পবিত্রতার_ছোঁয়া পর্ব ৬

#গল্পের নাম :#পবিএতার_ছোঁয়া (সিজন২)
#পর্ব :৬
#লেখিকা :#জাবিন_মাছুরা [ছদ্মনাম]

তাহসিন স্যার ওড়নায় হাত দিতেই আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম। হয়তো আমার দূরে সরে যাওয়া সে আশা করে তাই অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। আমি ভয়ে ছোট একটা ঢোক গিললাম।

তাহসিন :মিহু,,

আমি:নিশ্চুপ,,

তাহসিন :কালকে রাতের জন্য সরি,

আমি কোন কথা বলছি না। বলব কি করে এতো সহজে সরি বলে দিল।অবাধ্য চোখের জল পড়তে আর দেরি হলো না।

তাহসিন :কান্না করলে কিন্তু,,

আমি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললাম। যার কাছে আমার চোখের জলের কোন দাম নেই তার সামনে আমি কেন চোখের জল ফেলতে যাব। আমার চোখের জল কি এত সস্তা,,,

হঠাৎ স্যারের ফোনে কল আসল। সাথে সাথে তার সাদা মুখ রক্তিম বর্ন ধরাণ করল।

তাহসিন : বাজে কথা বলবি না,,

স্যার কার সাথে কথা বললেন যে এতো রেগে গেলেন। কি এমন বাজে কথা বলল? মাথার মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

তাহসিন মিহু কাছ থেকে দূরে সরে গেল।

তাহসিন : এই মেয়ে এখানে বসে না থেকে ফ্রেশ হ।কেউ যেন বুঝতে না পারে কালকে রাতের কথা। আর কান্না বাদ দে।

কথাগুলো বলেই দরজায় একটা লাথি মেরে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

আমি আস্তে করে উঠে দাঁড়ালাম। বারান্দা থেকে সোজা বাথরুমে ঢুকে পড়লাম। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসলাম। গলায় পানি পড়তেই পুড়ে উঠল। সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। পুড়া যায়গায় পানির ছিটে লাগলে যে এত কষ্ট হয় তা আগে কোনদিন জানতাম না। পেটের মধ্যে প্রচন্ড ব্যাথা করছে। কালকে রাতে পেটে খাবারের একটা দানাও পড়ে নেই।এক বেলা না খেয়ে আমি থাকতে পারি না।
যার জন্য কালকে রাতে খেলাম না অপেক্ষা করলাম। সেই লোকটা একবার ও খোঁজ নিল না যে আমি খেয়েছি কিনা।
অনেক অভিমান হচ্ছে তার উপর সে আমাকে একটুও বুঝল না।

অনেকক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে বের হলাম। আয়নায় সামনে এসে চুলগুলো মুছার সময় গলার দিকে চোখ পড়তেই অবাক হয়ে গেলাম।পুরো গলা দাগ হয়ে গিয়েছে।তাই ওড়না দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে ফেললাম। যাতে কারো চেখে দাগ গুলো না পরে।

পরিপাটি হয়ে সোজা রান্না ঘরে এলাম। দেখলাম একটা আন্টি রান্না করছে। আমি তাকে সালাম দেওয়াতে সে আমার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো।

আমি: আন্টি কে আপনি?

রোকেয়া বেগম: আমি এ বাড়িতে পুরান কাজের লোক। মেডাম আমারে আন্টি কয়েন না। নাইলে আপনার শাওড়ি আমারে বকা দিব।

আমার শাশুড়ি মা তো বাড়িতে নেই। সে রাগ করে বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছে। আমি তো তাকে দেখিওনি। আল্লাহ জানে সে কেমন হবে,

রোকেয়া বেগম: মেডাম কি ভাবতেছেন?

আমি: না কিছু। আচ্ছা আন্টি আপনি আমাকে মেডাম বলেন কেন। মেডাম বললে কিন্তু আমি আপনার সাথে কথা বলব না। আমি তো আপনার মেয়ের মতো। আমাকে নাম ধরে ডাকবেন। আমার নাম হচ্ছে মিহু।

রোকেয়া বেগম: না মা তা তো হয় না। তোমারে আমি মিহু কইতে পারুম না।

আমি : তাহলে মিহু মা বলবেন।

রোকেয়া আন্টি আমার দিকে ছলছল নয়নে তাকালেন।

রোকেয়া বেগম:আচ্ছা মিহু মা কমু। মা তুমি না অনেক ভালা। তাহসিন বাবাই বউ পাইছে একদম তার মতো। আল্লাহ তোমাগো সুখি বানাবো।

আমি : আন্টি তুমি এই কয়েকদিন আসো নি কেন?

রোকেয়া বেগম: আসলে আমার মাইয়া আইছিল শশুড় বাড়ি থাইকা।

আমি আর আন্টি কথা বলতে বলতে সকালের নাস্তা তৈরি করে ফেললাম। কথা বলে মনটা অনেক হালকা লাগছে। নাস্তা সার্ভ করে বাবাকে ডাকলাম। বাবা এসে চেয়ারে বসলেন।আমার চোখ দুটো শুধু তাকে খুঁজে চলছে। মানুষটা কি রাতে খেয়েছে। নাকি খাইনি। বাবা তাকে ডাকলেন। আমিও তার জন্যে অপেক্ষা না করে খেতে বসে পড়লাম। পেটে প্রচুর ব্যাথা করছে।

একটু পড়েই তিনি চলে আসলেন। মনে হয় মাএ গোসল করেছেন। চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।কিন্তু কখন যে ঘরে গিয়েছেন তা বুঝতে পারলাম না। এমন সময় একটা মহিলা আর একটা মেয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে পড়লেন।

মহিলাটা ঢুকেই আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন। বুঝতে আর বাকি রইল না ওনি আমার শাশুড়ি মা। তাই আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম।

শাশুড়ি মা আমার দিকে তেড়ে আসছেন। কিন্তু আমি তার দিকে খেয়াল না করে মেয়েটার দিকে খেয়াল করলাম । কারন মেয়েটা এসেই দৌঁড়ে স্যারকে জড়িয়ে ধরলেন। দৃশ্যটা দেখে আমার বুকের মধ্যে ধক করে উঠল।
(#চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here