নেশা ২ পর্ব ৪

নেশা
সিজন 2
Ayusha Akter Usha
“”4″”
কুয়াশা গাড়িতে বসে একদৃষ্টিতে সম্রাট এর দিকে তাকিয়ে আছে।সম্রাট আপন মনে কার ড্রাইভ করছে।এই মানুষটা তাঁকে এতো ভালোবাসে ভাবতেই অবাক লাগছে কুয়াশার।কুয়াশা যতদূর জানে সম্রাট বিয়ের আগে তাকে চিনতো না তাহলে বিয়ের পর এই একদিনে একটা অপরিচিত মেয়েকে কেউ এতোটা আপন কিভাবে করে নিতে পারে।যদিও বিয়েতে কুয়াশার কোনো মত ছিল না তবুও এখন মনে হচ্ছে একটা সঠিক মানুষের সাথেই তার বিয়ে হয়েছে।এই একদিনে এই অচেনা মানুষটাকেও নিজের কতো আপন মনে হচ্ছে।খুব ইচ্ছে করছে এই মানুষটাকে নিজের সবকিছু দিয়ে বিশ্বাস করতে ভরসা করতে।একবার এই মানুষটার বুকে মাথা রেখে তার হৃদস্পন্দন শুনতে আর বুঝতে ওই হৃদস্পন্দনে কতটা গভীরে কুয়াশার নাম টা লেখা আছে।কুয়াশার ভাবনায় ছেদ পরল গাড়ি ব্রেক করায়।কুয়াশা ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে সামনে তাকাতেই দেখে এ কি ওদের বাড়ি কোথায় এ তো চারিদিকে স্তব্ধতা।এক খোলা জায়গা।অবাক হয়ে সম্রাটের দিকে তাকালো।সম্রাট আবার তাঁকে মেরে ফেলতে এখানে নিয়ে আসেনি তো।সম্রাট কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে কুয়াশার পাশে এসে দরজা খুলে একটু ঝুঁকে কুয়াশার সিটবিল্ট খুলে তাঁকে কোলে তুলে নিল।কুয়াশা সম্রাটের কাজে হতভম্ব।
-আআরে কি করছেন এসব আপনি।
সম্রাট সোজা চলতে চলতেই বলল
-হশশশশ।।।চুপ করে থাকো।
কুয়াশা আর কিছু বলল না।সম্রাট কুয়াশাকে এক লেকের সামনে এসে নামিয়ে দিল।চারিদিকে খোলা জায়গা।লেকের পানি চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে।পানির কলবল শব্দে মন ভরে যাচ্ছে।কুয়াশা মুগ্ধ হয়ে লেকের দিকে তাকিয়ে আছে।আর সম্রাট পকেটে হাত রেখে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে।আশ্রমে কুয়াশা তার মেকাপ ধুয়ে ফেলেছে।আর ওরনাটাও মাথা থেকে খুলে বুকে ছড়িয়ে দিয়েছে।চাদের আলোয় স্নিগ্ধ কুয়াশাকে দেখে সম্রাট তার কুয়াশার মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছে।সম্রাট নিজের পকেট থেকে হাত বের করে কুয়াশা চুলের খোপা খুলে দিল।তার চুল পুরো পিঠে এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পরল।।কুয়াশা অবাক চোখে সম্রাটের দিকে তাকালো।সম্রাট গিয়ে কুয়াশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
-আমি যখন প্রথম তোমাকে খোলা চুলে দেখেছিলাম তখন ই আমি তোমার নেশায় পরে গিয়েছিলাম।আজ এই সুন্দর প্রকৃতি ও হার মানবে তোমার এই খোলা চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কাছে।
সম্রাটের কথা শুনে কুয়াশা মুচকি হেসে তার দিকে ঘুরে দাড়িয়ে সম্রাট এর চোখে চোখ রাখল।সম্রাট কুয়াশা কোমর জড়িয়ে ধরে বলল
-এইভাবে সারাজীবন আমার পাশে থেকো কুয়াশা।কখনো আমায় ছেড়ে চলে যেও না।আমি মানতে পারবো না।
সম্রাটের এই আকুতি ভরা কন্ঠ যেন কুয়াশার বুকে গিয়ে লাগল।কুয়াশা ছলছল চোখে সম্রাটের বুকে মাথা রাখে।
-কখনো আপনাকে ছেড়ে যাবো না।কখনো না।
কুয়াশার কথায় সম্রাটের বুক পরম শান্তিতে ভরে যায়।এক হাতে কুয়াশা কোমর জড়িয়ে রেখে অন্য হাতে কুয়াশার পেছনের চুল আঁকড়ে মাথা উচু করে ধরে তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।কুয়াশা আর বাধা দিল না।পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল।দু হাতে সম্রাটের শার্টের কলার খামচে ধরল।পায়ের আঙুলে ভর করে উচু হয়ে দাড়ালো।কুয়াশার রেসপন্স পেয়ে সম্রাট আরো গভীর ভাবে তাঁকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।

রাতে কুয়াশা বেডের একপাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।সম্রাট ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে কুয়াশাকে ওভাবে শুতে দেখে মুচকি হেসে বেডের কাছে গেল।কুয়াশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার ওপর আধশোয়া হয়ে শুয়ে চোখে চোখ রেখে বলল
-কাল আমার ফার্স্ট নাইট স্পোয়েল করে এখন এখানে ঘুমানো হচ্ছে।
কুয়াশা তো ভয়ে শেষ।ভয়ের চটে গলা দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না।
-না মানে ইয়ে মানেএ।।।।
সম্রাট ভ্রু কুঁচকে বলল
-হোয়াট কি ইয়ে মানে ইয়ে মানে করছো।কি হয়েছে।
-না মানে কিছুনা আসলে…
কুয়াশা কথা আটকে গেল।কারন সম্রাট তার গলায় মুখ গুজেছে।কুয়াশা দম ধরে রইল।সম্রাট কুয়াশার গলায় নাক ঘষতে ঘষতে বলল
-এতো ভয় পাও কেন আমাকে।আমি বাঘ না ভাল্লুক যে তোমাকে আমি খেয়ে ফেলব।
-ননননা মানে।
সম্রাট কুয়াশার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে তাঁকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল
-হুশশশ।অনেক ভয় পেয়েছ আর পেতে হবে না।এখন ঘুমিয়ে পরো।নিজেকে মানিয়ে নিতে আমি যথেষ্ট সময় পাবে তুমি।
বলেই কুয়াশাকে নিজের বুকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরল।আর কুয়াশা সম্রাটের বুকের হার্টবিট শুনতে লাগল।এই লোকটা এত ভালো কেন।তার না বলা কথা আপনা থেকেই কি করে বুঝে যায়।হয়তো একেই ভালোবাসা বলে।কুয়াশা মুচকি হেসে একহাতে সম্রাটকে জড়িয়ে ধরল।সম্রাটের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল।

সকালে কুয়াশা কিচেনে গেল রান্না করতে।সম্রাটের অনেক বাধা দেওয়ার পর ও কুয়াশা শোনেনি।বাড়িতে তার শাশুড়িমা ননদ বলতে কেউ নেই।কাজ করার মতো অনেক সার্ভেন্ট আছে তবুও কুয়াশা নিজের দায়িত্বটা বুঝে নিতে চায় এমনি কাজ নাহয় নাই করল সে কিন্তু রান্না টা তো করতেই পারে।রান্না শেষে যখন খেতে বসল তখন তাঁদের ডাইনিং টেবিলে বসার স্টাইল দেখে কুয়াশা অবাক।টেবিলের এক মাথায় সম্রাট তো অন্য মাথায় রায়হান।কুয়াশা কোন মাথায় বসবে।টেবিলের আর তো কোনো মাথাই খুঁজে পাচ্ছে না সে।আর কি ভাবেই বা তাঁদের সার্ভ করবে।এদিক থেকে ওদিকে যেতে যেতেই তো একজনের খাওয়া শেষ হয়ে যাবে।কুয়াশার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে সম্রাট তাঁকে তার পাশে বসতে বলল।আর সার্ভেন্ট এসে তাঁদের সার্ভ করতে লাগল।খাওয়া শেষে সবাই উপরে চলে গেল কুয়াশা সার্ভেন্টের সাথে টেবিল গোছাতে লাগল যদিও সার্ভেন্ট বারবার মানা করেছিল।কুয়াশা টেবিল গুছিয়ে রেখে রুমে এসে দেখে সম্রাট ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে অফিস যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছে।কুয়াশা গিয়ে কাবার্ড থেকে একটা টাই বের করে এনে সম্রাট কে পরাতে লাগল।সম্রাট অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল
-কুয়াশা কি করছ কি।
কুয়াশা টাই বাঁধতে বাধতেই বলল
-এখন থেকে সবসময় টাই পরে অফিস যাবেন।টাই না পরলে কেমন মাফিয়া মাফিয়া লাগে আপনাকে।চেহারায় মাফিয়া মাফিয়া স্টাইল নিয়ে ঘুরে বেড়ান কেন।
কুয়াশার কথা শুনে সম্রাট ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো।
-আচ্ছা সত্যিই যদি আমি মাফিয়া হই তখন তুমি কি করবে।
-ছেড়ে চলে যাবো।।।
to be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here