পরিপূর্ণতা পর্ব -০২

#পরিপূর্ণতা
#পর্ব_২
#লেখিকা_N_K_Orni

দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে নিরা। যানজটপূর্ণ শহর, উঁচু উঁচু দালান সবকিছুরই বেশ পরিবর্তন হয়েছে। সাথে পরিবর্তন হয়েছে নিরারও। কেটে গেছে কয়েক বছর। এই সময়টা নিরার জন্য যথেষ্ট ছিল নিজেকে পরিবর্তন করার, নিজেকে কঠোরভাবে গড়ে তোলার। অন্য কারো জন্য নয় বরং তার নিজের জন্য। নিরা আজও সেইদিনটার কথা ভুলতে পারেনা।

সেইদিন যখন সে ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে তখন খুবই ভেঙে পড়ে।সে ঠিক করে সে সুইসাইড করবে। কেননা তার আর যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তার আশেপাশের সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার থেকে। তাই সে ব্রিজের কাছে চলে যায়। যাতে ওখান থেকে ঝাপ দিয়ে সুইসাইড করতে পারে। সে সুইসাইড করতেই যায় তখনই তার একটা কথা মাথায় আসে যে আত্মহত্যা মহাপাপ। যেখানে জীবন বাঁচানো ফরজ, সেখানে সে সেচ্ছায় তার জীবন দিয়ে দিচ্ছে। কেন? কিছু মানুষের অবহেলার কারণে। একে তো তার দুনিয়ার জীবনে সে কষ্ট পেয়েছে।

এখন যদি আত্মহত্যা করে তাহলে তো মৃত্যুর পরবর্তী জীবনেও সে সুখ লাভ করবে না। তখনও তাকে কষ্ট পেতে হবে। কিছু স্বার্থপর মানুষের জন্য সে কেন তার ইহকাল আর পরকাল নষ্ট করবে। তাই সে ফিরে এলো। কিন্তু এখন সে কি করবে? তখন তার নাবিলার কথা মনে পড়ল। এখন নাবিলাই তার একমাত্র ভরসা। তাই সে নাবিলাকে ফোন দেয় আর জিজ্ঞাসা করে যে সে এখন তার বাড়িতে আসতে পারবে কিনা? নাবিলা তাকে আসতে বলে। সে নাবিলার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

— এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কি দেখছো মাম্মাম?

নূরের কথায় নিরা অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। সে নিচু হয়ে বসে নূরের গাল টেনে দিয়ে বলে,

— কিছু না মাম্মাম। আমি শুধু বাইরের প্রকৃতি দেখছি।

— ওহ আচ্ছা। তুমি না বলেছিলে আমাকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাবে?

— হ্যাঁ নিয়ে যাব তো। তার আগে তুমি তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট শেষ কর। তারপর আমরা অনেক জায়গায় ঘুরব।

— সত্যিই?

— হ্যাঁ সত্যি। তার আগে তুমি গিয়ে ব্রেকফাস্ট শেষ কর। তোমার বিথী আন্টি কখন থেকে তোমার জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে বসে আছে।

নূর মাথা নাড়িয়ে বলে,

— আচ্ছা।

তারপর সে পাশের রুমে বিথীর কাছে চলে যায় ব্রেকফাস্ট শেষ করতে। বিথী নূরের দেখাশোনা করে। সেই হিসাবেই নূর তাকে বিথী আন্টি বলে। বিথী কোনোদিন মা হতে পারবে না বলে তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়ে আসে। তখন বিথী প্রতিবাদ করলে তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। বিথী বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তার মা তার ভাইয়ের সংসারে এক কোণায় পড়ে থাকে। বিথী সেখানে গেলে তার ভাই ভাবি তাকে তাড়িয়ে দেয়। তারা তাকে রাখতে চায় না। তখন বিথী তার এক বান্ধবীর বাসায় গিয়ে ওঠে। তার পরামর্শে সে গার্মেন্টসে চাকরি করা শুরু করে। কিন্তু সেখানেও এক মাসের বেশি টিকতে পারে না। একদিন গার্মেন্টসের ম্যানেজার তাকে বাজে প্রস্তাব দেয়। তাই সে এই চাকরিটা ছেড়ে দেয়। সে নতুন চাকরিই খুঁজছিল তখনই নিরার সাথে দেখা হয়। নিরা তাকে নূরের দেখাশোনা করার প্রস্তাব দেয়। বিথীও রাজি হয়ে যায়। কারণ এতে তার চাকরিও করাও হবে সাথে নূরের মতো একটা বাচ্চাকে পাবে। সে নিজে তো কখনো মা হতে পারবে না। তাই অন্য বাচ্চার মধ্যেই নিজের সুখ খুঁজে পেতে চায়। তার মাতৃত্বের স্বাদ পূরণ করতে চায়। মা হতে গেলে যে শুধু জন্ম দিতে হবে তা নয়। অনেক সময় জন্ম না দিয়েও মা হওয়া যায়।

নূর চলে যেতেই নিরা আবার ভাবনার জগতে চলে যায়। সেদিন যদি নাবিলা আর তার পরিবার তাকে আশ্রয় না দিত তাহলে তার কি হতো সে উত্তর তার জানা নেই। অনেক সময় কাছের মানুষ দূরে সরিয়ে দিলে অল্পপরিচিত মানুষেরাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। নাবিলার বাসায় যাওয়ার পর নিরা তাদের সবটা খুলে বলে। সব শুনে নাবিলার মা বাবা তাকে তাদের সাথে থাকতে বলে। সেদিন থেকে সে তাদের সাথেই থাকতে শুরু করে। পরদিন থেকেই নিরা চাকরির খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। যেহেতু এখন থেকে তাকে নিজেই নিজের খরচ বহন করতে হবে। অনেক খুঁজেও নিরা কোনো চাকরি পায় না। নাবিলার বাবা তখন নিরাকে বলে যে তার বন্ধুর অফিসে লোক নিতে চায়। নিরা তখন সেই অফিসে ইন্টারভিউ দেয় আর টিকেও যায়। নিরা চাকরির পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নাবিলা তাকে সব নোটস এনে দেবে আর সে শুধু গিয়ে পরীক্ষা দিবে ঠিক করে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে আরেকদিকে। এখানে আসার দেড় মাস পর নিরা জানতে পারে সে প্রেগনেন্ট। তার পেটে নিহাদের বাচ্চা। তবে বাচ্চাটা এখন শুধুই তার। ওই অবস্থায় নাবিলা ও তার বাবা মা তার পাশে ছিল। এমনকি নূর হওয়ার পরও তারা তাকে সব রকম সাহায্য করেছে। পড়ালেখা শেষ করে নিরা তার জমানো টাকা দিয়ে একটা ফ্লাট কেনে। যদিও নাবিলার বাবা মা তাদেরকে তাদের সাথে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু নিরা আর তাদের কষ্ট দিতে চায় না। তারা তার জন্য অনেক করেছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিরা প্রায়ই নাবিলাদের বাসায় যেত নূরকে নিয়ে। নিরা যেহেতু সারাদিন অফিসে থাকে তাই নূরের দেখাশোনার জন্য বিথীকে রাখে। অফিসের কিছু কাজে নিরাকে লন্ডন যেতে হয়। সে নূর আর বিথীকেও নিয়ে যায়। এক বছর পর আজকে সে ফিরে এসেছে।

নিরা এবার ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে নূরের কাছে যায় তার খাওয়া শেষ হয়েছে কিনা দেখার জন্য। নিরা রুমে যেতেই নূর তার কাছে ছুটে আসে।

— মাম্মাম ব্রেকফাস্ট শেষ। তুমি কিন্তু কথা দিয়েছিলে আমাকে আজকে তুমি ঘুরতে নিয়ে যাবে।

— যাব তো মাম্মাম। একটু পর।

তখনই বিথী ওর কাছে আসে। সে নিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

— আপু খাবেন না?

— হ্যাঁ তুই যা আমি আসছি। আমরা একসাথে খাব।

— আচ্ছা আপু।

বলেই বিথী চলে যায়। নিরা এবার নূরের দিকে তাকিয়ে বলে,

— তুমি গিয়ে চুপ করে কার্টুন দেখ। আমার আর তোমার বিথী আন্টির খাওয়া শেষ হলে আমরা তৈরি হয়ে বের হব। ঠিকাছে?

নূর মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল,

— আচ্ছা।

— তুমি কিন্তু একদম দুষ্টুমি করবে না।

— আচ্ছা।

নিরা নূরকে রুমে চলে ব্রেকফাস্ট করতে চলে যায়। ব্রেকফাস্ট শেষে নিরা বিথীকে বলে তৈরী হয়ে নিতে। তারপর নূরকে তৈরি করে সে নিজেও তৈরী হয়ে নেয়। এরপর তারা তিনজন বেরিয়ে পড়ে। নূর নিরার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

— মাম্মাম আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?

— গেলেই দেখতে পাবে।

নিরার উত্তর নূরের খুব একটা পছন্দ হয় না। সে আবার বলে উঠে,

— না মামনি বলো প্লিজ। প্লিজ বলো না।

নূর নিরার ওড়না ধরে টানতে থাকে। নিরা আর উপায় না পেয়ে বলে উঠে,

— আচ্ছা আচ্ছা বলছি। আমরা এখন নাবিলা আন্টির বাসায় যাচ্ছি।

— সত্যিই?

বলেই খুশিতে লাফিয়ে ওঠে নূর। এরপর নিরা নূর আর বিথীকে নিয়ে নাবিলাদের বাসায় যায়। নাবিলাদের বাসায় গিয়ে নিরা কলিং বেলে চাপ দেয়। কিছুক্ষণ নাবিলা এসে দরজা খুলে দেয়। সে নিরাকে দেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

— তুই চলে এসেছিস? আজকে না আসলে আমি নিজে তোকে ফোন করে আনতাম।

নিরা অবাক হয়ে বলে উঠল,

— কেন?

— তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

নিরা অবাক হয়ে বলে উঠে,

— কি সারপ্রাইজ?

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here