নীল দিগন্তে পর্ব ২০(শেষ)

#নীল_দিগন্তে
পর্ব- ২০(অন্তিম পর্ব)
লেখা- নীলাদ্রি নীরা
পুষ্প দাড়িয়ে আছে সহকারী পুলিশ সুপারের বাস ভবনের সামনে। খালি পায়ে দাড়িয়ে আছে সে। পরনের থ্রিপিচ কুচকে বটে গিয়ে বাজে অবস্থা। তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে জুতো পড়তে ভুলে গিয়েছে সে। রাত্রির চিঠিটাও কোথায় ফেলে এসেছে ও জানে না।
ওর চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। পুলিশের ইউনিফর্ম পড়া এক সিকিউরিটি গার্ড কন্ট্রোল রুমে গিয়ে ফোন করলো দেখা যাচ্ছে। সেও বিরক্ত। প্রথমে তো বলেই দিয়েছে, স্যারের উয়াইফ আপনি? মশকরা করেন? পুষ্প রেগে গিয়ে বলল,
-“আপনার স্যারকেই গিয়ে জিজ্ঞেস করুন পুষ্প কে? সে কি হয় তার! তারপর আপনার ব্যবস্থা আমি করছি। যান গিয়ে জিজ্ঞেস করুন।”
সিকিউরিটি অবিশ্বাস্য ভাবে টেলিফোন করলো কোথায় যেন। তারপর জ্বি স্যার, ওকে স্যার বলে ফোন রেখে মাথা নিচু করে এগিয়ে আসলো পুষ্পর দিকে।
-” সরি মেডাম। আসলে সিকিউরিটির একটা ব্যাপার আছে তো। আমি সত্যি বুঝতে পারিনি। বড় স্যারকে কিছু বলবেন না প্লিজ মেডাম। ”
পুষ্প মনে মনে বলল, ব্যাটা তোরে তো থাপড়ানো দরকার। রোদে আমি সিদ্ধ হয়ে গিয়েছি তোর জন্যে। দাড়া তোর ব্যবস্থা করব। কিন্তু মুখে বলল,
-” ঠিক আছে”
-” এদিকে আসুন। একটা সিগনেচার দিয়ে ভেতরে যাবেন। বাসার সিকিউরিটি রুমে গিয়ে আবার সিগনেচার করতে হবে। ওখানের সিকিউরিটিকে বলা হয়েছে।”
পুষ্প গেটের ভিতরে ঢুকলো। গেইট থেকে সরু রাস্তা গিয়েছে বাড়ি পর্যন্ত। বাড়িটা দুইতলা। সাদা বিল্ডিংয়ের কর্নার গুলোয় নীল রঙ করা। রাস্তার একপাশে বিশাল পুকুর। পুকুরে হাঁসের ঝাক। পারে বসে আড্ডা দেয়ার মতো একটা জায়গা। সিমেন্টের তৈরি গোল টেবিলের মতো চারপাশে বসার জন্যে সিমেন্টের তৈরি চেয়ার। মাথার উপরে টিনের গোলাকার চাল। রাস্তার আরেকপাশে গাছ গাছালি। বাড়ির ঠিক সামনেই একটা ফোয়ারা। কি সুন্দর! পুষ্প মুগ্ধ! মনটা লাফিয়ে উঠলো ওর। ওর ধারনাই ছিলো না এই রকম একটা জায়গায় ও থাকবে। ঢাকা শহরের থেকে এই জায়গাটা হাজারগুন ভালো। এইখানে এক জীবন পার করে দেয়া কোনো ব্যাপারই না। আর ঢাকাতে ফিরবেই না সে!
দ্বিতীয়বারের মতো নাম ঠিকানা এন্ট্রি করে পুষ্প বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। গার্ড গুলো কিভাবে যেন তাকাচ্ছে ওর দিকে। হয়তো এটাই ভাবছে স্যারের উয়াইফ এমন বেশে কেন? পুষ্প তাতে পাত্তা না দিয়ে একজন লেডিস গার্ডকে বলল,
-” বাড়িতে কেউ নাই? আপনাদের স্যার কোথায়?”
-” মেডাম স্যার তো অফিসে। ছোট স্যার বাসায় আছেন।”
পুষ্প ভ্রু কুচকে বলল,
-” ছোট স্যারটা আবার কে?”
-” বড় স্যারের ছোট ভাই। ”
পুষ্প চোখ বড় বড় করে তাকালো। ছোট ভাই মানে! রাহাত ভাইয়া এখানে? অহহো! এতদিন কোথায় ছিল! পুষ্প বলল,
-” উনি কোথায় এখন? ”
-” উনার রুমেই। চলুন ম্যাম আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।”
পুষ্প মেয়েটার সাথে গেলো। দোতলায় গিয়ে একটা রুমের সামনে দাড়িয়ে মেয়েটা বলল,
-” মেডাম স্যারের রুম এইটাই।”
-” আপনার বড় স্যারের রুম কোনটা?”
-” ওই যে ওই রুমটা। মেডাম লাঞ্চ করবেন আপনি? ”
-” না। ”
-” মেডাম কোনো দরকার হলে আমাদের ডাকবেন।”
পুষ্প কিছু না বলে রুমের দরজায় নক করলো। ওপাশ থেকে ভয়েস শোনা গেল,
-” ভেতরে আয়!”
পুষ্প হাসল। রাহাত ভাইয়াকে খুব বকা দিতে হবে। পরিবারের মানুষগুলোকে এত কষ্ট দিয়ে কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। আচ্ছা, হিরোইন কোথায়? দুই দিন আগে তো হিরোইনকে ঢাকাতে দেখেছে। রুমের ভিতরে গিয়েই পুষ্পর চক্ষু ছানাবড়া। পুষ্প চিৎকার করে বলল,
-” ভাইয়া এ কি অবস্থা তোমার? চেনা যাচ্ছে না।”
রাহাত হাসলো। জলন্ত সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে ফেলে দিয়ে বলল,
-” কেমন আছিস? আরে তোকেও তো চেনা যাচ্ছে না। তুই কি পুষ্প?”
-” আমাকে চেনা না যাওয়ার কোনো কারণ নেই ভাইয়া। সত্যি তোমার এই কি অবস্থা! উন্মাদ উন্মাদ লাগছে। এতদিন কোথায় ছিলে? বাসায় কারো খোঁজ খবর নেয়ার ও প্রয়োজন মনে করো নি তাই না? আর ভাবী কই?”
রাহাত হাই তুলতে তুলতে বলল,
-” জানিনা। আর বাসার খোঁজ রাখিনি কে বলল?”
-” রেখেছো? কখনো চাচা-চাচীকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছো তোমার অনুপস্থিতিতে তারা কেমন আছে? আর তোমার বউয়ের খবর তুমি জানো না?”
-” না।”
-” কেন?”
রাহাত প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল,
-” তুই এমন ফকিন্নির মতো হয়ে এসেছিস কেন? তোর হাজবেন্ড সহকারী পুলিশ সুপার। আর তুই কিনা এমন খালি পা, পুরাতন একটা ময়লা জামা পড়ে চলে এসেছিস? তোর কি মাথায় কোনো বুদ্ধি নেই? দিস ইজ নট ফেয়ার পুষ্প! তুই আমার ভাইয়ের অসম্মান করছিস। আমি ড্যাম শিওর যে তোকে দেখে সবাই হাসাহাসি শুরু করেছে।”
পুষ্প হতাশ হয়ে বলল,
-” কি করবো। তাড়াহুড়ো করে এসেছি। কিচ্ছু মাথায় ছিলো না।”
-” এসেছিস কিভাবে? ঢাকা টু রাঙামাটি! একা একা একটা মেয়ে! কতবড় সাহস!”
পুষ্প হেসে বলল,
-” ড্রাইভার চাচা নিয়ে এসেছে।”
-” ওহ। ভাইয়ার অফিসে গিয়েছিলি? দেখা হয়েছে? ”
-” দেখা হয়নি। কিসের জানি একটা মিটিং এ আছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে চলে এসেছি। ”
-” ওহ। ফ্রেশ হো। লাঞ্চ মেবি করিস নি। লাঞ্চ করে নে। রেস্ট নে লং জার্নি করেছিস। আর হ্যা ভাইয়া আসতে লেট হবে। প্রায় দশটা বাজবে। একা একা বোর হলে কাউকে বলিস পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখাবে। ”
-” হুম তুমি কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে গিয়েছ ভাইয়া।”
রাহাত মাথানিচু করে বলল,
-” নিহারিকা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে ”
-” মানে?”
-” ওর লাইফস্টাইলের সাথে আমার ম্যাচ হচ্ছিলো না। ওদের চলাফেরার সাথে আমাদের চলাফেরা পুরো বিপরীত। সংসার ওদের পেশা না। ওই চায়নি সম্পর্কটা রাখতে। আমিও চাচ্ছিলাম না আর। বাদ দে। তুই এখন যা। আমি ঘুমাবো এখন। যাওয়ার সময় দরজাটা বন্ধ করে যাবি।”
পুষ্প অবাক হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেল! যার জন্য পরিবার ছাড়লো সেই ছেড়ে চলে গেল? এও কি হয়? মানুষগুলো এমন কেন? পুষ্প রাজীবের রুমের দিকে এগুলো। পরিপাটি করে গোছানো একটা রুম। পুরো রুমের জিনিসপত্র থেকে শুরু করে বেডশীটটা পর্যন্ত সাদা। অথচ রাজীবের পছন্দ কালো। সাদা কেন এখন? পুষ্প পুরো রুমটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে কাভার্ডটা খুললো। শাওয়ার নিতে হবে। কিন্তু কি পরবে? কোনো ড্রেস আনা তো দূরে ফোনটাও নিয়ে আসে নি সে। কাভার্ডটা খুলে পুষ্প বেশ অবাক হলো। রাজীবের কাপড় চোপড়ের সাথে একপাশে কয়েকটা শাড়ি হ্যাঙ্গারে ঝুলানো। শাড়ি কেনো? কার জন্য কিনেছে? কোন মেয়ের জন্য? পুষ্প একটা শাড়ি নিলো। সবগুলোই সে পড়বে! অন্য কোনো মেয়ের জন্য হলে রাজীবকে একদম কাঁচা চিবিয়ে খাবে সে। ওরই শুধু অধিকার আছে ওই শাড়ি গুলো পড়ার।
….
রাজীব ফিরলো দশটায়। রুমে ঢুকেই এসির ভলিউম বাড়িয়ে দিলো সে। ইউনিফর্ম খুলতে নিলেই মনে হলো রুমে কেউ একজন আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে সোফায় পুষ্পকে বসে থাকতে দেখলো সে। আপাদমস্তক খেয়াল করলো। শাড়ি পড়েছে মেয়েটা। চুলগুলো খোলা। সাজসজ্জার কোনো ছিটেফোঁটাও নেই। তাতে কি? এই রূপবতীকে সাজগোজ ছাড়াই ভালো লাগে। রাজীবের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে মেয়েটা। রাজীব মুখ ফিরিয়ে নিলো। এই ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে খুব জ্বালাতন করছে তাকে। প্রতিদিন কল্পনায় এসেই আবার ফুরুৎ করে চলে যায়। বাস্তবে তো আর আসবে না! কি লাভ কল্পনায় এসে তাকে জ্বালানোর? রাজীব ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেল। পুষ্প সোফা ছেড়ে উঠে এলো। গুটিগুটি পায়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো। ওর চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। রাজীবের রাগ ভাঙবে তো! পুষ্প নিজের মুখের সামনে প্লেকার্ড তুলে ধরলো। যাতে বড়বড় করে লিখা, SORRY…
রাজীব ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো। কল্পনার পুষ্প তো কখনো তাকে সরি বলে নি! তাহলে এটা কি বাস্তব হতে পারে? প্লেকার্ডের কারনে পুষ্পর চেহারাটা ঢাকা পড়েছে। রাজীব প্লে কার্ডটা সরালো। শিওর হওয়ার জন্য পুষ্পকে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। পুষ্প ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। ওর চোখগুলো জোর করে বন্ধ করে রেখেছে। রাজীব নিশ্চিত হলো পুষ্পই এসেছে। এটা ওএ কল্পনা নয়। মুহূর্তেই পুষ্পকে ছেড়ে দিলো সে। রুম থেকে বের হয়ে গেল রাজীব। পুষ্প হতভম্ব! এটা কি হলো? কোনোকিছু ভাবার সময় নেই এখন ওর! রাজীবের রাগ ভাঙ্গানোর সব চেষ্টাই আজ করবে সে। পুষ্প রাজীবের পিছু পিছু গিয়ে রাজীবকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। রাজীব দাড়িয়ে পড়লো। শান্ত গলায় বলল,
-“পুষ্প ছাড়”
-” উহু”
-“আমার খিদে পেয়েছে। আমি ডিনার করবো।”
-” আমিও তো করব। তোমার জন্যে না খেয়ে আছি সারাদিন।”
-” আমি কি না করেছি খেতে?”
-” উহু। রাগ তো করে আছো”
-” কারো প্রতি রাগ নেই আমার। ছাড়”
-” আরে বাবা সরি সরি সরি। কানে ধরবো ?”
-” তুই আমাকে ছাড়বি? বাসায় গার্ডরা আসা যাওয়া করছে। যে কেউ দেখতে পাবে। ইভেন সবকিছু মনিটরিং ও হচ্ছে।”
-” হোক।”
-” ভালো লাগছে না পুষ্প। যে কেউ দেখলে যা ইচ্ছা বলবে।”
-” বলুক”
পুষ্প নাছোড়বান্দা। রাজীব উপায় না পেয়ে নিজেই পুষ্পকে ছাড়িয়ে সামনে আনলো। পুষ্পর হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে এসে সামনাসামনি দাড়ালো। তারপর আঙুল উঁচিয়ে বলল,
-” কালকে সকালেই ঢাকায় ব্যাক করবি তুই!”
পুষ্প আবারও জড়িয়ে ধরলো রাজীবকে। রাজীবের কোনো রেসপন্স নেই। কাঁদতে কাঁদতে পুষ্প বলল,
-” সরি তো।”
রাজীব নিশ্চুপ। পুষ্প ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেল ওর।
-” তুমি যদি আমাকে তাড়িয়ে দাও তাহলে আমি তোমার নামে মামলা করবো।”
-” তারপর? ”
-” জেলে পচে মরবে তুমি?”
-” তারপর? ”
-” জানিনা।”
-” এখন কেন এসেছিস? আমি তো ক্যারেকটারলেস। তা ক্যারেকটারলেসের জন্য হটাৎ এত পাগল হইলি কেন শুনি?”
-” আমি কখনোই ক্যারেকটারলেস বলিনি।”
-” যা বলেছো তাতে আর ক্যারেকটারলেস উচ্চারণ করতে হয় না।”
-” তুমি কি আমাকে কম বলেছিলে? তুমিও আমাকে বলেছো আমিও বলেছি। ব্যাস। কাটাকাটি হয়ে গিয়েছে।”
-” হয়েছে ছাড়”
-” আগে বলো ক্ষমা করেছো আমাকে, কোনো রাগ নেই আমার প্রতি। বলো।”
-” বলে কি হবে? দুইদিন পর তো ঠিকই যা ইচ্ছা বলবি।”
-” বলব না। প্রমিজ..”
রাজীব পুষ্পর মুখটা তুলে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
-” গ্যারান্টি কি?”
-” তুমিই গ্যারান্টি ”
পুষ্প দুষ্টুমির হাসি দিলো। রাজীব হেসে পুষ্পর ঠোঁটে চুমু খেতে নিলেই পুষ্প ওর হাত দিয়ে ঠোঁট ঢেকে ফেললো। রাজীব ভ্র কুচকে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। পুষ্প ভ্যাংচিয়ে বলল,
-” বউকে কেউ তুই তুকারী করে কথা বলে?”
রাজীব বলল,
-” তুই কি তাচ্ছিল্যের ভাষা? কাছের মানুষদেরই কেবল তুই করে বলা যায়। অচেনা অপরিচিত কাউকে তুই করে সম্বোধন করে দেখিস তো, অকথ্য গালিগালাজ তো করবেই সাথে জুতোপেটাও করতে পারে।”
-” তোমরা কি ক্রিমিনালদেরকে আপনি আপনি স্যার স্যার করে সম্বোধন করো?”
রাজীব মাথা চুলকে বলল,
-” তা করিনা কিন্তু”
পুষ্প থামিয়ে বলল,
-” হুহ আমাকে তুমি করেই বলতে হবে।”
-” আমার লজ্জা লাগে ”
-” এহ আসছে আমার লজ্জা পেতে। বউকে তুমি করে বলতে লজ্জা করে! হায় আল্লাহ আমি কোথায় যাই! ঢাকা চলে যাই রাতেই কি বলো?”
রাজীব পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” না না না। আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট ম্যাম”
…..
কোনো একদিন বিকালে খুব তুফান হচ্ছিলো। রাত্রি অরিনকে বিছানায় রেখে ড্রয়ার খুলে চতুর্থ চিঠিটা বের করলো। অরিনকে লিখা চিঠিটা। যেটার প্রথম পৃষ্টায় লিখাঃ
সোনামনি, চাঁদের খনি। তুমি কত লাকি জানো? জানো না তো! তোমার কয়টা আন্টি জানো? ১০২ জন। তারমধ্যে একজন ভেরী স্পেশাল, একজন মোটামুটি স্পেশাল আর বাকীরা সবাই শুধু স্পেশাল। দুনিয়াতে কার এতগুলো আন্টি আছে বলো তো? কারো নেই। শোনো প্রিন্সেস, তুমি এই চিঠিটা কেবল তখনই পড়বে যখন তোমার বাবার কথা মনে পড়বে। তবে শুধু তিন লাইন করে পড়বে। চিঠি পড়া শেষ হয়ে গেলে পুনরায় পড়বে। ঠিক আছে তো? নাও টার্ন অভার দ্যা পেজ…

পরের পৃষ্ঠায় লিখাঃ

প্রিন্সেস,
তোমার কি বাবাকে কাছে পেতে ইচ্ছে হয়? তুমি কি চাও স্কুলের অন্যান্য বন্ধুদের মতো তুমিও বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে? তার জন্য তোমার মন খারাপ হয়? তাহলে শোন তুমি একদম মন খারাপ করবে না। একদম না। জানো পাখি, তোমার বাবা খুব ভালো একজন মানুষ। পৃথিবীতে খুব ভালো মানুষেরা…..

রাত্রি পুরো চিঠিটা ছিড়ে ফেললো। হঠাৎ করেই বাচ্চা মেয়েটার জন্য খুব খারাপ লাগতে শুরু হলো ওর। সে নিজে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে অনায়াসেই। কিন্তু এই বাচ্চাটা? সে কি মানতে চাইবে কখনো? রাত্রি অরিনের দিকে তাকালো। মেয়েটা ঘুমুচ্ছে। ঘুমের মধ্যেও মেয়েটা হাত কামড়াচ্ছে। রাত্রি বারান্দায় চলে এলো। বৃষ্টি থেমে গিয়েছে মোটামুটি। সন্ধ্যে হয়ে এলো বলে। রাত্রির চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। শুধু একটা গানই ওর কানে বাজছে,

নীল দিগন্তে, ওই ফুলের আগুন লাগলো, লাগলো
নীল দিগন্তে,
বসন্তে সৌরভের শিখা জাগলো,
নীল দিগন্তে, ওই ফুলের আগুন লাগলো, লাগলো
নীল দিগন্তে…..

রাত্রি ঠোঁট কামড়ে নিজেকে শক্ত রাখে। চোখের পানি চোখেই শুকিয়ে যায়। সে দেখতে পায় গেটের সামনে একটা গাড়ি এসে থেমেছে। গাড়ি থেকে সৌরভ নেমে ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। কিন্তু সৌরভ হাসে না। সৌরভ আসেও না। আসে অন্য একজন। একজন ভদ্রলোক বের হয়ে হাসি হাসি মুখে গেট অতিক্রম করে বাসায় ঢুকে। ভদ্রলোক একা না। তার সাথে একজন মহিলা আরেকজন পুরুষ। এই ভদ্রলোককে মাঝেমাঝেই রাত্রি দেখতে পায়। ও যখনই বাসা থেকে বের হয় কোথাও না কোথাও এই লোককে দেখবেই। রাত্রির মনে হলো, লোকটা সৌরভ হলে কেমন হতো? এমন যদি হতো সৌরভ এসে খুব রাগ দেখাতো। ডিভোর্স পেপারটা ছিড়ে ফেলে ওদের নিয়ে যেতে চাইতো! ও না গেলে অরিনকে কোলে করে নিয়ে যেতো। ও তখন ওদের পিছুপিছু চলে যেতো। একটা সুন্দর জীবন হতো ওর। বাবা সব অপকর্ম স্বীকার করে জামিন পেয়ে আবার ফিরে আসতেন। মা সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরে যেতেন। ছোট মামী আবার ফিরে আসতেন। স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেন। নিহারিকা ভাবী ফিরে আসতো। রাহাত ভাইয়া আর নিহারিকা ভাবীর সংসার আবার গড়ে তুলতো। সব কিছু স্বপ্নের মতো হতো। বাস্তবের চেয়ে কল্পনা এত সুন্দর কেন? বাস্তবতা কেনো এত কঠোর?
অথচ বাস্তবে কেউ ফিরে আসে না। সিগারেটের ধোঁয়ায় উবে যায় রাহাতের ভেতরকার হাহাকার। নাসির হোসেনের জামিন হয় না। খুশবু সুস্থ্য হোন না। হাসপাতালই হয় উনার শেষ বাসস্থান। জাহানারাও আগের মতোই থেকে যান। তিনিও ফিরেন না। মেয়ের খোঁজ করেন না।
সময় বদলে যায়। সৌরভকেও সংসারী হতে হয় নতুন কাউকে নিয়ে। রাজীব পুষ্পর জীবনে আসে নতুন অতিথি। আর হ্যা রাত্রির জীবনেও কেউ আসে। এলোমেলো হয়ে যাওয়া রাত্রিকে গুছিয়ে নেয় সে। ধীরে ধীরে সৌরভের স্থানটা দখল করে নেয় সে। এখান থেকেই হয়তো শুরু অরিন নামে সেই ছোট ফুটফুটে বাচ্চাটির বাবা হারা না হওয়ার গল্প।

“সমাপ্ত”

আজকে অন্তত নাইস,সুন্দর না বলে গঠনমূলক আলোচনা, সমালোচনা করুন।❤❤ কেমন লাগলো কমেন্টে জানান।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here