দ্বিতীয় ফাগুন পর্ব -০১

_ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে হওয়া যে ভয়ংকর একটা অপরাধ তা তো এতদিন বলো নি। আজ হঠাৎ করে বুঝতে পারলে?
রোদেলা প্রশ্নটি করে সরাসরি জাহিনের চোখের দিকে তাকায়। রোদেলার শীতল দৃষ্টি জাহিনকে কিঞ্চিত ঘাবড়ে দেয়। রোদেলাকে এতদিনে অনেকটাই পড়ে ফেলেছে সে,‌কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছে রোদেলার মনে কি চলছে। ডান হাতটা বাড়িয়ে রোদেলার হাতের উপরে আলতো করে হাতটা রাখে সে। রোদেলা হাত সরিয়ে নেয় না,সে জাহিনের দিকেই তাকিয়ে আছে।
_রোদেলা। আমার মা….
_তোমার মায়ের যে আমার মা বাবার ডিভোর্সের ব্যাপারটা নিয়ে সমস্যা হতে পারে সেকথা আগে কেনো মাথায় এলো না তোমার? গোটা তিনবছর যে নিয়ম করে রেস্টুরেন্টে বসে আমার হাত ধরে কচলাতে তখন মাথায় আসেনি কেনো যে আমার বাবা মার ডিভোর্স হয়েছে সেটা নিয়ে তোমার পরিবারের সমস্যা হতে পারে!?
জাহিনকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে রোদেলা আবারো প্রশ্নের তীর ছুড়ে মারে তার দিকে।
জাহিন মিনমিন করে বলে ওঠে,”রোদেলা আমি মাকে মানিয়ে নেবো।”
এক ঝটকায় জাহিনের থেকে হাত সরিয়ে নেয় সে,”আর কিছু বলে নি তোমার মা? বলেনি আমি বুড়ি, আমার বয়স বেশি হয়ে গেছে?”
জাহিন চুপ হয়ে যায়। রোদেলার কথা সত্যি। রোদেলা ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে এই বিষয়টা ছাড়াও পাত্রী হিসেবে রোদেলার বয়স নিয়ে তার মায়ের ঘোর আপত্তি। বেশ কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। জাহিনের নিস্তব্ধতা রোদেলাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়, মনে মনে খানিকটা আহত সে হয় কিন্তু কন্ঠে তা প্রকাশিত হয়না। রোদেলা নিজের দুর্বলতা এতো সহজে প্রকাশ করার মেয়ে নয়। দৃঢ় কন্ঠে বলে ওঠে,
“এতো হীনমন্যতায় ভোগার কিছু নেই। কাল রাতে আমি অনেক ভেবেছি। তুমি একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা, আমি একটা কোম্পানির সাধারণ একাউন্টস অফিসার। কোনো ভাবেই আমাদের যায় না। তোমার পরিবার চাইলে দুদিনের মধ্যে তোমার মতো কোনো প্রফেসর কিংবা অতিমাত্রায় সুন্দরী কচি বালিকা এনে দেবে তোমায়। আমাদের দুজনের পেশাগত,ফ্যামিলিগত যে ব্যবধান সেটা সবসময়ই থাকবে। তুমি ভেবো না, আমি কোনো অষ্টাদশী আবেগী প্রেমিকা নই যে তোমার বিরহে হাতের শিরা কেটে হসপিটালে ভর্তি হবো। তা তুমি এতো বছরের আলাপে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছো।‌ এই সম্পর্ক এখানেই শেষ। দুজনে আলাপচারিতার নামে তিনটা বছর নষ্ট করেছি। আর সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।”
জাহিন কিছু বলে না। মাথা নিচু করে বসে আছে । এমন সময় ওয়েটার আসে বিলের কাগজ নিয়ে। জাহিন মাথা উঠিয়ে তাকায়,হাত বাড়িয়ে বিল টা নিতে যাবে অমনি রোদেলা খপ করে বিলের কাগজটি নিয়ে ওয়েটারকে বিল মিটিয়ে দেয়। মোট পাঁচশ পঞ্চাশ টাকা বিল হয়েছে। রোদেলা ছয়শো টাকা দেয়। রেস্টুরেন্টের ওয়েটার বাড়তি পঞ্চাশ টাকা টিপস্ পেয়ে খুশি হয়ে চলে যায়। জাহিন রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে, রোদেলা বলে,”আজ আমার বিল দেওয়ার পালা ছিলো। গত সোমবার তুমি দিয়েছিলে।”
পুনরায় দু’জনে নিরব থাকে। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। রেস্টুরেন্ট টা ক্রমে ক্রমে ফাকা হয়ে যাচ্ছে।

ব্যাগ কাঁধে তুলে রোদেলা উঠে দাঁড়ায়। জাহিনের দিকে তাকিয়ে ঠোট বাঁকিয়ে হেসে বলে,”এই মাত্র এখানে একটা বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে সেটা ওরা কিভাবে টের পেলো বলো তো? স্যাড মিউজিক চালিয়ে রেখেছে দেখেছো।”
জাহিন রোদেলার কথার পিঠে বলে,”রোদেলা আমি দুঃখিত।”

রোদেলা মৃদু হাসে। কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে বলে,”ভালো থেকো !”

রাত নয়টা বেজে আঠেরো মিনিট। সারাদিন অফিসে গাধার খাটনি খেটে গা ম্যাজম্যাজ করছে। এতক্ষণ রোদেলা মাথা বাম পাশে কাত করে জানালায় ঠেকিয়ে বসে ছিলো। তার দৃষ্টি জানালার বাইরে। একমনে রাস্তার পাশের দোকানগুলো দেখছে সে। হঠাৎ করে একটা হাতের বাজে স্পর্শে রোদেলা চমকে উঠে তার ডানপাশে তাকায়। তার পাশের সিটে বসে আছে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ। নিজের হাত টা সে রোদেলার কোমরের কাছে রেখেছে। এমন ভাবে রেখেছে যেন ব্যাপারটা বেখেয়ালি ভাবে হয়েছে। সে ইচ্ছে করে কিছু করেনি। রোদেলা ঠোঁট বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।‌ পুরুষ জাতের এই ধরনের নটাঙ্কি সে ভালো করেই বুঝতে পারে। সে খুবই পরিচিত এসবের সাথে। গলার স্বর যথেষ্ট নিচু করে সে বলে ওঠে,” আমার কোমরের চামড়া ধরে টানাটানি করা হয়ে গেলে নিজের মেয়েকে একটা ফোন দিয়ে খোজ নিন আঙ্কেল, হয়তোবা এখন অন্য কোনো পুরুষ আপনার মেয়ের কোমরে হাত বুলিয়ে দেখছে কত নরম চামড়া।”

রোদেলার কথায় হকচকিয়ে উঠে লোকটি কাশতে শুরু করে। তার পিঠ বেয়ে একটা শীতল স্রোত বেঁয়ে নামছে। এই মুহূর্তে সে খুবই আতংকিত হয়ে আছে। এই মেয়েটি যদি বাসের মধ্যে এখন হাঙ্গামা শুরু করে দেয় ! কিন্তু রোদেলা কিছুই করে না। বাস তার গন্তব্যে এসে থেমেছে। ব্যাগ কাঁধে তুলে উঠে দাঁড়ায় সে, নিচুস্বরেই বলে,”আজ আমি খুব ক্লান্ত আংকেল। শারীরিক ভাবেও, মানসিক ভাবেও। নয়তো আপনার হাতটাকে খুব যত্ন করে ভাঙতাম।”

বেইলি রোডে একটা ঘিঞ্জি গলির ভেতরে ভাড়ার ফ্ল্যাটে থাকে তারা। ছয়তলার এই এপার্টমেন্টে কোনো লিফট নেই। রোদেলারা ছয়তলাতেই থাকে। যদিও কখনো এতো উঁচুতে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে রোদেলার খারাপ লাগে না। তবে আজ লাগছে। প্রচন্ড পানির তৃষ্ণা পেয়েছে তার।
কলিং বেল টেপার কিছুক্ষণ পরেই খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হয়। দরজা যে খুলেছে রোদেলা তাকে নিজের হাতের ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বসার ঘরের সোফায় হাত পা ছড়িয়ে বসে থাকে। অস্ফুট স্বরে বলে,”ঠান্ডা পানি,একটা লেবু,দু চামচ চিনি।”

রোদেলার বাবা রুহুল আমিন রিমোট টিপে টিভির সাউন্ড কমিয়ে দিয়ে রোদেলাকে দেখে,”কি ব্যাপার আজ এতো দেড়ি!”
_জাহিনের সাথে দেখা করেছিলাম।
_কি বললো? তার মা কি বললো?
খুবই উৎসাহী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে রুহুল আমিন। রোদেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
_জাহিনের সাথে আমার আর কিছুই নেই বাবা। সবকিছু কিছু শেষ।
তারপর উঠে দাঁড়ায় সে। রুহুল আমিন পুনরায় জিজ্ঞেস করে,”ওর মা কি বলেছে?”

_ওর মা বলেছে যার বাবা মা-ই ঠিকমতো সংসার করতে পারেনি সে মেয়ে কিভাবে সংসারী হবে !
রুহুল আমিন তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। রোদেলা নিজের ঘরে চলে যায়।

বসার ঘরে লেবুর শরবত হাতে এসে দাঁড়ায় আয়েশা সিদ্দিকা। রোদেলার বাবা রুহুল আমিনের দ্বিতীয় স্ত্রী।

সে এসে তার স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। রুহুল আমিন হাতের ইশারায় তাকে বলে শরবতের গ্লাসটা রোদেলার ঘরে দিয়ে আসতে।

শরবতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ঢকঢক করে পুরোটাই পান করে সে। আয়েশা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পাশের ঘর থেকে গুনগুন শব্দ আসছে।
রোদেলা আয়েশার হাতে গ্লাসটি তুলে দিয়ে বলে,”কাঁদছে নাকি?”
যদিও রোদেলা জানে ওটা কান্নার আওয়াজ তবুও প্রশ্নটি করে। আয়েশা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,”হু। সেই সন্ধ্যা থেকে।”
_আবার কি নিয়ে ঝগড়া লেগেছে?
_জানিনা। অনেকবার জানতে চেয়েছি। বলছে না।
_বৃষ্টি ফিরেছে কোচিং থেকে?
_হু,পড়ছে।
আয়েশা চলে যায়। রোদেলা সেদিকে তাকিয়ে থাকে কয়েক মুহূর্ত। রোদেলা ভাবে পৃথিবীতে সে বোধ হয় প্রথম মেয়ে যে নিজের সৎ মাকে এতোটা পছন্দ করে। রোদেলারা তিন বোন। তবে রোদেলার অন্য দুইবোন রোদেলার মতো নয়,তারা তাদের সৎ মাকে খুব একটা পছন্দ করে না। একসাথে থাকতে হবে তাই সহ্য করে নেয়া।

পাশের ঘরে কাঁদছে রোদেলার বড় বোন মেঘলা। রোদেলার থেকে দু বছরের বড়। দু’বছর আগে প্রেম করে একজন সাব ইন্সপেক্টর কে বিয়ে করেছিলো। যতটা আনন্দ নিয়ে শুরু করেছিলো নিজের নতুন জীবন,বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সব আনন্দ বিষাদের চাদরে ঢাকা পরে গিয়েছে তার। মেঘলার স্বামী মাইনুল ইসলামের স্বভাব চরিত্র কোনোটিই ভালো না। অত্যন্ত মিষ্টভাষী এই লোকটিকে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না এ একটা আস্ত ইতর। সংসারের সব নিয়ন্ত্রন শুধুমাত্র নিজের মা এবং বোনের হাতে তুলে দিয়ে মেঘলাকে কম ভোগায়নি সে। রোদেলা বহুবার বুঝিয়েছে মেঘলাকে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে। মেঘলা শোনেনি,বলেছে,”ওর পরিবারের যে যাই করুক,ও তো আমাকে ভালোবাসে। আমার এতেই হবে।”
কিন্তু কিছুদিন পরেই মেঘলার নিজের প্রতি নিজের দেওয়া এই সান্তনা টাও মিথ্যা প্রমানিত হয়। মাইনুলকে সে তার সহকর্মীর সাথে ঘনিষ্ঠ প্রেমালাপের সময় হাতেনাতে ধরে। কিন্তু তখন আর সম্পর্ক থেকে সরে আসার কোনো উপায় ছিলো না মেঘলার, নিজেকে সে আবিষ্কার করে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরকিয়া করতে গিয়ে মেঘলার হাতে ধরা পরার পর মেঘলার প্রতি মাইনুলের অত্যাচার আরো বেড়ে যায়। যদিও কখনোই ওবাড়ির কেউ মেঘলার গাঁয়ে হাত তোলে না,কিন্তু তাদের করা মানসিক অত্যাচার গুলো প্রতিদিন মেঘলাকে জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। এখন মেঘলা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। দুদিনের জন্য এসেছে বাপের বাড়িতে বেড়াতে। নানা অজুহাতে ফোন করে কথা শোনাতে তাকে ভোলেনা ওবাড়ির কেউ। আজও মাইনুল ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাকে,মেঘলার অপরাধ আসার সময় কেনো তার মাকে বলে আসেনি মেঘলা।

“রোদেলা? মিস রোদেলা!”
জেনারেল ম্যানেজারের পার্সোনাল সেক্রেটারী শিরিন আক্তারের ডাকে ঘোর কাটে রোদেলার।

রোদেলা ম্লান হাসে,
“কিছু বলবেন শিরিন আপা?”
_এসেছি তো বলতেই। এতো অন্যমনষ্ক হলে কাজ করবেন কিভাবে? এই নিন,জিএম স্যার এই ফাইল গুলো আপনাকে পাঠিয়েছে। হিসাব গুলো আজ তিনটার মধ্যে দেখতে হবে। ধরুন।

রোদেলা আতংকিত হয়ে ফাইলগুলোর দিকে তাকায়। উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”কিন্তু আমার তো আজকের হিসেবের ফাইল গুলিই দেখা হয়নি, তিনটার মধ্যে কিভাবে সম্ভব এগুলো দেখা!
_তা তো আমি জানি না,আমাকে বলছেন কেনো? জিএম স্যারকে বলুন।
কথাটি বলেই হনহন করে চলে যায় শিরিন। রোদেলা ফাইলের স্তুপের দিকে তাকিয়ে আছে,এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে এই কোম্পানির জিএম রাশেদুজ্জামানের কেবিনে গিয়ে মুখের উপর ফুটন্ত একমগ কফি ছুড়ে মারতে। দিনকে দিন এই বদমাশ লোকটার রোদেলার প্রতি আক্রোশ বেড়েই চলেছে। ইচ্ছে করে করে সে এসব। এই সবকিছু সেদিন থেকে হচ্ছে যেদিন থেকে সে ওই বদমাশ, চরিত্রহীন লোকটার কফির অফার প্রত্যাখান করেছে।

“বসতে পারি?”
পুরুষালি কন্ঠটি রোদেলার পরিচিত। সে ফাইলের স্তুপ থেকে একটা ফাইল উঠিয়ে পুরুষটির দিকে না তাকিয়ে বলে,”বসুন।”

রোদেলার ডেস্কের সামনে চেয়ার টেনে বসে তাশরিফ হাসান। রোদেলার কলিগ,সে এই অফিসের সিনিয়র একাউন্টস অফিসার। উনত্রিশ বছর বয়সী তাশরিফ হাসান অত্যন্ত সুদর্শন একজন পুরুষ। ফর্সা চেহারায় ডানপাশের গালে একটি গভীর কাটা দাগ রয়েছে। অবশ্য সেটি কোনো খুঁত নয়। দাগটি যেন তার পুরুষালি সৌন্দর্যকে একটু বাড়িয়ে দিয়েছে। অফিসে তার বেশ জনপ্রিয়তা । খুবই নম্র ভদ্র এবং মার্জিত স্বভাবের এই লোকটি। অফিসে কারো সাথে কোনো কথা কাটাকাটি হয়নি কোনোদিন। এতক্ষণ সে রোদেলাকে নিজের ডেস্ক থেকে লক্ষ্য করেছে। রোদেলার সাথে তার তেমন জানাশোনা নেই, অবশ্য রোদেলার সাথে এই অফিসের কারোরই তেমন জানাশোনা নেই। রোদেলা সবসময় নিজের আশেপাশে কঠিন প্রাচীর তুলে রাখে। যা ভেদ করে তার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া অসম্ভব। এই সময়ে তাশরিফকে দেখে খানিকটা বিরক্ত হয় রোদেলা। তাশরিফের দিকে না তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বলে,”কিছু বলবেন?”

তাশরিফ বুঝতে পারে রোদেলা বিরক্ত হয়েছে। এই মেয়েটিকে দেখলেই ভয় লাগে তার। খুবই মেজাজী ধরনের মেয়ে। কখনো সৌজন্য আলাপের বাইরে কথা বলার তো সাহসই হয়নি তার। আজ সে অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে এসেছে।
_আপনি চাইলে আমি কিছু ফাইল দেখে দিতে পারি আপনার। আমার হাতে আপাতত কাজ নেই।

তাশরিফের কথাটি শুনেই রোদেলা ফাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চোখমুখ কুঁচকে তার দিকে চায়। সে দৃষ্টি দেখে তাশরিফ খানিকটা ঘাবড়ে যায়।
_সাহায্য করবেন? কেনো? তা সাহায্য করার বিনিময়ে কি করতে হবে আমার ? আপনার সাথেও কফি খেতে হবে? নাকি চাইনিজ খেতে যেতে হবে!
তাশরিফ রোদেলার কথা শুনে তাজ্জব বনে যায়। হতভম্ব ভাব কাটিয়ে বলে,”আমি দেখছিলাম আপনি খুব টেন্সড হয়ে আছেন তাই ভাবলাম…”
_কাজ না থাকলে জিএম স্যারের কাছে গিয়ে কাজ নিয়ে আসুন। আমার কাজে সাহায্য করতে হবে না। ধন্যবাদ।

রোদেলা ক্যালকুলেটর হাতে নিয়ে ফাইলে মুখ গুজে ফেলে। তাশরিফ আশেপাশে তাকাতে থাকে। সে এইমাত্র খুবই বাজেভাবে অপমানিত হয়েছে । তাও কি না নিজেরই কলিগ, জুনিয়র একাউন্টস অফিসারের কাছে। রাগে সে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ায় সে‌। রোদেলা ক্যালকুলেটর টিপছে। তাশরিফ দ্রুতপায়ে নিজের ডেস্কের কাছে যায়। কি সাংঘাতিক বদমেজাজি আর ঠোঁটকাটা মেয়ে এ !
যদিও আগে রোদেলা নামের এই মেয়েটির ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে জেনেছে সে, কিন্তু আজ সে নিজেই প্রমান পেয়েছে।
নিজের ডেস্কে বসে আরো একবার দৃষ্টি নিয়ে দেখে রোদেলাকে। এতো ভদ্রতা দেখানোর পরেও এতো জঘন্য ভাবে কোনো মেয়ে কথা বলতে পারে? একে যে বিয়ে করবে সেই বেচারা পুরুষটির জন্য ভেতর থেকে সমবেদনা আসছে তাশরিফের।
কিন্তু তাশরিফ জানে না,সেই বেচারা পুরুষটি তাশরিফ নিজেই।

গল্প: #দ্বিতীয়_ফাগুন।
লেখিকা: Esrat Ety
সূচনা পর্ব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here