তোমার পরিনীতা পর্ব ২২+২৩

তোমার পরিনীতা -২৩

ফায়জা করিম

( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পরিনীতার ছায়া অবলম্বনে)

লেখিকা- ফায়জা করিম

( ১৮+ কনটেন্ট বিদ্যমান, কোন অবস্থায় গল্প কপি না করার অনুরোধ রইলো)

ঘরে ঢুকে কাপড় ছাড়তে ছাড়তে রাত এগারোটা পার হয়ে গেলো শ্রাবনের। চেঞ্জ করে ও যখন খাবার ঘরে ঢুকলো নির্মলা তখন বাসার কাজের লোকদের খাবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ছোট ছেলেকে পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে দেখে বুঝলেন আজ বাবু বাসায় খাবেন। তড়িঘড়ি করে তাই কাজের লোককে আবার টেবিলে প্লেট দিতে বললেন তিনি।

“হ্যারে শ্রাবণ, বলছি তোর এর মধ্যে বাবার সাথে কোন কথা হয়েছে? ”

“নাতো মা… কেন? ” শ্রাবন ভাতের থালা সামনে টেনে নিলো। ভীষন খিদে পেয়েছে ওর সমীর মামা আর আদিত্যর খোশ গল্প শুনতে শুনতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুমোর বিয়ের কি হয় সেটা শোনার লোভে ওখান থেকে চলে আসতে পারেছিলনা ও।

“তোর বাবার মেজাজ আজ আকাশে চড়ে বসে আছে।”

শ্রাবন খাবারে মাত্র হাত লাগিয়েছিল, কিন্তু মায়ের কথা শুনে খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে সেদিকে মনযোগী হলো। কি ব্যাপার… মনেমনে ভাবলো আমি তো কিছু করিনি খ্যাপানোর মতো।

ছেলে কি ভাবছে নির্মলা বেশ জানেন, তাই শ্রাবন প্রশ্ন করার আগেই বলে দিলেন যে, সুমনের মামা সমীর ওর বাবার কাছে তার ঋনের সব টাকা শোধ করে দিয়ে গেছেন। কোথা থেকে তিনি হঠাত এতোগুলো টাকার বন্দোবস্তো করলেন সেটা সেই জানেন, কিন্তু রামনাথ চৌধুরী সেই ঘটনার পর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। পারতপক্ষে কারো সাথে কথা বলছে না আর বললেও তাতে মেঘ গজরাচ্ছে।

যদিও রামনাথ চৌধুরী মুখে বার বার কেবল ‘উহ্ মানুষ এতো অকৃতজ্ঞ হয়?’ এটাই বলছেন কিন্তু সমীর টাকা পরিশোধ করার পরে তার মন একটুক্ষণের জন্যও শান্ত হয়নি, বরং বিষিয়ে রয়েছে।

ঋনের টাকা শোধ হওয়ায় বাবার যে কেন মেজাজ খারাপ সেটা শ্রাবণ ভালই জানে, ওটা নিয়ে ওর কোন মাথা ব্যাথা নেই। ওই বাড়ির প্রতি ওর বিন্দু মাত্র লোভ নেই। বাবার মতো খালি বাড়ি বাড়ি করে জীবন পার করতেও শ্রাবন রাজি নয়। তবে সময়ে নিজের পায়ে দাড়িয়ে পছন্দ মতো একটা বাড়ি করার শখ ওর আছে। কিন্তু বাড়ি মানেই ওর কাছে কেবল ইট, কাঠ, রড,বালু আর সিমেন্টের ঢালাই বলে মনে হয়না। বাড়ি মানে তার ভিতরের মানুষগুলোর মনের বন্ধন শক্ত হওয়া জরুরি, যা কিনা একটা বাড়ির ভিত। না হলে দামী হোটেল আর লাক্সারিয়াস বাড়ির মধ্যে পার্থক্য কোথায়? স্বপ্ন গুলো ডানা মেলার আগে দুটো মানুষের স্বপ্নটা এক হওয়া অবশ্যই জরুরি। ওর মায়ের মতো কেবল এডজাস্টমেন্ট করে আর বাঁচতে হয় বলে খাই এমন বাড়ির মালিক হতে শ্রাবন চায় না… তারচেয়ে ওর একটা ছোট্ট বাড়ি হোক.. সেখানে ওর স্বপ্ন সারথী ওর সাথে পরম নিশ্চয়তা নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিক…. এর চেয়ে বেশি কিছু ও চায়না।

“এখন তোর বাবা….. কে সমীর ঠাকুরপোকে এতোগুলো টাকা দিয়ে সাহায্য করলো তার পিছনে লেগেছে। আচ্ছা তোমার টাকা দরকার ছিলো আর তোমার টাকা সে তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে….. ব্যাপার মিটে গেল। কিন্তু না, তা হবে না….. এখন তাকে সব ঘেটেঘুটে টাকার জাত বংশ সব জানতে হবে… “,নির্মলা একটু দম নিলেন, ” অন্যকে এতো অত্যাচার করা কেন বাপু? তারা টাকা ধার নিয়েছিল… তোমার কাছে মাথা বিক্রি করেনি।”

মায়ের কথায় শ্রাবন হো হো করে হেসে ফেললো।

“কিরে…. তুই হাসছিস কেনো অমন করে? আমার কথা কি তোর কাছে কৌতুক বলে মনে হচ্ছে?”

“না, মা… আসলে অনেক বছর পরে কাকতালীয়ভাবে বাবার আর আমার একজন লোকের দিকেই নজর পড়েছে আর আমাদের দুজনেরই বক্তব্য হচ্ছে….. দেখে নেব ব্যাটা তোকে।”

“মানে…. তাকে তুই চিনিস? ঠাকুরপো তোকে বলেছে বুঝি….?”

শ্রাবন মাথা নাড়াল,” নাহ”

লোকটা কে সেটা আলবাত জানে ও কিন্তু সব সময় নামের দরকার হয়না, আলামতই যথেষ্ট। আদিত্য যে সুমনের প্রতি অসীম আগ্রহ থেকেই সমীর মামার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ও বাড়িতে এতক্ষণ বসে থেকে আদিত্যর জন্য বাসার সবার যে আন্তরিকতার বহর শ্রাবণ দেখলো …. তাতে সুমনকে, আদিত্যর হাত থেকে ও বাঁচাবে কি করে সেটা নিয়েই শ্রাবনের এখন দুশ্চিন্তা হচ্ছে।

“হমম… আমিও তাই বলি। আমি নিজেও মঞ্জুকে ডেকে পরে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিন্তু ঔ বললো যে….. যে দিয়েছে সে নাকি নিজের নাম প্রচার করাতে চায় না। লোকটা মনে হয় খুবই ভালো, তা না হলে এখন তো সবাই নিজের নাম ফোটাতে ব্যাস্ত থাকে।”

“হমম… ”

শ্রাবণ খাবার খেতে খেতে আবার গভীর চিন্তায় ডুবে গেলো।

………………………………………..

“শ্রাবণদা…… ”

“আরে প্রীতি… কি রে? ”

“বলছি আমার না কয়টা টাকা লাগবে, তুমি দিবে? ”

“টাকা? কেন? সুমো তোকে আজকাল টাকা দেয়না? ”

“সুমনদির সাথে কাল থেকে কোন কথাই বলা যাচ্ছে না, বললেই বলে আমি আর শ্রাবণদার কাছ থেকে কোনদিন টাকা নিতে পারবোনা প্রীতি। ”

“কেন? তার আবার কী হলো যে আমার টাকা হঠাত তার অচ্ছুৎ মনে হওয়া শুরু হলো। ”

“ওইযে মা এক ভেজাল পাকালো না কাল, সুমনদি তাই বার বার বলছে, বড়মা যদি এর বিন্দু বিসর্গও জানতে পারে প্রীতি তাহলে কত কষ্ট পাবেন আর তারপরই আবার কাঁদছে। ”

কথা সত্যি… মঞ্জু মামীর এই কথাগুলো মায়ের কানে কোনভাবেই পৌছাতে দেওয়া যাবেনা। শ্রাবন ব্যাপারটা এতক্ষণ খেয়াল করেনি কিন্তু সুমো খেয়াল করেছে এটা মনে হতেই বুকে শান্তি শান্তি লাগলো।

“আমি তাও এর মধ্যে একবার সুমনদির কাছে টাকার কথা বলেছিলাম … কিন্তু পরে আর সাহস পাইনি শ্রাবনদ। সুমনদি বলেছে বড়মার কাছে খাবার এনে যেহেতু সে অপরাধ করেছে সেহেতু এ বাড়ির একদানা খাবারো আর দির গলা দিয়ে নামা উচিত না, আর তোমার টাকাতেও সুমনদি আর কখনো হাত দেবে না। ”

শ্রাবন এবার হাসলো… বের করছি ওর টাকায় হাত না দেয়া… কতদিন হাত দেবে না শুনি? তবে
সুমো পাগলী এবার সত্যি ক্ষেপেছে মনে হচ্ছে।

“আচ্ছা প্রীতি তোর কেন লাগবে টাকাটা… এবার বল দেখি,” শ্রাবন, প্রীতির কাছে জানতে চাইলো।

প্রীতি মুখটা যথাসম্ভব কাচুমাচু করে বললো, “বলতে পারি এক শর্তে… কিন্তু তুমি কথা দাও তুমি হাসবেনা। ”

“হাসা যাবেনা? ”

“উহুু… একদম না ”

“আচ্ছা হাসবনা এবার বল।”

“শ্রাবনদা… আজ আমার বকুলের বিয়ে।”

“বকুলের বিয়ে! এই বকুলটা আবার কে? ”

!আমার ঘরের লক্ষী… আমার মেয়ে বকুল। ”

“তোর মেয়ে মানে?” শ্রাবণ চেয়ারে বসা থেকে উঠে দাড়াল স্প্রিংয়ের মতো।

“আরে মেয়ে মানে আমার মেয়ে পুতুল… গত বছরই ওর বিয়ে দিয়ে দিতাম শ্রাবনদা কিন্তু একদম দেয়া থোয়া ছাড়া বিয়ে দিবো কি করে তাই মেয়েকে ঘরে বসিয়ে একবছর আইবুড়ো করে রাখতে হলো। ”

“কি বললি আইবুড়ো? “হো হো করে হেসে ফেললো শ্রাবন,” কি পাকা পেকেছিস রে তুই প্রীতি… আবার দেয়া থোয়াও বহাল আছে।”

“শ্রাবনদা প্লিজ আমায় একটু হেল্প করোনা … তুমি আমায় গতকাল চকলেট আর আইসক্রিম দিতে চেয়েছিলে , ওটার বদলা আমায় একশটা টাকা দিবে? আমি অন্য সবকিছু ম্যানেজ করতে পেরেছি কিন্তু বকুলের বিয়ের খাওয়ার টাকাটা কিছুতেই জোগাড় করতে পারছিনা। ”

শ্রাবন মানিব্যাগ থেকে দুশো টাকা বের করে দিলো প্রীতির হাতে,” নে.. এটা তোর মেয়ের বিয়ের গিফট…. আর আইসক্রিম আর চকলেট এমনি পাবি। ”

“সত্যিই! থ্যাঙ্কিয়্যু শ্রাবনদা…. থ্যাঙ্কিয়্যু… ”

প্রীতি নাচতে নাচতে বাড়ির দিকে ছুটলো…

“অ্যাই প্রীতি… ”

“আবার কী ? ”

“বলছি তোর মেয়ের বিয়েতে মালা গাঁথছিস না?”

“এইতো এখন যেয়ে গাঁথবো.. টাকাগুলোর জন্য অনেকগুলো কাজ আঁটকে ছিলো জানো.. এখন একটু থির হয়েই গেঁথে ফেলবো।”

“বাপরে… আচ্ছা যা হোক, ওখান থেকে আমায় একটা মালা দিয়ে যাস দেখি। ”

“মালা… আচ্ছা।”

“আর সুমোকে একটু ডেকে দে… বল আমি ডাকছি। ”

“আচ্ছা.. আচ্ছা… বলছি ”

প্রীতির মুখটা আনন্দে জ্বল জ্বল করছে। বড্ডো চিন্তায় ছিল ও এতোক্ষন… বান্ধবীদের সামনে মুখ থাকতো না একদম ওর টাকাগুলো না পেলে। আর মায়ের সামনে তো বলাই যাবেনা, বলবে ধিঙ্গিপনা দেখে বাঁচিনা.. দুদিন পরে নিজের বিয়ে হবে আর এখনও উনি পুতুল খেলে বেড়ান। কিন্তু প্রীতির যে পুতুল গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে এখনো বড্ডো ভালোলাগে আর তারচেয়েও বেশি ভালো লাগে ওদের জন্য নতুন নতুন কাপড়চোপড় বানাতে।

……………………………….

“সুমনদি….. ”

” কি ” সুমন বসে বসে তিন মাসের পুরোনো কাগজগুলো ভাঁজ করে এক জায়গায় জড়ো করছিলো। কাল এগুলো ফেরীআলা ডেকে বিক্রি করে দিতে হবে, তাহলে চল্লিশ, পঞ্চাশ টাকা পাওয়া যাবে অন্তত। সেই টাকায় প্রীতির পুতুলের বিয়ের খরচ উঠে যাবে।

“শ্রাবনদা তোমায় ডাকে ”

“শ্রাবনদা?”

“হ্যাঁ, বললো কি যেন কাজ আছে…. তাড়াতাড়ি যাও।”

“যাচ্ছি ”

সুমনের কালকের পর থেকে চৌধুরী বাড়িতে পা দিতেও লজ্জা লাগছে। বড়মা… বড়মা কী ভাববে.. না জানি কত কষ্ট পাবে…..। মামী ওকে কাল দিনভর বকাবকি করেছে সেটা ওর গা সওয়া কিন্তু তার সাথে বারবার সবকিছু ওর চৌধুরী বাড়ি দিতে মন চায়, এই কথাগুলো কাঁটার মতো বিঁধছে ওর। সুমনের ভুল হয়েছে.. অনেক বড় ভুলই হয়েছে… কিন্তু এতে বড়মা বা শ্রাবনদার তো কোন দোষ নেই আর তাছাড়া ওরা কত বড়লোক, এরকম খাবার চৌধুরী বাড়িতে দুই একদিন পর পরই তৈরী হয়। তাদের কানে এমন কথা গেলে তারা কী ভাববে?

“সুমনদি যাও না… ”

“যাচ্ছি তো… জ্বালাস না। ”

কাগজগুলো খাটের তলায় ঠেলে দিয়ে সুমন উঠে দাড়ালো, ভয় পেয়ে লাভ নেই। সমন যখন এসেছে ময়দানে যেতেই হবে।

সুমন ভয়ে ভয়ে শ্রাবনের দরজার কাছে এসে দাড়ালো। সারা পথ সুমন প্রার্থনা করতে করতে এসেছে যে, বড়মার সাথে যেন কোনভাবে ওর দেখা না হয়। এখনো দেখা হয়নি… মনে হচ্ছে আজ আবহাওয়া ওর অনুকূলে আছে।

“সুমো এদিকে আয়। ”

“বলো… ”

“মাকে নিয়ে এবার কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায় বল দেখি… আমি ভেবে ভেবে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না।”

“বড়মার পায়ের ব্যাথা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে শ্রাবনদা.. তাই এমন জায়গায় যাও যেখানে বড়মাকে বেশি পথ হাঁটতে হবে না।”

“ভালো বলেছিস, আমিতো পাহাড়ে যেতে চেয়েছিলাম।”

“না, না… তোমার মাথা খারাপ! বড়মা এখন প্রায় দিনই ব্যাথার ওষুধ খান। পাহাড়ে তো একদমই না।”

“হমম… তাহলে তুই বল তুই কোথায় যেতে চাস?”

“আমি! ”

“হ্যাঁ, আর কাপড় গুছিয়ে ফেলবি আস্তে আস্তে। তোদের কলেজে গরমের ছুটি পড়লেই বেরিয়ে পড়বো, কেমন?”

সুমন, শ্রাবনের কথার কোন উত্তর করলোনা। প্রায় প্রত্যেক বৎসরই বড়মার সাথে শ্রাবনদা ওকেও সাথে করে বেড়াতে নিয়ে যায় কিন্তু এ বছর মামী ওকে যেতে দিবেন কিনা ও জানেনা আর.. আর সাথে ওর জন্য যেভাবে পাত্র দেখা দেখি চলছে তাতে কতদিন আর ও এবাড়িতে থাকতে পারবে সেটাও জানে না সুমন।

“কিরে এরকম চুপ করে দাড়িয়ে রইলি কেন, কোথায় বেড়াতে যাবি বল? আগে থেকে বুকিং না করে রাখলে হোটেল,মোটেল কোনটাতেই সুবিধামতো রুম পাওয়া যায় না। পরে আবার তাই নিয়ে তোরাই হাজারটা কথা শোনাস।”

“শ্রাবনদা… ”

“কী?”

“এখন থেকে বোধহয় আমার আর যাওয়া হবেনা,” সুমন খুব কষ্টে চোখের পানি পড়া থামাল।

“কেন! ”

সুমন উত্তর না দিয়ে নিচু হয়ে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মেঝে খুটতে লাগলো..

সুমন কিছু বলছে না দেখে রাগ হয়ে যাচ্ছিল শ্রাবনের, এ আবার কোন ধরনের ঢং শিখেছে সুমো…. কিন্তু তারপরই হঠাত কাল ওদের বাড়িতে দেখা অনেকগুলো ছবি, আদিত্যর মতামত আর সমীর মামার কথাগুলো এসে কানে বাজতে লাগলো শ্রাবনের।

হঠাত দিশেহারার মতো ঢোক গিললো শ্রাবন। আচ্ছা পছন্দ করুক বা না করুক পরিবারের চাপে পড়ে যদি সুমন, আদিত্যকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় তখন? শ্রাবন তখন সুমনকে আটকাবে কী করে?

“সুমো… ”

“কী শ্রাবনদা… ”

“আমার কী হবে বলতো… সুমো? ”

“কেন, কী হবে শ্রাবনদা?”

“কী যে হবে সে তো আমি এখনি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি… তুই শ্বশুর বাড়ি যাবার আগে আমার কোথায় কোন জিনিস রাখা আছে ভালেয় ভালোয় দেখিয়ে দিয়ে যাস .. তা না হলে তো আমি অন্ধ কিছুই খুঁজে পাবনা।”

“যাও… ভালো হবে না বলছি,” সুমন ঈষৎ কপাল কুঁচকালো। শ্রাবনদা এসব নিয়ে দুষ্টামি করলে ও যাবে কোথায়?

“যাও কী… আমি তো দেখলাম কাল সমীরমামা আর আদিত্যবাবু বেশ জোর বৈঠক করছেন তোর বিয়ে নিয়ে।”

সুমন এবার কাতর সুরে জানালো, “মামার কাছে কারা কারা যেন ছবি দিয়েছে তাই নিয়ে কাল কথা হচ্ছিলো আদিত্যবাবুর সাথে কিন্তু মামা ওদের সবাইকে না করে দিবে বলে দিয়েছে। আদিত্যবাবুও বলেছে আমার ইন্টার পরীক্ষার আগে কোন বিয়ে শাদী হবে না।”

“আাদিত্যবাবু বলেছে! সমীরমামা, দাদু সবাই রাজি হলো? ”

“হমম,” সুমন মুখ অন্ধকার করে সায় জানালো, শ্রাবণের কথার মধ্যে ঈর্ষার রেশটুকু ও ধরতে পারলনা। সত্যি বলতে বিয়ের কথা বলতে সুমনের একটুও ভালো লাগছে না.. ওর যদি যা খুশি করার স্বাধীনতা থাকতো তাহলে ও সব ছেড়ে ছুড়ে দূরে কোথাও চলে যেত।

কিন্তু সুমনের উত্তর শুনে শ্রাবনের ঠোঁটের কোনে সূঁচালো একটা হাসির রেখা দেখা দিয়েই আবার মিলিয়ে গেল.. চোখদুটিতে স্বস্তির দেখা মিললো।

শ্রাবন মহারাজ এরপর ধীরে ধীরে প্রশান্তির সাথে বলে ফেললো ,”তা হলে তো বেশ ভালই হলো… দু’পক্ষই অনেকটা সময় পেল.. তাই না? ”

চলবে…….
তোমার পরিনীতা – ২৪

( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পরিনীতার ছায়া অবলম্বনে)

লেখিকা- ফায়জা করিম

( ১৮+ কনটেন্ট বিদ্যমান, কোন অবস্থায় গল্প কপি না করার অনুরোধ রইলো)

সুমনদি…..

কিরে প্রীতি?

কোথায় যাও?

হু, কলেজে… কেনো?

আমার না একটা জিনিস দরকার ছিলো.. তুমি কলেজ থেকে আসার সময় মোড়ের দোকান থেকে কিনে এনে দিবে প্লিজ?

“কি জিনিস? ” সুমন চুলে সিঁথি কাটতে কাটতে জানতে চাইলো।

“ছোট একটা শোপিস,ওই যে গোল কাচের বলের ভিতরে দুটো পুতুল নাচছে , ওগুলো। আসলে দি আমি না যেতাম কিন্তু ওই বিল্টুর বাচ্চাটা বড্ডো যন্ত্রনা দিচ্ছে আজকাল, দেখলেই বিকট অঙ্গ ভঙ্গিতে গান ধরে, আমার কানে ব্যাথা করে,” খিলখিল করে হেসে ফেললো প্রীতি।

প্রীতির কথা শুনে সুমন, প্রীতিকে একটু সময় নিয়ে দেখলো… প্রীতি ওর বয়সের মেয়েদের তুলনায় বেশ আলাদা। অন্য দশজনের মতো একেবারেই নয়। এই যে ছেলেরা ওকে এতো এতো চিঠি দেয় তার সব সুমনকে দেখায় প্রীতি। সুমন একদিন প্রীতিকে জিজ্ঞেস করেছিলো এদের কাউকে ভালো লাগে কিনা ওর, প্রীতি মুখ গম্ভীর করে বলেছিলো.. সুমনদি আমি দাদা ভাইয়ের মতো বিদেশে পড়তে যাবো। তারপর পড়া শেষ করে যখন ভালো চাকরি করবো তখন পছন্দ করে বিয়ে করবো,তার আগে কিছুতেই ওসব বাজে জিনিস নিয়ে ভাববো না। তা না হলে সবসময় মায়ের মতো কটা টাকার জন্য বাবার সাথে ঝগড়া করতে থাকতে হবে, সে আমি কিছুতেই পারবো না। এই বয়সেই প্রীতি কত বুঝদার হয়ে গিয়েছে।

“বলোনা সুমনদি আনবে? ”

“আচ্ছা সময় পেলে আনবো,” সুমন, প্রীতির হাত সরিয়ে গায়ে উড়না চড়ালো।

“না, না সময় পেলে আনলে হবেনা, অবশ্যই আনতে হবে। ওই ওয়ান টু নাইনটি নাইন ওই দোকান থেকে,” প্রীতি নাছোড়বান্দার মতো বায়না ধরতে লাগলো।

“আচ্ছা আনবো কিন্তু ওর দাম কতো? আমার কাছে বেশি টাকা নেই কিন্তু,” সুমন দুঃখিত স্বরে বললো। ওর কাছে এই মুহুর্তে এতো টাকা নেই ওই শোপিস কেনার মতো।

“সুমনদি… ” প্রীতি মিটমিট করে হাসছে।

“আবার কী? ”

“বলছি টাকার চিন্তা এ যাত্রায় তোমাকে করতে হবে না, ওটা কেনার একটা ব্যবস্থা হয়েছে।”

“মানে! ”

“আমি না শ্রাবনদার কাছে আমার আইসক্রিম আর চকলেটের বদলে কয়েকটা টাকা চেয়েছিলাম আর অমনি শ্রাবনদা মানিব্যাগ বের করে দু দুটো একশো টাকার নোট আমার হাতে ধরিয়ে দিলো, বললো নে এটা তোর মেয়ের বিয়ের গিফট আর চকলেট আর আইসক্রিম আলাদা পাবি। সুমনদি শ্রাবনদা আসলে কত্তো ভালো না? ”

সুমন, প্রীতিকে বকতে যেয়েও থেমে গেল। না.. প্রীতিকে কিছু বলা ওর মানায় না। সুমন নিজে এর আগে কত কাজে অকাজে শ্রাবনদার টাকা নিয়ে খরচ করেছে…. নেহায়েত শ্রাবনদা ওকে অনেক স্নেহ করে বলেই কিছু বলেনি, সে তুলনায় প্রীতি তো শ্রাবনদাদের সত্যিকারের প্রতিবেশী… ওর মতো কারো ঘাড় চেপে ধরে বসে থাকা সিন্দাবাদের বুড়ো তো নয়। প্রীতি, শ্রাবনদার কাছে চাইতেই পারে।

“আচ্ছা তবে টাকাগুলো দে… আমি আসার সময় নিয়ে আসবো, ” সুমন, প্রীতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

“হুড়রে.. আমি এক্ষুনি আনছি ”

প্রীতি দৌড়ে টাকা আনতে ছুটলো।

…………

সুমন যখন কলেজের হোস্টেল গেটের সামনে রিকশার জন্য দাড়িয়ে তখন হঠাত করেই সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে আদিত্যর দেখা মিললো।

“কি ব্যাপার সুমন এসময় এখানে? ”

“হোষ্টেলে এক বান্ধবীর কাছে কাজে এসেছিলাম,” সুমনের জানতে ইচ্ছে হলো আদিত্য এসময়ে এখানে কেন কিন্তু ইচ্ছে করেই প্রশ্ন করা থেকে চেপে গেল। প্রশ্নটাতে বাড়তি কৌতূহল প্রকাশ পায় আর এটা ওর একেবারে বাজে লাগে।

“কাজ শেষ? এখন কি বাড়ি ফিরবে? ”

” আপাতত ওখানেই যেতে হবে ইচ্ছে না থাকলেও…. দেখছেন না কি ভীষন মেঘ করেছে। ”

সুমনের চটুল হাসি দেখে আদিত্য উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। আজকাল মেয়েটাকে হাসিখুশি দেখলে কেমন যেন করে উঠে বুকের মধ্যে.. এর নাম কি আদিত্য জানেনা… তবে ও চায় মেয়েটা সব সময় হাসিখুশি থাকুক। কোন দুঃখ কষ্ট সুমনকে যেন কখনো আর না ছোঁয়.. এর নাম ভালোবাসা হলে
তাই সই… অস্বীকার করে লাভ নেই আদিত্য ভালোবেসে ফেলেছে সুমনকে।

“সুমন কিছু মনে না করলে আমার সাথে এক জায়গায় যাবে.. এই ধরো আধাঘন্টা। ”

“আধাঘন্টা? এতে হবে আদিত্যবাবু? ”

“হবে আর একটা অনুরোধ। না, না একটা আবদার করবো আজ তোমার কাছে রাখবে… খারাপ কিছু মনে করবে নাতো? ”

“ছি.. ছি… কি বলছেন আদিত্যবাবু.. আপনি আমার আর আমার পরিবারের জন্য যা করেছেন, তাতে আপনার জন্য আমি যাই করিনা কেনো তাই খুব ক্ষুদ্র বলে মনে হবে। আপনি বিনা দ্বিধায় আমাকে আদেশ করুন… আমি রাখবো।”

“না, না সুমন, নিজেকে কখনো এতো ছোট ভাববে না। আমি নিশ্চই তোমার মাধ্যমে তোমার মামার এই পরিবারটির সাথে পরিচিত হয়েছি কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার মামা মানুষটি বড্ডো ভালোমানুষ আর তোমার দাদুর কথা আর কি বলবো। আমি যে উনাদের জন্য আমার তরফ থেকে এই দায়িত্বটুকু পালন করতে পেরেছি তাতেই আমার নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছো… এখানে তোমার নিজেকে হেয় করার বা ছোট ভাবার কোন কারন নেই।”

সুমন ঠিক কী বলবে খুঁজে পেলনা। আদিত্য লোকটা এতো ভীষন রকম ভালো কেনো? সুমনের ভিতর থেকে এতো এতো কথা ঠেলে বের হয়ে আসতে চাইলো। কোনমতে সেই সব অনুভূতি গুলোকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো সুমন।

আদিত্য বোধহয় ব্যাপারটা ধরতে পারলো।

“আচ্ছা এই সব কাঁদুনি এখন না গাইলাম আমরা… বরং যেখানে যেতে চাচ্ছি সেখানে যাই, নাকি? ”

“আচ্ছা চলুন”

কিন্তু বাঁধ সাধলো বৃষ্টি, আকাশ কালো করে ছিটছিট করে পড়তে শুরু করে দিয়েছে ততক্ষনে সারা শহর জুড়ে, সুমন আর আদিত্যও তার হাত থেকে কোনভাবেই রক্ষা পেলনা, ভিজতে লাগলো একটু একটু করে।

“এই যাহ সুমন, রিকশা ডাকতে হবে নাহলে ভিজে যাব,” আদিত্য বলেই একটা রিকশা ডেকে বসলো।

সুমন একবার বলতে চাচ্ছিল যে একটা ট্যাক্সি ডাকলে হতো না? কিন্তু ততক্ষণে রিকশাটা সামনে এসে দাড়িয়েছে। বাধ্য হয়েই অবশেষে গুটিশুটি হয়ে রিকশার একপাশে চেপে বসলো সুমন। আদিত্যও যথাসম্ভব রিকশার আর একপাশে চেপে বসলো কিন্তু একেতো ছোট জায়গা তার উপর আবার প্লাস্টিকের পর্দা.. ভিতরের বাতাসের উত্তাপটা বাড়তে লাগলো ধীরে ধীরে, সুমনের অস্বস্তি অসহনীয় হয়ে উঠলো।

ওরা যখন বাড়ির কাছের এক রেস্টুরেন্টে এসে ঢুকলো তখন বৃষ্টির বেগ ভারী থেকে আরও ভারী হয়ে গেছে। সুমনের পিঠের কাছটা ভিজে সপসপ করছে… উড়নার দুপ্রান্ত হাত দিয়ে কোনমতে নিংড়ে নিলো সুমন কিন্তু তারপরও টপটপ করে পানি পড়ছে। আদিত্য ওকে খাওয়াতে নিয়ে এসেছে এখানে, এটা নাকি সুমনের পাওনা এতো ভালো কিছু মানুষের সাথে আদিত্যর পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য.. সুমন আনন্দে আপ্লুত না হোক ভদ্রতা করে হলেও রেস্টুরেন্টে ঢুকতে বাধ্য হলো।

“ইশশ… ভুল হলো, একটা ট্যাক্সি নিলে বোধহয় ভালো করতাম.. সরি সুমন।”

“না, না ঠিক আছে। আমার ট্যাক্সিতে উঠার তেমন অভ্যাস নেই আর রিকশাই ভালো, ট্যাক্সির ভিতরে কেমন যেন আটকানো আটকানো লাগে।”

আদিত্য হেসে ফেললো। সুমন কথা ঘোড়ানোতে এক্সপার্ট, তবে এটা ঠিক একলা মেয়ে হয়ে অন্য মানুষ বিশেষ করে পুরুষ মানুষের সাথে উঠা খুবই বিপদজনক হতে পারে, সবাই তো আর আদিত্য নারায়ন হবে না।

এই রেস্টুরেন্টের ফালুদাটা খুবই জনপ্রিয়, আদিত্য অর্ডার দেবার সময় ইচ্ছে করেই অন্যন্য খাবারের সাথে বাড়তি একটা ফালুদা অর্ডার দিলো।

“ফালুদা একটা কেন? ”

“আমি খাইনা… ওটা তোমার জন্য। চারু বলছিলো তোমার নাকি ডিলাক্সের ফালুদা খুব পছন্দ?”

সুমন এবার সত্যি লজ্জায় লাল হলো। আদিত্য কতোকিছু জানে ওর ব্যাপারে… অজান্তেই অস্বস্তি আরো বাড়তে লাগলো ওর।

” সুমন তোমার ফোনটা বোধহয় বাজছে ”

দ্রুত ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোনটা বের করলো সুমন। বাপরে কতগুলো কল….

“হ্যালো…”

“কান কি বাড়ি রেখে গিয়েছিস নাকি যে দশবার কল করলে একবার ধরিস?”

“আমি বাইরে… বৃষ্টি হচ্ছে বলে ফোন ব্যাগে ঢুকিয়েছি ”

” হমম… বাড়ি এসে দয়া করে তোর পা দুটো আমার চৌকাঠকে একটু দেখিয়ে যাস… মহারানীর অপেক্ষায় আজ তাদের প্রায়ই উপোস করে থাকতে হয় কিনা.. ”

“কি মিথ্যে কথা সকালেই না এলাম!”

“তো… আজকাল কি তুই গুনে গুনে আমার ঘরে আসিস নাকি সুমো? আজকাল বড় আস্পর্ধা হয়েছে তোর, আমাকে মিথ্যুক বলা… তোর নামে তোর বড়মার কাছে যদি কেস না ঠুকে দেই আমি আজ তো আমার নাম শ্রাবন চৌধুরী না। ”

বড়মার কাছে! না.. না.. ওই খাবারের বিষয়ে বড়মা যদি ঘুনাক্ষরেও টের পায় তাহলে সুমো চৌধুরী বাড়িতে আর এ জন্মে পা রাখতে পারবেনা.… লজ্জায়।

“আমি বাড়ি ফিরেই আসছি ”

“গুড গার্ল ”

শ্রাবণ আনমনে হাসলো, বাহ্ এতোদিনে মঞ্জু মামী একটা খুব ভালো কাজ করেছে… সুমোকে ব্ল্যাকমেইল করার এর চেয়ে ভালো ব্যাবস্থা আর হয়না।

আদিত্য নিজের চামচের মাথা দিয়ে খানিকটা ফালুদা মুখে তুলে বাকিটা সুমনের দিকে এগিয়ে দিলো।

সুমনের মনে হলো এবার ও সত্যিই বিপদে পড়েছে। আদিত্যর খাওয়া বাটি থেকে সুমন এখন খাবে কি করে… দেখেই তো পেট কেমন গুলিয়ে আসছে ওর। কিন্তু আদিত্যর সামনে না করা মানে তাকে অপমান করা.. কি করবে ভেবে না পেয়ে অসহায় ভাবে নিজের পেট চেপে ধরলো সুমন দু’হাতে।

“কি হলো সুমন খাচ্ছো না কেন? ”

“আমার কেমন যেন পেট মোড়াচ্ছে আদিত্যবাবু.. ঠিক কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছি না।”

“তাই নাকি… তাহলে বরং এগুলো ওয়েটারকে নিয়ে যেতে বলি।”

“না.. না.. এতো খাবার নষ্ট করে লাভ নেই, আপনি বরং ওদেরকে বলুন যে খাবারগুলো একটু ভালো করে প্যাকেট করে দিক, বাসার পিচ্চি পার্টিগুলো এগুলোর খুব ভক্ত।”

আদিত্য, সুমনকে যতো দেখছে ততই আরও বেশি করে ভালো লাগার চাদরে আটকা পড়ে যাচ্ছে। এ মেয়ের মধ্যে কি যাদু আছে কে জানে, চুম্বকের মতো ওকে শুধু টানছে আর টানছে। মেয়েটা এতো অবহেলা পায় ওবাড়িতে তারপরও মামাতো ভাই-বোন গুলোর জন্য খুব টান।

“একটা আবদার করার কথা ছিলো কিন্তু সুমন, ”
ফালুদাটা অবশেষে আদিত্যকেই খেতে হলো।

“আপনি বলুন.. আমিতো বললাম আপনার আবদার আমার কাছে আদেশ। ”

“তাহলে আজকের পর থেকে তোমার মুখে আর যেন কখনো আদিত্যবাবু ডাকটা না শুনি, শুধু আদিত্য মনে থাকবে? ”

সুমন ঢোক গিললো.. আজ কি আদিত্যবাবু কোন নেশা ভাং এসব গিলেছে.. হঠাত হঠাত টাইফুন হয়ে উঠার বদঅভ্যেসটা এতোদিন একচেটিয়া ভাবে শ্রাবনদার ছিলো কিন্তু সে দলে আদিত্যবাবুও নাম লেখালো কি সুখে…. হুশ করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো সুমন।

“সুমন কিছু বলো প্লিজ.. টেনশন হচ্ছে খুব… বুঝতে পারছিনা আমার অনুরোধটা গ্রহনযোগ্য হলো না বাতিল হলো? ”

“গ্রহনযোগ্য হলো আদিত্য…” ঠোঁট গলে আচমকাই কথাগুলো বের হয়ে এলো সুমনের। কথাটা ঠিক হলো না বেঠিক বুঝতে পারলো না সুমন কিন্তু যতোটুকু জেনেছে তাতে… আদিত্য মানুষ হিসেবে সত্যিই খুব ভালো… ভবিষ্যতে ওকে সুখী রাখতে চেষ্টার কোন ত্রুটিও হয়তো করবে না…. আসলে মেয়ে মানুষ তো পুরুষের চোখের ভাষা একটু আধটু পড়তে শিখেই গেছে এখন… বাড়ি থেকে ওকে যে আদিত্যর সাথেই জুড়ে দেবার ইচ্ছা সকলের…. টুকটাক কানে এসেছে সুমনের।

“ধন্যবাদ সুমন… অসংখ্য ধন্যবাদ,” আদিত্য প্রানখুলে হাসলো।

সুমনও হাসার চেষ্টা করলো। কাল রাতে দাদুর ঘরে জল দিতে গিয়ে দরজার আড়াল থেকে ও সব শুনেছে। দাদু, মামাকে বলছিল, “আমাদের সুমনের মন এখনও বর্ষার জমা জলের মতোই টলটলে পরিস্কার,ওতে যার মুখ দেখবে তার ছায়াই স্পষ্ট হয়ে ফুটবে।”

সুমন নিশ্চুপ হয়ে শুনছিলো, সত্যিই কি ওর মন এতো পবিত্র,এতো পরিস্কার! তাহলে ওতে কেবল আদিত্যর ছায়া এতো অস্পষ্ট কেন ?

তবে সুমন বুঝে গেছে না চাইতেও যে অপরাধ ও করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত ওকেই করতে হবে, তাই শ্রাবনদার কাছ থেকে একটু একটু করে সরে আসবে ও। হঠাত করে সরতে চাইলে শ্রাবনদা ধরে ফেলবে, ধীরে ধীরে হলে সেটা এক সময় সবাই স্বাভাবিক বলেই ধরে নিবে, শ্রাবনদাও।

সামনে নিজের জীবনটা কেমন হতে যাচ্ছে জানা নেই সুমনের তবে পরিবারের সকলের কথা ভেবে আদিত্যর সাথেই হয়তো সংসার করে যেতে হবে ওকে… আত্মহত্যার পথটাও খোলা নেই ওর জন্য, প্রীতিটার সহজে বিয়ে হবে না, তাই এই বিষাক্ত গরল হাসি মুখে সইতে হবে ওকে আজীবন।

চলবে……

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here