নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-২৯+৩০

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৯ {বোনাস 🤍}

আব্রাহাম-আইরাত যে হোটেলে বর্তমানে আছে এটা চারিদিকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বিশাল। হোটেলের ভেতরেই রয়েছে তিনটা রেস্টুরেন্ট, ক্লাব”স,পার্ক সবই। হোটেলের ঠিক পেছনের দিক টাতে রয়েছে বেশ বড়ো সড়ো আকারে একটা রিসোর্ট। সেখানে সমুদ্র, সমুদ্রের পাশেই এলকোহল/ড্রিংক্স এর শপ৷ আইরাত ওই মেয়ে গুলোর সাথে গিয়েছে প্রায় অনেকক্ষণ যাবৎ। আব্রাহাম মূলত আইরাত কে বলে নি যে তারা এখানে কেনো এসেছে। তাই সে আইরাত কে আটকিয়ে রাখে নি। পুরো হোটেল আর রিসোর্ট ঘুড়ে দেখার বাহানা দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন আব্রাহাম নিজেও বাইরে যাচ্ছে। আর তখন ফোনের ওপাশে রাশেদ ছিলো। আতিক রহমান যে ছিলো তার কোম্পানি পুরো পুরি ডাউন খেয়ে গেছে। আর এটা যেনো সে কোন মতেই মেনে নিতে পারছে না। তার মন এটা মানতে বেশ নারাজ। অবশ্য আব্রাহাম নিজেই ডাউন করে দিয়েছে। কেননা তার কোম্পানি এবং সেখানকার সব জিনিসের মান একেবারেই কম বললেই চলে। যার দরুন আতিক এখন আব্রাহামের অফিসে এসে কিছুটা ঝামেলা পাকিয়েছে। যদিও তা রাশেদ আর অয়ন সব সামলিয়ে নিয়েছে। ওদিকে আইরাত একটা টেবিলে বসে থেকে চারিদিকে নিজের চোখ বুলাচ্ছে আর ডাবের পানি খাচ্ছে। তবে তার মাঝেই কোথা থেকে যেনো হুট করেই একজন লোক আসে। আইরাতের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখ থেকে গ্লাস খুলে ফেলে।

তায়াফ;; হ্যালো মিস.

আইরাত ঘুরে পেছনে ফিরে তাকায়। দেখে বখাটে টাইপ লুক নিয়ে কেউ একজন তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

তায়াফ;; হ্যালো।

আইরাত;; হ্যালো। (বিরক্তি নিয়ে)

তায়াফ;; আমি তায়াফ খান। আপনি?

আইরাত;; আইরাত।

তায়াফ;; ওয়াও নাইস নেইম। এখানে নিউ?

আইরাত;; হুম।

তায়াফ;; তাই তো বলি যে আপনাকে আগে কেনো চোখে পরলো না আমার।

আইরাত এবার সোজা তায়াফের দিকে তাকায়।

আইরাত;; দৃষ্টি যদি অন্যের ক্ষেত্রে কটু হয় তাহলে চোখে না পরা টাই শ্রেয়।

এই বলেই আইরাত সোজা সেখান থেকে উঠে চলে আসে। আর তায়াফ সেখানেই বসে থাকে।

তায়াফ;; এটিটিউড!

আইরাত দুহাত ভাজ করে সমুদ্রের পাড়ে এসে পরে। এখানে তীব্র বাতাস। চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে বারবার। সাদা পালকের বড়ো বড়ো পাখি গুলো উড়ে বেড়াচ্ছে সবদিকে। সমুদ্রের ঢেউ-এর আওয়াজ এসে কানে লাগছে। তখনই আইরাতের ডান পাশের বাহুতে কেউ টোকা দেয়। আইরাত সেদিকে তাকায় দেখে কেউ নেই আরেক দিকে টোকা পরে সেদিকে তাকায় দেখে এখনো কেউ নেই। আইরাত বুঝলো এটা আব্রাহাম ছাড়া আর কেউ না। সোজা পেছনে ঘুরে দেখে আব্রাহাম-ই।

আব্রাহাম;; এখানে কি করো?

আইরাত;; আপনি এখানে কখন এলেন?

আব্রাহাম;; প্রশ্ন টা প্রথমে আমার ছিলো!

আইরাত;; দাঁড়িয়ে আছি।

আব্রাহাম;; আমিও মাত্রই আসলাম আর এসেই তোমাকে দেখতে পেলাম।

আইরাতের আব্রাহামের সাথে কথা বলতে বলতে চোখ যায় আবার ড্রিংক্স এর শপের দিকে। দেখে এখনো তায়াফ তার দিকে তাকিয়েই আছে। পরবর্তীতে উঠে চলে যায়। আব্রাহাম আইরাতের নজর অনুসরণ করে পেছনে তাকায়।

আব্রাহাম;; Is everything ok!?

আইরাত;; ইয়াহ।

আব্রাহাম;; এখানে কি আরো কিছু সময় থাকবে নাকি?

আইরাত;; না আমার মনে হয় এখন এখান থেকে যাওয়া উচিত।

আব্রাহাম;; চলো।

আব্রাহামের আগে আইরাত পা ফেলে চলে আসে। এভাবেই সেই সময় টুকু যায়। বিকেলের দিকে আইরাত আয়নার সামনে বসে বসে চুইং গাম খাচ্ছে আর আব্রাহাম আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে তার চুলগুলো বিনুনি করে দিচ্ছে।

আব্রাহাম;; হুম হয়ে গেছে।

আইরাত আয়নাতে তাকায়।

আইরাত;; এত্তো সুন্দর বিনুনি তো আমি নিজেও করতে পারি না। এতো ভাজ কীভাবে দিলেন?

আব্রাহাম;; আমি কি তোমার মতো ঢেড়স নাকি!

আইরাত;; আমি, আমি ঢেড়স?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আইরাত;; হ্যাঁ ভালো হয়েছে।

আব্রাহাম;; চলো। বাইরে যাবো।

আইরাত;; কোথায়?

আব্রাহাম;; যেদিকে দুচোখ যায়৷

আইরাত;; আবার একই ডায়লগ।

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম বাইরে গিয়ে একটা কালো বাইকের ওপর উঠে পরে। নিজের জেকেটের হাতা ফোল্ড করতে করতে আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে…

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল উঠে পরো।

আইরাত;; আমরা বাইকে যাবো?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আইরাত আব্রাহামের পেছনে বসে পরে। নিজের হাতটা আলতো করে আব্রাহামের কাধে রাখে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল এভাবে বসে না তো।

আইরাত;; তো!

আব্রাহাম পেছন থেকে আইরাতের দুহাত নিয়ে নেয়। আইরাতের হাত নিয়ে নিজেকে জড়িয়ে ধরার মতো করে ধরে বলে…

আব্রাহাম;; এভাবে ধরতে হয়।

আইরাত উঠে আসতে ধরলে আব্রাহাম তেজি কন্ঠে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; এই একদম সরবে না নয়তো এইযে এখনই দিলাম বাইক থেকে ফেলে।

আইরাত;; আরে না না না আচ্ছা আচ্ছা ঠিকআছে ছাড়বো না ছাড়বো না।

আব্রাহাম;; গুড।

আব্রাহাম বাইক স্টার্ট দেয়। আর আইরাত কে তার জড়িয়ে ধরে থাকতে হচ্ছে। আব্রাহাম এক নজর বাইকের গ্লাসে আইরাতের মুখ টা দেখে। কেমন রাগি রাগি একটা ভাব যে দেখে সে বেশ মজা পাচ্ছে। বেশ সময় পর বাইক এসে থামে একটা স্টেডিয়ামের মতো বিশাল আকৃতির মাঠে। আইরাত নেমে পরে। খেয়াল করে দেখে মাঠের এক পাশে কম করে হলেও ১০ টা ঘোড়া রাখা। কিছু ঘোড়া কালো কালারের, আবার কিছু ব্রাউন, দুধ সাদা, লালচে এমন কালারের। তবে আব্রাহাম তাকে এখানে নিয়ে এলো কেনো তাই ভাবছে।

আইরাত;; আমরা এখানে কেনো এলাম?

আব্রাহাম;; For horse riding…

আইরাত অবাক হয়ে তাকায়।

আইরাত;; আপনি করেন গিয়ে আমি নেই।

আব্রাহাম;; কেনো?

আইরাত;; আমি এর আগে কখনোই ঘোড়ার পিঠে উঠি নি। আর রাইড করা তো অনেক দূর।

আব্রাহাম;; আগে উঠো নি কিন্তু এবার উঠবে।

আইরাত;; না আমার ভয় লাগে।

আব্রাহাম;; ডোন্ট ওয়ারি বেবিগার্ল এরা অনেক ভালো ট্রেইন করা। অনেক ভালো ট্রেইনিং দেওয়া আছে এদের। ফেলবে না তোমাকে। আর সেইভাবেই সেইফটি দেওয়া থাকবে।

আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; বিলিভ মি, অনেক ভালো লাগবে। চলো।

আব্রাহাম এগিয়ে যেতেই একটা কালো কালারের ঘোড়া সামনে এগিয়ে এসে আব্রাহামের হাতে নিজের মাথা ঘেষতে লাগে। আব্রাহামও তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তবে আইরাতের পছন্দ হয়েছে একদম ধবধবে সাদা কালারের ঘোড়া টা। সে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে ঘোড়ার কপালে হাত রেখে দেয়। এতে ঘোড়া শব্দ করে ওঠে। প্রথমে আইরাত কিছুটা ভরকে গেলেও এখন যেনো ঠিক আছে।

আব্রাহাম;; বলেছিলাম না, এরা খুব সহজেই পোষ মেনে যায়।

আইরাত;; কত্তো কিউট এরা।

আব্রাহাম;; রেডি?

আইরাত;; আমি যদি ব্যাথা পাই তাহলে সব আপনার দোষ।

আব্রাহাম;; আচ্ছা আর ব্যাথা না পেলে আমায় এত্তো গুলো কিস।

আইরাত;; না।

আব্রাহাম;; চুপ।

আব্রাহাম আইরাতের হাটুতে শক্ত করে স্কেচ পরিয়ে দেয়। কুনির দিকটা তেও পরিয়ে দেয় যেনো কোথাও আবার ব্যাথা পেয়ে ছাল না উঠে যায়। মাথার ওপরে একটা ছোট হ্যালমেট সিস্টেম পরিয়ে দেয়। আব্রাহাম আইরাত কে ঘোড়ার ওপরে ওঠতে হেল্প করে। আইরাত একটা সিলভার কালারের প্যান্ট আর অফ হুয়াইট কালারের টপ পরে ছিলো। আব্রাহাম কিছুটা দূর থেকে আইরাত কে দেখে। সত্যি বলতে আইরাত কে দেখে মনে হচ্ছে যে সে এই মুহুর্তে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে এমন।

আব্রাহাম;; ঘোড়ার সাথে তোমার ড্রেস সেন্স একদম মিলে গিয়েছে।

ঘোড়াটা কয়েক কদম টগবগিয়ে হেটে বেড়ায়। আইরাত প্রথমে ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পারলেও পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে বসে। ঘোড়ার সাথে বাধা ওপরে দুটো কালো বেল্ট হাতে জড়িয়ে নেয়।

আইরাত;; আপনি?

আইরাতের বলার পরই আব্রাহাম নিজেও গিয়ে এক লাফে কালো ঘোড়া টার ওপরে উঠে বসে পরে। ঘোড়ার মাথায় বা বাহুতে যে শক্ত দড়ির মতো বাধা ছিলো তা খুলে ফেলে দেয়। আইরাতের ঘোড়া টা আবার নাড়াচাড়া শুরু করলে আইরাত শক্ত করে একহাতে ঘোড়ার বাহুতে থাকা দড়ি টা ধরে ফেলে৷

আব্রাহাম;; ভয় নেই জানপাখি পরবে না।

আইরাত;; আপনি এভাবেই ঘোড়ার ওপর বসে থাকবেন!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ। আমি পারি।

আইরাত;; হুম বুঝলাম।

এটা বলার সাথে সাথেই সাদা ঘোড়াটা দেয় এক দৌড়। আর আইরাত মুখ টা ভেটকিয়ে দিয়ে বাম হাতে নিজের মাথার ওপরের হ্যালমেট টা শক্ত করে চেপে ধরে। ঘোড়া যে আসলে এতো তীব্র গতিতে ছুটতে পারে তা আইরাতের ধারনা ছিলো না। অর্থাৎ ঘোড়াকে ছুটতে দেখেছে তবে তা বাইরে থেকে। নিজের এমন এক্সপেরিয়েন্স ফার্স্ট। আইরাত যেই না চিল্লানি দিতে যাবে তখনই তার পাশে আসে আব্রাহাম। সে কালো ঘোড়ার ওপর বসে আছে। কোন সেইফটি নেই, কোন কিছুই নেই। ইন ফ্যাক্ট আইরাতের ঘোড়া থেকে আব্রাহামের ঘোড়ার তেজ আরো দ্বিগুণ বেশি। আইরাত কে ভয় পেতে দেখে আব্রাহাম বলে…

আব্রাহাম;; কিচ্ছু হবে না ভয় পেয়ো না একদম, কিছুই হবে না। বি নরমাল। স্বাভাবিক হওয়ার ট্রাই করো। আর ঘোড়ার গতির সাথে নিজে কো-অপারেট করো। কিছুই হবে না বেবিগার্ল। ডোন্ট বি স্কেয়ার।

আইরাত আব্রাহামের কথা মতো দুহাতে ঘোড়ার গায়ের ওপরের দড়ি আকড়ে ধরে। নিজের বডি কে একদম সোজা করে ফেলে৷ দুপা একদম সোজা করে রাখে। এবার আইরাত খেয়াল করে যে এটা আসলেই কাজ করেছে। এবার যেনো ঘোড়ার পায়ের গতির সাথে আইরাত নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে। এতোক্ষন তার মুখে ভয়-ভীতি স্পষ্ট থাকলেও এবার যেনো প্রচুর এক্সাইটম্যান্ট লাগছে। আইরাত কে ছাড়িয়ে আব্রাহাম এগিয়ে যায়। আইরাত আব্রাহাম কে দেখে। তার রাইড করা এতো টা স্মুথ আর স্কিল্ড যা বলার বাইরে। বিশাল আকাড়ের পুরো স্টেডিয়াম টা প্রায় চার বার রাউন্ড দিয়েছে তারা উভয়েই। অবশেষে থেমে পরে৷ আব্রাহাম ঠিক থাকলেও আইরাতের তো হাপাতে হাপাতে জীবন শেষ। আব্রাহাম আবার এক লাফে নেমে পরে ঘোড়ার ওপর থেকে। ঘোড়া টা এবার আব্রাহামের মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে দেয়।

আইরাত;; আব্রাহাম, আমি নামবো।

আব্রাহাম;; কেনো আরো একটু বসিয়ে রাখি!

আইরাত;; না না প্লিজ না। এবার নামতে হেল্প করুন আমায় প্লিজ৷

আব্রাহাম;; ওকে।

আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের কোমড় ধরে আরেক হাতে আইরাতের এক হাতের তালু চেপে ধরে নামিয়ে আনে।

আব্রাহাম;; তো কেমন লাগলো?

আইরাত;; ভয়ও আবার বেশ ভালোও।

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; শুধু এটার জন্য এনেছেন আপনি এখানে আমায়?

আব্রাহাম;; না আমি ভাবলাম যে লাইফে সবকিছুই ট্রাই করা দরকার আসলে। সবকিছুর টেস্ট থাকা ভালো। তাই আর কি।

আইরাতের চোখে পরে রাস্তার ওপাশে থাকা সাদা কালারের গোলুমোলু দুটো কুকুর ছানা কে৷ তারা রাস্তার ওপাশে থাকায় এপাশে সহজে আসতে পারছে না। আর রাস্তায় বারবার গাড়ি যাতায়াত করছে। আইরাত আব্রাহাম কে কিছু না বলেই সোজা সেদিকে চলে যায়।

আব্রাহাম;; আইরাত! কোথায় যাচ্ছো?

আইরাত;; ওইতো দেখুন রাস্তার পাশে দুটো কত্তো সুন্দর কুকুর ছানা।

আব্রাহামের কিছু বলার আগেই আইরাত ছুটে গিয়ে চলে যায়। রাস্তা বেশ সাবধানে পার হয়ে ওপাশে চলে যায়। গিয়েই সোজা কুকুর দুটো কে নিজের কোলে তুলে নেয়। তার অনেক বেশি মায়া লাগে। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের পাশে দাঁড়ায়। দেখে কুকুর গুলো আসলেই অনেক বেশি কিউট।

আইরাত;; কি কিউট তাই না!

আব্রাহাম;; হুমমম।

আইরাত;; না জানি কোন ***** এত্তো সুন্দর পাপ্পি গুলো কে এখানে ফেলে দিয়ে গেছে।

আব্রাহাম;; হুয়াট? এটা কি ছিলো?

আইরাত;; গালি।

আব্রাহাম;; 🙂

আইরাত;; আব্রাহাম আমি এদের বাসায় নিয়ে যাই আমার সাথে করে?

আব্রাহাম;; আব……

আইরাত;; প্লিজ প্লিইইইইইইজ।

আব্রাহাম;; আচ্ছা, ঠিকআছে।

আইরাত তো খুশিতে গদগদ। আব্রাহামের বাইকের সামনে একটা ছোট্ট বেবি ব্যাগ নিয়ে নেয়। তাতে কুকুর দুটো কে বসিয়ে রেখে দিয়েছে। তারা অনেক টাই ছোট আর বড়ো বড়ো লোম যুক্ত। কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে। এদের নিয়েই আইরাত তার বাসায় চলে যায়। যখন থেকে বাসায় এসেছে তাদের নিয়েই পরে আছে। আর আব্রাহাম আইরাতের কান্ড দেখছে।

কিছুসময় পর রুমের দরজাতে নক পরে। আব্রাহাম গিয়ে দেখে হোটেলের মেনেজার এসেছে।

আব্রাহাম;; ইয়েস!

মেনেজার;; স্যার আমাদের হোটেলে সন্ধ্যায় একটা জাক-জমক পূর্ন পার্টির এরেঞ্জম্যান্ট করা হয়েছে। অনেকেই আসবে সেখানে। আর সেখানে কিন্তু আপনাকে মাস্ট আসতেই হবে। আপনি না এলে সবই ফিকে পরে যাবে।

মেনেজার আব্রাহাম কে একটা ভিআইপি ইনভিটেশন কার্ড দিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; জ্বি আমি অবশ্যই আসবো।

রুমের ভেতর থেকে পিনপিনিয়ে কিছু আওয়াজ মেনেজারের কানে পৌছায় তবে সে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে এক মুচকি হেসে সেখান থেকে দ্রুত বিদায় নেয়।
আব্রাহাম ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। দেখে আইরাত ফ্লোরে কুকুর গুলো কে নিয়েই বসে আছে।

আইরাত;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ বেবিগার্ল।

আইরাত;; আমি না এদের নাম দিয়েছি।

আব্রাহাম;; তাই!

আইরাত;; হ্যাঁ, একটার নাম টাফি আরেকটার নাম সফটি।

আব্রাহাম;; কিউট ঠিক ওদের মতোই।

আব্রাহাম তার হাতে থাকা ইনভাইট কার্ডে একবার তাকায় আর আরেকবার আইরাতের দিকে তাকায়। ভেবে শুনেই সব কাজ করতে হবে।


।#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩০

বিকেলের দিকে বেশ কতোগুলো স্টাফ আইরাত-আব্রাহামের কাছে আসে। আসলে পার্টি টা বেশ বড়োসড়ো হবে তাই এক এক জনের গেটাপ টাও হবে সেই ভাবেই। মূলত স্টাফ গুলো আব্রাহাম আর আইরাতের ড্রেস & বাকি সব ঠিক করার জন্য এসেছে। তবে আব্রাহাম নিজের পছন্দ অনুযায়ী তাদের জন্য ড্রেসাপ এবং অন্যান্য জিনিস চুস করে সবাই কে বাইরে চলে যেতে বলে। আইরাত কে সে রেডি করিয়ে দেয় নিজ হাতেই। একটা গাঢ় নেভি ব্লু কালারের গাউন পরিয়ে দেয়। পেছনে কিছুটা ব্যাকলেস আর হাতা গুলো গুটানো। আর আব্রাহাম সাদা-কালো সুট পরে নেয়। আইরাত আয়নার সামনে বসে বসে কানের দুল পরছিলো তখন আব্রাহাম আইরাতের পেছনে এসে দাঁড়ায়। আইরাত চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। সামনে একটা ন্যাকলেস ছিলো তা আব্রাহাম নিজ হাতে তুলে নিয়ে আইরাত কে পরিয়ে দিতে দিতে বলে…

আব্রাহাম;; ইউ লুক প্রিটি।

আইরাত;; থাংকু।

আব্রাহাম আইরাত কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। এক হাটু ভাজ করে আইরাতের সামনে বসে পরে। তার ঠোঁটের পাশে আলতো করে চুমু এঁকে দেয়। আইরাতও কিছু বলে না শুধু ক্ষনিকের জন্য নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়ে আবার মেলে তাকায়।

আইরাত;; আব্রাহ….

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল কিছু বলার আছে আমার তোমাকে।

আইরাত;; হ্যাঁ বলুন না।

আব্রাহাম;; একচুয়ালি আই নিড ইউর হেল্প।

আইরাত;; হেল্প? কিন্তু আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করবো!

আব্রাহাম;; তুমিই করতে পারো।

আইরাত;; আচ্ছা বলুন।

আব্রাহাম;; আসলে সত্যি বলতে আমি এখানে আমাদের হানিমুনের জন্য আসি নি।

আইরাত;; তাহলে?

আব্রাহাম;; কোহিনূর চুরি হয়ে গেছে৷

আইরাত;; মানে বুঝলাম না। কোহিনূর তাও আবার চুরি? কি করে সম্ভব এটা?

আব্রাহাম;; আমি শুধু জানি যে এই কোহিনূর চুরি হয়ে গেছে। আন্ডারগ্রাউন্ড এর যে অফিসার রা ছিলো তারা সবাই হন্নে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে। আর যতটুকু সম্ভব এই ব্যাপার টা মিডিয়া/প্রেস এইসবের থেকে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। কেননা একবার শুধু একবার এই নিউজ পাবলিক হয়ে গেলে সবার সম্মুখীন হতে হবে সরকার কে আর…

আইরাত;; আপনাকে..!

আব্রাহাম;; হয়তো হ্যাঁ। কেননা কোহিনূর যেখানে ছিলো সেখানের পুরো গার্ড রা সব আমারই ছিলো। প্রশ্ন উঠবে আমার ওপর। আমার যাতায়াত ছিলো সেখানে, আঙুল উঠবে আমার ওপর। বাট এতে আমার কিছুই যায়-আসে না। আমি লোকজনের ব্যাপারে মাথা ঘামাই না একবিন্দুও। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে চুরি করলো কে? আর যেই করে থাকুক না কেনো ব্যাটা অনেক চালাক আর চুরির বিষয়ে তো এক্সপার্ট বলা যায়। কারণ এতো গুলো ক্যামেরা, গার্ড এদের চোখ ফাকি দিয়ে কোহিনূর চুরি করা মামার বাড়ির মোয়া না। স্পেশালি সেখানে ‘রেড ল্যাজার লাইট’ আছে। প্রচুর ক্ষতিকারক এই লাইট গুলো। হিউম্যান বডিতে লাইট লাগলে মানুষ পুরো পুড়ে যাবে। ইন ফ্যাক্ট মারাও যেতে পারে। তো এতো টাও ইজি না।

আইরাত;; এখন?

আব্রাহাম;; লিসেন এখানে কেউই জানে না যে তুমি আর আমি হাসবেন্ড এন্ড ওয়াইফ ওকে!

আইরাত;; কিহ?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ। আমি তা জানানোর প্রয়োজন মনে করি নি তাই জানাই নি। সেইদিন তোমাকে ওভাবে স্কাফ, মাস্ক, চশমা পরিয়ে নিয়ে এসেছি ফার্স্ট অফ অল তোমার সেইফটির জন্য আর সেকেন্ড হাইড করার জন্য। বিকজ এটা দরকারি ছিলো।

আইরাত;; মানে আপনার-আমার বিয়ের ব্যাপার টা পাবলিক না?

আব্রাহাম;; অন্তত এখানে না।

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম;; এবার শোন আমরা হোটেলের সবথেকে বড়ো হলরুমে যাচ্ছি বুঝলে সেখানেই পার্টি হবে। এমন একটা ভাব ধরবে যে তুমি আমাকে চেনোই না। শুধু আমার সাথে নরমাল ভাবে যাবে ওকে। সেখানে অনেক রকমের মানুষ থাকবে, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। যে এসব কিছুতে তুমি অনেক এক্সপার্ট। যদিও প্রকৃতপক্ষে তুমি এক্সপার্ট ই। এখানে সব ফরেইন কান্ট্রির লোক। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে যে তুমি এখানে কোথায় থাকো বা আগে তো তোমাকে এখানে কেউ দেখি নি, কার সাথে এসেছো? তাহলে বলবে তুমি রুম নাম্বার ০৯ এ থাকো ওকে!

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম;; মনে রেখো রুম নাম্বার ৯।

আইরাত;; কিন্তু ৯ ই কেনো?

আব্রাহাম;; এর উত্তর তুমি নিজেই পেয়ে যাবে। বুঝেও যাবে।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; আর হ্যাঁ বেবিগার্ল একদম ভয় পাবে না বুঝলে কারণ আমি সবসময় তোমার কাছে তোমার পাশে থাকবো। হ্যাঁ হতে পারে যে তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো না তাই বলে এটা ভেবো না যে আমি নেই বা আমি তোমাকে দেখছি না। মাই আই”স আর ওলয়েস আপওন ইউ।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; যাওয়া যাক?

আইরাত;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম-আইরাত এসে পরে। আইরাত কে সোজা হোটেলের হলরুমে যেতে বললেও আব্রাহাম একটু ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে তারপর সেখানে যায়। আইরাত হলরুমের ওপরের বেশ বড়োসড়ো একটা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতে ধরে। আচমকাই রুমের বিশাল ফোকাস লাইট এসে পরে আইরাতের ওপর। সবার নজর যায় তার দিকে। তবে সে কোন কিছুই না ভেবেই সোজা নিজের মন মতো করে নিচে চলে যায়। সত্যি বলতে সবাই হা করেই তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। আর তাদের মাঝে তায়াফও ছিলো৷ সে হাতে নিজের কোর্ট টা ঝুলিয়ে নিয়ে হাতে একটা এলকোহলের গ্লাস নিয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত এইসব রেখে সোজা এলকোহল শপের সামনে গিয়ে বসে পরে। পরিবেশের মাধুর্যতা ধরে রাখার জন্য একটা সফট মিউজিক প্লে করে দেওয়া হয়েছে। আইরাত আশে পাশে তাকাতাকি করছে৷ কেউ কেউ এক জায়গায় গোল হয়ে কথা বলছে, কেউ ফ্রেন্ড নিয়ে আবার কেউ ফ্যামিলি নিয়ে, আবার কেউ প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে ঘুড়ছে। সব বয়সের লোকজনই আছে এখানে। আইরাত মূলত আব্রাহাম কে খোঁজার চেষ্টা করছে কিন্তু তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এমন এক অজানা-অচেনা পরিবেশে একা সে। তবে পূর্বে আব্রাহামের বলা কথা গুলো মনে করে করেই আইরাত নিজেকে শান্তনা দিচ্ছে। তার ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটিয়ে দেয় একটা ছেলে। এ যেনো এক বিলেতি ইন্দুর। তাকে আইরাতের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আইরাত কপাল কুচকে ইচ্ছে করেই অন্য পাশে মাথা ঘুরিয়ে নেয়।

— Hay, you look really very beautiful..

আইরাত;; No chance bro so get lost..

ছেলেটা অবাক হয়ে তাকায় আর আইরাত তার দিকে তাকিয়ে এক টেডি স্মাইল দেয়। মিষ্টি সুরে অপমান। ছেলেটা চলে যায়। আইরাত একটা অরেঞ্জ জুসের অর্ডায় দেয়। কিছু সময় চলে যাওয়ার পর এনাউন্সমেন্টের আওয়াজে আইরাত সেদিকে তাকায়। আব্রাহাম আসছে।

আইরাত;; এহ কি ভাব! (মনে মনে)

আব্রাহাম এসে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তবে কিছুটা চিল্লাপাল্লার শব্দে আইরাত তার পেছনে তাকায়। দেখে তিন থেকে চারজন মেয়ে মাতামাতি করছে আব্রাহাম কে নিয়ে। যেনো তাদের আর তর সইছে না। আইরাত তাদের দেখে সেন্টি খেয়ে যায়। মানে এটা কি! বউ এর সামনে মেয়েরা তার জামাই কে নিয়ে এতো খুশি। আইরাত এমন এক সিচুয়েশনে পরেছে যে সে না পারছে কিছু কইতে আর না পারছে কিছু সইতে। সবাই কে তাদের মতো করে থাকতে দিয়ে আব্রাহাম সাইডে এসে পরে। আর আব্রাহাম আইরাত কে যেভাবে থাকতে বলেছে আইরাত ফুল ট্রাই করছে সেভাবেই থাকার। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের পাশে একটা উঁচু চেয়ারে বসে পরে। আইরাত কিছুটা গলা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। ওয়েটার এসে আব্রাহামের উদ্দেশ্যে “হ্যালো স্যার” বলে এক জাড় ওয়াইনের পেগ ট্রে রেখে যায় তার সামনে। আইরাত চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় তার দিকে। তবুও কিছু বলে না। আইরাত একমনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম নিজে একদম সোজা হয়ে থাকলেও তা টের পেয়েছে বেশ। সে আইরাতের দিকে তাকালে সে আস্তে করে অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে ফেলে৷ এভাবেই বেশ সময় যায়। তবে এর মাঝে কেউ কারো সাথে কথা বলে না। আইরাতের কথা বলার বেশ ইচ্ছে করছে কিন্তু সে অপারগ। আব্রাহাম কয়েক পেগ মেরে দেয় একসাথে।
তৎক্ষনাৎ একজন এসে হলরুমের মাঝেখানে দাঁড়িয়ে এনাউন্সমেন্ট করে একটা ‘গেইম ডান্স’ এর। এখানে সবাই কাপল থাকবে। প্রথমে সবাই নিজ নিজ পার্টনার কে নিয়ে কাপল হয়ে দাঁড়াবে। তবে পরবর্তীতে মিউজিকের তালে তালে পার্টনার তার স্থান পরিবর্তন করবে। এভাবে একে একে ঘুড়েফিরে সবাই আবার একটা কাপল হবে সে অচেনা হলেও কিছুক্ষন থাকতে হবে। তারপর আবার মিউজিক অন হলে তাদের স্থান পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ ঘুড়ে যেতে হবে। এভাবে যে একদম শেষ অব্দি নিজের আসল পার্টনারের সাথে টিকে থাকতে পারবে সেই বিজয়ী হবে। তবে এক্ষেত্রে আরো একটা টুইস্ট আছে আর তা হলো এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েরই পুরো মুখে বা শুধু চোখের অংশ টুকুতে বিভিন্ন ডিজাইন/কালারের মাস্ক থাকবে। পুরো হলরুমের আলো টাও কিছুটা ধোয়াসা থাকবে। সবাই কিছুটা চিল্লিয়ে ওঠে। হাতে গোণা শুধু কিছু কাপল দের বাদ দিয়ে আর বাকি সবাই এখানে পার্টিসিপ্যান্ট করে। আব্রাহাম উঠে চলে যায়। আইরাত ভাবে সে আর গিয়ে কি করবে তাই বসে বসে জুস খাচ্ছিলো তখনই একজন এসে আইরাতের সামনে নিজের হাত মেলে ধরে। আইরাত একবার তার হাতের দিকে তাকিয়ে আরেকবার হাতের মালিকের দিকে তাকায়। দেখে পুরো মুখ এক কালো ডিজাইন করা মাস্ক দিয়ে ঢাকা।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আব্রাহামের ডাকেই আইরাতের মুখে হাসির ঝলক ফুটে ওঠে। তার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে এই আব্রাহাম। আইরাত কিছু না ভেবেই সোজা আব্রাহামের হাতে নিজের হাত রেখে দেয়। তারা দুজনে এগিয়ে যায়। যাওয়ার সময় দুজন মেয়ে এসে আইরাতের চোখে দ্রুত একটা মাস্ক পরিয়ে দেয় তারপর চলে যায়। মিউজিক প্লে করে দেওয়া হয়। আব্রাহাম-আইরাত পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম আস্তে করে আইরাতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; যেভাবে সব চলছে তা চলতে দাও।

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম আইরাত কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে একহাতে তার আরেক হাত ধরে নেয়। আরেক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে। বাকিরাও তাই করে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে দুবার ঘুরিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে একটা চুমু বসিয়ে দেয়। আবার ঘুরিয়ে কিছু সময় ক্যাজুয়াল ডান্স করে আব্রাহাম আইরাত কে নিজের বাহুতে বেশ নিচু হয়ে ঝুকিয়ে নেয়। মিউজিক আবার প্লে হলে আইরাত এবার সাথে সাথে ঘুরে আরেক জনের কাছে চলে যায়। আব্রাহাম হাওয়া হয়ে যায়। আইরাত ডান্স আরেক জনের সাথে করলেও তার নজর যেনো আব্রাহাম কেই খুঁজছে। আইরাত সামনে তাকায়। দেখে একটা ছেলে। আইরাত তার সাথেই নাচছে। হঠাৎ করে সেই ছেলে টা বলে ওঠে…

— সংকোচ ফিল করবেন না। আমি অলরেডি বিবাহিত। কিন্তু করার কিছুই নেই রুলস আর রুলস। ফ্রেন্ড ভাবতে পারেন একদম ক্ষণিকের জন্য।

আইরাত বিনিময়ে মুচকি হাসে। আবার মিউজিকের তাল চেঞ্জ হয়ে গেলে আইরাত আবার ঘুরে যায়। আর এবার আইরাত যার কাছে যায় তার শুধু চোখ ই ঢাকা পুরো মুখ না। যার দরুন আইরাতের আর চিনতে বেশি একটা দেরি লাগে না। এই সেই কাল কে রিসোর্টে দেখা ছেলেটাই, তায়াফ। আইরাত বিরক্ত হয়। আবার চোখ ঘুরিয়ে আব্রাহাম কে খুঁজতে লাগে। কিন্তু সে নেই। তবে তায়াফের নজর আইরাতের দিকেই৷ আইরাত খেয়াল করে যে তায়াফের হাত টা আইরাতের দিকে এগিয়ে আসছে তবে তার আগেই আইরাত নাচের ছলে তার থেকে দূরে সরে আসে। তায়াফ সরু দৃষ্টিতে তাকায়।

তায়াফ;; দূরে চলে গেলে কাছেও আনতে পারি।

আইরাত;; এতো তাড়া কিসের! মনে রাখবেন গোলাপের সাথে কিন্তু কাটাও থাকে।

হুট করেই মিউজিকের থিম চেঞ্জ হয় আর আইরাত নিজেও হাওয়া হয়ে যায়। এবার ঘুরে গিয়ে আইরাত পরে এক ছোট বাচ্চা ছেলের সামনে। বাচ্চাটা কিউট প্রচুর। সাদা চুল সবগুলো, মুখটা দুধের মতো ফর্সা আর গালগুলো গাঢ় গোলাপি। পরণে কালো সুট। সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আইরাতের দিকে। আইরাত বড়ো একটা হাসি দেয় বাচ্চা টাকে দেখে। সেও হেসে দেয়।

— Dance with me??

আইরাত;; Of course…

আইরাত ছেলে টার থেকে বেশ লম্বা। এখন নাঁঁচবে কি করে। ছেলেটা কনফিউজড হয়ে যায়। তার কনফিউজড মাখা মুখটা দেখে আইরাত ফিক করে এসে দেয়। আইরাত ছেলেটার হাত ধরে নেয়। কোন রকমে নেচে আইরাত কিছুটা নিচে ঝুকে যায়। তারপর ছেলেটার হাতটা ধরে তাকেই কয়েক বার ঘুরিয়ে দেয়। হঠাৎ মিউজিকের থিম আবার চেঞ্জ এবার সবাই আবার ঘুরে যায়। আর এখন হুট করেই আব্রাহাম এসে আইরাত কে নিজের দিকে টান দেয়। আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে। আইরাত তো আব্রাহামের ছোয়া পেয়েই বুঝে গেছে যে এই আব্রাহাম। আইরাত আর আব্রাহাম কে ডান্স কাপল হিসেবে চলে যেতে দেখে ওই ছোট ছেলেটা মন খারাপ করে। আব্রাহাম নিজেও হেসে দেয় ব্যাপার টা বুঝে।

আব্রাহাম;; Now she is mine..

আইরাত ছেলে টার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে…

আইরাত;; But still you are my favourite dance partner…

ছেলে টা হেসে দেয়। তারপর একটা ছোট মেয়ে আসলে সেও তার সাথে চলে যায়। আইরাত নাচতে নাচতেই আব্রাহাম কে জিজ্ঞেস করে…

আইরাত;; এই কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?

আব্রাহাম;; অন্য মেয়ে দের সাথে নাচতে।

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; কাজ ছিলো।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; চলো এখন এখান থেকে।

আইরাত;; আরে না আমি এই গেইম টা জিতবোই জিতবো৷ আমি যেতে পারবো না।

আব্রাহাম;; আইরাত এটা শুধুমাত্রই একটা গেইম ছাড়া আর কিছুই না। চলো৷

আইরাত;; কিন্তু আমি জিতবো তাও আবার আপনার সাথে।

আব্রাহাম;; আইরাত খেলায় হার-জেত তো থাকেই তাই না।

আইরাত;; আমি হারবো না।

আব্রাহাম;; আমি কখনো হারতে শিখি নি আইরাত। তবে মাঝে মাঝে হারতে হয়। হোক তা ইচ্ছে করেই। কেননা না হারলে কখনো জেতার স্বাদ তুমি পাবে না।

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম;; কিন্তু আমি তো আমার আইরাত কে জিতে গেছি।

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম;; মুখটা গোমড়া করলে কিন্তু চুমু দিয়ে বসবো।

আইরাত;; শরম ছাড়া পোলা।

আব্রাহাম;; চলো (হেসে)

আব্রাহাম-আইরাত কে নিয়ে চলে যায় হলরুমের ওপরের ফ্লোরে। সেখানেও অনেকেই আছে। পুরো হোটেলেই পার্টি। তবে ভেতরে যাবার আগে আব্রাহাম আইরাত কে সব বুঝিয়ে দেয়। আইরাত কে সামনে দিয়ে যেতে বলে সে পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকবে বলে ঠিক করে। আর আইরাত যেনো ভেতরে গিয়ে একটু বেপরোয়া ভাব নিয়ে চলে এমন। টেবিল নং ১৭ তে গিয়ে বসে থাকতে বলে। তারপর আইরাত কে কি করতে হবে তা সে জানে। আইরাতের চুল ছোট ছোট ক্লিপ দিয়ে খোপা করা ছিলো সুন্দর করে। তা আব্রাহাম তার হাত দিয়ে খুলে দেয়। আইরাতের চুলগুলো পিঠে আর সামনেও বেশ ছড়িয়ে দেয়। আইরাতের কানে একটা ব্লুটুথ গুজে দেয় আব্রাহাম। নিজের ব্লুটুথের সাথে কানেক্ট করে নেয়। অর্থাৎ দুজনেই কানেই ব্লুটুথ যা একে অপরের সাথে যুক্ত করা। তবে তা আইরাতের চুলের ভাজে ঢাকা পরে গেছে। আব্রাহাম চলে যায় আর আইরাতও ভেতরে চলে যায়। আইরাতের ভেতরে যেতেই সবার নজর তার দিকে যায়। অনেক ছেলে বসে আছে এখানে যাদের পাশের টেবিল টাও ফাকা। তারা যেনো ভেবে রেখেছে যে আইরাত এখানেই বসবে। তা ভুল প্রমাণ করে দিতে আইরাত গিয়ে বসে ১৭ নং টেবিলে। গা এলিয়ে বসে। আইরাত ইচ্ছে করেই নিজের ব্যাগ থেকে একটা লিপস্টিক বের করে সবাই কে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজের ঠোঁটে লিপস্টিক ঘষতে লাগে। নিজেকে খাপছাড়া বানাচ্ছে সে। তবে তা লিমিটে থেকে। আইরাত খেয়াল করে দেখে যে সে যেই টেবিলে বসে আছে সেখানের এক কোণায় লিখা “বুকড” অর্থাৎ টেবিল টা বুক করা।

আইরাত;; না জানি কার টেবিলে এসে বসলাম। (ফিসফিস করে)

কিছুসময় পর একটা ব্রাউন কালারের শার্ট-সুট পরিহিত একজন লোক আসে। সে আইরাত কে তার টেবিলে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক। এতোক্ষন পেছনের দিক থেকে আইরাত কে দেখলেও এবার যেনো আইরাতের সামনে আসে। আইরাত দেখে তাকে। তবে তার মাঝে কোন নড়চড় নেই। আইরাত একটা বেখেয়ালি ভাব নিয়ে হাই তুলে 🥱। এবার আর চুপ করে বসে থাকতে না পেরে ওপর পাশের লোকটা বলে ওঠে…

উল্লাস;; কে আপনি?

আইরাত;; যাহ বাবা আপনি তো দেখি চোখ থাকতেও কানা। দেখছেন না আমি মানুষ। আপনি কে?

উল্লাস;; উল্লাস শেখ আমি।

আইরাত;; ওহহ ভালো।

উল্লাস;; আপনি আমার টেবিলে বসে আছেন।

আইরাত;; কেনো টেবিল কি আপনার বাপের নামে লিখা নাকি!!

এটা শুনেই উল্লাসের পাশে থাকা একজন গার্ড কিছু বলতে যাবে কিন্তু উল্লাস তাকে থামিয়ে দেয়।

উল্লাস;; আপনি কার সামনে বসে আছেন খেয়াল আছে?

আইরাত;; খেয়াল থাকার প্রয়োজন মনে করি না আমি।

উল্লাস;; অনেক চালু মেয়ে আপনি।

আইরাত;; এছাড়াও আমার ধীর গতির জিনিস মোটেও পছন্দ না।

উল্লাস;; আমাকে দেখে যেখানে সবাই সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে সেখানে আপনি এই এটিটিউড নিয়ে আমার সাথে কথা বলছেন।

আইরাত টেবিলের ওপর নিজের হাত রেখে কিছুটা ঝুকে চোখজোড়া সরু করে বলে ওঠে…

আইরাত;; জনাব, খোঁজ নিয়ে দেখুন যেসব লোকগুলো আপনাকে স্বসম্মানের সাথে সালাম দেয়। ঠিক তারাই আপনার চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আপনার পিঠ পিছে থুথু ফেলে।

আইরাত একদম সোজা হয়ে বসে। উল্লাস তো চটে যায়।

উল্লাস;; মনে হচ্ছে না আপনি বেশিই বকছেন একটু!

আইরাত;; হে ট্যাক এ চিল পিল। সত্য কথা সবসময় তেতোই হয়।

উল্লাস;; আর ইউ সিঙ্গেল?

আইরাত;; হ্যাঁ, কি করবো বলুন কাউকে আজ অব্দি খুঁজেই পেলাম না।

উল্লাস কে কিছু বলতে না দিয়েই আইরাত বলে।

আইরাত;; তবে ক্রাশ আছে। আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর ওপর।

আব্রাহামের নাম নিতেই উল্লাস তার হাতে পাশে থেকে একটা কাটা চামচ তুলে নেয়।

উল্লাস;; কোন কানেকশন আছে কি আপনার তার সাথে?

আইরাত;; হ্যাঁ আগামীতে একটা ডিল ফাইনাল করার কথা উনার সাথে এই যা।

উল্লাস;; গুড।

আইরাত;; হুমম।

উল্লাস;; আজ রাতে কি আমরা দেখা করতে পারি?

আইরাত;; অবশ্যই, কেনো না।

উল্লাস;; তো আপনি কত নং রু……

আইরাত;; রুম নাম্বার ০৯।

উল্লাস;; ৯?

আইরাত;; ইয়াহ।

উল্লাস;; ওকে।

আইরাত;; বায়।

এই বলেই আইরাত চলে আসে। সেই ফ্লোর থেকেই জলদি চলে আসে। আর বাইরে আসতেই বুক ভরে দম নেয়। কানের পিঠে চুল গুজে ব্লুটুথ চেপে ধরে কানের সাথে হ্যালো বলে।

আইরাত;; হ্যালো আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; সামনে তাকাও।

আইরাত কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে সামনে তাকায় দেখে আব্রাহাম তার জন্যই অপেক্ষা করছে। আইরাত আব্রাহামের কাছে চলে যায়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম;; ইউ সুড ট্রাই ইন মুভি ইন্ডাস্ট্রি।

আইরাত;; কেনো?

আব্রাহাম;; তুমি এতো ভালো এক্টিং পারো তা জানা ছিলো না।

আইরাত;; হ ঘোড়ার আন্ডা। কিসের ভেতরে যে ছিলাম আল্লাহ জানে। তবে লোক টাকে কথায় কথায় নিচু দেখিয়ে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। মন চাইছিলো আরো করি কিন্তু এসে পরলাম। আচ্ছা ও কে?

আব্রাহাম;; সব জানতে পারবে। সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে শুধু রাত অব্দি একটু ধৈর্য ধরো।

আইরাত;; সে আজ রাতে দেখা করতে বলেছে।

আব্রাহাম;; দেখা তো অবশ্যই হবে। তবে তা হয়তো উল্লাসের সাথে তার মৃত্যুর। যদি আমার সন্দেহ টা ঠিক বের হয় তাহলে কপালে মরণ লিখা আছে ওর।

আইরাত;; আপনার মাথায় কি খিচুড়ি পাকছে আসলে?

আব্রাহাম;; বললাম তো সবই বুঝে যাবে জাস্ট ওয়েট।

আইরাত আর আব্রাহাম দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে। যেনো তাদের কেউ দেখে না ফেলে একসাথে। আব্রাহাম হাঁটতে হাঁটতে এসে আইরাত কে রুম নাম্বার ৯ দেখিয়ে দেয়। তারপর আবার তারা চলে যায়।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here