তোর চোখে আমার সর্বনাশ পর্ব – ৪

তোর চোখে আমার সর্বনাশ

৪.

নতুন বউ গৃহে প্রবেশ করার সাথে সাথে বাড়িতে খুশির জোয়ার বয়ে গেল। সবাই হাসি খুশি থাকলে ও এক জনের ভিতরে কি চলছে শুধু ওই জনে৷ সে এক জন আর কেউ নয় নাহিয়ান। সে তারা কে লাল কাপড়ে দেখার আশায় বসে ছিল আর দেখল সাদা কাপড়ে মোড়ানো। বুকের ভিতর দু’ম’ড়ে মু’ছ’ড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিছুতেই নিজেকে পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে পারছে না। মিনা আরাফা নাহিয়ানের রুমে এসে নাহিয়ান কে রুমে না দেখে বারান্দায় গেলেন৷ যা ভেবে ছিলেন। অন্ধকার বারান্দায় মেঝেতে বসে আসে এক পা’র হাঁটু ভেঙে উঁচু করা। অন্য পা সনাট করে মেলে রেখেছে পিঠ গ্লাসে ঠেকানো। মিনা আরাফা নিরবে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। নাহিয়ানের পাশে ডিভানে বসে ম্লান মুখে বললেন ,

” ডিনার করবি না বাবা? চল। ”

নাহিয়ান একই ভঙ্গিতে থেকে উত্তর দিল ,

” না বড়আম্মি খেতে ইচ্ছে করছে না। ”

” তারা আর নেই চাইলে ও ফিরে আসবে না আমার মেয়েটা। কেনো থেমে আছিস সামনে আগা। ”

” আমি কি পিছনে পড়ে আছি বড়আম্মি। ”

” এই আগানো দিয়ে কিছুই হচ্ছে না , মিরাজ তোর ছোট আমরা বাধ্য হয়ে ওকে বিয়ে করিয়ে আনলাম , তোকে হাজার বার বলে ও বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারে নি কেউ। বয়স হচ্ছে তোর। ”

” অনেকেই ৩৭ বছরে ও বিয়ে করে সেখানে আমার ২৯ চলছে। ”

” তোর সাথে কথায় পারি না এখন চল খাবি। ”

..′ফারাহ্’র জ্ঞান ফিরে ছিল চার দিনের দিন। তারা বেঁচে নেই শুনেছে প্রায় বারো দিনের মাথায়। অনেক কেঁদে ছিল সেদিন। কাঁদতে কাঁদতে নাহিয়ান কে বলেছিল ,

“ ভাইয়া আমি পারি নি তারাপ্পি কে তোমার কাছে আনতে ও চলে গেছে। আমি আনতে চেয়ে ছিলাম। বিশ্বাস করো আমি কিছু বলি নি এবার জোর ও করি নি তাও চলে গেছে। তুমি কি এবার ও আমায় মা’রবে? ”

নাহিয়ান ফারাহ্’র অস্থিরতা দেখে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল ,

“ হুঁশ একদম শান্ত থাক মাথায় চাপ দিস না। ” ‚..

মিনা আরাফা জোর করে নাহিয়ান কে ড্রাইনিং রুমে নিয়ে এলেন। শামীমা আখতার একটু রা’গী স্বরে বললেন ,

” এত বড় দামড়া কে প্রতিদিন ডেকে ডেকে খাওয়াতে হয়? দিন দিন বেশি করছো তুমি নাহিয়ান। ”

ড্রাইনিং রুমে এত মানুষের সামনে মায়ের এমন কথা শুনে ভিরমি খেল নাহিয়ান। বেবি ফেস করে গাল ফুলিয়ে বলল ,

” মম এভাবে বলছো কেনো? আমি না তোমার শান্ত শিষ্ট বাচ্চা। ”

” হ্যাঁ আমার শান্ত শিষ্ট বাচ্চা এক সময় ছিল এখন নেই বড়ই পদোন্নতি হয়েছে তার। ”

সুফিয়া হানজালা ডালের বাটি ড্রাইনিং টেবিলের উপর রেখে নাহিয়ানের জন্য ভাত বাড়তে বাড়তে বলে উঠলেন ,

” আপা কি করছেন বলুন তো ছেলেটা খেতে এসেছে বকছেন কেনো? ”

” তাড়াতাড়ি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করতে বলো সুফিয়া। ”

” মম তুমি কোথায় ফেসে গেলে যে তোমায় উদ্ধার করতে হবে। ”

” তুই একটা ও কথা বলবি না আমার সাথে। ”

শামীম আখতার বিরবির করে বকতে বকতে ড্রাইনিং রুম ত্যাগ করলেন। সুফিয়া হানজালা শাসনের স্বরে বলল ,

” নাহিয়ান এসব ঠিক মাকে রা’গাও কেনো? ”

” অভ্যাস হয়ে গেছে ছোট মা। ”

” অভ্যাস তারাতাড়ি পাল্টাও। ”

কথার মাঝে ফাতেহ কে দেখে বললেন ,

” ফাতেহ শুন। ”

” চুড়ুই বোনু কও কি কইবা। ”

” ফারাহ্ কে ডেকে আন তো যা মেয়েটা সে দুপুরের কি খেল। ”

” তুমি এখানে থাকো আমি ইউ যামু আর ইউ আমু। ”
.
ফারাহ্ , সুফিয়ান , রিশাব আরো কিছু কাজিন সহ ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে। বড়’রা কড়া করে বলে দিয়েছেন মিরাজের সাথে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে টাকা নিয়ে আনাগোনা না করতে। যত টাকা লাগে সকালে উনারা দিবেন। বড়দের আদেশ ফেলা যায়। তাই মন ম’রা হয়ে বসে আছে সবাই। হঠাৎ এক কাজিন বলে উঠল ,

” আচ্ছা গানের কলি খেললে কেমন হবে? ”

ফারাহ্ বলল ,

” খুব ভালো হবে খেলা যায়। ”

জারা ফোন স্ক্রোল করতে করতে বলল ,

” বোরিং গেম আমি খেলবো না বাপু। ”

” তোমাকে খেলতে কে বলছে চুপচাপ দেখও না হলে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ”

সুফিয়ানের কথা শুনে থম মেরে বসে রইল জারা। ও ভেবে ছিল সবাই ওকে খেলতে জোড় করবে। তা না করে কেউ ওকে পাত্তা ও দিচ্ছে না। শুরু হল গানের কলি খেলে। এর মাঝেই ফাতেহ এলো।

” আরেহ তোমরা কি খেলো। ”

” গানের কলি খেলি তুমি খেলবা ফাতেহ মামা। ”

ফারাহ্ কথার পৃষ্ঠে ফাতেহ খুশিতে দগদগ করতে করতে বলল ,

” হো খেলুম। ”

বলেই বসে পড়ল। কি জন্য এসেছে সেটা ভু’লে বসল ইতিমধ্যে। গান ঘুরতে ঘুরতে ফাতেহর দিকে এলো। ‘ক’ ‘ক’ দিয়ে গান গাইতে হবে ফাতেহ কে। বেচার গালে হাত দিয়ে কিছু ক্ষণ ভাবল কি গাওয়া যায়? হঠাৎ সোজা হয়ে বসে গলা উঁচু করল। বোধ হয় গান পেয়ে গেছে কোন টা গাইবে!

‘ কেন বলো না , তুমি আমায় বুঝো না
আমি তোমাকে ছাড়া , কিছু ভালোবাসি না
তোমার ঘরবাড়ি আমার , লিখে দিবো বুঝিয়ে
তোমায় নিয়ে যাবো হায় , পৃথিবীকে জানিয়ে
আমার গরুর গাড়িতে , আমার গরুর গাড়িতে
বউ সাজিয়ে , ধুত্তুর ধুত্তুর ধুত্তুর ধুত
সানাই বাজিয়ে , আরেহ যাবো তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে। ‘

ফাতেহ গাওয়া গান টা সবারই প্রিয় জানা শুনা একটা গান। কে না শুনেছে এই গান। ছোট – থেকে বড় সবাই। তাই তো এখন ফাতেহ গাইছে তার সাথে ছাদে উপস্থিত সবাই তাল মিলিয়ে গাইতে লাগলো। সুফিয়ান তো দাঁড়িয়ে হেলে দুলে নাচতে শুরু করে দিয়েছে। প্রায় অনেক ক্ষণ চলল ওদের আড্ডা। আড্ডা শেষ করে খাওয়া দাওয়া করে যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আজকে ফারাহ্ নাহিয়ানের রুমে যায় নি। ওর মায়ের রুমে ছিল। এহসান সারাফাত কোন এক জাগায় গিয়ে ছিলেন। পুরুষদের থাকার জাগার অভাব পড়ে না।

সকাল টা ছিল মনোরোম। আজকে বৌ’ভাতের আয়োজন চলছে। নাস্তা সেরে যে যার কাজে ব্যস্ত। আর ফারাহ্’রা নতুন বউ মানে পপির সাথে আছে। আস্তে আস্তে বেলা গড়াতে লাগলো৷ দুপুর হতেই নতুন অতিথিদের আপ্যায়ন শুরু করল সারাফাত ফ্যামিলি।

_______

” ভালোই ভালোই বিয়ে টা সেরে গেছে আলহামদুলিল্লাহ। ”

” ঠিক বলেছিস এহসান এবার কাজে মন দেওয়া হোক। ”

” হ্যাঁ ভাই আমি ও তাই ভাবছি , আপনি বসেন আমি একটু বাহির থেকে আসি। ”

এহসান সারাফাত চলে যেতেই আফজাল সারাফাত নড়েচড়ে বসলেন। বু’কের ভিতর মেয়ে হারানো ব্য’থা খাঁ খাঁ করছে। না পারছে কাউ কে বলতে না সহ্য করতে। কাকে কি বলবে? সবাই শোকাভিভূত।

” আস’সালামু আলাইকুম ভাইজান। ”

” ওয়া আলাইকুমুস’সালাম , কে? ”

” আরেহ চিনলেন না আপনাগো পুরান বাসার পাশের বাসার মালিক। ”

” ও আসেন আসেন অনেক দিন পর দেখলাম , ফাতেহ বাহিরে দুই কাপ চা দিস , তো বলেন কি খবর। ”

” ভালো , একটা জিনিস কইতে আইলাম। ”

” কি জুরির কিছু? ”

” শুনলাম আপনার ছোড়ু মেয়ে নাকি মারা গেছে? ”

” শুনেছেন যখন মিথ্যা তো শুনবেন না সত্যি শুনেছে। ”

” তো কি ভাবলেন এখন ও যথ থাকবেন? ”

” বুঝলাম না আপনার কথা! ”

” বয়স হল ছেলে মেয়ে বড় হইছে আর আপনারা এখন ও তিন ভাই এক সাথে রইলেন একই ঘরে। ”

” ভাই আপনি কি বলতে চান বুঝিয়ে বলুন। ”

” সুযোগ বুঝে আলাদা হইয়্যা যান, এক লগে আর কত… ”

” চুপ করুন এসেছেন সম্মান দিয়ে কথা বলছি তাই বলে আমার ভাইয়েদের সাথে আলাদা হওয়ার ব্যাপারে কথা বলবেন? আমরা এক সাথে আছি দেখে আজকে এত বড় হলাম। আপনাদের মতো লোকরা আমাদের ভাঙতে পারছে না। আর কেউ কিছু শুনার আগে আসতে পারেন। ”

আফজাল সারাফাতের কর্কশ গলা শুনে লোক টা কাচুমাচু করে চলে গেলেন। ফাতেহ চা এনে হাসি মুখে বলল ,

” জিজ্জা চা এনেছিই। ”

” আমার মাথায় ঢাল। ”

ফাতেহ কিছু ক্ষণ থম মেরে থেকে ট্রেই টেবিলের উপর রাখল। দুই হাতে দুই কাপ চা নিয়ে আফজাল সারাফাতের মাথার উপর ধরল। উনি হকচকিয়ে গিয়ে হন্তদন্ত গলায় বললেন ,

” এই কি করছিস তুই ফাতেহ? ”

” আপনি তো কইলেন আপনার মাথায় চা ঢালতে। ”

আফজাল সারাফাত রা’গী গলায় চেঁচিয়ে বললেন ,

” ফাতেহ দূর হয় আমার চোখের সামনে থেকে সাথে তোর চা ও নিয়ে যা। ”

ফাতেহ আহম্মক বনে যায়। কোনো করম চা ট্রেই নিয়ে ফিরে এলো। বিরবিরিয়ে আওড়ালো , ‘ বুড়া বয়সে কি রা’গ বাবারে। ‘

” কি হল ফাতেহ মামা কি বিরবির করছো? ”

” কি করছি না তাই বলো। ”

ফারাহ্ চিপস খেতে জিজ্ঞেস করল ,

” কি করছো না? ”

” আফজুজিজ্জা আমারে কইলো ‘ফাতেহ বাহিরের দুই কাপ চা দিস’ আমি যখন চা নিয়া বাহিরের যাই তখন শুধু ও-ই বসা ছিল। কইলাম চা আনছি , হে কি কয় হুনবা? ”

” বলুন। ”

” কয় , আমার মাথায় ঢাল। ”

ফারাহ্ চোখ বড় বড় করে বলল ,

” তুমি কি করলে? ”

” ঢেলে দিলাম। ”

” কিহ!”

” মানে আমি ঢালতে যাবো তখন আবার ধমকে বলল , কি করছিস তুই ফাতেহ? আমি বললাম , আপনি তো কইলেন আপনার মাথায় চা ঢালতে! হে কইলো , ফাতেহ দূর হয় আমার চোখের সামনে থেকে সাথে তোর চা ও নিয়ে যা। এটা কোন কথা! ”

হাবিজাবি বকবক করতে করতে কিচেনে চলে গেল। ফারাহ্ হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। পেটের ভিতর সব হাসি ধলাপাকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মুখে নেই কোনো হাসি। কাঁধের ব্যাগ ঠিকঠাক মতো নিয়ে বাড়ি থেকে বের হল। গাড়িতে উঠে বসল কলেজের উদ্দেশ্য। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের সেকেন্ড সেমিনার পরিক্ষা চলছে। মিরাজের বিয়ের জন্য তেমন ভালো করে পড়া হয়নি। বই উল্টে পাল্টে দেখছিল তখনই ফাতেহ বলা কথা গুলো , মুখে রিয়েক্ট , বলার অঙ্গি-ভঙ্গি মনে আসতে হেসে দিল। গাড়ি কলেজের সামনে দাঁড়াতেই ব্যাগ থেকে প্রয়োজনি জিনিস পত্র ফাইলে ডুকিয়ে নিল। ব্যাগ গাড়িতে রেখে কলেজের ভিতরে যায়।
.
মিরাজ সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মিনা আরাফা উদ্দেশ্যে বলে উঠল ,

” বড়াম্মি তোমার বর বাবুর কি হয়েছে সকাল থেকে দেখছি রেগে আছে! ”

” জানি না বাপ জিজ্ঞেস করছিলাম কিছু বলে নি। ”

” ওহ আচ্ছা আমার একটা কাজ আছে হাস্পাতালে যাচ্ছি। ”

” তুই না এক সাপ্তাহর ছুটি নিলি মাত্র চার দিন হল। ”

” ডাক্তারদের আর ছুটি ওইসব শুধু কথা , আসি। ”

পপির দিকে এক নজর তাকিয়ে চলে গেলো মিরাজ। সানা গুটি গুটি পায়ে হাঁটছে এই তো সবে হাঁটা শিখল। সানজিদা মেয়ের পিছন পিছন ঘুরঘুর করতে থাকে। যদি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পায়। এখন ও পুরো হাঁটা শিখে নি। হঠাৎ বলে উঠল ,

” আম্মু এবার আমি আমাদের বাসায় চলে গেলে কেমন হয়? ”

” তোকে যেতে দিবে কেউ তারা মা’রা যাওয়ার পর থেকেই তোকে তোর বাবা , সবাই এখানে রেখে দিয়েছে। ”

” তখন তো বাড়িতে অন্য কেউ ছিল না তাই এখন পপি এসেছে বাড়ি পূর্ণ হল। ”

” রিয়ান দেশে থাকে না এই তো কয়েক দিন পর আবার চলে যাবে। তুই বাচ্চা গুলো নিয়ে একা বাসায় গিয়ে কি করবি? শ্বশুর , শ্বাশুড়ি ও নেই। ”

” রিশাব তো আছে সামলাবে ওদের। ”

” এখন কার সমাজ ভাবি , দেবর খালি এক বাসায় থাকলে নানান কথা বলে। আমরা শত ভালো থাকি সমাজ সেটা দেখে না অন্য টা ভাবে। তুই জামাই আসার আগে বা রিশাবের বিয়ের আগে এক বাড়ি থেকে যাওয়ার কথা মাথায় আনিস না। রিশাব তো আমাদেরই ছেলের মতো। আমাদের বাড়িতে থাক। তার চেয়ে বড় কথা নাহিয়ানের নানুদের আত্মীয় রিশাব’রা দেখিস না শামীমা কত খুশি তোরা এই বাড়িতে থাকিস দেখে। ”

সানজিদা কিছু বলতে যাচ্ছিল তখন সুফিয়া হানজালা আসল হল রুমে। সানাকে কোলে তুলে কপালে কয়েক টা আদর দিয়ে বলল ,

” গুড়ি টা। ”

সানা খিলখিল করে হেসে উঠে। সুফিয়া হানজালা ফের সানা কে খেলতে বসিয়ে দিলেন। মিনা আরাফা , সানজিদার দিকে চেয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন ,

” মা মেয়ে কি কথা হচ্ছে? ”

” সানজুর কথা শুন মেয়ে বলে চলে যাবে তাদের বাসায়। ”

” সে কি কেনো? সানজু তোর অসুবিধা হচ্ছে কোন? ”

” না চাচিমা আমি তো ব্যাস এমনি বলছিলাম। ”

” আর বলবি না এই বাচ্চা গুলো চলে গেলে আমাদের প্রসাদ শূন্য হয়ে যাবে। ”

সানজিদা দুষ্ট হেসে পপির দিকে তাকিয়ে বলল ,

” অতি তারাতাড়ি তুমি ও দাদু হতে যাচ্ছো। ”

পপি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। উনারা বিভিন্ন কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। শামীম আখতার এসে ও যোগ দিল দুই জা’র সাথে। তিন জা মিলে হাসতে হাসতে কথা বলছে৷ উপর থেকে আফজাল সারাফাত সব দেখছেন। বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে রইলেন উনি। কি সুন্দর কেউ এদের দেখে বলবে তিন বোন।
.
ফারাহ্ পরিক্ষা শেষ করে ওর প্রাণ প্রিয় বেস্টির অপেক্ষা করছে। মেয়েটা এখন ও বের হয়নি। কি করছে ভিতরে আল্লাহ জানে! বিদ্যাসাগরে বংশদর। মিনিট দশেক পর বের হয়ে এলো প্রিয়া। ফারাহ্ কে দেখে হেসে দিল। ফারাহ্ দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,

” ভেটকি থামা বিদ্যাসাগরে নাতিনের বড় আম্মার মাইয়্যা। এত ক্ষণ কি করছিলি তুই? ”

” লেখ ছিলাম আর কি করবো সব লিখে আসা লাগে তো। ”

” হলে স্যার কি বেশি সুন্দর নাকি যে লেখার মাঝে স্যার কে দেখেছিস। ”

” তুই জানিস কি করে? জানিস স্যার টা হেব্বি। ”

” তোর মুখের লাজুক ভাব টা এখন যায় নি। ”

প্রিয়া হালকা হেসে বলল ,

” চোখাচোখি হয়েছে তো কয়েক বার তাই। ”

” বাহ চোখাচোখি ও হয়ে গেলো! আমি শুনেছি চোখে চোখে কথা হয়। কি কথা বললি তোরা? ”

মজার সহিত বলেই নিজের বাহু দিয়ে প্রিয়ার বাহুতে আলতো ধাক্কা দিল। প্রিয়া আবার ও হালকা হাসল। এবার হয় লজ্জা পাচ্ছে। কথার প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলল ,

” চল কিছু খাই খিদে পেয়েছে। ”

” দিদারুল স্যার কে দেখার জন্য সকালে না খেয়ে চলে এসেছিস না! ”

” তুই আসিস তোর মজা নিয়া খেয়ে এসেছিলা অল্প আর কি। ”

ভোলাবালা চেহারা করে ফের বলল ,

” চল না ফারু। ”

” আমি কি যাবো না বলেছি নাকি চল। ”

” চল অনেক দিন ফুসকা খাওয়া হয় না আজকে ফুসকা খাবো প্লাস একটু ঘুরবো। ”

ফারাহ্ , প্রিয়া কলেজ থেকে বের হয়ে। কিছু সময় ঘুরাঘুরি করল। ফুসকা খেয়ে যে যার নিজ ঠিকানায় ফিরে যায়। এভাবেই কেটে গেলো কিছু দিন। সুন্দর ভাবেই দিন যাচ্ছে৷ ফারাহ্ পরিক্ষার ঝামেলা ও শেষ। এরই মধ্যে মিরাজ , পপি হানিমুনে গিয়ে ছিল সুইজারল্যান্ড। হুটহাট পরিবারের কিছু কিছু ক’ড়া , শক্তপক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যা থেকে সরে আসা দায়। তেমনি এক পরিস্থিতিতে পড়ল নাহিয়ান। মায়ের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল। বাবার করুন দৃষ্টি কে অগ্রাহ্য করতে পারলো না এইবার। মানতে হল পিতা – মাতার কথা৷ পরিবারের সবার কথা।

#চলবে

®️আহমেদ মুনিয়া
••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here