#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ০৫
—-” তোহা মা আমার দরজা খোল। রাতে না খেয়ে ঘুমাতে নেই’ মা। তোহা দরজা খোল মা।”
তোহা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে ঘরের দরজায় খিল দিয়েছে। জুঁইয়ের মা মানে তোহার ফুপি সব কাজকর্ম সেরে জানতে পারে তোহা না খেয়ে নিজের রুমে চলে গেছে। তিনি আর থাকতে না পেরে তোহা কে ডাকতে চলে আসে। তোহা দরজার ওপাশ থেকে খুব ধীর গলায় বলল,
—-” ফুপি আমি আজ রাতে আর খাবো না। তুমি গিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
জুঁইয়ের মা আহ্লাদী সুরে বলল,
—-” মা আমার মনে হচ্ছে তুই ঠিক নেই। তুই একটু দরজা টা খোলো মা আমি এক নজর দেখেই চলে যাব।”
তোহা স্মিথ হেসে বলল,
—-” ধুর আমার কী হবে? তুমি অযথা চিন্তা করছ। যাও গিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
জুঁইয়ের মা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
—-” তুই দরজা খুলবি না আমি অন্য কোন ব্যবস্থা করবো?”
তোহা আর ওর ফুপির সাথে কথায় না পেরে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতে না খুলতেই তোহার ফুপি হনহনিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে। এক নজর তোহার দিকে তাকিয়ে রুমের চারদিকে চোখ বুলিয়ে তিনি। হঠাৎ করে চোখ যায় বিছানার কোনের ফ্লোরের দিকে লাল লাল কিছু একটা পড়ে আছে। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় সেদিকে। বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি লাল লাল যেগুলো দেখছিলো সেগুলো রক্তের বিন্দু। তোহার ফুপি চোখ বড় বড় করে তোহার দিকে তাকায়। তোহা মুখ কালো করে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তোহার ফুপি রাগী গলায় বলল,
—-” তুই আবার নিজের হাত কাটছিস?”
তোহা মাথা নিচু করে টু-শব্দটি পর্যন্ত করছে না। তোহার ফুপি এগিয়ে এসে তোহার দুই হাত দেখতে শুরু করে। বাম হাত খুব বাজে ভাবে কেটেছে। তোহার ফুপি ছলছল চোখে তাকায় তোহার দিকে। তোহা কিছু বলার আগেই তোহার ফুপি ধমক দিয়ে বলল,
—-” চুপ আর একটাও কথা বলবি না। এখানে চুপচাপ বসে থাক আমি আসছি এক্ষুনি।”
তোহার ফুপি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে চিন্তা করতে শুরু করে। বড় ভাই আর ভাবির কত আদরের মেয়ে ছিল তোহা। সুখেই ছিল তাদের তিনজনের সংসার। কিন্তু সুখ বেশিক্ষণ তাদের কপালে সইল না। তোহার সাড়ে তিন বছরের সময় হঠাৎ করে তোহার মা মারা যায়। এরপর থেকে একে একে সবকিছু বদলাতে শুরু করে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তোহার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। তোহার দ্বিতীয় মা তোহা কে ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু তোহা তার কাছে খুব একটা বেশি যেতো না। তার কয়েক বছর পরই তোহার বোন পৃথিবীতে আসে। তোহার দ্বিতীয় মা তোহার নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখে তুলি। তুলি যেমন তোহা কে ভালোবাসে তেমনি তোহাও তুলিকে ভালোবাসে। তোহার বাবা সব থেকে বেশি তোহা কে ভালোবাসে। কিন্তু তোহা তার বাবার সাথে কথা না বলে পারলে কথা বলে না। তোহার বাবা আগে নিজে ছোটখাটো ব্যবসা করত কিন্তু তোহার মা মারা যাবার পর তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি প্রভাবশালী মন্ত্রী পদে আছেন। তোহা ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে আর নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা করতে শুরু করে। কোন ফ্যামিলি অনুষ্ঠানে তোহা না যেয়ে পারলে যায় না। যত ভালোলাগা খারাপ লাগা নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখে তোহা। খুব বেশি রাগ হলে বা খুব বেশি কষ্ট পেলে তোহা মাঝেমধ্যে নিজের হাত কেটে ফেলে। শত বকাবকির করার পরও তোহার এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারি নি কেউ। আজও হয়তো এমন কিছু হয়েছে। এসব চিন্তা করতে করতে তোহার ফুপি বড় বড় পা ফেলেই শান্তর রুমের দিকে যাচ্ছে।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে মিরান অনন্যা কে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে গ্ৰামের অন্ধকার রাস্তায় হাঁটতে বের হয়। কিছুক্ষণ হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে মিরান ফোন করে ওর মাম্মা পাপার সঙ্গে কথা বলে নেয়। ফোন কেটে ধীর পায়ে হেঁটে শান্তর রুমের দিকে যেতে শুরু করে। শান্তর রুমের কাছাকাছি এলে পিছন থেকে কেউ মিরানের নাম ধরে ডাকে। মিরান পিছন ফিরে তাকায়। শান্তর চাচি দাঁড়িয়ে আছে। তার চেহারা বলে দিয়েছে খুব চিন্তায় আছেন তিনি। মিরান তার দিকে দু’কদম এগিয়ে গিয়ে বলল,
—-” চাচি আপনি এত রাতে এখানে? আর আপনাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?”
শান্তর চাচি মিরান কে দেখে কিছুটা ভরসা পেয়ে বলল,
—-” ভালো হয়েছে তোকে এখানে পেয়ে গেছি। চল তো আমার সাথে তোহার রুমে।”
মিরান কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটিয়ে তুলতে বলল,
—-” তোহা! সেলিব্রেটি তোহা! তার রুমে গিয়ে আমি কী করবো এত রাতে?”
শান্তর চাচি কিছুটা ধমকের সুরে বলল,
—-” আহ্ চল না আমার সাথে, এত কথা বলছিস কেন?”
মিরান আর কিছু না বলে শান্তর চাচির এর পিছনে পিছনে হাটতে শুরু করে।
______________________________
অনন্যা বিছানার এপাশ ওপাশ করছে, কিছুতেই ঘুম তার দু চোখে ধরা দিচ্ছে না। কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে পাশ ফিরে তাকায় টিয়া দিব্যি ঘুমে কাদা হয়ে আছে। অনন্যার কাছে এখন টিয়া কে খুব বিরক্ত লাগছে। লাগবে না কেন? নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ঘুমবিহীন রাত্রি যাপন করছে অথচ সে দিকে তার কোন হুঁশ নেই। রাত্রি কত হলো দেখার জন্য ফোন খুঁজতে শুরু করে। খুঁজে দেখে বালিশের নিচে অবহেলিত বস্তুর মতো পড়ে আছে ফোনটা। ফোন ওপেন করে সময় দেখবে কী তার আগেই চোখ কপালে ওঠে। তার প্রিয় মানুষটির শতাধিক মিসকল। ভয়ে ভয়ে তার প্রিয় মানুষটি নাম্বারে ফোন করে অনন্যা। ফোন রিসিভ করে অনন্যা কিছু বলার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে কেউ নেশা ভরা কন্ঠে বলল,
—-” আমার কথা কী একবারও মনে পরেনা লিটেল এঞ্জেল?”
অনন্যা মৃদু স্বরে বলল,
—-” ভুলে গেলে তো তোমার কথা মনে পড়বে।”
ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—-” কেমন আছো লিটেল এঞ্জেল?”
অনন্যা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—-” ভালো, তুমি কেমন আছো প্রতীক?”
প্রতীক খানিক চুপ থেকে বলল,
—-” তোমাকে ছাড়া আমি কেমন থাকি তা তুমি জানো না?”
অনন্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—-” জানি তা আমি খুব ভাল করেই জানি। তা তোমার মিশন কমপ্লিট হয়েছে?”
প্রতীক অবাক গলায় বলল,
—-” তুমি কী করে জানলে আমার মিশনের কথা? আমিতো এ কথা বলিনি তোমায়!”
অনন্যা হালকা হেসে বলল,
—-” আমার সাথে তোমার আত্মার সম্পর্ক। তাই তুমি কিছু না বলেও বুঝতে পারি।”
অনন্যার কথা শুনে প্রতীক শব্দ করে হেসে উঠলো। প্রতীকের হাসির শব্দে অনন্যা লাজুক হাসে।
______________________________
মিরান শান্তর চাচির সঙ্গে তোহার রুমে এসে হাজির হয়। তোহা বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছে। মিরান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়। শান্তর চাচি কিছুটা হতাশার সুরে বলল,
—-” দেখ না তুই কিছু করতে পারিস কী না, তোহা হাত টা খুব বাজেভাবে কেটে গেছে।”
মিরান বড় বড় পা ফেলে তোহার পাশে গিয়ে বসে। তোহা আড়চোখে মিরানের দিকে তাকায়। মিরান সেদিকে না তাকিয়ে তোহার হাত ধরে বলল,
—-” ইশ, হাতটার কী অবস্থা হয়েছে!”
মিরান শান্তর চাচির দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” চাচি তোমার কাছে ফাস্টেড বক্স আছে?”
শান্তর চাচি তাড়াতাড়ি করে বলল,
—-” হ্যাঁ! হ্যাঁ! আছে তুই একটু অপেক্ষা কর আমি এখনি নিয়ে আসছি।
শান্তর চাচি চলে গেলে মিরান তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” হাত টার এই অবস্থা হলো কী করে?”
তোহা মিরানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
—-” আমি কেটেছি হাতটা।”
মিরান চোখ বড় বড় করে তোহার দিকে তাকায়। কিছু বলার আগেই শান্তর চাচি ফাস্টেড বক্স নিয়ে এসে বলল,
—-” এই নে মিরান।”
মিরান ফাস্টেড বক্স নিয়ে তোহার হাত পরিষ্কার করতে শুরু করে। পাশ থেকে শান্তর চাচি বলল,
—-” মা এবার তো একটু শান্ত হয়ে বস, আমি খাবার নিয়ে আসছি তোকে খাইয়ে দেবো।”
তোহা গম্ভীর হয়ে ওর ফুপির দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” আমি আজ রাতে আর কিছু খাব না। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
মিরান তোহার হাত ব্যান্ডেজ করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
—-” রাতে না খেয়ে শুতে নেই। চাচি তুমি খাবার নিয়ে এসে ওনাকে খাইয়ে দাও। আমি এখন যাই বরং।”
এইটুকু বলে মিরান আরেকটু সময় অপেক্ষা না করে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। তোহা মিরানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফুপিকে বলল,
—-” ফুপি আমি খাবো। যাও গিয়ে খাবার নিয়ে আসো।”
তোহার ফুপি অবাক হয়ে বলল,
—-” তুই সত্যিই খাবি?”
তোহা দরজার দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,
—-” হ্যাঁ, খাবো কারন আমার জান বলেছে আমাকে খাওয়ার জন্য। আমি তো আর আমার জানের কথা ফেলতে পারি না!”
#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ০৬
বাড়ির পিছনে বাগানে গাছে বাঁধা দোলনায় দুলছে দুই তরুণী। তরুণীদের হাসির শব্দে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে আছে। বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুলছে দুজন। বাতাসের থেকে কে আগে এগিয়ে যেতে পারে এই নিয়ে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে দুই তরুণী। হঠাৎ কারও মৃদু চিৎকার দুই তরুনীর আনন্দের সমাপ্তি ঘটে। দুজনে পাশ ফিরে তাকায়। শান্ত রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। শান্তকে দেখে দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে শুকনো গলায় ঢোক গিলে। শান্ত ওদের দিকে এগিয়ে এসে মৃদু চিৎকার করে বলল,
—-” তোরা দুজনে এখানে? আর আমি আর মিরান তোদের দুজনকে সারা বাড়িময় খোঁজাখুঁজি করছি। তা সকাল সকাল বাড়ির পিছনে দু’জনে কী করছিস?”
শান্তর চিৎকার শুনে টিয়া বোকাদের মত হেসে বলল,
—-” আসলে ভাইয়া, আমরা দুজনে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাড়ির তেমন কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। পরে দুজনে মিলে ঠিক করি একটু বাড়ির সামনে হাঁটাহাঁটি করে আসবো। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে কখন যে বাড়ির পিছনের দিকে চলে এসেছি আমরা কেউ খেয়াল করিনি, পরে দোলনাটা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে দুজনের মিলে দুলতে শুরু করি।”
টিয়ার বাচ্চাদের মতো কথা শুনে শান্ত রাগ কমিয়ে ওদের দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে বলল,
—-” ঠিক আছে! ঠিক আছে! তাড়াতাড়ি তোদের বাঁদরামো শেষ করে বাড়ির ভিতরে আয়।”
এইটুকু বলে শান্ত চলে গেলে, অনন্যা টিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” কিরে দাড়িয়ে আছিস কেন ওখানে? তাড়াতাড়ি আয় আর কিছুক্ষণ দোলনা দুলে তারপর বাড়ি যাব।”
টিয়া অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” আর দোলনা দুলার দরকার নেই। তাড়াতাড়ি চল না হলে ওরা আমাদের অবস্থা খারাপ করে দেবে।”
অনন্যা ঠোঁট ফুলিয়ে হেসে বলল,
—-” ধুর কিছু হবে না তুই আয় তো!”
টিয়া কিছু বলবে তা আগে পিছন থেকে কেউ একজন বলল,
—-” তোমরা এখানে কী করছো?”
অনন্যা কপাল ভাঁজ করে সামনে তাকায়। এখন আবার কে এলো? টিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে বলল,
—-” তোহা আপু তুমি এখানে?”
তোহা ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
—-” কেন? আমার আসা বারণ বুঝি এখানে?”
অনন্যা ঠোঁট হাসি ফুটিয়ে বলল,
—-” আরে না না তা কেনো হবে? টিয়া তো খালি জানতে চাইল এই আর কী?”
তোহা ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
—-” বুঝলাম, কিন্তু তোমরা দুজন সকাল-সকাল এখানে কি করছো?”
অনন্যা ঠোঁট ফুলিয়ে হেসে বলল,
—-” কী আর করব বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দোলনায় দুলতে এসেছিলাম দুজনে।”
তোহা অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
—-” সে কী সব ছেড়েছুড়ে শেষমেষ বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিতে শুরু করেছো?”
তোহার কথা শুনে অনন্যা আর টিয়া দুজনে খিলখিলিয়ে হাসতে শুরু করে। টিয়া হাসি থামিয়ে অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” অনেক হাসাহাসি হয়ে গেছে এবার চল বাড়ির ভিতরে না হলে ভাইয়ারা আর আমাদের আস্ত রাখবে না। তোর আবার জামা কাপড় গোছাতে হবে চল, না হলে খুব দেরি হয়ে যাবে।”
তোহা অবাক গলায় বলল,
—-” এখনই জামা কাপড় গুছিয়ে কী করবে? তার থেকে বরং জুঁইয়ের বৌভাত এরপর ধীরে সুস্থে গুছিয়ে নিও।”
টিয়ার ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,
—-” সে তো হলে ভালোই হতো কিন্তু মিরান ভাইয়া আর মিরু আজ সন্ধ্যার গাড়িতে চলে যাবে।”
মিরান চলে যাবে শুনে তোহার মুখ কালো হয়ে যায় কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
—-” এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে কেন?”
অনন্যা মৃদু হেসে বলল,
—-” কেনো আবার, প্রতি বছর এই সময় আমরা সবাই দাদার বাড়ি ময়মনসিংহ যাই। সব কাজিন রা মিলে খুব মজা করি। পিকনিক করি, পুকুরে মাছ ধরি আরো কত কী যে করি তুমি ভাবতে পারবে না। জুঁই আপুর বৌভাতের পর টিয়া আর শান্ত ভাইয়াও আমাদের সাথে জয়েন করবে।”
অনন্যার কথা শুনে তোহা কিছু না বলে মন খারাপ করে ধীর পায়ে হেঁটে চলে যায় ওখান থেকে। তোহার এমন কাজে টিয়া আর অনন্যা বেশ অবাক হয়।
______________________________
মিরা আর মিহান দু’জনে সকলে মায়া চৌধুরী আর আকাশ চৌধুরীর রুমে আসে। মিহান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
—-” মম তোমাদের ব্যাগ গোছানো কতদূর হলো?”
মিহানের মম মিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” মিরা কাল রাতে আমাদের দুজনের ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে গেছে।”
মিহান সোফায় বসতে বসতে বলল,
—-” তাহলে শুধু আমাদের ব্যাগ গোছানো বাকি আছে?”
মিরা মিহানের মমের পাশে বসে বলল,
—-” হ্যাঁ, তুমি চিন্তা করো না কিছুক্ষণ পর আমি সব গুছিয়ে ফেললো।”
মিহানের মম মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” কিন্তু বাঁদর দুটো তো এখনো ফিরলো না। কখন ফিরবে আর কখন জামাকাপড় গুছাবে?”
মিরা মিহানের মমের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
—-” মম তুমি চিন্তা করো না। কাল রাতে তোমাদের জামা কাপড় গোছানো পর আমি ওদের গুলোও গুছিয়ে নিয়েছি।”
মিহানের পাপা মিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” অনুরা কখন আসবে সে বিষয়ে তোকে কিছু বলেছে?”
মিহান মৃদু স্বরে বলল,
—-” কাল রাতে কথা হয়েছিল। অনুরা সবাই ওদের বাড়ি থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।”
মিহানের মম মিহানের পাপার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” ওদিকে ফোন দিকে দেখেছো সবকিছু আয়োজন ঠিকভাবে হচ্ছে তো?”
মিহানের পাপা তার চোখের চশমা খুলে পরিষ্কার করতে করতে বলল,
—-” তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি ওদিকের সব ব্যবস্থা করে নিয়েছি।”
মিহানের মম মিহানের পাপার কথা শুনে ভেংচি কেটে বলল,
—-” তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। উনি যেন কত ভাবেন? দেখা গেল শেষমেষ সব ঝামেলা এসে আমার কাঁধে ই পড়বে।”
মিহানের পাপা চশমা পড়ে মিহানের মমের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” তুমি কী আমাকে ইন্ডিরেক্টলি কে অপমান করছো?”
মিহানের মম মুখ বাঁকা করে বলল,
—-” তুমি কী আমাকে ইন্ডিরেক্টলি কে অপমান করছো? আজ্ঞে না আমি তোমাকে ডাইরেক্টলি অপমান করছি।”
মিহানের মমের কথা শুনে মিরা আর মিহান দুজনের মুখ টিপে হেসে। মিহানের পাপা মিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” তোদের মম আমাকে অপমান করছে আর তোরা দুজনে হাসাহাসি করছিস।”
মিহানের পাপার কথা ওরা তিনজনে শব্দ করে জোরে হেসে দেয়।
______________________________
গোধূলি লগ্ন পার হয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে। অনন্যা কে তাড়া দিয়ে মিরান লাগেজ নিয়ে নিচে নামে। মিরান সবার থেকে বিদায় নিয়ে গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় অনন্যার জন্য। হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ বলল,
—-” চলে যাচ্ছো?”
মিরান ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকায়। সেলিব্রেটি নওশীন তোহা দাঁড়িয়ে আছে। মিরান তার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
—-” আরে আপনি এখানে?”
তোহা উত্তরে কিছু না বলে মিরানের দিকে ছলছল চোখে তাকায়।
#চলবে….
#চলবে..…
(অনেকেই কনফিউজ নায়ক কে আর নায়িকা কে? মিরান আর তোহা হলো গল্পের নায়ক নায়িকার। সাথে আরো কিছু জুটি বাঁধবে গল্পে। আশাকরি এখন সবার কনফিউশন দূর হয়েছে!❤️❤️❤️)