তোর মায়ায় আবদ্ধ পর্ব ১৩

#তোর_মায়ায়_আবদ্ধ
#পর্ব_১৩
#আঁধারিনী(ছদ্মনাম)

শুভ্র মুহুর্তেই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো।দাঁতে দাঁত চেপে বললো ” আপনি যেই মেয়ের সাথে বিয়ে করার করার জন্য আমাকে সাক্ষী হতে বলছেন আমি কি জানেন সেই মেয়ে বিবাহিত।”

অভ্রের চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও কতোটা শকড হয়েছে।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে থমথমে গলায় আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

” এই লোকটা যা বলছে এটা কি স..সত্যি আলমুন?”অভ্রের গলা কেঁপে উঠছে বারংবার।

আমার মুখ দিয়ে এই মুহুর্তে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।কি’বা বলার আছে আমার?এতোদিন এই মানুষ টাকে নিয়ে যা ভেবেছি সব তো ভুল ছিলো।আজ নিজেকে কেমন জেনো অপরাধী লাগছে।আমার তো উচিত ছিলো অভ্রের হঠাৎ এমন পরিবর্তন টার পিছনের কারণ টা খুঁজে বের করা।তা না করে আমি ভুল বুঝলাম!আর আরেকজনকে বিয়েও করতে রাজী হয়ে গেলাম।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি অভ্রকে দেওয়ার মতো কোনো উত্তর যে আমার কাছে নেই।

” তোমার এই নীরবতা কিন্তু ওই লোকটার কথা মিথ্যে কথা গুলোকে জিতিয়ে দিচ্ছে ।আলমুন চুপ থাকবে না একদম। অ্যান্সার মি আলমুন!” শেষ কথাটা খুব রেগে চেচিয়ে বললো অভ্র।

” এটা পাবলিক প্লেস এখানে চেচাবেন না।আপনার চেঁচানোতে আপনার কিছু নাহলেও কিন্তু আমার আর আমার বউয়ের সম্মান টা নষ্ট হবে।সো প্লীজ মিস্টার অভ্র আওয়াজ নিচে রাখুন” বিরক্তের সুরে শুভ্র বললো।

শুভ্রের এই কথাটা জেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো করে কাজ হলো অভ্র আরো রেগে গেলো।শুভ্রের দিকে হাত উঠাতে গিয়েও কি ভেবে জেনো থেমে গেলো। তারপর আমার হাত ধরে বাইকের সামনে এনে চোখমুখ শক্ত করে বললো,

” আলমুন তাড়াতাড়ি উঠে বসো।”

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার হাতটা অভ্রের হাত থেকে ছো মেরে সরিয়ে নিয়ে এলো শুভ্র।

” এই নিয়ে তিনবার আপনি আমারই সামনে আমার বউয়ের হাত ধরলেন।এখানে আমার বউ পড়তে আসছে তাই এই জায়গায় আমি কোনোরকম সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না।যার দরুন আপনি এখনো জিন্দা বেঁচে আছেন।বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু এসব আর দেখবো না।” বললো শুভ্র।

” তুই কাকে হুমকি দিচ্ছিস?তোর হুমকিতে আমি ভয় পাই?আলমুন আমার ছিলো আছে আর আমারই থাকবে।এখুনি তোর চোখের সামনে দিয়ে আমি ওকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো পারলে আটকে দেখা।”এইটুকু বলেই পুনরায় আমার হাত ধরতে আসলেই শুভ্রের শক্ত হাতের পাঞ্চ খেতে হয় অভ্রকে।

অভ্র ঢাল সামলাতে না পেরে ছিটকে গেইটের সামনে থেকে কম্পাসের মধ্যে গিয়ে পরে।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হকচকিয়ে উঠলাম। অভ্রের নাক থেকে কয়েক ফোঁটা রক্ত বের হচ্ছে। তা দেখে আমি দ্রুত অভ্রের দিকে অগ্রসর হতে নিলে শুভ্রকে আমার হাত ধরে ফেলে।এরমধ্যে ভার্সিটির অনেকেই এমন একটা ঘটনা দেখে গোল হয়ে ঘিরে ধরেছে আমাদের।ভিসি স্যারও চলে এসেছে ঘটনা স্থলে।উনি এসেই ব্যতিবস্ত হয়ে শুভ্রকে জিজ্ঞেস করে উঠলেন,

” শুভ্র কি হয়েছে এখানে?আর এই ছেলেটাকে?ওর এমন অবস্থাই বা কেন!”

ভিসি স্যারের কথার জবাবে গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো ” এই ছেলে আমার স্ত্রীর হেরেসমেন্ট চেষ্টা করেছিলো।এইরকম উটকো লোকজন ভার্সিটির আশেপাশে আসে কি করে?”

” আলমুন মায়ের কিছু করেনি তো?দাঁড়াও এর ব্যবস্থা আমি করছি।তুমি চিন্তা করো না আর কখনো এমন কিছু হবে না।”

ভিসি স্যারের সাথে আরো কয়েকটা কথা বলেই শুভ্র আমাকে নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো।জানিনা অভ্রের এখন কি অবস্থা।আমার এখন ঠিক কি করা উচিত আমি বুঝে উঠতে পারছি না।শুভ্রের মধ্যে আজ আমার প্রতি অধিকার বোধ দেখলাম। কিন্তু যেই লোকটা আমাকে মেনেই নিতে পারেনি সেই লোকটা হঠাৎ করে এতো অধিকার বোধ কেনো দেখাচ্ছে!আর অভ্রের সাথে ওইরকম না করলেও পারলো।আমার একদম মাথা কাজ করছে না।তবে শুভ্রের এই কাজ টা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি।

” তোমায় কি এখন ইনভাইট করে বাইকে উঠানো লাগবে!”

শুভ্রের কথায় আমার ভাবনা জগতের ছেঁদ ঘটলো।চুপচাপ মলিন মুখে দুরত্ব বজায় রেখেই শুভ্রের পিছনে উঠে বসলাম।আমার কাজে শুভ্র বিরক্ত হলো।কিন্তু মুখে কিছু বললো না।বাইক স্ট্রাট দিয়ে চলা শুরু করলো।কিন্তু বাড়ির পথ রেখে উল্টো দিকে বাইক ঘুরতেই আমার কপাল কুঁচকে এলো।

” এইদিকে কোথায় যাচ্ছেন?এটা তো বাড়ির রাস্তা না।”

” আমি কখন বললাম যে বাড়ি যাবো।”শুভ্র ভাবশীল ভাবে উত্তর দিলো।

এমনিতেও মনমেজাজ ভালো না তারউপর এই লোকের এমন ত্যাড়া ত্যাড়া কথা নেওয়া যাচ্ছিলো না। বিরক্ত হয়ে আবার বললাম,

” সোজা প্রশ্নের সোজা উত্তর দিলেই তো পারেন।আপনার তো আমাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। ”

” এখন তোমায় বাড়ি নিয়ে গিয়ে আমি বাবার হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হই।আমার সাথে গেলেই প্রবলেম আর তোমার ওই প্রাক্তন যখন হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন কই ছিলো তোমার এই বিরক্তি।এখন চুপচাপ বসে থাকো।” কড়া গলায় বললো শুভ্র।

আমিও আর কথা বাড়ালাম না।এখন কোনো কিছুই ভালো লাগছে না।সব কিছুই আমার কাছে এখন বিষাদময়।শুভ্র আমাকে নিয়ে পদ্মা নদীর পাড়ে এসেছে।আমার নদী খুব পছন্দ। আমাদের বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরেই একটা ছোটো নদী আছে।আমার যখনই খুব মন খারাপ থাকতো অধরা বা আকাশ ভাইয়ার সাথে নদীর পাড়ে গিয়ে নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকতাম।মাঝে মাঝে কাউকে না পেলে একাই যেতাম।নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলেই কেনো জানি না আমার সব মন খারাপ নিমিষেই উধাও হয়ে যেতো।

” কি হলো নদীর পানিতে পা ডুবাবে না।”কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো শুভ্র।

আমি অবাক নয়নে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছি।নদীতে পা ডুবানোর কথা কি করে জানলো উনি।কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই উঠলাম

” আমি নদীতে পা ডুবিয়ে রাখতে পছন্দ করি এই কথা আপনি জানলেন কি করে?আপনার সাথে তো আমার পরিচয় মাত্র কয়েকদিনের আমরা তো নিজেদের কে ঠিকভাবে এখনো চিনিও না।তাহলে?”

” এখন থেকেই চিনতে শুরু করবা।আর কে বলেছে আমি আমাদের পরিচয় মাত্র কয়েকদিনের”

” কিহহ!আমরা আগের পরিচিত! কিন্তু আমার তো মনে পরছে না আপনাকে সেই বিয়েতে ছাড়া আর কখনো কোথাও দেখেছি।”চরম বিস্ময় নিয়ে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছি।কিছু একটা ভেবে উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলাম,

” তাহলে কি সিনেমার মতো আমারো কোনো একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। যার জন্য আমি আগের সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলছি।কিন্তু আমার তো এমন কিছু মনে পড়ছে না।”

আমার কথা শুনে শুভ্র মুহুর্তেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে ফেললো।

” এমন কোনো ঘটনাই কখনো ঘটেনি।”

” তাহলে?”

” তোমাদের বাড়ি যখন ছিলাম তখন তোমার বোন অধরা বলেছিলো তোমার নাকি নদী খুব পছন্দ। মন খারাপ হলেই নাকি তুমি নদীর পাড়ে গিয়ে পা ডুবিয়ে রাখো।আর ম্যাজিকের মতো নাকি তোমার সব মন খারাপ উধাও হয়ে যায়।”

” হুম কিন্তু একটু আগে কেনো বললেন যে আমাদের পরিচয় কয়দিনের না?”আমি ভ্রু কুঁচকে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছি।

আর শুভ্র হতাশ ভঙ্গিতে বললো ” ছোটোবেলায় একবার বাবার সাথে তোমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম। তাই বলেছিলি কয়দিনের পরিচিত না।”

আমি আবার কিছু একটা জিজ্ঞেস করবো তার আগেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই বললো “তখন তোমার বয়স ছিলো দশ থেকে বারোদিন।আর আমার বয়স ছিলো ছয় বছর তাই আমার তোমাকে মনে থাকলেও তোমার আমাকে মনে নেই।আশা করি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছো।”

তারপর আর আমাদের মধ্যে তেমন কথা হয়নি।কিছুক্ষণ নদীর পাড় ঘুরতে ঘুরতেই বেলা একটা বেজে গিয়েছিলো। যেহেতু আমার ক্লাস একটা অবধি তাই একটা বাজতেই আমরা বাড়ি চলে এলাম।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here