পারবো না ছাড়তে তোকে পর্ব ২+৩

পর্ব ২+৩
পারবো না ছাড়তে তোকে
পর্ব-০২
রোকসানা আক্তার

-হাসি থামাও তো সবে?মেয়েটিকে আর লজ্জা দিও না। মা তুমি আমার কাছে এসে বসো।

এ বলে খালামণি আমার ডানহাতটা টেনে উনার পাশে নিয়ে বসান।আর,ওদিক দিয়ে এন্জিলা সিস্টার আমার রূপের প্রসংশায় পঞ্চমুখ।
-How beautiful girl is!!Her hair is so long and black!!just awesome her everything!!As i see her,as i attract her curtness.(কত সুন্দর মেয়ে!তার চুল অনেক লম্বা এবং কালো।তার সবকিছুই সুন্দর।আমি যত দেখি,ততই তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ।)

আমিতো হেব্বি খুশি উনি আমার রুপের গুণগান গাচ্ছেন।অন্তত,ভাইয়া উনার বিদেশিনীর মুখে একটু শুনুক আমি কতটা সুন্দর!!হুহু…।খালামণি আমার মাথায় আলতো হাত রেখে বলেন,
-মিথিলা, তুই এখন কোন ক্লাসে যেন পড়ছিস??
-জ্ব-জ্বী খালামণি,আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেছি।
-ওহ আচ্ছা।আর রিধি তুই??
-খালামণি কিছুদিন আগেইতো তোমায় ফোনে বললাম।এরই মধ্যে ভুলে গেলে খালামণি?
-বুঝিস তো,বয়স বাড়ে,মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে।তাই আর কি মনে পড়ছে না।

মা আবার খালামণির কথায় পাল্টা জবাব ছুঁড়ে বলেন,
– রুপাতা,তুই আমার বয়সে ছোট,আমার থেকেও তোর স্মৃতিশক্তি প্রখর থাকার কথা।তোর ছেলে কোন কোন এক্সাম ভার্সিটিতে চুকাইতো আমি তার আনা আনা খবর রাখতাম,আর তুই আমার মেয়েদের পড়ালেখার কথাই ভুলে গেলি।হা হা হা হা।

-আহারে,আপা?তুমিতো জানোনা কতটা ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে দিনগুলো আমার পার হয়।এই নিলয়ের বাবার মিটিংস ডকুমেন্ট দেখা,বিজনেসের ক্লাইন্টদের বাসায় আপ্যায়ন করা,হ্যান-ত্যান জায়-ঝামেলা।সারাক্ষণ সংসারটার পেছনেই সময়গুলো ব্যয় হয়।মেমোরি এম্পটি করার সময় কই।
-হু,টাকা-পয়সা বেশি থাকলে এমনই।।
-এ বলে লজ্জ্বা দিও নাতো আপা।

সবাই খিলখিলিয়ে হেসে দেয় এবং আমিও মিটিমিটি হাসি আর চোখ কাণিয়ে কাণিয়ে বিদেশিনীকে দেখি।বিদেশিনী হয়তো কোনোকিছু না বুঝেই আমাদের সাথে উড়াধুরা হাসছে।এরফাঁকে নিলয় ভাইয়ার একটা আর্জেন্ট কল আসায় উনি আমাদের এক্সকিউজ ইঙ্গিত করে বাহিরে চলে যান।আমিও এই সুযোগটুকুর অপেক্ষায় ছিলাম।এখন শুধু বিদেশিনীকে প্রশ্ন করার পালা।
-Hi Angila,sis?What be about you of Niloy brother?? (তুমি নিলয় ভাইয়া সম্পর্কে কি হও)
-Niloy is my Varsity friend .(নিলয় আমার ভার্সিটির বন্ধু)
-Only friend nor some other? (শুধু বন্ধু নাকি অন্য কিছু)
-Sry,Mithila!!?
আমি যেই এন্জিলা সিস্টারকে আরো পেঁচিয়ে-টেঁচিয়ে সত্যকথা উৎঘাটন করতে যাবো ওমনি নবাবজাদা আবার চলে আসে।রাগে মুখটা গজগজ করতে থাকি।উফস, কথাই শেষ করতে দিল না!!
উনি এসেই বকবক শুরু করে দেন।
-মা,সাবিলারা আজই নাকি চিটাগং থেকে ঢাকায় ব্যাক করবে।এইমাএ কল দিয়ে আমায় বলল।
-সত্যি???সাবিলারা আসতেছে??
-হু,মা।
-যাইহোক,ভালোই হয়েছে।আপা,সাবিলারা যেহেতু আসতেছে, তাহলে নিলয় এবং সাবিলার বিয়েটা ফাইনাল করে ফেলি!!কি বলো???

খালামণির মুখে একথা শুনা মাএই আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।সাবিলা আমার মামাতো বোন।সাবিলা মামার একমাএ মেয়ে।মামার অঢেল সম্পওির সবকিছুর মালিকানাই সাবিলা।এবার সে চট্রগ্রাম ভার্সিটিতে বিবিএ অনার্স করতেছে।আমরা দুজন সেইম বয়সীই বলা চলে।তবে,সাবিলার সাথে আমার চালচলন সম্পূর্ণ আলাদা।সে যেটা পছন্দ করে,সেটা আমি করিনা।আবার, আমি যেটা পছন্দ করি,ও আবার তা মোটেও ডোন্ট লাইক।আর-কি একটু মুডই ওর মুখে সবসময়।এই কারণে মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়।আর ও যে স্টাইলিশ নিলয় ভাইয়া হয়তো এখন ওকে দেখে প্রেমেই পড়ে যাবে,তারউপর কিউটের ডিব্বা ও।কিন্তু এখন সবথেকে বেশি কষ্ট লাগছে যে খালামণি স্বয়ং ওর সাথেই নিলয় ভাইয়াকে বিয়ে করাবেন বলে ঠিক করছেন।ভাবতেই,পুরো শরীরের লোম আমার খাঁড়া হয়ে যাচ্ছে।তিলে তিলে বুকের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে।এখানে আর বসে থাকতে পারতেছি না।যে করেই হোক আমায় এখন রুমে চলে যেতে হবে।।
ছটফটানি ভাব চলে আসে আমার ভাবভঙ্গিতে।সোফা ছেড়ে কোনোমতো দাঁড়িয়েই সবাইকে বলি,
-আমি একটু আসছি।

সবাই হালকা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেই আমি তড়িৎ বেগে নিজের রুমে আসি,আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁপে উঠি।মুখ দিয়ে আমার যেন কোনো ভাষা আসছে না,দেহের ভেতরের হৃদয়টা ক্ষণিকেই যেন পুড়ে ক্ষতবিক্ষত।
আমার রুমে রিধি এবং এন্জিলা আসে।
-Hi cuty girl,i come at you.(হাই সুন্দরী বালিকা,আমি তোমার কাছেই আসছি)
বিদেশিনী হাত-পা নেড়ে মুঁচকি হেঁসে আমার পাশে এসে বলে,
-Niloy say that we all us go out to travel outside today.(নিলয় বলেছে যে আমরা সবাই মিলে আজ বাহিরে ঘুরতে বের হবো)।So, please,be ready quickly.(তাই,দয়া করে তাড়াতাড়ি রেডি হও)

আমি বিদেশিনীর কথায় হকচকিয়ে রিধির দিকে তাকাই।ওর চোখগুলো পিটপিট করতেছে।রিধি জানে, আমি এখন বাহিরে যাওয়ার জন্যে একদম নারাজ।
-s-sry sister,my mind don’t fine in this moment.Again,once day we travel. (স্যরি আপু,আমার মন এমুহূর্তে ভালো নেই।আবার কোনো একদিন আমরা ভ্রমণ করবো।)
-Mithila,I come only in Bangladesh to see the Bangladesh’s natural beauty and Niloy marriage occasion . I heard from niloy,the Bangladesh is so beautiful and here’s environment is normal.Here’s people life is simple,here have hill,mount,green trees, various types animals etc.I am so excited in these.Plz,Mithila don’t be disincline . I have in hand so less time.i have to back again my country fast.

(মিথিলা,আমি বাংলাদেশে শুধুমাএ এসেছি বাংলাদেশের সৌন্দর্য দেখতে এবং নিলয়ের বিয়ে উপলক্ষে। আমি নিলয়ের থেকে শুনেছি,বাংলাদেশ অনেক সুন্দর এবং এখানের পরিবেশ হয় স্বাভাবিক। এখানের মানুষের জীবন হয় সাধারণ,এখানে আছে পাহাড়,পর্বত,সবুজ গাছপালা,বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি ইত্যাদি।আমি এসবে অনেক উৎফুল্ল।প্লিজজ,মিথিলা,অনিচ্ছুক হবে না।আমার হাতে সময় খুবই কম।আমার আবার আমার দেশে ফিরতে হবে।)

আমি এন্জিলা সিস্টাটের কথা শুনে নাঁজেহাল অবস্থায় পড়ে যাইই।তাহলে সাবিলার সাথে নিলয় ভাইয়ার বিয়ের কথা আমার মাও জানেন এবং এন্জিলা সিস্টার ও ।শুধু আমিই একমাএ নিরব দর্শক যে এর কিছুটিই জানি না।কবে কবে সব ঠিকঠাক করে রাখলো কেউই তো আমায় কিছু বলেনি এবং আমার মা ও।বাহ,,সবাইতো দেখছি পারফর্মমেন্স ভালোই করছে।
এখন যদি জোরে একটু চিৎকার করে বিধাতাকে বলতে পারতাম,তাহলে নিঃশ্বাস টুকু ফেলে দম নিতে পারতাম।।রাগে-ক্ষোভে এন্জিলা সিস্টারকে বলে উঠি,
-সিস্টার প্লিজজ আমায় বিরক্ত করবেন না।ভীষণ হেড পেন হচ্ছে।প্লিজজ,রিধি।I want to alive now.

আমার অস্বস্তিবোধ দেখে এন্জিলা সিস্টার চলে যান।রিধিও এন্জিলা সিস্টারের সাথে চলে যায়।এন্জিলা সিস্টারকে প্রথমে দেখে মনে হলো নিলয় ভাইয়ার গফ হবেন,আর এখন দেখি ভাঁজা মাছটা উল্টো।।তবে,এন্জিলা সিস্টারের মাঝে যে শান্তশিষ্টতা,মিশুকতা মনোভাব দেখলাম..সত্যিই ভালো লাগার মতো।
আমার হাতের যেন চামড়া উঠে যাবে এখন এমনভাবে হাত মুচড়াতে থাকি, আর জেদে দাতগুলো কটমটাতে থাকি।হুট করে কেউ আমার সামনে এসে হালকা একটা কাশি দেয়।তাকিয়ে দেখি মনের কোণে জমিয়ে রাখা ভালোবাসার প্রিয় সে মানুষটি।তবুও দেখে না দেখার ভঙ্গিমা ধরি।উনি শান্তধীরে আমার পাশে এসে বসেন।আমার পিঠে আলতো হাত বুলান।উনার স্পর্শ আমার সারা দেহে যেন শিহরণ জাগতে থাকে।চোখবুঁজে অন্যদিক তাকিয়ে থাকি।তারপর গলাটাকে ছোট করে বলেন,
-তোকে আজ অনেকদিন পর দেখলাম মিথিলা।মাশাল্লাহ আগ থেকে অনেকটাতো তুলতুলে সুন্দর হয়ে গেছিস।মুখে এত্ত আঁটা ময়দা লাগিয়েছিস কেন?কারো সাথে দেখা করতে যাবি, সেজন্যে??
-ন-না মানে…..
-এত্ত বিরবির করা লাগবে না।১ মিনিট সময় দিলাম,তাড়াতাড়ি মুখটা ঘষে-মেজে পরিষ্কার করে আস।

বাহ,বাহ আচমকা উনার মুখের গদগদ বুলিতে আমি হতবাক!যেভাবে আদেশ করলেন মনে হচ্ছে আমি যেন উনার ঘরের বউ
যে বললেই শুনতে হবে!ক’দিন পরতো উনি নিজেই অন্যের হতে যাচ্ছেন!!আবার আমায় আসছেন থ্রেট দিতে।কোনো আবার ড্রামা আঁটলেন নাকি।মায়ের মুখেতো শুনলাম,উনি অক্সফোর্ডে ড্রামায় ফার্স্ট প্রাইজ অর্জন করছেন।

আহা,লাইফে এধরনের মানুষ দেখতে দেখতে চোখদুটো কানা।
-কি হলো বসে আছিস কেন??(ধমকের সুরে বলে উঠেন।)
আমি থতমত খেয়ে উনার কম্পিত আওয়াজে কেঁপে উঠি।ভয়ে যেন এখনই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিই।তারপর কি নবাবজাদার আদেশে বিছানা ছেড়ে বাথরুমে চলে আসি।।
অতঃপর মুখটা ধুঁয়ে উনার সামনে আসি। উনি আমার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।আর আমার রক্তিম মুখ ঘনঘন চোখের পলক ফেলছে।
-হু,এবার তোকে সুন্দর দেখাচ্ছে।তুই তো এমনিতেই সুন্দর মেকআপ করিস কেন,বলতো?

আমি উনার কথার উওর না দিয়ে চুপ হয়ে থাকি।উনি আবার বলে উঠেন,
-বাই দ্য ওয়ে,এখন শাড়িটা চ্যান্জ করে নর্মাল একটা থ্রী-পিছ পড়ে নে।

-থ্র-থ্র-থ্রী-পিছ পড়বো কেন??
-আমি যা বলছি, তা-ই কর!!আগ বাড়িয়ে কথা বলা আমার মোটেও পছন্দ না।
এদিক-ওদিক তাকিয়ে একমতে ওয়ারড্রবের কাছে যাই।আর মনে মনে ভাবতে থাকি উনি এখন আমার সাথে এরকমটি কেন করছেন?ড্রেস চ্যান্জ,মেকআপ ক্লিন…মাই গড!!
-মিথিলা???
উনার কথা কানে বাজতেই আবার থরথর করে কেঁপে উঠি। ধ্যানের মোড় ভেঙ্গে গেলেই ওয়ারড্রব থেকে পাতলা মিহি কাপড়ের সবুজ একটা থ্রি-পিস বের করি।আমার অনেকটা আনইজি ফিল হতে থাকে উনি যে আমার রুমে বসে আছেন।উনার সামনে নড়নচড়ন করতেও ইতস্ততাবোধ হতে থাকে।
না পারি এখনই উনাকে তেড়ে দিয়ে স্বাধীনভাবে সড়াৎ সড়াৎ একটু মুভ হই।থ্রী-পিসটা পরিধান করে নিজেকে বাথরুমের আয়নায় একবার দেখে নিই।অনেকক্ষণ আয়নার দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারিনি,নিজের রূপের আগুনে নিজেই….
একটু চাপা মারলাম আরকি।
আয়নার সামনে এসে মুখে হালকা একটা ক্রিম মেখে নিই।ভিঁজে বিড়ালের মতো উনার তীক্ষ্ম চোখদুটো এখনো আমার দিকে খাঁড়া।উফস অন্য পুরুষ পরনারীর দিকে কি কৌতূহল নিয়ে তাকাচ্ছে মন চায়…

উনি বিছানা ছেড়ে দাড়িয়ে বলেন,
-তোর জামার পেছনের চেইনটা কে লাগাবে, শুনি??রাস্তার মধ্যে পর পুরুষদের ধবধবে পিঠটা দেখানোর জন্যে চেইন খুলে রেখেছিস??

ওহ,তাইতো!উফস সিট,চেইনটাতো সত্যিই লাগাইনি।দাৎ….এতক্ষণে ঠাহরই করিনি।আমার এসব ভাবনার মধ্যে উনি একদম আমার কাছে চলে আসেন।আর পেছন থেকে আমার পিঠে স্পর্শের হাত বুলান।উনার স্পর্শে আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠে,লজ্জ্বায় দাঁত খিঁচে রাখি চোখবুঁজে। যদি এই মুহূর্তে মাটির মধ্যে মিশে যেতে পারতাম, দরকার হলে তাই করতাম।তারপর, আলতো চেইনের কটিতে হাত রেখে চেইনটা তড়িঘড়ি লাগিয়ে দেন, আর বলেন,
-আমরা তোর জন্যে নিচে ওয়েট করছি।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে আসিস।
এ বলে উনি কেটে পড়েন।আমার মুখে অজান্তে একরাশ হাসি চলে আসে।

পর্ব-০৩
রোকসানা আক্তার

লম্বা চুলগুলো একসাইডে ফেলে দিই।চোখে গাঢ় কাজল এবং ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপিস্টিক এঁটে নিই। ওড়না ঠিক করতে করতে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে একপলক দেখি,দেখামাএই চোখগুলোকে আর স্থির রাখতে পারি নি।তাড়াতাড়ি চোখের দৃষ্টি ফ্লোরের দিকে চলে আসে।আর মুখে মৃদু লজ্জ্বার একটা আভা ভেসে উঠে।।

তারপর, ব্যাগের মধ্যে মোবাইলটা ঢুকিয়ে নিচে চলে আসি।বসার রুমে আসতেই নিলয় ভাইয়া ছাড়া সবাইকে দেখতে পাই।এন্জিলা সিস্টার আমাকে দেখামাএই সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।আর, ইঙ্গিত করে সবাইকে বলে উঠে,
-Look at Mithila,guys.Look,look…

সবাই আমার দিকে হাল চোখে তাকায়,আর খালামণি হাসতে হাসতে বলেন,
-আমাদের মিথিলা মাশাল্লাহ।দেখো,আমাদের মিথিলার জন্যে আমি নিজেই রাজপুত্র খুঁজে নিয়ে আসবো।
হিহিহি…

উনার কথাশুনে আমার মনটা একটুর জন্যে হলেও বিচলিত হয়।কারণ,আমার স্বপ্নের রাজপুএ তো খালামণির ছেলেই।তাহলে দুঃস্বপ্নের রাজপুত্র দিয়ে আমি কি করবো!বুকের দ্বিগুণ ব্যথাটাকে খালামণি আরো দশগুণ করেতেছে,দাৎ…!!

এন্জিলা সিস্টার মুঁচকি হেঁসে আমার কাছে আসেন এবং সাথে রিধিও।এরইমধ্যে মা বলে উঠেন,
-রিধি,তাড়াতাড়ি চলে আসিস।বেশী দেরী করিস না কিন্তু।সাবিলারা আবার চলে আসবে…।
-ওকে মা,তুমি চিন্তা করো না।আমরা খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো।।

ওহ তাহলে,এই কাহিনী?দ্যাট মিনস,রিধি,এন্জিলা সিস্টার,নিলয় ভাইয়া এবং আমি এখন ঘুরতে বের হবো?হায়,আল্লাহ!!শেষ অব্দি আমাকে কানাবগিই বানিয়ে ছাড়লো।শালা ছোকরা,অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য করলো??মনে মনে উনাকে একশোটা গালাগাল করতে থাকি।কিন্তু যাকে আকাশ-পাতাল সমান গালমন্দ করতেছি,উনাকেই তো দেখতে পাচ্ছি না।কই সেই বেহায়াটা??
এসব ভাবতে ভাবতে এন্জিলা আর রিধির সঙ্গে হাঁটা ধরি।সদর পার হয়ে বাহিরে আসতেই চোখগুলো আমার ফিদা!
কারণ,আমার স্বপ্নের রাজপুএ গাড়ির সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গাড়ির চাবি হাতের আঙ্গুলে তুলে ঘুরচ্ছে, আর আউলা বাউলা মননান্দে গান গাচ্ছে।আহা,
কতই না সুন্দর দেখাচ্ছে আমার ক্রাশকে।চোখে কালো চশমা,গায়ে কালো গেন্জি যেন হিরোকেই ফেইল। রিধি আসলেই ঠিক বলেছিল,ভাইয়া একজন ফরেনার।

হয়তো,এতক্ষণে আমাদের জন্যেই উনি অপেক্ষা করছিলেন।
উনার দৃষ্টি আমাদের দিকে আসতেই আমি আলতো চোখগুলো নিচে নামিয়ে ফেলি।এন্জিলা সিস্টার দাঁত বের করে হেঁসে দিয়ে নিলয় ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে।উফস,উনার জড়িয়ে ধরা আমার মনে শিহরণ জাগছে।আবার মনে মনে ক্ষোভও হচ্ছে।তবে,যা-ই হোক,এই অভ্যেসটি বিদেশিনীদের একটা সংস্কৃতিই বলা চলে।
এন্জিলা সিস্টার নিলয় ভাইয়াকে বলেন,
-I am so happy that Mithila comes with us.

তারপর, নিলয় ভাইয়ার ইশারাতে সবাই গাড়ির ভেতের উঠে বসি।রিধি সামনে বসছে নিলয় ভাইয়ার সাথে।আমি এবং এন্জিলা সিস্টার পেছনের সিটে বসি!এন্জিলা সিস্টার গ্লাসের পাশেই বসেন যাতে ভালো করে আমাদের দেশটাকে দেখতে পারেন।
অতঃপর নিলয় ভাইয়া গাড়ি রান করেন।।তবে,আমার মনে একটাই সন্দেহ কাজ করছে , নিলয় ভাইয়া এই সাঁজে এখনো আমার দিকে ভালোভাবে তাকালেন কি না।

কিছুক্ষণ পরপর গাড়ি থেমে যায়।কারণ,ঢাকার রাস্তাগুলোতে জ্যাম ছাড়া আরতো চলার উপায় নেই।এ দেখে এন্জিলা সিস্টার বিরক্তিবোধ নিয়ে বলেন,
-Oh shit,here is so traffic jam,my God!!our’s country has no jam like here!!Besides, how many people
moves!!Do you not feel hesitation??
(উফস,এখানে অনেক জ্যাম মাই গড!!আমাদের দেশে এত্ত জ্যাম না।তাছাড়া,কত মানুষের চলাচল।তোমরা কি অস্বস্তিকর বোধ কর না??)

-নো,সিস্টার,এটা আমাদের অভ্যেস হয়ে গেছে।
-oww!!Otherwise, your country is very beautiful.Look Mithila,look?look?

-yes..
-That’s a rose flower.You know?The rose is our national note.
(ওটা একটা গোলাপ ফুল।তুমি জানো?গোলাপ আমাদের জাতীয় প্রতীক।)

-সত্যি??আমি অনেকটা এক্সাইটেড।
-Yeh.One-day, you must be going our country.Ok?
(হু,একদিন,তুমি আমাদের দেশে অবশ্যই যাবে,ওকে?)

-হু,যাবো সিস্টার।তবে স্বামীকে নিয়ে হানিমুনের জন্যে যাবো।

হানিমুনের কথা বলতে বলতে লুকিং গ্লাসে মনের অজান্তে আমার চোখ পড়ে।ওদিকে তাকাতেই আমি অনেকটা থতমত খেয়ে যাই।গলার পানি যেন ক্ষণিকে শুকিয়ে আসছে।আর হৃৎস্পন্দনের ওঠানামা ক্রম চলতে থাকে।কারণ,নিলয় ভাইয়ার মার্বেল চোখগুলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে তড়িঘড়ি চোখগুলো নিচে নামিয়ে ফেলি,আর এন্জিলা সিস্টারের দিকে মনোনিবেশ করি।

-Ow,really??laughing me.Ok,ok.As ur wish.But my door always opens for yours.
(ওউ,সত্যি??আমাকে হাসালে।আচ্ছা, আচ্ছা।তোমার ইচ্ছে।কিন্তু আমার দরজা তোমার জন্যে সবসময় খোলা।)

-লাভ ইউ,এন্জিলা সিস্টার।।
-লাভউউ টু,মিথিলা।

-প্লিজজ তোমরা এবার একটু থামবে??
নিলয় ভাইয়ার কড়া ঝাড়িতে আমি এবং এন্জিলা সিস্টার একে-অপরের দিকে কানাকানি করি।এন্জিলা সিস্টার আমার হয়ে বলেন,
-What’s problem,Niloy?We have just jocked each other.
(সমস্যা কী,নিলয়?আমরা জাস্ট একে-অপরে একটু মজা করতেছি)

-মজা করার অনেক সময় পাবে।এখন অন্তত একটু থামো।।

তারপর আর-কি!!উনার কথায় আমরা দুজন চুপসে যাই।জানি না নিলয় ভাইয়া কেন সাডেন এত ক্রুদ্ধ!কেউ তো আর আমরা উনাকে কিছুই বলিনি।তারপর,নিরবতার মাঝে গাড়ি চলতে থাকে,এবং পূর্বাচল এসে থামে।
গাড়ি থেকে নেমেই এন্জিলা সিস্টার বালুনদীর দিকে দৌড়ে যান।আর হাতদুটো আকাশের দিকে মেলে নির্মল বাতাসের স্বাদ আস্বাদন করতে থাকেন।আমরা তা দেখে অনেক মুগ্ধ হই।।আসলে,বিদেশিনীদের কাছে নতুন পরিবেশের নতুন প্রকৃতি অনেকটাই ভালো লাগে।
-Really,so nice Mithila… Awesome. (এন্জিলা)

আশপাশের অনেকে এন্জিলা সিস্টারের এমন কৌতূহলী মনোভাব দেখে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ছবি তুলতে থাকে।আবার অনেকে সিস্টারের সাথে সেল্ফি তুলার জন্যে পাগল পাগল অবস্থা।
এন্জিলা আপু এসবের কিছু না বুঝতে পারে আমায় ডাক দেন।
-What is this,Mithila?
(এসব কি, মিথিলা?)

-আপু,বাঙ্গালীরা এমনই।যতক্ষণ না ওদের আবদার পূরণ না হবে,ততক্ষণ পর্যন্ত পাগলের মতো পেছনে ঘুরঘুর করবে।

-Ok no,problem. I take up the selfie with them.
(সমস্যা নেই।আমি সেল্ফি তুলবো ওদের সাথে।)

তারপর,আপু সেল্ফি তুলতে শুরু করেন সবার মন খুশি করার জন্যে।একে একে কয়েকশ সেল্ফি তুলে ফেলেন যার হিসেব নেই।
আমিও আপুর সাথে কিছু সেল্ফি তুলি।হুট করে একজন অপরিচিত লোক এসে আমাদের সাথে সেল্ফি তুলে চলে যায়।আমি অনেকটা হা হয়ে দাড়িয়ে থাকি।লোকটির এমন কার্বার দেখে।কারণ,আপুর সাথে সেল্ফিটা জাস্ট সিম্পল,তবে আননউনের সাথে অনেক কম্প্লিকেটেড।আমি অপরাধীর ভঙ্গিতে ভাইয়ার দিকে তাকাই, ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ভাইয়া মুখটা অন্যদিক করে নেন।।বেখেয়ালী এক ধোঁয়াশা আমার হৃদয়ে ছুঁয়ে যায়।মনটা একদম খারাপ হয়ে যায় আমার।ভাইয়া,হয়তো এতক্ষণে অনেক কিছু ভেবে ফেলেছেন আকস্মিক এ কান্ড দেখে…

ভয়ে ভয়ে সিস্টারের থেকে একটু দূরে সরে দাড়াই।মাথাটা নিচের দিকে প্রায়ই নিমজ্জিত।।

সন্ধে নেমে আসে।আমরা আবার বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করি।গাড়িতে প্রতিটা মুহূর্ত নিরবতায় কাটে আমার। আর,এন্জিলা সিস্টার উনার এক্সাইটেড মুহূর্তগুলো করতে থাকেন।৭ টা ৩০ মিমিটে আমরা বাসায় এসে পৌঁছি।

বাসার দিকে ঢুকতেই হুট করে কেউ এসে নিলয় ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আষ্টেপৃষ্টে। তা দেখে আমি অনেকটা ভড়কে যাই।
-ভা-ভাইয়া,সে কখন থেকে তোমার জন্যে ওয়েট করেছিলাম।কখন আসবে,কখন আসবে….অপেক্ষা করতে করতে অভিমানের ক্রোধে ক্ষান্ত থাকি। তোমার যদি বিলিভ না মাম্মিকে আস্ক করা।না,মাম্মি??

নিলয় ভাইয়ার সাথে কথা বলার মাঝে মামানিকে(সাবিলার মা)ইঙ্গিত করে সাবিলা।

-হু নিলয়।সাবিলা ঠিক বলছে।কেমন আছো নিলয়??
-আসসালামু-আলাইকুম,আন্টি?কেমন আছেন??
-ওয়ালাইকুম -আসসালাম।আজ অনেক দিন পর দেখলাম বাবা তোমাকে।
-আপনাকেও আন্টি।
-হুম,মাম্মি দেখো,আগের থেকে কত্ত কিউট হয়ে গেছে নিলয় ভাইয়া।
-হিহিহি।আচ্ছা, তোমরা কথা বলো,আমি আসি।(সাবিলার মা)

সাবিলা এন্জিলা সিস্টারকে দেখে বলে উঠে,
– ভাইয়া ইনি কে??
-ওর নাম এন্জিলা।আমার ভার্সিটির বেস্ট ফ্রেন্ড।
-হায়,সাবিলা??
-হ্যালো,এন্জিলা সিস্টার?

সাবিলা এবং এন্জিলার মধ্যে কুশল বিনিময় চলে।কথার আসর জমানোর জন্যে সাবিলা এন্জিলা সিস্টার এবং নিলয় ভাইয়ার হাত ধরে টেনে একদম সোফায় নিয়ে বসায়।
এন্জিলা সিস্টারকে অপোজিট সিটে বসতে দেয়,আর নিজে নিলয় ভাইয়ার কোলের মধ্যে গিয়ে বসে।।

এসব দেখে আমার চোখে মুহূর্তে পানিতে ভেসে উঠে।প্রবল অশ্রুধারায় যেন এখনই স্রোত বয়ে যাবে। নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত রেখে রুমের দিকে চলে আসি।
মনটা কেন জানি অনেক কিছু বলতে চায়,কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না।
কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে উঠি।রিধি রুমে এসে আমার কাঁধে হাত রাখে।
-আপু?সবাই নাস্তা করতে বসছে।চলো খেতে যাবে….।
-নাহ রিধি,এই মুহূর্তে খাওয়ার ইচ্ছে একদম নেই।মাকে বলিস,আমি আরো পরে খাবো।

-ন-না,আপু..
-প্লিজজ,রিধি ডিস্টার্ব করিস না।পারলে আমাকে একটু একা থাকতে দে।

রিধি স্তম্ভিত আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রুম থেকে চলে যায়।রিধি চলে যাওয়ার পর বিছানার উপর রেখে দেওয়া কোলবালিশটা হাত দিয়ে টেনে একসাইড হয়ে শুয়ে পড়ি।
নিস্তব্ধতায় অনেকক্ষণ যাবৎ চুপসে থাকি।পিঠে কারো হাতের স্পর্শ লাগতেই আমার টনক নেড়ে উঠে।তড়বড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি নিলয় ভাইয়া।
-ভ-ভাইয়া,আপনি?
-হু,আমি।নাস্তা করতে আসিস নি কেন??
-মন চায় না তাই।
-মন না চাইলেও যে ছাড় পাবি এমন না!
-ম-মানে??
উনি আমার কথার উওর না দিয়ে আমার দিকে ধাপে ধাপে এগুতে থাকেন।উনার ভাবভঙ্গি এরকম দেখে আমি বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ি।
উনি আমার কাছে আসতে আসতে আমি একদম দেয়ালের সাথে আঁটকে যাই।তারপর উনি আমার দু’হাত শক্ত করে ধরে উনার গোলাপি ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের সামনে নিয়ে আসেন।যেই স্পর্শ করবেন,ওমনি আমি বলে উঠি,
-আমাকে স্পর্শ করার আপনার কোনো অধিকার নেই।চলে যান,আপনি!!!
উনি চোখদুটো আমার দিকে সরু করে বলেন,
-অধিকারের জন্যে নয়।তোকে তোর প্রাপ্য শাস্তি দিচ্ছি।আন্ডার্সটেন্ড??
-প্রাপ্য শাস্তি মানে??
-আজ আননউন পার্সোনের সাথে সেল্ফি তুলার সময় অধিকারের প্রশ্ন তুললি না,এখন আমাকে শেখাতে আসছিস অধিকার কি!??
-দেখুন,এখানে ভুল হ…..

কথা সম্পূর্ণ না করতে দিয়েই আমার ঠোঁটের উপর উনার মধমা আঙ্গুলী রাখেন।আর বলেন,
-যতই অজুহাত দেখাস ।আজ তোকে শাস্তি পেতেই হবে।
-হুম শাস্তি দিন।থাপ্পড় দিন,বেতের বারি দিন অথবা যা-ই করেম, আমি তা মাথা পেতে নিব।অন্তত আনলিমিটেশনের মাধ্যমে শাস্তি নয়!!

উনি আমার কথায় চোখদুটো বিরক্তির ভঙ্গিতে বুঁজে নেন এবং আমায় ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে চলে যান।

চলবে….

(ত

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here