নিশীথচিত্র পর্ব ৩২+৩৩

‘নিশীথচিত্র'(৩২)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

____________

তেজী রোদে পুকুরের পানি চিকচিক করছে। দীপ্তি রিনি পা ভিজিয়ে বসে আছে।ঘাটের শানে বসে আছে হাফসা দিহান।ফিরোজ তার দোকানে বসে। এক কথা দুই কথা এভাবেই সবার কথা আগাচ্ছে। দিহান বললো
–“আম্মা ঘর তো মোটামুটি ভালোই কমপ্লিট। আব্বার ব্যাবসাও ভালোই চলছে।কিছু টাকা বেতন দিয়ে দোকানে একটা ছেলে রাখলে ভালো হয় না? আব্বা শুধু বসে থাকলো,দেখাশুনা করলো।”

–“তোমার আব্বা আসলে তারেই বলো।”

–“আচ্ছা সেটাই করবো।আম্মা আমরা পাঁচ ছয় দিন আছি আর।আর দীপ্তিকে একসাথে নিয়ে যাবো,পড়াশুনা শুরু করুক।”

হাফসা কিছু বলার আগে রিনি লম্বা টান দিয়ে বলে
–“মাত্র পাঁচ ছয় দিন থাকবো আর?না দিহান ভাই আরও থাকবো।মা বাবাকে বলছি আমাদের আসতে আরও দশ পনেরো দিন।”

–“মাথায় ডিস্টার্ব? আমার হাতে কয়টা টিউশনি এসেছে, ছাড়া যাবে না।আগের দুজনও পড়বে করে বার বার ফোন দিচ্ছে।তোমরা তো এসএসসি পাস দিয়েই এমন ভাব মেরে আছো যেনো লেখাপড়া শেষ। ওরা বসে নেই বুঝছো?”

— “কয়দিনই বা হলো পরীক্ষা শেষ হইছে?কয়দিন বিশ দিন? আরও একমাস বিন্দাস মজা করবো।”

–“ঢাকা যাই মজা গুলে গুলে খাওয়াবো।”

রিনি ফ্যাচফ্যাচ করে বললো
–“আন্টি দেখছেন?আমাকে তাড়ানোর প্লান।”

হাফসা হেসে বললো
–“আরে ও বললেই কি হয়ে গেলো? আমার আম্মাজানকে আমি রেখে দেবো।”

রিনি দিহানের দিকে চোখ দিয়ে ইশারায় বুঝালো”দেখছেন? ”

দিহান মাথা হাস্যমুখ নিয়ে মাথা নাড়ায়।

রিনি দীপ্তি হাসাহাসি করছে কোনো একটা বিষয় নিয়ে।হাফসা নিচু কন্ঠে বলে
–“দিহান আমি বলি কি দীপ্তি গেলে তোরা নিজেরাই রান্না করে খাবি কেমন?তোর একার খাওয়া না হয় খাওয়াতো দুজন খাওয়ালে তারা কষ্ট ঠেকতে পারে না?”

–“আম্মা তা আমি আগেই ভেবে রেখেছি।”

হাফসা চলে যায়। রিনি কোমড় ভিজিয়ে বসে থাকে।দীপ্তি সাতার কাটছে। বাড়ির চারপাশ ভালোভাবে বেড়া দেয়া। দুই পাশেই আবার ছোট খাল।কারো উঁকি ঝুকি দেয়ার টেনশন নেই। দিহান নামবে নামবে ভাবে।সকাল থেকে রিনি একশ বার বলেছে সাতার শিখাতে হবে। দিহানের নারিকেল গাছ পর্যবেক্ষন করছে।নারিকেল গাছে ডাব আছে কিনা সেটাই দেখছে, কাউকে দিয়ে পারতে হবে।এর মধ্যে ধুপ্পুস করে শব্দ হলো।দিহান তেমন খেয়াল করলো না।মনযোগ দিয়ে প্রত্যেকটা নারিকেল গাছ দেখছে।রিনির গলার আওয়াজ পেলো।ঘাটে রিনিকে দেখা যাচ্ছে না।দিহান হতভম্ব হয়ে পানির দিকে তাকিয়ে রইলো দীপ্তি বেয়ান্দাজ সাতার কেটেই যাচ্ছে।চার পাঁচ সেকেন্ড বাদে হাত জেগে ওঠে রিনির অতটা দূর কিভাবে চলে গেলো ভেবে পায় না দিহান।আবার ডুবে যেতে নেয়।দিহান কালবিলম্ব না করে লাফিয়ে পরে।দীপ্ত এতক্ষণে টের পেয়েছে।রিনিকে টেনে আনতে আনতে সেন্সলেস।সিড়িতে জড়িয়ে ধরেই বসে দিহান।ভয়ে চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।হাত পা থরথর করে কাপছে।দীপ্তিকে পেটে চাপ দিতে বললো।কিন্তু কাজ হচ্ছে না।দিহানের হুশজ্ঞান উড়ে যাওয়ার উপক্রম।দীপ্তি ভয়ে যে হাফসাকে ডাকবে তাও খেয়াল আসছে না।বার বার রিনিকে ঠেলছে।দিহানের চোখ থেকে অঝরে পানি ঝরছে।শান্ত কন্ঠে বললো
“দীপ্তি অন্য দিকে ফের।”বলে আর দিহান দেরি করে না।দীপ্তি অন্যদিকে ফিরে যায়।এই সময়টা লজ্জা পাওয়া একদম মানায় না।
দ্রুত কৃতিম শ্বাস দেয়ার চেষ্টা করলো।তিন চার বারে হালকা কেশে ওঠে।মুখ দিয়ে পানি বের হয়।দিহান এতো বড় প্রলম্বিত নিশ্বাস কখনও ছেড়েছিলো কিনা জানা নেই।
দিহানের কান্না বেরে যায়।এভাবে কাদে নি সে।চোখের পানি থামছেই না।খুব শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে থাকে।রিনি কিছুটা সাভাবিক হলে কোলে করে নিয়ে ঘরে যায়।ভয় পেয়েছে যতটা পাওয়া যায়।দীপ্তি হাফসাকে খুলে বলে।রিনিকে পোশাক পাল্টে সুয়ে দেয়।

গোধুলির আলো অস্তমিত হচ্ছে।কিছু আগেই রিনির ঘুম ভেঙেছে।দিহান ঘরের কোথাও নেই।দীপ্তিকে জিজ্ঞেস করলে জানায় পেছনে খালপারের দিকে যেতে দেখেছে।মুখটা ধুয়ে ওড়না নিয়ে চলে যায় সেদিকে।দিহান বসে আছে গাছের শেকড়ের উপরে।
রিনি এগিয়ে গিয়ে কাধে হাত দেয়।দিহান ঘুরে তাকায়।দিহানের ভেজা চোখের লালিমা রিনি ভয় পেয়ে যায়।এ কি অবস্থা তার দিহান ভাইয়ের?চকিতে মাথা ঘুড়িয়ে নেয় দিহান।সন্তপর্ণে চোখ মুছে নেয়।

রিনি আবার টেনে মুখটা ঘুরায়। দিহান আবার অন্যদিকে ঘুড়িয়ে নেয়।এবার রিনিই ঘুরে দিহানের সামনে যায়।দিহান হাক দিয়ে ওঠে
–” আবার পরার ইচ্ছা আছে তোমার?পানির পাশে কেন যাচ্ছো?”

রিনি এমন চিৎকারে কেপে ওঠে খানিক।সাবধানে দিহানের পাশে বসে।দিহানের বাম হাতের পাঁচ আঙুলের মধ্যে রিনির আঙুলগুলো সাবধানে আবদ্ধ করে।দিহান ধমকের সুরে বলে
–“আর পুকুরের ধারে কাছেও যাবা না।”
সুর ধমকের হলেও কন্ঠ ভেজা।চোখ আবার ভিজে উঠছে।রিনি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।কি বলবে ভাষা তার ভাষা খুজে পাওয়া বড্ড দুষ্কর।

–“আমি ঠিক আছি তো দিহান ভাই।একেবারে ঠিক আছি।”

–“তোমার বাবা মা কে কি বলতাম? কি বলতাম? আমানতের খেয়ানত হয়ে যেত না? এমনিই একভাবে খেয়ানত হয়ে গেছে।এবার পুরোপুরি আমায় দায়ী করতে চাইছিলে?”

–“দিহান ভাই আমি ঘাটের এতো পাশে ছিলাম আমারই খেয়াল ছিলো না।সরতে সরতে হুট করে কি হলো।ঘাট ধরার চেষ্টা করছিলাম।কিন্তু মাথায় আঘাত লাগে ঘাটের সাথে।আর দূরে সরে যাই।”

দিহান চুলের মধ্যে হাত ভিজিয়ে দেখে।মাথার উপর দিকটা ফোলা।গায়ের জোর দিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে মন চাইছে।বেয়াক্কল মেয়ে কোথাকার!!

নিজের মনোবাসনা দমিয়ে বললো
–“মাথা ব্যাথা করছে?”

–“হালকা।”

কিছুক্ষণ নীরবতা। রিনি ফাকা মাঠটার দিকে অপলকে তাকিয়ে।আর দিহান রিনিকে অনিমেষ চেয়ে দেখছে।কলিজার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখলেও বুঝি তৃপ্তি মিটবে না।তুলোর মতো লাগে দেখলেই আর সেই মেয়ে কিনা কতো ব্যাথা পেলো।নিজের সতর্কতার দোষ দিলো দিহান।রিনি দিহানের দিকে ফেরে।মিষ্টি করে হাসে।

দিহানের অন্তস্তল দাপিয়ে যায় ভারী একক্ষন্ড সুখ।প্রায়ই মনে হয় এই সুখের ভার নেয়া বড্ড কঠিন!বড্ড বেশি কঠিন।

দিহান আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করে।একপর্যায়ে মিয়িয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলে
–“তোমার আমাকে খারাপ ছেলে মনে হচ্ছে না রিনি? তোমার মনে হয় না যে আমার মতো ছেলেকে ভালোবেসে ভুল করছো?”

রিনি হাসি হাসি মুখ করে বলে
–“উহু আমার তো গর্ব লাগে।”

–“রিনি তুমি বুঝতে পারছো না।আমি পরশু রাতের ব্যাপারটার জন্য বলছি।”

–“দিহান ভাই,ওই সিচিউয়েশনে আপনিও ছিলেন আমিও ছিলাম।মেয়ে মানুষ তো আমি,এমন না যে আপনার দোষ খোজার চেষ্টা করি নি।নিজের গিল্টি ফিল থেকেও দোষ খুজেছি।কিন্তু সত্যি বলতে দোষটা খুজে পাই নি আমি।”

–“তবুও…”

–“আর তবুও আসে কই থেকে? ভালোবাসার মানুষের কাছে ওইটা দূর্ঘটনা হলেও কাঙ্ক্ষিত ছিলো।”

দিহান চকিতে তাকায়।অবাক হয় খানিক কি দ্বিধাহীন স্বীকারোক্তি। এমনটা তার মাথায় আসলেও কখনও কি পারতো বলতে?অবশ্য ভালোবাসি কথাটাই বলা হলো না।দিহানের মুখশ্রী আবার গুমট হয়।রিনি দুই হাতে দিহানের মুখ ঘুরিয়ে বলে।
–“আচ্ছা মেনেই নিলাম আপনারও দোষ আমারও দোষ। দুইজনের দোষ মিলে কাটাকুটি কেমন?”

দিহান মানতে নারাজ।

______________

রাতে তাড়াতাড়ি খাবার খেয়েই ছাদে চলে আসে তিনজন।অর্ধেক খাওয়া চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে অনিমেষ। পাশেই বসে আছে দিহান।ফোনে কার সাথে যেনো ছাদে আসার পর থেকেই ক্রমাগত কথা বলে যাচ্ছে।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে দীপ্তি।সেও মনোযোগী তার ফোনে।রিনি মনোযোগী দিহানে।দিহানের হাতে চিমটি কেটেই যাচ্ছে।দিহান হাত আটকে ধরলো ওদিকে ফোনে কথা বলায় তীব্র মনোযোগ। রিনি অন্যহাত দিয়ে আবার চিমটি কাটলো।দিহান একহাতেই রিনির দুইহাত আটকে কথা বলতে থাকে।রিনি ঠোঁট উল্টে আকাশের দিকে আবার তাকায়।দিহানের কথা বলা শেষ হয়।রিনি এখন কোনো কথা বলছে না।ঠোঁট উল্টেই বসে আছে।
দিহানের এবার মেজাজ খারাপ হয়।

–“ঠোঁট উল্টে আছে,, এখন কথা বলতে পারো না?এতক্ষণ লাফাচ্ছিলে।এখন লাফালাফি গেলো কই?আবার রাগও করতে পারে।”

রিনি খোটা দিয়ে বলে
–“তাও ভালো এক ঘটনা নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি তো কাদি না।”

দিহান লজ্জাবোধ করে।হালকা আওয়াজে কাশি দেয়।রিনি হেসে আব্দার গলায় বলে
–“একটা কামড় দি?দাত কেমন কেমন করে অসহ্য অনুভূতি ।”

দিহান চাপা আওয়াজে বলে
–“ওসতাগফিরুল্লাহ আমার আর কামড় খাওয়ার ইচ্ছা নেই।আর মাত্র একটা খেলেই আমার ইঞ্জেকশন নিতে হবে।মাফ চাই”

রিনি আবার ঠোঁট উল্টায়।অসভ্য লোক একটা! রিনি ছাড়া এই কথা কেউ ভুলেও আন্দাজ করতে পারবে না কতটা অসভ্য দুষ্ট লোকটা ।যে বলবে উল্টো সেই মার খেয়ে যাবে।

দিহান আবার কানে ফোন লাগায়।আওয়াজ সাভাবিকের চেয়ে বেশি।
–“হু তনয় কাল বিকালে বাসার সামনে আসিস ঘুরতে যাবো।”

দীপ্তি তরাক করে তাকায়।খরগোশের কানের মতো কান খাড়া করে। এগোতে এগোতে রিনির পাশে ঘেষে দাড়ায়।

চলবে
‘নিশীথচিত্র'(৩৩)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

____________

রাতের নিস্তব্ধ পরিবেশে রিনি টুক টুক করে শব্দ করছে পা দিয়ে। রেলিং এ ঘেঁষে আকাশের দিকে হা করে বাতাস গিলছে।দীপ্তির ফোনে মেসেঞ্জারের টুং টাং শব্দ।দিহান রেলিংএর উপর বসে পা দোলাচ্ছে। মাঝে মধ্যে চোখ দিচ্ছে রিনির দিকে। কিছু একটা ভেবে দিহান দুই হাতে হাত ঘষে বললো

–“দীপ্তু তোর লজ্জা সরম গেছে।ভাইয়ের সামনে দাড়িয়ে বিন্দাস প্রেম করছিস।”

দীপ্তি খানিক অপ্রস্তুত হলো।রিনি পিটপিট করে তাকাচ্ছে দুই ভাই বোনের দিকে।দীপ্তি ঠোঁট ভিজিয়ে সাহস জুগিয়ে বললো

–“তুই জানিস আমি প্রেম করি নাকি না করি?আন্দাজে কথা বলবি না তো।”

–“আচ্ছা দেখা দেখি।তাহলেই বোঝা যাবে।ফোন আমার দিকে ঘুরা তো ঘুরা।”

দীপ্তি মিয়িয়ে গেলো।ওড়নার ভাজে ফোন শক্ত করে চেপে ধরলো।দিহান রাশভারি কণ্ঠে বললো

–” যা যা নিচে যা ভাইয়ের সামনে প্রেম করতে নেই।ভেটো দিয়ে দেবো।”

দীপ্তি ভেংচি কাটলো।বিরবির করে বললো
–“মূল কথা যে তার প্রেম করার সুযোগ দিতে হবে তা আর মুখে ওঠে না।”

দীপ্তি নেমে গেলো।রিনি আগের সরুপ আকাশের দিকে তাকিয়ে হা করলো আবার।পরক্ষণেই দিহানের দিকে তাকিয়ে বললো
–“চাঁদ খাচ্ছি খাবেন?”

দিহান প্রথমে বুঝতে পারে না।বুঝতে পেরে সময় নিয়ে বলে
–“চাঁদ আমার প্রতি দয়াশীল। আমার ছোচা মানুষের মতো হা করে চাঁদের রূপালী আলো খেতে হয় না।এমনিতেই আমার কাছে পৌছে দেয়।”

রিনির ভাবান্তর হলো না।আবার আকশের দিকে হা করে রইলো।অন্ধকারের অপ্সরী।দিহানের মেজাজ নষ্ট হলো।দীপ্তিকে পাঠালো কি শুধু শুধুই?এসে একটু হাতও ধরতে পারে না এখন?এমনি তো….
ভ্রুযুগল কুচকে এলো।বিরবির করে বললো
–“এখন আর আমায় চেনে না।”

রিনি অদৃশ্য হাসলো।দিহানের পাঁচ আঙুলের মাঝে আঙুল ভেজালো। পরক্ষনেই ছেড়ে দিলো।দিহানের মুখটা আবার ভোতা হয়ে গেলো।রিনি দিহানের দুপায়ের মধ্যে দাড়িয়ে দিহানের হাতদুটো তার গলায় বেধে দিলো।পেটের সাথে মাথা এলিয়ে দুবার আদুরে ভঙ্গিতে মাথা ঘষে বললো

–“চাঁদটা খুব মিষ্টি। দেখি এবার?”

রিনি মাথা তুলে দিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে আঙুল তাক করে বললো
–“ওই যে দেখছেন তারার মতো যেটা লাল নীল আলো দিচ্ছে ওইটাকে ছোট বেলা দেখলে পরী ভাবতাম। পরী দেখতে পেয়েছি বলে সে কি খুশি ছিলো আমার।”

রিনি উচ্ছাস দেখে দিহান স্মিত হাসলো।রিনি এখনও দিহানের দিকেই মাথা উল্টে তাকানো।দিহানের থুতনিটা রিনির কপালে ঠেকলো।রিনি ঠোঁট উল্টে বলে
–“কি খোচা খোচা দাড়ি বাবারে।”

______________

রাত বারোটা নাগাদ রিনি রুমে এলো।দীপ্তি ঝাপিয়ে পরলো রিনির দিকে
–“কি কি হলো রিনি?”

রিনি আফসোস মাখা কন্ঠে বললো
–“প্রেমে পরে তোমার লজ্জা যাচ্ছে দীপ্তি।ভাইয়ের বিষয় কি সব কথা জানতে চাচ্ছো!”

দীপ্তি ঠোঁট উল্টায়
–“আমি কি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করছি নাকি এসব? আর তনয় ভাইয়ার সামনে যেতেও আমার লজ্জা লাগে।সো আমার লজ্জা যায় নি।বলো এবার আমাকে।”

–“কি আর হবে চাঁদ দেখেছি।”

দীপ্তির আশানুরূপ হলো না যেনো,
–“দুই ঘন্টা চাঁদ দেখলে শুধু?”

রিনি ওড়না টা বিছানার পাশে রেখে চুল বাধতে বাধতে বললো
–“লজ্জা না কমলেও ইনটারেস্ট বাড়ছে তোমার।”

দীপ্তি ঠোঁট ফুলিয়ে বলো
–“তুমি খালি কথা পেচাও রিনি।”

দীপ্তি আবার ফোনে মনোযোগ দিলো।রিনি সুতে সুতে বললো
–“দিহান ভাই আমায় কখনও ফোনে সময় দেয় না ।আফসোস!!”

–“তোমাকে যেমন সময় দেয় আমাকে তো সেভাবে দেয় না।”

রিনি মিচকি হেসে বললো
–“তনয় ভাইয়া সুযোগ পেলে আলবাত দিতো।দিহান ভাইয়ের মতো এক সেকেন্ডও নষ্ট করতো না।”

দীপ্তি লজ্জা পায়।সে জানে রিনি একদমই ঠিক কথা বলেছে।লোকটা কথায় কথায় বলে”দেখো ছয় মাসের মধ্যে বিয়ে করবো তোমায়।তারপর আমার সামনে তোমাকে রানীর মতো সাজিয়ে রাখবো।আর দেখবো।মন ভরে দেখবো”

দীপ্তি তখন লজ্জায় উত্তরই করতে পারে না।রিনির কথায় হুশ ফেরে
–“তোমার ভাই আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে জানো?”

দীপ্তি অপ্রতিভ হয় খানিক।চকিতে বলে উঠে
–“ভালোবাসি তো বলে নি তোমাকে।হতেও পারে সুযোগ নিচ্ছে।”

রিনির হুট করে রাগ হয়।
–“নিজের ভাইকে নিয়ে কি সব বলছো দীপ্তি?এরকম আর কখনও বলবে না। সে ভেবে চিন্তে ভালোবাসে তাই বলছে না কিন্তু আমি তো তার মতো বুঝদার না তাই আমি পাগলামি করি।বলবে সে একদিন।আমি ফোর্স করবো না।আমি জানি সে নিজে থেকেই বলবে।”

দীপ্তি অবাক হয় বিস্ময় কণ্ঠে বলে
–“এতো সিওর কিভাবে?”

রিনি রহস্য নিয়ে হাসে।অতঃপর বলে
–“সিক্রেট বলা যাবে ন।”

দীপ্তি সিক্রেটটা জানার আপ্রাণ চেষ্টা করে চললো ঘুমিয়ে পরার আগ অব্দি।

___________

রিনি সকাল থেকে দিহানের পেছনে পরে আছে।তনয় দিহানের সাথে তাকে আর দীপ্তিকেও ঘুরতে নিতে হবে এমনই আবদার। দিহান কর্ণপাতই করছে না।এমন ভাব সাব যেনো বিশ্ব সেরা কানে কালার এওয়ার্ড দেয়া হবে। আর তাতে তার বিজয়ী হতেই হবে।রিনি দাতঁ খিচে বার বার বলছে
–“দিহান ভাই দীপ্তির কি একটু মন চায় না তনয় ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলেন?তো সুযোগ করে দেয়া উচিত তাই।”এরপর অনুরোধের সুরে বললো”প্লিজ দিহান ভাই প্লিজ।”

দিহান উত্তর করলো না।এমনকি রিনির দিকেও তাকালো না।রিনি ফোস ফোস করতে করতে স্থান ত্যাগ করলো।

বিকালে দীপ্তি বসে আছে রিনি চিন্তিত ভঙ্গিতে পা দোলাচ্ছে বিছার পাশে বসে।দিহান দরজায় উকি দিলো।গম্ভীর কণ্ঠে বললো
–“দুজন বোরখা পরে রেডি হয়ে নাও।বের হবো।”

দিহান দরজা আটকে চলে গেলো।রুমের ভেতর থেকে চাপা উচ্ছ্বাস তার কানে ভেসে আসছে।

______________

তনয় বাইরে দাড়িয়ে আছে দশ মিনিট হবে। পাশে একটা অটো দাড় করা।দিহানের হাব ভাব বোঝা দায়।ছেলে মানুষ দু পা হাটবে না? বাসার সামনেই অটো আনতে বললো।দুর থেকে দেখা গেলো চিকন রাস্তা ধরে ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে আসছে দিহান।দেখা পাবে না জেনেও দীপ্তিকে দেখার জন্য উঁকিঝুকি দিচ্ছিলো তা থামিয়ে দিলো সে।দিহান অটোতে বসলো।অলস পায়ে বাড়ির ভেতরে তাকাতে তাকাতে তনয়ও বসলো।উঠে বললো

–“মামা গাড়ি ছাড়েন।”

দিহান সাথে সাথে না করলো।
–“আমি বলছি গাড়ি ছাড়তে? নাপতামি করোস ক্যান?দীপ্তি রিনিকে নেবো না?মেয়ে মানুষ সাজুগুজুতে টাইম লাগাচ্ছে আর তোর দাড়ানোর ধৈর্যই নাই দেখছি।”

তনয় হতভম্ব হলো।খুশিতে নড়েচড়ে বসলো।মিনিট তিনেক বাদে দূর থেকে দেখা গেলো দীপ্তি রিনি আসছে।তনয় আরও নড়ে চড়ে বসলো।একসাথে ঘুরবে কতোক্ষণের জন্য সামনে পাবে তা ভাবতেই সাভাবিকতা ভুলে যাচ্ছে।দিহান তনয়ের পিঠ চাপড়ালো।
–“রিল্যাক্স।”

রিনি এসে সাভাবিক ভাবে বসলো।মিটিমিটি হাসলো।দীপ্তি আড়ষ্টতায় নিভু নিভু।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here