তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -১৯

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৯

আবরারের দুই হাতের মাঝে ব*ন্দি হয়ে আছে আরশি। কেবিনে ঢুকতেই হঠাৎ এমন আ*ক্র*ম*ণের শি*কা*র হবে তা ধারণাতেও ছিলো না আরশির। গোল গোল চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে সে। আবরারের র*ক্তি*ম চোখ, গম্ভীর মুখশ্রী দেখে আরশি বুঝতে পারলো আবরার কোনো কারণে রে*গে আছে হয়তো। আবরারের মুড বুঝে উঠতে পারছে না আরশি। এই হাসে আবার এই রা*গ করে। এই তো কিছুক্ষন আগেও তো ঠিক ছিলো। এখন আবার কি হলো কে জানে?

আরশি সা*হ*স করে আবরার কে বললো,

— এমপি সাহেব আপনার উপর কি জ্বী*ন ভ*র করে নাকি? মানে এই হাসেন আবার এই রা*গ করেন। আর একটু ডিসটেন্স মেইনটেইন করলে ভালো হতো। কথায় কথায় এভাবে কাছে আসেন….

আরশির কথা শেষ হতে দিলো না আবরার। জো*রে একটা ধ*ম*ক দিয়ে বললো,

— চুপপপ, বে*য়া*দ*ব মেয়ে। বসের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও জানো না?

কেঁ*পে উঠলো আরশি। আবরারের ধ*ম*ক দিয়ে বলা কথা শুনে মুখ টা অ*ন্ধ*কার হয়ে গেলো তার। ভীষণ অ*ভি*মান হলো। আবরার তাকে এভাবে ব*কা দিতে পারলো? বে*য়া*দব বলতে পারলো? আবরারের কাছে ব*কা খেয়ে আরশির কেনো যেনো খুব কা*ন্না পাচ্ছে। ইচ্ছা করছে ভ্যা করে কেঁ*দে চোখের পানিতে অফিস আর সাথে আবরারকেও ভা*সি*য়ে দিতে। আরশি ঠোঁট উ*ল্টে মনে মনে বলতে লাগলো,

— বেটা খা*টা*স। কেমনে ব*কা দিচ্ছে আমাকে। কিন্তু আমার এতো কা*ন্না পাচ্ছে কেনো? এই লোকের সামনে আসলে আমি নিজের ইমোশন ধরে রাখতে পারি না কেনো? এটা তো দু*র্ব*লতার পরিচয়। তবে আমি কি উনার প্রতি দু*র্ব*ল হয়ে পড়ছি? এমন টা হলে তো চলবে না। কোথায় সে আর কোথায় আমি? আর তারচেয়ে বড় কথা উনার লাইফে কেউ একজন আছে হয়তো। যাকে উনি ভালোবাসেন।

এসব ভাবতে ভাবতে আবরারের চোখের দিকে তাকালো আরশি। আরশির অ*ভি*মানী মুখ আর ছ*ল*ছ*ল আঁখি জোড়া দেখে নরম হলো আবরার। আরশির দিকে আরেকটু ঝুঁ*ক*তেই চোখ বন্ধ করে দেয়ালের সাথে আরও সি*টি*য়ে গেলো আরশি। আবরার আরশির মুখে আলতো করে ফুঁ দিয়ে বললো,

— ছেলেদের সাথে এতো ঘে*ষা*ঘে*ষি কিসের হ্যা? অফিসে কাজ করতে এসেছো কাজ করবে। ছেলেদের সাথে এতো কিসের কথা? নাকি ছেলেদের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে অনেক ভাল্লাগে?

আবরারের কথায় ঝ*ট*প*ট চোখ খুললো আরশি। ভাবতে লাগলো সে আবার কোন ছেলের সাথে ঘে*ষা*ঘে*ষি করলো। একটু ভাবতেই মাথায় আসলো একটু আগেই সামিরের সাথে কথা বলেছে সে। আবরার কি তাহলে সামিরের কথাই বললো? কিন্তু সে সামিরের সাথে কথা বললে আবরারের কি? চোখ ছোট ছোট করে আবরারের দিকে তাকালো আরশি। স*ন্দি*হান দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমি কারোর সাথে ঘে*ষা*ঘে*ষি করলে আপনার কি স*ম*স্যা? আর কেউ আমার প্রশংসা করলে তাতেই বা আপনার কি? আমার উপর এতো অধিকার কেনো দেখান আপনি? আপনার না কোন শুভ্র পরী আছে? তার উপর গিয়ে যতো ইচ্ছা অধিকার ফ*লা*ন।

আরশির কথায় চো*য়া*ল শ*ক্ত হয়ে আসলো আবরারের। আরশির চোখে চোখ রেখে গম্ভীর স্বরে বললো,

— তার উপর অধিকার ফ*লা*নোর অধিকার এখনো পাই নি আমি। তাই তো এখনো সে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারছে। নিজের ইচ্ছা মতো যা ইচ্ছা তাই করতে পারছে। যখন অধিকার পাবো তখন তাকে নিজের হৃদয় পি*ঞ্জ*রে লুকিয়ে রাখবো। কাউকে তার দিকে তাকানোর সুযোগ দিবো না। সে শুধুই আমার, তার সবকিছু আমার হবে। তার রূপ, সৌন্দর্য সবকিছু দেখার অধিকার শুধু মাত্র আমার থাকবে। আমি চাই সে ভালোবেসে আমায় গ্রহণ করুক। তাই তাকে সময় দিচ্ছি, সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছি। তাকে কোনো কিছু নিয়ে জো*র করার মন মানসিকতা আমার নেই। তবে সে যদি ভু*ল পথে চলে, অন্য কারোর সাথে নিজেকে জ*ড়া*নোর চেষ্টা করে তবে তার হাত পা ভা*ঙ*তে আমার বেশি সময় লাগবে না। তাকে আমারই হতে হবে, By ho*ok or by cro*ok… আর আমার জিনিস আমি নিজের করে রাখতে জানি। সেটা যেভাবেই হোক। বুঝলে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আবরারের শেষের কথাগুলোয় হালকা কেঁ*পে উঠলো আরশি। সে মনে মনে বললো,

— কেমন সা*ই*কো রে বাবা? নিজের ভালোবাসার মানুষের হাত পা ভে*ঙে দিবে বলে? এমপি সাহেবের আচার আচরণ ই বলে দিচ্ছে সে ওই মেয়ের জন্য কতো প*সে*সিভ। হে এমপি সাহেবের শুভ্র পরী তোমার কপালে দুঃ*খ আছে। এই লোক কে সামলাতে গিয়ে তোমার বারোটা না বা*জে। তবে হ্যা মেয়ে টা অবশ্যই লাকি। এমন করে কয় জনই বা ভালোবাসতে পারে? এমন একজন ভালোবাসার মানুষ জীবন সঙ্গী হিসেবে পেলে তার শত পা*গ*লা*মি ও স*হ্য করা সম্ভব হয়তো। ওয়েট, এক মিনিট এমপি সাহেব আমাকে এসব কেনো বললেন?

আরশির ভাবনার মাঝে তু*ড়ি মা*র*লো আবরার। আরশি চ*ম*কে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার দূরে সরে গেছে দেখে স্ব*স্তি*র নিঃশ্বাস ফেললো আরশি। আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,

— মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি আবার এটা ভেবো না আমি তোমাকে মিন করে কিছু বলেছি। আমি তো শুধু তোমাকে একটু স*ত*র্ক করছিলাম আমার শুভ্র পরীর সাথে কি কি করতে পারি তা বলে?

আরশি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আবরারের দিকে। এই লোক এতো জ*টি*ল ভাবে কথা বলে কেনো মনে মনে ভাবলো সে। আবরার আরশির ফেইস এক্সপ্রেশন দেখে বললো,

— বুঝো নি তাই তো? ওয়েট বুঝাচ্ছি। আমি যেভাবে আমার শুভ্র পরী কে অন্য কারোর সাথে স*হ্য করতে পারি না, প্রয়োজন পড়লে তার হাত পা ভে*ঙে বসিয়ে রাখবো তেমন তোমারও তো এমন কোনো সি*ক্রে*ট লাভার থাকতে পারে। পরে দেখা যাবে তোমাকে অন্য কারোর সাথে স*হ্য করতে না পেরে সে তোমার হাত পা ভে*ঙে দিলো। তাহলে কি হবে বলো? আমার তো অনেক বড় ল*স হয়ে যাবে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। মাত্রই তো একটা পিএ পেলাম। কাজের প্রে*সা*র একটু কমলো। তোমার পা ভে*ঙে দিলে আমার পিছে পিছে কিভাবে ঘুরাবো বলো? তাই আগে থেকে একটু স*ত*র্ক করে দিলাম আর কি। ছেলেদের থেকে দূরে দূরে থেকো আর একটু সা*ব*ধা*নে থেকো কেমন?

আবরারের লজিক শুনে তার দিকে বো*কা*র মতো তাকিয়ে আছে আরশি। সব তার মাথার দশ হাত উপর দিয়ে গেছে। মাথা ভ*ন*ভ*ন করছে। এসব কি বললো তাকে এমপি সাহেব? আরশি বো*কা*র মতো তাকিয়ে বললো,

— এমপি সাহেব আপনি বাসায় গিয়ে রেস্ট করুন কেমন? আপনার মাথা আজ ঠিক নেই মনে হচ্ছে। বেশি প্রে*সা*র পড়ায় আপনার মাথা টা বোধহয় গেলো।

আবরার চোখ রা*ঙি*য়ে তাকাতেই আরশি বললো,

— আপনি থাকুন, যা ইচ্ছা করুন। আমি যাই টাটা, বায় বায়।

আরশি দৌড়িয়ে গিয়ে দরজা খুলে যেই বের হতে যাবে অমনি আবরার বলে উঠলো,

— মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আরশি থেমে পিছনে তাকাতেই দেখলো আবরার তার দিকেই এগিয়ে আসছে। আবরার আরশির সামনে এসে বললো,

— কোথায় যাচ্ছ? আমি তোমাকে যেতে বলেছি?

আরশি মাথা দু দিকে না*ড়া*লো। বললো,

— কিন্তু অফিস টাইম তো শেষ। আমি বাসায় যাবো তো?

আবরার বললো,

— তো মানা কে করেছে?

নাক, মুখ কুঁ*চ*কা*লো আরশি। বললো,

— আপনি সত্যিই পা*গ*ল হয়ে গেছেন এমপি সাহেব।

আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,

— তা তো হয়েছি ই একজনের প্রেমে পা*গ*ল। আমার সব পা*গ*লা*মি তো তার জন্যই।

আরশি মুখ বা*কি*য়ে বললো,

— নিজে তো কার না কার প্রেমে পড়ে পা*গ*ল হয়েছেন ই সাথে আমাকেও পা*গ*ল বানাচ্ছেন। এই আপনার মতো তা*র*ছি*ড়া লোক এমপি কিভাবে হলো বলেন তো? আপনাকে কে এমপি বানালো?

আবরার চোখ পা*কি*য়ে বললো,

— সেটা তোমার না জানলেও চলবে। তোমার কাজ কি তা মনে আছে তো? তোমার কাজ আমার পিছে পিছে ঘুরা। নাও ফলো মি….

আরশি গাল ফু*লি*য়ে আবরারের পিছু নিতে লাগলো। বাইরে আসতেই আবরার নিজের গাড়ির ডোর খুলে আরশি কে ভিতরে যেতে বললো। আরশি জে*দ ধরে বললো,

— আমি আপনার সাথে কেনো যাবো? আমি একা যেতে পারবো। আপনার হেল্প এর কোনো দরকার নেই।

আবরার হাই তু*লে বললো,

— তুমি কি চাও আমি তোমাকে কোলে তু*লি অথবা তোমার আব্বাস স্যার কে ফোন করে বলি তুমি আবার বে*য়া*দ*বি করছো, কথা শুনছো না? যদি এসব না চাও তো ভালোয় ভালোয় গাড়িতে ওঠো। আমি তোমাকে কেনো হেল্প করবো? আমি তো নিজের ভালোর জন্যই তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে চাচ্ছি। বলা তো যায় না পথে যদি তোমার কোনো ক্ষ*তি হয়? তাহলে তো আমি আমার মাত্র হওয়া পিএ হা*রা*বো। আমার অনেক বড় ল*স…..

আবরারের কথা শেষ হওয়ার আগেই আরশি ফোঁ*স ফোঁ*স করতে করতে গাড়িতে উঠে গেলো। আবরার বাঁ*কা হেসে নিজেও গাড়িতে উঠে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিতেই আরশি রাগে গ*জ*গ*জ করতে করতে নিম্ন স্বরে বললো,

— অ*সভ্য এমপি একটা…

আরশি নিম্ন স্বরে বলা সত্ত্বেও তা শুনে ফেললো আবরার। আরশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— অ*সভ্য হয়েছি আমার শুভ্র পরীর প্রেমে পড়ে বুঝলে মেয়ে।

আরশি সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে ফোঁ*স করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। পা*গ*ল পা*গ*ল লাগছে তার। ভাবছে সামনের দিনগুলো এই পা*গ*ল এমপির সাথে কিভাবে কা*টা*বে। একদিনেই তার যা অবস্থা। কয়েকদিন গেলে মনে হয় সেও পা*গ*ল টা*গ*ল হয়ে যাবে। এসব ভেবেই মুখ টা কাঁ*দো কাঁ*দো হয়ে গেলো আরশির। অন্যদিকে আরশির চেহারার অবস্থা দেখে মিটমিট করে হাসতে লাগলো আবরার। মনে মনে বললো,

— এটা তো মাত্র শুরু। প্রতিদিন তোমাকে নতুন নতুন উপায়ে পা*গ*ল বানাবো মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। রেডি হয়ে যাও।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here