তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -২১

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২১

কল লিস্ট এ ঢুকে একটা নাম্বার বের করলো আবরার। নাম্বার টা তার ফোনে “মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি” নামে সেভ করা। আবরার বাঁ*কা হেসে সেই নাম্বারে কল দিলো।

অন্যদিকে ফ্রেস হয়ে, রাতের খাবার খেয়ে একবারে পড়তে বসেছে আরশি। রিফা তাকে এক মগ ভ*রে ক*ড়া করে বানানো চা দিয়ে গেছে। যাতে তার পড়ার সময় ঘুম না আসে। মেয়ে টা তার সব কিছুর খেয়াল রাখে ভেবে হাসলো আরশি। চায়ে চু*মু*ক দিতে দিতে শী*ট দা*গা*তে লাগলো সে। এমন সময় ফোন টা বে*জে উঠলো তার। পড়ার সময় ফোন বে*জে উঠায় বি*র*ক্ত হলো আরশি। কপাল কুঁ*চ*কে ফোন হাতে নিলো সে। সেভ করা নাম্বার নয় তবে এই নাম্বার টা চেনে আরশি। হ্যা, এটাই তো সেই নাম্বার যেই নাম্বার থেকে কল পাওয়ার অপেক্ষা করতো সে। চাইতো একটা কল অন্তত আসুক তার ফোনে। কিন্তু আসে নি। তবে আজ কেনো? না চাইতেও অ*ভি*মান হলো আরশির। ধরবে না সে এই লোকের ফোন। কেনো ধরবে? এতগুলো দিন তো লোকটা একবারও তাকে ফোন দেয় নি। তার খোঁজ নেয় নি। সে ফোন টা সাই*লেন্ট করে রেখে আবার শী*ট দা*গা*নোতে মনোযোগ দিলো। কিন্তু সেই মনোযোগ বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারলো না। কারণ আবরার একাধারে কল দিয়েই যাচ্ছে।

রা*গ হলো আরশির। রে*গে ফোন রিসিভ করে তে*জের সাথে বললো,

— স*ম*স্যা কি আপনার? এতদিন পর কেনো ফোন দিয়েছেন? এতদিন তো একবারও ফোন দিয়ে খোঁজ নেন নি। তাহলে আজ কেনো ফোন দিচ্ছেন? আর একাধারে কেনো ফোন দিয়ে যাচ্ছেন হ্যা?

কথাগুলো বলে জো*রে জো*রে শ্বাস নিতে লাগলো আরশি। অপর পাশে আবরার বো*কার মতো ফোন কানে লাগিয়ে বসে আছে। আরশি এতো রে*গে গেলো কেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো তার। কয়েক সেকেন্ড নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে আবরার বললো,

— আর ইউ ওকে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? এতো রে*গে আছো কেনো? কিছু হয়েছে কি?

হু*স ফিরলো আরশির। জিভে কা*ম*ড় দিলো সে। বুঝতে পারলো রা*গের ব*শে উ*ল্টা*পা*ল্টা কথা বলে ফেলেছে। আবরার কেনো তাকে ফোন দিবে, তার খোঁজ খবর নিবে? তার কি ঠে*কা পড়েছে নাকি খোঁজ খবর নেয়ার? আর সে কিনা ব*ল*দের মতো আবরার কে এসব বলেছে। এসব ভেবে দেয়ালে নিজের মাথা পি*টা*তে ইচ্ছা করছে আরশির। এখন নিশ্চয় এই অ*সভ্য লোক তার কথার মজা উ*ড়া*বে, তাকে খোঁ*চা দিবে। আরশি একটা ঢো*ক গি*ল*লো। নাহ দ*মে গেলে চলবে না। নাহলে এই লোক তাকে আরও ল*জ্জা দিবে। আরশি নিজেকে বুঝ দিয়ে গলা ঝা*ড়*লো। ঝাঁ*ঝা*লো কণ্ঠে বললো,

— আমি ঠিক আছি। আমার আবার কি হবে? আর কোথায় আমি রে*গে আছি? কিছুই হয় নি আমার। কিন্তু আপনি কেনো এতো রাতে ফোন করেছেন?

আরশির কথা বার্তা অ*স্বাভাবিক লাগলো আবরারের। কিছু একটা মাথায় আসতেই শ*য়*তানি হাসি দিলো সে। বললো,

— তুমি যে আমার পিএ তা কি ভু*লে গেছো মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আরশি মুখ বা*কি*য়ে বললো,

— আমি আপনার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, পার্সোনাল সম্পত্তি না যে যখন ইচ্ছা তখন ফোন করবেন।

আবরার আরশির কথা শুনে বিড়বিড় করে বললো,

— হতে কতক্ষন?

আরশি স্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলো না আবরারের কথা। কপাল কুঁ*চ*কে বললো,

— কি বলছেন এতো আস্তে? কিছুই তো শুনতে পাচ্ছি না। আর কি জন্য ফোন দিয়েছেন জলদি বলুন।

আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,

— আমি তো অফিসিয়াল কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো অন্য একটা বিষয় জানতে ইচ্ছা করছে।

আরশির কপাল আরও কুঁ*চ*কে আসলো। জিজ্ঞাসা করলো,

— কি?

আবরার স*ন্দি*হান কণ্ঠে আরশি কে জিজ্ঞাসা করলো,

— তুমি কি আমাকে মিস করছিলে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? তোমার কথাগুলো শুনে মনে হলো তুমি আমাকে খুব বেশি মিস করছিলে। অপেক্ষা করছিলে আমি কখন তোমায় কল করবো। চাচ্ছিলে আমি ফোন করে তোমার খোঁজ খবর নেই। কিন্তু এমন টা না করায় ভীষণ অ*ভি*মান হয়েছে তোমার। আমার ধারণা কি ঠিক?

আবরারের কথাগুলো শুনে কান গরম হয়ে আসলো আরশির। বুঁকের ধু*ক*পু*কা*নি বে*ড়ে গেছে তার। ঠিক এটারই ভ*য় পাচ্ছিলো সে। আর তাই হলো। আবরার ধরে ফেলেছে আরশির রা*গ করে বলা কথাগুলোর মানে। আরশি শুকনো একটা ঢো*ক গি*ল*লো। তার শ্যাম মুখশ্রী ফ্যা*কা*সে বর্ণ ধারণ করলো। এখন কি বলবে সে? অন্যদিকে আরশির কোনো সারা শব্দ না পেয়ে আবরার ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। বলে উঠলো,

— তারমানে আমি যা ভাবছি তাই ঠিক? তুমি আমাকে মিস করছিলে? কিন্তু কেনো মিস করছিলে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আরশি ফোন টা কানের কাছ থেকে সরিয়ে দুই তিনবার বড় বড় শ্বাস নিলো। মনে মনে নিজেকে বললো,

— যেভাবেই হোক কথা কা*টা*তে হবে। নাহলে এই অ*সভ্য এমপি সাহেব আমাকে ল*জ্জা দিতেই থাকবে। তারচেয়ে বড় কথা উনি ভাববে আমি বে*হা*য়া। নাহ, উনাকে কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না। আর আমারও নিজেকে সামলাতে হবে। আমার উনার প্রতি দু*র্ব*ল হওয়া মোটেও ঠিক নয়।

আরশি ফোন টা আবার কানের কাছে নিলো। ঝাঁ*ঝা*লো কণ্ঠে বললো,

— এসব গাঁ*জা*খু*রি চি*ন্তা ভাবনা করা ছাড়ুন। আমি আবার আপনাকে মিস করতে যাবো কেনো? ইন ফ্যাক্ট আমার ফোনে তো আপনার নাম্বার টাও সেভ করা নেই। তাই আমি অন্য একজন কে ভেবে আপনাকে কথাগুলো বলে ফেলেছি। তাই এসব আ*ও*ফা*ও ভাবনা মাথা থেকে ঝে*ড়ে ফেলুন। আর আমি আপনার পিএ আপনার অফিসে, বাসায় আসার পর আমি আপনার পিএ নই আর আপনিও আমার বস নন। তাই যখন তখন ফোন দিবেন না। আমি পড়তে বসেছি। আশা করছি আর ফোন দিবেন না।

কথা শেষ করে খ*ট করে কল কে*টে দিলো আরশি। আবরার কে কিছু বলার সুযোগটাও দিলো না। ফোঁ*স করে একটা শ্বাস ছাড়লো সে। এমন টা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না তার। চুলগুলো খা*ম*চে ধরলো সে। আবরারের সাথে এভাবে কথা বলে বুকের মধ্যে কেমন একটা চি*ন*চি*ন ব্য*থা অনুভব করছে আরশি, ভীষণ ক*ষ্ট হচ্ছে তার। চোখে জল চলে এসেছে কিন্তু গ*ড়ি*য়ে পড়তে দিচ্ছে না। আরশি নাক টে*নে বিড়বিড় করে বললো,

— কেনো এমন হচ্ছে আমার সাথে? কেনো? এ কোন অ*সুখে আ*ক্রা*ন্ত হলাম আমি? আমি তো উনাকে নিয়ে ভাবতে চাই না। তবুও কেনো উনি সর্বদা আমার ভাবনায় বিচরণ করে? কেনো আমি নিজেকে, নিজের অনুভূতি কে ক*ন্ট্রো*ল করতে পারছি না? আমি তো এমন নই। কোথায় অন্য কাউকে হাজার টা ক*ড়া কথা শুনালেও তো আমার কিচ্ছু যায় আসে না। তবে এমপি সাহেবের বেলায় এমন কেনো? তাকে কেনো দুটো ক*ড়া কথা শুনাতে আমার বুক কাঁ*পে? কেনো ক*ষ্ট হয়? কেনো? কেনো? আমার এই কেনোর জবাব কে দিবে? আর… আর এমপি সাহেব তো আমাকে আর ফোন ও দিবে না হয়তো আজকের ব্যবহারের পর।

আরশি আরও শ*ক্ত করে চুল খা*ম*চে ধরলো। এমন সময় তার ফোন টা ভা*ই*ব্রে*ট করে উঠলো। আরশি দ্রুত ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো আবরারের নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। অ*জান্তেই আরশির ঠোঁটের কোণে চমৎকার হাসির রেখা ফু*টে উঠলো। মেসেজ টা ওপেন করে দেখলো তাতে লেখা,

— তুমি আ*স্ত একটা বে*য়া*দব মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। বসের মুখের উপর কিভাবে কল কে*টে দাও হ্যা? কালকে আসো অফিসে তারপর তোমার বে*য়া*দ*বি ছা*ড়া*নোর ব্যবস্থা করছি আমি।

আবরারের মেসেজ টা পড়ে হাসলো আরশি। মনের মধ্যে অদ্ভুত প্রশান্তির দেখা মিললো যেনো। মেসেজ দিবে না, দিবে না করেও দিয়ে ফেললো।

— আপনি একটা অ*সভ্য লোক এমপি সাহেব…

অপর প্রান্তে আবরার ও আরশির মেসেজ পড়ে হাসলো। মাথা ঝা*কি*য়ে বললো,

— আমি তো অ*সভ্যই। তবে সবার জন্য না।

নিচ থেকে আহিয়ানার চি*ৎ*কার শুনে ফোন রেখে বাইরে আসলো আবরার। ডিনার করার জন্য ডা*ক*ছে তাকে। অন্যদিকে আরশি ও ফোন রেখে পড়ায় মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করতে লাগলো।

——–

ক্লাস শেষে ভার্সিটি থেকে বের হলো আরশি আর তার বন্ধুরা। আহিয়ানা বললো,

— আজকে আমি তোদের সবাই কে লাঞ্চ ট্রিট দিবো।

আবির আর রাহুল লা*ফি*য়ে উঠে বললো,

— সত্যিই?

আহিয়ানা ভাব নিয়ে বললো,

— অবশ্যই মি*থ্যা কেন কমু?

আবির দাঁ*ত বের করে বললো,

— চল, চল আজকে তোরে ফ*কি*র বা*না*মু।

আহিয়ানা ভাবের সাথে বললো,

— হমু না ফ*কি*র। কতো খাইতে পারোস দেখমু।

আরশি ঘড়ি দেখে মুখ টা কালো করে বললো,

— আমি আসতে পারবো না রে। আমাকে অফিসে যেতে হবে। এমনিতেই লে*ট হয়ে গেছি আজকে। ঠিক টাইমে পৌঁছাতে পারবো কিনা কি জানি? তোরা যা।

আরশির কথায় সবার মুখ টা ছোট হয়ে গেলো। মোহনা বললো,

— আহি দোস্ত আমরা অন্য একদিন ট্রিট টা নেই। আজকে তো আরুর সময় নাই। যেদিন ছুটি থাকবে সেদিন যাবো।

সবাই মোহনার কথায় সায় জানালো। কিন্তু আরশি ওদের কে বললো,

— আরে তোরা যা তো। একদিন আমি না থাকলে কি হবে? আমি নাহয় অন্যদিন আহির থেকে ট্রিট নিয়ে নিবো। তোরা এনজয় কর।

কেউ রাজী হলো না। তারা কিছুতেই যাবে না আরশি কে ছাড়া। আরশি অনেক বুঝিয়ে ওদের রাজী করালো। একটা লাঞ্চ ই তো। তাকে ছাড়া করলে কি এমন হবে? শুধু শুধু ওর জন্য কেনো ওরা মিস করবে? সব মুখ কালো করে আহির সাথে গেলো। আর আরশি হাঁ*টা ধ*র*লো রিকশা নেয়ার জন্য। কিন্তু একটু আ*গা*তেই অনেক গুলো গাড়ি এসে থামলো আরশির সামনে। আরশি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো গাড়িগুলোর দিকে।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। আজকের পর্বে ভালো রেসপন্স পাবো আশা করছি। সবাই রেসপন্স করবেন। ভালো রেসপন্স পেলে নেক্সট পর্ব দ্রুত দেয়ার চেষ্টা করবো। 💖)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here