তোর চোখে আমার সর্বনাশ
১৩.
বর্ষা মৌসুম বিদায় নিতেই কিছু দিন আবার শুরু হল গরমের উত্তপাত। দেশ এখন তিন ঋতুর দেশ। বর্ষা , শীত , গ্রীষ্ম। এই বর্ষা কাল গেলে এখন শরৎ কাল। প্রকৃতি হওয়ার কথা ছিল এমন শরৎ কালে কাশের দোলা , আকাশে মেঘের ভেলা। বাংলা মাস ভাদ্র আশ্বিন এই দু’মাস শরৎ কালের মাস। কিন্ত দেখ বর্ষা কালই গেল ভাদ্র মাসের শেষর দিকে। এখন আশ্বিন মাস চলছে। আগের মতো সব দিকে কাশ বনে ভরা না থাকলে ও। মাঝে মাঝে কয়েক টা জাগায় আছে। তীব্র রোদের মধ্যে রাস্তার মাঝখান টায় দাঁড়িয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছে ফারাহ্। এত এত গাড়ি আসছে আজকে রাস্তা পার-ই হতে সক্ষম হচ্ছে না। কলেজ শেষ করে সানজিদাদের বাসায় যাচ্ছে। রিয়ান যেতে বলে ছিল আজকে। সাপ্তাহ খানিক আগে রিয়ান দেশে চলে আসে একেবারের জন্য। তাই সানজিদা , সানা , শামীম , রিশাব সহ রিয়ানদের বাসায় ফিরে গেছে। আজকে হঠাৎ করে বলল ওই বাসা থেকে ঘুরে আসতে। না করতে পারে নি এমন ভাবে বলেছে রিয়ান। কোন রকম রাস্তা পার করে রিকশায় চড়ে বসে। আজকে গাড়ি নিয়ে আসে নি ইচ্ছে করেই। প্রতি দিন গাড়িতে চড়তে ভালো লাগে না। রিকশা চলছে আপন গতিতে। রাস্তার বাম সাইডে চলছে রিকশা সে সুবাদে এত রোদ লাগছে না। গাছের ছায়া আছে বলে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দশ তালা বিল্ডিং টা-য় ডুকে লিফটে উঠল। সানজিদাদের ফ্ল্যাট ছয় তালা। ছয় তালায় এসে ডোর বেল বাজানোর কিছুক্ষণ পর শামীম এসে ডোর খুলে দিল। ফারাহ্ কে দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠে ,
” আম্মু খালামনি এসেছে। ”
সানজিদা কিচেন থেকে হাঁক ছেড়ে বলল ,
” বসতে বল ওকে , আমি ঠান্ডা কিছু নিয়ে আসছি। ”
ফারাহ্ সোফায় বসে টিস্যু দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে শামীমের উদ্দেশ্যে বলল ,
” বাবা পাখা টা আরেক টু বাড়িয়ে দাও তো। ”
শামীম হেসে পাখা বাড়িয়ে দিয়ে ফারাহ্’র পাশে বসল। টিভিতে মটু পাতলু চলছে। ফারাহ্ শামীমে ছোট ছোট চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল ,
” সানা , রিশাব ভাই , তোমার আব্বু এরা কোথায়? ”
” সানা ঘুমাচ্ছে , চাচ্চু অফিস থেকে আসছে একটু আগে বলে ছিল আর আব্বু কোর্টে আজকে কেস আছে বলল। ”
কিচেন থেকে সানজিদা আসতে আসতে বলে উঠে ,
” নাহিয়ান কে বলে এসেছিস? ”
” না আপু কাউকেই জানানি , জানাবো কিন্তু কেনো আসতে বললে সেটাই তো জানি না। ”
” রিশাবের জন্য পাত্রী দেখতে যাবো আজকে তোর দুলাভাই কোর্টে আসতে পারবে না। আমার একা যেতে ইচ্ছে করছে না তাই তোকে আর সুফিয়ান কে ডাকলাম। তোরা দু’জনে তো দুপুরের পর ফ্রী হয়ে যাস। সুফিয়ান ভার্সিটিত থেকে আসবে একটু পরই। ”
” ওহ। ”
” নে লেবুর শরবত টা খা , আমি পুডিং নিয়ে আসছি। ”
” ওয়াও পুডিং! তাও তোমার হাতের বানানো উফফফ তারাতাড়ি আনো তো। ”
” আনছি। ”
সানজিদা মুখে হাসি রেখে কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে পুডিং নিয়ে এলো। ফারাহ্ তৃপ্তি মিটিয়ে খাচ্ছে৷ সানজিদার হাতের পুডিং খুব পছন্দ শুধু ওরই নয় সারাফাত ম্যানসনের সবার। আরেক বার ডোর বেলের শব্দ শুনে শামীম গিয়ে ফের ডোর খুলল। সুফিয়ান মুচকি হেসে বলল ,
” মামা কি অবস্থা? ”
” আলহামদুলিল্লাহ , তুমি কেমন আছো? ”
” বিন্দাস রে ভাগিনা। ”
সোফায় বসে ফারাহ্’র থেকে পুডিং -এর প্লেট টা টেনে নিয়ে রসিকতার সাথে বলল ,
” খালি খাস। ”
ফারাহ্ এই কথা পাত্তা না দিয়ে চাপা গলায় বলল ,
” ওই তুই আমার পুডিং নিলি কেনো? ”
” পুডিং -এ কি তোর নাম লেখা আছে? ”
” লেখা না থাকলে নাই , ওটা আমাকে দিয়েছে আমার। ”
” তোকে দিলেই তোর হয়ে যাবে? ”
” সুফিয়ান তুই মেয়েটার সাথে না লাগলে হয় না? ”
বলেই অন্য এক প্লেট সুফিয়ানের দিকে এগিয়ে দিল। সুফিয়ান ফারাহ্’র অর্ধেক খাওয়া টা পুরো শেষ করে। ওর জন্য রাখা টা নিল। সানজিদা ফারাহ্ আরেক টা প্লেট দিল। এবার দু’জনে চুপচাপ খেতে থাকে। টিভি তে এখন S চ্যানেল চলছে। যেখানে ভারতী গানে মাতানো থাকে। দেবের সিনেমার গানের সাথে মুহূর্ত টা ও সুন্দর হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে রিশাব চলে আসে। বিকালের দিকে পাত্রী দেখতে বের হল ওরাহ। গাড়ি থেকে নেমে ফারাহ্ হতবাক হয়ে কিছু সময় ভালো করে তাকিয়ে থেকে সুফিয়ান কে বলল ,
” বাড়ি টা কেমন চেনা চেনা লাগছে। ”
” লাগবেই তো তোর কি অচেনা কিছু আছে। ”
ফারাহ্ কটমটে চোখে চাইলো সুফিয়ানের দিকে। সানা যদি ওর কোলে না থাকতো এখন কয়েক টা দিত ইচ্ছে মতে। পাত্রীরদের বাসায় ঢুকার পর আরো চেনা চেনা লাগছে ফারাহ্’র কাছে। ও কি আগে কখন ও এখানে এসেছিল? হয় তো কিন্ত কি করে? কখন? কিভাবে? অতসত ভাবনার মাঝেই পাত্রীর এন্ট্রি। সুফিয়ান হা করে তাকিয়ে আছে আর ফারাহ্ সে তো শূন্যে ভাসছে। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে। বা হাত দিয়ে ডা হাতে চিমটি টাকলো। না অনুভব হল না তার মানে এটা স্বপ্ন। সুফিয়ান ভড়কে গিয়ে বলল ,
” ওই তুই আমায় চিমটি কাটছিস কেনো? ”
হকচকিয়ে উঠে ফারাহ্ হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে সুফিয়ানের হাতে চিমটি কেটে ধরের রেখেছে। দ্রুত হাত সরিয়ে নিল। সুফিয়ান আফসোস সুরে ফের বলল ,
” রা’ক্ষ’সী দাগ ফেলে দিলি একদম। ”
কথার দিকে খেয়াল নেই ফারাহ্’র সে পাত্রীকে দেখতে ব্যস্ত। পাত্রী চোখ তুলে একবার সবাইকে দেখে নিয়ে চোখ নাহিয়ে নিতে গিয়ে ও নামালো না ফারাহ্ তেই দৃষ্টি আবাদ্ধ হয়ে গেছে।দু’জনেই চোখাচোখি।
_
ফারাহ্ এক মনে আপেল চিবুচ্ছে। তার পাশে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়া। আজকে সে কলেজে যাই নি। কারণ পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে তাকে তাই। ফারাহ্ গত কাল জিজ্ঞেস করছিল যে কেনো কলেজে যাবে না। প্রিয়া উত্তর দিয়ে ছিল এর পরে দিন গেলে বলবে। আর আজকে পাত্রী হল প্রিয়া। পাত্র পক্ষ ফারাহ্। হল রুমে সুফিয়ান কে দেখে ও বেশ অবাক হয়ে ছিল। পরে জানতে পারে সুফিয়ান ফারাহ্’র জেঠাতো ভাই। পাত্রের ভাবীর আপন ভাই। দীর্ঘ সময় প্রিয়া মুখ খুলল ,
” উঁহু…বলছিলাম কি__”
” আগামী কাল কলেজে গেলে কথা হবে পাত্রী! পাত্রীর মতো থাক। ”
প্রিয়া আর কিছু বলতে গিয়ে ও বলল না। সানজিদা আসায়। প্রিয়া কে খুব পছন্দ হয়েছে রিশাবের সাথে সানজিদার ও। বিয়ের কথা অর্ধেক পাকাপোক্ত করে গেলো। বাকি টা বড়’রা মিলে করবে। যেহেতু রিশাবের বাবা-মা কেউ নেই। তাই সারাফাত ফ্যামিলি বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করবে। প্রিয়াদের সবার কাছ থেকে বিদায় নিল ফারাহ্’রা। আসার সময় প্রিয়ার কানে কানে বলে ছিল সুফিয়ান ,
” ভালো থাকবেন ঝু’গু’টে হবুভাবি সাহেবা। ”
অন্য সময় হলে রেগে যেত প্রিয়া। কিন্তু সুফিয়ানের কথা বলার স্টাইল দেখে রা’গ না এসে মুচকি হাসি ফুটলো মুখে। ফারাহ্ গাড়িতে বসে ভাবছে , ও খুব ছোট বেলায় একবার প্রিয়াদের বাসায় এসেছিল। আর আসে নি তাই আজকে এমন চিনা চিনা লেগেছে। সুফিয়ান , ফারাহ্ মিলে সারাফাত ম্যানসনে চলে আসে। রাত আটা বেজে গেছে ওরা আসতে আসতে। রুমে ডুকে নাহিয়ান কে চোখে পড়ল সবার আগে। অফ হোয়াইট স্যান্ডো গেঞ্জি সাথে চকলেট কালারে থ্রি কোয়ার্টার। চুল গুলো এলোমেলো। গালে চার পাঁচ দিনের শেভ না করা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। বিন ব্যাগে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আলগোছে এগিয়ে গেলো নাহিয়ানের দিকে। নাহিয়ান ফারাহ্ হাত ধরে কোলে বসিয়ে দিল। ফারাহ্’র কোলের উপর ল্যাপটপ রাখল। ফারাহ্’র কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে ফের ল্যাপটপে কাজ করতে শুরু করে। ফারাহ্ চওড়া হাসলো। ল্যাপটপ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলল ,
” নাহিয়ান আমি বাহির থেকে এলাম ফ্রেশ হবো। ”
” ‘ একজন মেয়েকে খুশি করার জন্য দামী দামী গাড়ি , বাড়ি , গহেনার প্রয়োজন হয় না। অফিস যাওয়ার আগে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে যাবেন , এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবেন। মাঝে মাঝে চল্লিশ টাকা দামের এক জোড়া কাচের চুড়ি নিয়ে আসবেন। এতেই হল।’_কেউ এক জন বলে ছিল মনে হয়। আজকে অফিস থেকে এসে তাকে ফেলাম না তাই এখন ফুসিয়ে দিচ্ছি। ”
ফের হাসল ফারাহ্ এক দিন আবেগের বশে কিছু অনুভূতি শেয়ার করে ছিল নাহিয়ানের সাথে। ওইদিন থেকে নাহিয়ান এক দিন ও মিস দে নি অফিসে যাওয়ার আগে কিস করা আসার পর সাথে সাথে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরা৷ দুই তিন দিন পর পর কাঁচের চুড়ি নিয়ে আসে। চুড়ির জন্য আলাদা কেবিনেট ও নিয়ে আসা হয়েছে।
” নাহিয়ান। ”
” হু। ”
” জানেন পাত্রী কে? ”
নাহিয়ান ফারাহ্’র গলায় ছোট করে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে স্মিথ সুরে বলল ,
” না বললে জানবো কি করে? ”
সারা শরীর শিরশির করে উঠলো ফারাহ্’র। নাহিয়ান ল্যাপটপ রেখে ফারাহ্ কে তার দিকে ঘুরালো। ফারাহ্’র দৃষ্টি নত। নাহিয়ান প্রিয়াসীর থুতনি ধরে মুখ টা উঁচু করে মুখটা তারদিকে এগিয়ে আনলো। তার পর নরম গলায় জিজ্ঞেস করল ,
” কে ছিল পাত্রী? ”
” প্রিয়া। ”
” তোর ফ্রেন্ড প্রিয়া? ”
” জ্বি। ”
” বাহব্বা! বিয়ের কথা তো পাকাপোক্ত তার মানে দু’ফ্রেন্ড আজীবনের জন্য আত্মীয় হয়ে যাচ্ছিস। ”
” হ্যাঁ , খুব ভালো জমবে। ”
প্রতুত্তরে কিছু বলল না নাহিয়ান। অতি প্রেম ময় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে ফারাহ্’র ক্লান্ত মুখমন্ডলের দিকে। ফারাহ্ অস্বস্তি লাগছে। কেউ যদি ঘো’র লাগা দৃষ্টিতে এভাবে চেয়ে থাকে অস্বস্তিতে তো পড়বেই। নাহিয়ানের নে’শা’লো চক্ষু জোড়া আরো গাড় হলো। তাকিয়েই রইল নির্নিমেষ। সমস্ত ভালোবাসাটুক উজাড় করে উষ্ণ স্পর্শ দিলো প্রিয়াসীর কপালে , নাকের ডগায় , দু’গালে , থুতনিতে। কোমড়ের বাঁধন আরো দৃঢ় করে ঠোঁটের কোণে আলতো ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে নরমাল ভাবে বলল ,
” বাহির থেকে এলি যা চেঞ্জ করে আয়। ”
নাহিয়ানর কথা শুনে ও শুনলো না এমন ভাব নিয়ে আগের ভঙ্গিতেই বসে আছে। গলা শুকিয়ে আসছে ফারাহ্’র। শিরা-উপশিরায় বহমান রক্তও যেনো নিজের স্বাভাবিক গতি বেগ হারিয়ে অস্বাভাবিক হারে বইতে আরম্ভ করল। নাহিয়ান ফারাহ্’র নড়চড় না দেখে বলল ,
” জামাইয়ের আদর খেতে মন চাইছে? ”
সাথে সাথে ছিটকে উঠে দাঁড়ালো ফারাহ্। ব্যস্ততা দেখিয়ে দ্রুত ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেলো। ফারাহ্ যেতেই নাহিয়ানের মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়৷ মাথা সর্বক্ষণ ঘুর পাক খায় ফ্যাক্টরিতে আ’গুন দিল কে? এখন পর্যন্ত হদিস মিলে নি। কাকতালিও ভাবে আ’গু’ন লাগতে ও পারে। কিন্তু তার আশংকা মাত্র ২০%। মিরাজের সাথে এই ব্যাপারে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। এত দিন সব আগের মতো ঠিক করতে উঠে পড়ে লেগে ছিল তাই এই বিষয়ে ভাবে নি। এখন শূন্য মস্তিষ্কে বারবার এই প্রশ্ন হানা দিচ্ছে , আ’গু’ন আসলো কোথায় থেকে? পদক্ষেপ নিতে হবে৷ আবার যদি এমন কিছু মুখোমুখি হয় আর উঠে দাড়াতে পারবে না। এরই মধ্যে ফারাহ্ ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে এলো। হালকা বাদামী রঙের সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বেঁধে নিয়ে কালো রঙের দোপাট্টা গলা জড়িয়ে রুমের বাহিরের চলে আসে। নাহিয়ান সব চিন্তা বাদ দিয়ে ফারাহ্’র পিছনে গেলো। ফারাহ্ সিড়ি দিয়ে নেমে কিচেনে গেল ফুল বোধ হয় এশারের নামাজ পড়ে এলো। বিরবির করে দোয়া কলমা আওড়াচ্ছে। আর ডিনার তৈরি করছে। ফারাহ্ কে দেখে মিষ্টি হেসে বলল ,
” এসেছো? ”
” হ্যাঁ অনেক আগেই। ”
” ওহহহ। ”
” ফাতেহ মামা কোথায়? ”
” কারেন্ট বিল দিতে গেছিল এখন ও আসে নি। ”
” রাতে বেলা কে বিল দিতে বলেছে তাকে? ”
” আর বলো না আজকে লাস্ট ডেট , এত দিন নাকি মনে ছিল না বড়আব্বার ব’কা শুনে আজকে গেলো। চলে আসার কথা এতক্ষণে। ”
” শুনো আমাকে কষ্ট করে এক কাপ দুধ চা দাও , শরীর টা কেমন ম্যাচম্যাচ করছে। ”
” জ্বি দিতাছি। ”
ফারাহ্ লিভিং রুমে এসে দেখে নাহিয়ান টিভিতে নিউজ দেখছে। সে দিকে চেয়ে বলল ,
” আমি টিভি দেখবো। ”
নাহিয়ান টিভিতে চোখ রেখেই বলল ,
” দিন দিন টিভি নে’শা বানিয়ে ফেলছিস রুমে গিয়ে পড়তে বস। ”
” কালকে বসবো আজকে পড়তে ইচ্ছে করছে না। ”
” সারা দিন ভরে ঘুরলে এমনি হয়। না পড়লে নাই তার পর ও রুমে যা। ”
” আপনি আস্ত একটা অসভ্য।”
ফারাহ্’র কথা শুনে নাহিয়ান এমন ভাবে তাকালো পারলে চোখ দিয়ে টুপ করে গিলে খাবে। আঁতকে উঠল ফারাহ্। নাহিয়ানের তী’ক্ষ্ণ’তা মিশ্রণ র’ক্ত জবা আঁখিদুটি দেখে। অন্তর আত্মা কাঁপছে তার। আকষ্মিক নাহিয়ান ধা’রালো কন্ঠে বলল ,
” চ’ড় খাস না অনেক দিল হল তার জন্যই থার্ড ক্লাস কথাবার্তা বলা শুরু করে দিয়েছিস। ”
একটু থেমে প্রচন্ড জোরে এক ধমক দিয়ে বলল ,
” যা রুমে যা। ”
ভ’য় কুঁকড়ে উঠে দু’পা পিছিয়ে গেল। তখন ফুল চা নিয়ে আসে। আচমকা ফারাহ্ পিছানোর ফলে চা’য়ের কাপ ফুলের হাত থেকে পড়ে যায়। সে দিকে খেয়াল নেই ফারাহ্ ‘র বিস্ময় বুঁদ হয়ে চেয়ে আছে নাহিয়ানের ক্ষু’ব্ধ চেহারার দিকে। হঠাৎ এমন রে’গে গেলো কেনো? একটু আগেই তো ঠিক ছিল। পপি দৌড়ে এসে বলল ,
” হায় আল্লাহ নিচে কাঁচের ছড়াছড়ি আর তোমরা দু’জন কাঁচের পাশেই দাঁড়িয়ে আছো। ”
ফুল দ্রুত সরে যায় এখন। তখন অবাকের তাড়নায় পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে ছিল। পপির কথা শুনে ফারাহ্ অতি সাবধানে হেঁটে উপরে চলে গেল। পপির চোখ এড়ালো না ফারাহ্’র অশ্রু তে টলমল নেত্রী যুগোল। একবার নাহিয়ানের দিকে তাকালো। সে নির্বকার। দৃষ্টি মেঝেতে ভা ‘ঙা চায়ের কাপের দিকে। অবুঝের মতো ফুল কে চোখের ইশারা করে জানতে চাইলো কি হয়েছে। ফুল ঠোঁট উল্টো করে কাঁধ উঁচু করল। মানে ও কিছুই জানে না। হতাশ হল পপি। ফারাহ্ বা নাহিয়ানের মধ্যে সব সময় ঝা’মেলা থাকেই। দুই দিন স্বাভাবিক গেলে ছয় দিন অস্বাভাবিক। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভাবল , হয় তো নাহিয়ানের মনে এখন ও তারার বসবাস।
_________
বড়’রা মিলে রিশাব আর প্রিয়ার বিয়ের তারিখ ঠিক করেছে। জুন মাসের ২৩ তারিখ হলুদ ২৪ তারিখ বিয়ে ২৫ তারিখ রিসিপশন। বৃহস্পতি , শুক্র , শনি। ফারাহ্ খুশিতে জড়িয়ে ধরল প্রিয়া কে। প্রিয়া লাজুক হেসে নতজানু হয়ে বসে আছে। হঠাৎ ফারাহ্’র ফোনের নোটিফিকেশন আসল। ভ্রু কুচকে ফোনের স্কিনে দেখল রিশাবে মেজেস। লিখা ,
‘ ইম্পর্টেন্ট কথা আছে তোমার সাথে একটু দেখা করা যাবে? ‘
ফারাহ্ অবাকে চরম পর্যায় পৌঁছে গেলো ওর সাথে কি এমন কথা আছে? টাইপ করল ,
‘ কোথায়? ‘
‘ বেশি দূরে নয় তোমাদের বাসার পাশে ক্যাফে। ‘
‘ ওকে কখন আসতে হবে? ‘
‘ প্রিয়াদের বাসা থেকে কখন আসছো? ‘
‘ একটু পর। ‘
‘ ওকে দ্যান বিকালে দেখা হচ্ছে। ‘
‘ ওকে। ‘
ফোন রেখে হাঁসফাঁস করছে ফারাহ্। কি এমন জরুরি কথা থাকতে পারে ওর সাথে? দিকে প্রিয়ার পরিবার অনেক খুশি। যেনো এমন ঘরই খুঁজে ছিলেন মেয়ের জন্য। বিয়ের দিন তারিখ পাকাপাকি হওয়ার পর সবাই উঠল। বিদায় নেওয়ার জন্য। সুফিয়ান ফারাহ্’র হাত টোকা দিয়ে বলল ,
” ভাইয়া সে কখন থেকে কল দিচ্ছে কল ধরছিস না কেনো? ”
” প্রয়োজন মনে করছি না তাই। ”
” ফারাহ্ এনিথিং রং তোদের মধ্যে কিছু ঠিক লাগছে না। ”
” এখন আর ঠিক বেঠিক দিয়ে কি করবি যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। ”
বলেই গাড়িতে উঠতে নিচ্ছিল তখনই সুফিয়ান হাত ধরে আঁকটে দিয়ে ড্রাইভার কে বলল ,
” চাচা আপনি আম্মুদের নিয়ে যান আমরা একটু পর আসছি। ”
কারো উত্তরের আশা না করে ফারাহ্ কে টেনে জন শূন্য জায়গায় নিয়ে এলো। ফারাহ্ কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বলল ,
” দেখ ফারাহ্ তুই বুঝের হয়েছিস অবুঝ থাকিস না। নাহিয়ানের ভাইয়ের একটা অতীত আছে সেটা আমরা সবাই জানি। বছর দুয়েক হয় নি এখন ও , আপু আমাদের মাঝে নেই। আর ভাইয়া তো আপুর সাথে সারা জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেছে। উনার মুড সুইং হতেই পারে। তার উপর বিজনেস সামলাচ্ছে। আরো ফ্যাক্টরিতে আ’গু’ন লেগে ছিল। তোকে বুঝতে হবে নাহিয়ান ভাইকে। বুঝতে হবে উনার দ্বিখণ্ডিত মনটাকে। ”
একটু থেমে শক্ত গলায় ফের বলল ,
” তুই যদি তোর রা’গ জি’দ কে বেশি প্রশ্রয় দিতে চাস তাহলে ভাইয়াকে ছেড়ে দেয়। জোর পূর্বক সংসার করার দরকার নেই। এখন কার দিনে ডিভোর্স আহামরি কিছু নয়। ”
‘তাহলে ভাইয়াকে ছেড়ে দেয়। জোর পূর্বক সংসার করার দরকার নেই। এখন কার দিনে ডিভোর্স আহামরি কিছু নয়। ‘ ‘ডিভোর্স’ শব্দ টা শুনতেই বুক কেঁপে উঠল ফারাহ্’র।শিরা-উপশিরায় বহমান রক্তও যেনো অস্বাভাবিক হারে বইছে। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে পুরো দেহ জুড়ে। হৃদয়ে ঝড় তুলছে। তীব্র বেগে ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত শরীর জুড়ে। শূন্য মস্তিষ্কে তাকিয়ে আছে শান্ত , ফানিং মুডে থাকা কোঠর ছেলেটার দিকে। আজকের মতো করে গম্ভীর কণ্ঠে কথা বলে নি সুফিয়ান। ওর সাথে তো নাই। সত্যি কি ও ভুল করছে?
#চলবে
®️আহমেদ মুনিয়া
•••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×