দ্বিতীয় বসন্ত ❤️ পর্ব -১৫

#দ্বিতীয়_বসন্ত-১৫
লেখা:Zannatul Eva

আমি জানি তুমি কী বলতে চাও৷ তুমি এখন বলবে, এই বিয়েটা আমি নিজের ইচ্ছেয় করিনি৷ পরিস্থিতির চাপে পরে আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না। আপনি একটা গুন্ডা। আমাকে টাচ করার সাহস দেখাবেন না। এসবই তো বলতে চাইছো তাই না?

রুহি এক দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো৷ বলল, আপনি কী করে জানলেন? আমি তো আপনাকে কিছুই বলিনি৷ কী করে বুঝলেন আমি এই কথা গুলোই বলতাম?

মাহির একটা হাসি দিয়ে বলল, ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো। আমি বাইরে আছি।

রুহি মনে মনে বলল, এই লোকটা তো ভীষণ বদ৷ আমি মনে মনে কথা গুলো বলছিলাম ওমনি আমার মুখের কথা কেড়ে নিলো!!

শুনুন।

মাহির পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ বলো।

রুহি মনে মনে বলল, কী করে বলবো! কেমন যেনো গলার মধ্যে সব কথা আটকে যাচ্ছে। এতো ভয় কেনো পাচ্ছি আমি! ভয়, সংশয় সবটা কেমন চেপে ধরছে আমাকে।

রুহি কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়েই রইলো। মাহির রুহির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, ও হ্যাঁ তুমি তো সাথে করে জামাকাপড় নিয়ে আসো নি। ওয়েট আমি নির্ঝাকে পাঠাচ্ছি। চেঞ্জ করে জলদি খাবার টেবিলে চলে এসো নির্ঝার সাথে।

বলেই মাহির রুম চলে গেল। রুহি কোমরে হাত দিয়ে কপাল কুঁচকে বলল, ভারী অদ্ভুত তো!! ও কী করে জানলো আমি জামাকাপড়ের কথা বলতাম! ও কী মন পড়তে পারে? ও কী ভ্যাম্পেয়ারদের মতো মাইন্ড রিড করার পাওয়ার আছে? কী সব ভাবছিস তুই রুহি! জানিনা বাবা বাড়ি ফেরার পর সবার মনের কী অবস্থা হয়েছে। ফোনটা চার্জ করতে হবে। তারপর মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। সবার কথা ভেবেই আমি এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু আমি মাহিরকে ঠকাতে চাই না। এ নিয়ে আমার ওর সাথে কথা বলতে হবে।
_____________________________

খাবার টেবিলে খাওয়া শেষে তালেব আহমেদ প্রশ্ন ছুড়লেন, হ্যাঁ রে তামজিদ তোর ছেলের জন্য বউ তো নিয়ে এলি৷ কিন্তু আমার নাতবউ কোন বংশের মেয়ে? বাবা, দাদার নাম ঠিকানা কিছুই তো জানা হলো না৷ তা হ্যাঁ গো নাতবউ তোমার বাবার নাম কী?

রুহি নিচু স্বরে বলল, আশরাফ…….

তামজিদ আহমেদ কথা ঘুরানোর জন্য বললেন, এই মাহির তোর মা কে দেখছি না যে খাবার টেবিলে! যা তোর মা কে গিয়ে ডেকে নিয়ে আয়।

মাহির যাওয়ার আগেই রেহনুমা আহমেদ এসে বললেন, তোমরা কী ভেবেছো এই মেয়ের সাথে একই টেবিলে বসে আমি খাবার খাবো! কোনো দিনও না। ও একটা খারাপ মেয়ে। ছলচাতুরী করে আমার একমাত্র ছেলেকে বশ করেছে। আমি কালকেই ঢাকায় চলে যাবো। আমার ছেলেকেও সাথে করে নিয়ে যাবো। এই মেয়ের আমাদের বাড়ির বউ হওয়ার শখ ছিল তো! থাকুক ও এই বাড়ির বউ হয়ে। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে আর এক মুহুর্তও এই মেয়ের সাথে একই ছাদের নিচে থাকতে পারবো না। এই মেয়ের পাপের নিঃশ্বাসে আমার ছেলের সর্বনাশ হয়ে যাবে।

তামজিদ আহমেদ রাগি স্বরে বললেন, আহ রেনু কী হচ্ছে এসব! আমাদের ছেলের ওর সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। ও এখন আমাদের বাড়ির বউ। তুমি চাইলেও ওদের আলাদা করতে পারো না। এটা অন্যায়।

রুহি মৃদু স্বরে বলল, আমি ভেতরে চলে যাচ্ছি মা। আপনি আসুন না এখানে।

তালেব আহমেদ ভারী গলায় নীলিমাকে বললেন, ছোট বউ।

নীলিমা বলল, জ্বী চাচাজান।

বড় বউয়ের খাবারটা তার ঘরে দিয়ে আসো। সে যখন নাত বউকে মন থেকে মেনে নিতে পারবে তখন এখানে সবার সাথে বসে খাবে।

ইতোমধ্যেই মাহিরের মেজো চাচি মুনিরার প্রবেশ হলো বাড়িতে। আসতে না আসতেই সে তার কর্কশ গলায় চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল, ও মা গো এইসব আমি কী শুনলাম গো বড় ভাবি! মাহিররে নাকি কোন মেয়ে মানুষ আটকে রেখে বিয়ে করছে?

মাহিরের মেজো চাচা মাসুদ মুনিরাকে একটা ধমক দিয়ে বলল, আহ কি সব বলছো! চাচাজান আছেন এখানে।

মুনিরা মাথায় ঘোমটা দিয়ে চুপচাপ সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়ে রেহনুমার কানে কানে বলল, ও মা গো ভাবি গো ভাবি এইটা কী শুনলাম!

রেহনুমা কাঁদতে কাঁদতে বলল, যা শুনেছিস ঠিকই শুনেছিস। আমার ছেলের ঘাড়ে এক অপয়া মেয়ে গেড়ে বসেছে। ছেলে সুদ্ধ গোটা সংসার ছারখার করে দেবে এই মেয়ে।

মুনিরা বলল, আপনি যাই বলেন চাচাজান এইটা কিন্তু একদমই ঠিক হয় নি। আমাদের ওমন ভালো ছেলের কপালে এমন মেয়ে জুটলো! ও মা গো আমি তো তোর চাচার কাছ থেকে খবর পাওয়া মাত্রই বাপের বাড়ি থেকে ছুট্টে চলে এলুম। হ্যাঁ রে মাহির তুই এই মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হইলি কিভাবে? না কি এই মেয়ে টুকটাক করে তোকে ফাঁসাইছে? ও মা গো…….

নীলিমা বলল, আহ মেজো ভাবি। আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেল তোমার আগুনে ঘি ঢালা। বরাবরই তোমার স্বভাবটা একই রয়ে গেল।

মুনিরা বলল, তোরা সব সময়ই আমার দোষ বেশি বেশি দেখিস। যা বাপু থাকলাম না তোদের কথার মধ্যে। মুনমুন, মাইশা, মুন্নী চল ঘরে চল। এই মেয়ের আশেপাশে যেনো তোদের ঘুরঘর করতে না দেখি। চল এখান থেকে।

মাহির উঁচু স্বরে বলল, কেনো? ওর সাথে থাকলে কী হবে? তুমি যে ওদেরকে কুট কাচালির ক্লাসটা করাতে চাও সেটা মিস হয়ে যাবে?

মুনিরা মুখ বেকিয়ে মেয়েদের নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।

মাহির রুহিকে বলল, সরি তুমি কিছু মনে করো না। হঠাৎ করে বিয়েটা হয়ে যাওয়ায় কেউ আসলে সহজে মেনে নিতে পারছে না। আস্তে আস্তে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। সবাই তোমাকে মেনে নেবে।

রুহি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, মেনে না নিলেও আমার কোনো দুঃখ নেই। এসব শুনতে শুনতে আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। এখন আর কোনো কিছুই গায়ে মাখি না।

তালেব আহমেদ আবারও নীলিমাকে বললেন, তোমাকে না বললাম বড় বউয়ের খাবারটা তার ঘরে দিয়ে আসো। এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
আর বড় বউ, তুমি নিজের ঘরে যাও। খেয়েদেয়ে বিশ্রাম করে মাথা ঠান্ডা করো।

রেহনুমা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।

তামজিদ আহমেদ মাহিরকে বলল, বউকে নিয়ে ভেতরে চলে যা। তোর বড় দাদাভাই নয়তো এখনি হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে বসবে।

মাহির ভ্রু কুঁচকে বলল, তো কী হয়েছে! দাদাভাই রুহিকে প্রশ্ন করতেই পারে।

তামজিদ আহমেদ বললেন, উফফফ কী করে বোঝাই তোদেরকে। বউ মা তুমি ভেতরে যাও।

মাহির রুহিকে নিয়ে ভেতরে যাচ্ছিলো এমন সময় তালেব আহমেদ ডেকে বললেন, আরে নাত বউর সাথে তো আলাপ করাই হলো না। নাত বউ এসো তো। আমাকে একটা পান সেজে দাও দেখি কেমন সুন্দর পান সাজতে পারে আমার নাতবউ।

রুহি হাসতে হাসতে বলল, আমি তো পান সাজতে পারি৷ গ্রামে আসার পর দাদিজানের কাছ থেকে পান সাজা শিখেছি।

বাহ বেশ ভালো। তা এবার বলো দেখি তোমার বাবা, দাদার নাম কী।

তালেব আহমেদ বললেন, ইয়ে মানে চাচাজান এখন থাক না। সন্ধ্যে থেকে ঝুটঝামেলায় অনেক ধকল গেছে। ওরা গিয়ে বিশ্রাম করুক। পরে না হয় আলাপ করা যাবে।

মাহির সন্দেহ নজরে বাবার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, বাবা বারবার কথাটা এড়াতে চাইছে কেন?

রুহি বলল, না না ঠিক আছে বাবা। করুক না দাদু আলাপ। আমার কোনো সমস্যা নেই।

তালেব আহমেদ বললেন, দেখেছিস! আরে এরা হচ্ছে ইয়াং ছেলেপেলে। এরা এতো সহজে হাঁপিয়ে উঠার পাত্র না। হ্যাঁ বলো নাতবউ।

রুহি পান সাজতে সাজতে বলল, উত্তর দিকের যে বড় খান বাড়িটা আছে ঐটাই আমাদের বাড়ি। আমার বাবার নাম আশরাফ খান। দাদার নাম আলী আজম খান।

এ কথা শোনা মাত্রই তালেব আহমেদ পান না খেয়েই টেবিল থেকে সোজা উঠে দাঁড়িয়ে পরলেন। হাতের লাঠিটা নিয়ে রেগেমেগে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন।

তালেব আহমেদের এরকম আচরনে মাহির, রুহি এবং বাকি সবাই প্রচন্ড চমকে গেলেও তামজিদ আহমেদ একটুও চমকালেন না। তিনি মনে মনে বললেন, যা ভয় পাচ্ছিলাম তাই হলো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here