দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ পর্ব ১১+১২

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ১১

হঠাৎই পুরো রুম অন্ধকার হয়ে গেলো।এমন সময় একটা স্পষ্টলাইট সিঁড়ির দিকে ফোকাস করলো।সবাই দেখলো একজন কপোত-কপোতী সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে।

স্পট লাইট ফোকাস করতেই সাদিত কিনারার হাতে হাত রাখলো,সাদিত হাত রাখতেই,,কিনারা এ যেনো এক স্বর্গীয় সুখ অনুভব করতেই কিনারার বুক কেঁপে উঠলো।ওরা নিচে নামতেই সারা রুমের আলো আবার জ্বলে উঠলো।

কিনারা দেখলো—- পার্টির সব লোকদের দেখে মনে হচ্ছে হাই প্রফেশনাল।ছেলে মেয়ে উভয়ই।বেশিরভাগই গর্জিয়াস আর ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরিহিত।

কিনারা আর সাদিত নামতেই সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।কারণ এতো বছর এ ফ্যামিলির সাথে এদের এতো ভালো সম্পর্ক এতো যাতায়াত ছিলো কিন্তু সাদিতকে কখনো কোনো মেয়ের সংস্পর্শে যেতে দেখেনি।সবসময় সাদিতকে এভোয়েড করতে দেখেছে। সে কিনা একটা মেয়ের হাত ধরে আছে।সবার মনে এক প্রশ্ন কে এই মেয়ে।সাদিতের সাথে কি সম্পর্ক।

কিনারা আর সাদিত নেমে মিস্টার সাইফ চৌধুরী কাছে আসতেই উনি একটা মাইক নিয়ে বলতে শুরু করলো—
আজকের এই সন্ধ্যায় আমাদের এই পার্টিতে এটেন্ড করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকে এটা কিসের পার্টি হচ্ছে এটা হয়তো অনেকে জানেন আবার অনেকে জানেন না। তো এখনি সবাই জানতে পারবেন।আজকের এই সন্ধ্যা আমার ছেলে সাদিত চৌধুরী ও তার নিউলি ম্যারিড ওয়াইফ মিসেস কিনারা চৌধুরীর জন্য। আসলে ওদের বিয়েটা হুট করেই হয় যার জন্য কাউকে তেমন ভাবে জানানোও হয়নি।তার জন্য আমি ভিষনভাবে দুঃখীত সবার কাছে। তো আপনারা ওদের জন্য দোয়া করবেন যেনো ওরা সুখী হতে পারে।আর একটু পর পার্টি শুরু হবে আপনারা এনজয় করুন।বলে মাইকটা রেখে দিলো।

এদিকে সবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, তারপর একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।আর বলাবলি শুরু করেছে।

সাদিত বলে উঠলো — আপনারা এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে যান খাওয়া-দাওয়া করুন আর পার্টিটসকে এনজয় করুন।

তারপর সবাই একে একে এসে সাদিত আর কিনারাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এসব কিছুই কিনারার ভালে লাগছে না। কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে কিনারার।কখনো এমন পার্টিতে পার্টিসিপেট করেনি।পার্টি শুরু থেকে শেষ অব্দি কিনারা৷ অস্বস্তিতে ছিলো। সাদিতের তা চোখ এড়ালো না।

তাই পার্টি শেষ হতেই সাদিত কিনারার হাত ধরে গাড়ির পিছনে সিটে বসায় এবং নিজেও বসে।আর ড্রাইভারকে ড্রাইভ করতে দেখে কিনারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেসা করে —আমরা কোথায় যাচ্ছি এতো রাতের বেলায়।

সাদিত কিনারা কোমড় টেনে নিজের কাছে এনে বসিয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে — হিসসসসসস কোনো কথা বলো না। চুপচাপ বসে থাকো।তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

সাদিত কিনারার ঠোঁটে ওর ঠান্ডা আঙুলটা রাখতেই কিনারার সারা শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে একটা শীতল শিহরন বয়ে গেলো।তার সাথে সাদিতের কড়া পারফিউমের গন্ধে কিনারা হঠাৎই মাতোয়ারা হয়ে আর কিচ্ছু বলল না চুপচাপ বসে রইলো।

গাড়ি গিয়ে থামলো একটা নদীর পাড়ে।সাদিত কিনারার হাত ধরে নামালো।।।কিনারা দেখলো পুরো আকাশ তাঁরাই ভারা, আজ আকাশে বিশাল বড়ো এক চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোয় নদীর পানি গুলো চিকচিক করছে।বিশাল তাঁরা ভরা আকাশের নিচে খোলা নদীর পাড়ে সাদিত কিনারার জন্য ক্যান্ডেললাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছে,চারপাশ সাদা লাল নীল রঙের আলো দিয়ে সাজিয়েছে।একটু দূরেই একটা টেবিল চারপাশটা রঙিন কাপর দিয়ে ঘিরে ডেকোরেশন করা। টেবিলটা বেশ সুন্দর করে সাজানো।পুরো টেবিল মোম, ফুল দিয়ে সাজানোআর ছোট ছোট এলইডি লাইট। সবকিছু মিলে খুব সুন্দর লাগছে চারপাশের পরিবেশটা।

কিনারা এসব দেখে খুবই অবাক হয়ে গেলো। ও কি বলবে ভাষা খুঁজে পেলো না।শুধু হা হয়ে চারপাশটা দেখছে আর এতো সুন্দর পরিবেশটা কিনারা মিস করতে চায়না।তাই যতটুকু সম্ভব উপভোগ করছে।

সাদিত পাশ থেকে বলে উঠলো — বউ এবার যাওয়া যাক সামনে।

সাদিত কিনারার হাত ধরে টেবিলের কাছে এনে একটা চেয়ার টেনে বসতে বলল।

তারপর সাদিত ও বসে পড়লো।সাদিত বসতেই একটা লোক এসে টেবিলে খাবার রেখে গেলো।

কিনারা খাবারগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে আবার সাদিতের দিকে তাকালো।

কিনারা তাকাতেই সাদিত বলল৷ — আমি দেখেছি পার্টিতে তুমি অতো লোকের সামনে তেমন কিছুই খাওনি।তারপর ভাবলাম তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়।তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে এই ছোট্ট প্রচেষ্টা।তো বলো কেমন লেগেছে সবকিছু পছন্দ হয়েছে তোমার।

কিনারা সাদিতের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো,কিনারার চোখে মুখে তখনও কৌতুহলের ছাপ, মুচকি হেসে বলল খুব পছন্দ হয়েছে।

সাদিত বলে উঠলো— তুমি পার্টিতে খাওনি জন্য আমারও আর কিছু খেতে ইচ্ছে করলো না।

সাদিতের কথা শুনে কিনারা চুপ হয়ে গেলো।কিনারা সে সময় খেয়াল করিনি সাদিত খেয়েছে কিনা।কিনারা ভেবেছিলো সাদিত হয়তো ওকে শুধু ট্রিক করতে চাইছে।কিন্তু না বিষয়টা যে অন্য। এসব ভাবতে ভাবতে কিনারার মুখখানা লাল হয়ে গেলো।ঠিক ওই সময় ও ঠিক কি বলবে তা বুঝে উঠতে পারছিলো না।

তারপর দুজন মিলে রাতের ডিনার শেষ করার পর সাদিত বলে উঠলো তোমার জন্য আরও একটা সারপ্রাইজ আছে।বলেই কিনারাকে কিছু বলতে না দিয়ে সাদিত কিনারার চোখটা ধরে সামনে কিছু দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর ছেড়ে দিলো।

কিনারা দেখলো একটা ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা, খুব সুন্দর করে নানান রঙের লাইটিং করা।আর ফুলে ফুলে সাজানো।কিনারা এক এক সারপ্রাইজ দেখে নিজেই শকড।কিনারা কখনো ভাবতে পারেনি এতো সুন্দর একটা রাত ও ওর লাইফে কাটাতে পারবে।এসব অবাক হয়ে দেখতেই ধ্যান ফিটে সাদিতের ডাকে।সাদিতে ওকে হাত ধরে খুব সাবধানে নৌকার কাছে নিয়ে বসিয়ে দিলো।

তারপর সাদিত নিজেই নৌকা বাইতে শুরু করলো।

কিনারা তো এবার শকড এর চরম শীর্ষে একি সেই সাদিত চৌধুরী, যে সবসময় নিজের অ্যাটিটিউড, বিজনেস, আর নিজের গাম্ভিত্বপূন নিয়ে থাকতো।সে কিনা আজ আমাকে খুশি করার জন্য এসব পাগলামি করছে।এসব ভেবেই চুপ করে রইলো।
কিনারা ততক্ষণ চুপ ছিলো যতক্ষন না সাদিতের সেই অ্যাকট্রাক্টিভ গলার স্বর শুনতে না পেলো।

কিনারা এতোই ভাবনায় মগ্ন ছিল যে কখন নদীর মাঝে চলে এসেছে খেয়ালই করেনি।

কিনারা দেখলো চাঁদের আলো আর চারপাশের পরিবেশটা খুবই মহনীয় লাগছিলো।কিনারা হঠাৎই দেখলো সাদিত ওর কাছে এসে বসতেই সাদিতের শরীরের আবার সেই মন মাতানো মিষ্টি সুবাস কিনারার নাকে এসতেই কিনারা কেমন একটা উম্মাদ হয়ে গেলো।
সাদিতকে এতো কাছাকাছি পেয়ে কিনারার হার্টবিটের পারদ পৌঁছলো অন্য মাত্রায়।

সাদিত কিনারার কোমড় জরিয়ে ওর আরও কাছে টেনে আনলো।কিনারা চমকে উঠে সাদিতের ছোঁয়া পেয়ে।কিনারার চকমকানো মুখ দেখে সাদিত মনে মনে হাসলো।

কিনারা ছাড়াতে ছাড়াতে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল — কি করছেন কি মিস্টার চৌধুরী। আমাদের বাড়ি যেতে হবে অনেক রাত হয়েছে।

সাদিত কিনারার ঠোঁটে আঙুল রেখে জোরে বলল—হিসসস

কিনারা চুপ হয়ে গেলো।

সাদিত কিনারাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর কিনারার সেই গোলাপি টুসটুসে ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।কিনারা চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।কিছুক্ষন পর সাদিত কিনারার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে কিনারার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে,ছোট ছোট করে ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগলো।কিনারা সাদিতের শার্ট আঁকড়ে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর কেঁপে কেঁপে উঠছে।সাদিত কিনারার বন্ধ চোখের পাতায় আর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ে সরে এলো।

তারপর কিনারা আস্তে আস্তে চোখ দুটো খুলে সাদিতের দিকে তাকালো।বড়ো বড়ো করে শ্বাস নিলো তখনো কিনারার হার্টবিট ছুটছে।সাদিত কিনারার এতো কাছে ছিলো যে কিনারা লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিলো।কোনো রকম কথা বলতে চাইলো না।ভিতরে ভিতরে খুব রাগ হলো কিনারার।সাদিতের হুটহাট করে কাছে চলে আসা কিনারার মোটেও ভালো লাগে না।

সাদিত কিনারার দিকে তাকিয়ে বলল তুমি আবার লজ্জা পাচ্ছো।আমি তোমার বিয়ে করা হাসবেন্ড আমি কাছে আসলে এতে লজ্জা কিসের হ্যাঁ।

কিনারা সাদিতের কথা শুনে ওর মুখটা তুলে সাদিতের দিকে তাকালো—সাদিতের রোমান্টিক চোখ দুটো দেখে কিনারার চোখের পলক আর সরলো না।

সাদিত কিনারার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। তারপর কিনারার থুতনিটা ধরে টেনে উপরে তুলল।সাদিত অ্যাকট্রাক্টিভ গলায় বলল— তুমি এভাবে চুপ থাকবে না।এরকম চুপ করে থাকলে কিন্তু তোমার ওই জোড়ালো ঠোঁট দুটো খেয়ে ফেলবো।

সাদিতের কথা শুনে কিনারার মুখের এক্সপ্রেসন চেন্জ হয়ে গেলো।

সাদিত কিনারার মুখের এক্সপ্রেসের দেখে বলল —হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো।খেতেই পারি তো কারণ আফটার অল তুমি ওয়াইফ আমার আর আমি তোমার হাসবেন্ড।সাদিত তখনো কিনারার থুতনি টা চেপে ধরে আছে।আর একটু কিনারার কাছে আসতেই সাদিতের শরীরের৷ উষ্ণতা কিনারার শরীরে প্রবেশ করলো।সাদিতের আবার সেই মাতোয়ারা ঘ্রাণ কিনারার নাকে এসে পৌঁছলো।সেই গন্ধে কিনারার মন উতালপাতাল হতে শুরু করলো। সাদিত যা বলল সেই কথা গুলো কিনারাকে খুবই অ্যাট্রাক্ট করলো।সাদিতের ওই চোখ মুখ দেখে কিনারা ভুলেই গেলো,,ও একটু আগে সাদিতের উপর রেগে ছিলো।সাদিতেরে থেকে লজ্জায় নিজের মুখ সরিয়ে নিতে বাধ্য হলো কিনারা।আড়চোখে তাকিয়ে কিনারা বুঝতে পারলো যে সাদিত ওর দিকে এখনো এক ভাবে তাকিয়ে আছে। ঠিক ওই অবস্থায় কিনারার মুখ খানা লজ্জায় আরো লাল হয়ে গেলো।

সাদিতের চোখ দুটো ছিলো বড়ই মায়াবী, ওই পাগল করা দৃষ্টি দিয়ে সাদিত যেভাবে তাকিয়ে ছিলো।কিনারা যদি একটু কেয়ারলেস হয়ে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে।। তাহলে কিনারা সাদিতের চোখের দিকে তাকিয়ে
অথৈ সাগরে হারিয়ে যেতে বাধ্য।
#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ১২

“সাদিত হঠাৎই বলে উঠলো কিনারা তুমি কি এই বিয়েটাকে এখনো মন থেকে মেনে নিতে পারোনি???

কিনারা মুখ তুলে সাদিতের চোখের দিকে তাকালো—-সাদিতের ওই মায়াবী গভীর চোখের তীক্ষ্ণ চাহনি দেখে কিনারা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো—-অস্ফুটে গলায় বলল হ্যাঁ হ্যাঁ মানি তো।কথাটা বলতেই লজ্জায় কিনারার চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো।

সাদিত কিনারার এতো কাছে ছিলে যে কিনারা ঠিক মতো নিশ্বাসও নিতে পারলো না৷।কিনারা নিজের চোখের সামনে সাদিতের মুখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলো না।

সাদিত কিনারার আরো কাছে গিয়ে বলল— ও তাই। ইতি মধ্যে কিনারা সাদিতের নিশ্বাসটা নিজের ঠোঁটের উপর অনুভব করতে পেলো।সাদিত নিজের আঙুল গুলো কিনারার থুতনিতে চেপে ধরে, সাদিত আস্তে করে বলল,,,,কিস মি—-এন্ড আই উইল বিলিভ ইউ।

কথা গুলো শুনে কিনারা ঘাবড়ে গিয়ে মাথাটা একটু সরিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে সাদিতের তাকালো।।।।।। তাকিয়ে বলল হোয়াট—-

সাদিত এক মুহূর্ত দেরি না করে কিনারার ঘাড়ে হাত রাখলো—-রেখে কিনারাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে –নিজের ঠোঁট দুটো কিনারার ঠোঁটের উপর রেখে কিনারাকে নিজের বুকের কাছে জড়িয়ে ধরলো। কিনারার নরম ঠোঁট দুটো সাদিতকে আলাদা অনুভূতি দিচ্ছিলো।

কিনারা নার্ভাস হয়ে সাদিতকে ঠেলে সারিয়ে দিলো। সাদিতকে সরিয়ে দিয়ে কিনারা সাদিতের থেকে একটু দূরে গিয়ে বসলো।এবং কিনারা একটু রেগে গেলো।হাঁপাতে হাঁপাতে কিনারা বলল মিস্টার চৌধুরী। আপনি কি পাগল নাকি, এভাবে কেউ —— সাদিতের এরকম বিহেভিয়ার দেখে কিনারা অবাক হয়ে যাচ্ছে ভিতরে ভিতরে অনেক রাগও হলো।কিনারা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। কিনারার মনে হলো এক্ষনি পারলে এই নৌকা থেকে নেমে পড়ি,কিন্তু তা সম্ভব হলো না কারণ নৌকাটা তখন মাঝ নদীতে।

এসব ঘটনার পর কিনারার চোখ মুখ কান লাল হয়ে গিয়েছিলো।শরীর থেকে আলাদা উষ্ণতা যেনো ঝড়ে পরছিলো।

এসব দেখে সাদিত আর কিনারার উপর জোর খাটাতে চাইলো না,কারণ সাদিত চাই না কিনারা ওকে ভয় পাক।
সাদিত ভাবলো সবে বিয়ে হয়েছে আমাদের অনেক সময় আছে এখনি এতো এগ্রেসিভ হওয়ার কোনো দরকার নেই।

তারপর সাদিত কিনারার থেকে কিছুটা দূরে বসে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল—ওকে চল এখন আমরা জোছনা বিলাস করি। বলে উঠে কিনারার পাশে বসে আকাশের দিকে একটা আঙুল তুলে বলল দেখো আকাশটাই আজ কত্ত সুন্দর কিউট একটা চাঁদ উঠেছে ঠিক তোমার মতোই।কিনারাও আকাশে তাকিয়ে চাঁদ দেখতে শুরু করলো।

তারপর সাদিত বলল জানো কিনারা চাঁদকে দেখে যে কারোর মন এমনি ভালো হয়ে যাবে,চাঁদের আসল সৌন্দর্য কেউ বুঝতে পারেনা,তোমাকে বুঝতে হলে চাঁদের আলোকে ফিল করতে হবে,তবেই তুমি চাঁদের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। চাঁদের ওই অপরুপ সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে শ্বাস নাও দেখবে মনের ভিতর আলাদা একটা প্রশান্তি কাজ করবে।যা তুমি অন্য কিছুতে পাবে না। আগে আমি প্রায়ই কাজ শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে যেতো,তো রাতে কাজ শেষ করে ছাদে চলে যেতাম,জোৎসনার দিকে তাকিয়ে থেকে মনটাকে রিফ্রেশ করে ঘুমাতে যেতাম।তখন ঘুৃমটা অনেক ভালো হতো।

কিনারা সাদিতের কথা মতো আকাশে ওই চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শুরু করলো।

★★★★★★

নৌকায় বসে নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে রাতের সৌন্দর্যকে উপভোগ করছে কিনারা আর তাঁর পাশে সাদিত ও বসে আছে ।আকাশে অনেক তারার মেলা, তার সাথে চাঁদের আলোয় চারপাশটা আলোকিত হয়ে আছে।মনে হচ্ছে চাঁদের সমস্ত সৌন্দর্য যেনো আজ প্রকৃতির মাঝে সবটা বিলিয়ে দিয়েছে।সেই সাথে পানির স্রোতের গুঞ্জন পরিবেশটাকে আরো মহনীয় করে তুলেছে, চারপাশটা দেখে কিনারার মনে হচ্ছে কেউ তাঁর মনের সমস্ত রং তুলি দিয়ে চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটা এঁকেছে। নদীর পাড়ে অনেক বাতাস, যাকে বলে শীত ধরানো বাতাস।এতো বাতাসের মধ্যে ও কিনারা উপলব্ধি করতে পারছে তার ঘাড়ে কারোর গরম নিশ্বাসের।পাশে তাকাতেই কিনারা দেখলো সাদিত কিনারার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে।চাঁদের আলোয় সাদিতের মুখটা খুবই মায়াবী লাগছিলো। কিনারা সাদিতের দিকে ওভাবে কত ক্ষন তাকিয়ে সময় অতিবাহিত করেছে তা কিনারা নিজেও জানে না।এই প্রথম কিনারা সাদিতের দিকে এতো সময় ধরে তাকিয়ে ছিলো।সাদিত এতোটাই লম্বা যে মাথা রাখতেই কিনারার কষ্ট হচ্ছে । সাদিত ওর পুরো শরীরটা যেনো কিনার উপর ছেড়ে দিয়েছিলো।

কিনারা সাদিতকে ডাকতেই, সাদিত একটু নাড়াচাড়া করে কিনারার আরো কাছে এসে এক হাত কিনারার পেটের উপর রাখলো।এতে কিনারার মনে হচ্ছে ওর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।ঘাড়ে গরম নিশ্বাস আর হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে আছে,কিনারা মনে মনে লোকটা এমন কেন।তারপর সাদিতের মুখের দিকে তাকিয়ে বড়োই মায়া হলো,তারপর ভাবলো থাকনা একটু ঘুমিয়ে ক্ষতি কি।তারপর মুচকি হেসে আকাশের পানে
আবার তাকালো।

★★★★★

কিছুক্ষন পর সাদিতের নাকে একটা মিষ্টি গন্ধ পেলো, মিষ্টি গন্ধে যেনো মম করেছে নাকের চারপাশ । আচ্ছা এটা কি পারফিউম গন্ধ নানা এটা তো মনে হচ্ছে কারোর শরীরের গন্ধ। সাদিত আস্তে আস্তে চোখ খুলল।তারপর যখন পুরো হুসে এলো,সাদিত বুঝতে পারলো ও কিনারার কাঁধে মাথা দিয়ে রেখেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।সাদিত বুঝতেই ঘাড়টা তুলে নিলো,সাদিতের পুরো ঘাড় ব্যাথা৷ হয়ে গেছে।কিনারার কি কাঁধ ব্যাথা করেছে না।

সাদিত কিনারার দিকে তাকাতেই দেখলো কিনারা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদিত আস্তে করে ডাকলো কিনারা।

কিনারা সাদিতের ডাকে ঘুরে তাকালো সাদিতের দিকে তাকিয়ে ভাবলো উনি কখন উঠে গেলেন।

সাদিত বলে উঠলো — কতক্ষন ওভাবে কাঁধে মাথা রেখে ছিলাম ডাকোনি কেন।তোমার কাঁধ নিশ্চয়ই এতোক্ষনে ব্যাথা হয়ে গেছে।

কিনারা বলল আপনি ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন আর৷ যদিও আমি আপনাকে একবার ডেকেছিলাম ৷ কিন্তু আপনি শুনেননি।পরে আর ডাকতে ইচ্ছে করেনি।

আসলে কখন৷ যে চোখটা লেগে গিয়েছিলো বুঝতেই পারিনি, তারপর সাদিত উঠে বলল চল এবার ফেরা যাক। অনেক রাত হয়েছে। চলো।

কিনারা মাথা নেড়ে হুম বলে,দাঁড়িয়ে গেলো।

দুজনে নদীর পাড় থেকে হেঁটে গাড়ির কাছে যাওয়া শুরু করলো।একটু পর আচমকাই সাদিত কিনারাকে কোলে তুলে হাঁটতে শুরু করলো।কিনারাকে কিচ্ছু না বলে।

আরে আরে করছেন টা কি ছাড়ুন আমাকে ,পড়ে যাবো তো,কখন না কখন ফেলে দেন তার ঠিক ঠিকানা নেই। আমাকে নামান বলছি।কিনারা বলে উঠলো

সাদিত কিনারার কথা শুনে — হেসে কিনারার দিকে তাকিয়ে বলল বিশ্বাস রাখতে পারো কখনো ফেলবো না।
— বলে কিনারাকে আরো একটু কাছে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

কিনারা বুঝতে পারলো ওর হাজার না মিস্টার চৌধুরী শুনবেন না।তাই উপায় না পেয়ে বাধ্য মেয়ের মতো সাদিতের গলা জড়িয়ে ধরলো।

ততক্ষণে কিনারা সাদিতকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।ছেলে মানুষ এত্ত ফর্সা হবে কেন।কিনারা ভাবলো আমিও যদিও ফর্সা কিন্তু মিস্টার চৌধুরীর থেকে কমই হবো।এই ভেবে কিনারার হিংসা হলো।

এতোকিছু ভাবনার মধ্যে গাড়ির কাছে এসে কিনারাকে নামিয়ে দিয়ে সাদিত বলল গাড়িতে উঠো।কিনারাও বাধ্য মেয়ের মতো উঠে পড়লো,তারপর দুজনে মিলে বাসায় ফিরে গেলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here