নিশীথচিত্র পর্ব ২০+২১

‘নিশীথচিত্র'(২০)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

_____________

রিনি রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে রুমটাকে পুরোপুরি অন্ধকার করে দিয়েও দুই হাতে চোখ মুখ ঢেকে লজ্জা নিবারন করার তীব্র প্রচেষ্টা চাল্লাচ্ছে।খানিক বাদেই ফিক করে হেসে উঠছে আবার।বিছানা থেকে উঠে দরজাটা হালকা ফাকা করে উঁকি দিলো সে। দিহান তখন জানালার সামনের রাখা টেবিল চেয়ারে বসে টেবিলের উপর দুই হাত এক করে দিয়ে তাতে থুতনি ভর করে রিনির রুমের দিকেই তাকিয়ে আছে।রিনি মাথা বের করে উঁকি দেয়ায় রিনিকে দেখেও খানিকক্ষণ হাসলো। রিনি সেই হাসি দেখে চরম লজ্জায় তৎক্ষনাৎ উচ্চশব্দে দরজা বন্ধ করে দিলো।তার হৃদ গতি প্রবল বেগে আছড়ে পরছে বার বার।দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। মুখে হাসির আনাগোনা যায় নি তখনও।

রিনির মন মানছে না তবুও । একটা চেয়ার টানতে টানতে জানালার পাশে রাখলো চেয়ারটাতে আয়েশ করে বসে জানালার কপাট জোড়া খানিক ফাকা করলো।রিনির পাগলামি দেখে স্মিত হাসলো দিহান।হাত নেড়ে বুঝালো রিনি যে জানালা দিয়ে দেখছে তা তার নিকট অবগত।হাতের নাচন দেখে রিনি সাবধানে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।ঢুলতে ঢুলতে বিছানায়ও শুয়ে গেলো। বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে গায়ের উপরে তার সাইজের পুতুলটাকে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

কিছুক্ষণ আগের কথা
দিহান যখন রিনির কান দুই ঠোঁট দিয়ে আটকে ধরলো রিনির হাত পা আকস্মিক ঠান্ডা হয়ে গেলো।নড়ন ক্ষমতাই যেন ভুলে গেল। দিহান আগের মতোই কানের কাছে ফিসফিস করে বললো

— ভালোবাসা মানে কি রিনি? সারা দিন কানের কাছে ভালোবাসি ভালোবাসি বলাটাই কি ভালোবাসা? আর না বললে সেটা ভালোবাসা না?

দিহান রিনিকে ঘুড়িয়ে নিজের দিকে ফেরালো।চকিতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রিনি।বিড়ালছানার মতো বুকের কাছে নাক ঘষতে শুরু করলো।যেন সে ভীষণ দুঃখী মানুষ আর এখন সুখের সন্ধান করতে নেমেছে দিহানের বুকে।রিনির উশখুশ করা দেখে দিহান রিনিকে কিছুই বললো না।দুই হাতে শক্ত করে আলিঙ্গন করলো।আবারও আস্তে করে বললো

— আমার দিকে তাকাও রিনি।আমার চোখের দিকে।আই টু আই কন্টাক করো।

দিহানের বুকের সাথে থুতনি ঠেকিয়ে দিহানের মুখপানে তাকালো রিনি।কি মায়া সেই চোখ দুটোয়।চোখের নিচে হালকা কালসিটে দাগ হওয়ায় রিনির দুঃখী ভাবটা আরও পরিপূর্ণ ভাবে ফুটে উঠলো।দিহান নিজের ঠোঁট দুটো জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো।তারপর বললো

— আচ্ছা রিনি ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম কি? ভালোবাসি বলাটাই কি মূলত ভালোবাসা? নাকি আচারণগত কিছু দিকও প্রয়োজন? অবশ্যই প্রয়োজন। আর যদি তোমার কাছে সে প্রয়োজনটুকু না থাকে তাহলে তুমি ভালোবাসা চেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই হেরে বসে আছো।ধরো তোমাকে একজন শুধু ভালোবাসিই বলে কিন্তু তার আচার আচরণে কোনো ভাবে প্রকাশ পায় না যে আদোও সে তোমায় নিয়ে চিন্তা করে,তার লাইফে তোমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে,সব সময় ব্যস্ততা নিয়ে পরে থাকে,ইন্ডিরেক্টলি ইগনোর করে সে তোমাকে। তুমি জিজ্ঞেস করলে টেকনিকালি তোমাকে অন্য কিছু বুঝিয়ে দিবে বা তার নানা প্রবলেমের ঝুড়ি তোমার কাছে দিয়ে দিবে।আর তুমিও ভাববে হ্যা সে তো বেজায় ব্যস্ত তার দোষ দেয়া যায় না। তুমি জিজ্ঞেস করলেই বলবে কি জানো? বলবে”কি যে বলো বাবু তুমি ভুল বুঝতেছো”।আর তারপর ছোট্ট করে বলে দিবে “ভালোবাসি”।তুমিও গলে যাবে ওই ভালোবাসি শুনে।।কিন্তু পরের দিনই আবার একই কাজ করবে সে।এটাকে কি তুমি ভালোবাসা বলবে?আমি তো বলবো না।ভালোবাসা শুধু ভালোবাসি বললেই হয় না। সে ভালোবাসি বলছে মানেই যে ভালোবাসে এমন না সে আসলে ভালোবাসে না।ভালোবাসাও বেশ কিছু উপাদান নিয়ে গঠিত। লেবু,চিনি না দিয়েই একটা পানির গ্লাস একজনের হাতে বাড়িয়ে দিয়ে তুমি কিছুতেই বলতে পারবে না যে এটা লেবুর শরবত।আগে তোমাকে উপাদানগুলো দিতে হবে আর তারপরই বলতে পারবে যে এটা লেবুর শরবত।তেমনি তোমায় নিয়ে কারো আবেগ,অনুভূতি, চিন্তাভাবনা, কেয়ার, ইম্পর্টেন্স, ,ওয়াদা রাখা,তোমার কষ্টের ভাগীদারি হওয়া আরো বিভিন্ন উপাদান আর সেই সবটা মিলেই হবে ভালোবাসা ।।যে তোমার ইম্পর্ট্যান্স দেয়, তোমায় নিয়ে ভাবে,শত ব্যস্ততার মাঝেও তোমার খবর নেয়।তখন ভালোবাসি না বললেও বুঝবে মানুষটা তোমাকে ভালোবাসে। আর তোমার এমন মানুষকে জীবনে বেছে নেয়া উচিত।

দিহান থামলো।
রিনি চোখ পিটপিট করতে করতে ঠোঁট উল্টে বললো

–আপনি কোনটা দিহান ভাই?এর মধ্যের কোনোটাই তো আপনি না। আপনি তো ফোন করে আমার খবর ন্যান না।আমাকে পড়ানো আর তিন বেলা খাবার সময় ছাড়া তো আপনাকে দেখাই যায় না আমার আশেপাশে।আপনি ব্যস্ততার মধ্যে আমার খবর নিবেন কি নিবেন না বুঝবো কিভাবে?

দিহান ছোট্ট একটা শব্দ বললো
— হিডেন।

এরপর খানিকক্ষণ হাসলো।আবার বললো

— সব কিছুর জন্য একটা পারফেক্ট সময় চাই নিনিমনি।সেটা আগে হলে যেমন বেমানান আর পরে হলে ঠিক তেমন অর্থহীনও বটে।আমি বেমানান আর অর্থহীন কোনোটার সাথেই থাকতে চাই না।

দিহান রিনির নাক টেনে কথা গুলো বলো।

এই ছোট্ট কথাগুলো রিনির মনে হাজার প্রশ্নের জানান দিলো।যে উত্তর গুলো মাথায় আসছে তাও ঘুলিয়ে এক প্রকার হ য ব র ল এর মতো হয়ে যাচ্ছে।

দিহান ঘোর লাগা দৃষ্টিতে রিনির দিকে তাকিয়ে আছে।রিনি কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো।

দিহান ডান ভ্রু উচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো” কি হয়েছে”

রিনির মাথা তিড়িংবিড়িং করে নাড়িয়ে জবাব দিলো ” নাহ কিছু হয় নি”

— চোখের নিচে কালো কালো লাগছে কেন রিনি?

রিনি ঠোঁট উল্টে অভিযোগের সুরে বললো

— আপনি না বলে চলে যাওয়ায় আমি অনেক কেদেছি। খাইও নি ঠিক মতো

দিহান চোখ গরম করে রিনির দিকে তাকালো

— না মানে খেয়েছি । অল্প করে। এরপর অনুনয়ের সুরে বললো “আর হবে না সরি”।

ছোট্ট মুখ করে সরি বলায় দিহান স্মিত হাসলো।

–অকে। ডোন্ট ফরগেট ইট।

— ইয়াহ

দিহান আর একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো

— আমি বলে গেলে কাদতে না?

রিনি ভাবালু ভঙ্গিতে জবাব দিলো
— কি জানি দেখতে হবে।পরের বার বলে যাবেন কেমন? আপনি আসলে আমি আপডেট জানাবো।

দিহান উচ্চশব্দে হাসলো।আস্তে করে নাকে নাক ঘষে দিলো।

দিহানেরচোখ যখন রিনির ঠোঁটের দিকে নিবদ্ধ হলো তখন রিনি দিহানের চোখের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।পরক্ষণেই কিছু ভাবতেই তার ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলো।সে দিহানকে ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে গেলো।কি জানি কিশোরী মনে আজ বড্ড বেশি লজ্জা জেগেছে তার।নইলে শুধু মাত্র গভীর তাকানোটায় রিনি লজ্জায় পালাতো না।দিহানেরও বেশ লজ্জা লাগলো কি জানি তার পুচকি প্রেয়সী কি ভেবে নিয়েছে!!!!তবুও পুরুষ মানুষের লজ্জা, সে তো আর বালিশে মুখ লুকাবে না।ঠোঁট জোড়ায় মিচকে হাসি নিয়ে লজ্জাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবে।

রিনি দরজা খুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার পিছু ফিরলো দিহানের দিকে।

রিনি অনুসন্ধানী চোখ করে বললো
— দিহান ভাই তুমি কি ঐ আকাশের মতো? খানিকক্ষণ মিষ্টি ঝলমলে রোদ আর খানিক মেঘে আচ্ছন্ন, ধূসর অন্ধকার?

দিহান গম্ভীরচিত্তে জবাব দিলো

— তোমাকে স্বাধীনতা দেয়া হলো

— কি জন্য?

— আমাকে নিয়ে তোমার যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবার স্বাধীনতা দেয়া হলো।

রিনির আর দাড়ায় নিয়ে দৌড়ে ছুটে এসেছে নিজের রুমে।।দিহানের গম্ভীর কথাটার থেকেও বেশি তাকে প্রভাবিত করেছে দিহানের চোখজোড়া। তাই ই এতাও লুকোচুরি লজ্জায় মেতে উঠেছিলো তারা।

______________

রিনির পাগলামি, মান অভিমান,দুঃখ কষ্ট, অভিযোগ, মজা, দিহানকে আনলিমিটেড যন্ত্রণা দেয়া সব কিছুই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।তেমনি ভাবে দিহানও বকে মারে,নিস্তব্ধ ভালোবাসা প্রেরণ করে।রিনির অলক্ষ্যে রিনির উপর নজরদারি, নিজের লেখাপড়া, কোচিং, টিউশনি,নিজের গ্রামের বাড়িটাকে আস্তে আস্তে গুছিয়ে আনা সবটাই বেশ দায়িত্ব সহকারে করছে।আর রিনি দায়িত্ব নিয়েছে দিহানের ঘর গুছিয়ে দেয়ায়।ব্যস্ততার কারণে দিহান নিজের রুম গুছাতে পারে না তেমন।রিনি রোজই টুকটাক জিনিস কিনে আনে দিহানের ঘরের জন্য কিছু জিনিস সাজাতে আর কিছু জিনিস নিতান্তই প্রয়োজন যা তাই। যা দিহানও খেয়াল করে না। রিনির সূক্ষ্ম চোখ জোড়া দিহানের প্রয়োজন দিহানের থেকেও বেশি বুঝে ফেলছে দিন দিন ।

তবে দিহান উচ্চাকাঙ্খী নয়।চাওয়া পাওয়ার আনন্দের সাথে না পেলে কি হবে সে ভাবনাটুকুও ভেবে রাখে।সদা প্রস্তুতি নিয়ে রাখে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য।

বলা যায় সবটাই হচ্ছে শুধু রিনিকে ভালোবাসি কথাটাই বলা হয়ে ওঠে না।আল্লাহ আল্লাহ করে ফোরথ সেমিস্টার কমপ্লিট হলেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ পেয়ে যাবে। তখন আর রিনিকে বলতেও বাধা থাকবে না।রিনিও এই সময়টুকুতে বড় হোক, পরিপক্ক হোক, বুঝ ব্যবস্থা বারুক এমনটাই চায় দিহান।নিজের প্রেয়সীকে নিজের মতো করে গড়ছে এটাই বা কম কি?

______________

টেস্ট পরীক্ষায়ও তুলনামূলক ভালো রেজাল্টই করলো রিনি।ফাইনার পরীক্ষায় পড়া শোনার জন্য দিগুন টাইম দেয়ার জন্য বলে দিলো দিহান।সাথে করে রুটিনও করে দিলো।চড়া কন্ঠে বলে দিলো” রিনি রুটিনের এদিক ওদিক যেনো একফোঁটাও না হয়”।

নিজের পড়াশুনার দিকেও দেখতে হচ্ছে সিজিপিএ ৩.৭৫ + না হলেই নয়।তার উদ্দেশ্য হলো ভালো রেজাল্ট করে উক্ত ভার্সিটি তেই টিচার পদে নিযুক্ত হওয়ার । এমন সুযোগের অপেক্ষায় সে।পরের চেষ্টা পরে করবে।আগে নিজের হৃদয়ের সাথে জড়িয়ে ফেলা মানুষটার একটা নাম দিতে চায় সে।

সারা দিনের এতো ব্যস্ততার পরে সারা রাত পড়াশুনা।ঘুম বড়জোর দুই কি আড়াই ঘন্টা।প্রচুর প্রেসার পরে যাচ্ছে তার। তবুও রিনির পরীক্ষা অব্দি এতোটুকু কষ্ট করতেই হবে।

সময় মতো রিনির এসএসসি এক্সামও শুরু হয়ে গেলো।প্রিপারেশন খারাপ না তবে ভয়টা ধরাশায়ী হয়ে তার উপর ভর করছে বার বার।

রিনির পরীক্ষার মধ্যে দিহান সন্ধ্যার সাথে সাথে ঘরে ফিরে বেশ অনেক রাত পর্যন্তই রিনির সাথে থাকে। এটা অবশ্য রিনির অনুরোধের জন্যই।।রিনির কথা হলো ” দিহান ভাই আপনি পাশে থাকলে মনের জোর পাই নয়তো কেমন সব ঘুলিয়ে যাচ্ছে আমার।প্লিজ থাকেন”। দিহান আর না করতে পারে নি।

দিহান রিনিকে বেশি রাত অব্দি পড়তে দেয় না।বারোটা বেশি হলে সাড়ে বারোটা।রেহানাও ততক্ষণ বিছানায় বসে থাকে, শুয়ে থাকে,ঘুমোয় কিংবা ঝিমোয়।

রেহানা যখন ধারে কাছে থাকে না তখন রিনি দিহানের হাত দুইটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে” কেন জানি খুব ভয় করছে।আমি আপনার মান রাখতে পারবো তো?”

দিহান তখন আবার অভয় দিয়ে বলে
— উহ রিনি এতো ভয়ের কি আছে?তুমি যেমন পারবে তেমন পরীক্ষা দেবে। আর যা হবে তাতেই আমি খুশি।

রিনি তাতে অভয় পায় খানিকটা। আবার পড়া শুরু করে দেয় সে পুরো উদ্যোগে।দিহান তখন রিনির ভয়ার্ত মুখ খানা দেখে নেয় নীরবে।মেয়েটা তাকে নিয়ে কতো ভাবে এখন।তার মান সম্মান রাখতে পারবে কিনা তা নিয়েও ভয় পায়।বড় হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা তাহলে। নিজের কাছেই তার প্রশ্ন জাগে মেয়েটার জন্য সে কিছু করতে পারবে তো?হ্যা পেরেছে অনেক কিছুই পেরেছে।কিন্তু মেয়েটা যা চায় তা পারবে তো? একটুখানি ভালোবাসার পূর্ণতা
দিতে পারবে তো? পারলেও কবে পারবে?সময় নাকি কারো জন্য অপেক্ষা করে না, খুব দ্রুত চলে যায় সে নিজ গতিতে।তবে তার জীবনের কাঙ্ক্ষিত মুহুর্তটা এতো দেরি করে কেন আসতে চাচ্ছে?সময় কি যেতে চাচ্ছে না? সময় কি চায়?

চলবে
‘নিশীথচিত্র'(২১)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

____________

রিনির চোখ মুখে রাগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভ্রুযুগল কুচকে আছে। পূর্বের থেকে মুখটা আরও বেশি কপট রুপ ধারণ করছে।রাগে দাতে দাত চেপে রাখায় মুখটা ক্ষুদ্র আকার ধারণ করছে।রিনি দাত কিরমির করতে করতে আবার বললো

— মা আমি গ্রামের বাড়ি যাবোই ।

— কিভাবে যাবি বল?? বল আমায় কিভাবে যাবি??উপায় বল একটা।

— মানে তুমি কি বলতে চাইছো? উপায়ের অভাবে আমি এখন কোথাও বেড়াতে যেতে পারবো না? পরীক্ষা শেষ হয়েছে আর আমি এখনও ঘরের কোণে পরে থাকবো?

— রিমির মেয়েটার বয়স মাত্র দুইমাস। ওরে তো এই সময় ওর শশুড় বাড়ি পাঠানো যায় না তোর বেড়াতে যাওয়ার জায়গা বন্দবস্ত করার জন্য তাই না?ওখানে গিয়ে মেয়েটা বাচ্চা সামলাবে নাকি শশুড় বাড়ি আর নাকি তোকে সামলাবে? কোনটা?

— আমি বেড়াতে যাবো ব্যাস। আমি আর কিছু জানি না।

— বললেই হয়ে গেলো? তোর বাবা কি পরিমাণ ব্যস্ত জানিস না তুই? সকালে যায় আর কতোরাত করে বাসায় ফেরে।দিনের বেলা একবার আসলেও পারে না আসলেও পারে।কি পরিমাণ খাটনি যাচ্ছে তার উপর।আর সে কিনা তোর বেড়ানো জন্য এই পরিমাণ কাজ ফেলে কোথাও বেড়াতে দিতে যাবে? এমনটা ভেবে থাকলেও ভুলে যাও।

— আমার বেলায়ই তোমাদের এমন করতে হবে আমার বেলায়ই তাই না?

–বিয়ে দিয়ে দি নি তোমার বোনের মতো কপাল তোমার

রিনি রাগে পা দমাতে দমাতে স্থান ত্যাগ করলো।রাগের চোটে কয় এক ফোটা অশ্রুপাতও হলো।মানুষ কি এক্সামের পরে একটু বেড়াবে না? হুম?
তবে এসব রিনির পূর্ব প্রস্তুতি। তার মাথায় অন্য একটা প্লান কিলবিল করছে।সেটার জন্যই এতো প্রস্তুতি, এতো অভিনয় আর সেটা যেনো দৃষ্টিকটু বা কারো চোখে সন্দেহভাজন না হয় তাই ই এমনটা করা।তবুও অশ্রুকণা গড়িয়ে পরলো প্লান ফ্লোপ হবার ভয়ে। ব্যাপারটা খুব সেন্সিটিভ কিনা!!!

____________

রাতে খাবার খেতে খেতে দিহান নিচের দিকে তাকিয়েই বললো

— আন্টি আমি কাল পরশুর মধ্যে একটু গ্রামের বাড়ি যাবো।রিনির পরীক্ষা শেষ অন্য সব প্রাইভেটও শেষ। আর কি সব মিলিয়ে ফ্রি আছি আমি।ভাবলাম গ্রামে কয়দিন কাটিয়ে আসি।

রিনি এই মুহুর্তটারই অপেক্ষায় ছিলো।সে আগেই দিহানের কাছ থেকে শুনেছিলো এক্সামের পরে দিহান গ্রামের বাড়ি যাবে।তখনই ঠিক করেছিলো এই সুযোগটা সে কাজে লাগবে। সেও যাবে দিহানের সাথে।সময়টা যখন এসে গেছে তো কাজে লেগে পরাই মঙ্গল।

রেহানা দিহানের কথায় সম্মতি জানিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।রিনি চকিতে বলে ওঠে

— মা আমি তাহলে দিহান ভাইয়ের সাথে গ্রামে যাই? সে আমায় দাদা বাড়ি পৌছে দিলো। ভালো হয় না বলো?

রিনির কথা শেষ হতেই খুব সাবধানে সবার মুখের দিকে চোখ বুলালো।দিহান এক লোকমা ভাত মুখের সামনে নিয়েই হা করে রিনির দিকে তাকিয়ে আছে।রিমি রিনির মুখের দিকে তাকাচ্ছে আর তার মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে।রেহানার চোখ জোড়া বিষ্ফরিত দেখালো।রিনি ছোট্ট করে ঢোক গিললো।এটারই ভয় পাচ্ছিলো। নিজের মেয়েকে অন্যের ছেলের সাথে এতো রাস্তা কিছুতেই কোনো মা দিতে চায় না তা জানে রিনি তাই ই পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। রিনি হার মানবে না।সে পণ করেছে সে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত চেষ্টা করবে। যেভাবে হোক মাকে রাজী করাবে। যা হয়ে যাক তাতে।
রেহানা মেয়েকে সাথে সাথে চোখ গরম দিলো।যাতে রিনি ভয় পেয়ে আর এই কথা না তোলে।তাতে রিনি দমলো না। আরও সাহস নিয়ে বললো

— মা দিহান ভাইয়ের সাথে যেতে প্রবলেম কই।বাবা ব্যস্ত তুমি যেতে পারবা না।আমি করবো টা কি বলবে?

রিনি চোখ দিয়ে ইচ্ছাকৃত অশ্রু কণা ফেললো।নাকে মুখে কথা বাজিয়ে বাজিয়ে আরও অনেক কথা বললো।

দিহান নির্বাক।নিচের দিকে তাকিয়ে গপাগপ গিলছে।কি বলবে কি হবে তার থেকে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে হচ্ছে তার।রেহানা অতিষ্ট হয়ে বললো

— আচ্ছা তোর বাবাকে বলি। তারপর দেখা যাবে। আমি বললেই তো আর হলো না।ফিরলে বলবো তাকে।এখন কান্না বন্ধ করে খা

রিনির সবার আড়ালে দেয়া মিচকে হাসিটা দিহানের চোখ এড়ালো না।বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।এই মেয়ে নিয়ে আর পারা গেলো না।তবুও খাবার শেষে উঠে যাওয়ার সময় বললো
— রিনি বাবা মায়ের কথা শোনো।আমার সাথে না যাওয়াটাই তোমার জন্য ভালো হবে মনে করি।আশা করি বোঝার চেষ্টা করবে।

রিনির মেজাজটাই গরম হয়ে গেলো।

রাতে মুনির হোসেন ফিরলে খাওয়া দাওয়া করে শোয়ার পরে সবটা জানায় রেহানা।মুনির হোসেন চিন্তিত মুখ নিয়ে বলে

— ছেলেটা খারাপ না যাই বলো।খারাপ হলে বা রিনি ওর কাছ থেকে কোনো খারাপ ব্যবহার পেলে নিশ্চয়ই ওর সাথে যেতে চাইতো না তাই না?

রেহানা গম্ভীর মুখ নিয়ে সম্মতি জানালো।এরপর বললো

— তাহল কি যেতে দিবে?

— দেখি দিহানের সাথে কথা বলে।ও নেয় কিনা। ওর কোনো সমস্যা আছে কিনা।সে যাওয়ার সময় ওভাবে বললো মানে নিতে চায় না হয়তো।আমি বললে রাজী হবে ।

রেহানাও ভাবলো ছেলেটার বদ মতলব থাকলে তো খাবার শেষে না নেয়ার কথা বলতো না।আরও সাত পাঁচ ভেবে দিহানের কোনো খারাপ দিক খুজে পেলো না সে। রেহানা কিছুটা চিন্তা মুক্ত হয়েই বললো
— আচ্ছা তুমি যা ভালো বোঝো।

_____________

সকালে মুনির হোসেন দিহানের সাথে কথা বলতে গেলো।প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ইশারা ইঙ্গিতে বুঝিয়ে বললো যা বুঝতে দিহানের অসুবিধা হয় নি।সে জানে একা একটা ছেলের সাথে নিজের মেয়েকে দিতে বাবা মা সাহস করতে পারে না। দিহান এতে কিছুই মনে করে নি।বরং এমন সময় যারা চোখ বুঝে চোখ বুঝে বিশ্বাস করে নিজের মেয়েকে ছেড়ে দিতো তাদেরই দিহান বোকা উপাধি দিতো।

— আংকেল আমার কোনো সমস্যা নেই।আর আপনি যে ভয় পাচ্ছেন সেটা সাভাবিক।আমি কিছু মনে করি নি তাতে।তবে যদি রিনির যেতেই হয় তাহলে ও যেনো বোরকা পরে যায়।গ্রামের দিক বোঝেনই তো আরও একটা ছেলের সাথে দেখলে অনেক কিছু বলাবলি হতে পারে।ওটা তো আপনারও জন্মস্থান আমার থেকে আপনি ভালো বুঝবেন সমস্যাটা আংকেল।

মুনির হোসেন মুখ প্রসস্থ করে হাসির ন্যায় আকৃতি উঠে দাড়ালো।দিহানও উঠে দাড়ালো।মুনির হোসেন দিহানের কাধে নির্ভরতার চাপড় মেরে বললো

— আসি। আমি রিনিকে বলে দেবো।

–জি।আর আংকেল আপনার টিকেট কাটতে হবে না আমি কাটবো কেমন?

— আচ্ছা আচ্ছা আসি।

____________

রিনি সকাল সকাল মায়ের কাছ থেকে খবর নিয়ে এসেছে তার বাবা রাজি হয়েছে।নাচতে নাচতে সে জামাকাপড় গোছানো শুরু করে দিয়েছে তখনই। কি নেবে না নেবে তার থেকে বেশি আপসেট কোন ড্রেসটা পরে যাবে।রিনি মনে মনে ভাবছে “যেহেতু দিহান ভাইয়ের সাথে যাবো মানে মার্জিত জামা হওয়া চাই।নইলে যাওয়া ক্যানসেল হয়ে যাবে”

রিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে।তখনই ফোনে মেসেজ আসার সাউন্ড হলো। ফোন চেক করে সে হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে এমন অবস্থা।এক লাফে খাটে শুয়ে দিহানের মেসেজটা অপেন করলো।এটাই দিহানের করা প্রথম মেসেজ।প্রথম মেসেজেই ছোট খাটো সাইজের একটা হুমকি।

[ রিনি বুড়িদের মতো বোরকা পরে আমার সাথে গেলে যেতে পারো নইলে যাবার কোনো দরকার নেই।দরকার নেই কি আমি ই নেবো না]

রিনির মন খারাপ হয়ে গেলো এতোক্ষন বসে জামা চয়েজ করার খাটনিটার কথা ভেবে।তবে বুড়ি দের বোরকা পরতে তার প্রবলেম নেই একেবারে।দিহান ভাই বলেছে মানে সব পারবে সে।রিনি একটা প্রশান্তির নিশ্বাস ছাড়লো। রিনির ফোনে দিহানের থেকে আবার মেসেজ এলো

[বুড়িদের বোরকা বলতে তোমার দাদির বোরকার মতো পরতে বলি নি।শালীন বোরকাগুলো পরবে]

রিনি আর মেসেজের কোনো উত্তর দিলো না।রিনির মনে হলো শালীন বোরকার মধ্যে জিলবাবটা বেস্ট হবে।তাড়াতাড়ি করে আর্জেন্ট অর্ডার দিয়ে দিলো জিলবাব ফুল সেট।রাতের মধ্যে এসে যাবে।যেহেতু ঢাকা মধ্যে।

_______________

রাতের খাবার সময় দিহান বললো
— আংকেল কাল সকালের টিকেট টা পাই নি।বিকালেরটা কাটতে হলো।আপনার কি কোনো সমস্যা আছে তাতে? মানে রাতের বেলার জার্নি!!!!

মুনির হোসেন একটু ভেবে বললো

— না নেই বাবা।

তবে রেহানা মনঃক্ষুণ্ন হলো খানিকটা। দিহান বুঝতে পেরে বললো

— আন্টি ভরশা রাখতে পারেন।

রেহানা জোরপূর্বক হাসি দিলো।তবে সব থেকে খুশি হলো রিনি। কেউ সামনে না থাকলে উথাল-পাতাল নাচতো সে। উহঃ রাতের জার্নি!ভাবতেই রিনির মন খুশিতে বাক-বাকুম করে উঠলো।

রিনির নির্বিকার খুশি আর কেউ ধরতে না পারলেও দিহান খুশিতে ঝলমলে চোখ দুটো দেখেই ধরতে পেরেছে।দিহান নিচ মুখি হয়ে খুব সাবধানে সবার চোখের আড়ালে স্মিত হাসলো।

_____________

সাড়ে পাঁচ টায় বাস। সাভার থেকে উঠতে হবে।জ্যাম ট্যাম মিলিয়ে ঘণ্টা খানেক লেগে যাবে মিনিট ত্রিশের পথ পৌছাতেই। দিহান চারটা নাগাদ রিনির বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।মেয়ে মানুষ নিয়ে প্রথম বার তাই একটু আগেই রেডি হয়েছে।মেয়ে মানুষ হলেও হতো কিন্তু এটা তো তার প্রেয়সী। একটা চাপা আনন্দ অস্থিরতা ভর করছে তার উপর।নাচ জানলে সে অবশ্যই নাচতো।তার অপ্রকাশিত খুশিটা ইচ্ছা করছে পুরো ভূবণ কে জানিয়ে দিতে।দিহানের গম্ভীর মুখশ্রী দিকে তাকিয়ে কেউই বুঝতে পারবে না তার ভিতরে কি চলছে।মুনির হোসেন এক ঘন্টা সময় বের করে এসেছে।মেয়েকে বাস পর্যন্ত পৌছে দেবে বলে।তার ব্যস্ততা সবার থেকে বেশি।বার বার ঘরের মধ্যে ঢুকছে আর বলছে

–কি রিনির কি হলো নাকি?

মিনিট পাচেক বাদেই রেহানা, রিনি আর রিমি তার বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে এলো।

— মা দাদির কাছে বলে এসেছিস তো?

— হ্যা বাবা।জানো দাদি খুব যেতে চাইলো।

— বুড়ো মানুষ তো নিজের ঘরদোর টানে তাকে।যাই হোক চল।

দিহান রিনিকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।দিহান বিশ্বাসই করতে পারছে না তার এক কথায় মেয়েটা এমন বোরকা পরবে।চোখজোড়া, হাত দুইটা ছাড়া কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না।পায়েও সু জুতা পরা।দিহানের সর্বোচ্চ আশা ছিলো বোরকা পরবে তবে সেটা স্টাইলিশ বোরকা পরবে।

দিহান বেশ খুশি হয়ে গেলো ।এক ফাকে চোখাচোখিও হয়ে গেলো দুজনের। দিহানের মনে হচ্ছে রিনির চোখজোড়া বলছে “কেমন চমকে দিলাম দিহান ভাই??”

মুনির হোসেন তার গাড়িতে করেই পৌছে দেবে। ড্রাইভারের পাশে দিহান বসেছে আর তার পিছনে রিনি আর মুনির হোসেন।গন্তব্যে পৌছে বাসে উঠিয়ে রিনিকে সিটে বসিয়ে দিলো মুনির হোসেন।পাশে বসে অনেক কিছু বলেও দিলো।দিহান তখন বাইরে কিছু কেনাকাটার জন্য গেছে।দিহান আসতেই মুনির হোসেন উঠে দাড়ালো।

— নাও দিহান বসে পরো। আমার তাড়া আছে তাই বাস ছাড়া অব্দি থাকতে পারলাম না।

— সমস্যা নেই আংকেল।

সৌজন্যমূলক হাসি টেনে বাস থেকে নেমে গেলো মুনির হোসেন ।

দিহান পাশে বসতেই রিনি শক্ত করে দিহানের বাহু চেকে ধরলো।খুশিতে রিনি নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না তা রিনির ঠোঁটের প্রসস্থ হাসির রেখাটা নিকাবের উপর দিয়েও স্পষ্ট। রিনির হাতটা দিহানের বাহু দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে।দিহানের ব্যাথা লাগলেও এখন এই অনুভূতি সুখের।অন্য দিকে ফিরে মুচকি হাসি দিলো দিহান।রিনি চকিতে বড় বড় চোখ করে অভিযোগের সুরে বলে উঠলো

— আমার দিকে ফিরে হাসলে কি হতো?

দিহান রিনির দিকে তাকিয়ে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো
— কিছু না আবার অনেক কিছু।

রিনি মিষ্টি হেসে দিহানের নাক টেনে দিয়ে বললো

— অনেক কিছু হয়ে গেছে।

দিহান চকিতে বলে উঠলো
— এই মানুষ দেখছে তো

রিনি নাক কুচকে বললো
— সরি

— হাত মোজা পা মোজা পরি নি বলে রাগ করলেন?

দিহান হাসলো বেশ সময় নিয়ে হাসলো।রিনির কথার ভিত ধরতে পেরেছে সে।

এরপর সব নিরিবিলি সন্ধ্যা নেমে গেছে ।গাড়ি চলতে শুরু করলো নিজ গতিতে।দিহান রিনির থেকেও বেশি উশখুশ করছে।নিজের অতিরিক্ত খুশি চাপা রাখতে রাখতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে।দিহান নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে নিজের কাজে।এতো বড় একটা ছেলে সে আর যার নিজের উপর এতো কন্ট্রোল সে আজ কিনা হিমসিম খাচ্ছে।নিজের কাজেই খানিক হাসলো দিহান। রিনি তখন বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।রিনির উরুতে রাখা হাতটা দিহান খপ করে ধরলো। রিনি চকিতে দিহানের দিকে ফিরলো।মুচকি মুচকি হাসি যেনো কিছুতেই থামাতে পারছে না সে।আসলে বাইরের দিকে চোখ থাকলেও সে বেশ দেখতে পেয়েছে দিহান রিনির হাতটা ধরতে কতোবার হাত বাড়িয়েও ফিরিয়ে নিয়েছে।

এক ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো

— কি?

দিহানের অপরাধী বাচ্চার মতো মুখ করে বললো

— কিছু না

দিহান তার পাশে থাকা রিনির ডান হাতটা একহাতে ধরে অন্য হাত দিয়ে একটা একটা করে রিনির অাঙুল টানছে কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছে না।আজ তার মনটা বড্ড বেপরোয়া। কিচ্ছু মানতে চাচ্ছে না।তার মনে হচ্ছে সব থেকে ভাগ্যবান মানুষটা সে।নইলে চাঁদের মতো মেয়েটা তার হবে কেন?

— বড্ড বাচ্চা বাচ্চা লাগছে আপনার ব্যবহার

রিনির কথা শুনে দিহান রিনির দিকে তাকায়।এতোক্ষন এক ধ্যানে আঙুলের দিক তাকিয়ে আঙুল টানছিলো সে।রিনির কথা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যায়।বুঝতে পেরে বলে

— এই সময়ে বড় না হওয়া তোমার জন্য মঙ্গলজনক।

— বড় হলেও আমার কোনো প্রবলেম নাই।

দিহান ভাবছে কাকে কি বললো সে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।খুশিতে আজ সব কিছুই উল্টা পাল্টা লাগছে।দিহানের অসস্তি হচ্ছে রিনিকে চুপ করে থাকতে দেখতে।আজ যে তার অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করছে অনেক কিন্তু রিনি কথা বাড়াচ্ছে মা একদমই।নীরবতা ভেঙে দিহান বললো

— কাল আমার মেসেজের রিপ্লাই করলে না কেন?

আসলে এই প্রশ্ন সে করতে চায় নি।সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে তার । তাই কোনো কথা না পেয়ে এটাই বলে বসেছে।

রিনির স্তব্ধ চোখ দেখে দিহান কিছু বুঝতে পারছে না।তবে আন্দাজ করছে যে রিনি হাসছে।

রিনি ঢং করে বললো

— তুমি আমার এতো এতো মেসেজের কোনো রিপ্লাই করলেন না কোনোদিন।আর আমি দুটো মেসেজের রিপ্লাই দেই নি তাতে কৈফিয়ত চাওয়া হচ্ছে?

দিহান অকপটে বললো
— হ্যা হয়েছে থাক।আমায় ধুয়ে দিতে হবে না।

রিনি শব্দ করে হাসলো।

— কিছু খাবে রিনি?

— উহু।আপনাকে দেখে দেখেই আমার পেট ভরে উঠছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here