তোমার নামের বৃষ্টি পর্ব ২০+২১

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:২০
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,

ভাইয়ার কোন উওর না পেয়ে চোখ খুললাম। সাথে সাথে বুকের ভেতরে ধক করে উঠলো। ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,

-কে তোর ভাইয়া? স্টুপিড। (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-চুপ করে আছিস কেন? (ত্বকি)

ত্বকি ভাইয়ার এমন প্রশ্নে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এ আবার কেমন প্রশ্ন? ভয় পেয়ে ভাইয়াকে উওর দিলাম,

-আপ প নি। (মেঘা)

আমার উওর পেয়ে ভাইয়া আমার থেকে দূরে সরে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ঠান্ডা গলায় বলে উঠলেন,

-আসলে তোকে বিয়ে করাটা আমার একদম উচিত হয় নি। (ত্বকি)

ত্বকি ভাইয়ার এমন কথা শুনে নিজের অজান্তেই খারাপ লাগতে শুরু করল। পরাপর দুটো নিশ্বাস ফেলে হঠাৎ অসহায় কন্ঠে বলে উঠলেন,

-তুই কি কখনো আমাকে বুঝবি না? (ত্বকি)

বলেই ত্বকি ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ওনাকে বুঝার মতো যোগ্যতা এখনো আমি অর্জন করতে পারি নি। তার প্রতিটা কথাই আমাকে গভীর ভাবনায় ফেলে দেয়। মাথার মধ্যে তার বলা প্রতিটা কথাই ঘুরপাক খেতে থাকে। আমি তো তার কথা কিছুই বুঝতে পারি না।

আমি ভাইয়ার কাছে থেকে ফোন না নিয়েই আম্মুর রুমে চলে এলাম।

আম্মু বিছানায় বসে বই পড়ছিলেন। আমি দরজা বন্ধ করে আম্মু পাশে গিয়ে বসলাম। হাতে থেকে বইটা সরিয়ে চুপটি করে তার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলাম।

ত্বকির মা মেঘার কান্ড দেখে হালকা হেসে উঠলেন। মেঘার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলে উঠলেন,

-কি হয়েছে আম্মু? (ত্বকির মা)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-আমার ছেলেটা কি তোকে আবার বকেছে? (ত্বকি)

আম্মুর কথা শুনে চোখ মেলে তাকালাম। শুয়া থেকে উঠে আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরলাম। ভাঙা গলায় বলে উঠলাম,

-যান আম্মু, ভাইয়া না আজকে আমাকে কি বলেছেন? (মেঘা)

মেঘার কথা শুনে ত্বকির মা আল্লাদি কন্ঠে বললেন,

-কি বলেছে আমার ছেলে? (ত্বকির মা)

-আমি নাকি তোমার ছেলেকে বুঝি না। (মেঘা)

ত্বকির মা মিটমিট করে হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,

-কেন রে? আমার ছেলেটা কি বলিছিলি? (ত্বকির মা)

-বিশ্বাস কর আম্মু, আমি কিছুই বলি নি তাকে। শুধু বলেছিলাম যে, ভাইয়া ফোনটা দাও আম্মুর সাথে কথা বলব। (মেঘা)

ত্বকির মা মনযোগ দিয়ে মেঘার কথা শুনতে লাগলেন। হঠাৎ আবাক মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,

-তারপর ত্বকি কি বলেছে তোকে? (ত্বকির মা)

কিছুটা সময় চুপ করে থেকে আম্মুর গলা ছেড়ে দিয়ে আম্মুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

-তারপরে ভাইয়া আমাকে বোকার মতো প্রশ্ন করেছিলেন, কে তোর ভাইয়া? (মেঘা)

মেঘার সম্পন্ন কথা শুনে ত্বকির মা চোখ বড়ো বড়ো করে মেঘার দিকে তাকালেন। ধমকের শুরে বলে উঠলেন,

-আমার ছেলে যা বলছে তাই ঠিক। তুই সত্যিই আমার ছেলেটাকে বুঝিস না। (ত্বকির মা)

আম্মুর ধমক শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।

-কেন আম্মু আমি আবার কি করলাম? (মেঘা)

-নিশ্চুপ (ত্বকির মা)

কিছুটা সময় ত্বকির মা মেঘার দিকে গুরুত্ব দৃষ্টিতে তাকালেন। মেঘার বাহুদ্বয় চেপে ধরে গম্ভীর গলায় বলতে লাগলেন,

-মেঘা তুমি এখন আমার ছেলের বউ। আমার ত্বকি সবকিছু। ত্বকিকে একটু বুঝতে চেষ্টা কর। তুমি তো এখন আর ছোট্ট নেই। (ত্বকির মা)

আজ আম্মুকে সত্যি শাশুড়ির মতো লাগছেন। একদম শাশুড়ির মতো কথা বলছেন তিনি। কেন জানিনা আম্মুর কথা শুনে খুব কান্না পাচ্ছে।

-আমি জানতাম তুমি বুদ্ধিমতি মেয়ে। কিন্তু তুমি আসলেই একটা বোকা মেয়ে। (ত্বকির মা)

আম্মুর কথা আমি আর শুনতে পারলাম না। ঠোঁট-ওল্টে কান্না শুরু করে দিলাম।

মেঘাকে কাঁদতে দেখে ত্বকির মা ভয় পেয়ে গেলেন। মেঘাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,

-আমার পাগলী মেয়ে। কাঁদছিস কেন? আমি কি তোকে বকেছি? (ত্বকির মি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-সরি সোনা। কাঁদে না। আমারই ভুল হয়েছে যে তোর উপর রাগ করা একদম উচিত হয় নি। (ত্বকির মা)

আম্মুর আদর মাখা সান্তনা পেয়ে আমার কান্না দ্বিগুণ বেড়ে গেল। আরো জরে জরে কান্না করতে লাগলাম ।

-আম্মু কাঁদে না। দেখ মা, তুই যদি ত্বকিকে না বুঝিস তাহলে কে বুঝবে? হুম? (ত্বকির মা)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

কিছুক্ষণ ইচ্ছে মতো কান্না করলাম। আম্মু চুপ করে আমার কান্না দেখতে লাগলেন। কান্না থামানোর পর আম্মু নরম গলায় বলতে লাগলেন,

– পাগলি রে, বিয়ে করলে কি স্বামী কখনো ভাইয়া হয়? (ত্বকির মা)

-উহু (মেঘা)

-এখন বল তো, ত্বকি তোর কি হয় ? (ত্বকির মা)

আম্মু এমন প্রশ্ন আমি ভরকে গেলাম। কেমন যেন লজ্জা লাগতে শুরু করল। লজ্জা মাখা কন্ঠে আম্মুকে বলে উঠলাম,

-স্বামী (মেঘা)

-তাহলে ত্বকি তুই ভাইয়া বলিস কেন? (ত্বকির মা)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

আম্মুর কথা শুনে সত্যি লজ্জা যেন বেড়ে গেল। আসলেই ত্বকি ভাইয়া তো আমার স্বামী তাহলে আমি কেন তাকে ভাইয়া বলে ডাকব। লজ্জায় মাথা তুলে আম্মুর দিকে তাকাতে পারছি না।

মেঘার লজ্জা রাখা মুখ দেখে ত্বকির মা হেসে উঠলো। আদর মাখা কন্ঠে বলতে লাগলেন,

-হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছিস। (ত্বকির মা)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-যা রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে রাখ। ত্বকি মিমমার বিয়েতে যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছে। সকালে আমাকে বলেছে যাতে তোকে রেডি করতে হেল্প করি। যা গিয়ে রেডি হ। (ত্বকির মা)

আম্মুর কথা শুনে মনটা নিমেষেই ভালো হয়ে গেল। খুশিতে বলে উঠলাম,

-থ্যাঙ্কু আম্মু। তুমি আমার কিউট আম্মু। আই লাভ ইউ। (মেঘা)

মেঘার আনন্দ দেখে ত্বকির মায়ের মনটাও খুশিতে ভরে উঠলো।
,,

গাড়িতে বসে আছি এক ঘন্টা হলো। ভাইয়া গম্ভীর মুখ করে গাড়ি চালাচ্ছেন। এরমধ্যে একবারও আমার সাথে কথা সাথে কথা বলেন নি। চুপ করে থাকতে থাকতে আমার মুখ ব্যথা হয়ে গিয়েছে। বিরক্ত নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। সকালের কথা মনে পড়লেই লজ্জা লাগছে। লজ্জায় ভাইয়ার দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছি না। তাকালেই কেমন বুকের ভিতর অস্থির করে উঠছে। কারন আজকে তাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। সাদা রং এর পানজাবি পড়েছেন তিনি। দেখতে খুব স্মার্ট লাগছে। একদম রাগী কিউটিপাই। একটু হাসলে বোধহয় আরো বেশি সুন্দর লাগত। আমি বুঝি লোকটা এত ভাব নেই কেন? একটু হাসলে কি দুনিয়া অশুদ্ধ হয়ে যাবে?

অন্যদিকে,

সন্ধ্যা পরে সাদ বাসায় ফিরেছে। সারাদিন ভারর্সিটি করে প্রচুর ক্লান্ত সে। তিথি অনেক আগেই ক্লাস করে ভারর্সিটি থেকে চলে এসেছে। আজকে সাদের ক্লাস ছিল না তাই তিথির সাথে একবারও তার দেখা হয় নি।
,,
রাতের বেলা রুশাকে ঘুম পাড়িয়ে সাদের রুমে এসেছে তিথি। সারা দিন একবারও ভালবাসার মানুষিকে না দেখে পেয়ে এখন তার চিন্তা হচ্ছে। তাই তিথি একপল সাদকে দেখতে এসেছে।
পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার বিজার করছে। তিথির চোখে সাদ নামক ব্যাক্তির কোন দেখা মেলি নি। অন্ধকার ভিতরে সে এগুতে লাগল। গুটি গুটি পায়ে সাদের বিছানার সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ল। বেলকনি থেকে আলো এসে পড়ছে খাটের উপর। তাই হয়তো তিথি বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে থাকা মানুষটিকে দেখতে পেল। সাদ ভারর্সিটি থেকে এসে শার্ট না খুলেই শুয়ে পড়েছে।

সাদের অবস্থা থেকে তিথি স্বস্তির নিঃশ্বাস মাখা ফেলল। আস্তে আস্তে সাদের দিকে এগিয়ে গেল। বিছানায় একেবারে কাছে গিয়ে সাদকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। কিছুটা সময় পার হওয়ার পর তিথি বুঝতে পারল সাদ গোঙ্গাছে। সাদের অবস্থা দেখে তার বুকের ভিতর ব্যথা অনুভব হতে লাগল। তিথির আর বুঝতে বাকি রইল না যে, সাদের জ্বর এসেছে। প্রচুর জ্বর এসেছে।
দেরি করে হলেও সাদের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। কালকে জ্বর না এলেও আজকে এসেছে। হয়তো আজ সে তার ভালোবাসার মানুষটার হাতের ছোঁয়া পাবে।

এদিকে,

গ্রামের বাড়িতে এসেছি একটু আগে। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তাই তেমন কারো সাথে দেখা হয়নি। মিমমা আপুর সাথেও দেখা হয় নি।
আমাদেরকে থাকার জন্য একটা ছোট্ট রুম দেওয়া হয়েছে। রুমটার খাটটাও অনেক ছোট।

ভাইয়া খাটের উপর শুয়ে পড়েছেন।আমিও জামা পালটে ফ্রেশ হয়ে এসে দূরত্ব বজায় রেখে ভাইয়ার পাশে শুয়ে পড়লাম। ভাবতেই অবাক লাগছে ভাইয়া আর আমি এক বিছানায় ঘুমোব। বুকের ভেতর কেমন যেন ধুপ ধুপ করছে।
,,

গভীর রাতে শরীরে শীত অনুভব করতেই আমার ঘুম ভেঙে গেল। কেমন যেন অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে। ভালো ভাবে খেয়াল করে বুঝতে পারলাম আমার গায়ে ওড়না নেই।
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:২১
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
গভীর রাতে শরীরে শীত অনুভব করতেই আমার ঘুম ভেঙে গেল। শরীর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ভালো ভাবে খেয়াল করে বুঝতে পারলাম আমার গায়ে ওড়না নেই।

সাথে সাথে উঠে বসলাম। পুরো রুম জুরে অন্ধকার বিরাজমান। চারপাশে হাল্কা শীতল হাওয়া বইছে। মাথার উপর টিনের ছাদ হওয়ার সুবাদে বৃষ্টি টুপ টুপ ফোঁটার আওয়াজ কানে ভেসে আসছে।
ভাইয়া যে আমার পাশে শুয়ে আছে ভাবতেই বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। লজ্জা লাগতে শুরু করল।ছিঃ ভাইয়া যদি এমন অবস্থায় আমাকে দেখে তাহলে কি বাজে পরিস্থিতিতেই না পড়তে হবে। তাই তাড়াতাড়ি করে বালিশের আশে পাশে হাত দিয়ে ওড়না খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু বিছানার কোথাও ওড়নাটা পেলাম না। অবশেষে উপায় না পেয়ে ভাইয়ার ফোনের লাইট অন করলাম। ভয় নিয়ে ভাইয়ার দিকে ধরলাম। একপল তার দিকে তাকিয়ে মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ল। আপনা আপনিই হাতে থেকে মোবাইলটা পড়ে গেল বিছানার উপর। মাথাটা ঘুরতে লাগল। এমন পরিস্থিতিতে ভাইয়া ঘুম ঘুম গলায় বলে উঠলেন,

-লাইট অন করছিস কেন? স্টুপিড। (ত্বকি)

ভাইয়া যে জেগে আছেন মনে পড়তেই আমি অবাক হয়ে উঠলাম। একে তো ঠান্ডা লাগছে তার উপর ভাইয়ার কন্ঠস্বর পেয়ে ভয়ে হাত পা কাঁপতে কাঁপতে শুরু করল। নিজেকে স্বাভাবিক করে লজ্জা মাখা কন্ঠে বললাম,

-আমার ওড়না,, (মেঘা)

-হুমম (ত্বকি)

-আমার ওড়না আপনার কাছে কেন? (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (ত্বকি)

মেঘার কথা শুনে ত্বকি চুপ করে রইল।

-ওড়নাটা দিন না (মেঘা)

-উহু। দিব না। (ত্বকি)

-কেন? এটা তো আমার ওড়না। (মেঘা)

-কে বলছে এটা তোর ওড়না? (ত্বকি)

ভাইয়া এমন কথা শুনে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। তার উপর বিরক্ত লাগতে শুরু করল। একে তো আমার ওড়না গায়ের উপর দিয়ে শুয়ে আছে। তাও স্বীকার করছে না যে, ওড়নাটা আমার। দূর, ভালো লাগে না।

-তোর ওড়না? (ত্বকি)

তার কথার উওর দেওয়ার মতো ভাষা পেলাম না।লজ্জায় শরীর অবস অবস লাগছে। তাও আস্তে করে বললাম,

-হুম। দিন না প্লিজ। (মেঘা)

-না দিব না, এই ওড়নাটাই তোর চেয়েও আমার অধিকার বেশি। তাই আর চাইবি না। ওকে? (ত্বকি)

আমার ওড়নায় আমার চেয়ে ভাইয়ার অধিকার বেশি কথাটা মাথায় ঢুকল না। মনের মাঝে প্রশ্ন জাগতে শুরু করল, কীভাবে? কিছুটা সময় চুপ থেকে, লজ্জা মাখা কন্ঠে বলে উঠলাম,

– কিভাবে? (মেঘা)

মেঘার কথা শুনে ত্বকি গম্ভীর গলায় বলল,

-ওড়নাটা তোর কিনা যানিনা। কিন্তু ওড়নাটা আমার বাবুর আম্মুর আর আমার একমাত্র বউ এর। ছো, ওড়নাটার উপর তোর চেয়ে আমার অধিকার বেশি। (ত্বকি)

ভাইয়ার কথাগুলো যেন আমার মাথার উপর দিয়ে গেল। লজ্জায় খাটের নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে।

মেঘার লজ্জা বাড়িয়ে দিতে ত্বকি বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো,

-লজ্জা পাচ্ছিস কেন? আমি কি তোকে লজ্জা পাবার মতো কিছু বলেছি? (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-অসহায়ের মতো থাকবি না। তোর ভাব দেখে মনে হচ্ছে ওড়নাটা নিয়ে আমি মহা অপরাধ করে ফেলেছি। দেখ, অনেক শীত লাগছিল। রুমে কোন কাঁথা নেই। তাই বাধ্য হয়ে তোর ওড়নাটা নিয়েছি। তোর যদি শীত লাগে তাহলে অন্য একটা ওড়না বের করে গায়ে নে। (ত্বকি)

ত্বকি ভাইয়াল কথাগুলো শুনে আমি এক মূহুর্ত দেরি না করে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম। তার কথা মতো ব্যাগ থেকে দুটো পরিষ্কার ওড়না বের করলাম। একটা গায়ে জড়িয়ে নিলাম। অন্যটা হাতে নিয়ে লজ্জা মাখা কন্ঠে আস্তে করে বলে উঠলাম,

-এই ওড়নাটা নিন। একদম নতুন জামার ওড়না। একবারও পড়ি নি। ওটা আমাকে দিয়ে দিন। ওটা তো আমার গায়ে ছিল তাছাড়া পরিষ্কার না। (মেঘা)

মেঘার পটপটে করে বলে উঠা কথাগুলোতে ত্বকি বিরক্ত হয়ে উঠলো। মুখ দিয়ে বিরক্ত মাখা ‘চ’ শব্দ বের করে গম্ভীর গলায় বলল,

-তোকে কি বললাম কানে যায় নি? বলেছি, এই ওড়নাটা দিব না। অন্য একটা বের করে তুই নে। ভালো ভাবে বলেছি তো তাই বুঝিস নি। এখন কোন কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়। মুখ দিয়ে যদি আর একবার টু-শব্দ করিস তাহলে তোকে রুম থেকে জাস্ট বের করে দিব। আন্ডারস্টান্ড? (ত্বকি)

ত্বকি ভাইয়া ধমক দেওয়া কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলেম। এ লোকটা দিয়ে বিশ্বাস নেই, সত্যি সত্যি রুম থেকে বের করে দিতে পারে। তাই আর দেরি করলাম না। চুপ করে বিছানার এক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি তো ভাবতেই পারছি না যে, ভাইয়া আমার ওড়না জড়িয়ে শুয়ে আছে। বিষয়টা একদম মানাছে না। চিন্তা বাদ দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমোতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু তার এমন অস্বাভাবিক কথাগুলো আমাকে গভীর চিন্তায় ফেলে দিচ্ছি। মাঝে মাঝে তার কথা শুনলেই শরীরে জ্বরের রোগীদের মতোন কম্পন সৃষ্টি হয়। কেন এমন হয় এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই আমার। যে প্রশ্নের উত্তর গুলো খুঁজতে খুঁজতে আমি দিশেহারা হয়ে উঠি।

অন্যদিকে,

ভোরের মিষ্টি আলো বেলকনি ভেদ করে সাদের মুখের উপর পড়তেই সাদ কিছুটা নড়েচড়ে উঠল। কিছুটা সময় পাড় হতেই সূর্য মামার তাপ আরো প্রখর হয়ে উঠল। তাপ যেন সরাসরি সাদের মুখের উপর পড়ে তাকে বিরক্ত করছে। হাজার চেষ্টা করেও সে চোখ বুজে থাকতে পারল না। অবশেষে পিটপিটিয়ে চোখ খুলে উঠে বসল। মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে। হয়তো কাল রাতে জ্বর এসেছিল তার। কিন্তু কালকে কি তিথি সত্যিই তার সেবা করেছে? নাকি করেনি? রাতের কোন কথাই মনে পড়ল না। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগল সাদ। বিছানার এক পাশে তাকাতেই তার মুখে হাঁসি ফুটে ওঠলো। তার পাশে গুটিয়ে শুয়ে আছে রুশা। গভীর ঘুমে মগ্ন সে। সাদ রুশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। মনে মনে বলে উঠলো,

-তারমানে তিথিও কি এ রুমে ছিল? আমার পাশে ছিল? (সাদ)

কিছুক্ষণ তিথির চিন্তায় মত্ত রইল সে। হঠাৎ মনে পড়ে গেল আজকে তো তিথির ক্লাস আছে। ভেবেই সাদের খুশিটা দ্বিগুন হয়ে গেল যে আজকে সাইক্লোজি ক্লাসটা সাদ পাবে।
,,
সাদ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রুশাকে রেডি করে নিজেও রেডি হয়ে নিল। আজ রুশাকে সাথে করে নিয়ে যাবে। যেহেতু তার দুটো ক্লাস আর তিথির একটা ক্লাস তাই কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।

এদিকে,

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ভাইয়াকে নিয়ে দাদীর রুমে এসেছি। রাতে দাদি ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই দেখা হয়নি। রাতের ঘটনার পর তার সাথে একবারও কথা হয়নি। মাথায় কাপড় দিয়ে দাদির পাশে বসে আছি। সে ছোফাতে বসে দাদির দিকে তাকিয়ে আছে। দাদি মুখ গোমরা করে রয়েছেন। একবারও আমার সাথে কথা বলে নি।

-দাদি, আমি এসেছি তো। এখনো রাগ করে আছো আমার উপর। (মেঘা)

-নিশ্চুপ (মেঘার দাদি)

-ও দাদি কথা বলছো না কেন? (মেঘা)

মেঘার দাদি চুপ করে থেকে হঠাৎ মেঘাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

-রাগ করব না কেন? তুই কি জানিস তোর বিয়ে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন ছিল। সব সপ্ন ভেঙে গেল। (মেঘার দাদি)

মেঘার দাদির কথা শুনে ত্বকি হেঁসে দিয়ে বলে উঠলো,

-সরি দাদি, তুমি রাগ করো না। খুব তাড়াতাড়ি তোমার নাতিনকে আবার বিয়ে করব। শুধু তোমার নাতিকে একটু তাড়াতাড়ি বড়ো হতে বল। (ত্বকি)

-কেন গো দাদা? মেঘা কি তোমাকে ভালোবাসে না? (মেঘার দাদি)

ত্বকি মেঘার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-উহু। (ত্বকি)

ত্বকির আর দাদির কথাগুলো শুনে মেঘা লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে লজ্জা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মিমমা হুট করে এসে বলে উঠলো,

-জিজু গো। আজকে কিন্তু তোমার বউকে নিয়ে পাবে না। ঠিক আছে?

মিমমার কথা শুনে তাহসিন হেঁসে উঠলো। আর মনে মনে বলে উঠলো,

-আজকে মেঘা অনেক কিছু বোঝে না তার জন্য দায়ী আমি। কখনো ওকে বান্ধবীদের সাথে মিশতে দেই নি, ভেবেছিলাম পেঁকে যাবে। কিন্তু এখন কষ্টটা তো আমারই হচ্ছে। (ত্বকি)

ভেবেই ত্বকি নিশ্বাস নিল। মিমমা বেশি কথা না বলে মেঘাকে টেনে নিয়ে অন্য রুমে নিয়ে গেল। দাদিও সাথে গেল। দাদি যাওয়ার আগে বলে গেল,

-দাদা গেলাম। নাতি বিয়ে তো অনেক কাজ বাকি আছে। রাতে বেলা কিন্তু তোমার কাছে থাকব। (মেঘার দাদি)

,,
তিন ঘণ্টা হয়ে গেছে ত্বকি একা রুমের মধ্যে বন্ধি। মেঘার দেখা মিলেনি। মেয়েটা বেড়াতে এসে তাকে ভুলেই গিয়েছে। ত্বকি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল মেঘার কথা। তার বলা কথাগুলোর কি প্রভাব মেঘার উপর পড়ে? নাকি মেয়েটা তাও কিছু বুঝে না?
(চলবে)

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here