তোর চোখে আমার সর্বনাশ পর্ব – ৫

তোর চোখে আমার সর্বনাশ

৫.

দেওয়ালে বল ছুড়ে মারছে আর সে বল যখন দেওয়ালে বাড়ি খেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসে ক্যাচ ধরে নে নাহিয়ান। আনমনেই ভাবছে অন্য কিছু কি চেয়ে ছিল আর কি হল? গত কালকের কথা মনে পড়তে এখন ও বুক কেঁপে উঠে। সবাই সিদ্ধান্তে অটল। এবার ওকে বিয়ে করতেই হবে তাও ফারাহ্ কে। প্রথম তো সে বিয়ে করতে চায় না এখন ও দ্বিতীয় তো ফারাহ্ কে তো নাই। তার পরে ও ভাগ্যর কাছে পরাজিত হল। শামীমা আখতার রু’ক্ষতা সাথে বললেন ,

” তুই যদি এবার বিয়ে না করিস আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। আরেহ তোর জন্যই তো আমি আর তোর বাপ বেঁচে আছি আর তুই আমাদের তিলেতিলে মারতে বসেছিস! রাতে ঘুমাতে গেলে ঘুম আসে না একটা ছেলে আমার সে ও বিগড়ে যাচ্ছে। ”

” মম আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না , পারবো না আমি আমার তারাকে ঠোকাতে। ”

নাহিয়ানের তী’র্য’ক স্বরে এমন কথা শুনে সবার মন ক্ষু’ন হল। তারা আর নেই বা ফিরে ও আসতে পারবে না ছেলেটা এটা মানছে না৷ ওদের ও তো কষ্ট হচ্ছে না। মিনা আরাফা অত্যান্ত শান্ত স্বরে বলে উঠলেন ,

” আমরা তোকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলছি না তুই তারার বুড়ি কে বিয়ে কর। তুই সহ আমরা সবাই জানি তারার কত খানি প্রিয় ছিল আমাদের ফারাহ্। ফারাহ্ কে বিয়ে করলে তারা কে ঠোকানো হবে না বাবা। ”

হাত মুষ্টি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে নাহিয়ান। রা’গে রীতিমতো কাঁপছে। একেক জন একেক ভাবে বুঝাতে উঠে পড়ে লাগলো। মায়ের আহাজারি ফেলতে পারলো না সে। শামীমা আখতার ছেলের বুকে মাথা রেখে অজস্র কান্নায় ভেঙে পড়লেন। নাহিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে সোফায় নতজানু হয়ে বসে থাকা ফারাহ্ কে এক পলক দেখে নিল। ওর মাকে সোজা করে দাঁড় করি ক্ষীণ সময় পর রা’গী গম্ভীর গলায় বলল ,

” দ্যাটস গুড! তোমাদের কথাই রইল আমি বিয়ে করবো ফারাহ্ কে এন্ড এক্ষুনি। ”

বুক চিরে তীব্র আর্তচিৎকার বের করল নাহিয়ান সবার অগোচরে চোখের জল মুছে নিল। ছেলেদের বলে কাঁদতে নেই। প্রিয় মানুষ টার শূন্যতা তাকে পোড়াচ্ছে। কাঁদাচ্ছে সে। ইফতাখার সারাফাত বললেন ,

” এখুনি! বিয়ের একটা আয়ো….”

উনাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে নাহিয়ান বিমর্ষ সুরে বলল ,

” মাফ করবেন আমাকে আপনারা বলেছেন বিয়ে করতে রাজি হলাম এর বাহিরে আর কিছু করতে পারবো না। আমি বর সাজবো না যার জন্য সাজতে চেয়ে ছিলাম সে আমায় ছেড়ে__”

ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সংযত করে ফের বলে উঠে ,

” সাধারণ ভাবে এখুনি বিয়ে করব আমি দ্যাটস ফাইনাল। ”

অবশেষে ঘোরওয়া ভাবে বিয়ে হল ওদের। কেউ আর ফোর্স করে নি নাহিয়ান কে। ছেলেটার ভিতরের কি চলছে তা তো ওরা বুঝতে পারবে না। এক জন কে ভালো বেসে অন্য জনের সাথে সংসার কি খুব কঠিন। সব মনে মনে এক আড়িয়ে নিল নাহিয়ান। বল টা কে অদূরে ছুড়ে মেরে রুমে চলে আসে।
.
ছাদের রেলিঙের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ফারাহ্। দৃষ্টি শূন্য। শিরা-উপশিরায় বহমান রক্তও যেনো নিজের স্বাভাবিক গতি বেগ হারিয়ে অস্বাভাবিক হারে বইতে আরম্ভ করল। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বক্ষস্থলে। তীব্র অভিমান জন্মালো সবার প্রতি। ওকে একটি বার ও জিজ্ঞেস করল না এ বিয়ে তে কি ও রাজি আছে? নাকি নাই? নাহিয়ানের সুখের বলি হতে হল ওকে। যখন ওকে বিয়ের জন্য তৈরি করতে যাবে। তখনই নাহিয়ান পপি কে বলে ছিল ,

” আব…পপি , আমি লাল শাড়িতে শুধু তারা কে দেখতে চেয়ে ছিলাম প্লিজ ফারাহ্ কে লাল শাড়ি পড়িও না। ”

রা’গে দুঃখে শাড়ি ও পড়ে নি ফারাহ্। বিয়ে নিয়ে সব মেয়ের অলাদা একটা স্বপ্ন থাকে। যেখানে ওর বিয়ে হল ঘোরওয়া ভাবে। না ও সেজেছে বউ না নাহিয়ান সেজেছে বর। না সেজেছে নাহিয়ানের রুম। রাতে যখন নাহিয়ানের রুমে ওকে রেখে আসে। ঠিক তার কিছু ক্ষণ পর নাহিয়ান রুমে প্রবেশ করল। দরজা লকড করে। ড্রেসিং কক্ষের দিকে গেল। মিনিট ঘুরতেই আবার ফিরে আসে। ফারাহ্ সামনে বেডের উপর একটা ছোট্ট বক্স রেখে মিনমিনিয়ে বলল ,

” ইউকে থেকে আসার আগে এনে ছিলাম বিয়ের দিন রাতে তারা কে গিফট দিব বলে। ”

একটা নিঃশ্বাস ফেলে আগের ভঙ্গিতেই বলল ,

” তারার জায়গা তুই যখন নিলি এটা ও তোর ভালো লাগলে পড়ে নিস না হলে ফেলে দিস৷ ডাস্টবিনঝুড়ি বারান্দায় আছে। ”

কথা টা শেষ করেই বেডে শুয়ে পড়ল এক পাশ ফিরে। ফারাহ্ অবাকের সাথে বক্স টা খুল সাথে সাথে দৃশ্য মান হল ডায়মন্ডের পেনডেন্ট। কালো পাথরের। নাহিয়ান কালো পছন্দ তাই বলে কালো ডায়মন্ড পেনডেন্ট আনলো। ওর জায়গায় যদি তারা থাকতো। নিজ হাতে পরিয়ে দিত। কিছু মনে করে উঠে গিয়ে ড্রেসিং কক্ষে গিয়ে ওয়াশ রুমে ডুকল। বেসিনের মিরের সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে পেনডেন্ট টা গলায় জড়ি নে। গোলন্ডে সাদা ফর্সা গলায় ব্ল্যাক পেনডেন্ট টা খুব মানিয়েছে। আকষ্মিক ছাদের গ্লাসের রেলিঙ ঘেঁষে নিচে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে। অনেক কান্নার পর চোখের পানি মুছে বিরবির করে বলল ,

” না কাঁদবো না আমি সবাই আমাকে নাহিয়ানের দায়িত্ব দিয়েছে। নাহিয়ান কে হাসি খুশি একটা জীবন দেওয়ার জন্য। আমি আমার দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। ”

____

লাঞ্চের সময় খেতে বসেছে মেয়েরা সবাই। ছেলেরা সবাই কাজে , কেউ অফিসে তো কেউ হাস্পাতালে। বিকালে না হয় তো রাতে ফিরবে। পপি ফারাহ্’র গলার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” পেনডেন্ট টা চমৎকার নাহিয়ান ভাই দিয়েছে বুঝি। ”

টেবিলের সবাই ওর দিকে তাকালো অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ফারাহ্। মুখে জোর পূর্বক হাসি টেনে কোনো রকম বলল ,

” হু। ”

কেউ আর কিছু বলে নি। পেনডেন্ট টা দেখে সবাই মনে করেছে ওরা স্বাভাবিক হয়ে গেছে৷ ফারাহ্ দীর্ঘশ্বাস ফেলে খেয়ে নাহিয়ানের রুমে চলে আসল। ওর রুমে যাওয়া সূর্ম্পন নিষেধ আজ্ঞা জারি করেছে তার মা জননি। বেডে গা এলিয়ে দিল চোখে ঘুম আসবে আসবে। ফোন কলে কর্কশ আওয়াজে ঘুম ছুটে গেল। ভাবছে এই সময়ে কে কল দিল? ফোন হাতে নিয়ে দেখল প্রিয়া কল। মেয়েটা আবার শুরু না হয়ে যায়। কল রিসিভ করতেই ,

” ওই মাইয়্যা কল রিসিভ করতে এতক্ষণ লাগে? তুই বিয়ে করে ফেললি আমাকে জানালি ও না! বে’য়া’দ’ব চুন্নি। আমি না তোর বেস্টু আর আমাকে না জানিয়ে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে ফেললি কু’ত্তি। ”

” থার্ড ক্লাস কথা বার্তা বন্ধ কর প্রিয়া , আমি ঘুমাবো এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। ”

” কালকে রাতে জিজু ঘুমাতে দে নাই আজকে ও তো দিবে না নতুন নতুন বিয়া হইছে। ”

” চুপ কর ফা’জি’ল , এসব কিছু না। ”

” আচ্ছা বল না তোর বর টা কে? ”

ফারাহ্ ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল ,

” নাহিয়ান ভাই। ”

” কিহহহহহহহহহহ!”

প্রিয়া গনবিরোধী চিৎকার শুনে কান থেকে ফোন নামিয়ে নিল ফারাহ্। চোখ মুখ কুচকে ঝা’ড় মেরে বলল ,

” গা’গলের মতো চেচামেচি করছিস কেনো? ”

” ওই তুই মিথ্যা বলছিস আমাকে , নাহিয়ান ভাইর মতো হ্যান্ডসাম , স্মার্ট ছেলে তোকে বিয়ে করেছে তাও আমায় বিশ্বাস করতে হবে। ”

ফারাহ্ ভ্রু কুচকে বলল ,

” ওই কি কইলি তুই? আমি দেখতে কি জ’ঘ’ন্য?”

প্রিয়া ঢোক গিলে মেকি স্বরে বলল ,

” তা কখন কইলাম আমি তো নাহিয়ানের কথা বলছি। ”

” বাহ! নাহিয়ান ভাই থেকে নাহিয়ান। ”

” এই শুন আমার না কাজ আছে রাখছি বাই। ”

বলেই কল কেটে দিল প্রিয়া। ভালো ভালো কেটে পড়লেই হয়। ফারাহ্ যে ভাবে আস্তে আস্তে রা’গছে! বাবা। ফারাহ্ ফোন সাইড টেবিলের উপর রাখতে গিয়ে দেখল নাহিয়ান রুমে ডুকছে। এই সময়ে তো নাহিয়ান বাসায় আসে না। আলতো সুরে বলল ,

” আপনি এই সময়ে বাসায় এলেন যে? না মানে এই সময়ে তো বাসায় আসেন না তাই। ”

নাহিয়ান কোমড় বেল্ট খুলে ডিভানের উপর রেখে শার্টের ইন ছেড়ে দিল ৷ পকেট থেকে ফোন , ওয়ালেট বের করে। সাইড টেবিলের ড্রায়ারের ওয়ালেট রাখল। ফোন রাখল টেবিলের উপরে। শার্টের বাটম খুলতে খুলতে বলল ,

” এমনি ভালো লাগছে না তাই চলে এসেছি আমি লাঞ্চ করি নি ফাতেহ মামাকে বা স্টাফ কে বল রুমে খাবার দিয়ে যেতে। ”

সরল ভাবে কথা গুলো বলে ড্রেসিং রুমের গিয়ে মোটা ব্ল্যাক পর্দা টেনে দিল। চেঞ্চ করবে। ফারাহ্ চুল গুলো হাত খোঁপা করে বের হল রুম থেকে। এই দুপুরের কাউকে ডিস্টার্ব করল না। নিজে ভাত বেড়ে ট্রেই তে সাজিয়ে রুমে নিয়ে এলো। টেবিলের উপর রেখে ডিভানে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো নাহিয়ানের।

______

রাতে সবাই ঘুমিয়ে আছে তখনই কল এলো। ফ্যাক্টরিতে নাকি আ’গু’ন লেগেছে৷ হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে পড়ল নাহিয়ান , মিরাজ , আফজাল সারাফাত , ইফতেখার সারাফাত , এহসান সারাফাত। বাড়ির সবাই আল্লাহ আল্লাহ করছে। বেশি ক্ষতি যেনো না হয়। ফজরের নামাজ পড়ে ফিরে এলো নাহিয়ান’রা। পাঁচ জনেরই চেহারার রং পালটে গেছে। মুখ কালো করে রেখেছে। চিন্তিত অস্থিরতা সব ঘিরে আছে ওদের। কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। ফারাহ্ নাহিয়ানের দিকে তাকালো। হল রুমের মাঝে বড় বড় পিলার গুলের মধ্যে একটার সাথে ঠেসা মেরে দাঁড়ালো। উদাসীন চোখে এক কোণে থাকা এ্যাকুরিয়ামের দিকে চেয়ে আছে। যেখানে তার পছন্দের কালো কালো বিদেশি কয়েক টা মাছ ঘুর ঘুর করছে। মুখটা ও ম্লানে আচ্ছন্ন। ফারাহ্’র বুকের ভিতর কুকড়ে যাচ্ছে। ভাগ্য কি খেলছে ওদের সাথে। যখনই সবাই মিলে সুখে থাকার কিছু খুজে পায় তখন অন্য আরেক টা হারিয়ে যায়৷ ফ্যাক্টরিতে আ’গু’ন লাগায় অনেক লস হয়েছে৷ সব কিছুতে ফ্যাক্টরির গোডাউনেই থাকে। ব্যাংকে যত টাকা ছিল। সব দিয়ে সকলে বেতন দিয়ে দিল। অফিসের অনেকেইই চারকি ছেড়ে চলে গেছে৷ তাদের ভাষ্যমতে , সব আগের মতো ঠিক হতে চার / পাঁচ মাস খানিকের বেশি বা বছর ও লাগতে পারে৷ এত দিন কি করে থাকবে ওরাহ্! বেতন কোথায় পাবে? অফিস প্রায় খালি অনেকই চলে গেল। আবার অনেকই রয়ে গেল। তাদের ভাষ্যমতে , আজকে আপনারা বিপদে পড়েছেন আমরা চলে গিয়ে আর বিপদে ফেলবো না আপনাদের। রাত দিন পরিশ্রম করে আগের মতো সব করে তুলতে সাহায্য করব। এভাবেই এক মাস কেটে যায়। ব্যাংকের টাকা দিয়ে অফিস বাড়ি চলছে। এভাবে আর কত দিন টাকা ফুরিয়ে আসছে কিছু একটা করতে হবে৷ ফ্যাক্টরিতে আ’গুন কাকতালিও ভাবে লেগেছে! নাকি কেউ ইচ্ছে করে দিয়েছে এখন ও জানতে পারে নি।

” তোমাদের কাজ করতে কষ্ট হবে না? ”

আফজাল সারাফাতের কথার পৃষ্ঠে সুফিয়া হানজালা বলল ,

” ভাই সাহেব আমারা সবাই মিলে করে নিতে পারবো। কষ্ট হবে না। ”

উপায় না পেয়ে সকল স্টাফ কে বিদায় করে দিল। না করে ও পারল না। ওদের মাসব্যাপী টাকা দিবে কি করে? এখন তো নিজেদের ও টানাটানি করতে হচ্ছে। সব ঠিক ঠাক করা পর্যন্ত। সকল স্টাফ কান্না মুখে চলে গেল। অনেক বছর এইদের বাড়িতে কাজ করেছে একটা মায়া বসে গেছে। ফাতেহ কে যেতে না দেখে ইফতেখার সারাফাত গম্ভীর সুরে বললেন ,

” তুই যাচ্ছিস না কেনো ফাতেহ?”

ফাতেহ করুন গলায় বলল ,

” আমি কই যামু কে আছে আমার বউ ছিল হে ও ছাইড়া চলে গেছে ৷ আমি যামু না। ”

” তুই আরো ভালো বাসা খুঁজে নিস যা। ”

” না ইফু ভাই তোমাগো লগে থাকুম ৷ খালি দুই বেলা খাওয়ন দিলেই হইবো। ”

যেনো কেঁদে দিবেন এখুনি এমন চেহারা বানিয়ে ফেলেছে ফাতেহ। ফারাহ্ বসা থেকে উঠে সবার উদ্দেশ্য করুন সুরে বলল ,

” ফাতেহ মামা থাকুক না আমাদের সাথে। ”

সুফিয়ান ও ম্লান মুখে বলল ,

” ফাতেহ মামা চলে গেলে আমাদের কাছে ও ভালো লাগবে না। ”

সবাই মেনে নিল ফাতেহ যাবে না থাকবে। আসলে ফাতেহর প্রতি একটা অদ্ভুত মায়া পড়ে গেছে ওরা। ফাতেহ থাকছে খুশিতে কাজ করতে কিচেনে চলে গেলো। নাহিয়ান সদর দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই শামীমা হানজালা জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন ,

” কোথায় গিয়ে ছিলি? ”

নাহিয়ান সোফায় বসতে বসতে ব্যস্ত গলায় বলল ,

” বসো বলছি। ”

সবাই উচ্ছুক চাহনীতে চেয়ে আছে নাহিয়ানের দিকে৷ নাহিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে বিরল মুখে বলল ,

” আমি কয়েক টা প্রজেক্ট অন্য কম্পানিকে দিয়ে দিছি মোটা অংকের টাকায়। ”

মিরাজ অবাকের সাথে বলল ,

” কি বলছিস তুই। ”

” হ্যাঁ সত্যি সমস্যা নেই আমাদের কম্পানির প্রজেক্ট না , আমি নিজে তৈরি করে দিলাম। আর এসব হয়ে রিশাবের জন্য৷ ”

রিশাব বাসার ভিতরের আসতে আসতে বলে উঠে ,

” আমার এক ফ্রেন্ডের কম্পানি তে নিয়ে গেলাম ওকে। নাহিয়ান খুব ভালো প্রজেক্টের তৈরি করে। উনারা খুব খুশি হলেন নাহিয়ানের অভিজ্ঞতা দেখে। ”

এহসান সারাফাত বললেন ,

” বাবা তুমি কেনো এসবে জড়াচ্ছো? ”

” আংকেল আপনারা আমার বাবা মায়ের মতো আমার নতুন একটা পরিবার। আমার ভাবি এই পরিবারের মেয়ে। বোনের মতো আগলে রেখেছে আমায় আর আমি কিনা বসে থাকবো। আমি তো শুধু দেখিয়ে দিলাম যা করার নাহিয়ান করছে। ”

” শুকরিয়া। ”
.
দুপুরের খাবার সেরে গার্ডেনে এসে বসল ফারাহ্। মন টা ভালো ও না আবার খারাপ ও না। নরমাল। নাহিয়ান আর ওর সম্পর্কের উন্নতি হয় নি। যেমন চলছে তেমনই চলতে আছে। হুট করে সুফিয়ান এসে বসল ফারাহ্ পাশে বেশ খোশ মেজাজে বলে উঠল ,

” এই শুন তোকে একটা ঘটনা বলব , শুনবি? ”

” দেখ তোর ফাল’তু কথা শুনার মুড নাই যা ভাগ। ”

” ভাগ বা গুণ করতে আসি নি তুই না শুনলে ও , আমি তোকে ঘটনা বলবোই ,
রাস্তায় একটা মেয়ের সাথে চমর ভাবে ধা’ক্কা খেলাম। দুইজনেই অপ্রস্তুত। আমি ও ভাবতে পারি নি এমন কিছু হবে। হয় তো মেয়ে টা। আমি তো ফোনে কথা বলছিলাম , আর মেয়েটা সম্ভবত প্যাঁক প্যাঁক করছিল। যেমনেই হোক ধা’ক্কা লাগলো ভাবলাম সরি বলে কাটিয়ে দিব। কি মেয়ে বাবা কি সাংঘাতিক। আমি মুখ খুলার আগেই মেয়েটা আমায় সাবান ছাড়াই ধুয়ে রোদে দিয়ে দিল। রাস্তায় অনেক মানুষ আমাদের দেখে হাসাহাসি শুরু করে দে। পনেরো মিনিট লাগাদার বকবক ফকফক করে যাওয়ার আগে আমার দিকে আঙুল তুলে বলল , আমার স্যারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি না হলে বুঝিয়ে দিতাম এই প্রিয়া কি জিনিস। ”

ফারাহ্ প্রথমে শুনতে না চাইলে ও পরে ইন্টারেস্টিং লাগতে শুরু করে। ‘মেয়েটা সম্ভবত প্যাঁক প্যাঁক করছিল’ এই কথা টা শুনে আওয়াজ করে হেসে ও দিয়ে ছিল। পুরো কথা হাসি মুখে শুনলে ও শেষের দিকে এসে মুখে হাসি উবে যায়। ‘ আমার স্যারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি না হলে বুঝিয়ে দিতাম এই প্রিয়া কি জিনিস।’ বুঝতে আর বাকি নেই মেয়ে টা কে! ফোস করে শ্বাস ফেলল। হাতে থাকা ফোন অন করে কিছু খুঁজতে শুরু করে। সুফিয়ান বোকা বোকা চাহনীতে তাকিয়ে বলল ,

” ফারাহ্ আমি তোকে এমন একটা সাংঘাতিক কথা বললাম , যা আমার জীবনে ফাস্ট ঘটল। আর তুই কিনা ফোনে ডুব দিলি? ”

ফারাহ্ এবার ও সুফিয়ানের কথা পাত্তা দিল না। একটু মনঃক্ষুণ হল সুফিয়ানের কপাল চাপড়ে কিছু বলতে যাবে। তখনই ফারাহ্ ফোন দেখিয়ে সন্দেহ জনক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ,

” দেখ তো এই মেয়ে টা কি না? ”

সুফিয়ান এক নজর দেখেই দ্রুত বলল ,

” হ্যাঁ এই মেয়েটাই , কিন্তু এর ছবি তোর কাছে কি করে এলো? ”

বিস্ময়ে চোয়ালে ঝুলে রেখেছে নাহিয়ান। ফারাহ্ কি’লা’র স্মাইল দিয়ে বলল ,

” এটাই আমার প্রাণ প্রিয় বেস্টি প্রিয়া হাওলাদার। ”

” বাপরে নামের কি বাহার তাই তো বলি তুই দিন দিন ঝগুটে হয়ে যাচ্ছিস কেনো? এমন বেস্টি পিসের সাথে থাকিস। ”

ফারাহ্ সুফিয়ানের কাঁধে ওর হাত দিয়ে হিট করতে করতে মৃদু ধমকে বলল ,

” সুফিয়ান সাবধানে কথা বল আমার বেস্টি ও। ”

” হ্যাঁ তোর কাছে এখন বেস্টিই অনেক আজকে আমার মান ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ছাড়ল এই ঝগুটে কু’ট’নি মহিলা টা। ”

ফারাহ্ রা’গী চোখে তাকাতেই সুফিয়ানের হাওয়া ফুশ। মেকি হেসে বলল ,

” বইন আমার ঘাড়ে একটাই মাথা। ”

#চলবে

®️আহমেদ মুনিয়া
••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here