তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -৬৪+৬৫

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৬৪

নিঝুম কোনমতে একটা শাড়ি পেঁচিয়ে এসে দাঁড়াল আয়নার সামনে। সাদা রঙের শাড়ির মাঝে বিভিন্ন রঙের সমাহার। শাড়িটা বেশ, সুন্দর করে পড়তে পারলে বোধহয় আরো সুন্দর লাগতো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় এসে বসল। মা ঠিকই বলতো, “শাড়ি পড়াটা শিখে নে নিঝুম। একদিন দেখবি দরকার পড়বে।” আজও তাই পড়ছে। আফসোস হচ্ছে শাড়ি‌ পড়াটা তখন কেন শিখল না। অবশ্য‌ হিনা বেশ সুন্দর করে শাড়ি পড়াতে পারে। মেয়েটা সত্যিই গুণবতী! সাজাতে পারে সুন্দর করে, মেহেদী পড়িয়ে দিতে পারে, শাড়িও পড়িয়ে দিতে পারে আর এদিকে তার কোন গুণ’ই নেই। আশ্চর্য! দুই বোন দুই রকম কেন হলো!
নিঝুম মুখ ফিরিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। এই রুমটা হচ্ছে তানিশার। সন্ধ্যা ৬ টা বাজে! তানিশা বলেছিল সুন্দর করে শাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে নিতে। সে কিছু্ই পারে নি। তানিশার ঘরটাই না হয় একটু ঘুরে দেখা যাক। রুমটা বেশ বড়! ঘরের দেওয়ালে সাদা আর নীল রঙের সমাহার। দেওয়ালের এক জায়গা জুড়ে ছবি ফ্রেমের বাহার। বিশেষ বিশেষ দিনে তোলা ছবি! কিছু পুরোনো ছবি, যেখানে তানিশা,‌দিয়া, রিয়া, আফিন, আহিম, আহনাফ আর অশান্ত কে দেখা যাচ্ছে। ছবি গুলোতে তারা খুব ছোট! চেনা যেত না যদি না ছবির নিচে নাম লেখা থাকতো। কিন্তু অশান্ত’র‌ ছোট বেলার ছবি চিনে সে।
ঘরের ওপাশে বিশাল এক বারান্দা। বারান্দায় বোধহয় গোলাপ ফুলের চারা আছে।‌ গোলাপের‌ মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। দরজা খোলার শব্দ এলো, কেউ বোধহয় আসছে। নিঝুম একটু জড়োসড়ো হয়েই বসল। তানিশা ঘরে এলো একগ্লাস শরবত নিয়ে। বিস্ময় স্বরে বলে উঠল, “তুমি এখনো তৈরি হও নি, ৭ন টায় তোমাকে নিয়ে যাবার কথা!”

“আমি শাড়ি পড়তে জানি না তানিশা।

“এখন বলছো এসব কথা? আগে বলবে তো! দেখি , সাজোও তো নি। কি করলে এতোক্ষণ বসে বসে?

“তোমার ঘর দেখছিলাম , খুব সুন্দর এই ঘরটা।

“রসিকতা করো না নিঝুম, শান্ত তোমার জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে। আমায় নিয়ে যেতে হবে।

“শাড়ি পড়েই কি যেতে হবে!

তানিশা শাড়িটা হাতে নিয়ে বলল, “নারীদের শাড়িতে’ই সুন্দর লাগে।

“তুমি কখনো শাড়ি পড়েছো তানিশা?

“না!

বলেও তানিশা খুব সুন্দর করে শাড়িটা পড়িয়ে দিল নিঝুম কে। নিচু হয়ে শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করতে লাগল। নিঝুম বলে উঠল, “তুমি তো দেখছি দারুণ শাড়ি পড়াতে পারো, তাহলে শাড়ি পড়ো না কেন?

তানিশার নিঝুমের কথায় পাত্তা দিল না। নিঝুম বলল, “তুমি আমায় মিথ্যে বললে!”

তানিশা এবারো জবাব দিল না। শাড়ির আঁচল ঠিক করতে লাগল। নিঝুম এবার বলে উঠল, “আমার উপর তোমার কি রাগ চলে গেছে। এখন আমায় ভালো লাগে তোমার।

“তোমাকে আমার কখনো ভালো লাগবে না।

“কেন? আগে তো ভালো লাগতো না…

“আহনাফের চারদিকে ঘুরতে বলে।

“তা তো এখনো ঘুরি!
বলেই একগাল হেসে ফেলল। তানিশা বলে উঠল, “আহনাফের চারপাশে আমার কাউকেই সহ্য হয় না। তিশাকেও হতো না। নিজেকে খুব অভাগী মনে হতো ওর সামনে।

“আচ্ছা বাদ দাও এসব চাপ্টার। তুমি আমার কথা বলো, ভালোই যখন লাগে না শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছ কেন?

“শান্ত’র জন্য! শুধু মাত্র ওর জন্য তোমায় সহ্য করছি!

নিঝুম মিটিমিটি হেসে বলল, “তোমায় কিন্তু আমার বেশ লাগে। খুব মিষ্টি তুমি!

তানিশার মুখ থমথমে! নিঝুমের কথায় কোন প্রতিক্রিয়া নেই তার। আয়নার সামনে দাড় করালো নিঝুম কে। খোলা চুল আর সাদা শাড়িতে দারুণ লাগছে নিঝুম কে। তানিশার ইচ্ছে করল কানের লতিতে একটু কাজল দিয়ে দিতে, নয়তো নজর লেগে যাবে। নিঝুম লাফিয়ে উঠে বলল, “এই তো আমি রেডি, চলে যাচ্ছি!

“চলে যাচ্ছ মানে, সাজবে না।

“সাজার কি আছে? এভাবেও তো খারাপ লাগছে না আমায়। ভালোই লাগছে।

“তাই বলে, একটু কাজল তো দিতেই পারো চোখেতে!

নিঝুম বলতে নিল, “যে চোখ চশমা দিয়ে ঢেকে থাকবে সেই চোখে কাজল দিয়ে লাভ কি? কিন্তু বলল না। চোখে কাজল দিল। কপালে একটা টিপও দিল। তানিশা কানের দুল বের করে দিল। কিন্তু নিঝুম আর কিছুই ছুঁয়ে দেখলো না। সে তড়িখড়ি করে নিচে নেমে গেল। তানিশা হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেদিকে!

এদিক ওদিক তাকাচ্ছে নিঝুম! অশান্ত’র ঘরের নকশায় যেন বদলে গেছে। দেওয়ালে লাইটিং করা, সারা ঘরের মেঝেতে বেলুন। এতো সাজানো গোছানো দেখে ঠিক যতটা অবাক হলো ঠিক ততটাই খুশি হলো সে। অশান্ত ঘরে নেই, বাইরে গেল একটু। নিঝুম অশান্ত’র বেডরুমে। শান্ত’র বিছানা কেমন ফুল দিয়ে সাজানো , এসব কি? দরজা খুলে শান্ত বলল, “আসবো আমি?

“অশান্ত!

শান্ত হেসে ঘরে ঢুকল। বলে উঠল, “আমিও একটু আগেই বাসাতে এলাম।

“কেন, কোথায় ছিলেন?

“ওদের আনতে গেছি!

বলেই অমি আর মিনি কে দেখালো। নিঝুম ছুটে গিয়ে কোলে তুলে নিল তাদের। আশপাশের সাজানো দেখে শান্তও খানিকটা অবাক হলো। বিছানার মাঝে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিয়ে কি বোঝাতে চাইছে ওরা। নিঝুম মিনি কে নিয়ে ব্যস্ত! শান্ত এই ফাঁকে ফুল গুলো সব ঝেড়ে ফেলে দিলো। কি জানি, দেখে কি’ই বা ভাববে ও।

নিঝুম হেসে বলল, “অশান্ত, দেখুন মিনি কতো বড় হয়ে গেছে।

“তা তো হবেই!

“খুব অলসও! এই একটু পর পর ঘুমিয়ে পড়ছে।

“তুমি যেমন ঠিক তেমন!

“ভুল বলছেন অশান্ত! আমি মোটেও সারাক্ষন ঘুমে ঝিমুতে থাকি না।

“আচ্ছা ছাড়ো, একা কি মিনি কেই আদর করবে। বেচারা অমি কি দোষ করেছে!

নিঝুম অমির দিকে ফিরল। সাথে সাথে মিয়াও বলে উঠল সে। নিঝুম মুখ ভেংচি কেটে মিনি কে কোলে তুলে বিছানায় এসে বসল। শান্ত হেসে অমি কে কোলে তুলে নিল। নিঝুম জিজ্ঞেস করল, “এতোদিন ওরা কোথায় ছিলো?

“আহনাফের বাড়িতে!

“আহনাফ রাখতে রাজি হলো!

“অবশ্যই!

শান্ত হেসে নিঝুমের পাশে বসল। দুজনের ‌কোলের মাঝে অমি আর মিনি। দুজনেই ঘুমে বিভোর। নিঝুম খুব আলতো করে মিনির শরীরে হাত বুলাচ্ছে। শান্ত অদ্ভুত চাহনিতে দেখছে নিঝুম কে। নিঝুম ফিসফিসিয়ে বলে উঠল, “অশান্ত!

“কি?

“ওরা তো ঘুমিয়ে গেল।

“এখন কি করবো!

“রেখে আসি ওদের!

দুজনে সাবধানে কোলে করে নিয়ে তাদের বিছানায় রেখে দিল। চাদর টেনে নিল সাবধানে। নিঝুম এখনো নিচু হয়ে বসে দেখছে তাদের। শান্ত হেসে আশপাশ তাকিয়ে বলল, “ওরা তো খুব সুন্দর সাজিয়েছে।

নিঝুম উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “তার মানে আপনি সাজান নি!

শান্ত হাসল। রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে বলল, “আইসক্রিম খাবে!

নিঝুম দৌড়ে সেদিকেই গেল। অতঃপর শাড়ির কুচিতে হোঁচট খেয়ে পড়তে নিল। শান্ত তৎক্ষণাৎ তাকে ধরে বলল, “সাবধানে!

নিঝুম হাঁপিয়ে উঠে বলল, “আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে অশান্ত!

“কেন?

নিঝুম সোজা হয়ে দাঁড়ালো। একটু দূরে সরে গিয়ে বলল, “অশান্ত দেখুন!

“কি?

“আমি শাড়ি পড়েছি!

“ওহ! সুন্দর লাগছে তো!

“কতোখানি সুন্দর লাগছে!

শান্ত হাসল। মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল নিঝুম কে। সত্যিই অসাধারণ লাগছে তাকে। কানে একটা ফুল গোঁজা থাকলে আরো দারুণ লাগতো। হাতের কাছে ফুল খুঁজে পাচ্ছে না সে। তবুও এগিয়ে এসে নিঝুমের কপালে আলতো চুমু খেয়ে বলল, “এতোটা সুন্দর লাগছে!

নিঝুম হেসে ফেলল। লজ্জা মাখা হাসি। অতঃপর বলে উঠল, “তাহলে আমি শাড়িটা খুলে ফেলি!

শান্ত লাফিয়ে পেছনে ফিরে বলল, “কি??

“আরে, মানে চেঞ্জ করে ফেলি।

“আরেকটু হলেই আমার হার্ট অ্যাটাক হতো। ঠিক ভাবে বলতে পারো নি।

“আমি ঠিকই বলেছি, আপনি বুঝেছেন ভুল!

“হয়েছে, যাও যাও চেঞ্জ করে আসো।

“আচ্ছা!

বলেই নিঝুম আবারো ছুটল। শান্ত চেঁচিয়ে বলল, “সাবধানে, আবারো পড়বে হোঁচট খেয়ে!

শান্ত ফিরে কল করতে লাগল। একে একে সবাইকে কল করে বলছে এইখানেই আসতে। ডিনার একসাথে করবে। খাবারও অর্ডার করে দিল। কি জানি? ওরা কিসব ভেবে যাচ্ছে। অসম্ভব! তার মনে এসব কিছুই আসে নি। ভাবতেও পারে না সে। তাই সবাইকে এখানে থাকাটা জরুরি! বিশেষ করে সবাই যখন জানে ওরা দুজনে একা, ঠিক তখন!

নিঝুম দেওয়ালের ওপাশ থেকে উঁকি মেরে বলল, “অশান্ত!

“হুহ!

“চোখ বন্ধ করুন!

“কেন?

“আমি আসবো, তাই!

শান্ত চোখ বুজল। নিঝুম বলার পর চোখ মেলেও তাকাল। নিঝুম দুই হাত পেছনে রেখে দুলছে। তার পড়নে একটা হুডি আর ট্রাউজার। নিঝুমের মুখে হাসি। এই হাসির কারণ শান্ত আর তার দু’জনের পোশাক দেখতে এক রকম। নিঝুম লাফিয়ে বলল, “এই ড্রেসটা আপনি কবে কিনলেন অশান্ত?

“অনেক আগে! দেওয়া হয়নি।

“এটা আমার জন্য’ই তো! দেখুন একদম মেচিং মেচিং!

শান্ত কিছুটা ভনিতা করে বলল, “হ্যাঁ ওই আর কি।

নিঝুম কাছে এগিয়ে এসে বলল, “ওই আর কি মানে, এভাবে বলছেন কেন?

“নাহ মানে তোমার জন্য’ই!

“সুন্দর করে বলুন!

শান্ত নিঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “হ্যাঁ আমার মিস চশমিশের জন্য! ঠিক আছে তো এইবার!

নিঝুম হেসে উঠল। শান্ত কি মনে করে তার হাত ধরে বলল, “এই চলো তো!

“কোথায়?

শান্ত নিঝুম কে ধরে বেডরুমে নিয়ে এলো। তার লাগেজ বের করে কি জানি একটা বক্স বের করল। আয়নার সামনে নিঝুম কে দাঁড় করিয়ে একটা লকেট বের করে নিঝুমের গলায় পড়িয়ে দিল। নিঝুম খেয়াল করে দেখল লকেটের মাঝে একটি আংটি ঝুলছে!

“বাহ খুব সুন্দর তো!

“পছন্দ হয়েছে!

“হুম অনেক। ওহ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম। নানাজান এখন কেমন আছে?

“এখন বেশ ভালো। একদম ফিটফাট বলতে পারো। তুমি জানো না চশমিশ, আমার নানা জান কতো বড় অভিনেতা!

নিঝুম হেসে সামনে তাকাল। আয়নাতে দুজনের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। নিঝুম বলে উঠল, “শান্ত নড়বেন না!

“কেন?

“ছবি তুলবো, দেখুন আয়নাতে কি দারুণ দেখতে লাগছে আমাদের!
বলেই সে ফট করে ফোনটা নিয়ে হাজির হলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অতি ভঙ্গি করে কয়েকটা ছবি তুলে নিল। সেসব ছবি দেখে আমার নিজেই হাসতে লাগল। শান্ত’র দিকে ফিরে দাঁড়াল। মুখোমুখি দুজন। হাত বাড়িয়ে শান্ত’র ঘাড়ে হাত রাখল সে। শান্ত হাত বাড়িয়ে কোমরে হাত দুটো রাখল তার। দুজনেই চোখে দুজন দুজনকে দেখছে। হাসছে মিটিমিটি! নিঝুম বলে উঠল, “আমি আপনাকে অনেক মিস করেছি অশান্ত!

“কতোখানি?

“অনেকখানি!

“ঠিক কতোখানি?

নিঝুম হাসল। কাছে এসে শান্ত’র কলার ধরে মাথাটা নিচু করল। তার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল, “এতোখানি!
শান্ত হেসে জড়িয়ে ধরল তাকে। খানিকক্ষণ ধরে রাখল দুজন দুজনকে। হঠাৎ নিঝুম লাফিয়ে উঠে বলল, “অশান্ত একটা কথা?

“কি?

“আমি কিন্তু এখানে সারারাত থাকবো না।

“তুমি পাগল হলে নাকি? আমি সারারাত রাখবো তোমায় এখানে। ১০ টা বাজলেই দিয়ে আসবো।

“গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ১০ টা বাজেই কি শেষ হয়ে যায়।

শান্ত হেসে বলল, “পারোও তুমি।

নিঝুম ঘড়ির দিকে তাকাল , ৮ টার কাছাকাছি বাজে! শান্ত’র মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এতোক্ষণ আমরা কি করবো।

“চলো নাচি!

“ঠিক বলেছেন!

বলেই নিঝুম আবারো ছুটল। শান্ত হতভম্ব হয়ে বলল, “আরে ওটা তো আমি এভাবেই বলেছিলাম!

কিন্তু কে শুনে কার কথা। নিঝুম গান বাজালো! শান্ত’র সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “আমার প্রিয় গান শান্ত!

বলেই হাতে হাত রাখল! গান বাজছে,

“ছুঁয়ে দে আঙুল, ফুটে যাবে ফুল
ভিজে যাবে গা।
কথা দেওয়া থাক,
গেলে যাবি চোখের বাইরে না”……..

নাচছে দু’জন, ভালোও লাগছে তাদের। একে বিভোর হচ্ছে অন্যের মাঝে! দেখছে দু’চোখ ভরে! কিন্তু এভাবে একবার একগানে নাচতে ভালো লাগে সবার। দেখতে দেখতে ৫ বার নেচেছে দু’জন। শান্ত হাঁপিয়ে উঠেছে। কিন্তু নিঝুমের মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে আরোও ১০ বার এই গানের নাচতে পারবে। শান্ত বলে উঠল, “চশমিশ আমি আর পারবো না, আমার পা ব্যাথা করছে।

“অশান্ত!

“সত্যি চশমিশ!

“আচ্ছা এটাই শেষবার!

শান্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। গান শেষ হতে হতেই সে ধপাস করে নিচে বসে পড়ল। নিঝুম গান বন্ধ করে বলল, “খুব হাঁপিয়ে গেছেন, পানি নিয়ে আসি।

“না লাগবে না।

বেলকনি থেকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে আসছে। শান্ত বলে উঠল, “কফি বানিয়ে আনতে পারবে?

“এক্ষুনি আনছি!

বলেই নিঝুম ছুটে গেল। এই মেয়েটা ছোটাছুটি ছাড়া কিছুই বুঝে না। শান্ত হেটে এসে দাঁড়াল বেলনকিতে। বেতের চেয়ারে বসে পড়ল সে। আকাশের চাঁদ টা আজ বড্ড সুন্দর লাগছে। আজ কোন জোৎস্না নয়, তবুও আকাশের চাঁদ সুন্দর! কিন্তু এই সুন্দর চাঁদ ঢাকবার জন্যে মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। যেকোন সময় মেঘ ঢেকে দেবে ওই সুন্দর চাঁদটা কে।

খানিকক্ষণ বাদে নিঝুম হাজির হলো। শান্ত’র পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ল সে। দুটো কফি মগের একটি শান্ত’র হাতে রেখে দিয়ে বলল, “নিন!

শান্ত কফি মগে চুমুক দিল। নিঝুম নিরাশ করল না তাকে। খেতে বেশ ভালো হয়েছে। ইচ্ছে করছে হাতের উপর হাত রেখে চাঁদ দেখতে‌। নিঝুম সেই আশাটাও পূরণ করল। অশান্ত’র হাতে হাত রেখে বলল, “ইশ্ অশান্ত, চাঁদটা কি সুন্দর বলুন!

“হুম অনেক সুন্দর!

” কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই এই চাঁদ ঢেকে যাবে।

“তো কি! আমার চাঁদ তো আমার পাশে বসা।

কিঞ্চিত হেসে কফির মগে চুমুক দিল নিঝুম। অশান্ত’র হাতটা ধরে আছে শক্ত করে। পেরিয়ে হয়ে গেল খানিকক্ষণ সময়। আকাশের চাঁদ টা এখনো ঢেকে যায় নি মেঘে। সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছে। শীতল হাওয়া ভেসে আসছে। নিঝুম শেষ করা কফি মগটা সামনে রেখে গা ঘেঁষে বসে আছে শান্ত’র। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। নিঃশ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে। দুটো হাত’ই ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল বলে শান্ত তার দুটো হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল। নিঝুম হেসে ফিরল শান্ত’র চোখের দিকে। শান্ত হঠাৎ বলে উঠল, “তুমি কাঁদছো নিঝুম!

“না তো!

“আমার যে মনে হলো অশ্রু দেখলাম।

“কাঁদছিলাম না, আপনি যখন ছিলাম না তখনকার কথা ভেবে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল।

“মন খারাপ কেন করছো? আমি তো আছি তোমার পাশে।

“সারাজীবন থাকবেন বলুন।

“তুমি রেখে দিলেই আমি থেকে যাবো।

বলেই চাঁদ রেখে সেই অপরূপ নয়ন জোড়ার দিকে তাকিয়ে রইল। নিঝুম কিছু একটা বলতে নিল। বলতে পারল না। গরম উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া তার শীতল শরীরে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে লাগল। সে বরং আঁকড়ে ধরল শান্ত’র হুডিটা। ছাড়তে চাইলো না। ভয় লাগছে তার। এই বুঝি ছেড়ে দিলে হারিয়ে ফেলবে। হারিয়ে দিতে চায় না। চুমুর সময় যে কতোক্ষণ ছিল বলা যাচ্ছে না, দীর্ঘ একটা চুমু! দুজন দুজনকে আঁকড়ে ছিল দীর্ঘদিন। যেই অশ্রু জোড়া চোখের ডোরে বাঁধা ছিল তা শীঘ্রই গড়িয়ে পড়ল। টের পেল না কেউ। আরো কিছুক্ষণ বোধহয় এভাবে থাকবার ইচ্ছে ছিল। চাওয়া পাওয়া ছিল কিছু! কিন্তু সময় হয়তো বা তা চাইলো না। শান্ত ছেড়ে দিল নিঝুম কে। তার গরম নিঃশ্বাস পড়ছে শান্ত’র মুখের উপর। চোখজোড়া বন্ধ! শান্ত ক্ষীণ স্বরে বলল, “কেউ এসেছে,‌কলিংবেল বাজছে!

বলেই শান্ত উঠতে নিল। নিঝুম ছাড়লো না তার হুডির অংশ। বাঁধা পড়ল শান্ত! মলিন মুখে শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে রইল নিঝুম। শান্ত গালে হাত রেখে বলল, “আমি চলে আসবো, খাবার অর্ডার করেছিলাম। তাই বোধহয় এসেছে। প্লিজ যেতে দাও!

বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিল নিঝুম। অনিচ্ছায় চলে গেল শান্ত। নিঝুমের মনটা বুঝি একটু খারাপ হলো। অশান্ত তো আরেকটু থাকতে পারতো তার কাছে। উঠে দাঁড়াল সে। কে এসেছে দেখবার জন্য!

দৃষ্টি মিনি আর অমির দিকে। কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে তারা। নিঝুম এগিয়ে এসে অমি’র চাদর টা টেনে দিল। শান্ত বিল মিটিয়ে খাবার ঘরে ঢুকাল। নিঝুম বলে উঠল, “এতো খাবার?

“ওরা সবাই আসছে।

“কখন আসবে?

“এই তো একটু পর! মুভি দেখবে, কিছু কোল্ড ড্রিংক আছে। মুভি দেখতে দেখতে খাওয়া যাবে।

“পপর্কন।

“বানাচ্ছি!

নিঝুম টিভির সামনে এসে বসল। পেছন ফিরে জিজ্ঞাস করল, “কোন মুভি দেখবেন।

“তুমি বলো!

“সুলতান দেখি।

“এটা অনেকবার দেখেছি

“আমিও।

“তাও দেখতে চাইছো।

“মারা’মারি গুলো দারুণ লাগে। এই এটাকে ধরে উঠিয়ে আছা’ড় মারে, দারুণ!

“রাখো তো! দেবদাস দেখবো।

“অশান্ত! এতো কাঁদিয়ে মন ভরে নি আপনার, আরো কাঁদাতে চান!

“আহ্ ছাড়ো না, মুভিটা দারুণ লাগে।

“ঠিক আছে, মেনে নিচ্ছি!

মুভি শুরু হলো। খানিকক্ষণ পর শান্ত পপকর্ন হাতে হাজির হলো। সোফায় বসে আছে দুজন! নিঝুম একটা একটা করে পপকর্ন মুখে দিচ্ছে। মুভির কিছু বারতি অংশ কেটে দাওয়া হলো। স্কিনের সামনে আসল মাধুরী দীক্ষিত! শান্ত হেসে বলল, “মাধুরী দীক্ষিত’কে আগে যতোটা সুন্দর লাগতো এখনো তাই লাগে!

নিঝুম চোখ ঘুরিয়ে বলল, “কি বললেন?

শান্ত হকচকিয়ে গেল। নিঝুম একটু দূরত্ব রেখে ভেঙিয়ে বলল, “মাধুরী দীক্ষিত কে আগে যতোটা সুন্দরী লাগতো এখনো তাই লাগে, বাহ!

“আহ্ তুমি রেগে যাচ্ছ কেন?

“আজব তো রাগবো কেন আমি, রাগবার কি হলো?

বলা সত্ত্বেও নিঝুমের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট! শান্ত একটু সরে নিঝুমের গা ঘেঁষে বলল, “আচ্ছা সরি! আহা বললাম তো সরি, এতো রাগ করবার কি আছে?

“কিছু নেই।

“চশমিশ…

কথা আর শেষ হলো কই। দরজার বাইরে আবারো কেউ এলো। রাগ ভাঙাবার আর সময় কোথায়? একে একে সবাই এলো। নিঝুম হেসে সবাইকে স্বাগত জানালো। আহিম ঢুকেই বলল, “সাজানো পছন্দ হয়েছে নাকি?

নিঝুম হেসে মাথা দুলাল। এদিকে আফিন কে ধরে শান্ত জিজ্ঞেস করছে, বিছানা ফুল দিয়ে সাজানোর আইডিয়া কার?

আহনাফ হেসে বসে পড়ল একদিকে। শান্ত গেছে খাবার গরম করতে‌। রান্না ঘর থেকেই বলে উঠল, “ইফা এলো না যে!

আহনাফ বলে উঠল, “বেচারি পড়তে পড়তে ক্লান্ত!

“এতো কিসের পড়া? পরিক্ষার তো অনেক দেরি। তুই বুঝতে পারছিস কি? ও আমাদের ইগনোর করছে।

“কি জানি?

নিঝুম আর নীলাভ্র মুখ ফিরে তাকালো একে অপরের দিকে। কেন? তারাই বোধহয় ভালো জানে। দিয়া বলে উঠল, “তুমি না শাড়ি পড়ে এলে? এটা পড়লে কখন?

“এটা অশান্ত! এখানে এসে পড়েছি।

তিথি বলে উঠল, “অশান্ত’র!

“হ্যাঁ, অশান্ত আমার জন্য কিনেছে, তাই এখানে এসে চেঞ্জ করেছি।

একসাথে সবাই বলে উঠল, “ওহ আচ্ছা! আহনাফ হাসছে মিটিমিটি ! নিঝুমের মাথায় বোধহয় কিছু্ই ঢুকছে না। রান্না ঘর থেকে শান্ত ছুটে এসে নিঝুমের হাত ধরে ওদিকে নিয়ে বলল, “কি বলছো কি এসব?

“ভুল কি বললাম!

“কিছু না, আর কিছু বলো না।

“আচ্ছা!

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে শুরু হলো গানের আসল। কিছুক্ষণ চলল তাও! এবার বুঝি বিদায়ের পালা। একে একে বের হচ্ছে সকলে। শান্ত এগিয়ে দেবে নিঝুম কে। সে হাত ধরে নিঝুম কে আবারো ঘরে নিয়ে এলো। তার পায়ে নতুন জুতো জোড়া পড়িয়ে বলল, “কেমন লাগছে?

নিঝুম উঠে কতোক্ষণ লাফালাফি করে বলল, “দারুণ!
শান্ত হাসতে হাসতে নিজের জুতো জোড়া পড়ল। অতঃপর রওনা হলো তারা। গাড়িতে বসে ড্রাইভ করছে শান্ত। পাশে বসা নিঝুম! তার হাতে আইসক্রিম’র‌ বাটি। হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দিলো শান্ত। নিঝুম আশপাশ তাকিয়ে বলল, “বাসায় তো আসি নি!

“আরো কিছুক্ষণ থাকি একসাথে!

“১১ টা অলরেডি বাজে।

“হলুদের অনুষ্ঠান ১২ টার আগে শেষ হয় না।

নিঝুম আর শান্ত দুজনেই কিঞ্চিত হাসল। বের হয়ে এলো। শান্ত নিঝুম কে কোলে তুলে গাড়ির উপর বসাল‌। নিজেও উঠে বসল। দুজন পাশাপাশি বসা। শান্ত পকেট থেকে চকলেট বের করে নিঝুমের হাতে নিল। নিঝুম চকলেট হাতে নিয়ে বলল, “এখানে বসে কি করব?

“চাঁদ দেখো! চাঁদ দেখতে বসার দ্বিতীয় রাউন্ড এটা।

নিঝুম আকাশের দিকে তাকাল। আশ্চর্য! মেঘ সরে গেছে। চাঁদ এখন আরো স্পষ্ট! তাঁরাও দেখা যাচ্ছে কয়েকটা। চাঁদও বোধহয় চাচ্ছে এই চাঁদের আলোয় তারা দুজন আরো কিছুক্ষণ থাকুক। নিঝুম হেসে চকলেট মুখে পুড়ল। শান্ত’র ঘাড়ে মাথা রেখে চাঁদ দেখতে লাগল। আশপাশের রাস্তা খালি, দু একটা গাড়ি যাওয়া আসা করছে। তাদের গাড়িটা একপাশে খালি জায়গায়। শান্ত এবার নিজেই নিঝুমের হাতটা বাড়িয়ে ধরল। তাদের পাশেই ল্যাম্পপোস্টের আলোয় একজন দেখছে আরেকজনকে। নিঝুম কিছুক্ষণ পর চাঁদের থেকে মুখ সরিয়ে শান্ত’র দিকে ফিরে দেখল শান্ত’র তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হেসে শান্ত’র মুখে চকলেট দিয়ে দিল সে। শান্ত চকলেট খেতে খেতে বলল, “তুমি চোখে কাজল দিয়েছিলে?

“এতোক্ষণ পর খেয়াল করলেন!

“এখনি দেখলাম।

“ঘরে এতো আলোর মাঝে না দেখে, এই ল্যাম্পপোস্টের আলোতে বসে দেখছেন।

শান্ত হেসে বলল, “কিছু কিছু জিনিস আলো কম আঁধারে ভালো দেখা যায়।

নিঝুম হাসল। চিন চিন নিরবতা কেটে গেল খানিকক্ষণ। নিঝুমের একদম ভয় করছে না। সে শান্ত’র‌ গা ঘেঁষে চুপটি করে বসে আছে। শান্ত হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “নিঝুম!

নিঝুম খানিকটা বিরক্ত মুখে তাকিয়ে বলল, “কি?

শান্ত হেসে তার হাত শক্ত করে ধরল, “তুমি মিস চশমিশ কে আমার মিসেস চশমিশ হবে!

কথাটা বুঝতে খানিকক্ষণ সময় লাগল। বুঝতে পেরেই আতংক উঠল নিঝুম। চট করে গাড়িতে দাঁড়িয়ে বলল, “কি বললেন?

“আহ পড়ে যাবে তো, কি করছো ? বসো!

নিঝুম বসে পড়ল। অতঃপর তরতর করে বলল, “আপনি আমায় ম্যারেজ প্রপোজাল করলেন অশান্ত।

“কেন ভুল কিছু করেছি!

“করেছেন তো। প্রপোজাল কেউ এভাবে করে। আংটি কোথায়? ফুল কোথায়? কিছুই তো দিলেন না।

“তার চেয়েও বড় কিছু দিয়েছি। এই যে আমার হাত তোমার হাতের উপর। এর অর্থ আমি বাকিটা জীবন তোমার এই হাত ধরেই কাটাতে চাই।

“আপনি সত্যি বলছেন তো? দেখুন বিয়ে অনেক বড় কিছু। আপনি চাইলে আপনাকে আমি সময় দিতে পারি। ভেবে চিন্তে বলুন!

শান্ত কিঞ্চিত হেসে বলল, “ভাবা হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পরেছি, তুমি ছাড়া আমার চলবে না। বেঁচে থাকতে হলে তোমাকেই চাই!

“এতোটা ভালোবাসেন বুঝি আমায়।

চট করে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “হুঁ!

নিঝুম খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। শান্ত গাড়ি থেকে নেমে বলল, “আসছি!

বলেই উধাও। আবার ফিরেও এলো। নিঝুম শান্ত’র দিকে খানিকটা ঝুঁকে বলল, “কোথায় গিয়েছিলেন?

“ফুল আনতে! তুমি না চাইলে! অনেকক্ষণ ধরে এটার অভাব ছিল। আমার চশমিশ কে ফুল ছাড়া বড্ড বেমানান লাগে!
বলেই ফুলটা গুঁজে দিল তার কানে। কি জানি? নাম না জানা কি ফুল ছিল। দেখতে চমৎকার! নিঝুম এখনো গাড়ির উপর। দু পা ঝুলিয়ে বসে আছে। শান্ত তার কোমর ধরে বলল, “চলা যাক এবার!

“উঁহু! একটা কাজ যে বাকি?

“কি?

“আমার উওর!

“ওহ দাও!

“দিচ্ছি!

বলেই অশান্ত’র গলা জড়িয়ে ধরল। চট করে ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বলল, “এই হলো উওর!

শান্ত হেসে নিঝুম কে নামাল। নিঝুম নামলো না বরং শান্ত’র গলা জড়িয়ে ধরে রইল। ভাগ্যিস! এটা একটা রাত ছিল! এমন একটা রাত যা তাদের জীবনের পথ বদলে দিল। সম্পর্কের নতুন একটা সূচনা এনে দিল। আর এসব কিছুর সাক্ষী হয়ে রইল আকাশের ওই চাঁদ। নিঝুম হাতের আঙুল উঠিয়ে বলল, “ওই তাঁরা’টা আপনি অশান্ত আর তার পাশের তাঁরা’টা হলো চশমিশ!

শান্ত হেসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল। বাহ বড্ড সুন্দর লাগছে এই চাঁদ’কে!
#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৬৫

মঈনুল হকের শরীরটা সকাল থেকেই খুব খারাপ। ভীষণ অস্বস্তিতে ভুগছেন তিনি। গতরাতে তার বড় মেয়ে নিঝুম খুব রাত করে বাড়ি ফিরে। যদিও এক হলুদের অনুষ্ঠান থেকে ফিরেছে বলেই রাত হয়েছে, কিন্তু সে একা ফিরে নি। বরং তাকে দিয়ে গেছে একটা ছেলে! এটা নিয়েই তিনি বেশ চিন্তিত। ছেলেটা কে? তার সাথেই বা নিঝুমের সম্পর্কটা কি? এসব কথার উওর নিঝুম কে জিজ্ঞেস করলেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু করতে পারছেন না। ব্যাপারটা তাকে ভাবাচ্ছে। নিঝুম’ই বা কি ভাববে এসব কথা জিজ্ঞেস করলে। সে তো আদৌও জানে না ঘরের বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে তিনি সবটা দেখেছেন। উল্টোপাল্টা কোন কাজ দেখেনি। তবে একটা জিনিস খেয়াল করেছে, ছেলেটা নিঝুম কে দিয়ে যাবার পর পরই চলে যায় নি। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। একটা সময়ের বুঝি অপেক্ষা ছিল‌। সময় শেষ হতেই ছেলেটা চলে গেল। এই বিষয় নিয়েই তিনি বেশ চিন্তিত!

মেয়ে তো ছোট নেই আর। এই বয়সে প্রেম ভালোবাসা অসম্ভব কিছু না। কিন্তু যুগ’টাই যে বড্ড খারাপ। ইচ্ছে করছে সোজাসুজি নিঝুম কে গিয়েই জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু তা পারছে না। যদি এমন কিছু না হয় তখন বেশ লজ্জায় পড়ে যাবেন। মেয়ে দুটি আজ অবদি অভিযোগ করার মতো কিছু করে নি। এখনো করবে না বলেই তার বিশ্বাস! তবুও মনস্থির করতে পারছেন না। তাহমিনা বেগম এসে এক কাপ চা দিয়ে গেলেন। চিন্তার কারণে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে মুখ পুড়িয়ে ফেললেন। আজ তার ছুটির দিন। সরকার এবার শুক্র আর শনি দুদিন সপ্তাহিক ছুটির ব্যবস্থা করেছে। আজ শনিবার! ছুটির দিনে প্রথমে তিনি কড়া করে এককাপ চা খাবেন। এরপর যাবেন মেয়েদের সাথে নাশতা করতে। কিছু একটা ভাবছেন এখন,‌নাশতার টেবিলেই কিছু একটা করতে হবে!

নাশতা খেতে বসেছে তিনজন! হিনা,‌ নিঝুম আর মঈনুল হক! তাহমিনা বেগম গরম গরম পরোটা ভেজে দিয়ে যাচ্ছেন। খানিকক্ষণ পর তিনিও এসে যোগ হবেন। খেতে খেতে মঈনুল হক জিজ্ঞেস করলেন, “গতরাতের অনুষ্ঠান কেমন কাটলো রে মা?”

“ভালোই বাবা!”

“আজ তো আবার বিয়ে, যাবি তো!”

নিঝুম খানিকটা হকচকিয়ে গেল। দ্রুত তা সামলে মাথা নাড়ল। খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন মঈনুল হক। তার মেয়ে পর পর এমনভাবে মিথ্যে বলতে পারে না। কথার মাঝে একবার হোঁচট খাবার দরকার ছিল। যেহেতু মিথ্যে বলেনি তাই আর হোঁচট খাবার প্রশ্ন’ই উঠে না।

যথারীতি দুপুরের সময়’ই বেরিয়ে গেল নিঝুম।‌ মঈনুল হক এতে সন্দেহ করলেন না। নিঝুম সোজা গিয়ে উপস্থিত হলো শান্ত’র বাড়িতে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার শান্ত বাসায় ছিল না। নিঝুম চিন্তায় পড়ে গেল। ফোন করতে লাগল শান্ত কে। শান্ত ফোন ধরতেই বলে উঠল, “আপনি কোথায়?”

“তুমি আমার বাসায়!”

“হুঁ!”

“তাহলে চলে আসো আহনাফের বাড়িতে, আহনাফ এখন থেকে আমায় ছাড়ছে না।”

“আচ্ছা আসছি!”

বলেই ফোন কাটল সে।‌ রিক্সা নিয়ে এবার উপস্থিত হলো আহনাফের বাড়িতে। নিঝুম গিয়ে দেখল তারা দুজন সবে খেতে বসেছে। এছাড়াও আরো দুজন আছে। একজন হচ্ছে ইফা আরেকজন আহনাফের বাবা। এমন পরিস্থিতিতে এসে উপস্থিত হবে সে মোটেও ভাবে নি। আহনাফ হেসে বলল, “আরে নিঝুম, এসে বসো!”

নিঝুম এগিয়ে গিয়ে সোফায় বসল। আহনাফ তাকে খাবার টেবিলেও ডাকলো, কিন্তু নিঝুম বলে উঠল, “আমি খেয়েই এসেছি এইমাত্র!”

আহনাফের বাবা ভ্রু কুঁচকে মেয়েটাকে একবার দেখলেন। চেনা চেনা লাগছে, এর আগেও বোধহয় দেখেছেন কোথাও! শান্ত খাবার শেষ করল না, উঠে দাঁড়াল। তার নাকি আর খেতে ইচ্ছে করছে না। নিঝুম আসায় একটা সুবিধা হলো। ওর অজুহাতে বেরিয়ে গেলো সে। এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে ইফা। কারণ শান্ত আসবে শুনে নিজে সব রান্না করল।‌ শান্ত’র‌ প্রিয় চিকেন বিরিয়ানি থেকে পায়েস অবদি রাঁধলো। অথচ শান্ত ঠিকমতো কিছুই খায় নি, পায়েসের বাটি টা হাতে অবদি নেই নি। এখন এসব কিছুর জন্য দায়ী করছে সে নিঝুম কে। এই মেয়েটা সুখে থাকতে দিচ্ছে না তাকে। খাবার শেষ না করে সেও উঠে গেল!

শান্ত গাড়ির সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলল,‌ “বলো কি ব্যাপার?

“গত রাতে হলুদে গেছিলাম আর বিয়েতে এসেছি।

“এর মানে?

“এর মানে আমার বাবা গতরাতে নিশ্চিত আপনাকে দেখেছে‌।”

“দেখেছে ভালো করেছে। একদিন তো দেখা হতোই।

“হতো, তবে সেটার একটা সময় ছিল। অসময়ে না অশান্ত।

“আচ্ছা কথা পরে হবে,‌আগে‌ চলো কোথাও বসি!

“কেন?

“লাঞ্চ করতে, আমি জানি তুমি লাঞ্চ না করেই এসেছো।

“এজন্য আপনি এভাবে খাওয়া ছেড়ে উঠে গেলেন।

“কি করবো বলো,‌ওরা আমায় ছাড়ছিলো না। তাই তোমাকে ডেকে এনে ভাগলাম। নাহলে রাত অবদি বসিয়ে রাখতো।

“আহনাফের বাবা অনেক আদর করে না আপনাকে।

“হুঁ, অনেক!

কিঞ্চিত হেসে শান্ত ফিরল নিঝুমের দিকে। দুজনে মিলে একটা রেস্টুরেন্টে বসল।‌ লাঞ্চ শেষ করে বেড়িয়ে দেখল ৪ টা বাজে। দিনের সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে। এবার তারা হাঁটার জন্য পার্কে ঢুকল। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে হাঁটল। গল্প করল। বেশ অনেকদিন পর একসাথে সময় কাটাচ্ছিলো দুজন। শেষে নিঝুম কে বাসায় পৌঁছানোর সময় চলে এলো। নিঝুম আগেই বলে দিল, বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে না যেতে। বাবা আজ বাড়িতে, তিনি একবার দেখে ফেললেই সর্বনাশ!
শান্ত গাড়ি পার্ক করে নিঝুম কে এগিয়ে দেবার জন্য হাঁটতে লাগল। দুজনে পাশাপাশি’ই হাঁটছিল, তবুও খানিকটা দূরত্ব রেখে। মাগরিবের এই সময় বড়ো নিস্তব্ধ থাকে। শান্ত এগিয়ে এসে নিঝুমের হাত ধরে ফেলল।‌ নিঝুম হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল শান্ত ছাড়ছে না।

“অশান্ত হাত ছাড়ুন , বাসার সামনে আমি। আপনি আর সাথে আসবেন না, এখান থেকেই চলে যান।

“হঠাৎ আজ কেন এতো ভয় পাচ্ছো!

“কারণ আমি আজ পরপর অনেকগুলো মিথ্যে বলেছি। বাবা কে যেদিন বেশি মিথ্যে কথা বলি, সেদিন’ই ধরা পরে যাই।

শান্ত হাসল। নিঝুম হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কোনমতে হাত ছাড়িয়ে সামনে ফিরতেই বাবা কে দেখে চমকে উঠলো সে। মঈনুল হক ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছেন দুজনের দিকে। শান্ত এখনো বুঝতে পারল না সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোকটা কে। নিঝুম বলে উঠল, “বাবা, তুমি!”

—–

পাশাপাশি সোফাতে বসে আছেন দুজন। তাদের সামনে মঈনুল হক। তাহমিনা বেগমের শরবতের গ্লাস সামনে রেখে ছেলেটাকে দেখছেন। তার চোখ দেখে মনে হচ্ছে এই ছেলেটাকে তার বেশ পছন্দ! নিঝুম যদি ছেলেটাকে ভালোবেসে ফেলে তবুও তিনি রাগ করবেন না, মেনে নিবেন। ওদিকে চেয়ারে মুখ গম্ভীর করে বসে আছে হিনা। আজ তো কিছু একটা হবেই হবে। একদিন রাতে কাউকে না বলে এই ছেলেকে ঘরে ঢুকতে দিয়েছিল সে। কেউ যেন সেই কথা না জানতে পারে। মা জানতে পারলে তো কোন প্রশ্ন ছাড়াই মে’রে ফেলবেন। বাবা’র দিক থেকে তাও যা ভরসা আছে। মঈনুল হক এক গ্লাস পানি খেয়ে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে?

“আমার নাম শান্ত!”

“কি পরিচয় তোমার নিঝুমের সাথে!”

“বাবা উনি আমার সিনিয়র! আমরা একই ভার্সিটিতে পড়ি।

মঈনুল হক গম্ভীর মুখে মেয়ের দিকে তাকালেন। মেয়ে চুপ হয়ে গেল। তিনি আবারো জিজ্ঞেস করলেন, “আর কোন সম্পর্ক নেই তোমাদের মাঝে!

নিঝুম মাথা নেড়ে না বলল, ওদিকে শান্ত মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলছে। মঈনুল হক আহত গলায় বললেন,‌ “তুমি বার বার আমায় মিথ্যে কেন বলছো নিঝুম!

নিঝুম চুপসে গেল। তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে দেবে। এতে বাবা তার উপর রেগে থাকতে পারবে না, সে একশ ভাগ নিশ্চিত। শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠল, “আংকেল আমরা একে অপরকে ভালোবাসি!

“ভালোবাসো!

“জি।

“কতোদিন ধরে!

“অনেক দিন ধরে।

“হুম আচ্ছা! বুঝলাম, কিন্তু আমি একটা সোজা কথা বলে দিতে চাই তোমাদের।

“জি আংকেল।

“আমার তোমাকে পছন্দ না!

“জি আংকেল মানে কেন আংকেল?

“এভাবেই পছন্দ না, আমি কোনভাবেই চাই না তোমার সাথে নিঝুমের বিয়ে হোক।

“কিন্তু আমি তো চশমিশ কে মানে নিঝুম কে বিয়ে করতে চাই।

“আমি অমত থাকলে এই বিয়ে কখনো হবে না।

শান্ত হতভম্ব হয়ে নিঝুমের দিকে ফিরল। তার মুখ থমথমে। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে।‌শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সেও তাকাল মঈনুল হকের দিকে। তার চোখ দুটো স্থির! শান্ত চোখ দু’টো ছোট ছোট করে বলল, “আংকেল আমার কিছু বলার আছে।

“বলতেই পারো, বলো।

শান্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আংকেল, আপনার আমাকে পছন্দ নয় কেন? আমি দেখতে সুদর্শন, ভদ্র আর আপনার মেয়েকে যথেষ্ট ভালোবাসি! তবুও কেন আমাকে পছন্দ হচ্ছে না।

মঈনুল হক গম্ভীর গলায় বললেন, “আমার তোমাকে পছন্দ না

“কিন্তু কেন?

মঈনুল হক উঠে দাঁড়ালেন ‌। বোঝাই যাচ্ছে তিনি ভীষণ রেগে আছেন। তার রেগে যাবার একমাত্র কারণ নিঝুম তাকে মিথ্যে বলেছেন। মেয়েদের সাথে কখনো এমন সম্পর্ক রাখেন নি যে মেয়েরা তার থেকে কথা লুকিয়ে রাখবে।‌ সেখানে আদরের মেয়ে তাকে মিথ্যে বলায় তিনি যথেষ্ট দু্ঃখ পেয়েছেন। ককর্শ গলায় বলে উঠলেন, “আমি যখন বলেছি না তো না, আর কখনো তুমি আমার মেয়ের সাথে দেখা করবে না।

কথাটা বলেই তিনি ঘরের দিকে রওনা হলেন। শান্ত কিছু বলার জন্য উঠে দাঁড়াল। নিঝুম দ্রুত তার হাত ধরে থামিয়ে বলল, “প্লিজ চুপ থাকুন, বাবা যা বলছে তা আমার উপর রাগ করে বলছে। রাগ কমে গেলে আমি ঠান্ডা মাথায় তার সাথে কথা বলবো। দয়া করে কিছু বলে সমস্যা বাড়াবেন না।

শান্ত কিছু বলল না, অস্থিরতায় কপালে ঘাম জমে যাচ্ছে। নিঝুম মা কে দেখেই চট করে শান্ত’র‌ হাত ছেড়ে দিলেন। তাহমিনা বেগমের বিরক্ত লাগছে। এতো সুন্দর একটা ছেলেকে কিভাবে না করে গেল নিঝুমের বাবা। ছেলেটা কে তার যথেষ্ট ভদ্র বলে মনে হচ্ছে। শান্ত সালাম জানিয়ে বের হয়ে গেল। তাহমিনা বেগমের বেশ খারাপ লাগলো। তিনি বলতে চাইলেন, “রাতের খাবার টা খেয়ে যাও বাবা!”

মঈনুল হক অন্ধকার ঘরে বসে আছেন। নিঝুম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “বাবা আসবো!”

তিনি কোন জবাব দিলেন না। নিঝুম তবুও ঘরে ঢুকল। ঘরের বাতি জ্বালালো। বাবা চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। নিঝুম বাবার সামনের চেয়ারটায় বসে পড়ল। মঈনুল হকের বই পড়ার খুব শখ। ঘরের এক কোণে বুক সেলফে অনেক বই গোছানো আছে। নিঝুমের চোখ সেদিকে। মঈনুল হক বলে উঠলেন , “কিছু বলবে?

সাথে সাথে নিঝুম কেঁদে উঠলো। মঈনুল হক তৎক্ষণাৎ বলে উঠলেন, “কাঁদবে না, তোমাদের দুইবোনের কারোর কান্না সহ্য হয় না আমার।

“সরি বাবা!

“মিথ্যে বলে এখন সরি বলছো কেন?

নিঝুম নাক টানলো। মঈনুল হকের রাগ লাগছে। মেয়েকে কান্না বন্ধ করতে বলছেন, তবুও সে কেঁদে যাচ্ছে। তিনি বিরক্তি প্রকাশ করলেন। নিঝুম ফট করে বলে উঠল, “তুমি এদিক তাকিয়ে কথা বলো, ওদিক তাকিয়ে আছো কেন? এদিক তাকাও আমি আর কাঁদবো না।

মঈনুল হক তাকালেন না। মেয়ের দিকে তাকালেই তার রাগ পরে যাবে। এটা তিনি চাইছেন না। চাইছেন রাগটা আরো বাড়াতে। নিঝুম উঠে এসে এদিক তাকাল। একটু কাঁদতেই তার চোখ মুখ সব ফুলে গেছে। চোখের চশমা সামনে রেখে বললেন, “নাও এভাবেই কথা বলবো, তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারবো না।

“কেন পারবে না?

“কারণ আমি ভুল করেছি তাই!

“মানছো ভুল করেছো?

“বাবা আমি সরি বলছি তো, রেগে থেকো না আর !

“আমায় মিথ্যে বলেছো তুমি।

“আমি তো পুরোপুরি মিথ্যে বলেনি বাবা। তোমাকে আমি সত্যিটাও জানাতাম।

“কখন জানাতে?

“সময় হলেই জানাতাম।

“আচ্ছা এখন তো জেনে গেছি, এখন কি বলবে?

“তুমি যা বলবে তাই হবে।

“আমি যার সাথে বলবো তাকেই বিয়ে করবে?

“হুম করবো!

“তাহলে ওই ছেলেটার কি হবে? তাকে না তুমি ভালোবাসো!

“ভালোবাসি তো কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি না।

মঈনুল হকের রাগ এবার কমতে শুরু করেছেন। নিঝুম একটু সামনে আসার পথে চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলো। মঈনুল হক তড়িখড়ি করে মেয়ে কে ধরলেন‌। চশমা পড়িয়ে বললেন, “মা ব্যাথা পেয়েছো?

“না ঠিক আছি।

“চশমা ছাড়া কে চলতে বলেছে তোমায়?

“বাবা ক্ষুধা লেগেছে, তুমি না খেলে আমিও কিছু খাবো না।

বাবার রাগ এবার কমে গেছে, কিন্তু মেয়েকে তিনি বুঝতে দিলেন না। হেঁটে বসার ঘরের দিকে গেলেন। নিঝুম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here