#ধাঁধার_থেকেও_জটিল_তুমি
( তৃতীয় পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<৬>
এই ভাবনার পর আরো কটা দিন পার হয়ে গেছে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে | আজ 7th সেপ্টেম্বর | দিনটা একটু স্পেশ্যাল মেঘনার কাছে | আসলে আজ ওর জন্মদিন | প্রত্যেকবারের মতন আজও ওদের বাড়িতে সন্ধ্যেবেলা ছোট্ট একটা গেট টু গেদার এরেঞ্জ করেছে মেঘনার বাবা মা | ওর সমস্ত বন্ধুরা এসেছে সেখানে | এর মধ্যে নয়ন তো আবার একটা সারপ্রাইজ নিয়ে এসেছে সঙ্গে | তরঙ্গ , ওর জ্যাঠতুতো দাদা কে সঙ্গে করে নিয়ে হাজির মেঘনাদের বাড়ি | মেঘনা তো দরজা খুলেই পুরো সারপ্রাইজড হয়ে গেছিলো সেইদিন | আসলে তরঙ্গ এখন বেশ ফেমাস সিঙ্গার ! রিসেন্টলি টিভির একটা রিয়ালিটি শো তে থার্ড হয়েছিল | পুরো শহর ছেয়ে গিয়েছিলো ওর পোস্টারে পোস্টারে | তারপর তো ইউটিউবে অনেক সোলো মিউজিক বেরিয়েছে | ট্রেন্ডিং এ থাকে ওর সব গান | সেইরকম একজন স্টার যে ওর জন্মদিনে আসতে পারে এটা ভেবেই মেঘনার মুখে হাসি চলে এসেছিলো তরঙ্গর সামনে | তখন তরঙ্গই নিজের হাতটা বাড়িয়ে বলেছিলো ,
———— ” হাই .. আমি তোমার কথা অনেক শুনেছি নয়নের কাছে | ও তো তোমার দু চারটে লেখাও পড়িয়েছে আমাকে | ভেরি ইম্প্রেসিভ .. যাইহোক , নাইস টু মিট ইউ , হ্যাপি বার্থডে ..”
কথাগুলো প্রায় একসঙ্গে বলেছিলো ও | মেঘনা এর উত্তরে কয়েক সেকেন্ড থমকে নিজের হাতটা তরঙ্গের দিকে বাড়িয়ে বলেছিলো ,
————- ” থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ … আপনি যে এখানে আসবেন আমি তো ভাবিইনি ! অনেক গান শুনেছি আপনার | খুব ভালো লাগে |”
এটা শুনে তরঙ্গ অল্প হেসে একটুও সময় না নিয়ে বলেছিলো ,
————– ” থ্যাঙ্ক ইউ .. শুধু আপনিটা তুমি করে বলো | নইলে কিরকম সিনিয়র সিটিজেন লাগে নিজেকে |”
এর উত্তরে মেঘনা হেসে ফেলেছিলো খুব আনমনে | তারপর হারিয়ে গিয়েছিলো জন্মদিনের সন্ধ্যেয় | তরঙ্গ সঙ্গে করে গিটারটাও এনেছিল নিজের | একেরপর এক গান করে মাতিয়ে দিচ্ছিলো সেদিন সবাইকে | কখনো ‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখিবো’ তো কখনো ‘প্রেমে পরা বারণ’ , সবার মন ছুঁয়ে যাওয়া গানগুলোই করছিলো প্রত্যেকের রিকোয়েস্ট এ | তবে সব থেকে বেশি রিকোয়েস্ট রাখছিলো মেঘনার | মনে হয় বার্থডে গার্ল বলে একটু বেশিই কথা শুনছিলো ওর | শুধু তাই নয় , তরঙ্গ মাঝে মাঝেই ওকে আলতো হাসি , আড়চোখে দৃষ্টি ,এইসব না চাইতেও দিচ্ছিলো আনমনে | একটা যেন ভালো লাগা কাজ করছিলো ওর মধ্যে | এটা মেঘনা অল্প অল্প বুঝতে পারলেও কিছু বলছিলো না আলাদা করে | তবে গানের মাঝে হঠাৎ নয়ন এসে বললো ওর কানের কাছে ,
————- ” কি রে শাড়িতে তো আজ আর তোকে চেনা যাচ্ছে না রে ! আমার দাদা তো পুরো ফ্ল্যাট ! দেখেই বুঝতে পারছি | নইলে এতো গানের বন্যা বইয়ে দিতো না |”
কথাটা শুনে মেঘনা একটু বিরক্তির মতন মুখ করে বললো , ———— ” থামবি তুই ? সব সময় যা মনে হয় তাই বলিস !”
কথাটার উত্তরে মেঘনা এবার ডিরেক্টলিই বললো , ———— ” যা মনে হয় না , যেটা সত্যি তাই বলি | আর তোর আমার দাদাকে পছন্দ না হওয়ার কি আছে ! আন্তরিক তো নয় একদম উল্টো , গান পর্যন্ত বোঝে না , তাই ও লিস্ট থেকে বাদ | কিন্তু আমার দাদা কি দোষ করলো ? তোর মতনই কথা বলে , মজা করে , আর সব থেকে বড়ো কথা গান গায় | হলো না একেবারে পারফেক্ট ম্যাচ ?”
কথাটার উত্তরে মেঘনা ওকে একটা প্রশ্ন করে উঠলো , ————- ” আচ্ছা , তোর কি আমার বিয়ে না দিয়ে শান্তি হচ্ছে না ? মানে আমার জন্য ছেলে না খুঁজে তুই বরং নিজের জন্য একটা খোঁজ | তাহলে আমিও একটা বিয়েবাড়ি পাবো | তাই না ?”
কথাগুলো শুনে নয়ন একটু গোমড়া মতন মুখ করে বললো , ———— ” আমার তো কেউ পটেই না ! যাদের আমাকে পছন্দ হয় , তাদের আমার পোষায় না | আর যেসব ছেলেদের আমি পছন্দ করি , সেই সব ছেলেদের আবার আমাকে পছন্দ হয় না | মানে ব্যাপারটা কখনোই মিউচুয়াল হয় না কেন কে জানে ! কিন্তু তোর কেসে তো উল্টো | এই যে আমার দাদা , তোর কত ছবি দেখেছে জানিস আমার ফোন এ | আর আজকে তোর বার্থডে শুনে নিজে আমার সঙ্গে আসতে চেয়েছে | আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি তোকে পছন্দ | তাই তো ঘটকালি করছি ! ”
কথাগুলো কিরকম এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো নয়ন | কিন্তু মেঘনা এর আর কোনো উত্তর দেয়ার আগেই আরেকবার দরজায় বেল বাজলো , আর মেঘনা কয়েক মুহূর্তের ভিড়ে দরজা খুলতেই অবাক ! আন্তরিক এসেছে ওর সামনে , তাও একটা গিফ্ট হাতে |
মেঘনা দৃশ্যটা দেখে অবাক হয়েই তাকিয়েছিলো , তখন আন্তরিকই বলে উঠলো , ————- ” বাবার আসলে লাস্ট মোমেন্টে একজন বন্ধুর কল চলে এলো | কি একটা লিগ্যাল প্রব্লেম হয়েছে | বাবা তো ল-অফিসার ছিল , তাই বার বার ফোন করে যেতে বললো কনসাল্ট করার জন্য | বাবা তাই আসতো পারলো না | কাল তোমার সাথে দেখা করবে | কিন্তু আমাকে এই গিফ্টটা দিতে বললো তোমাকে | হ্যাপি বার্থডে |”
কথাগুলো বলতেই মেঘনা একটা অন্য কথা বলে উঠলো | ও এবার বেশ জোর দিয়েই বললো , ————- ” বুঝলাম | কিন্তু গিফ্ট তো আমি এইভাবে নেবো না তো | একটা শর্তেই নেবো অনলি | যদি তুমি আমাদের বাড়িতে আজকে রাত্রে ডিনার করে যাও | তাহলেই |”
কথাটা শুনে আন্তরিক একটু কিন্ত কিন্তু করে বললো , ——– ” আমি ! ডিনার ! না মানে !”
এবার মেঘনা আরো জোর দেখিয়ে বললো . ———– ” কোনো মানে বুঝবো না | এই দশ বছরে এই প্রথমবার তুমি আমার জন্মদিনে আমাদের বাড়ি এলে | কাকুর সাথে তো তোমাকেও প্রত্যেকবার বলে আসি | কিন্তু কখনোই তুমি আসো না | আর এবার যখন এসেছো , তখন ছাড়বো না | বুঝলে |”
কথাটা বলেই ও আন্তরিকের হাতটা ধরে প্রায় টেনে ওকে ভেতরে নিয়ে এলো | আন্তরিকও আর এই মুহূর্তে না বলতে পারলো না মেঘনাকে | মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা আছে , যেটা সবার থেকে আলাদা | হয়তো বাবার অসুস্থ হওয়ার দিন বলা সেই কথাগুলোর জন্য ! আন্তরিককে কোনো রকম সুগার কোটিং ছাড়া ওর ভুলটা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ! অথবা ওর বাবাকে নিয়মিত গল্পের বই সাপ্লাই দেয়ার জন্য ! জানে না ঠিক কোন কারণের জন্য মেঘনা আলাদা ! তবে এটুকু জানে যে মেঘনাই এমন একজন , যার সঙ্গে আন্তরিক নিজে থেকে কথা বলতে যায় | ওর ওই বাইরের ইন্ট্রোভার্ট গম্ভীর নেচারটাকে ছেড়ে এমনি কিছু অদরকারি কথা | এইসবই ভাবছিলো আনমনে অনেকের ভিড়ে দাঁড়িয়ে আন্তরিক , তখনই খেয়াল করলো গিটার হাতে একজন ছেলে সোফায় সমস্ত মেয়েদের মাঝে একদম মধ্যমনি হয়ে বসে আছে | তখনই মেঘনা ওকে সবার সাথে আলাপ করিয়ে দিলো | ও সবাইকে দেখিয়ে বললো আন্তরিককে , ———— ” এরা হচ্ছে সব আমার স্কুল আর কলেজ লাইফের বন্ধু | আর ও হচ্ছে নয়ন | আমার বেস্ট ফ্রেন্ড | আর ওই গিটার হাতে যে বসে আছে , সে নয়নের দাদা , খুব নামি সিঙ্গার ! ওর নাম..”
না , মেঘনার কথাটাকে কমপ্লিট হতে না দিয়েই এবার তরঙ্গ বলে উঠলো আন্তরিকের দিকে তাকিয়ে খুব কনফিডেন্স এর সাথে , ————- ” নাম বলার দরকার নেই | উনি নিশ্চই চেনেন আমাকে | কলকাতা শহরে থাকলে আমাকে না চেনার মতন কিছুই নেই !”
কথাটায় মেঘনা একটু জোর করে হাসার চেষ্টা করলো এই মুহূর্তে | যে আন্তরিক গানের লাইন মনে রাখে না , সে গায়ককে কতটা মনে রাখবে কে জানে ! এইসবই ভাবছিলো , তখন আন্তরিক একটু আস্তে গলায় বলে উঠলো তরঙ্গকে , ————- ” সরি , আসলে আমার গান অতটা ঠিক শোনা হয় না | তাই নামটা জানি না | তবে আপনার ছবি পোস্টার দেখেছি অনেক জায়গায় | ”
কথাটায় তরঙ্গ যেন একটু ধাক্কা খেলো | তারপর সেই ধাক্কাটাকে মেক আপ দেয়ার জন্যই বলে উঠলো , ———– ” আপনি এই জগতেরই লোক তো ? মানে গান শোনেন না ! এরকম খুব কম মানুষ আছে ! এনওয়েজ নাম যখন জানেনই না , তাহলে বলে দিই , আমি তরঙ্গ | আপনি ?”
ওর কথায় আন্তরিক সেই আগের মতন আস্তে গলায়ই উত্তর দিলো একটা শব্দে , ———- ” আন্তরিক |”
এরপর তরঙ্গ আরো একটা প্রশ্ন করে বসলো একটু যেন শুনিয়ে , ———— ” তা আপনি কি করেন ? নিশ্চয়ই খুব বিজি যে গান টান শোনার টাইম নেই ?”
এই কথাটার উত্তরেই আন্তরিক কোনো রকম বেশি কথা না সাজিয়ে একটা শব্দে বললো , ———- ‘ পড়াই |”
মেঘনা এবার একটু অবাক হয়ে গেলো ওর উত্তরে | সবার মাঝে যে তরঙ্গ ওকে শুনিয়ে প্রশ্ন করছে , সেটা তো আন্তরিক বুঝতেই পারছে | তাহলে ও প্রফেসর এই উত্তরটা না দিয়ে শুধু পড়াই কেন বললো ! প্রফেসর বললে তরঙ্গ দু সেকেন্ডে চুপ হয়ে যাবে | আর কথা বাড়াবে না ! এইসবই ভাবছিলো , তখন তরঙ্গ একটু বেঁকা হেসে বলে উঠলো ,
————– ” ওহ ! টিউশন পড়ান ! এই কাজ করার জন্য এতো ব্যস্ত যে গান শোনা হয় না ! বুঝলাম |”
না , এরপর আন্তরিক অল্প হেসে চুপ থাকলেও মেঘনা আর চুপ থাকলো না | এটা ওর জন্মদিনের অনুষ্ঠান | আন্তরিক তো ওর কথাতেই এখানে এসেছে | তাই আন্তরিককে কেউ কিছু না জেনে শোনাবে , এটা ঠিক হতে দেয়া যায় না | তাই মেঘনাই বলে উঠলো এবার , ————-” আন্তরিক প্রফেসর | কলেজে পড়ায় | ডক্টরেট কমপ্লিট করে পোস্ট ডক্টরেট করার চেষ্টা করছে | অনেকগুলো পেপার পাবলিশ হয়েছে ওর | আর একটা কথা তরঙ্গ , প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা | তাদের পছন্দ , ভালো লাগা , প্রেফারেন্স , সব আলাদা | এই নিয়ে কাউকে কিছু বলাটা ঠিক না | আর ধরে নিলাম কেউ যদি সারাদিন ফ্রি বসে থেকেও গান না শোনে , কোনো সিঙ্গারকে না চেনে , তাহলেও সেটা তার চয়েজ | এই নিয়ে আলাদা করে কথা বলার মতন তো কিছু হয়নি | ”
কথাগুলো এতটা দৃঢ় গলায় বললো মেঘনা যে তরঙ্গও হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো | ও যে একটু বেশি রিয়্যাক্ট করে ফেলেছে বুঝলো মনে হয় | তাই কথা ঘোরানোর জন্য একটু জোর করে হেসে বললো
—————– ” না না | কিছু বলিনি তো | গান শোনা না শোনা , এটা তো নিজের ইচ্ছা | যাইহোক আমাদের গানের আড্ডাটা কিন্তু থেমে গেলো হঠাৎ | ওটা আবার শুরু করা যাক |”
ও কথাটা বলেই আবার সবার মধ্যে মিশে গেল নিজে থেকে | ওকে ঘিরে থাকা মেয়েদের গানের আবদার মেটাতে শুরু করলো এক এক করে | তখন মেঘনা আন্তরিককে একটু আস্তে গলায় বলে উঠলো , ———— ” সরি .. ও একটু রুডলি কথা বলছিলো তোমার সঙ্গে ! আসলে খুব ফেমাস তো | গায় ও ভীষণ ভালো | তাই হয়তো আনকনসাসলি একটা ইগো চলে এসেছে !”
কথাগুলো বলে ও খেয়াল করলো আন্তরিক ওর দিকে তাকিয়ে আলতো হাসছে | কারণটা ঠিক বুঝতে পারলো না মেঘনা ! তখন আন্তরিকই নিজে থেকে বলে উঠলো একটা অন্য কথা ,
—————- ” তুমি রাইটার না হয়ে টিচার হতে পারতে | মানাতো ভালো |”
কথাটার ঠিক কোনো মানে খুঁজে পেলো না মেঘনা ! ওর দিকে অদ্ভুতভাবেই তাকিয়ে রইলো তাই | তখন আন্তরিক আবার বলে উঠলো ,
—————– ” এই যে লোকজনকে চুপ করিয়ে দাও | এরকমভাবে কথা তো টিচার্সরা বলে ! তার ওপরে এই চশমাটা ! ইউ নো , আমাদের স্কুলে একজন ম্যাম ছিল , কঙ্কনা ম্যাম | ম্যাথস এর টিচার | স্টুডেন্টসরা যখন বেশি কথা বলতো , তখন ঠিক এইভাবে চুপ করিয়ে দিতো, একটু শাষণ করে | আজ তোমাকে দেখে তার কথা মনে পরে গেলো ! ”
না , এর আর ঠিক কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না মেঘনা | হেসে ফেললো হঠাৎ ! ও টিচার ! শেষে কারোর এটা মনে হলো দেখে ! এটা ভেবেই ঠিক মেলাতে পারছিলো না নিজেকে !
যাইহোক , তবে সেইদিন তরঙ্গর আবার গান শুরু হওয়ার পর আন্তরিক খেয়াল করেছিল মেঘনা কিরকম চুপ হয়ে ওর গান শুনছে ! যেন হারিয়ে যাচ্ছে এই ছেলেটার সুরের মধ্যে | আন্তরিকের এই সময় একটা না বোঝা খারাপ লাগা , চাপা রাগ আসছিলো নিজের ওপর , ছেলেটার ওপর ! মনে হচ্ছিলো ছেলেটা সত্যিই একটু বেশি স্মার্ট , আর বেশি বকে | অন্যের জন্মদিনের পার্টিতে এসে নইলে এরকম গানের অনুষ্ঠান কে শুরু করে দেয় ! লোকজন তো গিফ্ট দেয় , খায় আর বেড়িয়ে যায় ! এইভাবে নিজের ট্যালেন্টের শোকেস করে না কেউ ! তবে এই মুহূর্তে নিজের ওপর একটা অন্য কারণে রাগ হচ্ছিলো জানে না কেন ! মা যখন বেঁচে ছিল , মানে আন্তরিক যখন ক্লাস টু তে পড়তো , তখন মা ওকে গানের ক্লাসে ভর্তি করেছিল | আন্তরিক দু সপ্তাহের মধ্যে হার মেনে পালিয়ে এসেছিলো স্কুল থেকে | কিছুতেই ওই সা রে গা মা মাথায় ঢোকেনি ওর ! গানের গলাটাও ছিল ফ্যাসফ্যাসে | তাই আর মা ও জোর করেনি | কথাটা ভেবে নিজের ওপরই কোনো এক অজানা কারণে যেন বিরক্তি লাগলো একটু | তখন যদি গানটা নিয়ে একটু সিরিয়াস হতো , তাহলে এইভাবে আজ ভিড়ের মধ্যে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না ! দরকার হলে ও নিজেও দু চারটে গান শুনিয়ে দিতে পারতো সবাইকে ! এইভাবে পার্টির এটেনশন সিকার হয়ে তরঙ্গ বসে থাকতো না এখানে ! কথাটা কয়েক সেকেন্ড ভেবেই ওর নিজেরই নিজের ওপর অবাক লাগলো যেন ! হঠাৎ কি হলো আন্তরিকের ! আন্তরিক তো এর আগে কখনো ভিড়ের মধ্যে ঢুকতে চায়নি ! কারোর এটেনশন পেতে চায়নি ! ও তো বরং ভিড় থেকে আলাদা , এক কোনায় , সবার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে কম্ফোর্টেবল ফিল করে | আসলে লোকের সাথে বেশি কথা বলা , আলাপ করাটাও তো একটা কাজ বলে মনে হয় ওর | তাহলে আজ কি হলো ! আজ কেন সবার মধ্যমনি হওয়ার ইচ্ছা হলো হঠাৎ ! আর কেন মনে হচ্ছে গানটা জানলে বোধ হয় ভালো হতো ! এটা কি ওর মনের বদল ! না কি ওই দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নীল রঙের শাড়ি পড়া মেয়েটাই আসল কারণ ! যে বড়ো বড়ো দুটো চোখে চশমা সাজিয়ে কিরকম থমকে তাকিয়ে আছে তরঙ্গর দিকে, মুগ্ধ হয়ে গান শুনছে ওর , সেটাই একটা খারাপ লাগা বয়ে নিয়ে আসছে আন্তরিকের মনে | না চাইতেও কথাটা মনে হলো হঠাৎ | নিজেরও চারিদিকটা কেমন থমকে গেলো তারপর | না , আর ভাবনাটাকে বেশি এগোতে না দিয়ে আন্তরিক নিজেকে থামিয়ে দিলো এবার | কখনো ফিলিংসের জ্বালে জরায়নি ও | আর মেঘনা তো সত্যি ওর থেকে খুব আলাদা ! মেঘনার সাথে ওর কোনো গল্প সম্ভব না কি ! কথাটা ভেবেই আন্তরিক আর অপেক্ষা করলো না এই মুহূর্তে | অল্প কিছু খেয়েই ‘একটু কাজ আছে ‘ বলে বেড়িয়ে এলো ওদের ফ্ল্যাট থেকে | নিজের একার ঘরে |
চলবে…