তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -২১+২২

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২১
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো চেঁচামিচিতে।বাড়িতে যেন হুলস্থুল কান্ড বেঁধে গেছে।নীচ থেকে নীলুর চিৎকার ভেসে আসছে।কি বলছে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।চোখ কচলাতে কচলাতে বারান্দায় আসলাম।নীলুর ঘরটা দোতলায়।দোতলা থেকে নীচে তাকাতেই দেখলাম নীলু সর্বশক্তি দিয়ে একটা কাঁচের টপ মেঝেতে আছাড় দিলো।মেঝেতে খন্ড খন্ড হয়ে পড়ে রইলো ভা’ঙ্গা কাঁচ।পরিস্থিতি বুঝতে দৌড়ে নিচে গিয়ে নীলুকে ধরলাম।ও হাতে আরেকটা টপ নিয়েছে,না ধরলে সেটাও এতোক্ষণে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলতো।আন্টি কিচেনে ব্যস্ত হয়ে রান্না করছে।তার কোনো রেসপন্স নেই।নীলু আমার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বললো

” মিষ্টি,মিষ্টি ছাড়,আমায় আটকাবি না একদম,আজ সবকিছু শেষ করে ফেলবো,ছাড় আমায় ”

” নীলু কি হয়েছে? এরকম কেন করছিস? বলবি তো কি হয়েছে? ”

” আমার মাথা ঠিক নেই,আমি সব ভেঙে ফেলবো,তুই আটকাবি না,নইলে তোকেও ভেঙ্গে ফেলবো ”

” আমি কাঁচের টপ নাকি যে আছাড় মারলি আর ভেঙে যাবো? তুই রাগ থামা,আমায় বল না কি হয়েছে,”

নীলু শান্ত হয়ে সোফায় বসলো।আমি ওর মাথায়ফু দিচ্ছি। এতে যদি রাগ কমে।নীলু ঠোঁ’ট উল্টে কাঁদতে কাঁদতে বললো

” আমায় নাকি আজ দেখতে আসছে, আমি বললাম যে আগে পড়ালেখা কমপ্লিট হোক তারপর বিয়ে,সেটা ওনারা শুনবে না।আচ্ছা মিষ্টি তুই বল তো,আমার বিয়ের বয়স হয়েছে এখনো? ”

নীলুর কথায় হাসবো না শান্তনা দিবো সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না।নীলু রেগে রেগে বললো

” মাথায় ফু দিচ্ছিস কেন,কালকেই চুল স্ট্রেইট করে নিছি,আউলায় যাচ্ছে,ফু দিবি না ”

” তোর মাথা গরম,তাই ফু দিয়ে মাথা ঠান্ডা করছিলাম ”

” আমার মাথা কি চায়ের কাপ নাকি? ফু দিলি আর ঠান্ডা হয়ে গেলো? শোন মিষ্টি আমি বলে দিচ্ছি,মা তুমিও শুনে রাখো,যদি আজ ছেলে পক্ষ আমায় দেখতে আসে তাহলে কিন্তু যা তা অবস্থা হয়ে যাবে ”

আন্টি নীলুর কাছে বসে বললেন ” নীলু,এরকম কেন করছিস? বিয়ে তো করতেই হবে একদিন তাই না? আর ছেলেকে দেখ,পছন্দ না হলে করবি না তাহলেই তো হলো ”

” আমি জানি তোমরা আমায় জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে,আমার এখন কোনো ছেলেই পছন্দ হবে না।আমায় যদি জোর করে বিয়ে দাও তাহলে কিন্তু আমি বিয়ের রাতেই জামাইয়ের ভু*ড়ি ফু’টো করে দিবো ”

বলেই নীলু দুমদুম শব্দ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।সম্ভবত সে বিষন্নের ঘরে যাবে,ওকে ডেকে তুলে সবটা বলবে।ভাই বোনের মধ্যে কিছুক্ষণ খুনসুটি হবে।আন্টি কিচেনে গেলেন।আমিও গেলাম ওনার পেছন পেছন।

” আন্টি এটা কি?পেঁপে? ”

” হাহাহা,,ওইটা পেঁপে না রে পাগলি,মিষ্টি কুমড়া। পেপে আর মিষ্টি কুমড়ার পার্থক্য বুঝিস না এখনো? বড়া করবো ওইটা দিয়ে ”

আন্টির কথায় খুব লজ্জা পেলাম।আন্টির হাতে হাতে এটাওটা এগিয়ে দিচ্ছি।যদিও এতে আন্টির সময় অপচয় বেশিই হচ্ছে। লবণ চাইলে চিনি এনে দিই,যদি বলে দারুচিনিটা দে আমি গিয়ে খুজতে থাকি দারুচিনি জিনিসটা কি ! এসব কান্ড দেখে আন্টি হাসতে হাসতে বললো

” দুদিন পর জামাইয়ের বাড়িতে যাবি,আর এখনো রান্না করতে পারিস না,দারুচিনি কি সেটাও চিনিস না, ”

” কি করবো বলো,আমি তো কখনো রান্না করিনি।হোস্টেলে দু,একদিন রান্না করা লাগতো,তখন তিশাই করতো,আমায় যেতে হয়নি ”

” তুই যাসনি ভালোই হয়েছে,গেলে একটা কান্ড বাঁধিয়ে ফেলতিস ”

” আন্টি,তুমি কিন্তু আমায় লজ্জা দিচ্ছো ”

” ইস,আমার লজ্জাবতী মেয়েটা রে,,”

” আচ্ছা আন্টি,তোমরা কি সত্যিই নীলুর বিয়ের কথা ভাবছো? ”

” তেমন ভাবছি না,তবে ছেলেটা ভালো বুঝলি,ঢাকায় ৪টা বাড়ি আছে,নীলু খুব সুখী হবে ”

” বাড়ি,টাকা এসব দেখে তোমরা মেয়ের বিয়ে দিবে? ”

” টাকা দেখে কেন,ছেলেও তো ভালো,হ্যান্ডসাম।বিদেশ থেকে পড়ালেখা করেছে এখন দেশে ব্যবসা করছে।তুই দেখলেই বলবি যে নীলুর সাথে এই ছেলেকেই মানাবে ”

” নীলু মনপ হচ্ছে রাজি হবে না,খুব রেগে গেছে ”

” ওই ছেলেকে দেখলে দেখবি নিজেই বিয়ের জন্য লাফালাফি করবে ”

” হাহাহা,আন্টি তুমিও না,”

” সত্যিই তো বলছি,মাঝে মাঝে ঘরে গিয়ে দেখি আয়নার সামনে ঘোমটা মাথায় দিয়ে কিসব ঢং করতে থাকে।তুই ঢং করবি কর,দরজা তো বন্ধ করবি নাকি? দরজা খোলা রেখেই উনি ঢংয়ে ব্যাস্ত।নিজের মেয়েকে তো আমি চিনি নাকি? ”

” ওরা কখন আসবে? ”

” এই আসবে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই।নীলুর বিয়েটা হলে তোকেও বিয়ে দিয়ে দিবো,”

” আন্টি আমি যাই,”

” এই মিষ্টি দারা,নীলু কোথায় গেলো? ওকে একটু সাজিয়ে দে মা,তুই ই পারবি ওকে রাজি করাতে,শাড়ি পড়াবি ”

উপায়ান্তর না পেয়ে নীলুর ঘরে গেলাম।কিন্তু ঘরে নীলু নেই, তারমানে আমার ভাবনাই ঠিক, ও বিষন্নের ঘরে গেছে।ওই পিচ্চিটার কাছে গিয়ে কি হবে? ও কিছু করতে পারবে বলে তো মনে হয় না।ওখান থেকে বিষন্নর ঘরে গেলাম।দরজার কাঢ়ে গিয়ে গলা খাঁকারি দিতেই ভেতর থেকে নীলু বললো ” ভেতরে আয়,বিলুর ঘরে আসতে আবার শব্দ করা লাগে নাকি “।ঘরে ঢুকে নীলুর অবস্থা দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।বিষন্ন উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,আর নীলু ওর পা টিপে দিচ্ছে। দুঃখিত ভঙ্গিতে নীলু বললো

” কপাল গুনে একটা ভাই পাইছি,একটা হেল্প চাইলাম,আর ও বড় বোনের থেকে পা টিপে নিচ্ছে , বাহ্ চমৎকার। এমন ভাই ঘরে ঘরে থাকা দরকার”

বিষন্ন ঘুমঘুম স্বরে বললো ” এতো কথা না বলে কাজটা মন দিয়ে কর,আমি যখন বলছি বিয়ে হবে না, তখন হবে না!”

নীলু বললো ” এই না হলে আমার ভাই, ”

তারমানে এই ব্যাপার।দুই ভাই বোন মিলে এইসব ফন্দি করা হচ্ছে। টিটকিরি মেরে বললাম

” হায়রে নীলু,কার ওপর কি দায়িত্ব দিচ্ছিস।যার এখনো দুধের দাঁত পড়েনি,সে ভাঙবে বিয়ে? হাহাহা! ”

বিষন্ন উঠে বসলো।কিছু বলবে তখনি ওকে আটকে দিয়ে নীলুর হাত ধরে টেনে ওর ঘরে নিয়ে আসলাম।ওকে খানিকটা রাগিয়ে দিতে।

______________

” সামান্য একটা রুমের নম্বরও ঠিকমতো জানতে পারোনি? ”

রাগে গিজগিজ করতে করতে জুনায়েদ কথাটা ঈশাকে বললো।কথা শুনে ঈশা ওর সামনে থাকা মেয়েটার গালে সজোরে একটা চ*ড় বসিয়ে দিলো।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বললো

” আমি তো জানতাম না যে কাল রাতেই মিষ্টি পাশের ঘরে ঘুমাবে ”

ঈশা রেগে মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে বললো ” পাশের ঘরে কেনো ঘুমিয়েছিলো? বল কেন ঘুমিয়েছিলো? ”

” রাতে জানতে পারি ওর পাশের রুমে থাকা মেয়েটার নাকি জন্মদিন ছিলো।তাই ওরা কয়েকজন মিলে ওই ঘরেই ঘুমিয়েছে। ”

জুনায়েদ গম্ভির স্বরে বললো ” তাহলে মিষ্টির ঘরে যে মেয়ে দুটো ছিলো ওরা কারা? ”

” যে মেয়ের জন্মদিন ওই মেয়ের রুমমেট ছিলো ওই দুজন।ওরা তিন সিটের রুমে তিনজন থাকতো।ওদের সেমিষ্টার পরিক্ষা তাই দু’জনে মিষ্টির ঘরে পড়ছিলো,”

ঈশা মেয়েটিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।জুনায়েদের সামনে এসে বললো

” ভাইয়া আমার একটা কথা,আপনি যখন দেখলেন মেয়ে দুইটা তিশা আর মিষ্টি না তখন চলে আসলেন না কেন? ”

” আরে আমি কিভাবে জানবো,ঘরের লাইট তো অফ ছিলো,আবছা আলোয় ওদের মুখের ওপর স্প্রে করে দিয়ে অজ্ঞান করে লাইট জ্বালিয়ে দেখি ওরা অন্য কেউ ”

” তো তখন চলে আসা উচিৎ ছিলো তাই না? ”

” মেয়ে দুইটার এতো হ*ট ফি*গার যে কন্ট্রোল করতে পারলাম না ”

” এই ছেলেদের নিয়ে হয়েছে এক জ্বালা।মেয়ে দেখলেই আর নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারে না।কিন্তু মে*রে ফেললেন কেন? এতে তো পুলিশ ও কেইচটায় ইনভলব হয়ে গেলো ”

” প্রথম মেয়েটার সাথে যখন অন্তরঙ্গ মুহূর্তে ছিলাম তখনি ওই মেয়েটার জ্ঞান ফিরে, কিছু বুঝার আগেই ওর ওড়না দিয়েই ওকে পেঁচিয়ে ধরলাম,কে জানতে এইটুকুতেই মরে যাবে।তারপর ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছি ”

” ওহহ গড, এখন আমাদের যদি পুলিশ খুজে বেড় করে তখন? আমি সোজা বলে দিবো আপনি করেছেন এসব,আমি এসবে নেই ”

বলেই ঈশা হনহন করে পরিত্যক্ত গোডাউন থেকে বেড় হয়ে গেলো।জুনায়েদ ওর কাছের ছেলেটাকে ডেকে বললো

” এই মেয়েকে আমার আগে থেকেই সুবিধার মনে হয়নি।ও যখন তখন পুলিশকে সবটা বলে দিতে পারে,আজ রাতের মধ্যেই ওকে আমার চাই বুঝলি? আজ রাতের বাসরটা হবে ওর সাথে,দেখবো কত তেজ ওর ”

__________

” ভাইজান চা আনছি ”

বিছানা থেকে উঠে বসলাম। একটা কাপ হাতে পরী দারিয়ে আছে।কাপটা হাতে নিয়ে বললাম

” কেমন আছো পরী ”

” ভালো আছি ভাইজান ”

আমি চায়ে চুমুক দিচ্ছি।লক্ষ্য করলাম পরী এখনো দারিয়েই আছে।হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে।দ্বিতীয়বার চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম

” কিছু বলবে? ”

” না ভাইজান ”

” আচ্ছা ”

না বললেও বেশ বুঝতে পারছি পরী কিছু একটা বলবে,কিন্তু ভয়ে বলতে পারছে না।অভয় দিয়ে বললাম

” তুমি বলো কি বলবে,ভয়ের কিছু নেই ”

” ভাইজান,বাড়ির সামনে কয়েকজন পুলিশ ঘুরাফেরা করতাছে,সকাল থাইকা দেখতাছি ”

” পুলিশ ঘুরাফেরা করছে? ”

” হ ভাইজান,”

” আচ্ছা তুমি এখন যাও,আরেকখান কথা ভাইজান ”

” হ্যা বলো ”

” আপনের বাড়ির যে দারোয়ান ওর স্বভাব চরিত্র একদম ঠিক নাই ”

” কেন কি করছে? ”

” আমারে আজেবাজে কিসব বলে,আমার বু*কের তিলডা নাকি উনি একান্তে দেখবে। ”

বলেই পরী শাড়ির আচল ফেলে বু*কের তিলটা দেখাতে চেষ্টা করতেই ওকে বললা ” আমি বিষয়টা দেখবো,তুমি এখন যাও ”

পরী চলে গেলো।এই বাড়ির দারোয়ান চাচা অতি ভালোমানুষ।তিনি এরকম কোনো কাজ কখনোই করবে না।পরী মেয়েটার চালচলন আমার কেমন যেন লাগছে।সে নিজের শ*রীর দারা আমায় প্রভাবিত করতে চাচ্ছে।একটু সুযোগ পেলেই আ’চল নামিয়ে নিচ্ছে,তার ধারনা ওর শরীর দ্বারা আমায় আকৃষ্ট করতে পারবে।

____________

নীলুকে দেখতে ছেলেপক্ষ এসেছে।নীলুকে সাজিয়ে নিচে নিয়ে গেলাম।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই ছেলের দিকে নজর পড়লো।নজর পড়তেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।নীলুকে দেখতে এসছে জুনায়েদ ভাই। আমার সারা শরীর রাগে,ভয়ে কাঁপতে লাগলো।

চলবে?#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২২
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

নীলুকে দেখতে এসছে জুনায়েদ ভাই। আমার সারা শরীর রাগে,ভয়ে কাঁপতে লাগলো।নীলু মাথা নীচু করে হাটছে,তাই দেখেনি।দেখলে হয়তো নিচে যেতোই না।আমিও কিছু বললাম না,যদি নীলু কোনো সিনক্রিয়েট করে বসে তাহলে আঙ্কেল আন্টির অসম্মান হবে।ওনারা চলে গেলে বিষয়টা আন্টিকে জানাতে হবে।নীলু ট্রে-তে করে চা এগিয়ে দিলো। জুনায়েদ ভাইয়ের সাথে চোখে চোখ পড়তেই চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকালো।আমি নীলুর সাথেই বসে আছি।নীলুর হাত চেপে ধরে ইশারায় চুপ থাকতে বললাম।জুনায়েদ ভাই আর ওনার সাথে ওনার বাবা,মা এসছেন।ওনার মা বললেন

” ভাবী,মেয়েকে তো আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে, আপনাদের সম্মতি পেলে এঙ্গেইজমেন্টটা এখনি সেড়ে ফেলতে চাই ”

আঙ্কেল বললেন ” ওরা একে অপরের সাথে একটু কথা বলুক,কিছুটা সময় পেলে ওরা একে অপরকে বুঝতো! ”

” ওরা চিনবে কি? দু’জন দু’জনকে তো আগে থেকেই চেনে,আমার ছেলে সবটা আমায় বলেছে,আপনার মেয়েরও ওকে পছন্দ ”

আঙ্কেল একটু বিব্রত স্বরে বললো ” নীলু মা তুমি আগে থেকেই চিনতে নাকি? কই বলোনি তো ”

আঙ্কেলকে দুই ভাই বোন’ই খুব ভয় পায়।নীলু সত্যিটা বলতে গিয়েও ভয়ে বলতে পারলো না।নীলু একটু জীর্ণ স্বরে বললো

” চিনি বাবা ”

জুনায়েদ ভাইয়ের বাবা বললেন ” তাহলে তো হয়েই গেলো,শুভ কাজটা সেরেই ফেলি,কি বলেন বেয়াই সাহেব ”

” ওরা যদি আগে থেকেই দু’জন দু’জনকে চিনে থাকে তাহলে তাই হোক,”

নীলু করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবো কিছুই বুঝতে পারলাম না।সবটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।ওনারা নীলুকে আংটি পড়িয়ে চলে গেলেন।নীলুর চোখ জলে টলমল করছে।কোনোরকমে চোখ আড়াল করে দৌড়ে ঘরে চলে গেলো।মেয়েটার মনে না জানি কি চলছে এখন।পেছন পেছন আমিও গেলাম।

নীলু উপুড় হয়ে শুয়ে শব্দ করে কাঁদছে।ওকে কয়েকবার তোলার চেষ্টা করলাম,কিন্তু পারলাম না।ও কেঁদেই চলেছে।হাদারাম বিষন্নটাকেও কেন জানি দেখতে পাচ্ছি না,বোনকে দেখতে এসেছে অথচ ছোট ভাই বাইড়ে বাইড়ে ঘুরছে।এতোটুকুও কাণ্ডজ্ঞান নেই ছেলেটার।নীলুকে এখন বিষন্নই সামলাতে পারবে।কয়েকবার বিষন্নকে ফোন দিলাম,ফোন বন্ধ।রেগে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে নীলুর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম

” নীলু,এই নীলু ওঠ না,এভাবে কাঁদলে তো সমাধান হবে না পাগলি,আমাদের বিষয়টা টেকনিক্যালি হ্যান্ডেল করতে হবে।এতো ভেঙ্গে পড়েছিস কেন? আংটি পড়ালেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় নি ”

নীলু উঠে বসলো। এইটুকুতেই চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো

” তুই আমায় না আটকালে আমি সবটা বলে দিতাম।তাহলে বিষয়টা এতদূর এগুতো না ”

” একবার ভাবতো, তখন বললে আঙ্কেলের সম্মানটা নষ্ট হতো না? আর আমিতো জানতাম না জল এতদূর গড়াবে ”

” আমি কিছু ভাবতে পারছি না মিষ্টি,প্লিজ কিছু একটা কর।এরকম আর কিছুক্ষণ চললে আমি সুইসাইড করবো দেখে নিস! ”

” নীলু,,কিসব বলছিস তুই হ্যা? আমি আছি তো।আমি থাকতে ওই শ’য়তানটার সাথে তো বিয়ে আমি হতে দিবো নাকি ? ”

” বাবা যেমন মানুষ, একবার কথা দিলে সেটা আর খেলাপ করবেন না।বাবা তো ওনাদের কথা দিয়েছে,”

” তুই প্লিজ কান্না থামা দোস্ত, এতো ভেঙ্গে পড়িস না ”

কান্না থামাতে নীলুকে জরিয়ে ধরে বসে আছি।তখনি রুমে আসলো আঙ্কেল আর আন্টি।আঙ্কেল ভ্রু কুচকে বললেন

” কি হয়েছে? কান্না করছো কেন নীলু? ”

নীলু কিছু বললো না।হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের জল মুছলো।আন্টি নীলুর পাশে বসে আঙ্কেলের উদ্দেশ্য বললেন

” আমাদের ছেড়ে চলে যাবে,সেজন্য কাঁদছে। তাই না রে মা? একদম মন খারাপ করবি না,আমরা কি একেবারে হারিয়ে যাবো নাকি? বোকা মেয়ে ”

আঙ্কেল বললেন ” নীলুর তাহলে এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।আমি একটু খুজে দেখি একটা শুভ সময় বেড় করি,”

আমি বলতে যাবো তখনি আঙ্কেলের ফোনে একটা কল আসলো।আঙ্কেল ফোন কানে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলেন।আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে বললো

” কিরে মিষ্টি মা,ছেলেকে কেমন দেখলি? ”

” আন্টি আমার একটা কথা ছিলো,খুব গুরুত্বপূর্ণ ”

” কি কথা? ”

” নীলুর ওই ছেলেকে পছন্দ হয়নি, আর ছেলেটাও ভালো না।ওনাকে আমরা হারে হারে চিনি ”

” ভালো না মানে? কি দোষ আছে ছেলের? ”

” আন্টি ওই ছেলেটার আচরন একদম ঠিক নেই।উনি কি করেছেন সেটা তোমায় বলতেও লজ্জা করছে ”

আন্টি নীলুর দিকে তাকিয়ে বললো ” কিরে নীলু, তোর ছেলেকে পছন্দ হয়নি? ”

নীলু কাঁদতে কাঁদতে বললো ” মা আমায় বাঁচাও তুমি,ওই ছেলেকে আমি বিয়ে করতে পারবো না মা,তুমি বাবাকে বলে বিয়েটা আটকাতে বলো মা,প্লিজ ”

” তাহলে তখন কেন বললি না? তোর বাবাকে তো চিনিস নাকি? উনি তো কথা দিয়ে ফেলেছে ”

” মা তোমায় পায়ে পড়ি তুমি কিছু একটা করো,”

” আচ্ছা দারা আমি দেখি কিছু করতে পারি কিনা।তোদের নিয়ে আর পারিনা, জানিনা তোর বাবা এটা শুনে কি শুরু করে দিবে ”

আন্টি চলে গেলো।ফোনে রিং হচ্ছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা আওয়াজ ভেসে এলো

” ফোন দিয়েছিলে পিচ্চি? আসলে সাইলেন্ট ছিলো তাই রিসিভ করতে পারিনি,বলো পিচ্চি ”

” বিষন্ন ফাজলামি বাদ দে,নীলুকে দেখতে আসছে জানতিস তো তুই তাই না? ”

” হ্যা, সকালেই তো বললো ”

” তুই জানিস ছেলেটা কে? ”

” হু জানি ”

” কিভাবে জানিস? তুই তো বাড়িতেই নেই ”

” একটু পর ব্যাক করছি আমি,টাটা ”

টুট টুট শব্দে কেটে গেলো ফোনটা।আরেহ, হঠাৎ কি হলো? পুরো কথাটা তো শুনবে নাকি?

_________

বিষন্ন আর ওর দুই বন্ধু রাস্তার পাশে বসে চা খাচ্ছে। চা’য়ের লিকার গাঢ় না হওয়ায় বিষন্নের মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে।শুধু লিকারের জন্যই যে মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে তা না।এক হাতে স্টিক নিয়ে আরেক হাতে চায়ের কাপ ধরে বসে আছে ওরা তিনজন।অপেক্ষা করে আছে সময়ের।এলজন বলে উঠলো

” এই বিষন্ন, ওইযে এসে গেছে,কালো গাড়ি ”

বিষন্ন গম্ভীর স্বরে পাশের বন্ধুকে বললো ” ফোন কর ”

বিষন্নের কথা মতো জুনায়েদের বাবার ফোনে ছেলেটা ফোন করলো।বিষন্নের দিকে তাকিয়ে বললো

” দোস্ত ধরছে না,রিং বেজেই চলেছে ”

বিষন্ন বললো ” সময় নিচ্ছে,কতো সময় নেয় আমিও দেখবো ”

ছেলেটা একটু চিল্লিয়ে বললো ” দোস্ত ফোন ধরেছে ”

বিষন্ন ফিসফিস করে বললো ” যা শিখিয়ে দিয়েছি সেটা বল ”

ছেলেটা ফোন কানে ধরে বললো ” স্যার আপনার অফিসের সিকিউরিটি গার্ড বলছি,”

ওপাশ থেকে জুনায়েদের বাবা বললেন ” হ্যা বলো, কি হয়েছে? ”

” স্যার অফিসে রেট শুরু হয়েছে,হঠাৎ করেই,আপনি এক্ষুনি চলে আসুন ”

” হোয়াট? কি বলছো তুমি,আ..আমি এক্ষুনি আসছি, তুমি ওই ধান্দার বিষয়ে একদম মুখ খুলবে না, ”

ফোনটা কেটে দিয়েই ছেলেটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে হাসলো।বিষন্ন তাকিয়ে আছে কখন চলন্ত গাড়িটা থাকবে।সাথে সাথেই গাড়ি থামলো।সেখান থেকে জুনায়েদের বাবা, মা দু’জনই একটা টেক্সি নিয়ে বিপরীত রাস্তায় অফিসের দিকে চলে গেলেন।বিষন্ন আর ওর সাথের দুইজন পকেট থেকে রুমাল বেড় করে সেটা মুখে বাঁধলো। এমন ভাবে বাঁধলো যেনো মুখ চেনা না যায়।ছেলে দু’জন হকস্টিক হাতে নিয়ে দৌড়ে ঝাপিয়ে পড়লো গাড়িটার ওপর।ড্রাইভার ভয়ে পালিয়ে গেলো।রাস্তার পাশের সবাই ভয়ে ছুটে পালাচ্ছে। বিষন্ন একপা একপা করে হেঁটে সামনে দারালো।এক হাতে হকস্টিক,অন্য হাতে চায়ের কাপ।ইতোমধ্যে বিষন্নর দুই বন্ধুর হাতে অনেকটা মার খেয়েছে জুনায়েদ।কিছু বোঝার আগেই একজন হকস্টিক দিয়ে ওর কপালে মারতেই জুনায়েদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।বিষন্নের দুই বন্ধু জুনায়েদের দুইহাত ধরে দার করিয়ে রেখেছে।বিষন্ন ওর হাতপ থাকা গরম চা পুরোটাই ছুঁড়ে মারলো জুনায়েদের মুখে।পু’ড়ে যাওয়ার যন্ত্রনায় ব্যা*থায় প্রচন্ড জোড়ে চিৎকার দিতেই বিষন্ন হকস্টিকটা হাতে তুলে সজোড়ে জুনায়েদের চ*রু বরাবর আঃঘাত করতেই সে চিৎকার যেন দ্বিগুণ হয়ে উঠলো।মাটিতে লু*টিয়ে পড়েছে জুনায়েদ। বিষন্ন শুধু বললো

” কতো মেয়ের জীবন ন*ষ্ট করেছিস তুই,মৃত্যুর যন্ত্রণা কি সেটা তুই আজ বুঝবি।তার থেকে বড় কথা,তুই মিষ্টির দিকে তাকাস,খুব সাহস তোর তাই না? ”

ব্যাস এইটুকু বলতেই বিষন্নর দুই বন্ধু হকিস্টিক দিয়ে জুনায়েদের কপালে এক ঘা ব*সিয়ে দিলো।সঙ্গে সঙ্গে মা*থা ফে*টে গল*গল করে র*ক্তে ভিজে গেলো সেখানকার রাস্তা।দুজনার মধ্যে থেকে একজন বললো

” দোস্ত তুই যা,আমরা দেখছি বিষয়টা ”

” এমন যায়গায় মারবি যেন বিয়ের পরেরদিন’ই বউ ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়,বুঝলি? ”

________

” ওগো শুনছো,একটা কথা বলার ছিলো ”

” সেজাসাপ্টা বলে বিদেয় হও ”

” নীলু এই বিয়েতে রাজি না,ও ডেকে বলছে বিয়েটা করতে পারবে না ”

” পারবে না মানে? তাহলে তখন কেন বলেনি? তুমি জানেনা আমি কথা দিলে সেটা রাখতে কতদূর অব্দি যেতে পারি? আমি যখন কথা দিয়েছি,এই বিয়ে হবে,তখন হবেই ”

” নিজের মেয়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দিবে? ”

” হ্যা দিবো।আমিও তে তেমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছি।জোর করে পালিয়ে নিয়ে গেছি।তাই বলে কি তুমি সুখী হওনি? তুমি নিজেও জানে স্বামী হিসেবে আমি কেমন ”

” কিন্তু ”

” কোনো কিন্তু নয়,আমি এক কথার মানুষ।বিয়ে হবে মানে হবে। আমার কথার নড়চড় হবে না।প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে,তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে ”

চলবে?

সবাই রেসপন্স করবেন।পাঠক-পাঠিকারা কি হারায় গেছে? 😐 দেখতে পাই না কেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here