নক্ষত্র বন্দনা পর্ব ৩

#নক্ষত্র_বন্দনা

#পর্ব_৩

#লেখায়_জারিন

১১.

বাসর রাতটা নিয়ে তো প্রতিটা মেয়েরই কত কি স্বপ্ন থাকে। আমার বিয়েটাই আমার কাছে একরকম দুঃস্বপ্নের মতন ছিল। আর তো বাসর রাতের স্বপ্ন! হাহ! জীবন কোন ফ্যান্টাসি নয়।

ঘরে ঢুকেই উনি আমায় সালাম দিয়েছিলেন। আমি জবাব দেওয়ার পর এগিয়ে এসে কিছুটা দূরত্ব রেখেই খাটে বসলেন আমার সামনে। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে আলতো হাতে আমার ঘোমটা তুলে দিয়েছিলেন তিনি। হয় তো কোন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন ঘোমটা তুলবেন কিনা এই নিয়ে। নয় তো অন্যকিছু একটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল উনার। আমি এসব নিয়ে ভাবিনি খুব একটা। উনার স্ত্রী হিসেবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে উনাকে বাহ্যিকদৃষ্টিতে স্বামীর প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা বুঝিয়ে দিতে হবে। এই ভেবেই বুক ভেঙে কান্না পাচ্ছিল আমার। কিন্তু, আমি কাঁদতে পারছিলাম না। সামনে সদ্য বিবাহিত স্বামী নামক মানুষটি বসা। কাঁদি কি করে!

১২.

উনি আমার কপালে হাত রেখে দোয়া পড়লেন। উনার তরফ থেকে প্রাপ্ত প্রথম স্পর্শ। অস্বস্তি হচ্ছিল প্রচুর। এর পরের স্পর্শগুলোয় হয় তো অস্বস্তিতে, যন্ত্রণায় মরণ দশাই হবে আমার।

দো’য়া পড়া শেষে উনি দ্রুত হাত সরিয়ে নিলেন। বিছানা ছেড়ে উঠে কোথাও একটা গেলেন। আলমারি খোলার শব্দে বুঝলাম উনি আলমারিতে কিছু একটা করছেন। এরপর, ফিরে এসে আবার বিছানায় বসলেন। আগের মত দূরত্ব রেখেই। এরপর উনার সেই ভরাট এ দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘এটা নাও। এটা তোমার বাসর রাতের উপহার।’

আমি সেই প্রথম সরাসরি উনার দিকে চোখ মেলে চেয়েছিলাম। একপলক উনাকে দেখেই উনার বাড়িয়ে দেওয়া উপহারটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাঝারি আকৃতির একটা বাক্স। কোন প্রশ্ন ছাড়াই হাত বাড়িয়ে নিয়েছিলাম ওটা। ওতে কি আছে তা দেখার জন্য কোন প্রকার আগ্রহ দেখাইনি। রেখে দিয়েছিলাম বিছানার একপাশে। উনিও চুপচাপ সেটা দেখেছিলেন।কিন্তু, কিছু বলেননি ও নিয়ে।

এরপর,বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে যেতে বললেন, ‘আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।এরপর তুমি যাবে। আম্মু বলেছেন নামায পড়তে হয় নাকি দু’রাকাত।নামায শেষ করে শুয়ে পড়বো আমি। সো,ডু ফাস্ট। ‘

এরপর, চেঞ্জিং রুম থেকে নিজের জামা কাপড় নিয়ে গটগট হেঁটে ওয়াসরুমে চলে গেলেন। আমি কিছুসময় চুপচাপ বসে থেকে ভাবলাম সবটা আরও একবার। নিজের দিকে তাকিয়ে আফসোস হলো এবার। উহু নিজের জন্য নয়।আমার দুই ননদের জন্য। বিয়েতে একেবারে ঘরোয়া সাদামাটা সাজ ছিল বলে এবাড়িতে আনার পর তারা আমায় নতুন করে সাজিয়েছিল। বিয়ের শাড়িটাও পাল্টে ছেড়েছিল তারা। নতুন একটা কালো জামদানি লেহেঙ্গা পড়িয়েছিল তারা আমায়। ওটা নাকি তাদের ভাইয়ের পছন্দ করা ছিল। বোনেদের সাথে একদিন শপিং করতে গিয়ে কিনেছিলেন। সাথে ছিল হালকা কিছু রূপার গহনা যা পড়তে যতটা আরামদায়ক দেখতেও সুন্দর। মেকআপও করে দিয়েছিল নিজেদের মত করে এই সাজেই উনি আমায় দেখেছিলেন বাসরঘরে। এখন অযু করতে গিয়ে সব ধুয়ে মুছে ফেলতে হবে। বেচারিদের এত মেহনত সব জলে যাবে বলেই আমার এই কিঞ্চিৎ আফসোস।

১৩.

নামাযে আমি আমাদের সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য কোন দো’য়া করিনি। কেবল নিজের জন্য সহনশক্তি চেয়েছিলাম। নিজের ভাবতে না পারা মানুষটাকে নিজের ওপর অধিকার ফলাতে দেওয়ার, দিনের পর দিন নিজের জীবনে, নিজের পাশে, একঘরে থেকে সহ্য করার জন্য। আমি তখনো জানতাম না আমার দোয়া এভাবে আমার নিয়তি বদলে দেবে। এই জন্যই লোকে বলে, দো’য়া ও নিয়ত খুব বুঝে শুনে করতে হয়। নয়তো দেখা যায়, না বুঝে..হেলাফেলায় কিংবা অবচেতন মনে করা ভুল দো’য়াও পরবর্তীতে নিজের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়ায়।

নফল নামাযটুকু শেষে উনি আমার দিকে ফিরেও তাকাননি। সোজা চেঞ্জিংরুমে গিয়ে ঢুকলেন। বেরিয়ে এলেন টি শার্ট আর চেকের একটা ঢিলেঢালা প্যান্ট পড়ে। এর আগে উনি বিয়ের শেরওয়ানী ছেড়ে নামাযের জন্য পাঞ্জাবি পায়জামা পড়ে এসেছিলেন ওয়াশরুম থেকে।

আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। সেটাও আমার উল্টোমুখী হয়ে। আমার এতে খুশি হওয়া উচিৎ নাকি মন খারাপ করা উচিৎ মূহুর্তের জন্য সেটাও ভেবে পেলাম না। কারণ, তথাকথিত বাসর রাতের যে ধারণা আমরা পেয়ে থাকি বিয়ে সম্পর্কে বোঝার পরে, সেটাকে উনি মিথ্যে করে দিয়েছেন।হ্যাঁ, হয় তো বিশেষ বিশেষ বিবাহিত জুটির ক্ষেত্রে এমন হয় । যারা তথাকথিত নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজের মত বাসর রাতটা উপভোগ করে। কিন্তু, আমাদের বিয়েটা আর চার পাঁচটা সাধারণ বিয়ের মতই তো ছিল। তবে, স্বাভাবিক কতটা তা আমার পক্ষ থেকে আমি জানলেও উনার ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

১৪.

বাসররাতে আমাকে বিব্রতিকর অবস্থায় বা অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি বলে আমি খুশি হয়েছিলাম। তবে কোথাও না কোথাও মন ভারী হয়ে উঠেছিল। এই ভেবেই যে নিজের সাথে সাথে আরও একটা মানুষের অনিচ্ছার ভার আমায় বয়ে বেড়াতে হবে হয় তো। মানুষটা আমার সাথে ঠিকমত কথাও বলেননি। না বিয়ের আগে আর না বাসর ঘরে।বললে হয় তো জানতে পারতাম উনার মনে কি ছিল এই বিয়ের সম্পর্কটা নিয়ে। জানলে হয় তো শুরু থেকেই নিজেকে উনার সপক্ষে মানিয়ে নিতে সহজ হতো।

বাসর রাতে অন্যসব স্বামীরা উপহারে তাদের স্ত্রীদের কোন গয়না বা ক্যাশ দিয়ে থাকে সাধারণত। তবে আমার স্বামী দিয়েছেন, এই যে…ডায়রিটা। যার মাঝে এতক্ষণের বলা গল্পের কিছু অংশ আমি লিখে রেখেছিলাম। তুমি পড়েছো। আজ খানিক বিস্তারিত বললাম। জীবনের নতুন সব রঙ বদলের একটুখানি সাক্ষী করে নিয়েছিলাম আমি এই ডায়রিটাকেই। আর আজও…।”

দু’হাতে আঁকড়ে ধরে রাখা ডায়রিটাকে দেখিয়ে বললো ইরিন। রাফিদ এবার সম্মুখে বসা নারীটির কোলে থাকা ডায়রিটাকে দেখলো। এই ডায়রিটাকে সে আগেও দেখেছে। একদিন শহরের এক ক্যাফেতে ইরিন ভুলে ফেলে এসেছিল ডায়রিটা। ওই টেবিলেই বসেছিল রাফিদ। পেয়েছিল ডায়রিটা। ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করলে বলেছিল, এটা হয় তো ইরিনের। ওখানকার একজন নিয়মিত কাস্টমার সে। প্রায়ই আসে। এই টেবিলেই বসে।

ডায়রিটার মলাট দেখেই বেশ কৌতুহলী হয়েছিল রাফিদের।খানিক পুরোনো একটা ডায়রি। একটা কালো গোলাপের ডাঁটা আঠা দইয়ে সেঁটে রাখা এক কোণে। শুকিয়ে গেছে। পাপড়িগুলোও ঝরে গেছে। তবুও প্রতিটা পাপড়ি আলাদাভাবে মলাটের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় লাগানো। উপরে আবার ক্লিয়ার পেপার দিয়ে র‍্যাপ করা যাতে পাপড়িগুলো নষ্ট না হয়।

এমন যত্নের কাজ যে একটা মেয়ের দ্বারাই সম্ভব তা রাফিদের বোঝা হয়ে গেছিল ভালোভাবেই। অন্যের ব্যক্তিগত ডায়রি পড়াটা অন্যায় জেনেও লোভ সামলাতে পারেনি রাফিদ। ওয়েটার ওটা কাউন্টারে জমা রাখার জন্য ফেরত চাইলে রাফিদ বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওটা নিজের কাছেই রেখে দেয়। নিজেই ফেরত দিবে বলে। রাফিদ অনেকদিনের পরিচিত ছিল বলে ওয়েটারও রাজি হয়ে যায়।

১৫.

বাসায় এসে আর দেরি করেনি রাফিদ। মলাটের আস্তরণ ভেদ করে পড়েছে ওর ভেতরটা। পড়তে পড়তে রাফিদের মনে হয়েছিল কোন একটা মানুষের ভেতরটা পড়ছে সে। প্রথম পাতাতেই কিছুক্ষণ থমকে ছিল সে। যদিও বাকিটায় খুব গুছিয়ে…বিস্তারিত ভাবে লেখা ছিল না কিছু। খন্ড খন্ড কিছু কাহিনী। অভিমান, অভিযোগ, অনুতাপের ভারে ভরপুর এই ডায়রির পাতাগুলো। তবুও, পুরোটা জানার আগ্রহ হচ্ছিল ওর ভীষণ। তাই, ডায়রির খোঁজে যখন অস্থির ইরিন রাফিদের সন্ধান পায়, বেঁকে বসে রাফিদ। পুরো গল্পটা না বললে সে ডায়রিটা ফেরত দিবে না বলে গোঁ ধরে। প্রথমে রাগ হলেও প্রিয় জিনিসটা দ্রুত সম্ভব নিজের কাছে ফেরত পাওয়ার জন্য অগ্যতা ইরিনকে রাজি হতেই হয়। কথা দেয় সে বলবে সবটা। তাই আজ সেই ক্যাফেতে বসেই রাফিদের সামনে ইরিন উন্মোচন করে নক্ষত্র আর তার বিবাহিত জীবনের গল্পটা।

ইরিনকে দেখে আলতো হাসলো রাফিদ। খুব যত্ন করে ধরে রেখেছে সে ডায়রিটাকে। এক মূহুর্তের জন্য রাফিদের মনে হলো, যেন কতই না অমূল্য ধন এই সামান্য ডায়রিটা। পরমূহুর্তেই কি একটা ভেবে বাঁকা হাসলো সে। টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা তুলে এগিয়ে দিল ইরিনের দিকে। ইরিন হাত বাড়িয়ে নিল গ্লাসটা। অনেকক্ষণ এক নাগারে কথা বলায় গলা শুকিয়ে এসেছে তার। গলা ভিজিয়ে নিল সে।তারপর, টেবিলের উপর গ্লাসটা রেখে উঠে দাঁড়ালো সে। ডায়রিটা হ্যান্ডব্যাগে ভরতে ভরতে বললো, ‘আজ এটুকুই থাক। বাকি গল্প অন্য আরেকদিন। ‘

রাফিদ তৎক্ষণাৎ বাঁধা দিয়ে বললো, ‘কিন্তু..?’

রাফিদের আপত্তির বিপরীতে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ইরিন। তাকে উঠে দাঁড়াতে দেখে রাফিদ তড়িৎ গতিতে বললো,
‘আচ্ছা, যাচ্ছেন যান। তবে একটা প্রশ্ন ছিল। করি? ‘

‘কি?’ দাঁড়িয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলো ইরিন।

‘কালো গায়ের রং কালো বলে পছন্দ হয়নি মানলাম। কিন্তু, হাইটে কি প্রবলেম ছিল আপনার? আপনি কি নিজের জন্য গ্যালিভার চেয়েছিলেন?আর তার সাথে আপনি হতেন লিলিপুট। সবাই আপনাদের গ্যালিভার -লিলিপুটের জুটি বলে ডাকতো!” শেষ কথাগুলো একটু ঠাট্টা বিদ্রুপের স্বরেই বললো রাফিদ। অপছন্দের ক্ষেত্রে হাইটের ব্যাপারটা নিয়ে ওর ইগোতে বেশ লেগেছে। ওর নিজের হাইট ৫’৭”। সেখানে নক্ষত্র ৫’৮” হওয়ার পরেও বলছে আরও লম্বা লাগতো! অথচ পাশাপাশি দাঁড়ালে উচ্চতায় ইরিনের সাথে একদম পার্ফেক্ট ম্যাচ বলা যায় নক্ষত্রর। মনে মনে এসব ভেবেই প্রশ্নটা করতে না চেয়েও করে ফেললো রাফিদ।

ইরিন কোন ভাবান্তর দেখালোনা রাফিদের প্রশ্নে। স্বাভাবিক প্রশ্ন। আগেও এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। উত্তরটা একরকম ঠোঁটস্থ এখন। রাফিদের প্রশ্নের উত্তরে এবারও সে বললো, ‘গ্যালিভার চাইনি তবে কল্পনার মানুষটা কল্পনার মতই সুন্দর হয়ে জেঁকে বসেছিল মাথায়। সব স্বাভাবিক ছিল শুধু আমার অতদিনের মনে মনে পুষে রাখা ধ্যান ধারণা ছাড়া।”

উত্তর দিয়ে আর দাঁড়ালো না ইরিন। নম্রপায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। রাফিদ সেখানেই বসে রইলো চুপচাপ। ইরিনের সাথে সাক্ষাতের পর আজ বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছে সে মনে মনে। একদম সাদামাটা গোছের একটা মানুষ। সাধারণ একটা চেকের শাড়ি পড়া, সাজসজ্জায় কোন আড়ম্বনা নেই। কথাবার্তায় বেশ সাবলীল। অথচ, ডায়রি পড়ে সে যতটা অহংকারী আর উদ্ধাত ধারণা করেছিল, সে বাস্তবিকই তেমন বলে মনে হয়নি তার।আবার, আজকের প্রতিটা কথা যেন ডায়রিতে লেখা গল্পের ইরিন নামক চরিত্রকে আরো বেশি ধারালো করেছে। যদিও তা অতীত। তবে এখানকার ইরিন কি সত্যিই অন্যকেউ হয়ে গেছে। ভালোবেসে কেউ নিজেকে এভাবে পাল্টে ফেলতে পারে? ইরিনকে দেখে তো আজ সেটারই প্রমাণ পেল সে। তবুও,বেশ কনফিউজড লাগছে রাফিদের। এখন বাকি গল্প শোনার অপেক্ষা। তারপর, বোঝা যাবে আদতে ইরিন মানুষ ঠিক কেমন।

১৬.

বাইরে এসে একটা ক্যাব ভাড়া করে উঠে গেল তাতে। যদিও নক্ষত্র তাকে ব্যবহারের জন্য বেশ দামী গাড়ি দিয়েছে। কিন্তু, ইরিন সেটা ব্যবহার করে না। যে মানুষটাকেই ও নিজের করে পেল না তার দেওয়া কোন কিছুই সে নিবে না। এই জেদের কাছে হেরে নক্ষত্রও আজকাল আর কিছু বলে না। চলুক না সে নিজের মত। নিজের মত বাঁচুক। তার জীবন অন্ধকার করে সে তো থাকছে না তার (ইরিনের)সাথে।

ইরিনও এখন গুঁটিয়ে নিয়েছে নিজেকে নক্ষত্রের থেকে। বহুবার চেষ্টা করেও বোঝাতে পারেনি সে নক্ষত্রকে। ভাঙতে পারেনি নক্ষত্রের অভিমান।নিজের অতীত কর্মের জন্য সে ভীষণ ভাবে লজ্জিত…অনুতপ্ত। কিন্তু, নক্ষত্র যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অবশ্য এই নিয়ে ইরিনের কোন অভিযোগ নেই। নক্ষত্রই বা আর কত সহ্য করতো। সেও তো মানুষ। আত্মসম্মান তারও তো আছে। ওটুকুও শেষমেশ ছেড়ে দিলে হয় তো এতকিছুর পরেও গড়ে তোলা নিজেকেই ছেড়ে দিতে হতো। ভুল একবার দুবার হলে ক্ষমার যোগ্য হয় , কিন্তু ইরিন তো বারবার ভুল করে গেছে।এর আর ক্ষমা হয় না।

এখন শুধু হতাশা আর আফসোস গ্রাস করে তাকে। একদিন যাকে নিষ্প্রভ নক্ষত্র বলেছিল আজ সত্যিই তাকে ছাড়া সে নিজেই নিষ্প্রভ এক প্রাণ। সবটা হাতের বাইরে চলে গেছে এখন। আর কিছুই হবার নয় নতুন করে। কথাটা মনে হতেই গভীর এক বিষাদে বিষাক্ত হয়ে উঠলো ইরিনের মন-প্রাণ। চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসা জলধারা আলগোছে মুছে নিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো সে। শুভ্র মেঘে ছেয়ে থাকা শান্ত আকাশটার দিলে তাকিয়েই স্মৃতির খাতায় ডুব দিল আবার।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here