নিশীথচিত্র পর্ব ২২+২৩

‘নিশীথচিত্র'(২২)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

________

— এই জানো আমারও

দিহানের উত্তেজনা দেখে রিনি বিস্ময়ের চোখে তাকায়
— কি বললেন?

দিহান নড়েচড়ে বসে।এরপর মিনমিনিয়ে বলে

— না মানে কিছু না।

রিনি এক ভ্রু উচিয়ে বলে
–সিওর?

— হু

— হু?

— না মানে আমারও পেট ভরে গেছে।

রিনির চোখে মুখে দুষ্টমি খেলা করছে তাই আর রিনির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না।আবারও রিনির আঙুল টানাটানিতে মনোযোগ দিলো।যেন এই মুহুর্তে এটাই তার জন্য দারুন একটা খেলা।দিহানের কাজে রিনি না হেসে পারে না।হাসতে হাসতেই বলে

— বলতেই পারতেন যে আমায় দেখে পেট ভরে গেছে।মিস্টার প্রেমের কথা অকপটে বলে দিতে হয় জানেন না? আমার মতো (ভাব নিয়ে) একটু থেমে আবার বললো “ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় তাতে।”

দিহানের নিজের গালে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা করছে।আজ মুখে লাগাম নেই কেন আমার? কি হয়ে গেলো।নিজের জন্যই আফসোস লাগছে দিহানের।দিহান মুখ ভাজ দিয়ে বসে রইলো।নিজেকে বড্ড বলদ বলতে ইচ্ছা করছে তার।দিহান প্রসঙ্গ পাল্টে বলে

— ঠান্ডা লাগছে না? চাদর জড়িয়ে নাও।

— না লাগছে না।

— গ্রামে কিন্তু এখনও ঠান্ডা আছে।শীতের পোশাক আদোও এনেছো তো?

— গায়ে পরা আছিরে বাবা।আর চাদরও নিয়ে এসেছি।

— আচ্ছা। কিছু তো খাও কতো কি কিনলাম।
ঠোঁট উল্টে বললো দিহান।ছোট বাচ্চাদের মতো নিঃসংকোচ আবদার।

— আমিও এনেছি অনেক কিছু। আপনি কি কি এনেছেন?

— এই চিপস,কোকাকোলা, চকলেট, কেক, ক্রিসপি চিলি চিকেন।চিন্তা করো না তোমার পছন্দের লেগ পিসই এনেছি।বিরিয়ানিও এনেছি রাতে খাবে না তুমি?আর হ্যা ফুচকাওয়ালাকে আসে পাশে পেলাম না।পেলে নিয়ে আসতাম।টানা কথা গুলো শেষ করে ঠোঁট উল্টে আবার বললো” সরি”।

রিনি ভাবছে এই দিহানটাকে যদি প্রতিদিন পাওয়া যেতো!!!আহঃ যদি পাওয়া যেত!!
ভেতর থেকে একরাশ আক্ষেপের নিশ্বাস বেড়িয়ে এলো রিনির ।দেখা যাবে কালই দিহান ভাই আগের মতো হয়ে যাবে।কেন যে দিহান নিজেকে আড়াল রাখে তার মানে খুজে পায় না রিনি।

রিনির স্থির চোখ দেখে দিহান কিছু বুঝতে পারলো না রিনির ভাবমূর্তি ।

— তোমার খাবার পছন্দ হয় নি রিনি?

— হবে না কেন? তবে বাস জার্নিতে কেউ চিলি চিকেন আনে?আচ্ছা সেটা যখন আনলেন তো আবার বিরিয়ানি কেন আনলেন?

দিহানের মুখ চুপসে গেলো। তাকে দেখে মনে হচ্ছে বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছে।দিহান কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পেরে হাত দুটো শক্ত করে ধরে বললো

— দিহান ভাই প্রবলেম সেটা না, মা একগাদা খাবার দিয়ে দিয়েছে। কোনটা রেখে কোনটা খাবো বলেন তো?

দিহান জোরপূর্বক হাসি টেনে বললো

— আন্টির খাবারই খাও তাহলে।

রিনি নাসূচক মাথা নাড়িয়ে বললো
— উহু

দিহান প্রশ্নবিদ্ধ চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো

— আমি আপনারটা খাবো। আপনি আমার খাবার শেষ করে দিলেই হলো।অবশ্য আপনার জন্যও দিয়ে দিয়েছে তাই ডাবল খাবেন।বেশ চিন্তিত কণ্ঠে আবার বললো” দিপ্তির জন্য নিয়েছেন কিছু? না নিলেও প্রবলেম নেই আমার কেনা বাকি চকলেট চিপস সব ওর।অনেক এনেছি।
রিনি হাসি দিলো।দিহানও হাসলো।কি সুন্দর ম্যানেজ করে ফেলেছে রিনি।তবে দিহান তার বোনের জন্য এক্সট্রা এনেছে।

রিনি খেতে খেতে বললো
— আমার সব পছন্দ মুখস্থ করে ফেলেছেন দেখছি।রিনি আবার টান দিয়ে বললো”লেগপিছ বাব্বাহ ”
দিহান নতজানু হয়ে মাথা চুলকালো মাত্র।

রাত আটটা বাজে কিন্তু মনে হচ্ছে অনেকরাত।রিনি কিছুক্ষণ পর পর একটা সেটা খাচ্ছে।দিহানকেও জোর করে খাওয়াচ্ছে।বাচ্চাদের মতো এটা সেটা খাওয়ার অভ্যাস নেই দিহানের একদম।কিন্তু রিনি মুখে তুলে দিচ্ছে বলে আজ সব অমৃত।

কিছুক্ষণ বাদে মুনির হোসেনের ফোন আসে দিহানের ফোনে।মুনির হোসেনের গলা উদ্বেগ শোনালো দিহানের কানে।

— কিছু হয়েছে আংকেল?

— আসলে রিনির যে কাকা গ্রামে থাকে সে আজ সকালের দিকে নাকি ঢাকা বেড়ানোর জন্য রওনা দিছিলো।আমাদের জানায় নি আর আমরাও তো জানায়নি যে রিনি যাচ্ছে।বড় ভাইকে কল দিলাম সে বলে আমরা তোদের বাসার গেটের সামনে।কি ঝামেলায় পরলাম বাবা! রিনিটা এখন কই থাকবে?

দিহানের মনে ভয় জাগলো।রিনিকে আবার পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলবে না তো?দিহান তরিঘরি করে বললো

— আংকেল আমার বোন আছে রিনির বয়সী। আমি ছাড়া বাইরের আর কোনো ছেলে পেলেও নেই আমাদের ঘরে। রিনির কোনো প্রবলেম হবে না।

— তবুও বাবা।কেমন দেখায় বলো? আমি কাল গাড়ি পাঠিয়ে দেবো।রিনিকে নিয়ে আসবে।

দিহানের কানের সাথে কান ঘেষে সব কথাই শুনছিলো রিনি।মুনির হোসেনের শেষ কথাটা শুনেই শক্ত করে চেপে ধরলো দিহানের বাহু।মাথা নাড়িয়ে জানালো সে যেতে চায় না।বাসের নীল লাইটের আবসা আলোয় রিনির চোখজোড়া করুণ দেখালো দিহানের কাছে।দিহানও কি যেতে দিতে চায় নাকি? একদম না।কিন্তু কি বলবে?এমন ভাবে মস্তিষ্কশূন্য হয়ে পরে নি সে কখনো। অতিরিক্ত ভয়ের কারণে এমন হচ্ছে।তবুও কিছু তো বলতে হবে

— না মানে আংকেল আমার মা খুব রাগ করবে।আপনারা আমাকে কতো সাহায্য করেছেন।আর আপনার মেয়ে আমাদের বাড়ি এসে পৌছানোর আগেই যদি নিয়ে যান। মা খুব রাগ করবে।বাবাও রাগ করবে।আপনার বেশি চিন্তা হলে আমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলে নিবেন? রিনির কোনো প্রবলেম হবে না কথা দিচ্ছি।

মুনির হোসেন চিন্তামুক্ত হলেন।অন্যের বাসায় বলা কওয়া ছাড়া তো চাপিয়ে দেয়া যায় না।দেখায় কেমন সেটা?এছাড়া পরাপর কয়দিন খুব কাজের চাপ।গাড়ি ছাড়া চলবে না তার একদম।তাই ই ফোন দিয়ে অবস্থা বুঝে নিলো।

— আচ্ছা বাবা। আমি তোমার আব্বার সাথে কথা বলবো।

ফোন কাটতেই দিহান শক্ত করে রিনিকে এক হাতে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।সত্যি বলতে তার খুব ভয় হচ্ছিলো।এতো খুশিরা নিমিষেই মরে যেত,নির্জীব হয়ে যেতো অনুভূতিরা।মুনির হোসেনের সাথে কথা বলার সময়ই ভয়ে তার অনুভূতিরা ভোতা হয়ে এসেছিলো।।ভাবতে ভাবতেই রিনির মাথার উপরে চুমু খেলো।
রিনিও ঘাপটি মেরে আছে নড়ছে না।আস্তে করে বললো
–দিহান সাহেব কি আমার থেকেও বেশি ভয় পেয়েছিলেন?

দিহান হতজ্ঞান হয়ে গেলো।চকিতে রিনিকে ছেড়ে দিয়ে খুক খুক করে কাশতে কাশতে সোজা হয়ে বসলো।

বাসের জানালায় শাই শাই করে বাতাসের আওয়াজ আসছে।দিহান রিনি বসেছিলো বাসের মধ্য দিকের সিটে।আশ পাশ সব নিরিবিলি।কয়েকজনের গলার হালকা আওয়াজ আসছে। দিহানের কিছুটা সামনের লাইটটা অফ হয়ে গেলো।এখন একদম সামনের লাইটটা জ্বলছে আর পিছনের।রিনি তৎক্ষণাৎ খপ করে দিহানকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর রিনি নিশ্চিন্তে ঘুম।আর এদিকে দিহানের মনে হচ্ছে জানালায় আছড়ে পরা শাই শাই বাতাসের মতোই তার শিরদাঁড়া দিয়েও কিছু একটা বয়ে যাচ্ছে।এই মনে হচ্ছে রক্ত টগবগ করে ফুটছে এই মনে হচ্ছে শীতল রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে।কি অদ্ভুত অনুভূতি হানা দিচ্ছে হৃদপিণ্ডের দরজায়।কি ভালোলাগা! কি মিষ্টি অসস্তি! কি উদ্বিগ্নতা!মাঝে মাঝে মনে হয় সে ভালোবাসার কাছেই বড্ড কিংকর্তব্যবিমূঢ় । আসলে ভালোবাসার কাছে প্রত্যেকটা মানুষ অসহায়। একবার ভালোবাসা ধরা দিলে সেখানে ভালোবাসারই রাজত্ব। রীতি নীতি, নিয়মকানুন, বাধা বিপত্তি,ধর্ম বর্ণ,জাতপাত সব হার মানতে বাধ্য ছোট্ট একটা শব্দের কাছে।”ভালোবাসা”
দিহানও একদমই তার প্রতিকূলে নয়।

ঘন্টার পর ঘন্টা যাচ্ছে দিহান ঘুমাতে পারছে না।রিনি কতোক্ষন বুকে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে তো কতোক্ষন মাথা বুক থেকে খশে দিহানের পেটে পরছে।কিন্তু পেটে স্থায়ী হচ্ছে না মাথাটা। দিহানের উরূর উপর পরে যাচ্ছে আর এতে শরীর ব্যাকা হয়ে যাওয়ার কারনে রিনির শরীর ব্যাথা করবে ভেবে আবার মাথা খানা উঠিয়ে বুকে রাখছে দিহান।দিহানের বেশ আফসোস হচ্ছে।তার একটা ভূরিওয়ালা পেট নেই কেন? থাকলে রিনি অনায়াসে পেটে মাথা দিয়ে ঘুমাতে পারতো।বড্ড আফসোস হচ্ছে।দিহান নিজেকে নিজেই শান্তনা দিলো এটা ভেবে যে “বুড়ো হলে তো পেট বাড়বে।তখন তার রিনি দিব্যি তার পেটে মাথা দিয়ে ঘুমাতে পারবে”
আচ্ছা তখনও কি উত্তপ্ত শীতল অনুভূতিগুলো একসাথে হানা দেবে এখন যেমন দেয়?

আজ দিহান নেগেটিভ কোনো ভাবনাই ভাবতে পারছে না।

আরও ঘন্টা খানেক কেটে গেলো। রাত বারোটা ছুই ছুই।দিহান এক মিনিটের জন্যও ঘুমায় নি।প্রেয়সীকে বুকে নিয়ে সুখ অনুভব করাই শ্রেয়, ঘুমানোটা নিতান্তই বোকামির সামিল। দিহান একদমই সেই বোকামি করে নি।রিনি আড়মোড়া দিলো।ঘুম ভাংলো বোধহয়। দিহান চুপচাপ করে চোখ বুজে আছে কোনো নড়াচড়া করছে না।রিনি উঠে অনুভব করলো দিহানের এক হাত তার কোমড় আটকে আছে।হয়তো পরে না যায় তাই ধরে রেখেছিলো। অজানা অনুভূতিগুলো আবার নাড়া দিলো তার।হৃদয়ের গভীনে শীতল এক অনুভূতি। বুক ঢিপ ঢিপ করছে তার।ইশ কেন ঘুমালো কতোগুলো সময় নষ্ট হয়ে গেলো।ফোন অপেন করে দেখলো বারোটা এখনও বাজে নি।পৌছাতে পৌছাতে আজান দিবে।দিহানের মুখের সামনে কয় এক বার হাত নাড়লো।নাহ তার মতে দিহান গভীর ঘুম। ফোন ব্যাগে রেখে আস্তে আস্তে দিহানের সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিলো।নিষিদ্ধ ইচ্ছারা শক্তিশালী হয়ে উঠছে বার বার।উপেক্ষা করতে পারছে না কিছুতেই

দিহান তার মুখের খুব কাছে গরম নিশ্বাস আছড়ে পরছে তা অনুভব করতে পারছে।তাতেও নড়চড় নেই তার কোনো। সে দেখতে চায় রিনি কি করে।তবে রিনি যা করলো দিহান অবাক। দিহানের অধরে খুব সাবধানে আলতো করে অধর ছুইয়ে দিলো।সরেও গেলো সাথে সাথে। আবারও বেশ কয়বার এমন করার পর নিজেই থরথর করে কাপছে রিনি।সোজা হয়ে বসলো।তার কোমড়ে এখনও দিহানের হাত।হঠাৎ কোমড় শক্ত করে চেপে ধরায় রিনি চকিতে তাকায় দিহানের দিকে। দিহানের চোখ এখনও বোজা। কিন্তু রিনি বুঝতে পারছে দিহান ঘুমায় নি। তাহলে কি অভিনয় করলো?

রিনি অপরাধীর মতো মুখ করে বললো
— আপনি ঘুমান নি?

দিহান চোখ বুজেই ফিসফিস করে বললো

— উহু। নিকাব পরা অবস্থায় চুমু আমিই প্রথম খেলাম কিনা তাই ভাবছি।

রিনির মুখখানা চুপসে ছোট হয়ে গেলো।
পরক্ষণেই,

চলবে

✔’নিশীথচিত্র'(২৩)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

______________

দিহান রিনির হাত ধরে নামছে।বাইরে পুরোপুরি অন্ধকার।পক্ষীকূলের কোনো এক পাখি সমান তালে ডেকে যাচ্ছে। বাস দিয়ে নামার সময় দেখেছে ৫টা বাজে।ভাগ্যক্রমে এই বাস স্ট্যান্ডে আর চেনা পরিচিত কেউ ই নামে নি।নাহলে মিথ্যার ঝুড়ি খুলে বসতে হতো তার আর মিথ্যা বলাটা তার কাছে চরম বিরক্তির বিষয় বৈকি দিহান মিথ্যা বলতে পছন্দও করে না।এখন কথা হলো খুব ভাগ্য ভালো হলে ভ্যান পেতেও পারে আবার নাও পেতে পারে।এই সময়ে বাস আসে যেহেতু পেটের দায়ে বেশি ভাড়া পাবার সুবাদে গুটিকয়েক ভ্যান ওয়ালা হাজির হয়।তবে আজ তারা আগে পৌছেছে বিধায় না পাবার সম্ভাবনাটাই বেশি বেশি উকি দিচ্ছে ।এতোটা রাস্তা জার্নি করে দীর্ঘ রাস্তা হেটে যাওয়া সম্ভবপর নয়।একা হলে ভাবতো না কিন্তু সাথে যে রিনি।মেয়েটা সারা রাত ফিসফাস করে কথা বলে এখন আবার ঘুমে ঢুলুঢুলু করছে এই অবস্থায় হাটবে কিভাবে?

— রিনি ঘুম পাচ্ছে বেশি?

রিনি নড়েচড়ে দাড়ায়।শব্দ করে হাই তুলে বলে
— না দিহান ভাই।আম ওকে।

–ভ্যান দেখছি না কোনো।হাটতে হবে। কথাটা বলে দিহান আটকে থাকা শ্বাসটা দ্রুত ছাড়লো।

রিনির মুখটা ভোতা হয়ে গেলো।এতো রাতে হাটা? কিভাবে সম্ভব?রিনি মনকে শান্তনা দিয়ে বললো এটাও তার প্রেমের একটা নতুন এক্সপেরিয়েন্স হবে, বাচ্চাগাচ্চা নাতিপুতিকে শুনাতে পারবে সে তার দিহান ভাইকে কতোটা ভালোবাসতো। দিহান ভাই বললে আমি পঁচা লেকে ঝাপ দেবো আর এটা তো সামান্য ব্যাপার। কথাটা রিনি জোরে বলতে নিয়েও বললো না।শেষমেষ সত্যিই যদি ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে পঁচা লেকে ঝাপ দিতে হয়?সাতারও জানে না সে।ঠোঁট উল্টায় রিনি।

রিনি কথাটা এভাবে বললো

— না মর্নিং ওয়াক করতে আমার কোনো প্রবলেম নেই।এইটা তো আরও শরীরের জন্য উপকারী।

দিহান অবাক হয় রিনির অপ্রতিভ কথা বার্তা শুনে।

— হ্যা অনেক পারছো।হাটা দাও তাহলে।কষ্ট হলে পিঠের ব্যাগ টাও দাও। দেবে নাকি?

— ক্যানো দিহান ভাই পেটেও ঝুলানোর ইচ্ছা আছে নাকি?

— মানে?

— মানে পিঠে আপনার ব্যাগ, ডান হাতে আমার ব্যাগ,বাম হাত আমি ধরবো।তাহলে আমার পিঠের ব্যাগ টা নিশ্চই আপনি সামনে ঝুলাবেন।

— এতো বড়ো বুড়ি মেয়ের হাত কেন ধরতে হবে?বাম হাতে তোমার ব্যাগ নেবো।

— এমা আপনি বোকা নাকি?যদি আমায় ভূতে ধরে!!!এমন কুচকুচে অন্ধকার!!
আমি হাত না ধরে হাটবো না।রিনি যে অনড় তার ডিসিশনে তা বুঝতে পারে দিহান।তবুও বলে

— কই হালকা নীলচে আভা ফুটছে তো।এই সময় ভূত আসবে না।

রিনির মেজাজ খারাপ করার মতো মুখ করে বললো
— উহ দিহান ভাই তবুও।দেখেন না আমি সুন্দরী। যদি কোনো ভুতের আমাকে পছন্দ হয়ে যায়? তখন?

কথা টা বলে রিনি ঠোঁট উল্টে ফেললো।দিহানের মনে হলো আহা! কি অবুঝ মুখ খানা। আসলে যে কি চিজ!!

দিহান ব্যঙ্গ সুরে বললো

— আসছে আমার পাটকাঠি। এরপর বিরবির করে বললো জীন ভূত কি আমার মতো বলদ নাকি যে এমন পাটকাঠি কে পছন্দ করবে “।কথাটা বলে জীভ কাটলো দিহান।

ভাগ্যক্রমে রিনি শুনেছে “জীন ভূত কি বলদ নাকি যে এমন পাটকাঠিকে পছন্দ করবে”
রিনি বিস্ফরিত চোখে তাকায়।উচ্চস্বরে বলে
–কি বললেন আপনি? আমি এতো অযোগ্য? আমার গায়ে সাত কেজি ওজন বেড়েছে আগের থেকে আর আপনি আমাকে তবুও

— আরে রিনি আস্তে, বাজারের মানুষ জাগিয়ে আমাকে মার খাওয়ানোর প্লান আছে নাকি?আস্তে কথা বলো

মুখের সামনে আঙুল দিয়ে দুইবার হুস হুস করে থামতে বললো দিহান।
দিহান এক হাতে রিনিকে কাছে টেনে নিলো কানের কাছে ফিসফাস করে বললো

— তুমি পাটকাঠি না।তুমি আমার নিনিপাখি হয়েছে?এই ধরলাম তোমার হাত এবার চলো

রিনির রাগের অনল থেমে গেলো।খুশিতে গদগদ অবস্থা।দুই হাতে দিহানকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
এরপরই রিনির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।গজগজ করতে করতে বললো

–এতো লম্বা কেন আপনি চাইলেই ঘাড় মুখ দিতে পারেন আমি পারি না।কেন এই অধিকার থেকে আমি বঞ্চিত হবো??মুভিতে ছেলেরা গ্রীবায় মুখ গোজে আর মেয়েরা লজ্জা পায়, সুরসুরি পায়,কেমন কেমন করে।আমি আর একটু লম্বা হলে আপনার কন্ঠে মুখ গুজতাম আর আপনি লজ্জায় লাল, নীল, কালচে হয়ে যেতেন আহা সে কি অমায়িক দৃশ্য।

রিনির ভাবনার মধ্যে দিহান তুরি বাজালো।

— আমি লজ্জায় লাল হবো? সিরিয়াসলি?লাল মানলাম কালচে? লজ্জায়? ও মাই গড কবিদের প্রবাদই পাল্টে দিচ্ছো তুমি।হাটো হাটো আর একটাও কথা না।অতিরিক্ত কথা বলো তুমি। মুখও কি ব্যাথা হয় না নাকি হ্যা?

— আপনিও তো বলেন হুহ।

— হ্যা তাই ই দেখছি। তোমার সাথে একরাত কাটিয়েই আমি বাচাল বনে গেছি।সারাজীবন গেলে…
দিহান বাক্যটার ইতি টানে না।

রিনির অভিমান হলো সে দূরত্ব রেখে হাটছে। বলবে না কথা একদমই বলবে না।আদর করে মানিয়ে নিলে কথা বলবে।রিনি ফোসফোস করছে আর বিড়বিড় করছে।

দিহান আচমকা বললো
— রিনি তোমার পাশে ভূত।

রিনি এদিক সেদিক না তাকিয়েই চিৎকার দিয়ে দিহানের কাছে এলো। দিহান নিকাবটা উঠিয়ে নাক টিপে দিলো।অভয় দিয়ে বললো ভূত নেই।

— মিথ্যা বললেন? ভয় পেয়েছি হুহ।

দিহান রিনির অপর পাশের কাধে হাত দিয়ে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো।এরপর আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলো।একটা ভ্যান পেলে সত্যিই ভালো হতো।ইতিমধ্যে রিনি দিহানের বামবক্ষের প্বার্শদেশে মুখ গুজে চোখ বন্ধ করে হাটছে।নিঃসন্দেহে দিহানের দৃষ্টি তার জন্য যথেষ্ট। তাই ঘুম ঘুম চোখখানা মেলে রেখে কষ্ট করতে চাইছে না।

টানা বিশ মিনিট হাটার পরে দূর থেকে একটা আলোর ঝলকানি দেখা গেলো। দিহান আল্লাহ আল্লাহ করে বলছে অটো ভ্যান হয় যেনো।রিনিকে টেনে দাড় করালো।নিকাব টেনে মুখ ঢেকে দিলো।সাবধান কণ্ঠে বললো

— একটাও কথা বলবা না তুমি কেমন?

আলোটা কাছে আসতেই বোঝা গেলো এটা ভ্যান গাড়িই।গাড়িটা দিহানের সামনেই থেমে গেলো।
একজন বয়স্ক পুরুষালি কন্ঠ বলে উঠলো
— যাইবেন?

— জি দাদু।

— ওইঠা পরেন তাইলে। সাথে কেঠায়?
দিহান আড়ষ্ট কন্ঠে বললো
— আমার নানি হয় ।

রিনি চোখ বড় বড় করে তাকায়।এটা কি বললো? একবারে নানি বানিয়ে দিলো?বয়স্ক লোকটা আর কথা বাড়ায় নি।চটজলদি গাড়িতে উঠতে বললো।দিহান রিনিকে বসিয়ে দিয়ে ব্যাগ পত্র রেখে দিহানও বসে পরে।রিনির ঘুম পাচ্ছে । দিহান রিনির কাধ আকড়ে ধরতেই রিনির মাথা গিয়ে ঠেকলো দিহানের কাধে।

— আইজ মনে কয় গাড়ি তাড়াতাড়ি আইছে!

দিহান চকিতে উত্তর দেয়

— হ্যা হ্যা

মিনিট বিশেক যেতেই পৌছে গেলো গন্তব্যে । এখান থেকে পাঁচ ছয় মিনিট হেটে বাসায় যাবে। এ রাস্তায় গাড়ি চলে না একটা ইট দিয়ে বাধানো সরু চিকন রাস্তা।অন্ধকারে রিনি তেমন খেয়াল করতে পারলো না আশপাশ।দূর থেকে একটা কুকুর হাকডাক দিচ্ছে থেমে থেমে । দিহান টিনের তৈরি গেট টা খুলতে হাত লাগাবে তার আগেই ফিরোজ দরজাটা খুললো।মসজিদে নামাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো সে।দিহান সালাম দিলো সাথে সাথে রিনির আঙুল ধরেও চিমটি কাটলো। রিনিও চকিতে সালাম প্রদান করলো। সালামের উত্তর দিয়ে রিনির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ফিরোজ।।
–মা বেশি কষ্ট হয়েছে?
— না আংকেল।

রিনি হাফ ছেড়ে বাচে। ভাগ্যিস চিমটি দিয়েছিলো।সালাম না দেওয়ায় হবু শশুড় অসভ্য ভাবতো যদি?ঘুমু ঘুমু চোখ নিয়ে এতো কিছু খেয়াল ছিলো না তার।কিন্তু চিমটি খেয়ে ঘুম উড়ে গেছে একেবারেই।

ফিরোজ হাক দিয়ে ডাক পারে হাফসাকে

— হাফসা দিহান এসে গেছে। আমি নামাজে গেলাম।

দিহানও ঘরের দিকে পা বাড়ায় রিনিকে নিয়ে।দিপ্তি দরজার সামনে একরাশ উৎসুক মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।তাকিয়ে আছে রিনির নিকাবে ঢাকা মুখ খানার দিকে।তার মন শত শত প্রশ্ন নিয়ে উশখুশ করছে।শহুরে মেয়ে তাকে পাত্তা দেবে তো?হাবিঝাবি হাজারো চিন্তা তার মাথায় চরকির মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। সিড়ি ভেঙে উঠতে উঠতে দিহান প্রশ্নবিদ্ধ চোখ নিয়ে দিপ্তিকে বলে
— হ্যা রে দিপ্তু তুই এতো সকালে উঠিস?

পেছন থেকে হাফসার গলা পাওয়া যায়

— আরে তুই আসবি বলে রাতে ঘুমায়ই নি ও।

দিহান বুঝতে পারে এটা রিনিকে দেখার তাড়া।রিনি ঘরে উঠে হাফসাকে জড়িয়ে ধরে সালাম দেয়।হাফসা খানিক অবাক হয়।বিস্ময়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।দিহান স্মিত হাসে।দিপ্তির মনেও হালকা প্রশান্তির আভাস মেলে।মেয়েটা তাহলে অহংকারী না।আর এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার রাতের ঘুমই হলো না উত্তেজনায়।

রিনি বললো
— দিহান ভাই বলেছে পায়ে সালাম দিতে নেই।তাই জড়িয়ে ধরে সালাম দিলাম।আপনি কিছু মনে করেন নি তো আন্টি?
হাফসা হাসি দিয়ে মাথায় হাত বুলায়।
— আমি খুব খুশি হয়েছি মা।নাম কি তোমার?
— রিনি।রাইনাতুন্নেসা রিনি।

— মাশাল্লাহ নিকাব টা উঠাও মা।এখন আর নিকাব পরে থাকতে হবে না।

রিনি নিকাব খানা উঠায়।দিপ্তির মুখ হা হয়ে যায়।শীতের কারনে মুখ ঘামায় নি ঠিক কিন্তু জার্নির রেশ পরেছে।তবুও কি সুন্দর লাগছে।নইলে গবেট ভাইটা কেন প্রেমে পরবে।মিরা আপু মরে গেলো ভালোবাসি বলতে বলতে তাও রাজী হলো না।কিন্তু মিরা আপুও তো সুন্দর অন্যরকম সুন্দর।

এর মধ্যে হাফসা রিনির কপালে চুমু খেয়েছে তা সে দেখেও ভাবনায় মত্ত হয়ে আছে।হাফসা রুমে চলে গেলো নামাজ আদায় করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে একদমই।কখন যে রিনি তার সামনে এসেছে খেয়াল নেই মোটেই।রিনি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো দিপ্তিকে।দিপ্তির মন পুলকিত হলো।এতো টা আশা করে নি।আশা না রাখলেই বুঝি বেশি পাওয়া যায়?রিনি দিপ্তির কানে কানে বললো

— আমি কিন্তু তোমার একমাত্র ভাবী।
এরপরেই খিলখিল হাসির শব্দ।দিপ্তির চোখ খানা বড় হয়ে যায়।

— কি বলা হচ্ছে আমার বোনকে?

রিনি চকিতে উত্তর দেয়

— ননদ ভাবীর মধ্যের কথা আপনাকে কেন বলবো?

দিপ্তি খুব কষ্টে হাসে।মেয়েটা এতোটা চটপটে!!দিপ্তি হলে তো ভয়ে হাটু কাপতো।আর এ কত সোজাসাপ্টা বলছে।

দিহান বলে

— ভাবী কখন হলে?

— হতে কতক্ষণ?

দিহান পেরে উঠবে না জানে।আজ রাতে যা হয়েছে তারপর রিনিকে ধমকাতে পারবে না মোটেই।দু তিনদিন যাক।কেন যে আজ হাবলা হয়ে গেলাম???কথাটা ভেবে দিহানই প্রশ্নবিদ্ধ হয় নিজের কাছে।এটাকে হাবলামি বলে নাকি রোম্যান্টিকতা বলে?দিহান মাথা চুলকাতে চুলকাতে প্রস্থান করে।দিপ্তি রিনির ব্যাগ নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

_____________

নাক মুখ ধুয়ে আসন কুটে বসে রিনি। দিপ্তি বিছানাতেই বসা।গুরগুর চোখ করে রিনিকে দেখছে।তার ভাইয়ের পাগল হবার যথেষ্ট কারণ আছে।নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছে। শরীর, ফিটনেস,কাটাকাটা হাত পা, কোমড়ের ভাজ,গলা হাড় সব কিছুই যেন ক্ষনে উজ্জীবিত হচ্ছে।দীপ্তির মুগ্ধতা তার চোখ ঠিকরে পরছে কিন্তু প্রকাশ করা যাবে না চেপে রাখতে হবে।যদি গাইয়া ভাবে এভাবে তাকাতে দেখে?এমন হাজারো প্রশ্ন তার মনে।যতই হোক মেয়ে মানুষ তো।নিজের থেকে সুন্দর কোনো মেয়ে দেখলে তাকাবেই।একটা ছেলের থেকেও বেশিই খেয়াল করতে পারে একটা মেয়ে।খুটিয়ে খুটিয়ে দীপ্তিও দেখছে।হোক নিজের সাথে তুলনা বা মুগ্ধতা।

দীপ্তি নিজে থেকে মিশতে পারে না কারো সাথে।তাই ই এতো সংকোচবোখ।সংকোচের অদৃশ্য দেয়াল ঘিরে ধরে থাকে তাকে।তাই তো তনয়ের সাথে একবার কথা হয়েছে মাত্র।তনয় তাকে জানিয়ে দিয়েছে দ্বিতীয় বার কথা হবে দীপ্তি ফোন দিলে।দীপ্তির রাগ হয় বেশ।সে যা পারে না সবাই সেটাই কেন তাকে ধরিয়ে দেয়?হাতে ফোন নিয়ে রাত পার হয়ে যায় কিন্তু ফোন করা হয় নাহ আর।নিজের মধ্য থেকে চাপা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে।

রিনির দীপ্তির কাধ ধরে হালকা ঝাকি দেয়।

— কিছু ভাবছো?

— না না

— মন খুলে কথা বলতে হয় জানো তো? চেপে রাখা খুব খারপ।আমি চেপে রাখি না কখনও।কিন্তু তোমার ভাইয়ের যা সভাব?কবে আমিই চেপে যাই।আচ্ছা আমি তোমায় নাম ধরে ডাকতে পারি?

রিনির চটপট কথায় দীপ্তি ভেবে পায় না কি উত্তর দেবে।উত্তরটা তো কঠিন না।আস্তে করে মাথা দুলিয়ে বলে
— হ্যা।

রিনি মন খারাপ হয়।তার ননদ কি তার সাথে মিশতে চায় না? পছন্দ হয় নি তাকে? বাথরুমে গিয়ে হাজার বার আয়নায় দেখেছে নিজেকে।নাহ খারাপ লাগেনি।কিন্তু ননদটা কথা বলতেই চাচ্ছে না যেন!!

— তোমার কি আমায় পছন্দ হয় নি? বা আমার কোনো কথা খারাপ ভাবে নিয়েছো?

দীপ্তি মোটেই চায় না তার সম্মন্ধে কেই ভুল ধারনা পোষণ করুক।দীপ্তি মিনমিন করে বলে

— আসলে আমি সহজে মিশতে পারি না।একটু সময় লাগে।

রিনি উচ্চশব্দে হাসে
— তাহলে তোমার দায়িত্ব আমার।

দীপ্তিও হাসে সত্যি বলতে তার খুবই ভালো লাগছে।

রিনি দীপ্তিকে একটা করে কসমেটিকস জামাকাপড় বের করে দেখাচ্ছে।দেখানো শেষ হতে বলে

— এগুলো তোমার।

দীপ্তি অবাক হয়। এইটুকুন মেয়ে তার জন্য? দুটো জামা, কি কি কসমেটিকস এনে হাজির করলো।বেশ লজ্জা লাগছে সে তো কিছু কিনে নি!! তাহলে নেয় কি করে?

— আরে না থাক

— ধুরো। তুমি বেশিই লজ্জা পাও। আমি হচ্ছি তোমার একমাত্র ভাবী। সম্পর্কে তুমি আমার ছোট। বয়সের টা জানি না।ছোটদের আদর করতে হয় জানো না? আমিও আদর করলাম। চকলেট ও এনেছি অনেক।তোমার ভাইও কি কি যেনো এনেছে।

রিনির বাচনভঙ্গি দেখে হেসে দেয় দীপ্তি।

— কি হলো নিবে না? প্লিজ নাও।লাগলে পরে আমি তোমার কাছ থেকে চেয়ে চুয়ে গিফট নেবো হবে তো?

দীপ্তি হেসে বলে
— খুব হবে।

______________

দীপ্তি রিনি শুয়ে পরে। হরেক রকমের খোশ গল্পে মেতে ওঠে দুজন।দীপ্তির আব্দারে রিনি তার ক্ষুদ্র ভালোবাসার গল্পটাও বলতে শুরু করে।শেষ পর্যায় দীপ্তি বলে

— এই রিনি আমার মনে হচ্ছে তুমি অনেক কিছু চাপিয়ে যাচ্ছো

— মানে?

— মানে হলো অনেক কিছু গ্যাপ দিয়ে যাচ্ছো।

রিনির মুখে লালচে আভা ফুটে ওঠে
— ধুর ওসব তোমায় কেন বলবো।

দীপ্তি আগ্রহ পায়।
–এই বলো না প্লিজ।

— তোমার ভাই আমায় থাপড়াবে।

— প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

রিনি ইতস্ততবোধ করে।আবার বলে
–তোমার ভাইয়ের সিক্রেট তোমায় বললে তার মান ইজ্জত থাকবে নাকি?

— ওর যে মান ইজ্জত গেছে ও জানবেই না।

— তবুও।

— উহ তুমি বলো না।নইলে যা হয়েছে তার থেকেই বেশি ভেবে ফেলবো। বিষয়টা আরও লজ্জা জনক।বলো না বাসে তারপর কি হলো

রিনি দায়সাড়া ভাবে বলে
— কি আবার হলো তোমার ভাই আমাকে অবাক করে দিলো।
দীপ্তি ঠোঁট উল্টে বলে
— তুমি বলবা?

রিনি লজ্জায় কুকড়িয়ে যায়।সে দিহান ভাইয়ের সাথে যা অকাজ কুকাজ আগ বাড়িয়ে করেছে তা বলা যায়।মেয়ে মানুষ আরও তো সমবয়সী। কিন্তু তারই ছোট বোনের কাছে তার ভাই কি কি করছে তা কিভাবে বলে?রিনি ভেবে পায় না।

— থাক ঘুমাও সারারাত ঘুমাও নি।

— তুমিও তো ঘুমাও নি।বলো না প্লিজ রিনি।

রিনি কোলবালিশটা গায়ের উপর নিয়ে দুই পা দিয়ে চেপে কোলবালিশেই মুখ গুজলো
— ঐ

— কি ঐ?

— নিকাব উঠিয়ে সে

— কি সে?

— বুঝে নাও।

দীপ্তির ভাবতেই কেমন কেমন করে উঠলো।তুতলিয়ে বললো
— লি লি লিপকিস?

— হু।আরও অনেক কিছু

রিনি আর মুখ ঘুরে তাকায় না দীপ্তির দিকে।আস্তে করে বলে
— আমার লজ্জা লাগছে আর ডেকো না।

দীপ্তিও তাই করলো। নিজের কান ই ভো ভো করছে তার।আসলেই মেয়েটার লজ্জা আছে।যতটা আধুনিক ভেবেছে ততটা না।আধুনিকতায় লজ্জাসরম অন্তত ভুলে যায় নি।যাক সব মিলিয়ে বেশ ভালো লেগেছে।হঠাৎ করে মনে পরে যায় তনয় ভাই যদি এভাবে ছুয়ে দেয়? পরক্ষণেই নিজের ভাবনাকে নিজের চাপা দেয়।লজ্জায় মাথা ভনভনানি বাড়ছে তার।সকালের আলো ফুটছে ক্ষণে ক্ষণেই। সূর্যের লালচে আভা প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দিচ্ছে।ভালোবাসারাও বুঝি এভাবে ছড়িয়ে যায় মনের অন্দরমহলে ক্ষনে ক্ষনে, ধীরে ধীরে, ক্রমে ক্রমে ?

_____________

দিহান ঘুমাতে পারছে না।কি করলো আজ?এমনটা সে করেছে?ডুবে গেলো ভাবনার গহীনে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here