না_চাইলেও_তুই_আমার পর্ব ৭+৮ রোমান্টিক গল্প

#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ০৭
তোহা খুব ভোরের দিকে নিজের বাড়ি ফিরে এসেছে। এত ভোরে বাড়ির কেউ জেগে না থাকায় তোহা বাড়ির ডুবলিকেট চাবি দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ির সবাই একে একে ঘুম থেকে উঠে। স্নেহা মানে তোহার মা ঘুম থেকে উঠেই রান্নাঘরে চলে আসে। তোহার মাকে দেখে বাড়ির কাজের লোক মিনা বলল,

—-” আম্মা সকাল সকাল দেখলাম বড় আপার গাড়ি বাড়ির সামনে রাখা। বড় আপা কী‌ বিয়ে বাড়ি থেকে চলে এসেছে?”

তোহার মা মিনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,

—-” বলিস কী? আমিতো কিছুই জানিনা!”

মিনা তোহার মা’র দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আম্মা আপনি একটু দাঁড়ান। আমি এক্ষুনি বড় আপার রুম থেকে দেখে আসছি।”

মিনা তোহার মা’র উত্তরের আশায় না বসে এক দৌড়ে ছুটলো তোহার রুমের দিকে। মিনিট দুয়েকের মাথায় মিনা দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

—-” এইমাত্র দেখলাম বড় আপা তার বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।”

তোহার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

—-” হয়তো কোন কারনে মনটা খারাপ হয়ে গেছে ওর। কখনো তো মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলে না। আমার সাথে বা ওর বাবার সাথে কথা না বলতে পারলে তো কথা বলেই না।”

মিনা তোহার মা’কে সান্তনা দিয়ে বলল,

—-” ধুর আম্মা আপনি খালি খালি চিন্তা করেন। আমাদের বড় আপা হল কত বড় সেলিব্রিটি মানুষ। তার ফুসরত কোথায় অন্যদের সাথে ভালো করে দুটো কথা বলার।”

তোহার মা কাজ করতে করতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,

—-” জানিস মাঝেমধ্যে আমার কী মনে হয়? ও এখনও আমাকে ওর মা হিসেবে মেনে নিতে পারেনি!”

মিনা তোহার মা’র দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” এমন কিছু না। আপনি খালি খালি বাজে চিন্তা করেন আম্মা।”

তোহার মা কাজ করতে করতে বিড় বিড় করে বলল,

—-” উনি আজ বাড়ি ফিরলে তোহার সাথে কথা বলতে বলবো। মেয়েটা দিন দিন সবার থেকে যেমন নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।”

দুপুরের পর আতিক সাহেব বাড়িতে ফিরেন। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে তেমন একটা পরিবারকে সময় দিতে পারেন না তিনি। এই নিয়ে অবশ্য তার স্ত্রী স্নেহার অভিযোগ শেষ নেই। আতিক সাহেব ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” তুলি কোথায়? বাড়িতে এসেছি পর থেকে দেখলাম না যে একবারও?”

স্নেহা খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলল,

—-” তুলি তোহা কে ডাকতে গেছে, এসে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে।”

আতিক সাহেব অবাক গলায় বলল,

—-” তোহা চলে এসেছে? তোহার তো আরো দুদিন থেকে আসার কথা ছিল?”

স্নেহা ধীর গলায় বলল,

—-” সে বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। তোহা ভোররাতের দিকে বাড়ি ফিরে এসেছে। তবে তোহার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে কোন কারনে ওর মন খারাপ। তুমি একটু দেখো না ওর সাথে কথা বলে যদি তোমাকে কিছু বলে।”

আতিক সাহেব চিন্তিত হয়ে বলল,

—-” তোহা কী বলবে আমার সাথে কথা?”

স্নেহা তীব্র গলায় বলল,

—-” তোহা কথা বলবে কী বলবে না তা ভেবে তো ওকে আমরা একা একা কষ্ট পেতে দিতে পারিনা! তোহা খেতে আসলে তুমি ওর সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে।”

আতিক সাহেব তার স্ত্রীর কথা শুনে ভাবতে শুরু করেন। তিনি একটা কথাও তো ভুল বলেন নি! আতিক সাহেবের ভাবনার সমাপ্তি ঘটে তুলির কথা শুনে। তুলি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে উঁচু গলায় বলল,

—-” আম্মু! আম্মু কোথায় তুমি?”

স্নেহা তুলির দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” কী হয়েছে এমন চেঁচামেচি করে ডাকাডাকি করছিস কেন?”

তুলি ওর বাবার দিকে এক নজরে তাকিয়ে পরে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” চেঁচামেচি করছি কী আর সাধে! তোমার আদরের বড় মেয়ের আবার হাত কেটে গেছে সেদিকে তোমার কোন খেয়াল আছে?”

তোদের কথা শুনে স্নেহা বিস্ময়কর ভাবে তাকিয়ে বলল,

—-” কিভাবে? কখন হাত কাটলো?”

তুলি ধীরগতিতে বলল,

—-” একটু পরে খেতে আসবে তখন তুমি শুনে নিও, আমি অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু আমাকে কিছু বলেনি।”

স্নেহা উদ্বেগ হয়ে বলল,

—-” রাগে জেদে সবকিছুতে এই মেয়ে ওর বাবার মত হয়েছে। এই মেয়েকে নিয়ে যে আমি কী করবো?”

তুলি তার আম্মুকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলল,

—-” তোমাকে আর কিছু করতে হবে না। ওই দেখো আসছে তোমার আদরের মেয়ে।”

তুলির কথা শুনে স্নেহা আর আতিক সাহেব তুলির দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়। তোহা সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে চেয়ারে বসে ওর বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” এখনো খাওয়া শুরু করিস নি এসেছিস তো অনেকক্ষণ হলো!”

তুলি ধূর্ততা সাথে বলল,

—-” বাবার সাথে কথা বলছিলাম। বাবাকে এখন তো ঠিক মত পাওয়াই যায় না তাই একটু কথা বলছিলাম।”

তুলির কথা শুনে আতিক সাহেব সরু চোখে তুলির দিকে তাকায়। তুলি ওর বাবার দিকে তাকিয়ে ইশারায় সরি বলে। আতিক সাহেব ছোট মেয়ের কান্ড দেখে একটু হেসে বড় মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” বিয়ে বাড়ি কেমন কাটলো মা?”

তোহা ওর বাবার দিকে না তাকিয়ে বলল,

—-” ভালো।”

তোহার বাবা-মা দু’জনে দু’জনের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু একটা বলে পরে তোহার দিকে তাকিয়ে অনুচ্চকষ্ঠে বলল,

—-” কিন্তু এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে, তোর তো জুঁইয়ের বৌভাতের পর আসার কথা ছিল!”

তোহা সুললিত কন্ঠে বলল,

—-” যার জন্য সেখানে থাকা, সে যদি না থাকে তাহলে সেখানে থেকে আমি কী করবো?”

তোহার কথা কেউ কিছু বুঝতে না পারে তোহার বাবা বলল,

—-” কী বলছিস কার জন্য থাকা? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।”

তোহার বাবা কথা শুনে তোহা চমকে উঠে বলল,

—-” না কিছু না।”

তোহার কথা শুনে স্নেহা কিছু একটা ভেবে বলল,

—-” সে না হয় বুঝলাম কিন্তু তোর হাত কাটলো কিভাবে?”

তোহা বাঁ হাতের ব্যান্ডেজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” খেয়াল নেই। কিভাবে যেন হাতটা কেটে গিয়েছে।”

স্নেহা মৃদু চিৎকার করে বলল,

—-” খেয়াল নেই মানে কী? হাতের ব্যান্ডেজ দেখে মনে হচ্ছে তো দুই কিংবা একদিন আগের ব্যান্ডেজ।”

তোহা ওর মায়ের দিকে এক নজর তাঁকিয়ে পরে হাত বাড়িয়ে খাবার প্লেট নিয়ে বলল,

—-” আজকাল ব্যান্ডেজ দেখে বুঝি বলে দেওয়া যায় কতদিন আগেকার ব্যান্ডেজ? যাই হোক এইসব তর্ক-বিতর্ক তে আমি এখন যেতে চাচ্ছি না।”

তোহা কে খাবার বাড়তে দেখে তুলি বলল,

—-” আপু তোমার কাটা হাত নিয়ে খাবে কী করে?”

তোহা হাতের কাজ থামিয়ে তুলির দিকে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বলল,

—-” আমার বাঁ হাত কেটেছে গাঁধী ডান হাত না।”

তুলি ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

—-” গাঁধী? তুমি আমাকে আবারো গাঁধী বললে। যাও আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না।”

তোহা তুলির দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আমি জানি আমার বোন আমার সঙ্গে কথা না বলে থাকতেই পারবে না।”

তুলি অভিমানের মুখ ফিরিয়ে নেয় তোহার থেকে। তোহা তুলির দিকে তাকিয়ে কোমল গলায় বলল,

—-” দেখ সরি আর আমার উপর অভিমান করে থাকিস না।”

তুলি তাও কিছু বলেনা। এদিকে দুই মেয়ের কান্ড দেখে মিটিমিটি হেসে চলে আতিক সাহেব আর স্নেহা। তোহা সেদিকে না তাকিয়ে তুলিকে বলল,

—-” সরি বলার পরও তুই আমার উপর অভিমান করে থাকবি?”

তুলি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলল,

—-” ঠিক আছে! ঠিক আছে! আর সরি বলতে হবে না কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে যদি সে আমার শর্তে রাজি থাকে তাহলে আমি তার সঙ্গে কথা বলবো নাহলে আমি আর তার সঙ্গে কথা বলবো না।”

তোহা ভ্রু কুঁচকে বলল,

—-” শর্ত? কি শর্ত?”

তুলি ঠোঁট ফুলিয়ে হেসে বলল,

—-” শর্ত হলো আম্মু আমাদের দুজনকে খাইয়ে দিবে। আমি আর তুমি চুপচাপ খেয়ে নিবো।”

তুলির কথা শুনে ওর বাবা-মা চোখ বড় বড় করে তাকায়। তোহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

—-” আচ্ছা ঠিক আছে।”

তোহার কথা শুনে ওর আম্মু খুশি হয়ে প্লেটে খাবার বাড়তে শুরু করতে শুরু করে।#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ০৮
গোধূলি লগ্নের রোদের প্রখর উত্তাপ অপেক্ষা করে ছাদের এক কোনে রেলিং এর ভর দিয়ে পশ্চিমাকাশে সূর্যের অস্ত যাওয়া দেখছে তোহা। তারই পাশে পাখির কলরব। সারি সারি পাখি তাদের নীড়ে ফেরার জন্য ডানা মেলে উড়তে শুরু করে। তোহার কাছে এখন পাখিগুলোকে বড্ড সুখি প্রাণী বলে মনে হচ্ছে। পাখিগুলো কেমন তাদের জোড়া নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে মুক্ত আকাশে। পাখিগুলোকে দেখে তোহা মিরানের সঙ্গে শেষ আলাপের কথা মনে পড়ে যায়।

তোহা মিরানের দিকে ছলছল চোখে তাকালে মিরান মৃদু স্বরে বলল,

—-” সন্ধ্যেবেলায় আপনি এখানে?”

তোহা মিরানের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” তোমার সাথে দেখা করতে এলাম।”

মিরান কিছুটা অবাক হয়ে বলল,

—-” মানে?”

তোহা স্মিত হেসে বলল,

—-” না কিছু না, চলে যাচ্ছো বুঝি?”

মিরান মৃদু স্বরে বলল,

—-” হ্যাঁ।”

তোহা আর কিছু বলার আগে অনন্যা এসে বলল,

—-” ভাইয়া চল আমার হয়ে গেছে।”

মিরান কিছু বলার আগেই অনন্যার চোখ যায় তোহার উপর। অনন্যা গিয়ে তোহা কে জড়িয়ে ধরে বলল,

—-” তুমি এখানে আর আমি তোমাকে বাড়ির ভিতরে খুঁজে এলাম। তোমার সাথে খুব অল্পসময়ের আলাপে আমাকে আপন করে নিয়েছো তুমি। তুমি সময় করে একদিন এসো আমাদের বাড়িতে।”

তোহা মৃদু হেসে বলল,

—-” তোমার মত কিউট মেয়েকে ভালো না বেসে পারা যায় বলো?”

তোহার কথা শুনে অনন্যা খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। তোহা আড়চোখে মিরানের দিকে তাকায়। মিরান অনন্যা কে তাড়া দিয়ে বলল,

—-” মিরু চল না হলে দেরি হয়ে যাবে আমাদের।”

অনন্যা তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” যাই আপু তুমি কিন্তু একদিন সময় করে এসো আমাদের বাড়িতে।”

তোহা মিরানের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল,

—-” যাবো! অবশ্যই যাবো তোমাদের বাড়িতে।”

মিরান একে একে লাগেজ গুলো গাড়িতে তুলে অনন্যা কে গাড়িতে উঠতে বলে। অনন্যা গাড়িতে উঠে বসলে মিরান তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আসি তাহলে। জানিনা আমার কখনো দেখা হবে কী না কিন্তু ভালো থাকবেন আপনি!”

তোহা উত্তরে মলিন হেসে বলল,

—-” দেখা তো আমাদের হবেই। আর তুমিও ভালো থেকো।”

মিরান আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে পড়ে। তোহার চোখের আড়াল হবার আগ পর্যন্ত তাকিয়ে থাকে মিরানের গাড়ির দিকে। হঠাৎ তোহার ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে তোহার পিছন থেকে কেউ বলল,

—-” ছেলেটা কে আপু?”

তোহা পিছন ফিরে তাকায়, তুলি দোলনায় বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে আরাম করে চিপস খাচ্ছে। তোহা ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” কী বললি?”

তুলি মুখে চিপস নিয়ে বলল,

—-” বলছি যার জন্য আমার আপুর মন খারাপ সে ছেলেটা কে?”

তোহা গম্ভীর গলায় বলল,

—-” ছেলে? কোন ছেলের কথা বলছিস তুই?”

তুলি মুখে থাকা চিপস শেষ করে বলল,

—-” আপু আমাকে কী তোমার বোকা মনে হয়? যেই মেয়েটা গুন্ডামি, গান, আর বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে আড্ডা দিয়ে সারাদিন পার করে, সেই মেয়েটা একটা সমস্ত দিন বাড়িতে কাটিয়ে দিল মন খারাপ করে। তারপরও বলবে আমি ভুল? এবার বলতো আমার জিজুর নাম কী? যে আমার গুন্ডি বোনটার মনে জায়গা করে নিল।”

তোহা কপাল ভাঁজ করে তুলির দিকে তাকিয়ে চিন্তা করে ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া মেয়ে কী না তাকে দেখে বুঝে গেছে সে প্রেমে পড়েছে। তাহলে কী ওর বাবা-মা ও দেখে বুঝে গেছে? তোহা কিছু না বললে তুলি আবারো বলল,

—-” বলবে না আমায়?”

তোহা কপালের ভাঁজ সোজা করে খুব ধীরগতিতে হেঁটে তুলির পাশে দোলনায় বসে। তোহা পশ্চিমাকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” নাম জেনে কী করবি? সে আমায় ভালোবাসে কী না তা আমি জানিনা?”

তুলি উৎসুক হয়ে বলল,

—-” কেন? কেন? সে তোমায় ভালোবাসবে না কেন? আমারে সুন্দরী বোনটাকে ভালোবাসবে না তো কাকে ভালোবাসবে?”

তুলির কথা শুনে তোহা স্মিথ হেসে বলল,

—-” তার কাছে সুন্দর বা অসুন্দরের কোন ব্যাপার নেই। সমস্যাটা অন্য কোথাও।”

তুলি তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” তাহলে কোথায় সমস্যা?”

তোহা তুলির দিকে না তাকিয়ে বলল,

—-” সে তো আমিও বুঝতে পারছিনা!”

তোহার কথা শুনে তুলি বিরক্ত হয়ে বলল,

—-” মানে কী? কোথায় সমস্যা সেটাই তুমি বুঝতে পারছো না?”

তুলির কথা শুনে তোহা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে। তুলি আবারো তোহা কে বলল,

—-” ঠিক আছে! ঠিক আছে! তোমাকে আর সমস্যা খুঁজতে হবে না। এবার আমি তোমাদের সেটিং করিয়ে দেবো।”

তুলির কথা শুনে তোহা শব্দ করে হেসে বলল,

—-” সব ছেড়েছুড়ে শেষমেষ তুই কী না ঘটকালি শুরু করলি।”

তুলি চিপস খেতে খেতে বলল,

—-” হেসে নাও! হেসে নাও! এখন তো তোমার সময়। আমার সময় এলে তখন আমিও বুঝিয়ে দিবো।”

তুলির কথা বলার ধরন দেখে তোহা আবারো শব্দ করে হেসে দেয়। তুলি আবার চিপস খাওয়া থামিয়ে তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আপু জিজুর নাম কী? তিনি কী করেন? আর তাঁর সাথে তোমার প্রথম দেখা হয় কোথায়?”

তোহা ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে বলল,

—-” নাম? সেটা না হয় কিছুদিনের জন্য অজানাই থাক। পেশায় একজন নামকরা কার্ডিওলজিস্ট। আর তার সাথে আমার প্রথম দেখা অনেকটা নাটক বা উপন্যাস বইয়ের পাতার মতো।”

তুলি তোহার দিকে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে বলল,

—-” নাটক বা উপন্যাস বইয়ের পাতার মতো এ কথার অর্থ কী আপু?”

তোহা মুচকি হেসে বলল,

—-” রাস্তায় জ্যামে আটকে থাকা অবস্থায় আমি তাকে প্রথম দেখি। সে অবশ্য আমায় দেখে নি। এর জন্যই বললাম নাটক বা উপন্যাস বইয়ের পাতার মতো আমার তাঁকে প্রথম দেখা।”

তুলি নড়েচড়ে বসে তোহার দিকে তাকিয়ে এক্সাইটেড হয়ে বলল,

—-” হাউ রোমান্টিক। অনেকটা সাউথ ইন্ডিয়ান মুভির মত। তারপর? তারপর কী হয়েছে?”

তোহা তুলির এক্সাইটমেন্ট দেখে মৃদু হেসে ওর নাক টিপে বলল,

—-” তারপর আমার মাথা আর তোর মুন্ডু। বড় বোনের লাভ স্টোরি শুনতে খুব ভালো লাগে তাইনা?”

তুলি ঠোঁট ফুলিয়ে হেসে বলল,

—-” তা আর বলতে।”

তোহা তুলি কে সুরসুরি দিতে দিতে বলল,

—-” তবে রে দাঁড় আজ তোর দেখাচ্ছি মজা।”

তুলি হাসতে হাসতে বলল,

—-” আপু প্লিজ থামো আমি আর পারছিনা।”

কে শুনে কার কথা তোহা উদ্দাম গতিতে তুলিকে সুড়সুড়ি দিয়ে যাচ্ছে।
______________________________

অনন্যা ঘুমে ঢুলঢুল করছে। তার পাশের বিছানায় বসে অনন্যার দুই কাজিন বিরতিহীন ভাবে চিৎকার করে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গ দিচ্ছে টিয়া। অনন্যা ঘুমঘুম চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে বলল,

—-” আমাকে কী একটু ঘুমাতেও দিবি না তোরা?”

অনন্যার এক কাজিন অনন্যার হাত ধরে টেনে উঠে বলল,

—-” আর কত ঘুমাবি? এখনতো ওঠ।”

অনন্যা বিরক্ত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” কী হয়েছে?”

অনন্যার অন্য কাজিন হাতে কিছু একটা দেখিয়ে বলল,

—-” এই দেখ আমাদের হাতে কী!”

অনন্যা কিছু বলার আগে সে আবার বলল,

—-” সেলিব্রেটি নওশীন তোহার কনসার্ট এর টিকিট। সেলিব্রেটি নওশীন তোহা কনসার্ট এর জন্য টাঙ্গাইলে আসছে।”

অনন্যা ওদের দিকে তাকিয়ে দেখে ওদের হাতে অনেকগুলো টিকিট। অনন্যা মৃদু স্বরে বলল,

—-” তা টিকিটগুলো কে এনে দিয়েছে?”

টিয়া মুখ টিপে হেসে বলল,

—-” ওদের ভাইদের দিয়ে।”

অনন্যা ওদের কিছু বলতে গেলে টিয়া ইশারায় ওকে বারন করে দেয়। অনন্যা টিয়ার ইশারা বুঝতে পেরে মৃদু হেসে দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

—-” এবার বোধহয় বড়সড় কোন ধামাকা হবে!”

#চলবে….

______________________________

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here