপচর্চা ইদানিং বেশি করছিস তাই না? রূপ এমন খুলে খুলে পরছে কেন? দিব্যি আমাকে বসিয়ে পড়ে যাচ্ছিস। একটু এদিকে তো তাকা!”

জিসান ভাই চমকে তাকান। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকেন। আমি ভড়কে যাই। বলি, “কি হয়েছে এভাবে কি দেখছেন?”

“এইমাত্র কি বললি তুই?”

আমতা আমতা করতে থাকি। বলি, “কি বলেছি? কিছুই তো বলিনি!”

“ঠাটিয়ে চড় লাগাব। তুই এইমাত্র আমাকে তুই তোকারি করলি!”

আমি থ বনে তাকিয়ে থাকি। খাপছাড়া পাগল পাগল বোধ করি। উনার তীর্যক চোখে এদিক ওদিক তাকাই। বলি, “কথাগুলো কি সত্যিই আমার মুখ দিয়ে বেরিয়েছে নাকি আপনি কল্পনা করলেন?”

তিনি শীতল দৃষ্টিতে তাকান। ধমকে বলেব, “যা রুম থেকে বেরো। থাকতে হবে না তোর!”

করূণকণ্ঠে বলি, “মুখ থেকে ভুলে ভুলে জোরে বেরিয়েছে। এমন করেন কেন?”

উনার দৃষ্টি কঠিন হয়, “তাহলে তুই মনে মনে আমাকে তুই তোকারি করিস?”

এমন একটা অবস্থা! অস্বীকারও করতে পারি না। স্বীকারও করতে পারি না। দুটোর মাঝখানে থেকে শুধু গাল ফোলাই। তিনি বাজখাই ধমকে উঠেন, “এক্ষুনি রুম থেকে বেরিয়ে যা!”

এই কয়েকদিন ধমক, চোখ রাঙানো না দেখায় গায়ে লাগল ব্যাপারটা। ছোট্ট একটা বিষয়ে এত সিনক্রিয়েট করার কি আছে! রেগে আমিও উঠে দাঁড়াই। উনার দিকে আর তাকাই না। রেগে জোর পায়ের শব্দ তুলে রুম থেকে বেরিয়ে পরি। উনার রুম অতিক্রম করে ড্রয়িং রুমে যেতে গিয়েও দ্রুতপদে ফিরে আসি। উনি তখনও দরজার দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে। আমাকে ঢুকতে দেখে রেগে গেলেন আরও। কিছু বলছিলেন। সেসব না শুনে কাছে গিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে ধরি। দুহাতে মুখটা তুলে এলোমেলোভাবে সারামুখে ঠোঁট ছোয়াঁতে শুরু করি। গালে ছোট্ট কামড় দিয়ে দূরে সরে দাঁড়াই। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি পাথর হয়ে বসে। কোমড়ে এক হাত রেখে, আরেকহাতে শাসিয়ে বলি, “এটা আপনার আজকের আর সেদিনের শাস্তি! বিনা অনুমতিতে ঐদিন কপালে চুমু খেয়েছিলেন! আর আজকে বাজে ব্যবহারের জন্য কামড়! বহুত অসভ্য আপনি।”

উনার হতভম্ব ভাব কাটার আগেই আবার দ্রুতপদে ফিরে আসি। তিনি হতভম্ব হয়ে আধা ঘন্টা পর কল করেছিলেন। কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেছে। ধরিনি। লাগাতার ফোন করে না পেয়ে মেসেজ করেন, ‘ঝুম, তুই কি ফিরে এসেছিলি আবার?’ দুঃখে, কষ্টে, রাগে ফোনটাই সুইচ অফ করে রাখি। পরেরদিন তিনি চেয়ার কাছে টেনে নিয়ে আদুরেভাবে রাগ ভাঙিয়ে ছিলেন। আমাদের এরকম হাজারো এলোমেলো স্মৃতিদের প্রতিদিন বাধা ঐ দুঘন্টায় একটু একটু করে কুড়াই। স্মৃতির ঝুলি ভারী করি।

এইচএসসি এসে গেল। বই সব শেষ তবু মাঝে মাঝে দুস্বপ্ন দেখি আমি পরিক্ষায় কিছু লিখতে পারি না। লিখতে গেলে দেখি কিছু পারি না। নয় হাতে কলম থাকে না। একদিন দেখলাম আমি মেডিক্যালে চান্স পাইনি। ফিজিক্সেও নাকি ফেল করেছি। এসব স্বপ্নে মাঝরাতে ঘুম থেকে জেগে জিসান ভাইকে ফোন করে কান্নাকাটি করি। তিনি ঘুম জড়ানো কণ্ঠে স্বান্তনা দেন। বোঝান এগুলো অত্যধিক চিন্তার ফলাফল। একসময় ঘুমিয়েও পরি আবার। প্রথম পরিক্ষা এল। বাংলা। প্রথমদিন ভাইয়া, আপু নিয়ে যাবে। রেনু খালাও যেতে চান। আমি নার্ভাসনেসেও হেসে ফেলি, বলি, “ভাইয়া কম পরল না? শাহানা আন্টিকেও সাথে নেই?”

ভাইয়া আমার জন্য কেন যেন চিন্তিত। কথা শুনে, “হু” বলে একবার তাকাল। বুঝলাম কথাটা কানে যায়নি। বুঝে পর জোরেজোরে মাথা নাড়ে, “তুই চাইলে অবশ্যই সাথে নিবি। বলে এসেছিস ও বাসায়?”

আমি সম্মতি দিলাম। ফাইল নিয়ে জুতো পরে বেরলাম। জিসান ভাই সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন। চোখাচোখিতে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন। ভেতরটা হঠাৎ কেঁপে উঠে। উনি কি ভাল নেই? তিনি ম্লান হেসে বলেন, “ভাল করে পরিক্ষা দিস।”

উজ্জ্বল হাসলাম। প্রতিউত্তরে বললাম, “আপনি অসুস্থ?”

ভাইয়াও সপ্রশ্ন চোখে তাকিয়ে উনার এককাধ জড়িয়ে ঝাকান। উনার পেটে হালকা ঘুষি মারেন, “তোদের গোষ্ঠীটাই এমন রোগাটে নাকি?”

জিসান ভাই অসম্মতিতে মাথা নেড়ে অপলক তাকিয়ে থাকেন। এই স্থির দৃষ্টিতে মনে হলো অভিমানের চাদর হয়ত টেনে দেয়া। গতকালও তো ঠিক ছিল। ভাবতে বসলাম গতকাল কি বলেছেন। কই ঠিকই তো ছিলেন। হ্যা সপ্তাহখানেক যাবত দেখা হয় না। কিন্তু কথা তো দৈনন্দিন চলছে। হঠাৎ ইচ্ছে জাগল উনার বাইকের পেছনে চড়ে হল পর্যন্ত যাওয়ার। ইচ্ছে ইচ্ছেই রইল। পূরণ আর হলো না। তিনি চলে গেলেন হসপিটালে। আমরা গাড়িতে করে হলের সামনে এলাম। একের পর এক পরিক্ষা হতে থাকে। দেখার সাথে সাথে কথাও কমে আসে। অংক পরিক্ষা পরশু মাঝে দুদিন ছুটি পেয়েছি। অংক করছিলাম ফোন বেজে উঠে তখন। ফোন ধরি। ওপাশের কণ্ঠ আসে, “কি করছিস?”

“পড়ছি।”

“বন্ধ করে ছাদে আয়।”

“পরশু আমার ম্যাথ পরিক্ষা!”

“ঢং করিস না। আজকে সারাদিন পড়েছিস। কাল সারাদিন আছে। পরশু সকালও পাবি। আমি জানি তোর বইগুলো অনেক আগেই শেষ। তাই ঝটপট ছাদে আয়।”

ঘড়ি দেখি। সাড়ে বারোটা। ওড়না নিয়ে বের হই। অন্ধকারে ফোনস্ক্রিনের আলো ফেলে সিড়ি বেয়ে উঠে আসি। উনি বর্ডারের কাছে। এদিক ফিরে দু কনুইয়ে ভর রাখা। হালকা এলিয়ে দাঁড়ানো। আমি ঠোঁটে হাসি নিয়ে এগিয়ে যাই। তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ান। কাছাকাছি হতে দুহাত প্রসারিত করেন। ঝাপ্টে ধরি উনাকে। আমার মুখটা ওপরে তুলে এলোমেলোভাবে মুখের সর্বত্র ঠোঁট ছোয়াতে লাগলেন। এতদিন পর উষ্ণ ছোয়াদের পেয়ে কান্না পেল। সপ্তাহ খানেক ছিলেন না। পরিক্ষার চিন্তা, পড়ার চাপে কথাও ঠিকঠাক হয়নি। হয়ত ঘুমোনোর আগে একবার ক্লান্তকণ্ঠে হ্যালো বলা হয়েছে। ওপাশ থেকে উনার পুরুষালী কণ্ঠটা আসত। প্রচন্ড ক্লান্তিতে মনে হত সুখ ছোয়া পেলাম। চোখ খুলে রাখতে পারতাম না। পরেরদিনও একই কান্ড! তিনি বকতেন না। বরং ওপাশ থেকে চাপা অভিমানের কণ্ঠ আসত। ঠোঁট ছোঁয়ানো শেষে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিলেন। বললেন, “বেশি পড়াকু হয়ে গেছিস। আমাকে পাত্তাই দিস না আর। এমন চলতে থাকলে বিয়ে করে অশিক্ষিত করে রাখব।”

উনার বুকে গাল ঘষে হাসি। বলি, “আপনাকে লোকে ছি ছি করবে। বলবে শাফির বউ শুধু ইন্টার পাস!”

“একদম এই নামে ডাকবি না। জিসান ডাকিস জিসানই ডাকবি।”

উনার বুকে আলতো কামড় বসাই। উনি একহাতে জড়িয়েই আরেকহাতে মাথায় জোরে গাট্টা মারলেন। বললাম, “আপনাকে লোকে শাফি ডাকে তাই ঐ নাম বলেছি। মাথার যুক্তি তারগুলো সব ছিড়ে বসে আছেন।”

“বেশি কথা বলিস।”

“আর কতক্ষণ জড়িয়ে থাকবেন? এবার ছাড়ুন!”

“সারাক্ষণ রাখব। তোর কি? পারিস শুধু বই মূখস্ত করতে, আর ফোন দিয়ে হ্যালো বলার পর বেহুশ হতে। গ্রামে গেছি কখন পৌছলাম, খেয়েছি কিনা, কবে আসব কোন প্রশ্ন নেই। চোখের আড়ালে গিয়েছি তাতেও আক্ষেপ নেই। সত্যি করে বল টাইমপাস করছিস কিনা। যদি সত্যি হয় তোকে জ্যান্ত কবর দিব!”

আমি মাথা নেড়ে না করি। তিনি নিশ্চুপ। চোখ জোড়া আমাতে নিবদ্ধ। মায়াভরা কণ্ঠে একসময় বলেন, “এ কদিন প্রচুর মিস করেছি তোকে। তুই খবরই নিসনি আমার।”

পায়ের পাতায় উঁচু হয়ে উনার নরম চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেই। এক কান ধরে বলি, “পড়ার চাপ ছিল খুব। সরি।”

তিনি মুগ্ধকরা হাসিটা দিলেন। হাতটা মুঠোয় নিয়ে কথা বলতে বলতে ছাদের কর্ণারে রাখা বেঞ্চিতে নিয়ে এলেন।

“এটা এখানে কোত্থেকে?”

“আনিয়েছি।”

বিস্ময়ে তাকাই। বলেন, “চটপট বসে যা। এতদিন খোজ নিসনি এখন সেবা কর আমার।”

না বুঝে বসে গেলাম। বেঞ্চটা এমনি বেঞ্চ থেকে একটু মোটাসোটা আর লম্বা। প্রথমে মাঝখানে বসে ছিলাম। সেখান থেকে সরিয়ে একবারে কর্ণারে বসালেন। পা গুটিয়ে বসেছি। কোলে মাথা রেখে তিনি সটান সুয়ে পরেন বেঞ্চটায়। বড় বেঞ্চ। তবু উনার পা বেরিয়ে। কোমড় জড়িয়ে ধরলেন দুহাতে। কেঁপে উঠলাম। বলেন, “মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দে।”

কথা পালন করতে থাকি। নরম চুলগুলো হাতের ভাজে নিয়ে হালকা টেনেও দিচ্ছি। তিনি একসময় সোজা হন। ওপরে মুখ তুলে বলেন, “গ্রামের চাঁদনী রাত দেখেছিস কখনো?”

মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে অসম্মতি দেই। তিনি আমার একহাত বুকে জড়িয়ে ধরেন। বলতে থাকেন, “গ্রামের চাঁদনী রাত অপূর্ব! গ্রামে বাসার ছাদ থেকে যখন আশপাশে তাকাই সাদাটে আলো আধারির খেলাটা দারূণ লাগে। মনটা একটুতে ভাবুক হয়। আফসোস হয়, ‘ইস, মনের মানুষটা থাকলে!’ মন চায় মুগ্ধতামাখা এই সৌন্দর্য বাধাই করে রাখি। ক্যামেরায় তখন আশপাশ ভাসে না। যদি ভাসত যদি ক্যামেরায় সম্পূর্ণ এলাকা বন্দি করা যেত আমি বন্দি করে নিয়ে আসতাম তোর জন্য। আমার অনেকদিনের ইচ্ছে তোকে সাথে নিয়ে চাঁদনী রাতে ছাদে বসে থাকার।”

“আমার না আঠারো হয়ে গেছে চলুন বিয়ে করে ফেলি।”

সশব্দে হাসেন, “লোভ দেখাস না রে। এমনিই কবে পড়া শেষ হবে সে আশায় মুখিয়ে আছি!”

“আপনার আর কি চিন্তা। পড়া শেষ করবেন আর কলেজ টুকে নিবে আপনাকে!”

“বললেই হলো। নাও নিতে পারে।”

“এমন যুক্তিহীন কথা বলবেন না তো। আমি খালার থেকে শুনেছি। আপনাকে ওখানেই জয়েন করতে দেয়ার সম্ভবনা আছে।”

“আমি চাকরি পেলেই তোকে বিয়ে করব। দিবে তোর ভাইয়া?”

কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম, “না মনে হয়। মামার এতে ঘোর নিষেধাজ্ঞা। পড়া শেষ নাহলে বিয়ে করা যাবে না।”

“গাধা পরিবার তোদের!”

ছোট্ট এক শ্বাস ফেলি। তিনি হাতের উল্টোপিঠে আর পাতায় একবার ঠোঁট ছোঁয়ান, বলেন, “তোর অংকে কোন সমস্যা নেই? থাকলে কালকে চলে আয় আমাদের বাসায় আমি বুঝিয়ে দিব।”

ঠোঁট টিপে হাসি। বলি, “আপনি সামনে থাকলে আমার পড়ায় মন বসবেনা না। তাছাড়া অংকে কোন সমস্যাই নেই আমার। সবশেষ শুধু আরেকবার চোখ বোলানো।”

তিনি মুখ বেকান, “আরে আছে। তুই বাসায় গিয়ে দেখিস। আর আমার সামনে মনোযোগ না বসলে কার সামনে বসবে ইফাজের সামনে? মেরে ভুত করে দিব।”

আমি সশব্দে হাসতে থাকি। তিনি মুখ তুলে তাকিয়ে থাকেন। বাচ্চাদের মতো জেদধরা কণ্ঠে বায়না করার মতো বলেন, “সাদ ভাইয়ের পরশু মিটিং নেই? তোর ভাইকে জোর করে মিটিং গছিয়ে দিবি তো। পরশু আমার বাইকে যাবি।”

~চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here