পূর্ণতা পর্ব ৮+৯

#পূর্ণতা🖤
#part_08
#Writer_Megla (মেঘ)

আজ তন্ময়ের গায়ে হলুদ। নানা রকম আলোকসজ্জা আর ফুলের বাহারে সেজে উঠেছে বিয়ে বাড়ি। চারদিকে লাইটিং,ক্যামেরা আর লোকজনের হৈচৈ সব মিলিয়ে একদম মেতে উঠেছে বিয়ে বাড়ি। বিয়ে বাড়ির এই উচ্ছলতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেতে উঠেছে পূর্ণতা ও! পিঙ্ক কালারের লেহেঙ্গা আর হালকা সাজে তাকে একদম অপ্সরার মতো লাগছে। পূর্ণতার গায়ের রঙটা হালকা চাপা হলেও তাকে দেখতে বরাবরই সুন্দর লাগে। যে কেউ তাকে একবার দেখলেই তার মায়ায় জড়িয়ে পড়তে বাধ্য। হয়তো সেই মায়াই জড়িয়ে গেছে তূর্য! না চাইতেও বার বার পূর্ণতার কাছাকাছি চলে আসছে সে। কিন্তু পূর্ণতাকে আজ শুধু মায়াবতী নয়। অতি রূপবতীদের একজন লাগেছে। যে কোনো ছেলে তাকে আজ এই সাজে দেখলে নিশ্চয়ই কমপক্ষে দশ মিনিট তার হা করে তাকিয়ে থাকবে। পূর্ণতা বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে গায়ে হলুদের স্টেজের দিকে আসছিল এমন সময় হঠাৎ করে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে একদম মাটিতে পড়ে যায় সে। মাটিতে পড়ে পূর্ণতা জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। আর বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টে বললো,

——-“এ্যাঁ এ্যাঁ,,,,এই পঁচা ছেলে তুমি আমাকে ফেলে দিলে কেন? আমি ভালো ভাইয়াকে বলে দিবো। ভালো ভাইয়া তোমাকে খুব পিটাবে। হুঁ।”

পূর্ণতার কোন কথাই যেন ছেলেটার মাথায় ঢুকছে না। সে এক ধ্যানে শুধু পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণতাকে এমনিতেই আজ খুব সুন্দর লাগছিল তার উপর এখন বুক থেকে ওড়নাটা একটু সরে যাওয়ার পূর্ণতাকে আরো বেশি আবেদনময়ী লাগছে। ছেলেটার ভাবনার ঘোর কাটল পূর্ণতার কান্নার আওয়াজে। পূর্ণতা কান্নার বেগ আরো বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

——-“এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ,,,আমি কিন্তু এখন সবাইকে ডাকবো।”

ছেলেটা পূর্ণতাকে থামানোর চেষ্টা করে বললো,
——–“সরি বাবা সরি। এবার প্লীজ চুপ করো। আমি কি তোমাকে ইচ্ছে করে ফেলেছি নাকি? ভীড়ের মধ্যে দেখতে পাইনি তাই তোমার সাথে ধাক্কা লেগে গিয়েছিল।”

——-“ও তাহলে তুমি ইচ্ছে করে আমাকে ধাক্কা দাওনি?”

——-“না তো।”

——-“কিন্তু আমি তো ব্যাথা পাইছি।”

——-“আহারে ব্যাথা পাইছো? আসো আদর করে দেই।”

ছেলেটার কথা শুনে পূর্ণতা খুশি হয়ে বললো,
——-“তুমি সত্যি সত্যিই আমাকে আদর করে দিবা? তুমি খুব ভালো।”

——-“হ্যাঁ আদর করে দিবো কিন্তু তার আগে তুমি ওখান থেকে উঠে এসো।”
এই বলে ছেলেটা পূর্ণতার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। আর পূর্ণতা তার হাত ধরে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মত করে বললো,

——–“দেখ এখানে কত্তো ব্যাথা পাইছি।(হাত দেখিয়ে) দাও এখন আমাকে আদর করে দাও।”

ছেলেটা পূর্ণতার হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর বারবার খারাপ নজরে পূর্ণতার বুকের দিকে তাকাচ্ছে। সে মনে মনে ভাবছে,,, মেয়েটা কে?একদম ফুটন্ত গোলাপ। এর সুভাস তো আমাকে নিতেই হবে!

——-“পূর্ণতা এই পূর্ণতা ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? এদিকে আসো।” তূর্য বললো।

পূর্ণতা তাড়াতাড়ি ছেলেটার থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে তূর্যর কাছে চলে গেল।
——-“ওখানে একা একা কি করছিলে?” তূর্য জিজ্ঞেস করলো।

——–“আমি পড়ে গিয়ে হাতের মধ্যে ব্যাথা পাইছিলাম। তাই ঐ ভাইয়াটা আমাকে আদর করে দিচ্ছিল যাতে আমার হাতের ব্যাথাটা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। খুব ভালো না ভাইয়াটা?”

তূর্য পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে সুভাষ বলে উঠলো,

——-“এই তূর্য এদিকে আয়। তন্ময়কে হলুদ লাগাবি না? গায়ে হলুদের সময় তো চলে যাচ্ছে।”

——“হুঁ আসছি।”
এই বলে তূর্য পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বললো,,,চলো। তোমার প্রিয় ভাইয়াকে হলুদ লাগাতে হবে তো।

পূর্ণতা উচ্ছ্বাসিত হয়ে বললো,
——“প্রিয় ভাইয়াকে এখন আমরা হলুদ লাগাবো? ইয়াহু কত্তো মজা হবে!”

——-“হ্যাঁ খুব মজা হবে। এখন চল।”(মুচকি হেসে)

পূর্ণতা যখন তূর্যর সাথে কথা বলছিল। ঐ ছেলেটা দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। ছেলেটা পূর্ণতাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,,,, তার মানে
She is my loving sweet heart Purnota! রূপ আর তেজ সবই দেখছি আগের থেকে শতগুণে বেড়ে গেছে।
But don’t worry darling!
তুমি খুব শীঘ্রই আমার হতে যাচ্ছো। এই হৃদয় চৌধুরীর হাত থেকে আর তোমার নিস্তার নেই সুইটহার্ট!!

🍁
পূর্ণতাকে গায়ে হলুদের স্টেজের কাছে আসতে দেখে তন্ময় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

——-“আমার বনুটাকে আজ তো খুব সুন্দর দেখতে লাগছে‌। কেউ দেখলে একেবারে হার্ট অ্যাটাক করবে।”

তন্ময়ের কথা শুনে পূর্ণতা বাচ্চাদের মত করে বললো,
——–“আমার প্রিয় ভাইয়াকেও খুব সুন্দর লাগছে।”

——–“আমাকে সুন্দর লাগছে ঠিক আছে কিন্তু আমার বনুটাকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে। সবার থেকে বেশি।”

তার পর তন্ময় তার বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,এই অর্ণব ক্যামেরা নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমার মিষ্টি বনুটার সাথে কয়েকটা ছবি তুলে দে তো।

——“আরে ভাই আমি তো সেই কখন থেকে ছবিই তুলতাছি।”

——-” সবার ছবি তোলা আর আমার বনুর ছবি তোলা কি এক হলো নাকি? She is so special!”

তন্ময়ের কথা শুনে তিথি তেড়ে এসে বললো,
——-“হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়ার চোখে তো পূর্ণতাই সবসময় সুন্দর। আমাকে তো কখনো চোখেই পড়ে না। আমি ভাইয়ার সাত জন্মের শত্রু।”

—–“আমি সে কথা বললাম কখন?” তন্ময় ভ্রু কুঁচকে বললো।

তিথি হালকা মন খারাপ করে বললো,
——“মুখে বলোনি কিন্তু কাজে-কর্মে তাই তো প্রকাশ করছো। পূর্ণতাকে সাথে কতো কতো ছবি তুলছো। কোথায় আমার সাথে তো একটাও ছবি তুললে না।”

——“ওহ্ এই ব্যাপার? (মুচকি হেসে)
ঐ অর্ণব তুই এখনো হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সুন্দর করে আমাদের তিন ভাই-বোনের একসাথে কয়েকটা ছবি তুলে দে তো।”

তন্ময়ের কথা শুনে তার বন্ধুরা বলে উঠলো,,, তন্ময়…
This is not fair! শুধু তুই বোনদের সাথেই ছবি তুলবি এটা হবে না। আমার তোর বন্ধু হলেও তোর ভাই। সো আমাদের বাদ দেওয়া চলবে না। তন্ময় হেসে বললো,

——“তোরা আবার বাদ যাবি কেন? তোরা তো ডাবল অফার পাবি। ভাই+বন্ধু বলে কথা!”

সুভাষ বললো,
——-“অনেক দিন আমাদের কোন গ্রুপ ছবি তোলা হয় না। চল আমরা সবাই আজ পনের বছর আগের আবার একই ফ্রেমে বন্দী হয়ে যাই। এই অর্ণব তুই ও আয়।”

——-“আমি তোদের সাথে দাঁড়ালে ছবি তুলবে কে?”

——“আরে ফটোগ্রাফার আছে না। ওর হাতে তোর ক্যামেরাটা দিয়ে আয়।”

🍁
গায়ে হলুদের সব অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় রাত দেড়টার মতো বেজে গেল। সারাদিনের ধকল শেষে সবাই খুব ক্লান্ত। আর সবচেয়ে বেশি ক্লান্ত তন্ময়ের বন্ধুরা। কারণ আজকে সারাদিন তাদেরই সবচেয়ে বেশি খাটাখাটুনি করতে হয়েছে। এই একটু আগে সব কিছু গুছিয়ে রেখে ঘরে ফিরলো তারা। দু চোখ এখন ঘুমে আঁধার হয়ে আসছে সবার। তন্ময়রা ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো থমথমে পরিস্থিতি! সবাই মুখ ভার করে বসে আছে। সবার এই অবস্থা দেখে তন্ময় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

——-“কি ব্যাপার? সবাই এখানে এভাবে বসে আছো কেন? কতো রাত হয়েছে। যাও সবাই যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”

কিন্তু তার প্রতিত্তরে তন্ময় যা শুননো সে কথা শোনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তন্ময়ের মা বিলাপ করতে করতে বললো,,,,,পূর্ণতা কে নাকি কোথায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সারা বাড়িতে কোথায় না। পূর্ণতা গায়ে হলুদের স্টেজে থেকে চলে আসার পর বাড়ির আর কেউ তাকে দেখেনি।

এই কথা শুনে তন্ময় রাগী কন্ঠে বললো,
——“পূর্ণতা তো সেই কখন স্টেজে থেকে চলে এসছে। প্রায় চার-পাঁচ ঘন্টা আগে। এতোক্ষণ ধরে ওকে কোথায় পাওয়া যাচ্ছে না। আর তোমরা আমাকে এখন বলছো। এখন আমি ওকে কোথায় খুঁজবে।”

তন্ময় মা তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
——–“সেই জন্যই বলেছিলাম পূর্ণতাকে পাগলা গারদ থেকে নিয়ে আসার দরকার নেই কিন্তু তুই তো আমার কথা শুনি না। এখন ঠ্যালা সামলা।”

তন্ময় তার মায়ের কথাকে উপেক্ষা করে তার দিকেই উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিলো। তন্ময় শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
——“আচ্ছা মা? হৃদয় কোথায়?”

হঠাৎ এমন প্রশ্নে তন্ময়ের মা বেশ ভরকে গেল। সে আমতা আমতা করে বললো,
——–“আমি কি করে জানবো হৃদয় কোথায়? ওর ঘরেই আছে হয়তো।”

তন্ময় খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
——-“উহু ঘরে নেই।(হালকা হেসে) এই তিথি তুই গিয়ে দেখে আয় তো হৃদয় কোথায়।”

একটু পর তিথি এসে বললো,
——-“ভাইয়া হৃদয় ভাইয়াকেও তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।”
#পূর্ণতা🖤
#part_09
#Writer_Megla (মেঘ)

পূর্ণতার রক্তাক্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো তন্ময়। তার এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে তার বোনটা আর এই পৃথিবীতে নেই। আর কোন দিন পূর্ণতা তাকে ভাইয়া বলে ডাকবে না। আর কখনো কেউ তাকে বলবে না,,,,আমার আর একটু ও কষ্ট হচ্ছে না।আমার প্রিয় ভাইয়া আছে তো! পূর্ণতার নিথর দেহটা বুকে জড়িয়ে পাগলের মতো চিৎকার করে কাঁদছে তন্ময়। তার এখন সব কিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। এই পৃথিবীটা ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে। যে পৃথিবীতে পূর্ণতার অস্তিত্ব নেই….সে পৃথিবীরও কোন অস্তিত্ব থাকতে পারে না। না একদম না। চিৎকার করে বললো তন্ময়।

তন্ময়ের চিৎকার শুনে তিথি ব্যস্ত হয়ে বললো,
——-“কি হয়েছে ভাইয়া? তুমি এমন করছো কেন? আর কি হতে পারে না?”

তিথির কথা শুনে তন্ময় এবার তার ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে এলো। সে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো সব কিছু স্বাভাবিকই আছে। তার মানে সে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব আজেবাজে স্বপ্ন দেখছিল। আসলে এটা হয়েছে পূর্ণতাকে নিয়ে অতিরিক্ত তার ভাবনার কারণে। এমনিতেই পূর্ণতাকে নিয়ে তন্ময় সবসময় চিন্তায় চিন্তায় থাকে। কখন কে আবার তার কোন ক্ষতি করে দেয়। তার উপর এতো রাতে এখন পূর্ণতাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তন্ময়ের ক্লান্ত মস্তিষ্ক ধরেই নিয়েছিল পূর্ণতা নিশ্চয়ই কোন বিপদে পড়েছে। সেই বিপদটা যে পূর্ণতার মৃত্যুর কারণ হবে না সেই কথাটা তন্ময়ের ব্যস্ত মস্তিষ্ক এই মূহুর্তে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। তন্ময় নিজেকে যথেষ্ট সংযত করে তার পাশের সোফাটায় বসতে বসতে তিথির দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,

——-“হৃদয় কোথায় তিথি? ওকে পেলি?”

——-“না ভাইয়া হৃদয় ভাইয়াকে তো কোথাও দেখতে পেলাম না।”

তন্ময় বাঁকা হেসে বললো,
——-“তাহলে তো ল্যাঠা চুকেই গেল। দুয়ে দুয়ে চার একদম মিলে গেল।”

তন্ময়ের কথার কোন অর্থ বুঝতে না পেরে তন্ময়ের মা তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
——–“তুই কি বলছিস এসব?আর ল্যাঠা চুকে গেল মানে কি?”

——–“ওসব মানে তোমাকে বুঝতে হবে না। অনেক রাত হয়েছে যাও এখন নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো আম্মু।”

——–“ঘুমানো মানে? পূর্ণতাকে খুঁজতে হবে না? হৃদয় না হয় ছেলে মানুষ রাত বিরেতে বাইরে থাকলে ওর কিছুই হবে না কিন্তু পূর্ণতা ও তো মেয়ে! যদি ওর কিছু একটা হয়ে যায়??”

——–“বাব্বাহ্ আম্মু….হঠাৎ পূর্ণতার জন্য এতো দরদ?”বিদ্রুপের স্বরে বললো তন্ময়।

——–“কি বলতে চাইছিস তুই? আমি পূর্ণতাকে নিয়ে একটুও ভাবিনা। তাইতো?”

——-“কতো যে ভাবো সেটা তো সবসময় দেখতেই পাই।”

——-“তার মানে?”

——“কিছু না যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”

🍁
ঘুম থেকে উঠতেই তল পেটের বাম সাইডে তীব্র ব্যথা অনুভব করছে পূর্ণতা। তীব্র ব্যথার কারণে ক্রমাগত তার শ্বাস রোধ হয়ে আসছে। পূর্ণতার নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সে হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কমছে না। এরকম পেট ব্যথা তার মাঝে মাঝেই হয়। সে তার চাচী অর্থাৎ তন্ময়ের মাকে এই কথা বলছে কিন্তু তার এক জবাব,,,, এসব ব্যাথা-ট্যাথা কিছুই না। সব ঢং। যাতে কাজ করতে না হয় তার জন্য অভিনয় করেছে। শুধু আমার অর্থ ধ্বংস করার ধান্দা। ড্রয়িং রুমের দিক থেকে আসা তীব্র চেঁচামেচির আওয়াজে পূর্ণতা নড়ে চড়ে বসলো। পূর্ণতা মনে মনে বললো,,,,এটা বড় আম্মুর গলার আওয়াজ না?আবার কি হলো?বড় আম্মু এভাবে চিল্লাচ্ছে কেন? নিশ্চয়ই আমার প্রিয় ভাইয়াকে বকেছে। তন্ময়কে কেউ বকছে কথাটা ভাবতেই পূর্ণতার পেটের ব্যাথা যেন এক নিমিষেই ভালো হয়ে গেল। যে পূর্ণতা এতোক্ষণ বিছানায় উঠেই বসতে পারছিল না সে রিতিমত দৌড়ে ড্রয়িং রুমে দিকে চলে গেল। তার মাথায় এখন একটাই চিন্তা তার প্রিয় ভাইয়াকে বড় আম্মুর বকার হাত থেকে বাঁচতে হবে। পূর্ণতা ড্রয়িং রুমে এসে বেশ অবাক হলো। সেখানে তন্ময় ছাড়া আর বাকি সবাই মুখ কালো করে বসে আছে। সে ভেবেছিল হয়তো তার বড় আম্মু তার তন্ময় ভাইকে বকছে কিন্তু এখন তো দেখছে উল্টো ব্যাপার। পূর্ণতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

——-“কি হয়েছে তোমাদের? সবাই এভাবে বসে আছো কেন? সকাল কি হয়ে গেছে?”

হঠাৎ এমন প্রশ্নে সবাই পেছন দিকে তাকিয়ে দেখলো,,,, পূর্ণতা দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ণতার ফুপি তাকে দেখে উচ্ছাস্বিত কন্ঠে বললো,
——-“এই তো পূর্ণতা। এতোক্ষণ কোথায় ছিলে মা?”

পূর্ণতা বাচ্চাদের মত করে বললো,
——-“আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম। যেখানে সেখানে ঘুমালে বড় আম্মু যদি বকে তাই আমি ভালো ভাইয়ার রুমে ঘুমিয়েছিলাম। ভালো ভাইয়ার রুমে ঘুমালে তো আর কেউ আমাকে বকতে পারবে না।”

আজ পূর্ণতার চাচি পূর্ণতার এসব কথা শুনে কিছুই বলছে না। তার কারণ এখন পূর্ণতাকে কিছু বললে সবাই তাকেই খারাপ ভাববে। তাই সব কথা সে জমা করে রাখছে। সুযোগ পেলে এর শোধ একদিন সে নিশ্চয়ই তুলবে। পূর্ণতা চাচি চিন্তিত কন্ঠে বললো,

——-“পূর্ণতাকে তো খুঁজে পেলাম কিন্তু হৃদয় কোথায়? এতো রাত হয়ে গেল এখনো বাড়ি এলো না। চেনা নেই জানা নেই একটা অচেনা জায়গা। কতো আগে এসেছিল।”

পূর্ণতার চাচির এতোক্ষণ হৃদয়কে নিয়ে কোন চিন্তা না হলেও এখন বেশ চিন্তা হচ্ছে। কারণ তার ক্ষীণ ধারণা ছিল….হৃদয়ই পূর্ণতাকে কোথাও নিয়ে গেছে। সেদিন যেভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে পূর্ণতার কথা জিজ্ঞেস করছিল। তার ভাবনার মাঝেই তিথি বলে উঠলো,

——–“ঐ তো হৃদয় ভাইয়া আসছে।”

তিথির কথা শুনে সবাই সিঁড়ি দিকে তাকিয়ে দেখলো,,,, হৃদয় ছাদ থেকে নিচে নামছে। শুধু হৃদয় একা নয় তি পেছনে পেছনে তূর্য ও আছে। এতোক্ষণ তূর্যর কথা কারো মাথাই আসেনি। সেও তো অনেক্ষণ আগে স্টেজে থেকে চলে এসেছিল একটা ফোন কল করার জন্য। এতোক্ষণ ধরে কি সে শুধু ফোনেই কথা বললো? নাকি অন্য কোন কাহিনী আছে?

হৃদয় সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই তন্ময়ের মা তার দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,কি যে হৃদয় তুই এতোক্ষণ কোথায় ছিলি? আর তোকে এমন লাগছে কেন? নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ঠোঁট কেটে গেছে। হাত ছিলে গেছে। কি হয়েছে তোর?”

হৃদয় হাসার চেষ্টা করে বললো,
—–“আরে ফুপু এতো চিন্তা করছো কেন? আমার কিছুই হয়নি। তোমাদের ছাদে যা আবর্জনা। আমি আমি অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। তাই একটু ব্যাথা পাইছি।”

——-” এটা একটু ব্যাথা হলো?”

——-“একটুই তো।”

——-“হৃদয় তুই আমাকে সত্যি করে বলতো তোর কি সত্যি সত্যিই পা পিছলে পড়ে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে? নাকি এর পেছনে অন্য কোন কাহিনী আছে?”

তন্ময়ের মায়ের কথা শুনে হৃদয় বেশ ভরকে গেল। সে নিজের যথেষ্ট স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বললো,
——-“সত্যি ফুপু পা পিছলে পড়েই আমার এই অবস্থা হয়েছে।”

হৃদয় কথাটা স্বাভাবিক কন্ঠে বললেও তন্ময়ের মায়ের কাছে তা বিশ্বাস যোগ্য হচ্ছে না। তার কেন জানি মনে হচ্ছে হৃদয় তার থেকে কিছু লুকাচ্ছে।

#চলবে….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর প্লীজ একটু গঠন মূলক কমেন্ট করবেন।)
#চলবে….

(সরি বিনা নোটিশে দুই দিন ধরে গল্প না দেওয়ার জন্য। আসলে ঝড়ের কারণে আমাদের এখানে গত দুই দিন কারেন্ট ছিল না। তাই গল্প লিখতে পারিনি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এই পর্বে যদি 200+ কমেন্ট হয় তাহলে আমি আজকে আরেকটা পর্ব দেব কথা দিলাম। গঠন মূলক কমেন্ট হতে হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here