#দ্বিতীয়_বসন্ত-৩
Zannatul Eva
মাহিরকে নিয়ে একটুও ভাবতে চায় না রুহি। শুধু মাহির কেনো পৃথিবীর কোনো ছেলেকে নিয়েই সে আর ভাবতে চায় না। জীবনের কঠিন রূপটা দেখে ফেলেছে সে। এখন আর কিছু দেখার ইচ্ছা শক্তি বা ক্ষমতা কোনো টাই নেই তার কাছে। রুহি এখন বড্ড ক্লান্ত। মানুষ রূপি জানোয়ার দেখেছে সামনে থেকে। ঐ দিনের এক একটা মুহুর্ত এখনও তাকে তাড়া করে বেরায়। ঘুমোলে স্বপ্নের মধ্যে সেই সব ছবি গুলো ভেসে উঠে। ভয়ে আতকে উঠে সে।
প্রতিদিন এসব ভানবা গুলো আর নেয়া যাচ্ছে না। মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিচ্ছু ভাবতে পারছি না।
ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইলো রুহি।
মমতা খানম এসে পুরো রুমে রুহিকে খুঁজছে। মেয়ে গেলো কোথায়! রুহি এই রুহি…..
মা আমি বাথরুমে আছি। দুই মিনিটে আসছি।
কাপড় পাল্টে বাইরে বেরিয়ে এলো রুহি।
মমতা খানম বললেন, শোন মা গ্রামের বাড়িতে গেলে অনেকেই তোকে নিয়ে কানাঘুষা করবে। তাদের কথায় একদম কান দিবি না। যেটা হয়ে গেছে, গেছে। লোকে কি বলল তাতে কান দেয়ার দরকার নেই। মানুষের কাজই অন্যের জীবনে কী হলো না হলো সেগুলো নিয়ে ভাবা।
মা, চিল হ্যাঁ। আমি একদম ঠিক আছি। ছাড়ো তো এসব। কে কি বলল তাতে কিছু না গেলে আসলেও যেটা সত্যি সেটা তো সত্যিই বলো। সত্যি যতো তেতোই হোক আমাদের মেনে নিতে হয়। আমি মেনে নিয়েছি। বাকিরা কি করবে না করবে সেটা তাদের হেডেক।
মমতা খানম মেয়ের কথায় আবেগপ্রবণ হয়ে পরলেন। মুখে শাড়ির আঁচল গুজে কাঁদতে শুরু করলেন।
রুহির ভাই টমটম এসে বলল, তোমাকে এই জন্যই আমার অসহ্য লাগে মা। আপুর সামনে এসে কাঁদতেই হবে তোমাকে না? আর কত বোঝাবো! তোমাদের জন্যই আপু স্বাভাবিক হতে গিয়েও পারছে না। বারবার শুধু পুরনো কথা তুলে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।
রুহি মায়ের পাশে বসে বলল, হয়েছে হয়েছে এবার থামো তোমরা। বিকেলে যে ময়নার বিয়ের শপিং করতে হবে তা কী ভুলে বসে আছো! কান্না থামিয়ে খাবারটা বাড়েন আম্মাজান। খিদেয় পেটে ছুঁচো দৌড়োচ্ছে।
মমতা খানম হেসে বললেন, তোরা টেবিলে আয় আমি খাবার বাড়ছি।
খাবার টেবিলে খাওয়ার সময় ময়না বলল, আপামনি আমার আজকে খুশিতে নাচতে মন চাইতাছে। বিয়ার সময় সব মাইয়াগোই কি এতো খুশি লাগে আপা?
রুহি হেসে বলল, আমি কি করে বলবো! আমি কী বিয়ে করেছি নাকি? তোর প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু মাফ চাই এসব প্যাঁচালো ব্যাপার স্যাপারে আমি নেই। একা আছি ভালো আছি।
মমতা খানম খাবার বাড়তে বাড়তে বললেন, তা বললে হচ্ছে না। ভালো ছেলে পেলেই তোমায় বিয়ে দেবো আমরা। মেয়েদের ঠিক সময় বিয়ে দিয়ে দেয়াই ভালো। বাবা-মায়ের মাথা থেকে চিন্তা দূর হয়।
হ্যাঁ চিন্তা তো তোমাদের একটাই। এমন মেয়েকে কে বিয়ে করবে? তাই যাকে পাবে তার সাথেই বিয়ে দিয়ে ঘার থেকে বোঝা দূর করতে চাও।
টমটম রেগে গিয়ে বলল, আহ মা থামবে? বারবার বিয়ে বিয়ে নিয়ে এতো প্যারা দিচ্ছো কেনো আপুকে? তুই ছাড়তো মায়ের কথা। চাপ নিস না আমি তোর পাশে আছি। তুই যেভাবে থাকতে চাস সেভাবেই থাকবি। দরকার হলে আমি বিয়ে ভাঙ্গার দায়িত্ব নেবো।
মমতা খানম বললেন, বদমাশ ছেলে কোথাকার। বোনের দলে গিয়ে দল ভারী করা হচ্ছে না! দাঁড়া তোর হচ্ছে। বাবা আসুক, তোমাকে শায়েস্তা করাবো।
রুহি হাসি চেপে রেখে বলল, পরীক্ষার রেজাল্ট উল্টাপাল্টা হলেই ওর পাকামি বের করবো।
টমটম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর!
______________________________________________
বিকেলে ময়নার বিয়ের জন্য শপিং করতে গিয়ে সেখানে মাহিরের সাথে দেখা হয়ে গেলো রুহির।
রুহি মাহিরকে দেখে বলল, এই বিরক্তিকর লোকটাকে এখনই শপিং করতে আসতে হলো? কথায় আছে না, “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।”
চলবে…..