নক্ষত্র বন্দনা পর্ব ৪

#নক্ষত্র_বন্দনা

#পর্ব_৪

#লেখায়_জারিন

১৭.

সেরাতে নক্ষত্র শুয়ে পড়ার পরে ইরিন ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। ওর পাশে শুতে ইচ্ছে করছিল না ইরিনের । একে তো পুরুষ, তারওপর আবার নক্ষত্রকে পছন্দও হয়নি ওর । এমন একজন পুরুষের সাথে এক বিছানায় শুয়ে থাকা ওর কাছে সহজ লাগছিল না কিছুতেই। সে যতই স্বামী হোক, বৈধ সম্পর্ক হোক। বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল ওর। ঘরটাকে আরেকনজর দেখে নিলো ইরিন। সোফায় শোবার চিন্তা করেও বাদ দিলো।এসব নাটক সিনেমার গল্পেই মানায় কেবল।বাস্তবে এসব চরম পর্যায়ের বাড়াবাড়ি। আর সেটা যদি হয় সদ্য বিবাহিত বউ আর রাতটা হয় বিয়ের প্রথম রাত।

এসব দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝেই হঠাৎ চোখ পড়লো বিছানায় রাখা বাক্সটার উপর। ক্লান্তিতে চোখ ভেঙে ঘুম নেমে এলেও মনের অস্বস্তি সে ঘুমকে চোখের পাতায় ঝুঁকতে দিল না। তাই আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও বাক্সটায় কি আছে তা দেখার সিদ্ধান্ত নিল সে। এতে কিছুটা হলেও সময় কাটবে এই ভেবেই।

১৮.

ঘরের বাতি নিভিয়ে ইরিন নিজের পাশের ল্যাম্পশেড জ্বালিয়ে মেঝেতে বসে গেল উপহারটা নিয়ে। খুলতে শুরু করলো ওটাকে। চওড়া বাক্সটা কালো রঙ এর যার্পিং পেপার দিয়ে মোড়ানো। ওপরে কালো ফিতে দিয়েই বাঁধা। আর তাতে এক পাশে গুঁজে রাখা হয়েছিল একটা কালো গোলাপ। এই লোকটার সবতেই কেমন কালোর ছাপ। হুহ! মনটা যে কেমন আল্লাহ মালুম। – মনে মনে ভাবলো ইরিন।

বাক্সটা খুলে বেশ খানিকটা নয়, নিজের পরিসীমার বাইরে চূড়ান্ত পর্যায়ের অবাক হয়েছে সে। কালো মলাটের মাঝারি আকৃতির একটা ডায়রি। সাথে ১১ টা কলম।আর একটা কলম গুঁজে দেওয়া ডায়রির মলাটে। কলমটা হাতে নিয়ে দেখার জন্য ওটা খুলতে গিয়ে দেখলো একটা পাতা সমেত তা মলাটে গুঁজে রাখা। কলম অনুসরণ করে পাতাটা খুলতেই নিজের চূড়ান্ত অবাকের মাত্রাও ছাড়িয়ে গিয়ে তা এবার ওর বিস্ময়ে পরিণত হলো ইরিনের।

ডায়রির পাতাগুলো কালো রঙের। প্রথম পাতায় নজর পড়তে দেখলো একটা নোট লিখা । ছোট ছোট আকৃতির অক্ষরে খুব সুন্দর করে লিখা। হাতের লেখা দেখেই মুগ্ধ হলো ইরিন। চোখের তারায় ঝিলিক দিল সেই মুগ্ধতা। আগ্রহ বাড়লো তার। একপ্রকার ঘোর নিয়েই দ্রুত পড়তে শুরু করলো।

“আমার কাছে অর্থ-বিত্ত কষ্টের অর্জন হলেও সবটাই আবার হাতের ময়লা।আজ আছে তো কাল নেই। যদি সত্যিকার অর্থে জীবনে সম্পদ হিসেবে কিছু থেকে থাকে তা হলো মানুষ ও সম্পর্ক। আর বিশেষভাবে কিছু স্মৃতি। হোক সে সুখের কিংবা কোন খারাপ লাগা অনুভূতির। এগুলোই জীবনের প্রকৃত সঞ্চয় বলেই মনে হয় আমার।

আচ্ছা ইরিন ,তুমি কি কখনো মাটির ব্যাংকে পয়সা জমিয়েছো? কিংবা কোন কৌটার মুখ কেটে তাতে টাকা ভরে রেখেছো কখনো? আবার প্রয়োজনে চুলের ক্লিপ বা পিন দিয়ে খুঁচিয়ে জমানো টাকা/পয়সা বের করেছো কখনো? আমি করতাম ছোটবেলায়। ভীষণ মজার কিন্তু ব্যাপারটা!

অর্থ জমা করতে যেমন নির্দিষ্ট কোন রাখার জায়গা লাগে তেমনি স্মৃতিগুলোকে জমিয়ে রাখতেও কিছু একটার প্রয়োজন হয়।অবশ্যক নয়। তবুও হাতে থাকা নগদ আর ব্যাংক ব্যালেন্সের মাঝে কিছুটা তফাৎ তো থাকেই, না?

স্মৃতি জমানোর জন্য আমার কাছে সেই জায়গাটা হলো ডায়রির পাতা। বয়সের সাথে মস্তিষ্কেও তো জং ধরে। কত কথা, কত স্মৃতি আমরা অচিরেই ভুলে যাই। তাই, লিখে জমিয়ে রাখার ব্যাপারটা কিন্তু মন্দ নয়। আবার সময় অসময়ে পাতা উল্টে দেখাটাও!

চাইলে তুমিও স্মৃতির সঞ্চয়স্থান হিসেবে এই ডায়রিটা ব্যাবহার করতে পারো। সযত্নে তুলে রাখতে পারো জীবনের সুখ দুঃখের গল্পগুলো। বন্ধু ভেবেও ভাগাভাগি করতে পারো নিজের মনের কথা। অর্থ বিত্ত তোমার অনেক হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও হবে আশা করি। তাই সেসব ছেড়ে স্মৃতি সঞ্চয়ের খাতাটাই তোমার হাতে তুলে দিলাম।

সবশেষে…জীবনের নতুন অধ্যায়ে তোমাকে স্বাগতম, ইরিন।”

১৯.

লেখাটা পড়ে কতক্ষণ থম ধরে বসে রইলো ইরিন। মনে মনে ভাবলো, ক্ষীণ হলেও ওই সময়ের মধ্যেই মানুষটার যে ব্যবহারের সাথে ওর পরিচয় ঘটেছে তার সাথে এই লেখার লেখকের স্বভাবের কোন মিল নেই। ওর সাথে প্রয়োজনের বাইরে একটা শব্দও যে ব্যবহার করে না, সেই মানুষটাই এত সুন্দর করে কথা বলতে জানে? তাও বলেছে কাকে? ইরিনকেই! এতসময়ের মাঝে জন্মানো নক্ষত্রেরর প্রতি ধারণায় তীব্রভাবে ঘাত পড়লো ইরিনের।

এবার সে ঘাড় ঘুরিয়ে বিছনায় ঘুমিয়ে থাকা মানুষটাকে দেখলো একবার। ঘুমের মাঝেই পাশ ফিরে ইরিনের মুখোমুখি হয়ে শুয়ে আছে নক্ষত্র। মাথার নিচে এক হাত রেখে অন্য হাত পেটের কাছে গুঁজে রেখে দিব্যি শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে। কালো গায়ে কালো রঙের টি-শার্ট। সাদা কালো চেক প্যান্ট। মাথা ভর্তি একঝাঁক কোঁকড়া চুল। ঘরের আধো আলো আধো অন্ধকারের পরিবেশে অনেকটা তথাকথিত কাল্পনিক ভূতের মত ঠেকলো ইরিনের কাছে নক্ষত্রের অবয়ব। বিরক্তির সাথে আবারও চোখ ফিরিয়ে নিল সে। ইরিন ভেবে পায় না, এ বাড়ির সবাই কম বেশি ফর্সা, সুন্দর। তাহলে এই মানুষটা একা কি করে এত কালো হলো! আর সে তো খুব বেশি কিছু চায়নি, শুধু সুন্দরমত দেখতে হবে তার স্বামী…এটুকুনই চেয়েছিল। অথচ বিপরীতে সে কি পেলো? বড় বাড়ি,গাড়ি, বিলাশবহুল জীবন আর কালো একটা বর!

আরও একবার ডায়রিটা দেখে নিল ইরিন। ঘুম তো আসবে না, তাই মনের না বলতে পারা কথাগুলো এই নির্জীব ডায়রিটার সাথে ভাগাভাগি করেই রাতটুকু পার করবে বলে ঠিক করলো।যদিও জীবনে কখনো ডায়রি লিখেনি সে । তবে আজ লিখবে বলে ভাবলো। বিছানায় ওপর থেকে তার জন্য বরাদ্দকৃত বালিশটা টেনে নিল ইরিন। নিজের কোলের উপর রেখে ডায়রিটা রাখলো তার উপর। কালো কলমটার দিকে তাকিয়ে হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। তারপর, কলমের ক্যাপটা খুলে পাতা উল্টে লিখতে শুরু করলো নিজের অব্যক্ত অনুভূতিগুলো। লিখতে গিয়েও আবার অবাক হলো সে। কলমের বাইরেটা কালো হলেও ভেতরে রূপালী কালী। কালো পাতার উপর রুপালী কালির ব্যাপারটা এবার ঠিকই বুঝলো ইরিন। সব কিছু দেখে ওর মনে হলো,এগুলো সাধারণ কোন ডায়রি ও কলম নয়। বিশেষভাবে আলাদা করে তৈরী। নক্ষত্রের উপহারের ক্ষেত্রে এমন অদ্ভুত চিন্তা ভাবনার কথা ভেবে ছোট একটা শ্বাস ফেললো সে। উপহারটা ভালো লেগেছে তার।কিন্তু, মানুষটাকে তো সে ভালো লাগায় জায়গা দিতে পারেনি। কি হবে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। এসব ভাবতে ভাবতেই কলম ছোঁয়ালো ডায়রির দ্বিতীয় পাতায়।

২০.

ফজরের আযানের সুমধুর সুরে ঘুম ভাঙে নক্ষত্রের। ধীরে সুস্থে বিছানায় উঠে বসতেই নিজেকে আবিষ্কার করে বিছনার একপাশে। এতকাল বিছানার মাঝখানে শুয়ে ঘুমানোর অভ্যাসে ব্যাতিক্রম ঘটেছিল তার। প্রথমে ব্যাপারটা নিয়ে কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেলেও কয়েক মূহুর্তের ব্যাবধানেই মনে পড়ে গেল তার সবটা। নিজের পাশে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী ইরিনের শোয়ার জায়গা করে রাতে বিছানার একপাশে শুয়েছিল সে। কিন্তু, বিছানার অন্যপাশটা তো খালি। তাহলে ইরিন কোথায় গেল? ওয়াসরুমের দিকে তাকাতেই দেখলো দরজাটা হালকা ফাঁক করা। মানে ওখানে কেউ নেই। বিছানায় বসে পুরো ঘরে নজর বুলিয়েও ইরিনকে কোথাও দেখতে পেল না নক্ষত্র । চিন্তিত হয়ে বিছানা ছেড়ে নামলো সে।

বেলকোনিতে দেখবে বলে ওদিকটায় যেতেই দেখলো ইরিন মেঝেতে এলোমেলোভাবে শুয়ে আছে। অবাক হলো নক্ষত্র। মূহুর্তেই আবার চিন্তার ভাঁজ পড়লো কপালে। নতুন বউ এভাবে মেঝেতে পড়ে থাকাটা স্বাভাবিক কিছু নয়। অজ্ঞান-টজ্ঞান হয়ে গেল না তো আবার? ব্যাপারটা মাথায় আসতেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইরিনের সামনে বসলো।খানিক ঝুঁকে ভালো করে খেয়াল করে দেখলো ইরিন ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। অর্থ্যাৎ, সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো নক্ষত্র। কিন্তু পরমূহুর্তেই মনে প্রশ্ন জাগলো, ইরিন এমন গুটিশুটি মেরে কেন ঘুমাচ্ছে মেঝেতে শুয়ে? জামা, ওড়না, খোলা চুল সব এলোমেলো হয়ে আছে। মাথার নীচে লম্বা করে একহাত রেখে আরেকহাতে বালিশটা বুকে চেপে রেখে ঘুমাচ্ছে সে। নক্ষত্র ভেবে পেলো না, বালিশ মাথার নীচে না দিয়ে বুকে চেপে রেখে ঘুমানোর কি হলো?! ‘সিলি গার্ল ‘বলে সকৌতুক হাসলো সে মনে মনে।

২১.

ইরিনের সজ্ঞানে তার দিকে ভালো করে তাকানো হয়নি নক্ষত্রের। সে তাকায়ইনি আসলে। সংকোচ হচ্ছিল তার। নিজের স্ত্রী হলেও ইরিনের সামনে নিজেকে বড্ড বেমানান লাগে ওর নিজেকে। ওর মনে হয় ইরিনও ওকে পছন্দ করে না। কিন্তু, ওর তো ইরিনকেই বিয়ে করতে হতো। হাজার হোক ওর আম্মুর পছন্দ বলে কথা! তাই এসব দোলাচলে পড়ে যথা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে সে ইরিনকে। এসব কথা মনে হতেই হতাশায় মন ভার হয়ে উঠো নক্ষত্রের।

কিন্তু, এখন তো ইরিন গভীর ঘুমে। এ সুযোগটা হাত ছাড়া করলো না নক্ষত্র। সংকোচ ঝেড়ে ভালো করে ইরিনের দিকে নজর বুলাতেই স্বস্তি ও মুগ্ধতায় ভরে উঠলো তার সমস্ত সত্তা। মনে হলো যেন শেষরাতের কোলজুড়ে কোন ঘুমন্ত পরী শুয়ে আছে। একদম আহামরি সুন্দরী না হয়েও ইরিনের মুখটা বেশ সুন্দর। কিন্তু, এখন গুটিশুটি মেরে ঘুমানোর জন্যই কিনা একদম নিঃষ্পাপ দেখতে লাগছে ইরিনকে। এসব ভাবতে ভাবতেই আবারও তার মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো। চেহারায় ফুটে উঠলো বিষণ্ণতার ছাপ। চাপা এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এবার তার ভরাট গলায় ইরিনকে ডাকলো বার কয়েক। কিন্তু, ইরিন কোন সাড়া দিল না।

গত ক’দিন ঠিক করে ঘুম হয়নি নানান চিন্তায়। আর বিয়ের দিনটাও বেশ ধকল গেছে তার। সারা রাত প্রায় জেগেই কাটিয়েছে সে। কিন্তু, ডায়রি লিখতে লিখতেই কখন যে চোখ লেগে এসেছে আর এভাবে মেঝেতেই শুয়ে পড়েছে, বুঝতে পারেনি ইরিন।

২২.

এদিকে ইরিনের কোন সাড়া না পেয়ে এবার তার মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলো নক্ষত্র। ছোট থেকেই বেশ অন্তর্মুখী স্বভাবের নক্ষত্র। নিজের বোনদের ছাড়া অন্য মেয়েদের সাথে খুব একটা সাবলীলভাবে মেশা হয়নি তার। জীবন যাত্রায় একসাথে চলতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে যতটা পরিচিতি, কথাবার্তা না বললেই নয়, কেবল ততোটাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে এক্ষেত্রে। তাই নিজের বোনদের ছাড়া এই প্রথম কোন নারীকে এতখানি স্বেচ্ছায় ও স্নেহের সাথে স্পর্শ করলো নক্ষত্র। পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিল ইরিনের মোলায়েম চুলের উপর। কিন্তু ইরিনের ঘুম ভাঙা তো দূর, এতে যেন তা আরও গভীর হলো। আরেকটু গুটিয়ে গিয়ে প্রায় গোল হয়েই শুয়ে রইলো সে। হতাশ হলো নক্ষত্র। না পারতে এবার ইরিনের বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে নাম ধরে ডাকলো ইরিনকে।

এতেই কাজ হলো। প্রবল ঘুমের ঝোঁকে লাগাতার এমন তীব্র ঝাঁকুনি আর একটা অচেনা কন্ঠের ডাকে ফট করে চোখ মেলে চাইলো ইরিন। সামনে নক্ষত্রকে দেখে কয়েকসেকেন্ড সময় নিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো সে। বুকের কাছে বালিশটা আরও শক্ত করে চেপে ধরলো। ঝরঝরে লম্বা মোলায়েম চুলগুলোকে এক হাতে কোনরকম ঠিকঠাক করে জামা নিয়ে টানাটানি করলো দুবার। সব ঠিকঠাক আছে নিশ্চিত হতেই ক্লান্ত, ঘুম জড়ানো লাল লাল চোখ মেলে নক্ষত্রের দিকে চাইলো। নক্ষত্র তখনো হাঁটু ভেঙে ওর সামনেই বসা।ইরিনের ওমন চোখজোড়া দেখে আচমকাই ওর বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো।মনে পড়ে গেল একটা মুখাবয়ব। দ্রুত নিজেকে সামলে সরাসরি প্রশ্ন করলো ইরিনকে, “বিছনা ছেড়ে তুমি মেঝেতে ঘুমাচ্ছিলে কেন?”

আকস্মিক এমন প্রশ্নে ঠিক কি উত্তর দিবে ইরিন ভেবে পেল না। বালিশের সাথে তখনো ডায়রিটা তার বুকে লুকিয়ে রাখা।বাক্সটা অনেকটা বিছানার নীচে থাকায় দেখা যায়নি। ফলে নক্ষত্রেরও চোখে পড়েনি সেভাবে। একটা শুকনা ঢোক গিললো ইরিন। সত্যি তো কোনক্রমেই বলা যাবে না। উপহারে পাওয়া ডায়রিটা পেয়েই সে লিখতে বসে গেছিল,এটা বললে ভীষণ রকম লজ্জায় পড়তে হবে।আবার মিথ্যা বলার অভ্যাসও ওর একেবারেই নেই বলতে গেলে। তাই কি রেখে বলবে ভাবতে ভাবতেই নক্ষত্র আবার গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো, “কি হলো…চুপ করে আছো কেন? কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে,এন্সার মি! ”

এবার সত্যি সত্যি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেল ইরিন। ওদিকে নক্ষত্র ওর জবাবের অপেক্ষা করছে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই ইরিন আমতা আমতা করে জবাব দিল, “প…প..পড়ে গেছিলাম।”

_মানে? অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো নক্ষত্র।

_মা…আ..মানে,বি..বিছানা থেকে গড়িয়ে পড়ে গেছিলাম। ঘুমের মধ্যে গড়িয়ে পড়ার অ…অভ্যাস আছে আমার।” -হরবর করে বলে ফেললো ইরিন।তবে, কি বুঝে কি বললো সেটা সে নিজেও বুঝলো না। নক্ষত্রকে কিছু একটা বলা জরুরি ছিল,এটাই কেবল মাথায় ছিল ওর। তাই যা মনে এসেছে বলে দিয়েছে।

ওদিকে ইরিনের এমন উদ্ভট অভ্যাসের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে নক্ষত্র।’ স্লিপিং ওয়াক ‘ মানে ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাটি করার অভ্যাসের কথা জানে সে।এটা একটা রোগের মতই। কিন্তু, ঘুমের মধ্যে বিছানা থেকে গড়িয়ে পড়ে যাওয়ার এবং না জেগেই দিব্যি মেঝেতে শুয়েই ঘুমিয়ে থাকার মত অভ্যাসের কথা আজ প্রথম জানলো সে। তাও আবার কার সূত্রে? ওর নিজের বউয়ের এমন উদ্ভট অভ্যাসের জের ধরে ! শেষে কিনা এই ছিল তার কপালে? এখন কি তবে বউ বেঁধে রেখে ঘুমাতে হবে নাকি তার যাতে রোজ রাতে বিছানা থেকে না পড়ে যায়!

কিন্তু,তার এই কাল্পনিক চিন্তাভাবনার পরিধি সে খুব বেশি বাড়ালো না। দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখলো নক্ষত্র। ৫:৩৩ বাজে। ফজরের নামাযের সময় চলে যাচ্ছে। মসজিদে যেতে হবে তাকে। তাই, এই ব্যাপারটা এখানেই ইতি টানলো সে।বাকি যা হবে পরে দেখা যাবে। বউ তো এখন তারই সাথে থাকবে আজীবন। এটা ভেবে প্রসন্নচিত্তে মনে মনে আলতো হাসলো নক্ষত্র।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here