তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -১৯+২০

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৯
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

বালির ওপর চিকন চিকন লম্বা কোমল ঘাস।ঘাসের ওপর মিষ্টি আর আমি পাশাপাশি বসে আছি।মিষ্টিকে বললাম

” এখন কেমন লাগছে? ”

” ভালো, ”

” ভয়টা কেটেছে?”

” হু ”

” বাড়িতে চলো,বিকেল হয়ে আসছে ”

” কার বাড়ি? ”

” আমার বাড়িতে।তুমি হোস্টেলে থাকবে না।নীলুপুর সাথে আমাদের বাড়িতেই থাকবে। বাবাকে বলেছি,বাবা বলেছেন তোমায় বাড়িতে নিয়ে আসতে ”

” আমি ওই বাড়িতে থাকবো না ”

” এবার কিন্তু আমার হাতে মা’ইর খাবা বুঝছো? ছোট হইছি তো কি হইছে? প্রেমিক সবচেয়ে প্রেমিকার চেয়ে বড়ই হয়,অধিকারটাও বেশী হয় ”

মিষ্টি ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকালো।কিছু বললো না।দু’জনে চুপচাপ বালির ওপর বসে আছি।বাতাসে মিষ্টির চুলগুলো উড়ছে।খোলা চুলে কি সুন্দর’ই না লাগছে।আমি একপলকে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি। মিষ্টি আমার চোখে চোখ রেখে বললো

” তোকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ বিষন্ন, আমি এমন একটা ব্লোকের মধ্যে ছিলাম যে মাথা কাজ করছিলো না,বারবার সেই দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো ”

” সেই দৃশ্য মানে?কোন দৃশ্য? ”

এই প্রশ্নে মনে হলো মিষ্টি বিভ্রান্তিতে পড়লো।হঠাৎ উঠে দারিয়ে বললো

” চল এখন যাওয়া যাক ”

আমিও কিছু বললাম না।মিষ্টির পেছন পেছন হাটছি।ইচ্ছে করছে এই বালুময় বিস্তৃত ভূমিতে ওর হাতটা ধরে হাটলে কি সুন্দর’ই না হতো।এই ভেবে পর পাশাপাশি গেলাম।আলতো করে মিষ্টির হাতে হাত রাখলাম।মিষ্টির হাত একটু কেঁপে উঠলো,কিন্তু কিছু বললো না।কিছুদুর যাওয়ার পর মিষ্টি বললো

” বিষন্ন একটা কথা বলবো,”

” হু বলো,”

” তুই কি সত্যিই আমায় ভালোবাসিস? ”

আমি ওর হাত ছেড়ে দিলাম।মিষ্টি দারিয়ে পড়লো।ওর কাছে গিয়ে দুই হাত ওর গালে রাখলাম।চোখে চোখ রেখে বললাম

” প্রশ্নটা আমার চোখে চোখ রেখে করো,দেখবে উত্তর পেয়ে যাবে ”

দুজন দুজনার চোখে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি।তখনি কেউ একজনার ডাকে সেই ঘোরটা কেটে গেলো।পাশ ফিরে তাকালাম।দেখলাম একজন মাঝি।নৌকার ভাড়া এখনো দেইনি,ভুলেই গিয়েছিলাম।ভাড়ার টাকাটা দিয়ে মিষ্টির দিকে তাকালাম।দু’জনই হাসছি! এই মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে সুখী।

________

” এই মেয়ে এই, শোনো,এদিকে এসো ”

পরী ভ্রু কুচকে তাকালো।কিছু না বলে ঘরের দরজার কাছে দারিয়ে বললো

” আমারে ডাকেন? ”

” হ্যা তোমাকেই ডাকছি,ভেতরে এসো। এই চেয়ারটায় বসো”

পরী ভেতরে আসলো।সামনের চেয়ারে বসলো।স্বাভাবিক ভাবেই বললো

” বলেন কি বলবেন ”

” কে তুমি? এই বাড়িতে ঘোরাঘুরি করছো, পরিচয় কি?! ”

” আমার নাম পরী ”

” পরী? বাহ বেশ সুন্দর নাম তো। পরী,ইংরেজিতে যাকে বলে এঞ্জেল ”

” আফনে কে? ”

” আমাকে চেনো না? আমি হলাম বিষন্নের নিজের মামা,এই বাড়িতেই থাকি। ”

” আমারে ক্যান ডাকলেন? ”

” আমি লেখালেখি করি বুঝলে।একটা উপন্যাস লিখছি,চোখের কিছু বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন,তাই তোমাকে ডাকলাম ”

” আমারে ডেকে কি লাভ? ”

” লাভ ছিলো না,এখন আছে।তুমি বেশ রুপবতী।তোমার চোখটাও সুন্দর। একদম নড়াচড়া করবে না।আমার উপন্যাসে তোমার চোখের বিবরন লিখব ”

পরী চুপ করে বসে আছে।মামা বারবার তার চোখে তাকাচ্ছে আর খাতায় লিখছে।আবার মাঝে মাঝে ভ্রু কুচকে লেখার দিকে তাকিয়ে কেটে দিচ্ছে।কিছুক্ষণ পর মামা বললো

” হয়েছে,তুমি এখন যাও ”

” আফনে কি শুধু চোখ নিয়েই লেখেন? ”

” না তেমনটা নয়।আসলে লিখতে গেলে চোখের,মুখের,শ*রীরের বর্ণনা করতে হয়।এতে পাঠকগন কল্পনা করতে পারে চরিত্রটা দেখতে কেমন ”

” যদি কখনো শ*রীর নিয়ে লেখেন তাইলে আমারে বলবেন।আমার শ*রীর খুব সুন্দর।আমি আপনার সামনে শা*ড়ি খুলে বসে থাকবো আর আপনি আমায় দেখে দেখে লিখবেন।আচ্ছা এখন আসি ”

বলেই পরী উঠে চলে গেলো।মামা চশমা খুলে হাতে নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।মেয়েটার কথা বুঝতে তার হয়তো অনেকটা সময় লাগবে।

_________

বাইকটা এখনো হোস্টেলের সামনেই পার্ক করা।ভুলেই গিয়েছিলাম যে বাইক নিয়ে এসছি।নদী থেকে রিকশা করে সোজা হোস্টেলের সামনে আসলাম। বাইক স্টান্ড করা। মিষ্টিকে নিয়ে বাইকে বসতেই ওসি সামনে আসলেন,বললেন

” ভালোই হয়েছে তুমি এসে গেছো,,আমি তোমায় খোঁজ করছিলাম ”

” কেন অফিসার? ”

” তোমায় আমার সাথে থানায় যেতে হবে। খু*নের বিষয়টার সাথে তোমার যোগসূত্র আছে বলে আমরা মনে করছি ”

আমি হতভম্ব হয়ে তাকালাম।খু*নের সাথে আমার সম্পর্ক কিভাবে থাকবে? অফিসারকে বললাম

” আমি তো এই বিষয়ে কিছুই জানিনা ”

” আমার মনে হয় তুমি সব জানো,থানায় চলো, তারপর সব বুঝতে পারবে ”

মিষ্টি ভয়ে আমার কাঁধে শক্ত করে হাত রাখলো।অফিসারকে বললাম

” আমি যাবো,তবে মিষ্টিকে আপনারা আমার বাড়িতে রেখে আসবেন প্লিজ ”

” আমি বলে দিচ্ছি,গাড়িতে করে রেখে আসবে,তুমি চলো ”
#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২০
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

থানায় যেতেই একজন ভদ্রমহিলাকে দেখলাম আগে থেকেই বসে আছে।বয়স চল্লিশের কাছাকাছি।মুখ ভর্তি পান।তিনি মহা আনন্দে পান খাচ্ছেন,তার খাওয়ার ধরন দেখলে নিজের’ই পান খেতে ইচ্ছে করবে।এই মহিলাকে আমি চিনি।বোরখা পড়ে সেদিন মিষ্টির সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় যখন ইনি ছাঁদে চলে আসেন তখন ট্যাঙ্কে লুকিয়ে একপলক এই মহিলাকে একবার দেখেছিলাম।তিনি অবশ্য আমায় দেখতে পাননি।অফিসার ওনার সাথের চেয়ায়টায় বসতে বললেন।আমি বসলাম।অফিসার বললেন

” বিষন্ন,তোমার বাবার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক,সেটা আশা করি তুমি জানো,”

” হু জানি ”

” আমি চাই তুমি এই কে’ইচকে সমাধান করতে আমায় সাহায্য করবে ”

” আমি কিভাবে সাহায্য করবো? আমি তো এই বিষয়ে কিচ্ছু জানিনা ”

” তুমি না জানলে জানবে কেডায়? অফিসার আমার পরিষ্কার মনে আছে,সেদিন এই পোলাডাই হোস্টেলে ঢুকছিলো ” ফসফস করে পাশে বসে থাকা মহিলা কথাগুলি বললেন।

আমি একটু অবাক হলাম।অফিসার বললেন ” বিষন্ন ইনি হলেন সেই হোস্টেলের মালকিন।যেখানে খু*ন আর রে*পটা হয় ”

” সেটা বুঝলাম,কিন্তু উনি একটু আগে কি বোঝাতে চাইলেন? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না ওনার কথা ”

ভদ্রমহিলা কিছু বলবেন তার আগেই অফিসার তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন ” তুমি পাঁচদিন আগে রাতের বেলা বোরখা পরে ওই হোস্টেলে গিয়েছিলে,কেন গিয়েছিলে? ”

অফিসারের কথা শুনে আমার কিছুটা অস্বস্তি হতে লাগলো।এটা ওরা কিভাবে জানলো।নিশ্চই এই মহিলা বলেছেন।কিন্তু উনি কিভাবে জানলেন? ওনার তো জানার কথা নয়।পুলিশরা এমন ভাবে কথা বলে যেন তারা সত্যিটা জানতে পেরেছে,এতে সামনে থাকা লোক বিভ্রান্ত হয়,আর সবটা বলে দেয়।আমি নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললাম

” অফিসার আমি কেন ওই হোস্টেলে যাবো?প্রমাণ তো লাগবে তাই না? ”

ভদ্রমহিলা বললেন ” তোমার কালো রঙ্গের একটা বাইক আছে,আমি ছাঁদ থেকে দেখেছি,সেদিন বাইকটা চায়ের দোকানের সামনে রাখা ছিলো,”

” কালো রঙ্গের বাইক তো অনেকের কাছেই আছে,এটা থেকে তো আমায় জেরা করার কোনো মানে হয় না।”

ভদ্রমহিলা বললেন ” আমি স্পষ্ট তোমার মুখ দেখেছি। তুমি বোরখা খুলে যখন বাইকে উঠলে তখনি দেখেছি,”

অফিসার বললেন ” ঠিক আছে ম্যাডাম আপনি আসুন,আমি তদন্ত করবো,দোষী শাস্তি পাবেই ”

ভদ্রমহিলা উঠে চলে গেলো।অফিসার বললো ” বিষন্ন,তুমি সত্যিটা বলো,এর পেছনে যদি তোমার কোনো হাত থাকে সেটাও বলো,না থাকলে সেটাও বলো।এমনটা নয় যে আমি তোমায় ফাঁসাবো।গতকালকেও তো তোমার একটা কে*ইচ ধামাচাপা দিয়েছি।সত্যিটা বলো ”

” অফিসার আমি এই বিষয়ে সত্যিই কিছু জানিনা ”

” তাহলে সে রাতে হোস্টেলে কেনো গিয়েছিলে? আমি চায়ের দোকানে আর দারোয়ানের কাছেও খোঁজ নিয়েছি,তারাও একই কথা বলেছে।দারোয়ানকে টাকাও দেওয়া হয়েছে ”

” কিন্তু খু*ন তো হয়েছে কাল রাতে, আমি যদি পাঁচদিন আগে যেয়েও থাকি,এতে আমায় সন্দেহর কি আছে ”

” সন্দেহ কিছু না বিষন্ন,এটা সাধারণ লজিক।হোস্টেলটা মেয়েদের, এখানে ছেলেদের যাওয়াটা অসম্ভব,কেননা এটা ৪তলা বিল্ডিং।যেহেতু তুমি একবার গিয়েছো সেখানে,এখান থেকে আমাদের ধারনাটা কি খুব ভুল? যে কাল রাতে যারা ঢুকেছে তাদের তুমি সাহায্য করোনি, এটা ভাবা কি খুব ভুল? ”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।অফিসার চায়ের অফার করলেন।চা শেষ করে বললেন,” তুমি বাড়িতে যাও,সময় নাও,আমার কাছে ভয়ের কিছু নেই।তোমার বাবার টাকা আছে,টাকা থাকলে সব চুপ থাকে।টাকাই সবকিছু করে দেয়।তোমায় কি গাড়ি দিবো? ”

” গাড়ি লাগবে না,আমি যেতে পারবো ”

থানা থেকে হেঁটে হেঁটে বাড়িতে যাচ্ছি।বিষয়টা কেমন যেন জালের মধ্যে আটকে পড়লো।কিন্তু আমি তো কাল রাতের ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানিনা।এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়িতে আসলাম।ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হাতে নিয়েছি তখনি মা খাওয়ার জন্য ডাকলো।

_______

ডিনার টেবিলে সবাই বসে আছি।আমার পাশে নীলু বসেছে।বিষন্ন আমার সামনের চেয়ারটায় বসলো।ওকে দেখে একদম স্বাভাবিক লাগছে।থানায় যে গেলো সেখানে কি হলো সেটা শুনতে হবে।এসব ভাবছি তখনি আঙ্কেল বললো

” তা মিষ্টি মা,তুমি বরং নীলুর সাথেই থাকো।বলা তো যায় না,হোস্টেলে মেয়েরা থাকো,কখন কি হয়ে যায়,তাছাড়া তুমি আমার মেয়ের মতো।ছোট থেকে তো তুমি আর নীলু একসাথে পড়েছো ”

” আঙ্কেল আসলে,”

আমায় থামিয়ে দিয়ে আন্টি বললো ” আসলে কি হ্যা? তুই তো ছোট থেকে এখানেই ছিলি।ক্লাস নাইনে ওঠার পর যে কি ভূত মাথায় চাপলো,বললি যে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করবি।টিউশনির টাকায় পড়ালেখা, নিজের সবকিছু চালাস।এখন দেখলি হোস্টেলে কি ঘটনা ঘটে গেলো? ”

” কিন্তু আন্টি ”

আমার কথা থামিয়ে দিয়ে আন্টি আমার কাছে আসলো।পরম যত্নে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো ” হ্যা রে মা,আমরা কি তোকে নিজের মেয়ের মতো আদর করি না? তোকে আমি,নীলুর বাবা কতোটা ভালোবাসি তুই সেটা নিজেও জানিস না,”

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।চোখে জল চলে আসলো।আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, এই মানুষ দুইটা যদি আমার বাবা, মা হতো তাহলে কি খুব দোষের কিছু হতো?। নীলু চিৎকার দিয়ে বললো ” ইয়েএএএএ,মিষ্টি এখন থেকে আমার সাথে থাকবে ”

ওর চিৎকারে আঙ্কেল রাগি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। সরি মুখ ফসকে জোরে বলে ফেলছি,কথাটা বলে মাথা নিচু করে রইলো।

খাওয়া দাওয়া শেষে নীলুর সাথে ঘুমাতে গেলাম।নীলু বললো

” জানিস দোস্ত, তুই আমার সাথে থাকবি,এটা ভেবে আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে, ”

” এতো আনন্দের কি আছে ”

” আনন্দ নেই মানে? কি বলিস তুই? তুই থাকতে একসাথে শপিং করেছি,ঘুরেছি কত্তোমজা করেছি।তারপর তো হোস্টেলে গেলি,যখনি ডাকি তখনি বলিস টিউশনি আছে,এটা আছে ওটা আছে।শোন কালকে শপিং এ জাবো, ”

” আচ্ছা যাবি ঠিক আছে,,এখন ঘুমাবি তো নাকি? ”

” না ঘুমাবো না,আজকে আমরা মুভি দেখবো ”

” কি মুভি ”

নীলু বাকা হেসে বললো ” বড়দের মুভি,ঈশা দিয়েছে ”

” বড়দের মুভি? সেটা কেমন মুভি? ”

” দারা দিচ্ছি,দেখলেই বুঝতে পারবি। এসব মুভি দেখে শিখে রাখ বুঝলি,ভবিষ্যতে কাজে দিবে ”

বড়দের মুভি কি সেটা বেশ বুঝতে পারছি।ঈশার সাথে থাকতে থাকতে নীলুও গোল্লায় চলে যাচ্ছে।এই ঈশাকে এখন কেন জানি আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।দশমিনিট টিভিতে চোখ রাখতেই নীলু ঘুমিয়ে পড়লো।আমি ফোন টিপছি।নীলু ঘুমিয়ে যাওয়া দেখে টিভিটা বন্ধ করতে রিমুটটা হাতে নিলাম।মুভিতে কি*স সিন দেখাচ্ছে। লাল বোতামটায় চাপতে চেয়েও পারলাম না।মুভির সিনটা দেখে মনে পড়ে গেলো সেই মুহূর্তের কথা।যখন বিষন্ন, আমার ঠোঁ*ট মিলেমিশে একাকার হয়েছিলো।মুভিটা দেখতে বেশ লাগছে।মুভির কিছু সিন দেখে সারা শরীর কেমন যেন হিম হয়ে আসে।রাত ২ টা অব্দি পুরো মুভিটা দেখলাম।সারা শরীর কেমন যেন করছে।এমন কেন হচ্ছে? এ যেন এক ভয়ঙ্কর অনুভুতি।

লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম।চোখটা একটু লেগেছে তখনি ফোনে একটা মেসেজ আসলো।ঘুমঘুম চোখে স্ক্রিনে তাকালাম।বিষন্ন এতোরাতে মেসেজ দিয়েছে?। মেসেজ ওপেন করতেই সেখানে লেখা

” এতো সুন্দর চাঁদ রেখে ঘুমাচ্ছো? ছাঁদে চলে আসো, কুইক! ”

পাগল নাকি? এতোরাতে ছাঁদে ডাকলো আর আমি গেলাম?। যে দুষ্টুর দুষ্টু, ওর ওপর কোনো বিশ্বাস নেই।কিছুক্ষণ পর আবারো মেসেজ আসলো

” কি হলো?ছাঁদে আসতে এতোক্ষণ লাগে? ”

রিপ্লাই করলাম ” ভূতের মতো এতোরাতে জেগে আছিস কেন? যা ঘুমা,আমি ছাদে যাবো না ”

সাথেসাথেই রিপ্লাই আসলো ” এখন বাজে দুইটা আট।দুইটা দশ এর মধ্যে যদি তুমি ছাঁদে না আসো তাহলে কিন্তু আমি ছাঁদ থেকে লা’ফিয়ে নিয়ে পড়ে যাবো৷আমি কিন্তু ছাঁদের রেলিংয়ের ওপরে দারিয়ে আছি ”

এ তো দেখি সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেছে।সত্যিই রেলিংয়ের ওপরে উঠেছে নাকি আমায় ভয় দেখানোর জন্য বলেছে?। ভয় দেখানোর জন্যই বলেছে হয়তো।কোনো রিপ্লাই না দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।একটু পর আরেকটা মেসেজ,ওপেন করতেই দেখলাম একটা পিক।পিকে রেলিঙের ওপর বিষন্ন দারিয়ে আছে।ধরপর করে বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে ছাঁদে গেলাম।গিয়ে দেখি মিস্টার দুই হাত প্যান্টের পকেটে দিয়ে দারিয়ে দারিয়ে হাসছে।ওর হাসি দেখে আমার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।রুমে ফিরে যাবো তাতেই বিষন্ন আমার হা’ত ধরে বলল

” ছাঁদে আসতে এতোবার মেসেজ দেওয়া লাগে কেন হ্যা? আমারে কি ভয় পাও না নাকি? ”

” তোরে ভয় পাওয়ার কি আছে? তুই ভূত নাকি? ওহহ হ্যা,তুই সত্যিই মন হয় ভূত,নইলে রাত দুই টায় ছাঁদে কি করিস তুই? ”

” আমি ভূত তাই না? ”

কথাটা বলেই বিষন্ন আমায় নিজের কাছে টেনে নেয়।এক হাত দিয়ে আমার সামনের চুলগুলি কানে গুজিয়ে দিয়ে বললো

” ভূতেরা খুব রোমান্টিক হয় জানো? ”

” ছাই রোমান্টিক,ছাড় আমায়, ”

” না ছাড়বো না,তোমার ওই ঠোঁ*ট জোড়ার মায়া আমায় পাগল করে দিচ্ছে! ”

” বিষন্ন, এইবার কিন্তু মা’র খাবি বলে দিলাম ”

বিষন্ন আমায় ছেড়ে দিলো।আমি ইতস্তত হয়ে নিজেকে সামলালাম।স”র্বনাশ আমি তো ওড়না নিতেই ভুলে গেছি।তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে পড়নাটাই পড়তে মনে নেই।কি লজ্জার বিষয়!। বিষন্ন আমার হাত ধরে দোলনায় কাছে নিয়ে গেলো।

দোলনায় দু’জন বসে আছি।জোৎত্নার আলো বিষন্নের মুখে পড়ছে।আমি একপলকে তাকিয়ে রইলাম।ইসস ছেলেটাকে কতো মায়াবী লাগছে।মনে হচ্ছে সারারাত এভাবেই তাকিয়ে থাকি।বিষন্ন আমার দিকে তাকিয়ে বললো

” মেয়েরা এভাবে তাকালে আমার ভালোলাগে না।”

ফোঁড়ন কেটে বললাম ” তোরে কে দেখে,ভূত একটা ”

” এই ভূতটার প্রেমেই তো হাবুডুবু খাচ্ছো ”

“এহহহ আমার বয়েই গেছে,ওর মতো পিচ্চির প্রেমে নাকি হাবুডুবু খাচ্ছি,বললেই হলো নাকি?”

” পার্টির রাতে যখন মেয়েরা আমার সাথে কথা বলছিলো তখন তুমি জেলাস ফিল করোনি? ”

” আমি কেন জেলাস ফিল করবো? ”

” ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারোর সাথে কথা বলতে দেখলে সব মেয়েরই জেলাস ফিল হয় ”

” জি মহারাজ চআপনি ঠিক বলেছেন।কিন্তু আপনি তো আমার ভালোবাসার মানুষ নন,তাই এটা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়,বুঝলেন? ”

” তাহলে সেদিন ঈশাপুকে চ*ড় কেন মারলে? ”

” আ..আব..আমি ইচ্ছে করে মেরেছি নাকি? ও কি যেন করেছিলো,তাই মে’রেছি।কি করেছে সেটা এখন মনে পড়ছে না ”

” ও যেটা করেছে সেটা হলো তোমার ভালোবাসার মানুষকে স্পর্শ করেছিলো,ঠিক বললাম? ”

আমি কিছু বললাম না।বিষন্ন যা বলছে সেগুলি তো সত্যিই।আমি শেষমেশ কি না এই পিচ্চি ছেলেটার! না না, এখনি এসব কিচ্ছু বলা যাবে না।সামনে ওর পরিক্ষা,এখন এসবে একদম সায় দিলে চলবে না।কড়া গলায় বললাম

” আমি গেলাম,আর কখনো আমায় রাতে ছাঁদে আসতে বলবি না, আর আমার কাছাকাছিও আসবি না,”

বলপই ওখান থেকে চলে আসলাম।রুমে এসে বিছানায় বসে আছি।ভিষণ রাগ হচ্ছে। চলে আসলাম অথচ ও আটকালো না কেন? আটকালেও তো পারতো।আমার হাতটা ধরে যদি বলতো, ” ওসব বাদ দাও চলো দুজন একসাথে বসে চাঁদ দেখি ” তাহলে কি আমি মানা করতাম নাকি? কি আজব ছেলে। ধূর,হুদাই রাগ দেখায় চলে আসলাম।ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই ছিঁ’ড়ে ফেলি।এই পিচ্চি, কি এমন করলি তুই বলতো? তোর আশেপাশে থাকলে এতো কেন ভালোলাগে হুম? মনে হয় এভাবেই সারাজীবন পার করে দিতে পারবো।

চলবে?
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here