পূর্ণতা পর্ব ৬+৭

#পূর্ণতা🖤
#part_06
#Writer_Megla (মেঘ)

পূর্ণতার মুখে এসব কথা শুনে তূর্যর মায়ের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটার জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার।সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,,, মেয়েটা কে? এভাবে বসে বসে কাঁদছে! সে নিঃশব্দে পূর্ণতার ঘরে গিয়ে তার মাথায় হাত রেখে বললো,
——-“কাঁদছো কেন মা?”

পেছন থেকে কারো কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে পূর্ণতা হাতে উল্টো পিঠ দিয়ে কোনমতে চোখটা মুছে একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
——–” কে বললো আমি কাঁদছি? আমি একদম কাঁদছি না তো। এই দেখ আমি তো হাসছি।”

———“বড়দের কাছে মিথ্যা বলতে নেই।”

——–“আমি মিথ্যা বললাম কোথায়?”

——–” মিথ্যাই তো বললে। আমি বাইরে থেকেস্পষ্ট দেখলাম পাচ্ছি তুমি কাঁদছিলে। আর এখন বলছো তুমি কাঁদছিলে না। আমাকে বল তুমি কেন কাঁদছিলে। আমি তো মায়ের মতোই হই তাই না?”

মায়ের মতোই কথাটা শুনে পূর্ণতার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। সে আনন্দিত গলায় বলল,
——-” তুমি আমার মাম্মাম হবে?”

——-“আচ্ছা যাও আমি তোমার মাম্মার! এবার বলো তুমি কেন কাঁদছিলে?”

পূর্ণতা বাচ্চাদের মত করে বললো,
———“না আমি বলবো না। তাহলে বড় আম্মু আমাকে আবার মারবে।”

——–“বড় আম্মু তোমাকে মারবে কেন? আর তোমার হাতে ওটা কার ছবি দেখি!”

——–“আমার মাম্মামের।” কথাটা বলেই পূর্ণতা ছবিটা তূর্যর মায়ের দিকে এগিয়ে দিল।”

তূর্যর মা ছবিটা দেখে অবাক হয়ে বললো,
———“এটা তো আয়শার ছবি! তার মানে তুই পূর্ণতা। আমাদের পূর্ণতা। কতো বড় হয়ে গেছিস! আয় এদিকে আয় তোকে একটু বুকে জড়িয়ে ধরি।”

পূর্ণতা বাচ্চাদের মত করে বললো,
———“তুমি আমার মাম্মামকে চিনো?”

——–“হুঁ তো।”

———“কিন্তু তুমি কে? তোমাকে তো আগে কখনো দেখিনি?”

——–“আমি তোর ফুপি হই। আয় মা এদিকে আয় তোকে একটু জড়িয়ে ধরি।”

——–“তুমি আমার ফুপি? কি মজা তাহলে রিতুর মতো আমার ও ফুপি আছে। রিতুর ফুপি ওকে কতো আদর করে। হাসপাতালে গিয়ে ওর জন্য কতো কান্না করে। যাতে রিতু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়।” কথাটা বলেই পূর্ণতা তূর্যর মায়ের দিকে তার দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,, ফুপি তাহলে তুমি এখন আমাকে আদর করো। পূর্ণতার ফুপি মুচকি হেসে পরম আদরে পূর্ণতাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। যেন পূর্ণতার মধ্যে তার মরা ভাইটার ছায়াই দেখতে পাচ্ছে। আর পূর্ণতাও বাধ্য মেয়ের মত তার বুকে মুখ গুজে রইলো। চাতক যেন একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে সারা বছর অপেক্ষা করে বসে থাকে। তেমনি পূর্ণতাও ভালোবাসার চাতর। একটু খানি ভালোবাসার জন্য সে সব করতে পারে। পূর্ণতার মা-বাবা মরার পর থেকে তন্ময় ছাড়া সত্যিকার অর্থে আর কেউ তাকে ভালোবাসেনি। আর যারা একটু আধটু সিমপ্যাথি দেখিয়েছে শুধু তাদের স্বার্থের লোভে। অনেক দিন ফুপিকে এভাবে কাছে পেয়ে পূর্ণতার মনে হচ্ছে তার মাম্মামই যেন তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। পূর্ণতার ভাবনার মাঝেই ওর ফুপি বললো,

——–” পূর্ণতা?”

——–“হুঁ।”

——–“তখন কি যেন বলছিলি? তোর বড় আম্মু তোকে মারবে কিন্তু কেন মারবে?”

বড় আম্মু কথাটা শুনেই পূর্ণতার সব খুশি যেন এক মূহুর্তেই উবে গেল। সে তার ফুপির বুক থেকে মাথা তুলে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
———” তোমাকে বলা যাবেনা।”

——–“কেন?”

——–” বড় আম্মু বলেছে যদি আমি কাউকে মায়ের কথা বলি তাহলে বড় আম্মু আবার আমাকে মারবে।”

——–“তুই তো আমাকে সব বলেই দিলি।”

পূর্ণতা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
——–“বলে দিয়েছি? তাহলে এখন আমার কি হবে? বড় আম্মু অনেক জোরে জোরে মারে। আমার তো খুব কষ্ট হয়। বলো?”

পূর্ণতা কথা শুনে ওর ফুপি পূর্ণতাকে আবার ও বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
——–“আমি আছি তো। এখন থেকে আর কেউ তোকে মারতে পারবে না। আর যদি কেউ আমার মাকে মারতে আসে আমি তাকে পিটিয়ে একদম তক্তা বানিয়ে দিবো।”

পূর্ণতা আনন্দিত গলায় বললো,
——–“তাই?”

——–“হুঁ।”

——-” তাহলে তো অনেক মজা হবে। আমরা দুজন মিলে সবাইকে একদম ঢিসুম ঢিসুম করে দিবো।”

পূর্ণতার ফুপি তূর্যর কাছে থেকে আগেই পূর্ণতার ব্যাপারে সব কিছু শুনেছে। যে ভাইটা তার জন্য এতো করছে। তার মেয়ের একটা খবর নেওয়ার চেষ্টা ও করেনি সে। নিজেকে নিজের কাছেই বড্ড স্বার্থপর মনে হচ্ছে তার। তাদের জন্যই পূর্ণতার আজ এই দশা। যদি নিজেদের মিথ্যা রাগ অভিমান ভুলে একটা বার পূর্ণতার খবর নেওয়ার চেষ্টা করতো তাহলে হয়তো মেয়েটা আজ এই অবস্থা হতো না।

🍁

——–“রাত তো অনেক হলো চল এবার আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। কাল আবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে।” তন্ময় বললো।

——–“হুঁ চল এখন তবে নিচে যাই। কি রে তূর্য উঠ।”

——–” সুভাষ তোরা যা। আমার তন্ময়ের সাথে একটা জরুরী কথা আছে। সেটা সেরেই আসছি।”

তন্ময় অবাক হয়ে বললো,
——-“কি কথা?”

——–“সেটা বলার জন্যই তো এখানে বসে আছি।”

——–“তাহলে তোরা কথা বল। আমরা বরং নিচে যাই।” আকাশ বললো।

——–“হুঁ যা‌।”

তন্ময়ের বন্ধুরা সবাই চলে যেতেই তন্ময় আবার বললো,
——–“কি রে কি এমন জরুরী কথা যে ওদের সবাইকে নিচে পাঠিয়ে দিলি। তাড়াতাড়ি বল তো কাহিনী কি?”

——-” কথাটা পূর্ণতাকে নিয়ে।”

——-“পূর্ণতাকে নিয়ে?”

——-“হুঁ। পূর্ণতার ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে তোর সাথে আমার একটা জরুরী কথা আছে।”

——-“বল কি বলবি?”

——-“দেখ মামা যতই বলুক তার বন্ধুকে দিয়ে পূর্ণতার ট্রিটমেন্ট করাচ্ছে কিন্তু আমার মনে হয় পূর্ণতার চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে না। আর ট্রিটমেন্ট যদি ঠিকমত হতোই তাহলে আরও অনেক দিন আগেই ও সুস্থ হয়ে যেত। আমার কি মনে হয় জানিস পূর্ণতাকে সুস্থ করার বদলে আর অসুস্থ করার চিকিৎসা চলছে। এটা আমার মনের ভুল ও হতে পারে,,, তুই আবার মাইন্ড করিস না। আমিও যেহেতু একজন সাইক্রিয়াটিস্ট তাই আমি চাই এখন থেকে পূর্ণতার চিকিৎসার সব দায়িত্ব আমার। তুই কি বলিস?”

——-“আমি আর কি বলবো? ভালোই হবে। আমি আরো ভাবছিলাম তোকে পূর্ণতার চিকিৎসার ব্যাপারে বলবো। তুই যখন নিজ থেকেই ওর চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে চাইছিল এটা তো আমাদের সৌভাগ্য। তা কবে থেকে ওর ট্রিটমেন্ট শুরু করতে চাস।”

———“ট্রিটমেন্ট তো আজ থেকেই শুরু করা যেত কিন্তু তার আগে ওর ফিজিকাল কন্ডিশন সম্পর্কে আমাকে ভালো করে জানতে হবে। মামা-মামীকে ওর সব ডাক্তারি রিপোর্ট দেখাতে বললাম। ওরা বললো ওসব কাগজ পত্র নাকি বাড়িতে নেই। পাগলা গারদে আছে। তুই যদি kindly তাড়াতাড়ি কাগজ পত্র গুলো এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করতি।”

——–“দাঁড়া। আমি দেখছি।”

🍁
রাত প্রায় শেষ হতে চললো। চার দিকে পিনপতন নীরবতা। এই নিস্তব্ধ পরিবেশে করিডোরে এক কোণায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল হৃদয়। হঠাৎ তন্ময় মা অর্থাৎ তার ফুপুকে আসতে দেখে দুই ঠোঁটে চেপে রাখা সিগারেটটা দ্রুত লুকিয়ে ফেললো সে। তার পর তার ফুপুর দিকে তাকিয়ে বললো,
——-“ফুপি এতো রাতে তুমি এখানে?”

——-“রাত আর কোথায় আছে? ভোরের আলো ফুটে গেছে তো। তা তুমি এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছিল কেন?”

——-“ঘুম ভেঙে গেল। তাই আর শুয়ে না থেকে উঠে পড়লাম।”

——“ও তা রাতে ভালো ঘুম হয়েছে?”

——“হুম একদম ফাস্ট ক্লাস ঘুম হয়েছে। তা ফুপি একটা কথা বলি?”

——-“হুঁ বল।”

——-“তোমাদের বাড়ি আসার পর সবাইকেই দেখতে পেলাম। শুধু পূর্ণতাকে এখনো দেখতে পেলাম না। ওকে কি পাবনা থেকে আনোনি?”

——-“ঐ পাগলটাকে দিয়ে তোর কি দরকার শুনি?”

হৃদয় মনে মনে বললো,,, দরকার আছে বলেই তো জানতে চাচ্ছি ফুপি। পাগল হলেও সে তো আমার ভালোবাসা। My loving sweet heart!
#পূর্ণতা🖤
#part_07
#Writer_Megla (মেঘ)

সবে মাত্র ভোরের আলো ফুটছে। জানালা কাঁচ ভেদ করে এক চিলতে আলো এসে চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল রিশার।সে আয়েশী ভঙ্গিতে বিছানায় উঠে বসলো। আজকে ঘুমটা একদম পারফেক্ট হয়েছে তার! অনেক দিন পর এমন কুম্ভ কর্ণের মতো ঘুমালো সে। হঠাৎ কি ভেবে টাইম দেখার জন্য নিজের সেল ফোনটা খুলতে লাগলো সে । তার রুমে কোন দেয়াল ঘড়িটা নেই। ঘড়ির টিকটিক আওয়াজ নাকি তার কাছে খুব বিরক্ত লাগে। ফোনটা অন করতেই একদফা অবাক হলো সে। তূর্য নাম্বার থেকে বত্রিশটা মিসড কল এসেছে। সে জানে ফোন করে প্রেমালাপ করার মতো ছেলে তূর্য নয়। নিশ্চয়ই কোন ইম্পর্ট্যান্ট দরকার ছিল তাই তূর্য এতোবার ফোন করেছে। তার এখন নিজের উপর প্রচন্ড রাগ লাগছে। কেন সে কালকে এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েতে গেল? তার এই বোকামির তূর্য নিশ্চয়ই রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি! কাল রাতে রিশার খুব মাথাব্যথা করছিল। ঘুম আসছিল না তাই সে দুইটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেয়। যাতে একটু ভালো করে ঘুমাতে পারে। রিশা ব্যস্ত হয়ে তূর্যকে ফোন দেয়। ফোনটা বেজে যাচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। রিশা মনে মনে ভাবে,,, তূর্য কি ইচ্ছে করেই তার ফোনটা তুলছে না? রিশা ফোনটা তুলতে পারেনি বলে তূর্য কি তার সাথে অভিমান করছে নাকি?? কিন্তু রিশা জানে এরকম শুরু শুরু মিথ্যা অভিমান করার মতো ছেলে তূর্য নয়। রিশা তূর্যকে ভালোবাসলে ও তূর্য যে তাকে ঐ চোখে কখনো দেখিনি সেটা সে খুব ভালো করেই জানে। তূর্য রিশাকে একজন ভালো বন্ধুর বাইরে আর কিছুই ভাবে না। তাকে বিয়ে করার ব্যাপারে তার কোন দিনই কোন আগ্রহ ছিল না। সেই প্রথম তূর্যকে প্রপোজালটা দেয় আর তূর্য মতে একজন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা মানেই একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক। যেখানে থাকবে বিশ্বাস আর ভরসা। আর রিশার মধ্যে সেই সব গুন আছে তাই তূর্য ও তাকে আর মানা করে না। তূর্য যদি সত্যিই তার উপর অভিমান করে থাকে তাহলে তো সে অভিমানটা ভাঙাতে হবে! রিশা মনে মনে ভাবছে তূর্যকে একটা সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়? যদি সে এখন তূর্যর সামনে গিয়ে হাজির হয় নিশ্চয়ই তূর্য আর তার উপর রাগ করে থাকতে পারবে না। তাই রিশা এখন তূর্যর মামার বাড়ি যাওয়ার প্লেন করছে। কিন্তু এরকম হঠাৎ করে করে ওখানে যাওয়া কি ঠিক হবে। অবশ্য তন্ময় তাকে তার বিয়েতে ইনভাট করছে। র্তূর্যর বন্ধু হিসাবে তন্ময়ের সাথেও তার বেশ ভাব আছে। রিশা মনে মনে বললো,,,,”কি আর হবে? আমি তো আর তূর্যকে দেখতে যাচ্ছি না আমি যাচ্ছি পূর্ণতাকে দেখতে। তূর্যর কাছে শুনেছি মেয়েটা নাকি ভীষণ মিষ্টি। এরকম একটা মিষ্টি পরীকে চোখের দেখা দেখতে না পারলে আমার বাংলাদেশে আসাটাই নিরর্থক!”

#চলবে….

( জানি পর্বটা অনেক ছোট হয়েছে। আসলে আজকে একটু প্রবলেম ছিল তাই গল্প লিখতে পারিনি। আপনাদের কথা দিয়েছিলাম সেজন্য এক ঘন্টায় যতটুকু পারছি লিখছি। কাল থেকে গল্প নিয়মিত পাবেন ইনশাআল্লাহ। আর প্লীজ একটুগঠন মূলক কমেন্ট করুন। কারণ আপনাদের কমেন্টের উপরই আমার শিখার মানসিকতা নির্ভর করে।)
#চলবে….

( আজকে আরেকটা পর্ব দিতে চেয়েছিলাম তাই দিলাম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গল্প সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here