#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি
#সিজন_৩
পর্ব (১৩)
প্রহর শেষের আলোয় রাঙা
সেদিন চৈত্র মাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম
আমার সর্বনাশ!
রবীন্দ্রনাথের লেখা লাইন দুখানা ইশাদের কানে বাজতে সে চমকে তাকাল পাশে। ইমদাদ মুখের সামনে মুঠো হাত রেখে নাটকীয়ভঙ্গিতে খুক খুক শব্দে কেশে বলল,
” তোদের দুজনের নীঃশব্দের প্রেম দেখে লাইনদুটো মনে পড়ল। ”
ইশাদ খানিকটা লজ্জা পেল। গাড়ি থেকে নেমে গেইট পার হয়ে প্রথম চোখ পড়েছিল বারান্দায়। সাথে সাথে চোখাচোখি হলো তিহির সাথে। দুজনের কেউ চমকাল না, বরঞ্চ দৃষ্টি বিনিময় দীর্ঘ হলো। যেন এই মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষায় ছিল যুগযুগ ধরে। কিন্তু কে জানত, তাদের নীরব ভাষা আরেকজন পড়ে ফেলবে?
ইশাদের চাপা লজ্জার আভাসটুকু ঠিক মতো প্রকাশ পাওয়ার আগেই কিছু একটার সাথে পা আটকে গেল। উপুত হয়ে সামনে পড়বে তখনই ইমদাদ হাত দিয়ে পিঠের দিকের পাঞ্জাবি টেনে ধরল। দুষ্টু হেসে বলল,
” আমি এই সর্বনাশের কথাই বলছিলাম, বন্ধু। বিয়ে করতে এসে নাক কেটে ফেললে তো মহা সর্বনাশ! ”
ইশাদ খেয়াল করল তারা মূল দরজার দিকে না গিয়ে বাগানের দিকে চলে এসেছে। বালু-সিমেন্ট দিয়ে বানানো বাগানের সীমানার সাথেই ধাক্কা খেয়েছে। সে অত্যাশ্চর্য হয়ে বলল,
” আমরা এখানে এলাম কখন? ”
ইমদাদ ইশাদকে সোজা করে দাঁড় করাল। কাঁধ চেপে ধরে বলল,
” যখন চোখে চোখে সর্বনাশ ঘটাচ্ছিলে তখন। তোর ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পেরেছিলাম বলেই রক্ষা করলাম। নাহলে তো আমিও আন্টির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতাম! ”
ইশাদ চট করে বা-পাশে তাকাল। শাহিনা শাইখা গেইটের ওখানে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছেন। জিভ কামড়ে লজ্জায় চুলে আঙুল ঢুকিয়ে মায়ের কাছে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ বলল,
” আমার সর্বনাশ চৈত্রে না মাঘের শেষে দেখেছিলাম। ”
ইমদাদ হা হা শব্দে হেসে উঠে থেমে গেল। মনে করতে চাইল তার সর্বনাশের দিনক্ষণের কথা। তেমন কিছুই মনে পড়ল না৷ কল্পনায় অসংখ্য নারী মুখ উঁকি দিলেও তাকে নাশ করার মতো কোনো আঁখির দেখা পেল না। তবে কি তার সর্বনাশ হওয়া এখনও বাকি? ইমদাদ ভাবনা ছেড়ে ইশাদের পিছু নিল। একপা ফেলে আরেকপা ফেলবে সেসময় মিহির আদুরে মুখখানা মনে পড়ল। পরক্ষণে অভিমানি দুটি চোখ! চোখদুটোর কোল অশ্রুতে ভরে উঠতে ধপাস শব্দ হলো।
ইশাদ দৌড়ে এসে ইমদাদের এক হাত টেনে বলল,
” পড়লি কী করে? ”
ইমদাদ তখনও কল্পনাবাসী। বিভোর হয়ে বলল,
” প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ! ”
ইশাদ কপাল কুঁচকে বলল,
” তুই দেখি কবি হয়ে গেছিস। যখন তখন কবিতার লাইন আওড়াচ্ছিস। ”
শাহিনা শাইখাও ছুটে এসেছিলেন। উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
” চেয়ে চেয়ে কী দেখছিস? টেনে তোল। ব্যথা পেল নাকি দেখ! ”
বলতে বলতে শাহিনা শাইখাও ইমদাদের শরীরে হাত রাখলেন।
___________
রুকমিনি মুখার্জির মুখোমুখি বসতে ইশাদ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। ভয়ে হাত-পা শীতল হয়ে এসেছে। তিহিকে তার হাতে তুলে দিবে তো? নাকি অন্য কোনো মতলব আঁটবেন? ইশাদ ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়ল খুব। তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতটা ভীত হয়ে পড়ছে! শাহিনা শাইখা ছেলের একহাত চেপে ধরে রুকমিনি মুখার্জির সাথে কুশল বিনিময় শুরু করলেন। ধীরে ধীরে আতিথেয়তা শুরু হলো। কিছু সময়ের মধ্যেই ইশাদের ভয় কেটে গেল। নিশ্চিত হলো বিয়ের ব্যাপারেই কথা বলছে। ইশাদ আটকে রাখা নিশ্বাসটা ছাড়ল। একটু শান্তির বাতাস টেনে নিতেই ইনা ছুটে এলো তার কাছে। কোলের উপর বসে কানে কানে বলল,
” আম্মু বলেছে, তুমি কুঁচি না ধরলে শাড়ি পরবে না। ”
বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাকাল। ইনাকে আদরে জড়িয়ে ধরে কিছু বলবে তার আগেই সে হাত ফসকে পালিয়ে গেল। সামনে মুরব্বিরা বসা দেখে উঠতেও পারল না। ইনাটাও চোখের পলকে কোথায় লুকাল সেটাও টের পেল না। সেসময় রুকমিনি মুখার্জি জিজ্ঞেস করলেন,
” ইশাদের বাবা আসেননি? দেখতে পাচ্ছি না যে? ”
ইশাদ সরাসরি বলল,
” উনি আসবেন না। ”
রুকমিনি মুখার্জির দৃষ্টি ঘুরে গেল ইশাদের দিকে। কৌতূহলে জানতে চাইলেন,
” কেন? ”
ইশাদ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিতে পারল না। মাথা নত করে নিলে রুকমিনি মুখার্জি অসন্তোষ হয়ে বললেন,
” তিনি না আসলে কী করে হবে? ইশাদের অভিভাবক তো তিনিই। পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাকে ছাড়া তিহিকে আপনাদের পরিবারে কিভাবে পাঠাব? ”
ইশাদ চোখ তুলে তাকাল। কিছু বলার সুযোগ পেল না। ইনা তার হাত ধরে টানছে। ইশাদ একটু নিচু হতে সে ফিসফিস করে বলল,
” আম্মু বলেছে, তুমি কানে ফুল গুঁজে না দিলে চুল বাঁধবে না। ”
ইশাদ হালকা হাসল। ইনার কপালে চুমু দিতে চাইল, পারল না। সে আবারও ছুটে পালাল। সেসময় মায়ের স্পষ্ট গলার স্বর পেল,
” ইশাদের অভিভাবক ইশাদ নিজেই। ভালো-মন্দ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমি আছি। ও আমার কথার অবাধ্য হয়নি কখনও, ভবিষ্যতেও হবে না ইনশাআল্লাহ। আপনি যদি তিহিকে আমাদের দিতে চান তাহলে ভরসাটুকু আমাদের উপরেই করতে হবে, আপা। ”
রুকমিনি মুখার্জি ঘাড় বাঁকিয়ে স্বামীর দিকে তাকালেন। তাপান মুখার্জি স্ত্রীর পাশেই বসে ছিলেন। স্ত্রীর জিজ্ঞেসা চাহনিতে সহজভাবে বললেন,
” এ ব্যাপারে আমার রায় দেওয়া উচিত নয়। ওদেরকে কাছ থেকে তুমি দেখেছ। যদি ভরসা করতে পার তাহলে মেয়ে দিবে নাহয় দিবে না। ”
রুকমিনি মুখার্জি একবার শাহিনা শাইখার দিকে তাকালেন তারপরে ইশাদের দিকে। কোনো কিছু না বলে আচমকা সোফা ছেড়ে চলে গেলেন। ইশাদ অস্থিরতায় দাঁড়িয়ে পড়লে গলা জড়িয়ে ধরল ইনা। কানে কানে বলল,
” আম্মু বলেছে, তুমি কলম না ধরলে আম্মু সাইন করবে না। ”
কথা শেষ করে ইমদাদের কোল থেকে নামতে চাইল, পারল না। ইমদাদ শক্তভাবে জড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
” পাকনি বুড়ি, শুধু বাবার সাথে কানাকানি করলে হবে? আংকেলের সাথেও তো করতে হবে। ”
ইনা চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,
” আম্মু তো তোমাকে কিছু বলতে বলেনি। ”
” তাহলে তুমিই বলো। ”
ইনা গালে হাত রেখে কিছু একটা ভাবল। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” ইনা বলেছে, আমাকে কোল থেকে না নামালে তোমাকে কেউ চুমু খাবে না, আদর করবে না, বিয়ে করবে না। ”
ইমদাদ শব্দ করে হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল,
” আমাকে তো একজন বিয়ে করে ফেলেছে। ”
ইনা অখুশি হলো। কৌতূহলে জিজ্ঞেস করল,
” চুমু খেয়েছে? ”
ইমদাদের হাসি মিলিয়ে গেল। চুপ হয়ে ম্লান মুখে তাকালে ইনা কোল থেকে নেমে গেল। পদতলে ছন্দ তুলে দৌড় দিলে মনে পড়ল তাকে অনেকেই চুমু খেয়েছে, আদর করেছে। কিন্তু বলতে পারেনি। যতক্ষণ ইনা কোলে ছিল ততক্ষণ ঐ মানুষগুলোর কথা মনেই পড়েনি। শুধু একজনের কথা মনে পড়েছিল। যে তাকে চুমু খায়নি, আদর করেনি। শুধু একবার জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল।
হঠাৎ কাঁধে ভারী চাপে ইমদাদ পাশ ফিরে তাকাল। ইশাদকে অনুসরণ করে সামনে তাকালে, তিহির দেখা পেল। বেনারশী জড়িয়ে শাশুড়ির পায়ে পা মিলিয়ে নিচে নামছে।
রুকমিনি মুখার্জি তিহিকে তাদের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে মৃদু হেসে বললেন,
” আমরা তো হিন্দু পরিবার। এখানে মুসলিম রীতিতে বিয়ের আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাই আইনি ব্যবস্থা করেছি। তোমাদের আপত্তি না থাকলে বিয়ের কার্যকলাপ শুরু করা যাক? ”
___________
বিদায়বেলা তিহি যখন কান্নাকাটি করে অচেতন হওয়া অবস্থা তখন ইশাদ কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” কে জানি বলেছিল, কুঁচি না ধরলে শাড়ি পরবে না? কানে ফুল না দিলে চুল বাঁধবে না? ”
তিহি ফুঁপাতে ফুঁপাতে ইশাদের দিকে তাকালে সে আবার বলল,
” কলম না ধরলে সাইনও করবে না বলেছিল। ”
মুহূর্তে তিহির ভেজা চোখদুটো রক্তিম হয়ে উঠল। ইশাদের থেকে গাড়ির অন্যপাশে চেপে বলল,
” আমার কান্না না থামিয়ে মজা করছ তো? শোধ তুলব আমি। ”
তিহি কথা শেষ করতে অকস্মাৎ গাড়ি থেমে গেল। ইশাদ অবাক হয়ে বলল,
” মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামালে, আমাকে গুম করবে নাকি? ”
তিহি বিরক্ত হয়ে বলল,
” আমি কেন গাড়ি থামাতে যাব? ”
” তাহলে কে থামাল? ”
ইশাদ সামনে ড্রাইভারের দিকে তাকালে ইমদাদের গলার স্বর পাওয়া গেল,
” গাড়ি থেকে নাম। ”
ইশাদ স্বাভাবিকভাবেই নামল। ইমদাদের চোখে চোখ রাখলে সে সরাসরি বলল,
” মিহি কোথায়? ”
ইশাদ যেন আকাশ থেকে পড়ল এমন মুখ করে বলল,
” তাই তো মিহি কোথায়? ওর তো আমার বিয়েতে আসার কথা ছিল। ”
ইশাদ আশেপাশে মিহিকে খুঁজছে অমন ভাব করলে ইমদাদ রেগে গেল। রুক্ষ স্বরে বলল,
” একদম নাটক করবি না, ইশাদ। মিহি যে আমাদের সাথে নেই সেটা তুই সকালেই খেয়াল করেছিস। কিন্তু একবারও জিজ্ঞেস করিসনি। কেন? ”
ইশাদ চুপ করে থাকলে ইমদাদ খানিকটা জোর গলায় বলল,
” ইশাদ, মিহি কোথায়? ”
ইশাদ ইমদাদের একটু কাছে এসে দাঁড়াল। চোখে চোখ রেখে বলল,
” তুই একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে খেলেছিস, যাকে কিনা আমি বোনের মতো জানি। এরপরও আমার সামনে সুস্থভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন জানিস? কারণ, মিহি চায় না তার জন্য তুই কোনো কষ্ট পাস। ”
ইমদাদ চোখ সরিয়ে ফেললে ইশাদ আবার বলল,
” মেয়েটা ছোট হতে পারে কিন্তু মন? বিশাল! আমি এতদিন যাবৎ তোর সব অন্যায় মাফ করেছি কিন্তু এবার করব না। মনে রাখিস, কষ্ট শুধু মিহি না আমিও পেয়েছি। ”
ইমদাদ কিছু বলতে পারল না। একঝাঁক বিষণ্ণতায় মনটা পূর্ণ হলেও স্বস্থি পেল এই ভেবে যে মিহি এখনও ইশাদের তত্ত্বাবধানে আছে।
__________
নিজের বাড়ির সাধারণ নিয়ম-কানুন শেষ করে ইশাদ তিহির কাছে এলো। গাঁদা আর রজনীগন্ধা দিয়ে বাসর সাজানো হয়েছে তাদের। পুরো বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। তার মধ্যেই তিহি ঘোমটা টেনে বসে আছে। ইশাদ ঘোমটা খুলতেই ইনা ‘ভাউউ’ করে উঠল। ইশাদ ভয়ে পেছনে সরে যায়। এই সময়ে এই ঘরে ইনাকে আশা করেনি সে। তারমধ্যে আবার তিহির ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে ছিল।
তার হৃদপিণ্ড কাঁপছে। নিশ্বাস পড়ছে ঘনঘন। নিজেকে স্বাভাবিক করতে বেশ সময় নিয়ে বলল,
” মামনি? তুমি এখানে এলে কখন? ”
ইনা হেসেই বলল,
” আম্মু নিয়ে আসল যখন। ”
ইশাদ চট করে তিহির দিকে তাকাল। শেরপুর থেকে আসার পথে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল ইনা। বাসায় পৌঁছে তাকে কোলে করে মায়ের রুমে দিয়ে এসেছিল স্পষ্ট মনে আছে তার। রাতে খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করেও তোলা যায়নি। শেষে তার মা ঘুম ভাঙলে খায়িয়ে দিবে বলে ইশাদকে রুমে পাঠিয়ে দেয়। এরমধ্যে তিহি রুম থেকে বের হলো কখন আর মেয়েকে ডেকে আনল কখন?
ইশাদ ইশারায় কিছু একটা বললেও তিহি গ্রাহ্য করল না। মেয়েকে কাছে টেনে বলল,
” চল, আমরা ঘুমাই। ”
তিহির আদেশ পেয়েই ইনা তার মাকে জাপটে ধরে শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করলে তিহি ইশাদকে ইশারায় কাছে ডাকল। সে মাথা এগিয়ে নিলে কান টেনে ধরল তিহি। ঠোঁটের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” আমার প্রতিশোধ কেমন লাগছে? ”
এতক্ষণে পুরো ব্যাপারটা মাথায় ঢুকল তার। বিয়ের প্রথম রাতে বউয়ের হাতে অপদস্ত হয়ে একটুও মন খারাপ হলো না। ঠোঁটে কুটিল হাসি নিয়ে আলো নিভিয়ে ইনার অন্যপাশে শুয়ে পড়ল।
________
তখন রজনীর দ্বিতীয় প্রহর চলছে। আকাশ মেঘমালা বুনায় ব্যস্ত। বাতাসে নববর্ষের ঘ্রাণ। কুয়াশার নরম স্পর্শে জানালার কাঁচ ঝাপসা হয়ে আসতে তিহির শীত অনুভূত হলো। ইনাকে বুকের ওম দেওয়ার জন্য জড়িয়ে নিল ঘুমের ঘোরে। সেসময় এক জোড়া কোমল ঠোঁট তার চিবুক কামড়ে ধরল। তিহি পিটপিটে চোখে তাকাতেই বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল। চিৎকারের শব্দ রুমের দেয়াল পার হওয়ার আগেই মুখ চেপে ধরল ইশাদ। হালকা শাসিয়ে বলল,
” পাশের রুমে তোমার শাশুড়ি ঘুমাচ্ছে, একটু মায়া করো। ”
তিহি নিজের মুখ ছাড়িয়ে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বলল,
” ইনা কোথায়? ”
” আম্মুর সাথে ঘুমাচ্ছে। ”
” কখন গেল? ”
” আমি যখন দিয়ে আসছি। ”
তিহি অসহায় চোখে তাকালে ইশাদ হেসে ফেলল। পর মুহূর্তেই অনুরোধের সুরে বলল,
” আজ রাতটা শুধু আমাকে দেও, কাল থেকে ভাগ করো, প্লিজ? ”
তিহি আর দূরত্ব বজায় রাখতে পারল না। ইশাদকে গাঢ়ভাবে জড়িয়ে বলল,
” আমাকে বাঁচিয়ে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বিনিময়ে আপনার কী চাই?”
ইশাদ সাথে সাথেই বলল,
” আপনার নিশ্বাসটুকু উপহার দিলেই চলবে। ”
রজনি তখন শেষ প্রায়। সূর্যের আগমনের তোরজোর চলছে। সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই ইশাদের। ঘুমানোর একটা ছোট্ট চেষ্টা চালিয়েও আয়ত্বে আনতে পারল না। চোখের পাতা এক করলেই তিহির বিবস্ত্র শরীরের অগণিত দাগগুলো ছবির মতো ভেসে উঠছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই, একমাত্র মুখটি ছাড়া। ইশাদ তিহিকে বুক থেকে সরিয়ে বালিশে রাখল। গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন মুখটাতে চেয়ে প্রশ্ন করল, ‘ তোমার কখনও জানতে ইচ্ছে হয়নি এই দাগগুলো কিসের? ‘
ইশাদ প্রশ্নের উত্তর পায় না। ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে তিহির গালে হাত রেখে মুখটাতে গভীর চোখে চেয়ে থাকে। হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ হয়। তারপরেই কান্নার আওয়াজ। ইশাদের বুঝতে বাকি থাকে না ইনা কাঁদছে। সে ছুটে দরজা খুলতে ইনা কোমর জড়িয়ে চিৎকার করে বলল,
” আমার একা ভয় করছে। আম্মুর কাছে শোব। ”
ইশাদ তাকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” একা কেন হবে, মামনি? তোমার দাদু কোথায়? ”
” নেই। ”
ইনার কান্নার শব্দে তিহির ঘুম ভেঙে গেছে। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে কী হয়েছে জানতে চায়। ইশাদ উত্তরে বলল,
” তুমি ও কে ঘুম পাড়াও। আমি আসছি। ”
ইশাদ মায়ের রুমে ছুটে গেলে নতুন কাজের মেয়েটির সাথে দেখা হয়। তার কাছে জানতে পারে হাসপাতাল থেকে একটা কল পেয়ে ছুটে বেরিয়ে যান শাহিনা শাইখা। ইশাদ ভারী দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এতরাতে মাকে একা ছাড়ার সাহস পায় না। সে কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়ি পার্কিং লনে গিয়ে নিজের টাকায় কেনা নতুন গাড়িতে চড়ে বসে। মা গেছে অনেক্ষণ, হেঁটে গেলে ধরতে পারবে না, এতরাতে রিকশাও পাবে না। তাছাড়া কোন হাসপাতালে গেছে সেটাও জানে না।
ইশাদ গাড়ি নিয়ে লন থেকে বের হতে সামনে তিহি পড়ে। জোর করে গাড়িতে চড়ে বলল, সে ও যাবে। ইশাদের মানা শুনে না। ইশাদ বাধ্য হয়ে তিহিকে নিয়েই বড় রাস্তায় বেরিয়ে আসে। খালি রাস্তায় গাড়ির গতি বাড়িতে দিতে তিহি সঙ্কায় পড়ে। কমানোর জন্য বলতে গিয়ে থেমে যায়। হঠাৎ চোখে ঝাপসা দেখতে থাকে। চারপাশের সবকিছু অদ্ভূত লাগে। কয়েক সেকেন্ড থম মেরে বসে থেকে আচমকা স্পিয়ারিং থেকে ইশাদের হাত সরিয়ে দিতে চায়। ইশাদ আশ্চর্য হয়ে বলল,
” আরে কী করছ? এক্সিডেন্ট করব তো। ”
তিহি নিজের কাজে অটুট থেকে বলল,
” আমি তো তাই চাই, তাজ। এক্সিডেন্ট যদি আমাকে মুক্ত দিতে পারে, তাহলে আমি মুক্তি চাই। ”
বলতে বলতে তিহি সিট ছেড়ে ইশাদের দিকে হেলে পড়ে। ইশাদের হাত সরিয়ে গাড়ির গতি সর্বোচ্চ করে দেয়। স্টিয়ারিং একবার ডানে তো আরেকবার বামে ঘুরাতে থাকে। তিহির মুখে তাজ নামটা শোনার পর ইশাদ এতটাই অবাক হয়েছিল যে তিহি কী করছে সেদিকে খেয়ালই নেই। যেন সে অন্য রাজ্যে চলে গেছে। চেতন ফিরল সামনে থেকে ছুটে আসা দ্রুতগামী একটি ট্রাকের সাথে সংঘর্ষের ভয়ঙ্কর শব্দে!
#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি
#সিজন_৩
পর্ব (১৪)
যে মানুষটা জীবনের প্রায় সবটা সময় কাটিয়েছেন বাড়ির বাইরে, হঠাৎ সন্তানের মায়ায় অতিথির মতো হাজির হতেন সেই মানুষটাই সন্তানের মায়া হারিয়ে অনেকগুলো দিন বাড়ির বাইরে গেলেন না৷ রুমের চার দেয়ালে বন্দী করে রাখলেন নিজেকে। নাওয়া-খাওয়াই আসল তীব্র অনীহা। রাতগুলো কাটাল অনিদ্রায়, দিনগুলো অবসাদে! বেখেয়ালি উদাসীনতায় তীব্র ব্যথা অনুভূত করল শিরা-উপশিরায় , অচেনা কষ্টও! শুকনো চোখজোড়ায় তীব্র যন্ত্রণা। পাপহীন অনুতাপে যখন লালরঙা হৃদয়টা পুড়ে ছাই হতে লাগল ঠিক তখনই প্রথমবারের মতো হার্ট-অ্যাটার্ক হলো সোবহান শাইখের। টনু কোনো রকমে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েই শাহিনা শাইখাকে কল করেছিল।
টনুর অসহায় কণ্ঠস্বরে শাহিনা শাইখার আত্মসম্মান ভেঙে গেল। পাথরের মতো শক্ত হৃদয়টা হলো ঝুরঝুরে। চোখে ভারি অশ্রুপাতে গলে পড়ল রাগ-অভিমান। দিশাহারা হয়ে ছুটলেন হাসপাতালে। সেখানে পৌঁছে এক পলকের জন্য স্বামীকে দেখেই ডাক্তারের সাথে কথা বলছিলেন। কথাবার্তা শেষ হতে না হতেই আরেকটা কল। প্রথম ধাক্কাটা সামলে নিলেও দ্বিতীয় ধাক্কাটা সামলাতে পারলেন না। আর্তনাদে ফেটে পড়ে করিডোরের মাঝখানে বসে পড়লেন। হাউমাউ কান্নায় ভেঙে পড়লে তাকে জড়িয়ে ধরল ইমদাদ। দ্রুত বলল,
” আমাদের ইশাদের কাছে যেতে হবে, আন্টি। নিজেকে সামলান। ”
শাহিনা শাইখা নাভিশ্বাস তুলে বললেন,
” ও ঠিক আছে তো? ”
ইমদাদ উত্তরে কী বলবে বুঝতে পারছে না। তিহির মতো জ্ঞান হারিয়ে আইসিইউতে ভর্তি না হলেও জখম হয়েছে মারাত্মকভাবে। নিজের চিকিৎসা বাদ দিয়ে তিহির জন্য ছুটছে। সে অবস্থায় তাকে কল দিয়ে মায়ের কথা বলেছিল। ইমদাদ খুঁজাখুঁজি বাদ দিয়ে শাহিনা শাইখার নাম্বারে কল দিয়ে জানতে পারে এ হাতপাতালে আছেন তিনি। ইমদাদ তার কাছে না এসে আগে ইশাদের সাথে দেখা করে। জোর করে চিকিৎসাধীনে রেখে তারপর শাহিনা শাইখার নিকট আসছিল। ভেবেছিল, সামনাসামনি বলবে। তন্মধ্যে কেউ একজন কল দিয়ে ইশাদের এক্সিডেন্টের কথা জানিয়ে দেয়।
ইমদাদের বাহুতে থেকেই একবার স্বামীর কেবিনের কাছে গেলেন শাহিনা শাইখা। তিনি ঘুমাচ্ছেন। এ অবস্থায় ছেলের খারাপ অবস্থার কথা বলার সাহস পেলেন না। টনুকেও কিছু বলতে মানা করে সরে পড়লেন কেবিন থেকে। ইশাদের কাছে পৌঁছালেন চোখের পানি ঝরাতে ঝরাতে।
————
ইশাদের ক্ষতস্থানগুলোতে ড্রেসিং শেষে হাতে ব্যান্ডেজ করছিল ডাক্তার সাহেব। সেসময় মায়ের ডাক শোনে ইশাদ বাচ্চাদের মতো সব ফেলে ছুটে আসে। মাকে জড়িয়ে শব্দহীন কান্নায় ভেঙে পড়ে। শাহিনা শাইখা ছেলের দুর্বল শরীরটাতে হাত বুলিয়ে বললেন,
” আমাকে তিহির কাছে নিয়ে চল। ”
ইশাদ তাৎক্ষণিক মাকে নিয়ে আইসিইউর সামনে গেল। তিনি দূর থেকে দেখে চোখের পানি ফেললেন চুপচাপ। ছেলেকে শক্ত রাখতে বললেন,
” চিন্তা করিস না, বাবা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। দেখবি, তিহি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। ”
মায়ের প্রবোধদানে ইশাদ শান্ত হতে পারল না। অসুস্থ শরীরেই বার বার ছুটোছুটি করল। ইমদাদ রুকমিনি মুখার্জির সাথে কথা বলে এসে ইশাদের কাছে এলো। জোর করে টেনে নিয়ে গেল তার কেবিনে। নিজ হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। কথা চালাচ্ছে অনর্গল,
” পাগল হওয়ার মতো কিছু হয়নি, ইশাদ। তোর মতো এত আঘাতও পায়নি। আমি নিজে দেখে এসেছি তিহিকে। ”
ইশাদ ব্যাকুল হয়ে বলল,
” কিছু হয়নি, না? কপাল থেকে রক্ত পড়ছিল! ডানহাতটা ছ্যাচে গেছে একদম! আরে, পুরো ধাক্কাটা ওর উপর দিয়েই তো গেছে। আমি কিছু করতে পারলাম না! ড্রাইভিং সিটে আমি থাকতেও কিছু করতে পারলাম না। আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে ট্রাকটাকে দেখছিলাম! ওর এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী। ”
শেষ কথাগুলো একদম পাগলের মতো আওড়াল ইশাদ। ইমদাদের কাছ থেকে ছুটে পালাবে তার আগেই ইমদাদ ধরে ফেলল। কঠিন স্বরে শাসাল,
” কোথাও যাবি না। চুপ করে বস। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না। ”
ইশাদ সেই শাসানি পরোয়া করল না। বসা থেকে আবারও উঠে দাঁড়ালে ইমদাদ সামনে থেকে জড়িয়ে ধরল। ধরা গলায় অনুরোধ করল,
” তোকে এই অবস্থায় দেখতে পারছি না, ইশাদ। আমার উপর দয়া করে হলেও একটু নিজেকে সামলা। আন্টির কথা ভাব। উনি একা তোদের দুজনকে কী করে সামলাবে? ”
ইশাদ একটু স্থির হলো। ইমদাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে প্রশ্ন করল,
” দুজন বলতে? আর কার কথা বলছিস? ”
ইমদাদ ভেবেছিল বাবার অসুস্থের কথা আজ বলবে না। পরে পরিস্থিতি বুঝে বলবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ইশাদকে স্বাভাবিক করতে হলে বাবার কথাটা বলতেই হবে। সে নিশ্বাস আটকে বলল,
” তোর বাবার হার্টে অ্যাটাক হয়েছে। আন্টি সে খবর শুনেই ওভাবে বেরিয়ে গিয়েছিল। ”
ইশাদ পলকহীন চেয়ে থাকল ইমদাদের দিকে। তার কেমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করা উচিত সে দ্বিধায় ভুগছে। বিভ্রান্ত চাহনি হঠাৎই চঞ্চল হয়ে উঠল। ইমদাদ কিছু বোঝার আগেই সে ছুটে বেরিয়ে গেল। মায়ের কাছে গিয়ে আচমকা থেমে যায়। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে জিজ্ঞেস করে,
” বাবা কেমন আছে, আম্মু? ”
স্বামীর কথা উঠতে তিনি আবার অস্থির হয়ে পড়লেন। মাত্রাহীন দুশ্চিন্তায় সবকিছু অসহণীয় হয়ে পড়ল। করুণ বদনে কিছু বলার আগেই ইমদাদ বলল,
” উনি ঠিক আছেন। ”
ইশাদ পেছন ঘুরে বিরক্তে বলল,
” তুই একটু চুপ থাকবি? তখন থেকে এক কথায় বলে যাচ্ছিস। তুই কী করে বুঝবি আপন মানুষের একটু খারাপ থাকায় কেমন লাগে! ”
ইমদাদ চোখ নামিয়ে ফেলল। অন্য দিকে তাকিয়ে এক কদম পেছনে সরে গেল। একটা সুক্ষ্ম ব্যথা টের পেয়েও তাকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।
মায়ের কাছ থেকে সবটা শোনার পর ইশাদের দুঃচিন্তা সিকি পরিমাণ কমল।
_________
তিহি বিপদমুক্ত হতে তাকে আইসিইউ থেকে বের করে অচেতন অবস্থায় কেবিনে রাখা হলো। তাকে কেবিনে রাখার পর থেকে ইশাদ পাশেই বসে ছিল। কখন সকাল হলো, দুপুর হলো খেয়াল নেই। শাহিনা শাইখা কিছু খাওয়ার জন্য চাপাচাপি করে ব্যর্থ হলেন। সে অবস্থায় স্বামীকে দেখতে গেলেন। দুপুরের রোদ প্রায় পড়ে এসেছে, এমন সময় তিহির জ্ঞান ফিরল। পিটপিট চোখে তাকাতে দেখল তার হাত ধরে একটা ছেলে বসে বসে ঘুমাচ্ছে। সে অবাক হলো, ভয় পেল। চট করে নিজের হাত টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে মাথা তুলল। অন্য দিকে চেপে যেতে হতে ইশাদ চোখ মেলল। আদুরে গলায় বলল,
” তিহিপাখি! তোমার ঘুম ভেঙেছে? দাঁড়াও আমি ডাক্তার….”
” কে আপনি? ”
ইশাদ বসা থেকে দাঁড়িয়েছে সবে তখনই তিহি পৃথিবী থমকে দেওয়া প্রশ্নটি করে বসল। ইশাদ অবাক হয়ে দেখল তিহির চোখে ভয়! নিজেকে লুকিয়ে ফেলার এক অদম্য চেষ্টা চলছে। সে অবস্থায় কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,
” আপনি আমাকে ছুঁয়ে ছিলেন কেন? ”
মুহূর্তে তিহির চোখদুটি ছলছল হয়ে উঠল। কক্ষের চারপাশ দেখার জন্য একটু নড়তে হাতে সুচের টান লাগল। সে ব্যথায় আহ! করে উঠতে ইশাদ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তার থমকে যাওয়া অনুভূতিটুকু সতর্ক হয়ে বলল,
” নড়ো না, ব্যথা পাবে। ”
তিহি ইশাদের কথা শুনল। নড়াচড়া বন্ধ করে অসহায় গলায় জিজ্ঞেস করল,
” আপনি ডাক্তার? ”
ইশাদ ছোট্ট করে বলল,
” হ্যাঁ। ”
তিহি আগ্রহ নিয়ে পরের প্রশ্নটা করল,
” আমাকে এখানে কে এনেছে? ”
ইশাদ উত্তর দেওয়ার সময় পেল না তার আগেই তিহি বলল,
” তাজ এনেছে? ”
ইশাদ আর উত্তর দিতে পারল না। গলার ভেতরটা কেমন ব্যথা করে উঠল, বুকটা ভার হয়ে আসল। এক পলকে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবগত হয়ে গেল।
তিহি দরজার দিকে চোখ রেখে ফিসফিসে বলল,
” ও কি জেনে গেছে আমি বেঁচে আছি? ”
ইশাদ যান্ত্রিকের মতো বলল,
” না। ”
উত্তর শুনে আচমকা ইশাদের হাত টেনে ধরল তিহি। অনুরোধের সুরে বলল,
” আমার একটা কথা রাখবেন? ”
তিহির এই আচরণে ইশাদ চমকাল না। স্বাভাবিকভাবে বলল,
” কী অনুরোধ? ”
তিহি সাথে সাথে বলল,
” তাজকে বলবেন না, আমি বেঁচে আছি। বলবেন না তো?”
” তাজ নেই। ”
তিহি অবাক হয়ে বলল,
” নেই মানে? ও বাইরে দাঁড়িয়ে আমাকে পাহারা দিচ্ছে না? ”
” না। ”
” কেন? ”
” পাহারা দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। ”
তিহি একটু থামল। হঠাৎ বলল,
” মরে গেছে? ”
ইশাদ এবার হকচকিয়ে গেল। তাজ বেঁচে আছে নাকি সে জানে না। তাই বলে কি সরাসরি মৃত ঘোষণা করে দিবে? তার বিবেকে বাঁধা দিল। বলল,
” জানি না। ”
তিহির দীপ্তিময় মুখটা দ্যুতি হারিয়ে ফেলল। সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করল,
” জানেন না কেন? ”
” কারণ, এই হাসপাতালে আমি শুধু তোমাকে দেখেছি। আর কাউকে না। তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। হয়তো হারিয়ে গেছে। ”
রুকমিনি মুখার্জি হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করায় তিহি-ইশাদের কথপোকথন এখানে থেমে গেল। তিনি তিহির পুরো শরীরে হাতিয়ে বললেন,
” এসব কিভাবে হলো? ”
তিহি প্রথমে চুপ করে থাকলেও এবার কথা বলল,
” আপনি তাজের মা? ”
রুকমিনি মুখার্জি অশ্রু ফেলা বন্ধ করলেন। একবার ইশাদের দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে এনে বলল,
” হ্যাঁ। ”
” আমি চিনতে পেরেছি। আপনাদের ছবি দেখেছিলাম। ”
” ছবি! ”
রুকমিনি মুখার্জির কণ্ঠ থেকে বিস্ময় ঝরে পড়তে ইশাদ এদিকটায় হেঁটে আসল দ্রুত। তার কাঁধে হালকা ছুঁয়ে বলল,
” বাইরে আসুন, কথা আছে। ”
রুকমিনি মুখার্জি কিছুই বুঝতে পারছেন না। তিহির দিকে তাকিয়ে আড়ষ্টভঙ্গিতে বাইরের দিকে হাঁটা ধরলে তিহি বলল,
” আপনাদের কারও কাছে ফোন আছে? আমার বাসায় একটু কল দিতাম। ”
ইশাদ নিজের ফোনটা তিহিকে দিলে সে খুশি হলো। ধন্যবাদ দিয়ে ফোনে মনোযোগ দিল। কয়েকটা নাম্বার তুলে ইশাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আপনার নামটাই তো জানা হলো না। দরকার হলে কী বলে ডাকব? ”
” মি. ইশ। ”
তিহি কপাল কুঁচকে সুধাল,
” মি. ইশ নাকি ড. ইশ? ”
ইশাদ ক্লান্ত হেসে অপরিচিত গলায় বলল,
” আপনার যেটা ভালো লাগে। ”
চলবে