#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৮
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
রিকশায় পাশে বিষন্ন বসে আছে।ওর মুখ হাসি হাসি।হেসে হেসে রিকশাওয়ালা মামাকে বললো
” মামা চলো, আমি কলেজে নামবো,তারপর আপাকে ভার্সিটিতে নামায় দিবা বুঝছো? ”
রিকশাওয়ালা বললো ” মামা ওইদিক দিয়া তো বেশি ঘুরা হইয়া যায় ”
” তাতে কি? এই যে ম্যাডাম দেখছো না? ইনি ভাড়া বাড়ায় দিবে চলো ”
” হুটটা উঠায় দিই মামা,দাম কিন্তু একটু,বুঝেন’ই তো ”
” হুট উটানোর দরকার নাই,”
রিকশাওয়ালা রিকশা টা*ন দিলো।আমি হতভম্ব হয়ে বিষন্নের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ওর মধ্যে বিন্দু মাত্র জীর্ণতা নেই,মনে হচ্ছে আমার সাথে এভাবে রিকশায় যাওয়া ওর বহুদিনের অভ্যাস,অথচ আজকেই প্রথম ও আমার সাথে বসলো।আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে বিষন্ন বললো
” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?লোকে দেখলে কি ভাববে? ”
কি বলছে বিষন্ন?লোকে দেখে কি বলবে মানে কি? যেকথা আমি ওকে বলবো সেটা ও নিজেই আমায় বলছে।ছেলেটা বেশি পেকে গেছে।একটু ধ*ম*ক দেওয়ার মতো করে বললাম
” তুই এভাবে হু*ট করে রিকশায় উঠলি কেন? আমার কাছে পারমিশন নিয়েছিস? ”
” কিউট মেয়েদের মুখে এমন কথার ধরন মানায় না,ধরনটা পাল্টাও বুঝছো? ”
” আমার কথার ধরন ঠিক নাই? তা কেমন ধরন চাস? ”
” ঠিক নাই’ই তো,বারবার তু*ই*তো*কা*রি করছো,শুনতেই কেমন লাগে,”
” তুই এখনি রিকশা থেকে নামবি,এই মুহূর্তে।এই মামা রিকশা থামান ”
” মামা থামাবা না,তোমায় যেতে বলেছি আমি,যতক্ষণ আমি থামতে বলবো না ততক্ষণ থামাবা না ”
” ঠিক আছে,আমিই নেমে যাচ্ছি,আমি তোর সাথে একি রিকশায় যাবো না ”
” কি আজব,একি রিকশায় গেলে সমস্যা কি? আমি কি সাধে চড়েছি নাকি? কোনো রিকশা পাইনি তাই তোমারটায় উঠলাম।বাড়ি থেকে এতদূর হেঁটে এসছি জানো? ”
” সমস্যা আছে,তুই বুঝবি না ”
” হুম বুঝেছি,একসাথে গেলে তোমার মনে কুচ কুচ হোতাহে তাই না? ”
” বিষন্ন! একটা চ*র দিবো কিন্তু, আমি তোর সিনিয়র।আর চা*পা*চা*পি করে বসতে আমার অসুবিধা হচ্ছে,দুজন বসে যাওয়ার অভ্যাস নাই আমার,মনে হচ্ছে রাস্তায় টুপ করে কখন যেনো পড়ে যাবো ”
” পড়বে না, আমি ধরে ফেলবো ”
” এই হাত সরা, হাত পে*ছ*নে দিচ্ছিস কেন? ”
” তুমিই তো বললে পড়ে যাবে? ”
” পড়বো না,আমি রিকশার হুট ধরে আছি,তুই হাত একদম পে*ছনে রাখবি না, ”
” আচ্ছা রাখবো না,এতো রেগে কথা বলছো কেন,”
আমাদের কথা শুনে রিকশাওয়ালা মামা বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে।এই তাকার অর্থ হলো তার ধারনা আমরা বয়ফ্রেন্ড গালফ্রেন্ড, আমি রাগ করেছি,আর বিষন্ন আমার রাগ ভাঙ্গাচ্ছে।রিকশাওয়ালাকে ধম*ক দিয়ে বললাম
” আপনি পেছনে বারবার তাকান কেন? সামনে তাকিয়ে চালান ”
বিষন্ন এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সে চোখে আছে মুগ্ধতা,আবেগ,অনুভূতি,কৌতুহল। বাতাসে যখন চুল উড়ে মুখে পড়ছে তখন ওর হাতটা বাড়িয়ে দেয় চুল কানে গুজিয়ে দেওয়ার জন্য,কিন্তু ও দেওয়ার আগেই আমি চুল কানে গুজে দিচ্ছি।এ নিয়ে ও কিছু বলতেও পারছে না,শুধু বারবার কপাল কুঁচকে ফেলছে।আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে ওর এমন কর্মকান্ডে।অনেক কষ্টে ঠোঁ*ট চেপে আছি।বিষন্ন বললো
” খুব হাসি পাচ্ছে তাই না? আমার কষ্টে খুব হাসি পাচ্ছে? ”
ওর কথায় আর হাসি আটকাতে পারলাম না।হেসে হেসে বললাম
” তুই বারবার হাত এগিয়ে এনে আবার সরিয়ে নিচ্ছিস দেখে খুব হাসি পাচ্ছে ”
” আর আমার ভেতরটা কষ্টে ফে*টে যাচ্ছে, একবার শুধু চুলগুলা কানে গুজে দিবো,জাস্ট একবার,প্লিজ ”
” না ”
বিষন্ন অন্য দিকে তাকালো।এমন ভাব নিচ্ছে যেন আমি মনে করি আমার কথায় ও খুব ক*ষ্ট পেয়েছে সাথে রাগ করেছে।আমি কিছু বললাম না।মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকালাম,সবসময় মুখ গম্ভীর হয়ে রইলো।ওর গম্ভীর মুখ দেখতে ভালোলাগছে না।হঠাৎ ও বলে উঠলো
” মামা রিকশা থামাও ”
রিকশা থামাতেই বিষন্ন নেমে গেলো।কি ব্যাপার একেবারেই নেমে গেলো নাকি? নাকি আমার ওপর সত্যিই রাগ করেছে?।কিছুক্ষণপর বিষন্ন রিকশায় উঠে বসলো।হাতে কদম ফুলের গুচ্ছ।ফুলগুলা আমার কো*লে রেখে অন্যদিকে মুখ করে রিকশাওয়ালাকে যেতে বললো।
ফুলগুলোর ঘ্রাণ খুব সুন্দর। কদম ফুল আমার অনেক পছন্দের।বিষন্ন এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।গাল ফুলিয়ে বসে আছে।নাহ,ছেলেটার রাগ ভাঙ্গাতে হবে,।একটু নীচু স্বরে বললাম
” হাতে ফুল থাকায় চুলগুলা মুখের ওপর খুব ডিস্টার্ব করছে,কেউ যদি সরিয়ে দিতে চায় তাহলে দিতে পারে ”
বিষন্নের চোখ চকচক করে উঠলো।পাশ ফিরেই কি যেন ভাবলো,তারপর আবারো মুখ ঘুরিয়ে থাকলো।আমিও বুঝলাম না কারনটা ঠিক কি।ইগো হতে পারে,কয়েকবার চেয়েছি,দিই নি,তাই এবারে তার ইগোতে লেগেছে,এইটুকু ছেলের আবার ইগোও থাকে? আবারো বললাম
” ঠিক আছে,ব্যাপার না, আমি নিজেই পারবো ”
বলে চুলে হাত দিতেই বিষন্ন আমার হাত সরিয়ে ফেললো।পরম যত্নে চুলে একটু হাত বুলিয়ে কানের কাছে গুজে দিলো এখনো গাল ফুলিয়ে বসে আছে।রোদের তাপটা বেড়েছে।সূর্যের আলো চোখে ধরছে খুব।বিষন্নকে বললাম
” বিষন্ন ”
” হু ”
” রোদ লাগছে,হুটটা তুলে দাও,”
বিষন্ন হুট তুলে দিলো।হুট তুলে জায়গা আরো সংকীর্ণ হয়ে গেলো।বিষন্নর শ*রীরের সাথে আমার শ*রীর একদম লে*গে আছে।মনের ভেতর কেমন যেন একটা শিহরণ কাজ করছে।বিষন্ন বেশ কয়েকবার ইতস্তত করে আমার হাত ধ*রার চেষ্টা করলো,কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরলো না।
কলেজে নেমে রিকশাওয়ালাকে টাকা দিলো,আর বললো ” মামা সাবধানে নিয়ে যাবেন,আস্তে চালাবেন “।
বলেই বিষন্ন কলেজের দিকে যাচ্ছে।কেন জানিনা খুব ইচ্ছে করছে একবার ওকে দেখতে, এমন ইচ্ছে তো আগে হয়নি,তাহলে এখন হচ্ছে কেন? আমার মাঝে যে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারছি।শেষমেশ রিকশার হুটের আড়াল থেকে বিষন্নর দিকে তাকালাম।বিষন্ন একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে,বিষন্ন কি যেন বলছে,সেটা শুনে মেয়েটা হাসিতে মেতে উঠছে।দেখতে দেখতে চোখের আড়ালে চলে গেলো বিষন্ন।
ক্যান্টিনে বসে আছি।আমার সাথে তিশা,ঈশা আর নীলু বসে আছে।তিশা ওর বয়ফ্রেন্ডের কথা কি যেন বলছে সেটা শুনে নিলু আর ঈশা খুব হাসছে।আমার কেন জানি এসবে মন নেই,মনটা আটকে আছে সেই যায়গায়,যেখানে বিষন্ন অন্য একটা মেয়ের সাথে কথা বলছিলো।কি হচ্ছে আমার? এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমার মন খারাপ কেন হচ্ছে? বিষন্ন অন্য মেয়ের সাথে কথা বলেছে সেটা দেখে আমার কেনো মন খারাপ হবে? কেন?। তখনি তিশা আমার হাত ঝাকিয়ে বললো
” কিরে দোস্ত কি ভাবছিস এতো? ”
” কই কিছু না ”
ঈশা বললো ” তাহলে আমরা এখানে গল্প করছি আর তুই চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছিস যে?”
” কিছু না বাদ দে, তিশা তুই না আজ দেখা করলি, তো কি হলো, ছেলে কি চলবে? ”
তিশা, ঈশা,নীলু অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইলো।আমি বুঝতে পারছি না এরা এভাবে তাকিয়ে আছে কেন।আমি পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।খুব অন্যায় প্রশ্ন করে ফেলছি নাকি?। নীলু বললো
” তার মানে এতোক্ষণ তুই আমাদের কথা কিছুই শুনিস নি? ”
তিশা বললো ” কি বিষয়ে হাসাহাসি করছি তাও শুনতে পাস নি?”
আমি বললাম” আসলে,ইয়ে মানে,না শুনিনি।কি নিয়ে বলছিলি? ”
নীলু বললো ” তোর মন কোথায় পড়ে আছে বল তো? এতো উদাসীন লাগছে কেন তোকে? ”
ঈশা বললো ” প্রেমে পড়েছিস নাকি দোস্ত? কে সেই ছেলে? ”
আমি বললাম ” আরেহ না,কি যে বলিস তোরা,আচ্ছা তিশা কি হলো বল না? ”
তিশা বললো ” লে হালুয়া,এতোক্ষণ বকবক করার পর এখন বলছিস আবার বলতে? আমি পারবো না বলতে,এই ঈশা তুই সংক্ষেপে বল ”
ঈশা বললো ” ছেলেটা হলো এক নাম্বারের লু*চ্চা।তিশাকে নিয়ে যখন রিকশায় উঠেই হুট তুলে দিয়েছে,তারপর রিকশাতেই কয়েকবার হা*ত ধ*রার চেষ্টা করেছে।তিশা তেমন কিছু বলেনি।তারপর পেছন থেকে তিশার কো*ম*ড়ে হাত রাখে,তিশা কয়েকবার বারন করে।তারপর তিশাকে একটা বাড়ির সামনে নিয়ে গিয়ে বললো ওটা নাকি ওর বন্ধুর ফ্লাট,ওখানে গিয়ে নাকি নিরিবিলি কথা বলবে দু’জনে ”
বলেই ঈশা সহ সবাই হাসতে হাসতে ব্রেঞ্চে হু*মড়ি খেয়ে পড়ছে।আমি বললাম
” তারপর কি হলো? তিশা তুই কি সত্যি সত্যি ফ্লাটে গিয়েছিস নাকি ? ”
তিশা বললো ” আরেহ না, আমি কি পাগলি নাকি? দিয়েছি ব্যা*টার কা*ন বরাবর দুইটা থা*প্প*ড়।তারপর কয়েকটা গা*লি দিয়ে চলে আসলাম।এইসব ছেলেদের মু*খে জু*তো*পে*টা করা দরকার।”
” তোরা থাক গল্প কর,আমি হোস্টেলে যাচ্ছি,ভালোলাগছে না”
নীলু বললো ” আমিও বাড়িতে যাবো,বাড়িতে কাজ আছে ”
ঈশা,তিশাও উঠলো।তারাও চলে যাবে।ক্যান্টিনের বিল দিতে গিয়ে আরেকটা ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো।
” মামা কত হয়েছে আমাদের? ”
” টাকা দিতে হবে না আপু,জুনায়েদ ভাইয়ের গালফ্রেন্ডের কাছে টাকা নিলে মাথা তুলতে পারুম না ”
রীতিমতো আমার রাগে গা জ্ব*লে উঠলো।ধমক দিয়ে বললাম
” কিসের গালফ্রেন্ড? মুখে যা আসে তাই বলে দেন নাকি? কে না কে এসে কি বললো আর আপনি সেটা শুনে লাফাচ্ছেন? ”
বলেই ওনার দিকে পাঁচশত টাকার নোটটা ছুঁড়ে দিয়ে ওখান থেকে চলে আসলাম। আমার মতো তীশা,নীলু,ঈশাও ঘাবড়ে গেছে।নীলু বললো
” দোস্ত,বিষয়টা তো গভীরে চলে যাচ্ছে, কি করা যায়? ”
ঈশা বললো ” হ্যা কিছু একটা করা দরকার,জুনায়েদ হা*রা*ম*জা*দা তো এতে সহজে মিষ্টিকে ছাড়বে না মনে হচ্ছে ”
তিশা বললো ” তোকে নিয়ে আমার খুব ভয় হচ্ছে রে মিষ্টি,তুই না হয় এক কাজ কর, ভার্সিটিতে আর আসিস না ”
” তিশা কি বলছিস তুই? ওই ছেলের ভয়ে আমি ভার্সিটি আসা বন্ধ করবো? আর সামনে তো আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা। ”
তিশা বললো ” তোর ভালোর জন্যই বললাম।তোকে খুব সাবধানে থাকতে হবে দোস্ত ”
” আজকে সবাই তাহলে বাসায় যা।কাল দেখা হচ্ছে। আমার ভালো লাগছে না।তিশা চল ”
তিশাকে নিয়ে হোস্টেলে গেলাম।তিশাকে বললাম বিকেল চারটায় ডেকে তুলতে।বিষন্নকে টিউশনি করাতে যেতে হবে।
চারটায় তিশা ডেকে তুললো।ফ্রেশ হয়ে বিষন্নদের বাড়িতে রওনা হলাম।বাড়িতে ঢুকতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।সারা বাড়িতে চোখ ধাঁধানো সাজ।এতো সুন্দর করে সাজানোর কারন কি? সাজানো দেখেই মনে হচ্ছে এই বাড়িতে কাল কারো বিয়ে হবে,কেননা সাজ এখনো একটু বাকি।কার বিয়ে? এই বাড়িতে তো আঙ্কেল,আন্টি,নীলু,বিষন্ন আর মামা থাকেন।মামা কবি মানুষ,বিয়ের প্রতি তার প্রচুর ঘৃণা।তিনি আর যাই করুন,কখনো বিয়ে করবেন না। তাহলে কার বিয়ে?
চলবে?