#দ্বিতীয়_বসন্ত-১৬
লেখা:Zannatul Eva
বড় দাদাভাই এভাবে উঠে চলে গেলেন কেন? তুমি কি আমাদের কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছো বাবা? এমন কোনো ঘটনা নেই তো যা আমাদের অজানা?
তামজিদ আহমেদ বললেন, ইয়ে মানে আরে কী লুকাবো আমি! ভারী অদ্ভুত কথা বলিস তুই। চাচাজানের কখন কী হয় তা কি কেউ জানে? হয়তো কোনো কারনে মেজাজ বিগড়ে গেছে। সে যাই হোক, অনেক ধকল গেছে এখন ঘরে গিয়ে বিশ্রাম কর। বউ মা যাও ঘরে যাও।
ইতোমধ্যেই নির্ঝা এসে বলল, ঘরে তো এখন যাওয়া যাবে না। পাঁচ মিনিট পর যাওয়া যাবে।
মাহির কপাল কুঁচকে বলল, হোয়াট দ্যা! এই কিছুক্ষন আগেই তো তোরা টাকা নিয়ে গেলি। এখন আবার কী হয়েছে!!
মা বলেছে বাসরঘর সাজানোর আগে কাউকে রুমে ঢুকতে দেয়া যাবে না।
রুহি লজ্জা পেল। মাহিরও আমতা আমতা করে বলল, এসব কী হচ্ছে! আমার প্রচন্ড মাথা ধরেছে আমি এখন ঘুমবো।
আচ্ছা! ঘুমাবে তুমি?
হ্যাঁ ঘুমবো। এতে এতো অবাক হওয়ার কী আছে!
তামজিদ আহমেদ বললেন, ইঁচড়েপাকা মেয়ে হয়েছে একটা তানজিলের। মুরব্বিদের সামনে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে৷ আমি বাবা ঘরে গেলাম। বাচ্চারা ওদের মতো আনন্দ করুক।
গোয়েন্দা বাহিনীর দলবল এসে বলল, বাসরঘর সাজানো কমপ্লিট। এবার নব বর-বধূ ভেতরে যেতে পারে।
ভেতরে যাওয়ার পর রুহি বলল, ফুলের ঘ্রানে আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। আমি কোথায় শুবো?
মাহির অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বলল, ফুলের ঘ্রানে ঘুম আসে? এরকম তো কখনও শুনিনি।
রজনীগন্ধা ফুলে একটা মাতাল করা ঘ্রান আছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় ফুল রজনীগন্ধা। এই ফুলের ঘ্রানটা আমাকে ভীষণ টানে।
আর তুমি প্রতিনিয়ত আমাকে তোমার কাছে টানছো। মাহির মনে মনে বলল।
আচ্ছা আমি কোথায় শুবো? আপনি যদি ভাবেন আমি আপনার সাথে একই বিছানায় ঘুমাবো তাহলে ভুল ভাবছেন।
মাহির হেসে বলল, আমি মোটেও তেমনটা ভাবছি না। আর যদি ভাবিও তাহলে তোমার কিছুই করার থাকবে না। আফটারাল আমি তোমার হাসবেন্ড।
রুহি ভয় পেয়ে বলল, মানে! কী বলতে চাইছেন আপনি?
যেটা সত্যি সেটাই বললাম। কিন্তু তোমার ভয় নেই আমি সোফায় ঘুমাবো।
রুহি আড় চোখে তাকিয়ে বলল, লাইট অফ করবেন না। অন্ধকারে ভীষণ ভয় করে আমার।
মাহির বলল, লাইট জ্বললে আমার ঘুম হয় না। নিজের বরের খেয়াল রাখা তোমার দায়িত্বের মধ্যে পরে। লাইট জ্বলবে মানে জ্বলবে।
বয়ে গেছে আমার আপনার খেয়াল রাখতে। ভার্সিটি গিয়ে সারাক্ষণ মারপিট করতে থাকে। একটা গুন্ডা লোক। আপনাকে যে আমি বিয়ে করেছি এটা আপনার ভাগ্য। কেনো যে আমি বিকেলে একা একা বাড়ি থেকে বেরোতে গেলাম!! আপনার সাথে দেখা হয়েই সর্বনাশটা হলো।
বলেই রুহি মুখ ঘুরিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।
মাহির মনে মনে বলল, নিজের বরকে সোফায় একা একা রেখে আরামে ঘুমোবে!! দাঁড়াও আমিও দেখবো তুমি কতক্ষন আমার কাছে না এসে থাকো।
মাঝরাতে রুহি চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠলো। মাহির সোফা থেকে এক লাফে উঠে এসে বলল, কী হয়েছে তোমার?
রুহি প্রচন্ড ঘেমে আছে। ঘুমের ঘোরে কাঁপতে কাঁপতে বলল, প্লিজ রোহন আমাকে ছেড়ে দাও। তোমার দুটি পায়ে পরি আমাকে ছেড়ে দাও। আমার এতো বড় সর্বনাশ করো না। অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি আমি। কেউ আমাকে বাঁচাও, আমাকে রক্ষা করো……..
মাহির তারাতারি লাইট জ্বালালো। রুহি দৌড়ে মাহিরের কাছে গিয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
মাহির রুহির হাত ধরে বলল, কাম ডাউন রুহি এখানে কেউ নেই। আমি এখানে। রোহন এখানে কী করে আসবে!! আমি মাহির।
প্লিজ লাইট বন্ধ করবেন না। অন্ধকারে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। সেই ঘটনা গুলো রোজ স্বপ্নে দেখতে পাই আমি। প্লিজ লাইট বন্ধ করবেন না।
আই এম সো সরি। আই এম সো সরি। আমি বুঝতে পারিনি তুমি অন্ধকারে এতোটা ভয় পাও। আর কখনও লাইট অফ করবো না। কাম ডাউন। এই নাও পানি খেয়ে নাও।
রুহি ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি পুরোটা খেয়ে নিলো। মনে হচ্ছিলো এক্ষুনি পানি না পেলে তার প্রানটাই বেরিয়ে যেতো। মাহির কিভাবে বুঝে যায় এগুলো!
মাহির বলল, তুমি গিয়ে শুয়ে পরো। আমি সোফায় আছি। ভয় নেই আমি লাইট অফ করবো না।
রুহি চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো।
____________________________________
রুহির দাদিজান সায়েদা বেগম সমস্ত কথা শোনার পর প্রচন্ড অস্থির হয়ে পরলেন। বললেন, এতো কিছু ঘইটা গেল আর আমরা কিছু জানার সুযোগ ও পাইলাম না! তুই একটা পোলার লগে রুহির বিয়া দিয়া দিলি! চিনা নাই জানা নাই এই কাম কেমনে করতে পারলি তুই? কে ঐ পোলা!
মমতা খানম বললেন, হ্যাঁ গো আপনে মেয়েটারে কই রাইখা আসলেন? কিছু বলতেছেন না কেন? কার সাথে আমার রুহির বিয়ে দিছেন আপনি?
আশরাফ খান বললেন, এতো চিন্তার কিছু হয় নাই। ছেলে আমাদের পরিচিত। আমার ছোট বেলার বন্ধু তামজিদের একমাত্র ছেলে মাহির। তখন এমন অবস্থায় পইরা গেছিলাম আমরা যে, বিয়ে ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তামজিদের মত মানুষ হয় না। আর ওর ছেলে ও ভীষণ ভালো। একটু রাগি কিন্তু ছেলে ভালো। রুহির জন্য এর চাইতে ভালো পাত্র আর কোথায় পাইতাম আমরা!! সবটা জানা স্বত্তেও যেই ছেলে আমার মাইয়ারে বিয়ে করতে রাজি হইয়া গেল। রুহির মা, তুমি ঠিকই বলছিলা। আল্লাহ ঠিকই একটা ভালো পাত্র জোগার কইরা দিছে।
নাছিমা মুখ বেকিয়ে বলল, শেষমেষ তাহলে বড়লোক বাড়ির ছেলেকে ফাঁসিয়ে বিয়েটা করেই নিলো। মেয়ের এলেম আছে বটে।
আজমল খান বলল, আহ তুমি চুপ করো। সব সময় তোমার কথা বলতে হবে? বললে একটু ভালো কথাও তো বলতে পারো নাকি!! বিয়ে হয়েছে তাতে এভাবে বলার কী আছে! তামজিদ ভাইদের পরিবার ভীষণ ভালো। আর ওনার একমাত্র ছেলে বাবার সমস্ত সম্পত্তি, ব্যবসা সবই তো তার হবে। আমাদের রুহি ওখানে সুখেই থাকবে।
নাছিমা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, নিজের মেয়ের জন্য এমন একটা সম্বোন্ধ আনার যোগ্যতা তো হলো না। নিজের দিকটা কবে বুঝবে তুমি কে জানে!
মমতা খানম বলল, টাকা-পয়সাটাই বড় না। ওরা হুট করে আমার মেয়েরে বউ হিসেবে মেনে নেবে? তাছাড়া রুহির অতীতের কথা জানার পর হয়তো ওরা এতো সহজে মেনে নেবে না ওকে। আমার অনেক চিন্তা হইতেছে ওর জন্য। না জানি মেয়েটারে কত কথা শুনতে
হইছে ও বাড়িতে।
নাছিমা বলল, যার দোষ আছে তার একটু মুখ ঝামটা সহ্য করতে হবেই ভাবি। তাও ভালো বড়লোক বাড়ির বউ হইতে পারছে। আচ্ছা ও কি প্ল্যান করে বের হইছিলো?
সায়েদা বেগম ভারী গলায় বললেন, আহ সবাই চুপ করো দেখিনি। হ্যাঁ রে আশরাফ আমারে একটু খোলসা কইরা বলতো তুই কী সত্যিই তামজিদের পোলার লগে রুহির বিয়া দিয়া দিছোস?
আশরাফ খান বললেন, হ্যাঁ। কেন? কোনো সমস্যা? আপনি তো জানেন তামজিদ কত ভালো মানুষ। কাল আমরা সবাই মিললা ওদের বাড়ি যাবো রুহিরে দেখতে। আর সবার জন্য কেনাকাটা করতে হইবো। মমতা তুমি একটা লিস্ট করো।
সায়েদা বেগম হঠাৎ করে বলে উঠলেন, তোমরা সবাই গেলে যাও আর আমার নাতনিরে বইলো তার জন্য অনেক দোয়া থাকবো আমার। কিন্তু আমি ঐ বাড়িতে যাইতে পারুম না।
মমতা খানম বললেন, কেনো ফুফুজান?
এই ব্যাপারে আমি আর কোনো কথা বাড়াইতে চাই না। আমি আমার ঘরে গেলাম। রুম্পা আমার পানের বাটাটা নিয়া ঘরে আয়।
চলবে…….