পুরোনো ডাকবাক্স পর্ব -১১

#পুরোনো_ডাকবাক্স
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১১

সারাজীবন তোমাকে দিয়ে দেব, নেবে?

” আরসাল! আমার মনে হয় আপনি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত আছেন, ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমান সকালে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কথাগুলো বলে আলিজা বাহিরে যেতে লাগলে আরসাল আলিজার হাত ধরে টান দেয়, আলিজা টাল সামলাতে না পেরে আরসালের বুকে এসে পড়ে। পরক্ষণেই সাথে সাথে নিজেকে ঠিক করে নেয়।

” আমি একটা প্রশ্ন করেছি বুঝতে পারো না তুমি? যাও তুমি তোমার খাবার খেয়ে ঘুমাও। — বলেই আরসাল ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।

” শুনুন, রাগ করছেন কেন? আপনি তো কখনও আমার সাথে এভাবে কথা বলেন নি তাই আমার কেমন অস্বস্তি লাগছিল, মনে হচ্ছিলো আপনার কিছু হয়েছে বা আপনি অসুস্থ। প্লিজ রাগ করবেন না আমার ওপর।

আরসাল কোন কথা না বলে জোরে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। এদিকে আলিজা থ’ মে*’ রে দাঁড়িয়ে থাকে। সে কি করবে এখন, কি ই বা করা উচিৎ তার!
আলিজা ওয়াশরুমের বাহিরে তোয়ালে নিয়ে আরসালের জন্য অপেক্ষা করছে। অবশেষে আরসাল বের হয় আলিজা তোয়ালে এগিয়ে দেয়। সেটা নিয়ে বিছানার দিকে চলে যায় আরসাল।

” আ আমি কি খাবার……..

” আবার খাবার খাবার শুরু করেছ? খাব না আমি।

” আচ্ছা ঠিক আছে, ভেবেছিলাম একসাথে খাব কিন্তু আপনি তো খাবেন না।

আলিজা কথাটা বলেই বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পরে। সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, ” খাবে চলো” কথাটি শুনে চোখ খুলে ফেলে আলিজা।

” উহু আমিও আর খাব না, খেতে ইচ্ছে করছে না।

” আমি উঠতে বলেছি আলিজা।

” সবসময় আপনার কথা কেন শুনবো আমি? আমার কি নিজের শখ আহ্লাদ নেই নাকি, ঘুমান আপনিও।

” কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? নিজের জায়গায় গিয়ে ঘুমান।

” উঠবে না?

” না।

” উঠবে না তো?

” উঠছি…..

আলিজা বিছানা ছেড়ে উঠে আরসালের সাথে কোন কথা না বলে বাহিরে যেতে লাগলে আরসাল তাকে দাঁড়িয়ে যেতে বলে। আলিজাও বাধ্য মেয়ের মতো দাঁড়ায়।

” বলুন।

” আমার মত খারাপ চরিত্রের পুরুষ হয়তো তুমি এই পৃথিবীতে আর পাবে না। তোমার সাথে অনেক অন্যা*’য় করে ফেলেছি। তুমি কথায় কথায় বলতে না যে পুরো দুনিয়া তোমায় ঠকিয়েছে, হ্যাঁ ওই পুরো দুনিয়ার মধ্যে আমিও ছিলাম। আমি ছিলাম একরকম আর তুমি দেখেছো একরকম। আমি মিথ্যেমানব তবুও কিছু সত্য বলব শুনবে? (আলিজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে আরসাল)

” না কিছু বলতে হবে না।

” তোমার জানা প্রয়োজন, আমি বিয়ের সময় থেকেই তোমাকে বলতে চাচ্ছি কিন্তু…

” আমি কষ্ট পাবো জন্য বলেন নি। এখনও বলবেন না প্লিজ আপনি এখন বললে আমি এখনও কষ্ট পাবো। আমি আপনার অতীত জানতে চাই না।

” আলিজা…..

” হুম আমি কিচ্ছু জানতে চাই না আরসাল।

” হয়তো তোমাকে ঠকা*’নোর জন্যই আজ আমি নিজেও ঠকে গিয়েছি। আমি চাই না আর কখনও বাহিরমুখী হতে। আমি আমার করা ভুলগুলো সুধরে নিতে চাই একটা কি সুযোগ দেবে আমায়?

” এই যে কাছে টেনে নিতে চাইছেন, আপনার সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে আবার আমাকে কাচের টুকরোর মত ভেঙে ফেলে রেখে যাবেন না তো?

” বিশ্বাস রাখতে পারো।

” সত্যিই বিশ্বাস করতে পারি আপনাকে?

” হ্যাঁ সম্পূর্ণভাবে।

” জানেন তো আপনি ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই, আপনিই যদি আমাকে আবার দূরে সরিয়ে দেন তাহলে আমার আর বেঁচে থাকা হবে ন…..

কথাটা শেষ করতে দেয় না আরসাল, মুখ চেপে ধরে আলিজাকে থামিয়ে দেয়। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে আলিজার চোখদুটো যে মা*’দকের মতো নেশা নেশা লাগছে। কয়েক সেকেন্ড এই চোখে তাকিয়ে থাকলে নিশ্চিত এই চোখে ডুবে যাবে সে।
আলিজা অদ্ভুত শব্দ করতে থাকে মুখ দিয়ে। অতঃপর আরসাল খেয়াল করল সে তো আলিজার মুখ আটকে রেখেছে, সাথে মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়।

” উফফ এভাবে কেউ মুখ চেপে ধরে? আর একটু হলে দম বন্ধ হয়ে ম…..

” এই যে আবার আজেবাজে কথা, এসবের জন্যই তো মুখ চেপে ধরেছিলাম।

” হুম এখন এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি খেতে যাবেন রাত তো শেষ হতে চললো।

” চলো।

*****
শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিন মানেই সবার দুপুর পর্যন্ত ঘুমানো। সবার না শুধু মি. নেওয়াজ আর আরসালের। কিন্তু অনেক রাত করে ঘুমানোর কারণে আলিজাও আজ ঘুম থেকে উঠতে পারে নি। তাছাড়া প্রতিদিন সে ভোরবেলা উঠে নামাজ শেষ করেই রান্নাঘরে চলে যায় কেন না নওরীনের প্রাইভেট থাকে আরসালের পড়াতে যেতে হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে রুমে বাহির থেকে আলো আসছে। তাড়াহুড়ো করে উঠে পরে আলিজা। ফ্রেশ হয়ে নামাজটা আদায় করেই রুমের বাহিরে চলে যায়। বের হয়েই দেখে নওরীন সোফায় বসে আছে। রান্নাঘরে যেতে যেতেই নওরীনকে উদ্দেশ্য করে বলে,” তুমি এখানে বসে আছো কেন?

” গতকাল কি বলেছিলে তুমি?

” কি বলেছিলাম বল তো, মনে নেই তো।

” তা মনে থাকবে কেন, আমি কি কেউ হই নাকি!

” আরে সোনাবাচ্চা রাগ না করে বল তো।(রান্নাঘরে কাজ করতে করতে কথা বলছিল সে।)

” আজকে আমাদের হাটতে বের হবার কথা ছিল।

” আজকে শুক্রবার!

” জি।

” একটুও খেয়াল নেই দেখেছো, ডাকো নি কেন?

” ডেকেছিলাম।

” শুনতে পাই নি তো!

” ভাইয়া উঠে এসে, ডাকতে নিষেধ করল।

” তোমার ভাইয়া নিষেধ করেছে? কত বড় সাহস আজ তার শা*’স্তি আছে। আজকে জ্যাম- পাউরুটি খাওয়াই সবাইকে কি বল? রাতের খাবার আম্মি গরম করে খেয়ে নেবে।

” দারুণ আইডিয়া হিহিহি, চলো এবার আমরা বের হই।

” কাউকে বলব না?

” সবাই তো ঘুম।

” আচ্ছা চলো।

দুজনে কাউকে না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়। তাদের যে আজকের সকালটা উপভোগ করতে হবে। বেরিয়ে যায় আজকের সকালের উদ্দেশ্যে।

*****
হঠাৎ করে সকালেই ঘুম ভেঙে যায় আরসালের। ঘুম থেকে উঠেই দেখে আলিজা পাশে নেই। সে নিশ্চিত রান্নাঘরে চলে গিয়েছে এত সকালে ভেবে বিছানা থেকে উঠে ধীরপায়ে বাহিরে চলে যায় কিন্তু রান্নাঘরে তো কেউ নেই। এত সকালে ছাদে যাওয়ার কথা না। সে নওরীনের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে সেখানেও নেই। তার মানে দুজন নিশ্চিত কোথাও গিয়েছে। দুইজন মিলে কি কি যে করে কিছু মাথায় ঢুকে না। আরসাল রুমে ফিরে যায়। গতকালের ঘটনা মাথায় ঘুরছে, সে অনেক আগে থেকেই আলিজার প্রতি দূর্বল হয়ে গিয়েছিল এটা ঠিক কিন্তু তিথিকে সে ভালোবাসতো। মানুষ যা-ই বলুক না কেন মনকে তো আর আয়ত্তে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু রাত থেকে তিথির প্রতি ক্ষো*’ভ জন্মালেও তাকে এক নিমিষে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে সে আর তার কাছে ফিরেও যাবে না। কিন্তু সে যদি আলিজার সাথে সব ভুলে নতুন করে শুরু করতে চায় আলিজার মনে হবে না তো আমি হয়তো কারও সাথে বিচ্ছেদ হওয়ায় তাকে বেছে নিয়েছি! আরসাল কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। আবার ভাবে মানুষ মাত্রই ভুল করে, সেও ভুল করেছে মানুষ চিনতে আর বাকিটা ভাগ্যের পরিহাস। সে এখন থেকে আলিজার সাথে দূরত্ব কমিয়ে নেবে। আলিজার কথা ভাবতে ভাবতে পাশে তাকিয়ে দেখে ফোন বেজে যাচ্ছে, স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আলিজার নম্বর। তারা তো হয়তো বাহিরে গিয়েছে কোন বিপদ হলো না তো! তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে সে।

” আলিজা!

” আপনি উঠেছেন?

” হ্যাঁ অনেকক্ষণ।

” আচ্ছা ভালো হয়েছে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হয়ে বাসার বাম দিকের রাস্তা দিয়ে যে একটা ফাঁকা মাঠের মত আছে ওখানে চলে আসুন।

” কেন? আর তোমরা না কাউকে না জানিয়ে বাহিরে কেন গিয়েছো?

” আপনি কি করে বুঝলেন আমি একা আসি নি।

” ওই বাদরীটার মাথায় এসব আজগুবি বুদ্ধি চলে, ওই নিশ্চয়ই নিয়ে গিয়েছে ভোরবেলা ডাকছিল।

” একদম বাদরী বলবেন না, খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।

” কি খারাপ হবে শুনি!

” উফফ কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসুন।

” তুমি কি শাড়ি পরেই চলে গিয়েছো?

” না তো।

” ঠিক আছে আমি আসছি।

” হুম তাড়াতাড়ি।

আরসাল তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ে। প্রতিদিন এই সময়ে প্রাইভেট পড়াতে যেতে হয় আর আজকে অন্য কারনে বের হতে হচ্ছে যদিও সময় এক কিন্তু অনুভূতিটা ভিন্ন। চারপাশে শীতের আমেজ চলে এসেছে, আরসাল টানা পায়ে নির্দিষ্ট স্থানের দিকে হেঁটে চলে কিছু দূর যেতে আলিজা আর নওরীনকে দেখতে পায়। যা ভেবেছিল তাই ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। সে এগিয়ে যায় তাদের দুজনের কাছে। আরসালকে দেখে দুজন হাসতে থাকে। সে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

” দুজনে বের হয়েছিস ঠিক আছে আমাকে আবার কল করে এখানে ডাকতে হবে কেন কি হয়েছে?

” তোমার বউ তোমাকে মিস করছিল। (নওরীন)

” এসব কি কথাবার্তা নওরীন?

” যা সত্যি তাই তো বললাম। দেখেছো বউমনি আর তুমি কিছু বলছো না কেন?

” আপনি এসে এভাবে ঝগড়া করছেন কেন?

” ঝগড়া কোথায় করলাম?

” তুই এগুলো কি করছেন?

” কথা বলছি।

” এটা কোন ধরনের কথা বলার ধরণ?

” তুমি এবার ওর হয়ে আমার সাথে ঝগড়া করছো।

” এই নওরিন আমি ঝগড়া করছি?

” না বউমনি একদম না। ভাইয়াই আসার পর থেকে আমাদের সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছে।

” এই তোরা দুজন একসাথে আমার সাথে ঝগড়া করলে আমি কিভাবে পারবো তোদের সাথে?

” কি আমরা দুজন ঝগড়া করছি?(আলিজা)

” এই তোরা এভাবে এরকম করার জন্য আমাকে এখানে দেখেছিস? আমি কিন্তু চলে যাব।

” এ এই না।(আলিজা)

” কেন ডাকা হয়েছে আমাকে?

” আমরা টাকা নিয়ে আসি নি।(নওরীন)

” টাকা কেন লাগবে?

” ওখানে একটা দোকান দেখছি খুব কম দামে সুন্দর সুন্দর শাড়ি বিক্রি করছে একটা কিনে দাও ভাইয়া।

” এই শাড়ি এখানে এত সকালে কি করছে?

” আজকে নাকি এখানে মেলা, সকাল সকাল ওই দোকানটা চলে এসেছে।

” একটা শাড়িতেই হবে তো?

” ওখানে যাই আগে।

” মানে পরিমাণ বাড়তে পারে?

” হ্যাঁ আবার না-ও বাড়তে পারে।

” আচ্ছা চল।

চলবে………

আগে ছয় সাতশো রিয়েক্টও কম লাগতো এখন চারশো হওয়াই কঠিন। হতাশ লাগে মাঝে মাঝে গল্পটা কি খারাপ লাগছে? গল্প পড়ে একটা করে লাইক আর কমেন্ট করে যেতে পারেন তো। আর আমি একটু অসুস্থ তিন চারদিন। এই কয়েকদিন তবু গল্প দিয়েছি এখন আর লিখতে পারছি না। একটু সুস্থ হলে গল্প দেব সবাই দোয়ায় রাখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here