ধূসর প্রেমের অনুভূতি পর্ব -১৪

#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_১৪
.
.
.
অন্যদিকে পুরো হোটেল রুম ভেঙে তসনস করে ফেললো কিং ফায়ার ৷ প্রচন্ড রাগে ওয়াইনের বোতল ছুড়ে মারে হ্যারির দিকে তখনি হ্যারি দ্রুত সরে পড়ে৷ হ্যারি কিং ফায়ারকে সামলানোর জন্য কিং ফায়ারের দিকে এগোতে কিং ফায়ার হ্যারির গলা চেপে ধরে রাগে ফুসতে ফুসতে হ্যারিকে বলে,” আমার সাথে বেইমানির শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে হ্যারি৷ ”

” কিং ফায়ার ট্রাস্ট মি আপনার সাথে কোন বেইমানি করি নি৷ অন্য কেউ করেছে ৷”

হ্যারি কিং ফায়ারের থেকে নিজেকে কোন ভাবে ছাড়িয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে আবার বলে ওঠে,” কিং ফায়ার আমি সত্যি আপনার সাথে কোন বেইমানি করিনি৷ ”

কিং ফায়ার রাগে ফুসতে ফুসতে বলল,” তাহলে কে করেছে? এই প্রজেক্টটার কথা শুধু মাত্র চারজন জানি ৷ আমি তুই আর আরু মারু ৷”

” কিং ফায়ার তাহলে কি আরু বা মারু কেউ কি খবরটা লিক করেছে?”

” অসম্ভব৷ আরু মারু কখনোই এমনটা করতে পারে না৷ ওরা দু’বোন ভিষণ লয়াল কাজের প্রতি , এরা কিছুতেই এমনটা করতে পারে না৷ ”

” কিং ফায়ার তাহলে পড়ে রইল আপনি আর আমি৷ আপনি বা আমি তো এমন কাজ করার কথা কল্পনাতেও ভাবতে পারি না তাহলে কে করলো কাজ টা?”

” খুজে বের কর হ্যারি৷ আমি তাকে আমার সামনে দেখতে চাই ৷ কে আমার পুরো প্লানটা ভেস্তে দিলো? একবার তাকে সামনে পাই ৷ তার শরীর থেকে হাড় আলাদা করে ফেলবো ৷ তারপর আমার শিকারি কুকুরকে তার খাদ্য হিসেবে ছুড়ে মারবো৷”

হ্যারি শুকনো ঢোক গিলে ৷ লাগাতার আরু(ফারহা) মারুকে(ফারিহা) কল করতে লাগলো ৷ কিন্তু কেউ কল রিসিভ করছে না৷

৩১.
ফারহা ফারিহার ফোনটা হাতে নিয়ে দেখছে৷ হ্যারির লাগাতার ফোন কল’স দেখে ফারহা হাসলো৷ হ্যারি ফারিহাকে ফোনে না পেয়ে এবার ফারহাকে কল দিতে ফারহা বাঁকা হেসে কল রিসিভ করে৷

” হ্যালো আরু হয়ার আর ইউ? ”

” ওয়াট হ্যাপেন্ড হ্যারি? তোমার ভয়েজটা এরকম লাগছে কেন?” না জানার ভান করে প্রশ্ন করলো ফারহা৷

” ফারহা আমাদের পুরো প্লান ফ্লপ হয়ে গেছে ৷ পুলিশ ওই সব বোম গুলো নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে৷”

” ওয়াট দ্য হেল হ্যারি ৷ আর ইউ ম্যাড ? কি সব বলছো? পুলিশ কি করে জানবে বোম গুলো মারু আর আমি কোথায় কোথায় রেখেছি?”

” এক্সাক্টলি আরু আমিও সেটাই ভাবছি৷ এটা কি করে পসিবেল হলো?”

” হ্যারি আই থিং আমাদের দলের ভেতর থেকে কেউ একজন প্লান টা লিক করেছে৷”

” রাইট আরু বাট কে করলো?”

” হ্যারি মারু কোথায়?”

” মারু কোথায় সেটা আমি কি করে জানবো? সেটাতো তুমি বলতে পারবে৷”

” নো হ্যারি গতকাল রাতে মারু বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে এখন পর্যন্ত ওকে ফোনে পাইনি৷ আর কিছুক্ষণ আগে মারুকে করতে মারু কল কেটে দিয়ে ফোন সুইচ অফ করে রেখেছে৷ ”

হ্যারি ফারহা দুজনে দুজনার ফোন লাউডে দিয়ে কথা বলায় ফারিহা তনু আর অন্যদিকে কিং ফায়ার সবটা শুনে নেয়৷

ফারহা কল রিসিভ করার পূর্বে ফারিহার মুখ বেধে দিয়েছিলো বিধায় ফারিহা কোন কোন টু-শব্দ করতে পারেনি৷

কিং ফায়ারের মনে ফারিহার জন্য অবিশ্বাসের বিজ বুনে দিয়ে কল ডিসকানেক্ট করে দিলো ফারহা৷ এদিকে কিং ফায়ার নিজে হতভম্ব হতবিহ্বল হয়ে পড়লো৷ প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার নিজের উপর মারু(ফারিহা) তাকে ধোকা দিতে পারে এটা কিং ফায়ার কখনো ভাবতে পারেনি৷

” হ্যারি আই ওয়ান্ট মারু ৷ হয় জীবিত নয় মৃত গেট দ্যাট?” প্রচন্ড রেগে হ্যারিকে বলল কিং ফায়ার ৷

” ইয়েস কিং ফায়ার , আমি এখুনি খোজ নিচ্ছি মারু এই মুহূর্তে কোথায় আছে৷”

এদিকে তনু ফারিহার মুখের বাধণ খুলতেই ফারিহা রাগে দাঁত কিড়মিড় করে ফারহাকে বলল, ” ফারহা এটা কি করলি তুই? কিং ফায়ার তোর কথা শুনতে পেলে ভাবতে আমি বেইমানি করেছি৷ কিং ফায়ার আমাকে ছাড়বে না ফারহা ৷ প্লিজ ডোন্ট ডু দিস ৷ ”

ফারিহার কথা শুনে তনু ফারহা দু’জনে হাসতে লাগলো৷ তখনি রাফি আদিল রুমে প্রবেশ করতে ফারিহা আদিল রাফিকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো ,” তোরা! ”

” হ্যাঁ আমরা, কেন আপু আমাদের দেখে খুশি হওনি?”(আদিল)

ফারিহা ফারহার দিকে তাকিয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,” ওরাও তোর সাথে হাত মিলিয়েছে তাই না ফারহা? বাট ইউ ডোন্ট ওয়ারি আমি তোর তনুর পাশাপাশি ওদের দুভাইকেও আমি ছাড়বো না৷ কাউকে ছাড়বে না এই মারু৷”

তনু ফারিহাকে আঘাত করতে নিলে ফারহা তনুকে আটকে দিয়ে বলে,” উহু তনুবেবি এটা করো না৷ ওর শরীরে যেন একটা আঘাতের চিন্হ না থাকে ৷ ”

” কিন্তু কেন ফারু?”

” ওরে আমার কিউটের ডিব্বার ড্রাম ফারিহাকে আঘাত করতে বারণ করছি কারণ ফারিহা এখন কিং ফায়ারের শিকার৷ কিং ফায়ার ওকে আস্ত পেলে ছেড়ে দিবে ভেবেছিস? কিং ফায়ার তার আগুনে ফারিহাকে জ্বলসে দিবে৷ আর আঘাত করতে বারণ করছি যাতে ওর শরীরের কোন আঘাতের চিন্হ কিং ফায়ার কে দেখিয়ে বিশ্বাস না করাতে পারে ও কিডন্যাপ হয়েছিলো৷ ”

আদিল রাফি তনু তিন জনই ফারহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ফারিহার ফারহার প্লান বুঝতে একসেকেন্ডও সময় লাগলো না৷ ফারিহা এবার ফারহাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করতে লাগলো৷

-” আপু আমি না তোর বোন? তুই বোন হয়ে আমার সাথে এটা করতে পারবি বল?”

ফারিহার কথা শুনে ফারহার মাথায় ধপ করে যেন আগুন ধরে গেল৷ এক সেকেন্ডের মাথায় ফারহা ফারিহার গলা চেপে ধরে রাগি গালায় বলে উঠলো ,” এখন তোর আমাদের সম্পর্কের কথা মনে পড়ছে ফারিহা? যখন আমাকে ওই জানোয়ারদের হাতে তুলে দিয়েছিলি রেপ করার জন্য তখন আমাদের বোনের সম্পর্কের কথা মনে পড়েনি? মনে পড়েনি আমি তোর রক্তের সম্পর্ক তোর আপন বড় বোন? ”

তনু রাফি জোর করে ফারহার থেকে ফারিহাকে ছাড়িয়ে নেয়৷ আজ যেন ফারহার চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে ৷ কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না৷ এদিকে ফারিহার অবস্থা খারাপ চোখ উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা ৷ ফারিহা কাঁপা কাঁপা গলায় পানি চাইছে৷ রাফি পানির বোতল নিয়ে ফারিহার দিকে এগোতে গেলে ফারহা পানির বোতল টা ধরে দুরে ছুড়ে মেরে বলে,” কেউ ওকে এক ফোঁটা পানি দিবে না৷ পানির তৃষ্ণায় ছটপট করুক৷”

-কিন্তু দি ,, এতোটুকু বলে থেমে গেল রাফি বাকিটা বলার সাহস পেল না ফারহার রক্ত চক্ষু দেখে৷

আদিল ফারহার হাত ধরে বলে,” আগে শান্ত হো আপু , রাগ কন্ট্রোল করে আমাদের সবটা খুলে বল ফারিহাপু তোর সাথে ঠিক কি করেছে?”

আদিলের কথার প্রত্ত্যুতরে তনু বলে উঠলো ,” ফারহা বলতে পারবে না আদিল৷ আমি আজ বলবো এই ফারিহা তার আপন বোনের সাথে ঠিক কি কি করেছে৷ ”

তনু একটু ঢোক গিলে বলতে শুরু করলো,” লন্ডনে ফারহা ফারিহা যখন নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হলো আমিও তখন সেদিন ওই ভার্সিটিতে ভর্তি হই৷ আমাদের সাবজেক্ট এক হওয়া আমরা একি ক্লাসে পড়তাম ৷ আমি প্রথম ফারহার সাথে বন্ধুত্ব করি তারপর ফারিহার সাথে, জানো আদিল প্রথম ছয় মাস আমাদের পড়া শুনা বেশ ভালো চলছিলো তার পাশাপাশি আড্ডা দেওয়া ঘুরাঘুরি করা ফান করা ৷

তার মাঝে হঠাৎ ফারহা আর আমি ফারিহার ভিতর কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করি৷ ফারিহা আগের মতো আমাদের সাথে না মিশে ওই ভার্সিটির কিছু বাজে ছেলে মেয়ের সাথে মিশতো৷ প্রথম প্রথম ফারিহাকে বারণ করতো ফারহা ওদের সাথে না মিশতে কিন্তু ফারিহা ফারহার কোন কথাই শুনতো না ৷ একদিন ফারহা আর আমি ফারিহার পিছু নি৷ ওহ আর একটা কথা বলা হয়নি ফারহা ফারিহা ওরা কিন্তু হোস্টেলে থাকতো আর আমিও সেই একই হোস্টেলে উঠি৷ তাই সকাল বিকাল রাত দিন আমি ফারহার সাথে থাকতাম ৷ সেদিন ফারহা আর আমি ফারিহার পিছু নিয়ে একটা ক্লাবে ঢুকতে হয়৷ ওই ক্লাবে বিশেষ করে যারা সাদা চামড়ার উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলে মেয়েরা নেশা করতো৷ আমরা সেদিন হতবাক হয়ে যাই যখন দেখি ফারিহা কিছু নিগ্রো ছেলেদের সাথে বসে নেশা করছে৷ ফারহা সেদিন নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি ৷ ছুটে গিয়ে ফারিহার গালে কয়েকটা থাপ্পর মারে৷ ফারিহা আর ছেলে গুলো ছিলো নেশা গ্রস্থ ৷ ফারিহা সে দিন ফারহার সাথে যা তা ব্যবহার করে ছেলে গুলোর দিকে ধাক্কা দিয়ে বলে কি জানো? ” গাইজ ইনজয় ৷”

আমি অনেক চেষ্টা করেও সেদিন ফারহাকে বাঁচাতে পারি নি কিন্তু সেদিন ছেলে গুলো ফারহার দিকে এগোতে ফারহা,,,,
.
.
.
#চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here