আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ১

ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমার সাথে অদ্ভুত একটি ঘটনা ঘটে যাচ্ছে । কে যেনো প্রতিদিন একটি ছোট ছেলে কে দিয়ে বেলী ফুলের মালা পাঠায় আমাকে। অনেক খুঁজার চেষ্টা করেও কিছু লাভ হলো না , জানি না কে সে । ঐ ছোট ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলে বলে একটি ভাইয়া পাঠিয়েছে এর বেশি আর কিছু জানে না সে ।

আমি ইনায়াত আহমেদ নিরা , সবাই নিরা বলেই ডাকে । মধ্যবিত্ত পরিবারের, মা-বাবার একমাত্র মেয়ে আমি । মধ্যবিত্ত পরিবারের হলেও আমার সবকিছুর খেয়াল রেখেছে মা-বাবা , মুখফুটে বলার আগেই সব এনে দিতো একমাত্র মেয়ে বলে কথা । অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি আমি ।

আজ দুই দিন পর ক্যাম্পাসে এলাম , সাথে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রিয়া সেও আমার সাথে একই ভার্সিটিতে পড়ে । তার সাথে কথা বলতে বলতে গেইটের ভিতরে পা বাড়ালাম তখনি হঠাৎ করে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যেতে নিলাম ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম , এই বুঝি আমি মাটিতে পরে গেলাম পুরো ক্যাম্পাসের মানুষের সামনে ।

কিন্তু অনুভব করলাম আমি এখনো মাটিতে পরিনি কে যেনো ধরে রেখেছে । চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম এক সুদর্শন যুবক আমায় ধরে রেখেছে চোখে তার সানগ্লাস , আমার দিকেই তাকিয়ে আছে বোধহয় । হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি ক্যাম্পাসের অনেকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাই আমি তাড়াতাড়ি ওঠে দাড়ালাম ।

” এই যে মিস আপনি কি দেখে চলতে পারেন না । না দেখলে চোখে চশমা লাগান নাহলে আপনি এভাবে ধাক্কা দিয়ে যে কেউর কোমর ভেঙে দিতে পারেন আর আজ আমি না ধরলেই আপনার কোমরটাই ভাঙতো ” । এই বলে ছেলেটি এক শয়তানি হাসি দিলো কিন্তু তার পাশে দাড়ানো কয়েকটি ছেলে কিটকিটিয়ে হেসে ওঠলো যেনো এখানে সার্কাস চলছে ।

” দেখেন মি: যেই হোন আপনি , আমি যথেষ্ট ভালো দেখি । চোখে দেখেননা তো আপনি এই সকালবেলা মাথার উপর রোদ না থাকাকালীন আপনি চোখে সানগ্লাস দিয়ে রেখেছেন । আপনার জন্য আজ আমার কোমর ভাঙতো “।

” দেখুন মিস আপনার সাথে অযথা তর্ক করার সময় নেই , আমার হাতে আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে , এই চল তোরা আমার সাথে ” ।

এই বলে ছেলেটি পাশ কাটিয়ে চলে গেল গেইটের বাহিরে, আমার ভিষন রাগ ওঠতে লাগলো আমার সাথে আজ পর্যন্ত কেউ এভাবে কথা বলেনি । নিজে নিজেই বকবক করতে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম । রিয়া পিছন থেকে বললো ,

” এই নিরা দোষটা কিন্তু তোরই ছিল, তুই সামনে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বলতে ক্যাম্পাসে ঢুকেছিস ” ।

” এই তুই বেশি ঐ অসভ্য লোকটার পক্ষ নিয়ে কথা বলবি না , মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তার নূন্যতম ধারণা নেই ঐ লোকটার ” ।

” আর তোর দিকে যেহেতু তাকিয়েছি তাহলে দোষ তোর আমার না তুই ছিলি বলেই তোর দিকে তাকিয়ে কথা বলেছি ” ।

” যাক বাবা দোষ এখন আমার হয়ে গেল , ঐ লোকটা ঠিকি বলেছে তোর চোখে চশমা লাগাতে হবে । আচ্ছা তুই চশমা লাগালে দেখতে কেমন লাগতে পারে তোকে বলতো । সবাই তোকে তখন চারচোখ বলে ডাকবে ” ।

এই বলে রিয়া একাধারে হাসতেই লাগলো । কথা বলতে বলতে আমরা ক্লাসে এসে সিটে বসলাম , ঠিক তখনি একটি মেয়ে আমাদের সামনে এসে দাড়ালো ।

” হাই আমি প্রিয়া ,আমি কি তোমাদের ফ্রেন্ড হতে পারি”।

ফেইসবুকেও আমি অজানা মেয়েদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করি । কথা বলতে বলতে একসময় তারা আমার অনেক আপন হয়ে ওঠে ।
অজানা কারো সাথে কথা বলে তাকে আপন কেউ বানিয়ে নেওয়া , এক আলাদা ভালো লাগা কাজকরে ।
আর কলেজে তো একই ক্লাসে পড়ি বন্ধুত্ব করাই যায় ।

” হ্যা, অবশ্যই হতে পারি । আমি নিরা আর ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রিয়া ” ।

” আচ্ছা তুমি যে কিছুক্ষণ আগে একটি ছেলের সাথে ধাক্কা খেলে তাকে চিনোনা তুমি ” ?

” না , কে সে ” ?

” ওনি আমাদের ভার্সিটির ক্রাশ নিহান চৌধুরী ।
ভার্সিটির সবাই নিহান বলতেই পাগল । ভার্সিটির পলিটিক্যাল লিডার ওনি, মাস্টার্সের ছাত্র ও । বেশ মেধাবী অনেক । পলিটিক্স, লেখাপড়া একসাথেই হ্যান্ডেল করে ” ।

” তুমি কিভাবে এতো কিছু জানো ” ?

” ভার্সিটির ক্রাশ বলে কথা না জানলে হয় , তাছাড়া ওনি তো আমার ও ক্রাশ ” ।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


” আচ্ছা থাকো তোমার ক্রাশকে নিয়ে এখনি স্যার এসে পরবে বসে পরো , পরে কথা হবে ” ।

ক্লাস শেষে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার ঐ ছোট্ট ছেলেটি এসে তাজা বেলী ফুলের মালা হাতে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল । আমি চুপ করে তাকিয়েই রইলাম তার যাওয়ার পথে । বেলীফুলের মালা আমার অনেক পছন্দের , তাই ফুলটি না ফেলে আমার কাছেই রেখে দেই । অন্য কেউ হলে কখনি তা ফেলে দিতো ।

” নিরা আজো ছেলেটি তোকে বেলী ফুলের মালা দিয়ে গেল , আর আমরা এখনো জানতৃ পারলাম না ছেলেটি কে । যেই হোক এতটুকু নিশ্চিত যে ছেলেটি তোকে ভালোবাসে ” ।

” কি আজেবাজে বকছিস তুই রিয়া , সবসময় একটু বেশিই বুঝিস তুই ” ।

এতোক্ষণ ওদের কথা মন দিয়ে শুনছিল প্রিয়া,

” কিরে নিরা কোনো লাভ সাব এর কেইস নাকি , এই বেলী ফুলের মালার রহস্য কি ” ?

” আমি বলি প্রিয়া শুন , কলেজের প্রথম দিনের পর থেকেই কে যেনো নিরাকে এই বেলী ফুলের মালা পাঠায় । তার এই মজনুকে আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি, পাবোই বা কিভাবে কিছুই তো আমরা জানি না ওর ব্যাপারে ” ।

” ওহহহ এই কাহিনী , আরে নিরা দেখ হয়তো তোর মজনু এখনি তোর দিকেই তাকিয়ে আছে”।

প্রিয়ার কথা শুনে নড়েচড়ে দাড়ালাম আমি ,

” দেখ তোরা এসব বলা বন্ধ করবি নাহলে কিন্তু আমি তোদেরকে ফেলে এখনি চলে যাবো , আমার খিদে পেয়েছে চল ক্যান্টিনে যেয়ে বসি” ।

” আচ্ছা ঠিক আছে চল , এই প্রিয়া তুইও চল আমাদের সাথে ” ।

” হ্যা, আসছি চল ” ।

ক্যান্টিনে যেয়ে কেমন যেনো এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো আমার , মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে । পাশে ফিরে তাকালাম নাহ কেউ নেই । সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমরা যেয়ে কর্নারের টেবিলে বসলাম । হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখলাম……

চলবে…

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ১
#Sohana_Akther

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here