তোমার স্মৃতি পর্ব -১২+১৩

#তোমার_স্মৃতি
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

আজিজ সাহেবের মুখটা থতথতে দেখে নিবিড়ের বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো।

আজিজ সাহেব চিন্তিত কন্ঠে বলল “আচ্ছা নিবিড় সানজিদা কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত ছিল।”

রেহেলা বেগম বলে উঠলেন “হ‍্যাঁ ও কয়েকদিন কেমন যেন চিন্তিত দেখাচ্ছিল কেন কি হয়েছে ওর?”

আজিজ সাহেব ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল “ওর অবস্থা তেমন একটা ভালো না। ওর চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে হবে। আর ওর দিকে খেয়াল রাখতে হবে ও যেন কোনো চিন্তা না করে। আর নিবিড় তুমি তো বুঝতেই পারছো। কি কি করতে হবে আর কি কি করতে হবে না।” তিনি কথা থামিয়ে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এনে বলল “ইয়াংম‍্যান নিজেকে একটু শক্ত করো। সামনে কি হতে চলছে ওই আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবেনা। যখন তখন যা তা হতে পারে।”

আজিজ সাহেবের কথা শুনে বুকে রক্তক্ষরণ হতে শুরু হয়েছে নিবিড়ের। শ্বাস যেন আটকে আসছে তার। আচ্ছা সানজিদা কি হারিয়ে যাবে তার কাছে থেকে। ভাবতেই নিবিড় না বলে একটা চিৎকার দিয়ে বসে পরলো মেঝেতে। রেহেলা বেগম ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। ছেলেকে টেনে নিলো নিজের বুকে। হু হু করে কেঁদে দিলো নিবিড়। নিবিড়ের কান্নায় চারপাশের মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। শশী পাথর হয়ে গিয়েছে যেন। সে কি বলবে বা করবে বুঝতে পারছেনা। মাথাটা ভনভন করছে। সব কিছু শূন্য শূন্য লাগছে। চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে। আজিজ সাহেব নিবিড়ের কাছে এসে ওর কাধে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বলল

“নিজেকে স্বাভাবিক করো নিবিড়। সবাই যদি ভেঙে পরে তাহলে সানজিদাকে কে সান্ত্বনা দিবে বলো। ও আরও ভেঙে পরবে তোমাদের এমন অবস্থা দেখে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সানজিদার জ্ঞান ফিরবে। নিজেদের স্বাভাবিক করে নেও।”

নিবিড় ফট করে উঠে দাড়ালো। আজিজ সাহেবের হাত আকড়ে ধরে বলল “স‍্যার আমার সানজিদাকে লাগবেই লাগবে। আমি দেড়ি করতে চাইনা। আপনি ব‍্যবস্থা করুন আমি নিয়ে যাবো বিদেশে সানজিদাকে।”

প্রায় তিনঘন্টা পর জ্ঞান ফিরলো সানজিদার। সে আশেপাশে তাকাতেই নিবিড়কে দেখতে পেল। নিবিড়কে দেখে সে চমকে গেল কি অবস্থা ছেলেটার। এইটুকু সময়ে কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে ছেলেটা। এতো কেন পাগলামি করছে ছেলেটা। সানজিদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিবিড় এসে ওর পাশের টুলে বসে মাথা নিচু করে বলল

“সরি”

সানজিদা কপাল কুচকে বলল “কিসের সরি!”

নিবিড় বলল “আজ আমার জন‍্যই তো তোর এই অবস্থা। আমি যদি ওমন না করতাম তাহলে আজ..”

নিবিড়কে থামিয়ে দিয়ে সানজিদা বলে উঠলো “ধুর পাগল তোর দোষ নেই এখানে। আমাকে নিয়ে টেনশন করিস না। আমি ঠিক আছি।”

হঠাৎ নিবিড় সানজিদার হাত ধরে হু হু করে কেঁদে দিলো।

সানজিদা বুঝতে পারছেনে কি বলবে সে নিবিড়কে। বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না সে। তখনই শশী প্রবেশ করলো সেখানে। শশী সানজিদার কাছে এসে বলে উঠলো “ভাইয়া”

নিবিড় চোখ তুলে একবার শশীর দিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছে নিয়ে চলে গেল কেবিন থেকে। ভালো লাগছে না তার। প্রচুর টেনশন হচ্ছে সানজিদাকে নিয়ে। সে সেখান থেকে বের হয়ে আজিজ সাহেবের কেবিনের সামনে এসে নক করলো। আজিজ সাহেব অনুমতি দিতেই নিবিড় কেবিনে প্রবেশ করলো। আজিজ সাহেব মাথায় হাত রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। নিবিড়কে আসতে দেখে তিনি একটা মলিন হাসি দিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বসলো। নিবিড়কে বসতে ইশারা করলেন। নিবিড়ও ধপ করে বসে পরলো। আজিজ সাহেব নিবিড়ে একটা হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বললেন

“তোমার আম্মু তোমার সবকিছুই আমাকে বলেছে। সানজিদাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আমি ব‍্যবস্থা করে ফেলেছি পরশু রাতে ফ্লাইট।”

নিবিড় বলল “স‍্যার আমি কি ওকে বাঁচাতে পারবো।”

আজিজ সাহেব থমকে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওনি গম্ভীর কন্ঠে বলল “দেখ নিবিড় আমি এর আগেও অনেক কেস দেখেছি। সাধারণত এমন রোগীকে বাঁচানো যায় না। তুমি যেহেতু বছর খানিক আগেই চাকরিতে জয়েন করেছ সেহেতু এতো সিরিয়াস কেস তোমাকে আমি দেইনি। এটাই প্রথম। তুমি তোমার কাজে সফল হচ্ছিলো। কিন্তু মাঝখানে যে কি থেকে কি হয়ে গেল। মাথায় অতিরিক্ত চাপ নেওয়ার কারণে অবস্থা খারাপ হয়েছে ওর। আরো কয়েকদিন পর অপারেশন করলেই হতো কিন্তু এখন আর উপায় নেই।

নিবিড় কিছু বলল না চুপ করে রইলো।

বিকেল হয়ে গিয়েছে সকাল থেকে সবাই না খেয়ে রয়েছে। তাই নিবিড় হাসপাতালের কেন্টিন থেকে ওর মা আর শশীর জন‍্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। রেহেলা বেগম জোর করে ওকে কিছু খাইয়ে দিলো। নিবিড় সানজিদার কেবিনে ঢুকে দেখলো সানজিদা ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটার মুখটা শুকিয়ে আছে। চোখের নিচে কালো দাগ পরে গিয়েছে। চুলগুলো পরে গিয়েছে। এতোদিন হিজাব বা ওড়না মাথায় পেচিয়ে রাখায় নিবিড় এই অবস্থা দেখতে পায়নি। সে এগিয়ে গেল সানজিদার কাছে। নিবিড় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানজিদার মুখপানে। কতক্ষণ তাকিয়ে ছিল তার জানা নেই। হঠাৎ একটা অনাকাঙ্ক্ষিত আশা বাসা বাধলো তার মনে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে তার সানজিদার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিতে। কেন যেন ইচ্ছেটা পূরণ করতে খুব মন চাইছে। সে তার এই অনাকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছা পূরণ করতে কাপাকাপা ঠোঁট নিয়ে গেল সানজিদার কপালের দিকে। আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে দিলো সানজিদার কপালে। ঠোঁট ছোয়াতেই তার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরলো। নিবিড় আরো কিছুক্ষণ সানজিদার দিকে তাকিয়ে চলে যেতে নিলো। তখনই হাতে টান অনুভব হলো তার। সে পিছু ঘুরে তাকাতেই দেখলো সানজিদা ওর হাত ধরে রেখেছে। সানজিদার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু খুব কষ্টে সে আধো আধো কষ্টে বলল

“আমাকে ভুলে যাহ না রেএ। আর কতো কষ্ট পাবি বল তো। আমি জানি ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট। প্লীজ গুছিয়ে নে না তোর জীবনটা। আমি জানি আমি আর ফিরতে পারবো না।”

সানজিদার কথা থামিয়ে দিয়ে নিবিড় চেচিয়ে বলে উঠলো “না তোকে ফিরতেই হবে এই নিবিড়ের জীবনে ফিরতেই হবে ফিরতেই হবে।” বলেই হনহন করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল নিবিড়।

সানজিদা কিছুক্ষণ নিবিড়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। পরক্ষণেই সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে কেবিনের ছোট জানালাটি দিয়ে বাহিরের দিকে তাকাল। ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার। সে বিরবির করে বলে উঠলো

জীবনটা কেন এমন হলো। অন‍্যরকম হলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত। রোহান তুমি যদি একটু ভালোবাসা দিতে আমায় তাহলে হয় তো আর এমন দিন আসতো না। নিবিড়ের জীবনটাও এমন এলোমেলো হয়ে যেত না। সবকিছু হয় তো ভালো থাকত। কেন এমন করলে রোহান। কেন করলে!” বলেই ফুপিয়ে উঠলো সানজিদা।

নিবিড়কে এমন করে বের হতে দেখে শশী অবাক হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলল “কি হয়েছে ভাইয়া আপনাকে এমন দেখা যাচ্ছে কেন!”

নিবিড় নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে “কিছু হয়নি” বলে চলে গেল সেখান থেকে। সন্ধ‍্যা হয়ে যাওয়ায় নিবিড় শশী আর রেহেলা বেগমকে জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। সে রাতে থাকবে সানজিদার কাছে।

সানজিদা ঘুমিয়ে আছে। রাত বাজে দেড়টা। নিবিড় এখনো জেগে আছে। আর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানজিদার মুখের দিকে। হঠাৎ নিবিড়ের ফোনটা বেজে উঠলো। নিবিড় কিছুটা বিরক্ত হলো। দুইবার বাজতে বাজতে থেমে গেল ফোন। আবার ফোনটা বেজে উঠলো তার। সে বিরক্ত হয়েই কলটা রিসিভ করলো। অপাশ থেকে একটা গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো

চলবে…..

( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)#তোমার_স্মৃতি
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

“কেমন আছেন ডাক্তার নিবিড়। এতো ভালোবাসা কেন বলুন তো। দোয়া করি পূর্ণতা পাক আপনাদের ভালোবাসা ”

নিবিড় কিছু বলতে নিবে তার আগেই কলটা কেটে গেল। সে বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে এসব। কে ছিলো ফোনের অপরপাশে। চিন্তায় পড়ে গেল সে। ভালো লাগছে না তার। কে ছিল লোকটা। কে! ভাবতেই নিজের মাথার চুল টেনে ধরলো সে। কিছুক্ষণ ওমন করে থেকে উঠে পড়ল সে। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ মুখে পানি দিলো সে। মাথাটা ধরেছে তার। একমগ কফি খেলে হয় তো ভালো লাগবে তার। তাই ভেবেই সে একমগ কফি নিয়ে এলো। কফির মগ নিয়ে দাড়ালো কেবিনের ছোট জানালার কাছে। আকাশে চাঁদ না থাকায় অন্ধকার হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কৃত্তিম আলো তে মানুষ আলোকিত করে রেখেছে। রাস্তা দিয়ে এখনো গাড়ির চলাচল রয়েছে। নিবিড় আকাশের দিকে দৃষ্টি রাখলো। কফিটা খেয়ে একটু ভালো লাগছে তার। সে ঝেড়ে ফেলল সবকিছু। কাল রাতে তাদের ফ্লাইট। কি হবে সব আল্লাহ জানে। সানজিদাকে চাই তার। যে করেই হোক না কেন! নিবিড় আরেক পলক সানজিদার দিকে তাকিয়ে আবার বাহিরে চোখ রাখলো। আচ্ছা মেয়েটা কি সুখের সন্ধান পাবেনা। অন্ধকারে কি পাবেনা একটু আলোর সন্ধান। রোহান কেন হঠাৎ পাল্টে গেল। কেমন যেন লাগছে ব‍্যপারটা নিবিড়ের কাছে। কি হয়েছিল তার।

নিবিড়ের ভাবনার মাঝেই ফজরের আজানের শব্দ ভেসে এলো তার কানে। নিবিড় ফ্রেস হয়ে হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত মসজিদে নামাজ পরতে গেল। সে সাধারণত নামাজ পরেনা। সময় সময় পরে। নিবিড় নামাজ শেষে মোনাজাত ধরলো। মোনাজাতে সে কেঁদে দিলো। তার এমন কান্না করা দেখে আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিন্তু সেটাতে তার কোনো হেলদোল নেই। সে যে ব‍্যস্ত তার সৃষ্টিকর্তার কাছে তার প্রিয় মানুষটাকে নেওয়ার আকুতি। দীর্ঘক্ষণ মোনাজাত শেষে নিবিড় আবার সানজিদার কাছে চলে গেল। কেবিনে শশীকে দেখে সে বলল

“একি শশী তুমি এতো সকালে কি করছো?”

শশী তার লাল চোখ নিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকালো। গম্ভীর কন্ঠে সে বলে উঠলো “সানজিদাকে না দেখে আমি থাকতে পারছিলাম না।” শশী নিবিড়ের কাছে এগিয়ে মাথাটা নিচু করে বলল “ভাইয়া আমার একটা কথা রাখবেন।”

নিবিড় কিছুটা অবাক হলো শশীর এমন কথায়। সে অবাক কন্ঠে বলল “এমন করে বলছ কেন শশী। কি হয়েছে কোনো সমস্যা।”

শশী ফুপিয়ে উঠল। ফোপাতে ফোপাতেই বলল “ভাইয়া প্লীজ সানজিদাকে আবার আগের মতো করে দিন। আমার মা বাবার পরে ওই আমার আপনজন। ওকে প্লীজ সুস্থ করে দিন।”

নিবিড় কি বলবে বুঝতে পারলো না। কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারলো না সে। সানজিদার ঘুম ভেঙে গেল। ও পিটপিট করে তাকালো। শশী এগিয়ে গেল সানজিদার কাছে। সানজিদা উঠে বসার চেষ্টা করলো। শশীর সাহায্যে উঠে বসলো। ইশারায় নিবিড়কে কাছে ডাকলো। নিবিড়ও বাধ‍্য ছেলের মতো সানজিদার কাছে এসে পরল। নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো সানজিদা। সানজিদা নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে বলল “তুই প্লীজ আমার বেস্টিকে দেখে রাখিস। ওর আপনজন বলে কেউ নেই। প্লীজ দেখে রেখ ওকে। প্রমিজ কর আমাকে দেখে রাখবে ওকে।”

নিবিড় সানজিদার হাতে হাত রেখে বলল “তুমি চিন্তা কর না আমি আছি তো। কিছু হবে না। এখন বাদ দেও এসব। এখন বল কেমন লাগাছে তোমার!”

সানজিদা মলিন হেসে বলল “ভালো এই দেখ তোরা একদম কান্নাকাটি করবি না। আমার ভালো লাগেনা এসব। একেকজন চোখমুখের কি অবস্থা করেছিস দেখ তো। এখন হাস তো দুইজন। তাছাড়া আমি কিন্তু আর কথা বলবো না তোদের সঙ্গে।”

দুইজনেই অনেক কষ্টে হাসলো। সানজিদা কাঁপাকাঁপা হাতে দুইজনের হাত ধরলো। তারপর মুচকি একটা হাসি দিলো।

নিবিড় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানজিদার দিকে। খুব ইচ্ছে করছে তার মেয়েটাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বসে থাকতে। কিন্তু কোথায় যেন এক বাধা কাজ করছে।

সানজিদা নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে বলল “আন্টি কোথায় রেএ তাকে তো দেখতে পারছিনা।”

নিবিড় কিছু বলতে নিবে তার আগেই রেহেলা বেগম কেবিনে এসে বলল “আমাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে তোর নিবিড়। আমি কতো করে বলছিলাম তোর কাছে থাকবো থাকতেই দিল না। বলে আমি নাকি অসুস্থ হয়ে যাবো। এটা কোনো কথা বল তো।”

সানজিদা মুচকি হেসে বলল “আচ্ছা বাবা হয়েছে এখন আসো তো আমার কাছে। আর নিবিড় শশী তোরা একটু বাহিরে যাহ তো। আমি আন্টির সঙ্গে একটু কথা বলবো।”

নিবিড় বলল “কেন আমাদের সামনেই বল কি হবে তাতে।”

রেহেলা বেগম চোখের ইশারায় ওদের যেতে বললে ওরাও কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সানজিদা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ল। তারপর রেহেলা বেগমের দিকে চোখ রাখলো। রেহেলা বেগম প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানজিদার দিকে।

সানজিদা মলিন হেসে রেহেলা বেগমের হাত ধরে বলল “আন্টি আমার একটা কথা রাখবে। প্লীজ না করবেনা বলো।”

রেহেলা বেগম কিছু বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ সানজিদা এমন কথা বলছে কেন মাথায় ঢুকছে না তার। তিনি বললেন “এমন করে বলছিস কেন মা। তুই কিছু বলবি আর আমি রাখবো না এমনটা কি হয় বল তো।”

সানজিদা বলল “এবার আমি যা চাইবো তাই দিবে প্রমিজ করো।”

রেহেলা বেগম আর কিছু না ভেবে বললেন “আচ্ছা ঠিক আছে রাখবো বল এখন কি কথা।”

সানজিদার কথা শুনে তব্দা মেরে বসে রইলো রেহেলা বেগম। কি বলবে বুঝতে পারছেনা সে। চোখ ছলছল করছে তার। সে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরলো সানজিদাকে। সানজিদাও ফুপিয়ে উঠলো।

——————

আর কিছুক্ষণ পর ফ্লাইট। ওরা সবাই এয়ারপোর্ট এ বসে আছে। রেহেলা বেগমের থম মেরে বসে আছে। শশী কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। আর নিবিড় সে তো না পারছে কিছু বলতে না পারছে সহ‍্য করতে। চোখ মুখে তার এক অন‍্যরকম গম্ভীরতা। সানজিদার চোখ থেকে অঝোরে পানি পরছে। সে কি আর পারবে এই দেশের মাটিতে পা রাখতে। সে কি ফিরতে পারবে তার চেনা লোকজনের কাছে। চোখ বন্ধ করে ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। তার শেষ ইচ্ছাটা তো সেই দিনই পূরণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু একটা কথা অজানাই রয়ে গেল তার। রোহান কেন তাকে ছেড়ে দিলো। হঠাৎ তার পরিবর্তনের কারণ কি ছিলো। সে কি জানতে পারবেনা কখনো।

————–

অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে দাড়িয়ে আরো একবার আল্লাহর নাম নিয়ে নিলো নিবিড়। আজ অপারেশন থিয়েটারেরই থাকবে সে। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে তার। কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে সে পাশে তাকাতেই দেখলো আজিজ সাহেব। আজিজ সাহেব নিবিড়কে ইশারায় থিয়েটারের ভিতরে যেতে বলল। নিবিড় সবকিছু ঝেড়ে ফেলে থিয়েটারের ভিতরে প্রবেশ করলো। কেমন জানি অস্থিরতা কাজ করছে নিবিড়ের মাঝে। তার কি সুযোগ হবে একমগ কফির সঙ্গী হিসেবে সানজিদাকে পাশে পাওয়ার। সুযোগ হবে কি সানজিদার সঙ্গে শীতের সকালে শিশির বিন্দুর উপর হাঁটার। সুযোগ হবে কি জোছনা বিলাস করার সুযোগ। সুযোগ হবে কি মায়াবতীর মুচকি হাসি পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকার। সুযোগ হবে কি ঘুমন্ত পরীটার মুখপানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার। সুযোগ হবে কি ভালোবাসার পূর্ণতা দেওয়ার। আর ভাবতে পারছেনা নিবিড়।

চলবে…..

( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here