নীলাম্বরীর প্রেমে পর্ব ১২

#নীলাম্বরীর_প্রেমে
#Tuhina pakira
পর্ব : ১২/ বোনাস

কোনো মতে মুখে কিছু গুজে আয়ু ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোলো। দু পা হাটতেই তিশাদের নতুন চার চাকা গাড়িটা চোখে পড়লো আয়ুর। এবারে এই গাড়িটা শুভ রেন্টে নিয়েছে। লাল রঙের গাড়িটা তিশার পছন্দের; ওর লাল রং খুব ভালো লাগে। আয়ু কে দেখামাত্রই শুভ বললো,

-” কোথায় যাচ্ছিস?”

-” এই কলেজ। তুমি কোথায় যাচ্ছো কাকাই? ও বাবা তিশু বুড়িও আছে দেখছি।

তিশা ওর বাবার কোলে বসে হাত নাড়িয়ে বললো,

-” আমি বাবার সাথে স্টেশনে যাচ্ছি। তুমিও চলো। খুব মজা হবে।”

-” হ্যাঁ আয়ু চলে আয়। তোর ও তো ট্রেন ধরার একটা ব্যাপার আছে। চলে আয়। এক যাত্রায় পৃথক ফল করে লাভ নেই।”

শুভর অনেক করে বলায় আয়ু না করলো না। ড্রাইভিং সিটের পাশে বসতে গেলে তিশা বাঁধা দিয়ে বললো,

-” না আমি সামনে বসবো। আমার পিছনে বসতে ভালো লাগে না। আমি সামনে বসে বাবার মতো গাড়ি চালাবো।”

-” আচ্ছা তুইই বস।”

-” শুভ তিশার কথায় কান না দিয়ে তিশাকে পিছনের সিটে বসিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। আয়ু কে ইশারায় সামনে বসতে বললো। শুভ গাড়িতে বসতেই দেখতে পেলো তিশা কাঁদো কাঁদো হয়ে বসে রয়েছে।

-” প্লিজ বাবা আমি সামনে বসবো।”

শুভ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো ,

-” কদিন আগে তুমি কী করেছিলে মনে নেই?”

তিশা আর কিছু বললো না। চুপ করে পাশের জানলা দিয়ে বাইরে দেখতে লাগলো। আয়ু কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে বললো,

-” কাকাই কী করেছে ও? ”

শুভ গাড়িটা বাঁক পেরিয়ে মেইন রোডে আনলো। গাড়ির স্প্রিড হালকা বাড়িয়ে দিলো।

-” তোর ছাত্রী কেই জিজ্ঞেস কর।”

আয়ু পিছন ফিরে তিশার দিকে তাকাতেই তিশা বোকা বোকা হাসতে লাগলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই মেয়ে কিছুই বলবে না।

-” কাকাই তুমিই বলো। ও বলবে না।”

-” গতবার যেদিন ওর মামার বাড়ি গেলাম, সেইদিন যাবার পথে ও সামনে বসেছিল। নীলিমার একটু খারাপ লাগছিল তাই ও পিছনে বসে ছিল। বেশ ভালোই যাচ্ছিলাম জানিস। আর তিশাও আমার গাড়ি চালানোর দিকে পর্যবেক্ষণ করছিল। কিন্তু হঠাৎই ও স্টিয়ারিং টা ঘুরিয়ে দিল। আচমকা হওয়ায় আমিও ঠিক বুঝতে পারি নি। একটু হলে অ্যাকসিডেন্ট করতাম।

-” তিশু দুষ্টুমি কিন্তু অতিরিক্ত হচ্ছে।”

-” সরি আমি আর ওই ভুল কোনো দিন করবো না। ”

-” মনে থাকে যেনো।”

নানা ধরনের কথা বলতে বলতে ওরা অনেকটা রাস্তাই পেরিয়ে এসেছে । হঠাৎই আয়ুর ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো । ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে যেতেই ব্যাগটা কোল থেকে নীচে আয়ুর পা এর কাছে পড়ে গেলো। আয়ু তাড়াতাড়ি ব্যাগটা তুলে ফোন টা ব্যাগ থেকে বের করলো। আয়ু যা ভেবেছিল তাই হলো, রুহি ফোন করেছে। রুহির বাড়ি স্টেশনের অপরদিকে। তবে ওর বাড়ি থেকে স্টেশন অনেকটাই কাছে।

-” হ্যালো, আয়ু কোথায় তুই? তাড়াতাড়ি আয়। ট্রেনের অ্যানউন্স হয়ে গেছে। ”

-” আমি চলেই এসেছি। আর দুই মিনিট। তাছাড়া ট্রেন ঠিক সময়ে আসে না। আমি ঠিক সময়ে চলে যাবো। ”

-” তুই কেনো যে তাড়াতাড়ি আসিস না আমি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না। কী করিস তুই?

-” রান্না, ঘর ঝাড়ু-মোছা, কিছুই করিনা আমি। ”

আয়ুর কথায় তিশা আর শুভ হেসে উঠলো। আয়ু ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। অপর দিকে রুহিও হাসছে।

-” তুই তো আজন্ম কুটে। ”

-” রুহি তুই বেশি না বকে চুপচাপ ট্রেন আসছে কী দেখ। আমি ঠিক ট্রেন পেয়ে যাবো। ছুটে হলেও আমি ট্রেন ধরবো। চল ফোন রাখ। ”

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা স্টেশনে পৌঁছে গেল। আয়ু নামতে যেতে আবারও ওর ব্যাগটা পায়ের কাছে পড়ে গেলো। ব্যাগটা পায়ের নূপুরের সঙ্গে কোনোভাবে আটকে গেছে। পিছনের জানলা দিয়ে তিশা মুখ বের করে বললো,

-” আয়ু দি দেখো ট্রেন চলে গেলো। ”

কোনমতে ব্যাগটা তুলে আয়ু সামনে তাকিয়ে দেখলো ও যেই ট্রেনে যাবে সেই ট্রেন না। তিশার গাল টেনে বললো,

-” ওই ট্রেন টা না তিশু বুড়ি। আমি অন্য ট্রেনে যাবো। ”

-” আয়ু তোর ট্রেন এসে গেছে দেখ। ”

শুভ এর কথায় আয়ু সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর ট্রেন ও প্লাটফর্মে ঢুকে গেছে। আয়ু তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামলো।

-” আসছি আমি টাটা, বাই। ”

আয়ু জোরে ছুট লাগিয়েছে। কোনো দিকে না তাকিয়ে ট্রেনের দিকে ছুটেছে। আগে পিছে কে আছে সেই দিকে তার ধ্যান নেই। শুভ ও বাইরে নামলো। দূরে কাউকে দেখে শুভ হাসি মুখে এগিয়ে গেলো।

স্পর্শ ট্রেন থেকে নেমে রাস্তায় নেমে এলো। কাউকে ছুটে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। তখনই সামনে শুভ কে দেখে জড়িয়ে ধরলো।

-” কেমন আছো কাকাই?”

– ” আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”

শুভ নিজের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে স্পর্শের থেকে কোনো উত্তর পেলো না। স্পর্শ এখনও সামনে তাকিয়ে রয়েছে। যে সমস্ত ব্যাক্তিরা খুব তাড়াহুড়ো করে ট্রেন ধরে আমরা অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে থাকি। যতক্ষণ না সেই ব্যাক্তিটি ট্রেনটা ধরতে পারছে। তখন মনে হয় অপর ব্যাক্তি না আমরাই যেনো ট্রেনে উঠছি। এইরকম দেখার সৌভাগ্য অনেকেরই হয়েছে। স্পর্শও তার ব্যাতিক্রম নয়। শুভ পাশ থেকে স্পর্শকে নাড়িয়ে বললো ,

-” কী দেখিস?”

-” তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে আসতে পারবে না। এখানে এসে ছুটবে। মেয়েটাকে দেখো একবার। করে ছুটছে। ”

শুভ সামনে তাকিয়ে দেখল ওই মেয়েটা আয়ু।

-” আরে ওটা তো আয়ু। আমার সাথেই এলো। ”

স্পর্শ আয়ুর দিকে তাকিয়ে বললো,

-” ও । ”

নিজের মনে বিড়বিড় করে বললো,

-” তুই বাড়িতে কি করিস আমি দেখছি। কোনো দিকে হুশ নেই। তিনি ট্রেনের জন্যে ছুটছে।”

আয়ু ট্রেনের সামনে আসতেই ট্রেন চালকের দিকে হাত দেখালো। এটার মানে ওর হাত দেখে উনি বুঝবেন কেউ এখনও ট্রেনে উঠবে। তবে আদৌ তারা তাদের ইশারা মতো কাজ করে কিনা সেই বিষয়ে সন্দেহ আছে।

আয়ু কেবলই ট্রেনে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। দূর থেকে আয়ুকে ট্রেনে উঠতে দেখে
স্পর্শ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে গাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

স্পর্শ গাড়িতে বসলো। শুভ গেছে সামনে কিছু দরকারে। স্পর্শের পায়ের কাছে জলের বোতল আছে কী দেখতে গিয়ে দেখলো নীচে কিছু পড়ে রয়েছে। হাত বাড়িয়ে জিনিসটা তুলে দেখলো এক পায়ের নুপুর। স্পর্শের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। এই নুপুর ওর ভালো করেই চেনা। আচমকা ছোটো ছোটো দুটো হাত স্পর্শের চোখ টিপে ধরলো।

-” বলোতো আমি কে?”

– ” সত্যিই তো এটা কে? এটা তো আমাদের তিশু বুড়ি।”

তিশা স্পর্শের চোখ ছেড়ে দিয়ে বললো,
– ” তুমি কী করে বুঝলে?”

স্পর্শ ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

-” বুঝতে হয়েছে। ম্যাজিক। ”

-” কিন্তু আমি যখন এলাম তখন তো তোকে দেখলাম না। কোথায় ছিলি? ”

– ” লুকিয়ে পড়ে ছিলাম। ”

শুভ আসতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো। স্পর্শ ফোন ঘাটতে ঘাটতে ওদের দুজনের সঙ্গে গল্পঃ করতে লাগলো।

আয়ু ট্রেনে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওর পাশে বসেছে রুহি। রুহি নিজের মতো ফোন ঘাটতে ব্যস্ত। হঠাৎই আয়ুর ফোনের এসএমএস টোন বেজে উঠলো। আয়ু এসএমএস টা অন করে দেখলো অজানা নম্বর থেকে এসেছে।

-” এই যে মন উদাসী – তোমার মূল্যবান কিছু আজ আমার হস্তগত। ”

আয়ু কিছু বুঝলো না। কী এমন হস্তগত? এই নম্বর ওর চেনা। যিনি এই এসএমএস টা পাঠিয়েছে তিনি আয়ুর ফোন কেনার পর থেকেই প্রতিনিয়ত ফোন করতো। তবে কথা বলতো না। আয়ুও তাই ব্লক মেরে দিতো। কিন্তু এই পর্যন্ত আয়ু মোট ১১টা নম্বর ব্লক মেরেছে। এটা ১২ নম্বর। ফোনের অপরের ব্যাক্তি ওর সাথে কথা বলে না ঠিকই তবে মাঝে মাঝে এসএমএস করে। আয়ু তা দেখে কিন্তু রিপ্লাই দেয় না।

(চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here