দ্বিতীয় বসন্ত ❤️ পর্ব -১৪

#দ্বিতীয়_বসন্ত-১৪
লেখা:Zannatul Eva

ও তোমাদের সাথে! কী হয়েছে বলো তো আমাকে। তখন ফোন আসা মাত্রই হুুরমুর করে বেরিয়ে পরলে আর এখন তোমাদের সাথে এই মেয়েটা৷ আর মাহির তুই এতোক্ষন কোথায় ছিলি?

মাহির কিছু বলার আগেই তামজিদ আহমেদ বললেন, ইয়ে মানে আগে ভেতরে যাই তারপর আমি তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।

ভেতরে গিয়ে তামজিদ আহমেদ সবটা খুলে বলার পর রেহনুমা প্রচন্ড চিৎকার করে বলে উঠলো, এই মেয়েকে কিছুতেই আমি এ বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিবো না।

রুহি একদম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরে পরছে। সে জানতো, এ বাড়িতে আসার পর তাকে অনেক অপমান সহ্য করতে হবে। একটা ধর্ষিতা মেয়েকে কেউই নিজের ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবে না৷ মাহিরের মাও ব্যতিক্রম নয়। সবার মতো সেও রুহিকে অপছন্দ করে।

তামজিদ আহমেদ বললেন, দেখো রেনু সবটা আল্লাহর ইচ্ছা। তখন আমাদের এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। ব্যাপারটা এতোই জটিল হয়ে যাচ্ছিলো যে তখন যদি আমরা এই সিদ্ধান্ত না নিতাম তাহলে লোকজন পুলিশ নিয়ে আসতো। তখন আরও বেশি ঝামেলায় পরতে হতো। আমরা তো আমাদের ছেলের জন্য একটা ভালো বউই খুঁজছিলাম। রুহি ভীষণ ভালো মেয়ে। আর আশরাফের সাথে আমার বন্ধুত্ব এখন আত্মীয়তায় পরিনত হলো। এখানে সমস্যা কোথায়!

রেহনুমা বলল, সমস্যা কোথায় মানে!! এই মেয়ে কিসে ভালো? একটা অপয়া মেয়ে। আমি সবটা বুঝতে পারছি। এই ঘটনা আসলে এই মেয়েই ইচ্ছে করে ঘটিয়েছে। সবটাই পূর্ব পরিকল্পিত। ও আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে।

একথা বলেই রেহনুমা জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করলো।

মাহির বলল, প্লিজ মা কেঁদো না। এখানে রুহির কোনো দোষ নেই। আমরা কেউই এরকম একটা পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। গ্রামের মানুষ গুলো ভীষণই অদ্ভুত। একটা ছেলে-মেয়ে একসাথে চলাফেরা করতে পারবে না এটা কেমন নিয়ম! পৃথিবী কত এগিয়ে গেছে তাও মানুষ নিজেদের মনের ভেতর কুসংস্কার, পুরনো রীতিনীতি গুলো পুষে রেখেছে স্ট্রেঞ্জ!

তামজিদ বলল, সমস্যা আমাদের নিজেদের ভেতরে। আগে নিজেদের ঘর থেকে পুরনো ধ্যান ধারনা গুলো মুছে ফেলতে হবে। তারপর বাইরের চিন্তা। নিজেদের বাড়ির লোকজনদেরই তো এখনও বদলাতে পারিনি। তোর মা কে দেখ। তখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। বলি মেয়েটাকে মেনে নাও। ও আর কতক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে? ছেলে আর ছেলের বউকে প্রান ভরে দোয়া করো।

রেহনুমা আহমেদ ঝাঁঝালো গলায় বলল, কিছুতেই না। এই মেয়েকে আমি কোনো দিনও মেনে নেবো না৷ তোমরা ওর ভেতরের রূপটা দেখতে পাচ্ছো না৷ কেউ বিয়ে করছে বা বলে ও আমার ছেলের ঘারে চেপে বসেছে৷ ওসব ঘটনা সবটাই সাজানো নাটক। তুমি আর তোমার ছেলে তা বুঝতে পারছো না। কেনো যে আমি তোমার কথা শুনে মাহিরকে গ্রামে নিয়ে এলাম! মাহির আসতে চায়নি তাও আমি জোর করে ওকে নিয়ে এসেছি এই সর্বনাশ করতে!!

বসার ঘরে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনে ইতোমধ্যেই তালেব আহমেদ এবং বাড়ির বাকি সদস্যরাও এসে উপস্থিত হলেন। তালেব আহমেদ প্রথমে হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলেন। তারপর মাহিরকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে দাদুভাই? তোমাকে নিয়ে এতো গন্ডগোল কিসের?

মাহির মৃদু স্বরে বলল, দাদু আমি বিয়ে করেছি।

এ কথা শোনা মাত্রই তালেব আহমেদের সাথে সাথে বাড়ির বাকি সবাইও চমকে গেল।

তামজিদ তার চাচা তালেব আহমেদকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন।

তালেব আহমেদ রুহির দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার চশমাটা কোথায়? ছোট বউ আমার চশমাটা কোথায়? নাত বউয়ের মুখ খানা তো পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি না৷ শীগগিরে আমার চশমা খুঁজে নিয়ে আসো।

মাহিরের ছোট চাচি নীলিমা দৌড়ে যাচ্ছিলো চাচাজানের চশমা খুঁজতে। এর মধ্যেই রুহি নিচু স্বরে বলল, আপনার চশমা এখানেই আছে।

তালেব আহমেদ বললেন, এখানে! কোথায়?

রুহি আবারও নিচু স্বরে বলল, বুকের কাছ দিয়ে পাঞ্জাবির সাথে আটকানো আছে চশমাটা।

তালেব আহমেদ নুইয়ে পাঞ্জাবির দিকে তাকাতেই চশমাটা দেখতে পেলেন। প্রথমে চশমাটা মুছে পরিষ্কার করলেন। তারপর চশমা পরে রুহির দিকে তাকিয়ে বললেন, মাশাআল্লাহ। আমার নাত বউয়ের মুখ খানা ভারী সুন্দর। এখানের কেউ আমার চশমাটা খুঁজে দিতে পারলো না। অথচ তুমি সবার আগে আমার চশমাটা খুঁজে বের করে ফেললে। মনে হচ্ছে তুমি ভীষণ মনযোগী। তবে আমার বাড়ির বউ হওয়ার জন্য কতটা উপযুক্ত সেটাও একবার পরখ করে দেখতে হবে।

রেহনুমা কাঁদতে কাঁদতে বলল, এই মেয়ের আমার মাহিরের বউ হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। আমার হীরের টুকরো ছেলের কপালে এই ছিল!! আপনি জানেন চাচাজান এই মেয়ে তো একটা ধর্ষিতা……..

আহহহহ থামো তুমি বড় বউ।

তালেব আহমেদের একটা ধমকে পুরো বাড়ি থমকে গেল। বয়স হলেও এখনও সবাই তাকে ভীষণ ভয় পায়।

তলেব আহমেদ বললেন, আমি কথা বলছি তো। ছেলে তোমার একার না৷ ও আমারও নাতি।

রেহনুমা মুখে কাপড় গুজে কাঁদতে কাঁদতে ভেতরে চলে গেল।

শোনো নাতবউ, এ বাড়িতে সবাই আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। তোমাকে এ বাড়ির যোগ্য বউ হয়ে উঠতে হবে। আজ যেই শাশুড়ি তোমাকে সহ্য করতে পারছে না একদিন যেনো সেই শাশুড়িই তোমাকে তার ছেলের যোগ্য বউ হিসেবে মেনে নেয়। কী পারবে তো?

রুহি নিচু স্বরে বলল, জ্বী আমি চেষ্টা করবো।

তালেব আহমেদ ধমক দিয়ে বললেন, চেষ্টা মানে! পারতেই হবে।

রুহি ভয়ে ভয়ে বলল, জ্বী আচ্ছা।

মাহির দাদুভাই।

জ্বী বড় দাদাভাই।

বউ কে নিয়ে ঘরে যাও। ফ্রেশ হয়ে তারপর সবার সাথে খেতে বসবে বউ কে নিয়ে।

মাহির বলল, জ্বী।

মাহির রুহিকে নিয়ে ভেতরে যাচ্ছিলো এমন সময় নির্ঝা দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। নির্ঝা হচ্ছে মাহিরের ছোট চাচার মেয়ে। এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে সদস্যই কলেজে পা রেখেছে সে।

মাহির বলল, কী ব্যাপার! দরজা আটকে দাঁড়ালি কেন?

নির্ঝা বলল, আগে টাকা দাও।

কিসের টাকা? মাহির বলল।

কিসের টাকা মানে! বউ নিয়ে ঘরে ঢুকবে এমনি এমনিই যেতে দেবো নাকি! আগে টাকা ছাড়ো নয়তো দরজা খুলবো না।

হোয়াট ইজ দিছ! আমার কাছে টাকা নেই।

টাকা নেই বললে তো মানবো না। মনে হচ্ছে গোয়েন্দা বাহিনীদেরকে ডাকতে হবে। গোয়েন্দা বাহিনী……….

ইতোমধ্যেই মাহিরের বাকি সব কাজিনরাও এসে বলল, গোয়েন্দা বাহিনী হাজির।

নির্ঝা বলল, উফফফ তোরা সবাই কোথায় ছিলি এতোক্ষন!! একা একা আমি এদিক সামলাচ্ছি। দলে যোগ না দিলে কিন্তু একটা টাকাও কেউ পাবি না বলে দিলাম৷ সব আমি একা নেবো।

মাহির রাগি স্বরে বলল, হচ্ছে টা কি!! সবাই সরে দাঁড়াও আমরা ভীষণ টায়ার্ড।

মাহিরের মেজো চাচার তিন মেয়ে মুনমুন, মাইশা আর মুন্নী একসাথে বলে উঠলো, ওহো! টায়ার্ড!! সব বুঝি আমরা। কেনো এতো তারা দিচ্ছো। দেখো ভাইয়া তোমার বোন হিসেবে এটা আমাদের পাওনা। বিয়েতে তো কত্ত কিছু করবো বলে প্ল্যান করে রেখেছিলাম। কিন্তু সে গুরে বালি। এখন এটুকু আনন্দ থেকে অন্তত বঞ্চিত করো না আমাদেরকে।

আমার কাছে সত্যিই কোনো টাকা নেই। টাকাটা আমি পরে দিয়ে দেবো। এখন আমাদের ভেতরে যেতে দে।

না না না না আআআআ…..সবাই মিলে চেচিয়ে উঠলো।

রুহি বলল, দিয়ে দিন না। বোনেরা এতো করে যখন চাইছে। শুধু শুধু ওদের সাথে এমন করছেন। দিয়ে দিন।

আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু রুমের ভেতরে না যেতে পারলে কি করে দেবো? আমার সাথে তো ওয়ালেট নেই। বেরোনোর সময় ভুল করে রুমে ফেলে গিয়েছিলাম।

সবাই বলল, ও আচ্ছা! এতোক্ষন আমরা বলছিলাম তখন দিতে রাজি হচ্ছিলো না৷ আর এখন যখন নতুন ভাবি বলল ওমনি রাজি হয়ে গেল!! হায় ভাবি তুমি তো প্রথম দিনেই বাজিমাত করে দিলে!

রুহি খানিকটা লজ্জা পেল।

মাহিরের ছোট চাচা তানজিল আহমেদ এসে বললেন, তোদের টাকা চাই তো? ঠিক আছে এই নে পাঁচ হাজার টাকা। সবাই মিলে ভাগ করে নিস। কিন্তু নতুন বর-কনে কে এবার ছাড়। একদম বিরক্ত করবি না ওদেরকে।

নির্ঝা বলল, ওহ বাবা ইউ আর গ্রেট! টাকা পেয়ে গেছি এখন আর আমরা কিচ্ছু করবো না। এবার তোমরা ভেতরে ঢুকতে পারো। গোয়েন্দা বাহিনী ফলো মি……
____________________________________

রুমের ভেতরে গিয়ে রুহি মাহিরকে বলল, আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল। আর সেটা এখনি বলে নেওয়া জরুরি।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here