তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -১৯

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৯.
চারদিকে শীতল হাওয়া বইছে অন্ধকারে ঝিঁঝিঁ পোকাদের ডাক রাতের নিস্তব্ধতার মধ্যে ভরিয়ে রেখেছে। বেলা এখনও স্তব্ধ হয়ে বসে আছে সাঁঝের কোলে আর তাকে নিজের সাথে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ঘাড়ে অধর চেপে রেখে আছে সাঁঝ। দুজনেই আজ স্তব্ধ হয়ে আছে জীবনের অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেলা একটু আগে সাঁঝের বলা প্রতিটা কথা শুনে প্রত্যেকটা ঘটনার সাথে মেলাতে চেষ্টা করে তবে সেখানে এতদিনে রাগ অভিমান আর ভুলের স্তূপ জমা থাকলেও আজ সব হিসাব প্রথম থেকে মেলানোর পর সেখানে শুধু সাঁঝের জন্যে জমানো ভালোবাসা দেখতে পায় যেখানে এতদিন সাঁঝের প্রতি রাগ আর যে অভিযোগ ছিল এখন দেখতে পাচ্ছে সেটা শুধু তার বোঝার ভুল ছিল আর কিছুইনা সেখানে তার ভুল বোঝার অভিযোগ করার কোনো ঘটনায় খুঁজে পাচ্ছে না। আর সেদিনের ঘটনার জন্যে সে কোনো ভাবেই সাঁঝকে দোষারোপ করতে পারেনা সেটা এর আগেও বেলা কখনো মন থেকে বিশ্বাস করেনি আর আজ তো তার কাছে পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেছে। না তার মনে আর কোনো ভুল বোঝা বা কোনো অভিযোগ নেই সেই ঘটনা নিয়ে তবে হ্যাঁ সব হিসাব মেলানোর পর জমা হয়েছে সাঁঝের উপর জমা হয়েছে প্রচণ্ড অভিমান আর রাগ সেই ঘটনা সে মন থেকে কখনই বিশ্বাস করেনি কিন্তু সাঁঝ নিজেই কোনো কথা বলেনি বা তার মনের মধ্যে থাকা সন্দেহ দূর করেনি বরং সে দূরে যেতে চাইলেই তাকে দূরে যেতে দিয়েছে তাকে দূরে করে রেখেছিলো ভাবতেই রাগে গা শিরশির করে ওঠে। বেলার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে একের পর এক অশ্রুকনা যখন বেলার ধারণা ভুল প্রমাণ করার ছিল তখন দূরে রেখে এখন তাকে ভুল প্রমাণ করতে এসেছে এতটা বছর দূরে রেখে কষ্ট দিয়ে এখন ভালোবাসে এসেছে চায়না তার। সে কিছুতেই ক্ষমা করবেনা সাঁঝকে এত তাড়াতাড়ি আর আসল ঘটনা সে খুঁজে বের করবেই।

বেলার গলার উপরে ঘুরিয়ে জড়িয়ে রাখা সাঁঝের হাতের উপর ভেজা অনুভব হতে সাঁঝ সচকিত হয়ে যায়। মাথা ঘুরিয়ে দেখে বেলার গাল ভেজা কাঁদছে বেলা। সাঁঝ তাড়াতাড়ি করে বেলাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় নিজের ওষ্ঠের সাহায্যে বেলার চোখের পানি শুষে নেয়। দুই চোখের উপরে নিজের অধর ছুয়ে দেয়। বেলা ফুফিয়ে উঠে সাঁঝের বুকে কিল ঘুষি বসিয়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। সাঁঝ বেলার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বুঝতে পারে তার বউ অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। আগের এত বছরের অভিমান কেটে গেলেও এই অভিমান এত তাড়াতাড়ি কাটার নয় এই অভিমান ভাঙতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে ভেবেই সাঁঝের মুখে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।

-“তোমার অভিমান জমিয়ে রাখো এখন চলো রাত হয়েছে কাল সকালে অফিস আছে ঘুমাতে হবে প্রতিদিন একটু একটু করে তোমার অভিমান ভেঙে দেবো আর কিছু উত্তর না বাকি থাক পরে দেওয়া যাবে। সাঁঝ মৃদু হেসে বেলার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে বলে ওঠে।

বেলা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারেনা শেষে সাঁঝের বুকে মাথা গুঁজে দেয় সাঁঝ আলতো হেসে বেলাকে নিয়ে রুমে ঢুকে গ্লাস টেনে দিয়ে বিছানায় শুয়ে বেলাকে নিজের বুকে টেনে নেয়। আজ এত বছর তার বুকটা শান্ত হয়েছে আজ সে পরিতৃপ্ত এত বছর তার বুকটা খাঁ খাঁ করেছে তবে আজ তার বুক ভরে গিয়েছে শান্ত হয়েছে বেলার স্পর্শে। বেলা নিজের বুকের সাথে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়, বেলাও এতদিন পর নিজের মনের মধ্যে থাকা সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি সমাপ্তি করে নিজের ভালোবাসার মানুষের বুকে মাথা রাখতে পেরেছে তার এতদিনের সমস্ত রাগ অভিমান ধুয়ে মুছে গেছে তার মানুষটা তারই আছে এটাই তার শান্তি। তবে আজকের জমা অভিমান কমবে না এত সহজে সাঁঝকে এত তাড়াতাড়ি কখনই রেহাই দেবেনা এবার বেলাও সাঁঝকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে রাগ করবে এতদিন যে জ্বালায় সে জ্বলেছে এবার সাঁঝের পালা।

—————

সকালে সাঁঝের আগেই বেলা উঠে গিয়েছে সাঁঝের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের পরিকল্পনা মাফিক প্ল্যান করে নেয় কিভাবে কিভাবে সাঁঝকে জব্দ করবে। সাঁঝ ঘুম থেকে উঠে রুমে বেলাকে না পেয়ে ফ্রেশ হয়ে একবারে রেডি হয়ে নিচে নেমে যায় সেখানে গিয়ে দেখে বেলা আগের থেকে রেডি হয়ে বসে আছে। সাঁঝের সাথে চোখে চোখ পড়তেই বেলা চোখ ঘুরিয়ে নেয়। ডাইনিং টেবিলে বেলা নানীমা বসে আছে সাঁঝের জন্যে সাঁঝ এসে নানীমাকে জড়িয়ে ধরে তারপরই বেলার পাশেই বসে পড়ে। বেলা নিজেই চুপ করে খেতে থাকে কিন্তু সাঁঝ আর তার নানীমা নন স্টপ বকবক করে যাচ্ছে বেলা মুখ বেকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে।

-“বেলা হয়েছে তোর? বলতে বলতে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে থেমে গেছে শান্তা।

সে অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে বেলা সাঁঝ আর নানিমার দিকে অবাক বিস্ময় হয়ে গেছে এই দৃশ্য দেখে। এদিকে শান্তা কে হঠাৎ করেই এখানে এসে এমন থামের মত করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারে শান্তার এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ। বেলা চুপ করে বসে থাকে বুঝতে পারে এবার তার দিকে প্রশ্নের ঝড় এসে নামবে।

-“কিরে শান্ত এত শান্ত হয়ে গেলি কেনো? আর বেলা টায় বা কোথায় এখনও রেডি হয়নি নাকি? রুহি ডাকতে ডাকতে ভিতরে আসে।

রুহির পিছন পিছন সারা ওম বেদ নিশান ও এসে দাঁড়ায় শান্তার মত তাদেরও চোখ গোল গোল হয়ে আছে তারা অবাক ও বিস্ময় ভরা চোখে সামনে বেলার পাশে বসে থাকা সাঁঝকে দেখতে থাকে। বেলা ওদের দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও মুখে সেই ভাব আসতে দেইনি তবে সেটা সাঁঝের বুঝতে বাকি নেই তবে সাঁঝ একদম নির্বিকার ভাবে বসে নানিমার সাথে গল্পে মশগুল হয়ে খেয়ে যাচ্ছে যেনো সে জানে না এখানেই কেউ এসেছে কি।

-“ভাইয়া তুই এখানে? সারা বিস্মিত হয়ে বলে ওঠে।

সারার ডাক শুনে সাঁঝ এবার ঘুরে তাকায় দেখে তার বোন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। সারা জানে প্রতি সপ্তাহে তার ভাই কোথাও চলে যায় দু তিন দিনের জন্যে বাড়ি ফেরেনা কালকেও তাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল তাহলেই কি প্রতি সপ্তাহে তার ভাই এখানেই আসতো কিন্তু কেনো সারা সব কিছু বুঝতে পারলেও তার উত্তর পায়নি তাছাড়া তার হিসাব ঠিক কিনা জানার জন্যে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“তারমানে তুই এখানে আসার জন্যে কালকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলি কিন্তু কেনো ভাই?

সারার কথার মধ্যে পিচ্চি রিয়া এসে উপস্থিত হয়ে যায় সাথে আরো কিছু পিচ্চি বাহিনী রিয়া সোজা সাঁঝের কাছে গিয়ে তার হাত জড়িয়ে ধরে সাঁঝ বসে থাকলেও তাকে ধরা রিয়ার কাছে বড়ই কঠিন তার হাত পর্যন্ত ঠিক আছে তবে রিয়ার বলা কথা সবাই কে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

-“তিতুভাইয়া তুমি আমাল জল্যে তককেট নিয়ে আতবে।

সবাই অবাক হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বোঝার চেষ্টা করে ওই বাচ্চা মেয়েটা সাঁঝকে কি বলে সম্বোধন করলো তারা কি যেটা ভাবছে সেটাই নাকি অন্য কিছু সবাই ভ্রু কুঁচকে বেলার দিকে তাকায় বেলা ওদের দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে লুক দেয় এতে বাকি গুলোর মনে সন্দেহ আরো প্রকট হয়।

-” জিজুভাইয়া আমার জন্যে ও আনবে। আরো একটা বাচ্চা স্পষ্ট ভাবে বলে ওঠে।

আর এটা শুনেই তারাও বুঝতে পারে তাদের ভাবনা ঠিক কিন্তু এটা কি করে সম্ভব সেটাই ভেবে পায়না। সারা তার ভাইয়ের দিকে প্রশ্ন চোখে তাকায়।

-” শ্বশুর আসবো তার জন্যে কেনোর কি আছে সারা শ্বশুর বাড়ি আসতে কি কারো মানা আছে নাকি। সাঁঝ তার বোনের দিকে তাকিয়ে ঘুরিয়ে উত্তর দেয় সে জানে তার ভীষণ বুদ্ধিমত্তি তার আর বুঝতে অসুবিধা হবে না।

সাঁঝের কথা শুনে বাকিরা যেনো আকাশ থেকে পড়েছে সবাই একবার বেলার দিকে দেখে তো একবার সাঁঝের দিকে তাকায়। সারা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-“তারমানে বেলা…

-” বেলা তোর ভাবি আমার একমাত্র দুইবার বিয়ে করা বউ। সাঁঝ হেসে সারার কথার মাঝে বলে ওঠে।

সাঁঝের বলা কথা বাকিদের কাছে বজ্রপাতের মত করে শোনায় সবাই বিস্ময় নিয়ে বেলার দিকে তাকায় আর বেলা অসহায় হয়ে বাকিদের দিকে তাকায়।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

(বিঃদ্রঃ – পরের পর্ব থেকে অতীতের পাতা একটু একটু করে খুলবে তাই অবশ্যই জানতে হলে পড়তে থাকুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here