তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -২০

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২০

আবরার বাড়ি ফিরে একটা হ*ট শাওয়ার নিলো। দিনে দুইবার শাওয়ার নেয়া তার ডেইলি রুটিন। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে শাওয়ার না নিলে শান্তি পায় না সে। সোফায় বসে টাওয়াল দিয়ে চুল মু*ছ*তে মু*ছ*তে আরশি কে রা*গা*নোর মোমেন্ট গুলো ভেবে মিটমিট করে হাসছে সে। এমন সময় একটা মেয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে বসে বললো,

— কিরে প্রেমে ট্রে*মে পড়লি নাকি? একা একা পা*গ*লের মতো হাসছিস যে? ইহা তো নয়া নয়া প্রেমে পড়ার লক্ষণ।

হাসি বন্ধ হয়ে গেলো আবরারের। গলা থেকে মেয়েটার হাত টা সরিয়ে কপাল কুঁ*চ*কে বললো,

— আহির বাচ্চা স*ম*স্যা কি তোর? যখন তখন বাঁ*দ*রের মতো গলা ধরে ঝু*লে পড়িস কেনো? আর বেশি পেঁ*কে গেছিস না? বাবাই কে বলে জলদি তোকে বি*দা*য় করার ব্যবস্থা করছি দাঁড়া। আর কয়েকটা দিন। তারপর তোকে বি*দা*য় করবো।

মুখ টা অ*ন্ধ*কার হয়ে গেলো আহিয়ানার। আহিয়ানা সম্পর্কে আবরারের একমাত্র ছোট বোন। বাড়ির সবার অনেক আদরের সে। সবার চোখের মনি। ভীষণ আদুরে আর নরম মনের। তাই তো আবরারের মজা করে বলা কথাগুলোতেও ক*ষ্ট পেলো সে। আবরার একমাত্র আদরের বোন কে এভাবে মুখ কালো বসে থাকতে দেখে বুঝলো তার ছোট বোন টা ক*ষ্ট পেয়েছে। তাই সে আহি কে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

— কি হয়েছে আমার ছোট্ট বুড়িটার? এই সামান্য কথায় এতো ক*ষ্ট পেয়েছিস? আমি তো মজা করে বলেছি।

আহি ভাইয়ের আদর পেয়ে ফুঁ*পি*য়ে উঠলো। ফুঁ*পা*তে ফুঁ*পা*তে বললো,

— তোর এতো তা*ড়া আমাকে ভা*গা*নোর? ছাড় আমাকে। তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না। ছাড় তুই। তোর সাথে আ*ড়ি। কথা নাই আমার।

আহি ছাড়তে বললেও ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা করলো না। ছোট বেলা থেকেই ভাই পা*গ*ল সে। ভাই কে অনেক ভালোবাসে। তাই ভাই একটু উনিশ থেকে বিশ কিছু বলে ফেললেই কাঁ*দ*তে বসে সে। আবরার বোনের স্বভাব ভালোই জানে। সে আহির মাথায় হাত বু*লাতে বু*লাতে বললো,

— আচ্ছা যা তোর বিয়ে ক্যা*ন*সে*ল। আমি রাদিফ কে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি বিয়ে ক্যা*ন*সে*ল। তুই ওকে বিয়ে করবি না। কাউকেই বিয়ে করবি না।

আবরার কথা টা বলে ফোন হাতে নিতেই চ*ট করে ফোন কে*ড়ে নিলো আহি। কা*ন্না গা*য়েব তার। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— অ*সভ্য, ফা*জি*ল ছেলে। কথায় কথায় রাদিফ কে ফোন দিতে যাস কেনো হ্যা? তুই এখন একটা বলবি আর ওই বেটা আমাকে সারারাত ফোন দিয়ে দিয়ে পা*গ*ল বানাবে। আর এই কথা বললে ফোনের ভেতর থেকেই আমার গলা না চে*পে ধরে?

আবরার বোনের কথায় শব্দ করে হেসে ফেললো। আহি আবরারের বাহুতে কি*ল দিয়ে বললো,

— শুন আমি অন্য একটা কথা জানতে এসেছিলাম।

আবরার হাসি থামিয়ে ভ্রু কুঁ*চ*কে তাকালো। বললো,

— কি?

আহি আবরার কে মনে করানোর ভ*ঙ্গিতে বলতে লাগলো,

— ওই যে আমার ফ্রেন্ড আছে না আরশি? মনে আছে তোর?

আবরার না চেনার ভা*ন ধরে বললো,

— কোন আরশি?

আহি বললো,

— আরে ভার্সিটি তে অনুষ্ঠানের দিন বাসায় ফিরে যে আমাকে আমার সব ফ্রেন্ড এর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলি? মুন, আরশি। তুই তো মুনের সাথে কথাও বলেছিস, মুনের পাশেই তো আরশি ছিলো।

আবরার মনে পড়ার ভ*ঙ্গিতে বললো,

— হ্যা হ্যা মনে পড়েছে। কি হয়েছে তার?

আহি বললো,

— সে তো আমাদের অফিসে চাকরি পেয়েছে। তোর সাথে দেখা হয়েছে?

আবরার আহির কথায় তা*ল মিলিয়ে বললো,

— হ্যা আমাদের অফিসেও একজন নিউ এসেছে, নাম আরশি রহমান। সেই নাকি? আমি তো চিনতেই পারি নি তোর ফ্রেন্ড কে।

আহি মাথা কা*ত করে বললো,

— তুই আবার এতো ভো*লা মন কবে হলি? যাই হোক কেমন কাজ করেছে ও? কেমন মনে হলো তোর? আমিই ওকে আমাদের অফিসের খোঁজ দিয়েছিলাম আর সে চাকরি ও পেয়ে গেছে। বাবাইয়ের তো সেই পছন্দ হয়েছে ওকে। ইন্টারভিউ নিয়ে আসার পর থেকে শুধু ওর প্রশংসা করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে। আসলে ও মেয়েটাই এমন। তোর কেমন লাগলো?

আবরার হাই তু*লে বললো,

— মেয়ে টা একটু বে*য়া*দব আছে বুঝলি? প্রথম দিন এসেই মিস প্রিয়ার সাথে ঝা*মে*লা পা*কি*য়েছে। তাই ওকে আমার পিএ বানিয়ে ফেলেছি। এখন আমি সোজা করবো ওকে।

আহি মুখ বাঁ*কা করে বললো,

— তোর মিস প্রিয়াই একটা শ*য়*তা*ন্নি, পে*ত্নী মহিলা। আমার বান্ধুবীর দো*ষ দিবি না। ও অনেক ভালো হুহ।

আবরার আহি কে ভে*ঙি*য়ে বললো,

— হয়েছে আর বান্ধুবীর তারিফ করতে হবে না। এই নে আমার ক্রেডিট কার্ড। কালকের দিনটার জন্য এটা তোর। যা ইচ্ছা করতে পারিস।

আহি চোখ বড় বড় করে লা*ফ দিয়ে উঠলো। দুই গালে হাত দিয়ে বললো,

— সত্যি বলছিস? তুই আমাকে নিজের ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছিস তাও আবার নিজের ইচ্ছা তে? এই এটা তুই তো? নাকি অন্য কেউ? দেখি দেখি তুই ঠিক আছিস তো?

বলে আবরারের কপালে, গালে হাত দিয়ে প*রী*ক্ষা করতে লাগলো আহি। আবরার কপাল কুঁ*চ*কে বললো,

— তোর না লাগলে দিয়ে দে। দে আমার কার্ড ফিরত আর বি*দা*য় হ যাহঃ।

আহি এক লা*ফ দিয়ে দূরে সরে গেলো। কার্ড হাতের মুঠোয় পুরে দাঁ*ত কে*লি*য়ে বললো,

— আরে না না কি যে বলিস? এতো বড় একটা সুযোগ হাত*ছা*ড়া করা যায়? কালকে তোর টাকা দিয়ে জ*ম্পে*শ শপিং করবো, ফ্রেন্ডদের ট্রিট দিবো। হুরররে।

আহির কা*ণ্ডে হাসলো আবরার। আহি আবার আবরারের কাছে এসে বললো,

— কিন্তু আমাকে নিজের কার্ড দেয়ার মতো মহান কাজ কিভাবে হলো তোর দ্বারা? সেটা তো বল?

আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,

— তুই এতো বড় মহান কাজ করলি, আমার এতো বড় উপকার করলি তাই তো ট্রিট হিসেবে দিলাম।

আহি বাঁ*কা চোখে তাকালো আবরারের দিকে। সে আবার কবে কোন মহান কাজ করলো যে তার ভাই এতো খুশি হলো? আবরার আহি কে স*ন্দি*হান চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,

— এবার ভা*গ আমার রুম থেকে নাহলে কার্ড ফেরত নিয়ে নিবো কিন্তু।

আহি আবরার কে জিজ্ঞাসাই করতে যাচ্ছিলো যে সে কোন মহান কাজ টা করেছে। কিন্তু আবরার কার্ড ফেরত নিয়ে নেওয়ার থ্রে*ট দেয়ায় দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এতো বড় সুযোগ সে কিছুতেই হাত*ছা*ড়া করতে পারে না। আবরার যেই জন্যই দিক, দিয়েছে তো। এখন সে ধু*মি*য়ে শপিং করবে ভেবে নাচতে নাচতে নিজের রুমে চলে গেলো আহি।

আহি কে পা*লা*তে দেখে মুচকি হাসলো আবরার। বিড়বিড় করে বললো,

— না জেনেই অনেক বড় উপকার করলি আহি বুড়ি…

আবরার নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে গ্যালারি তে প্রবেশ করলো। একটা পিক জুম করে খুঁ*টে খুঁ*টে দেখতে লাগলো সে। পিক টা দেখে যেনো তার চোখে মুখে একরাশ মুগ্ধতা ছ*ড়ি*য়ে পড়লো। আপন মনে বলতে লাগলো,

— কি মায়ায় ডু*বা*ইলা হে কন্যা,
কি মায়ায় ডু*বা*ইলা?
একবার তাকাইলে,
পলক যেনো পড়ে না।

আবরার নিজের ভেজা, এ*লো*মে*লো চুলে হাত চা*লাতে চা*লাতে বললো,

— আমি বোধহয় সত্যিই পা*গ*ল হয়ে গেছি। এক শুভ্র মায়াবিনীর প্রেমে পা*গ*ল হয়ে গেছি। যেখানে আগে প্রেম, ভালোবাসা কি তাই বুঝতাম না আর এখন কিনা সেই আমি ছন্দ রচনা করছি। মানুষ প্রেমে পড়লে বুঝি কবি হয়ে যায়? নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে হাজারো জ*ল্পনা ক*ল্পনা করে? আমি জানিনা ভালোবাসা কি, কিভাবে কাউকে ভালোবাসতে হয়। তবে আমি প্রতি মুহূর্তে তাকে অনুভব করছি, খুব করে অনুভব করছি। আমার মন আমাকে প্রতি মুহূর্তে জানান দেয়, তাকে ভু*লে থাকা আমার পক্ষে অ*সম্ভব। সে আমার জীবন, আমার প্রতিটা শ্বাসের সাথে জ*ড়ি*য়ে গেছে। খুব বা*জে ভাবে তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি আমি।

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here