তোর চোখে আমার সর্বনাশ পর্ব – ১

তোর চোখে আমার সর্বনাশ

১.

বর্ষণ থামলো অনেক খানিক আগেই তবুও আকাশে গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ করছে। বৃষ্টি ভেজা রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটছে তারা। হাস্পাতাল থেকে আসার পথে গাড়ি ন’ষ্ট হয়ে যায়। বর্ষার দিনে গাড়ি মাঝ পথে ন’ষ্ট হওয়াতে ব্যাপক ক্ষি’প্ত তারা। রা’গে ধপ ধপ পা ফেলে হাঁটছে। আকষ্মিক একটা ব্ল্যাক গাড়ি এসে থামে ওর সামনে। মুহূর্তে রা’গ ভুলে বলল ,

” নাহিয়ান। ”

নাহিয়ান উইন্ডর গ্লাস নামিয়ে বলল ,

” ডাক্তার ম্যাম কি জানে আজকে আমরা নিউ বাসা উঠছি। ”

” জানি বলেই তো বের হয়ে পড়লাম। ”

” উঠে এসো। ”

তারা ফ্রন্ট সিটে বসল। নাহিয়ান এগিয়ে এসে সিট ব্ল্যাট বেঁধে দিয়ে সোজা হয়ে বসে তারা মৃদুস্বরে বলল ,

” সবাই চলে গেছে? ”

” ইয়েস মাই লাভ। ”

সারাফাত ফ্যামিলির সবাই আজকে নতুন বাসায় উঠবে। যথা সময়ে পৌঁছে গেল সবাই। নাহিয়ান আর তারা বাদে। ওরা না আসায় কেউ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে নি এক সাথে যাবে বলে। ফারাহ্ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছে। বাড়ির বাহিরের টা দেখেই অস্থির সে ভিতরের টা দেখার আশায়। মিনিট খানি পর নাহিয়ানরা আসতেই সবাই বাড়ির ভিতরে ডুকল। ডুপ্লেক্স বাড়ি এক্কেবারে অত্যাধুনিক সরঞ্জামে ভরপুর চার দিকে। স্বচ্ছ কাচে মড়ানো পুরো বাড়ি। অসম্ভব সুন্দর ডেকোরেশন। চোখ ধাঁধানো। সদর দরজার পরে বাম দিকে উপরে উঠার সিড়ি। যা কাচের ফটোফ্রেমের। সিড়ি রেলিঙ অল সব গ্লাস। লিভিং রুমে মাঝ বরাবর উপরে সিলিংয়ের সাথে ঝুলানো বিশাল একটা ঝার বাতি। উপরের রেলিঙের গুলো কাচের। আলশিয়ান বাড়ি। ফারাহ্ ভাবছে ইঞ্জিনিয়ার কে। মিরাজ তো বলে ছিল পুরো বাড়ি নাহিয়ানের কথা মতো তৈরি। বাড়ির ডিজাইন টা নাকি নাহিয়ানেরই করা। লোকটা রুচি আছে বলতে। আড় চোখে একবার নাহিয়ান কে দেখে নিল। তারার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। ওই দিকে তোয়াক্কা না করে বাড়ি দেখায় মনোযোগ দিল। বাম পাশে সিড়ির নিচ থেকে এর পর কিচেন ঘর। তার পর ড্রাইনিং। কিচেন থেকে ড্রাইনিং -এ যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা আছে। আবার ড্রয়িং রুম থেকে ও যাওয়ার ব্যবস্থা আছে৷ বিশাল বড় গোল ডোর স্পেস। এর পর লিভিং রুম বড় বড় ডিভানে ভর্তি রুম টা। এক পাশে দেওয়ালে বড় একটা টিভি আটকানো তার নিচ বরাবর টিভির কেবিনেট ৷ যা সুন্দর সুন্দর কৃত্রিম ফুল , শোপিস দিয়ে সাজানো। তার পর সব গেস্ট রুম। ড্রয়িং রুম টা ও বেশ বড় মাঝ খান টায় বড় বড় লাজ্জারিয়াস সোফা রাখা। জানালা , পিলার সব কাঁচের গ্লাসে মড়ানো দেখে চুক্ষ চড়াকগাছে ফারাহ্ সুফিয়ানের কানে ফিসফিসিয়ে বলল ,

” ভাই আমার তো মাথা ঘুরছে যে দিকে দেখছি সব কাচ। ”

সুফিয়ান ও ফারাহ্ মতো করে বলল ,

” সব নাহিয়ের আর টাকার কামাল বুঝলি বুড়ি। ”

ফারাহ্ উপরের দিকে যেতে লাগলো। কিছুটা বিব্রত বোধ করছে যদি কাচের সিড়ি গুলো ভেঙে যায়। উপরে সব গুলো নিজস্ব বেড রুম। পুরো বাড়ির সুন্দরর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আলোর ঝলকানি। ফারাহ্ নিজের বরাদ্দকৃত রুমে ডুকে হতবাক। এত ধারুণ রুমে ও থাকবে ভাবতেই অবাক।

” ফের কাচ বারান্দার দিক টা বাদ গেল না। ”

বিড়বিড় করে বলে নরম বেডে গা এলিয়ে দিল। বারান্দার সাইডের দেওয়াল টা কাচের গ্লাসের দেওয়াল। খুব সুন্দর লাগছে। তারা নাহিয়ানের রুমে বসে আছে পুরো বাড়ির সুন্দরর্য এই রুমটাই বেশি মনে হচ্ছে। নাহিয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে তারা কে দেখে মুচকি হেসে বলল ,

” তারারানী ফ্রেশ হয়ে চলে এলে রেস্ট নিতে পারতে। ”

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলে চিরুনি ডুবিয়ে দিল। তারা বেড ছেড়ে উঠে ড্রেসিং কক্ষে ডুকল। বেডের ডান দিক টা আলাদা ড্রেসিং কক্ষ এটাচড। ওয়াশরুম ওই কক্ষে। এটা শুধুই নাহিয়ানের রুমে। নাহিয়ান বাহিরের দেশে থাকা কালিন এমন ফ্ল্যাটে ছিল। পুরানো অভ্যস্ত কাটিয়ে উঠতে পারে নি। তাই নিজের রুম টা আলাদা স্পেস। বেডের পর থেকে বারান্দায় গ্লাস পর্যন্ত বড় ডোর স্পেস। তারা বিনব্যাগের উপর বসে বলল ,

” জনাব কে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিল তাই চলে এলাম। ”

নাহিয়ান তারা সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তারা নাক টিপে দিয়ে মোহনীয় ও গলায় বলল ,

” আজ কাল চোখে হারাচ্ছো না আমায়। ”

” তুমি যখন ইউকে ছিলে খুব মিস করতাম এখন কেনো জানি মিস করতে ইচ্ছে করে না। যখনই মনে পড়ে চলে আসি। ”

” পাগলি একটা। ”

লাঞ্চ করতে বসল সবাই। আফজাল সারাফাত খাবারের ঘ্রাণ পেয়ে বললেন ,

” বাহ আজকে তো ফাটাফাটি ঘ্রাণ আসছে কি কি রান্না করলে বিবি সাহেবা। ”

মিনা আরাফা হাসি মুখে জবাব দিলেন ,

” শিম দিয়ে মাছ , মুরগী , গরু কলিজা ভুনা , মুসুরি ডাল , কলমির শাক ভাজি , মিষ্টি কুমড়োর চপ। ”

এক দমে বলে থামলেন উনি। ইফতেখার সারাফাত বললেন ,

” ভাবি সাহেবা আজকে তো অনেক কিছু রান্না করলেন। ”

” না করে উপায় আছে বাচ্চারা সবাই তো সব কিছু খায় ও না। ”

ইফতেখার সারাফাত হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। আর কথা বাড়ালেন না এই যুগের বাচ্চারা কত কি বাচে এটা খাবে না ওটা খাবে৷“ ওরা খেতে থাকুক। আমি ওদের সবার পরিচয় জানিয়ে দি। বড় ‘আফজাল সরাফাত , মিনা আরাফা (বিবি) , সানজিদা সরাফাত (বড় মেয়ে) , তারা সরাফাত (মেজু মেয়ে), সুফিয়ান সরাফাত (ছোট ছেলে)। মেজু ‘ইফতেখার সরাফাত , শামিমা আখতার (বিবি) , নাহিয়ান সরাফাত (এক মাত্র ছেলে)। ছোট ‘এহসান সরাফাত , সুফিয়া হানজালা (বিবি) , মিরাজ সরাফাত (ছেলে) , ফারাহ্ সারাফাত (মেয়ে)। তিন ভাইয়ের সুখের পরিবার৷ ”

_____

শুক্রবার মানেই ছুটির দিন৷ আরাম আয়েশের দিন। শান্তির দিন। জুম্মার দিন। হ্যাঁ আজকে শুক্রবার। ঈদের মতো উল্লাসে আছে সারাফাত ম্যানসন। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস আছে সবার৷ ফজরের নামাজ আদায় করে কেউ ঘুমায় আর কেউ কুরআন তেলওয়াত করে হাঁটা হাঁটি করে। সকাল সাতটায় ব্রেকফাস্ট করে সকলে এক নিয়ম। প্রতিদিনের মতো আজকে ও নাহিয়ান ছয়টা বায়ান্ন বাজে জগিং থেকে ফিরে এলো। তারা লিভিং রুমেই ছিল। ঘামার্তক নাহিয়ান কে দেখে মৃদু হেসে শুধালো ,

” চলে এলে বসো। ”

নাহিয়ান ক্লান্ত সুরে বলল ,

” তারারানী আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি তুমি এক গ্লাস ফুডস জুস নিয়ে আসো। ”

” আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি। ”

তারা ড্রাইনিং রুমের এসে টেবিলের উপর থেকে ফুডসের মগ থেকে এক গ্লাস জুস ঢেলে নিল। ফারাহ্ , সুফিয়ান চেয়ারে বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল তারা কে সুজ নিতে দেখে ফারাহ্ দুষ্ট হেসে বলল ,

” নাহিয়ান ভাইয়ের জন্য নিচ্ছো। ”

সুফিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠে ,

” নাহিয়ান ভাই ছাড়া আর কাকে উনি সেবা করেন ফারু তুই ও না। ”

তারা ক’ট’ম’টে চোখে তাকালো সুফিয়ানের দিকে। ফারাহ্ উদ্দেশ্য করে বলল ,

” আমার হবু বর আমি নিশ্চয়ই সেবা করতে পারি তাই নারে ফারি। ”

” একদম আপ্পি যাও যাও দেরি হলে আবার চেচাচ্ছি উঠবে। ”

তারা হাসতে হাসতে ড্রাইনিং রুম ত্যাগ করে। নাহিয়ান টিশার্টে পড়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল ,

” এত হাসছো কেনো? ”

” আব কিছু না জুস খেয়ে নাও। ”

” জুস পরে সুইটহার্ট আগে তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে। ”

” কি? ”

” নতুন বাসায় আসা খুশিতে ড্যাড আমাদের সবাই কে ট্রিট দিল। ”

” কি? ”

” ইন্ডিয়া গিয়ে ঘুরে আসা। ”

তারা লাফিয়ে বলল ,

” সত্যি? ”

” ইয়াপ। ”

” আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরি। ”

” তোমারই তো ধরো , না করেছে কে!”

সাথে সাথে তারা ঝাপিয়ে পড়ল নাহিয়ানের উপর। নাহিয়ান ও প্রিয়তমা কে আগলে নিল বক্ষস্থলে।
.
ব্রেকফাস্টের পর্ব শেষ হতেই ইফতেখার সরাফাত সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন ,

” আমরা সবাই ইন্ডিয়া যাচ্ছি আগামী সাপ্তাহ । ”

ফারাহ্ উচ্ছ্বাসের সাথে শুধায় ,

” সত্যি বাবাই? ”

” হ্যাঁ মা। ”

” ইয়াপ অনেক মজা হবে। ”

তারা ফারাহ্ কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল ,

” আমাদের বুড়ি তোর খুশি দেখে আমার এখুনি চলে যেতে ইচ্ছে করছে। ”

মিরাজ বলল ,

” বাবাই সানজিদা’প্পি কে ও আমাদের সাথে নিলে কেমন হয়? ”

” যাবে জামাই বাবা জ্বি আমাদের নাতি , নাতনি ও যাবে। আমরা সবাই যাচ্ছি। ”

মিনা আরাফা বাঁধ সেজে বললেন ,

” নাতির বয়স পাঁচ বছর আর নাতনির মাত্র এগারো মাস একুশ দিন বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে। ওরা বড় হোক জামাই সহ এক সাথে যাবে পরে। ”

ফারাহ্ গাল ফুলিয়ে বলল ,

” বড় আম্মি কি বলো এটা ঠিক না আমরা সবাই মজা করবো আপ্পি যাবে না তা কি করে হয়? আমরা সবাই তো আছি না শামিম , সানা কে দেখার জন্য। আর এখন তো শীতের দিন ও না। ”

” ফারাহ্ ঠিক বলছে আম্মি। ”

নাহিয়ানের কথার পৃষ্ঠে সুফিয়া বলল ,

” সমস্যা কি আপা সবাই যখন চাইছে যাক না। ”

” আচ্ছা সবাই রাজি আমি বাঁধা দিব না সানজিদা নিজে যাবে কিনা কল করে দেখি। ”

বলেই সানজিদার কাছে কল দিলেন মিনা আরাফা। কয়েক বার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করল সানজিদা। ওই পাশ থেকে ব্যস্ত গলা ভেসে আসে ,

” হ্যাঁ মা বলো এতো সকাল সকাল কল দিলে সব ঠিক আছে তো? ”

” সব ঠিক আছে। তোদের কি অবস্থা বল আমার মনি’রা কি করছে? ”

” শামিম স্কুলে গেছে সানা রিয়ানের কাছে বাহিরে। ”

” জামাই বাবা বাসায় আছে? ”

” জ্বি মা। ”

” আচ্ছা শুন যে জন্য কল দিলাম তোর বাবা চাইছে আমরা সবাই মিলে ইন্ডিয়া যাই কয়েক দিনের জন্য। ”

” এতো ভালো কথা যাও। ”

” তুই ও যাচ্ছিস সাথে জামাই বাবা ও। ”

” তা কি করে হয় মা তুমি তো জানোই আমার দেবর আমাদের সাথে থাকে ওকে একা রেখে কি করে যাই!”

লাউড স্পিকার থাকায় সবাই সানজিদার কথা শুনতে পাচ্ছে। শেষের কথা গুলো শুনে এসহান সারাফাত বলে উঠলেন ,

” সাজনু মা রিশাব ও আমাদের সাথে যাবে সমস্যা কি আমি ব্যাবস্থা করে নিবো। সাত দিনের মধ্যে সবার পাসপোর্ট , ভিসা তৈরি হয়ে যাবে। ”

” ধন্যবাদ ছোট বাবা। ”

” রাখছি তাহলে। ”

কথা শেষ করে কল কেটে দিলেন মিনা আরাফা। সকলের মুখে হাসি লেগে আছে। অনেক দিন পর ফ্যামিলি ট্রিপে যাচ্ছে ওরাহ।

______

পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে গোছানো। ঘনিষ্টি আত্মীয় আর প্রতিবেশী’রা এসে এসে দেখে যাচ্ছে। একেক জনে একক ধরনের প্রশংসা করেই যাচ্ছে। অনেকে তো তারা কে নিজের ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাইছে। এদিকে নাহিয়ান সাপের মতো ফোসফাস করছে। তারা তো সে ভাবে মজা নিচ্ছে।

সকাল থেকে তারার পিছন পিছন ঘুরছে ফারাহ্। বাহানা মেলায় যাবে। এমনি শহরে সাধারণ মেলা বসেছে। কোন আহামারিয়া মেলে ও না। না বাণিজ্য মেলা। না বই মেলা। তাও মেয়েটা যেতে ইচ্ছুক। এদিকে তারার যেতে ইচ্ছে করছে না। নাহিয়ান বাড়িতে নেই। নতুন নতুন অফিসে জয়েন করেছে এমডি হিসেবে। নাহিয়ান যাওয়ার আগে কয়েক বার করে বলে গেছে তারাকে বাড়ি থেকে বের না হতে। ফারাহ্ নাছড়বান্দা যাবে মানে যাবে। মিরাজ হাস্পাতালে। সুফিয়ান ভার্সিটিতে। ফারাহ্ একা ও যেতে পারবে না। মাত্র ক্লাস টেনে উঠল মেয়ে টা। পরিবারের সবার ছোট হওয়ায় একা ছাড়ে না ওকে। বাধ্য হয়ে তারা মেলায় যেতে রাজি হল। ফারাহ্ ঝটপট তৈরি হয়ে আসে। সাথে তারা ও। গাড়িতে বসতে যাবে তখনই ফারাহ্ বলল ,

” তারাপ্পি আমরা রিকশায় যাই। ”

” পা’গ’ল তুই বুড়ি নাহিয়ান জানলে আস্ত গিলে খাবে। ”

” তোমার কাছে তোমার হবু বর -ই বেশি না। আমার কথার কেউ দাম দে না। ”

” বুড়ি দাম দে না মানে কি তোর কথা রাখার জন্যই তো যাচ্ছি মেলায়। ”

” তাহলে আরেক টা কথা সেটা ও রাখো। ”

” আচ্ছা বইন চল। ”

দু’জনে রিকশায় চড়ে মেলার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিছু সময়ের মাঝে মেলায় ও চলে আসে। প্রায় অনেক ক্ষণ ঘুরাঘুরি কেনা কাটা করার পর হুট করে বি’ক’ট শব্দ শুনতে ফেল সবাই। তারা অস্থির হয়ে বলল ,

” বুড়ি আমার মনে হচ্ছে গ’ন্ডো’গল শুরু হবে চল ফিরে যাই। ”

” আরেহ্ আপু কি বলো কি সুন্দর সবাই হাঁটছে দেখ এটা বাজির আওয়াজ হবে। ”

বলেই জিনিস দেখায় মনোযোগ দিল। তারা ভাবলো হবে হয় তো ‘বাজি টাজি কিছু। ওর ভাবনা পুরো পালটে গেলে সেকন্ডেই। হৈচৈ শুরু হয়ে গেলে মুহূর্তে। গুলা’গু’লির আওয়াজ। বো’ম বি’স্প’রনের আওয়াজ। বুক মোচড়ে উঠল তারার আশে পাশে কোথাও ফারাহ্ দেখতে পারছে না। যে জায়গায় ছিল সব খুঁজে নিল। ফেল না। এর মধ্যেই তীরের মতো ধনুক একটা এসে ওর পিঠে গেঁথে গেল। ব্যথায় মুখ থুবড়ে পড়ল মাটিতে। কত জন দৌড়াতে গিয়ে ওকে পা দিয়ে পিষে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে চোখ বুজে এলো তারা। শেষ বারের মতো নাহিয়ান কে দেখতে ইচ্ছে করল। সব ইচ্ছে কি পূরণ হওয়ার!

_______

গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফারাহ্। খানিক আগে দাবা মার্কা চ’ড় খেল নাহিয়ানের হাতে। ওর জন্য আজকে তারা নিখোঁজ। মিনা আরাফা টিভিতে দেখল মেলার অবস্থা। সাথে সাথে নাহিয়ান , মিরাজ কে কল করে জানালো তারা , ফারাহ্ মেলায় গেছে। তাও রিকশায় চড়ে। ওরা হন্তদন্ত হয়ে মেলায় গেল। সব লন্ডবন্ড। ফারাহ্ বিশাল বড় আম গাছের পিছনে বসে কাঁদছিল মিরাজ ওকে নিয়ে আসে বাড়িতে। তার ঠিক এক ঘন্টা পর নাহিয়ান খালি হাতে বাড়িতে ফিরে। উশখুশ হয়ে। পুরো মেলায় আশে পাশে তন্ন্য তন্ন্য করে খুঁজে ও তারা কে ফেল না। বাড়িতে এসে সুফিয়া হানজালার কাছে যখন জানতে পারলো ফারাহ্ জেদের জন্য তারা মেলায় গেছে তখনই মাথা র’ক্ত উঠে যায়। কিছু না ভেবে ফারাহ্ কে থা’প্প’ড় দিয়ে বসে। বাড়ির সবাই এক মেয়ের চিন্তায় এতোই ম’রি’য়া হয়ে উঠল ফারাহ্কে মারা এই থা’প্প’ড় টা কারো চোখেই পড়ল না। অভিমানে শ’ক্ত হল ফারাহ্।

রাত প্রায় নয়টা পুরো বাড়ি থমথমে৷ কারো মুখে পানি পর্যন্ত উঠে নি। তারার খোঁজ চলচ্ছে চার দিকে। নাহিয়ান সে যে দুপুরে বের হল এখন ও এল না। ফারাহ্ স্থির হয়ে ঘরের এক কোণে বসে আছে। হাসউজ্জ্বল বাড়ি টা এখন মৃত্যুপুর থেকে কম লাগছে না। হঠাৎ লেনলাইনে কল এলো। সানজিদা গিয়ে দেখল কে কল দিল। দুপুরের দিকে বোনের নিখোঁজ সংবাদ শুনে ছুটে এলো।

” কে বলছেন ? ”

” আ্ আপ আ্পু আমি্ তারা বলছি। ”

” তারা। ”

সবাই ছুটে গেল সানজিদার কাছে আফজাল সরাফাত টেলিফোন কে’ড়ে নিয়ে বললেন ,

” মা কই তুই? ”

” বাবা আমি সিটি হাস্পাতালে আছি। ”

” আমরা আসছি মা। এক্ষুনি আসছি। ”

মিনা আরাফা বললেন ,

” কে ছিল আমার তারা। ”

” হ্যাঁ ও সিটি হাস্পাতালে আছে তোমরা বাড়িতে অপেক্ষা কর আমরা নিয়ে আসছি চল মিরাজ। আর নাহিয়ান কে কল করে বলে দে মিরাজ তারা র খোঁজ মিলেছে। ”

” জ্বি বড় বাবা। ”
.
তারা নার্সকে তার ফোন ফিরিয়ে দিয়ে ভা’ঙা গলায় বলল ,

” ধন্যবাদ আপনাকে ফোন দেওয়ার জন্য। ”

” ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই আমরা আছি আপনাদের সেবা করার জন্য। অসুবিধা হলে ডাকবেন। আশা করি কিছু সময়ের মাঝে আপনার পরিবার চলে আসবে। ”

#চলবে

®️আহমেদ মুনিয়া
•••••×কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ×

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here