দুষ্টু মেয়ে যখন পার্ফেক্ট বউ পর্ব -০১

#দুষ্টু_মেয়ে_যখন_পার্ফেক্ট_বউ👰
#লেখিকা_দিয়া_মনি
#পর্ব_১

—– সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে তূর্য।আকাশ জুড়ে শ্রাবণের কালো মেঘ ছেয়ে আছে।তূর্যের সামনের দিকের চুল গুলা বেশ বড়।একটু পর পর দমকা বাতাসে তার সামনের চুল গুলা উড়ছে।মনে হচ্ছে খুব জোড়ে বৃষ্টি হবে।তূর্য ঝড়ের আভাস বেশ ভালো মতোই টের পাচ্ছে।কিছু একটা ভাবতে ইচ্ছা করছে তার। কিন্তু মাথা একদম ফাকা ফাকা মনে হচ্ছে।
,
,
—— এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।তবুও অন্যমনস্ক হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তূর্য।আকাশে মেঘের গর্জন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।মূহুর্তের মধ্যেই তূর্যের সমস্ত শরীর ভিজিয়ে দিলো শ্রাবণের প্রথম বৃষ্টি।
,
,
—– চোখ বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সে।তার কাঁধে হাত রাখলো।হাত দিতেই তূর্য খানিকটা চমকে উঠলো।চোখ মেলে তূর্য দেখে তার সামনে মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে।তূর্য বেশ কয়েকটা কথা বললো মেঘলাকে।



—– মেঘলা তূর্যের কোন কথার জবাব না দিয়ে ছাদের রেলিংটা ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।

—- বৃষ্টির গতি খানিকটা কমে গেলে তূর্য বাসার ভিতরে চলে গেল।তার পিছুপিছু মেঘলাও ছাদ থেকে নেমে আসলো।

—— ড্রয়িংরুমে মেঘলার লাগেজটা দেখে তূর্য বেশ অবাক হয়।৮ মাস হলো তূর্যের বাবা মারা গেছেন।উনার ব্যবসা এখন তূর্যের বড় ভাই ফারহান দেখে। ফারহান বিবাহিত।ফারহান ফ্যামিলি নিয়ে নিচ তলায় থাকে।আর তূর্য দোতলাতে একাই থাকে।
,
,
—– বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর তূর্য বাসায় এসে উঠেছে।এই বাসার ছেলে হলেও তূর্যের কারোর সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলোনা।তূর্যের মা মারা যাওয়ার পরে একেবারেই বাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছিল তূর্য।
,
,
—— মা বেঁচে থাকাকালীনও তূর্য বাসায় খুব একটা আসত না।বড় ছেলেকে সামলাতে সামলাতে কখন যে ছোট ছেলে অনেকটা পিছিয়ে গেছে সেটা তারা খেয়ালই করেনি।
,
,
—— আর যখন খেয়াল করেছে তখন পারিবারিক বন্ধন থেকে একেবারেই ছিটকে পরেছিল তূর্য।পরে যখন বাবা মারা গেলো তখন ফারহান নিজে গিয়ে তূর্যকে নিজের বাসার দায়িত্ব নিতে বলে।।
,
,
—— আর ব্যবসায় থেকে যা প্রফিট আসে মাস শেষে সেইটার অর্ধেক তূর্যের এক্যাউণ্টে জমা করে দেয়।মাষ্টার্স কম্পলিট করেছ মাস তিনেক হলো তূর্য।
,
,
,
—— বুয়া এসে রান্না আর কাপড় গুলা কেঁচে দিয়ে যায়।বই পড়া, মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে যাওয়া,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া,পরিচিত কারোর সাথে দেখা হলে ধোয়া ওঠা গরম চায়ের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা সব মিলিয়ে এভাবেই উদ্দেশ্যহীন ভাবে চলছিলো তূর্যের বেস্তহীন জীবন।
,
,
—- বাথরুম থেকে চেঞ্জ করে ঘাড়ে টাওয়েল নিয়ে বের হল তূর্য।

—– ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে লাগেজটার দিকে তাকিয়ে মনের মধ্যে জমা হওয়া রহস্য ভেদ করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে তূর্য।
,
,
—– মেঘলা এইখানে? কিন্তু কেন??

তূর্য যখন রহিম চাচার বাসায় ভাড়া থাকত।তার পাশের বাসাটাতে মেঘলার মামার বাসা ছিলো।মেঘলার বাবা মা নেই।ছোট বেলায় বাবা মারা যাই।তখন থেকে মেঘলাকে নিয়ে তার মা মামার বাসায় চলে যায়,ছোট থেকে মামার কাছেই বড় হয় মেঘলা।৩ বছর আগে মা কেও হাড়ায় মেঘলা।মার পেনশন দিয়ে কোনরকমে দিন পার হয়ে গেলেও মামা নিজে থেকেই মেঘলার দায়িত্ব নেয়।
,
_____ রহিম চাচার বাসায় উঠছে তূর্য আজ চারদিন হলো।একদিন সকালে জব্বার চাচার দোকানে গিয়ে বসেছিল তূর্য।জব্বার চাচার মুদির দোকান কিন্তু দুধ চা টা যা বানাই পুরাই অস্থির।এই সময়টাতে তেমন কেউ ঘুম থেকেই ওঠেনা।দোকান একেবারেই ফাঁকা।
,
,
—– মাঝে মাঝে কেউ আসছে তাদের প্রয়োজনীয় যা লাগবে নিয়েই চলে যাচ্ছে।তূর্য চাচাকে এক কাপ চা আর সাথে একটা বিস্কিট দিতে বলে।
,
—— নিউজপেপারটা হাতে নিয়ে একটু উল্টে পাল্টে দেখছিল তূর্য।তখনি একটা মেয়ের কন্ঠে শুনে নিউজপেপারটা মুখের সামনে থেকে একটু নিচু করে মেয়েটার দিকে তাকাল।
,
—— মেয়েটা তূর্যের দিকে একবার তাকালো তারপর দোকানের বেঞ্চটাতে বসতে বসতে জব্বার চাচাকে বললো।

—– আমাকে এককাপ চা দিয়েন তো।ফুল কাপ দিবেন।
,
,
—– চাচা একটু হাসলো। তারপর তূর্যকে চা আর বিস্কিটটা দিয়ে মেয়েটার জন্য চা বানাতে লাগলো।

তূর্য নিউজপেপারটা তার বাম পাশে রেখে চায়ের মধ্যে বিস্কিট ডুবিয়ে খাচ্ছিল।
,
,
,
—— এই যে মি. নিউজপেপারটা পাস করুন।(মেয়েটা)

——- জ্বী„„„„কিছু বলছেন মিস„„„„„„(তূর্য)

—— বললাম নিউজ পেপারটা পাস করুন।কানে শুনেন না নাকি।(মেয়েটা)

____ তূর্য নিউজ পেপারটা মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিল, নিউজ পেপারটা নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো মেয়েটা।

—– তারপর জব্বার চাচা কে দেখল তূর্য চায়ের কাপের মধ্যে একটা ছোট প্লেট দিয়ে মেয়েটার পাশে চায়ের কাপটা রাখতে।চায়ের কাপের মধ্যে প্লেট দেয়া দেখে তূর্যের বেশ কৌতূহল হলো।অনন্ত এই সব দোকানে প্লেট পাওয়া যাই না।তূর্য নিজের চা খাওয়া বাদ দিয়ে মেয়েটার চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে রইল।
,
,
মেয়েটা প্লেটে একটু করে চা ডেলে ফুঁ দিচ্ছে আর খাচ্ছে।ব্যাপারটা তূর্যের খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো।তূর্যের চা খাওয়া বাদ দিয়ে সে বেশ মজা নিয়ে ব্যাপারটা আড় চোখে দেখে যাচ্ছিল।ইতিমধ্যে মেয়েটার চা খাওয়া শেষ।জব্বার চাচা কে চায়ের টাকাটা দেয়া শেষ করে তূর্যের সামনে এসে দাঁড়ালো।
,
,
____ এভাবে আড় চোখে তাকিয়ে দেখাটা কিন্ত খুব অন্যায়।এইসব বদ অভ্যাস বাদ দেয়াই শ্রেয়।(মেয়েটা)
,
,
—– কথাটা শুনে তূর্য খুব লজ্জা পেয়েছিল। কথাটা বলার পরে মেয়েটা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে চলে গেলো..।

তূর্য মেয়েটার গমন পথের দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চায়ের বিলটা দিয়ে বাসায় ফিরে গেল।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here