পূর্ণতা পর্ব ১১

#পূর্ণতা🖤
#part_10
#Writer_Megla (মেঘ)

হৃদয় কথাটা স্বাভাবিক কন্ঠে বললেও তন্ময়ের মায়ের কাছে তা বিশ্বাস যোগ্য হচ্ছে না। তার কেন জানি মনে হচ্ছে হৃদয় তার থেকে কিছু লুকাচ্ছে। কিন্তু কেন কিছু লুকাতে যাবে?কি এমন ঘটনা ঘটেছে যে হৃদয় সেটা তার ফুপুকে খুলে বলতে পারবে না? সে মনে মনে ভাবলো,,,,হয়তো হৃদয় সত্যিই বলছে। কিন্তু ছাদে তো কোন ময়লা-আবর্জনা থাকার কথা না। প্রতিদিনই নিয়ম করে ছাদ পরিষ্কার করা হয়। ইট টিট কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিল হয়তো। আমি মিছিমিছিই অতিরিক্ত চিন্তা করছি। সে নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো,

——–“যা হয়েছে হয়েছে। এখন আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকিস না। অনেক রাত হয়েছে। যা তোর রুমে যা। আমি তিথিকে দিয়ে তোর রুমে ঔষধ পাঠিয়ে দিচ্ছি। ঔষধটা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বি। বেশি রাত জাগা কিন্তু ভালো না বাবা। আর কালতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে নাকি?”

হৃদয় হালকা হাসার চেষ্টা করে বললো,
——–“আচ্ছা বাবা আচ্ছা। আমি যাচ্ছি। তুমি এতো চিন্তা করো না তো ফুপু।”

এই বলে হৃদয় আর এক মূহুর্ত ড্রয়িং রুমে না দাঁড়িয়ে দ্রুত বেগে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। যেন এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারলেই তার মুক্তি! তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আকাশ ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

——–“এই তূর্য সত্যি করে একটা কথা বলতো। শুধু মাত্র আছাড় খেয়েই কি হৃদয়ের এই দশা হয়েছে? নাকি অন্য কোন কাহিনী আছে?”

তূর্য বিরক্তিমাখা কন্ঠে উত্তর দিল,
——-“আমি কি করে জানবো বলতো?”

——-“না মানে তোর তো আবার অভ্যাস আছে মানুষকে রাম ক্যালান ক্যালানোর। হে হে।” সুভাষ বললো।

——–“আমি কেন শুধু শুধু হৃদয়কে মারতে যাবো বলতো? আমি তো একটু রিশার ফোনে কথা বলছিলাম।”

সুভাষ আবার বললো,
——–“একটু? কমপক্ষে দুই ঘণ্টা হইছে। তা এতোক্ষণ ধরে কি এতো প্রেমালাপ করলে মামু? আমাদের ও একটু বল। আমরাও শুনি।”(চোখ টিপে)

——-“কি শুনবি?”(ভ্রু কুঁচকে)

——-“তুই যা বলবি।”

——“অনেক রাত হয়েছে যা ঘুমিয়ে পড়।”

সুভাষ এবার বাচ্চাদের মতো করে বললো,
——–“তূর্য আমি কিন্তু সিরিয়াস। তুই যদি এখন আমাকে তোর প্রেম কাহিনী না বলিস আমি কিন্তু কান্না করে দিবো। হুঁ।”

তার মুখ ভঙ্গি দেখে তার বন্ধুরা সবাই ঠিক করে হেসে দিল। তার পর তূর্য হাসি থামিয়ে সুভাষের মতো করেই বললো,
——“আমিও কিন্তু সিরিয়াস।”

ওদের কান্ড দেখে আকাশ চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
——–“ধ্যাত্তেরি। এসব আজাইরা পেচাল বাদ দিয়ে আসল কাহিনী বলতো। এতোক্ষণ ধরে কি এতো প্রেমালাপ করলি?”

তূর্য উদাস গলায় বললো,
——-“মেয়েটা বড্ড অভিমানী বুঝলি? আমি সকাল বেলা একটু বাইরে হাঁটতে গিয়েছিলাম। তাই ওর ফোনটা তখন রিসিভ করতে পারিনি। সেই জন্য নাকি সে সারাদিন কান্নাকাটি করে সাগর বানিয়ে ফেলেছে। এখানে আসার ও নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে আবার অনেক ভেবে চিন্তে সেটা ক্যানসেল করেছে।”

অর্ণব শিস তুলে বললো,
——–“বাব্বাহ! তোর অভিমানী কন্যার প্রেম কাহিনী তো হেব্বি ইন্টারেস্টিং। ট্রায়াল দেখেই আমার কিউরিওসিটি তো তরতর করে বাড়ছে। এখন মনে হচ্ছে সারা রাত জেগে জেগে তোর প্রেম কাহিনী শুনি।”

তূর্য হালকা হেসে বললো,
——–“আমাদের কোন প্রেম কাহিনী নেই। হয়তো রিশা আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমি ওকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছাড়া কোন কিছু ভাবি না।”

তূর্যর কথা শুনে আকাশ গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
——-“ভালোবাসিস না তাহলে ওকে বিয়ে করছিস কেন?”

——–“কে বললো আমি ওকে ভালবাসি না। আমিও ওকে ভালবাসি তবে সেটা শুধু মাত্র একজন ভালো বন্ধু হিসাবে। কিন্তু রিশা আমাকে ভালোবাসে ওর প্রেমিক পুরুষ হিসাবে। ও চায় ওর ভালোবাসাটা পূর্ণতা পাক। আমাদের দুজনের গল্পটা একই ফ্রেমে বন্দী হোক। আর আমি শুধু ওর এই ইচ্ছেটা পূরণ করতে চাইছি।”

——–“গুরুগম্ভীর কথাবার্তা। যাই হোক সবাই তো কখন যে যার ঘরে চলে গেছে। শুধু আমরাই এখনো তার গাছের মতো দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় সকাল হয়ে চললো। চল এখন ঘুমিয়ে পড়ি।” অর্ণব বললো।

সবাই তার কথায় সাই দিয়ে বললো,

——–“হুঁ চল।”

🍁
বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ ওপাশ করছে হৃদয়। কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। আর ঘুম আসবেই বা কি করে? এমনিতেই তখন থেকে শরীররের বিভিন্ন জায়গায় প্রচন্ড রকম ব্যথা করছে। তার উপর এখন আবার বেশ জ্বরও এসেছে। হৃদয় শোয়া থেকে বিছানায় উঠে বসলো। এখন একটা সিগারেট ধরাতে পারলে ভালো হতো….আজকে সারাদিনে একবারও সিগারেট খাওয়ার সুযোগ পায়নি সে। কিন্তু সিগারেটের প্যাকেটাতো ছাদে ফেলে এসেছে সে। তখন সিগারেট খাওয়ার জন্য ছাদে গিয়েই তো তার এই অবস্থা হলো। সে বুঝতে পারছে না,,,,ছেলেগুলো তাকে কেন এভাবে মারলো? তারই ফুপুর বাড়িতে তারই ফুফাতো ভাইয়ের বিয়েতে কেউ তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে এভাবে মারলো এটা সত্যিই খুব অস্বাভাবিক ঘটনা। লোকগুলো কি ইচ্ছে করেই তাকে মেরেছে? নাকি It’s a mistake?
অন্য কাউকে মারতে গিয়ে ভুল করে তাকে মেরেছে। কিন্তু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটারই বা কারণ কি? মারামারি হওয়ার মতো তেমন কিছু তো সারাদিনে একবারও তার চোখে পড়েনি। হয়তো পূর্ব শত্রুতা! হৃদয় ফুস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এখন একটু ধোঁয়া গেলা এখন সত্যিই তার দরকার। তার মতো চেইন স্মোকার এতোক্ষণ সিগারেট না খেয়ে আছে এটাও রিতিমত একটা আশ্চর্য ব্যাপার। সে একবার মনে মনে ভাবলো,,,, সিগারেটের প্যাকেটটা হয়তো এখনো ছাদেই পড়ে আছে। যাই ছাদ থেকে প্যাকেটটা নিয়ে আসি কিন্তু তার সাহস হলো না। এতো রাতে ছাদে গেলে যদি আবার কিছু একটা হয়ে যায়….
হঠাৎ করেই শরীর ব্যথাটা দ্বিগুণ অনুভব করছে হৃদয়। হাতের ছিলে যাওয়া অংশে বড্ড জ্বালা পোড়া করছে। সে রুমে আসার পর পরই তার ফুপু তিথিকে দিয়ে এক পাতা প্যারাসিটামল আর একটা কাটাছেঁড়ার মলম পাঠিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু হৃদয় একটা শুধু একটা প্যারাসিটামল খেয়েই শুয়ে পড়েছিল। ভেবেছিল এতেই কাজ হবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একটা প্যারাসিটামলে তার কিছুই হবে না। সে বিছানা থেকে নেমে কাটাছেঁড়ার মলমটা লাগিয়ে আরো দুইটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিল। সাথে একটা ঘুমের ঔষধ ও খেল। যাতে একটু ঘুমাতে পারে।

🍁
বাইরে থেকে আসা প্রচন্ড রকম হৈচৈ আর শোরগোলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল পূর্ণতার। বাড়িতে অনেক আত্নীয়-স্বজন থাকায় পূর্ণতা আজ তিথির সাথেই ঘুমিয়েছিল। তূর্য আসার পর থেকে তো পূর্ণতা পারতি পক্ষে তিথির ধারে কাছেও আসেননি। যদিও ও প্রথম প্রথম পূর্ণতার খুব ভয় করছিল হয়তো তিথির সাথে ঘুমাতে এলে তিথি ওকে খুব বকবে কিন্তু তিথি তাকে তেমন কিছুই বলেনি। পূর্ণতা আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেল তিথি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনে একটা মেরুন রঙের শাড়ি। এই রঙটায় তিথিকে খুব মানিয়েছে। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। পূর্ণতা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বাচ্চাদের মত করে বললো,

———“তুমি শাড়ি পড়েছো কেন তিথি আপু?”

——–“শাড়ি পড়েছিল কেন মানে? আজকে তোর প্রিয় ভাইয়ার বিয়ে না? ওর শশুড় বাড়িতে যেতে হবে না?”

——-“তুমি সেই জন্য শাড়ি পড়েছো?”

——-“হ্যাঁ তো।”

——–“তোমাকে না আজকে খুব সুন্দর লাগছে।”

পূর্ণতার কথা শুনে তিথি তার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
———“তাই? আজকে সুন্দর লাগছে? অন্য দিন সুন্দর লাগে না?”

——–“অন্য দিনও লাগে তবে আজকে বেশি সুন্দর লাগছে।”

পূর্ণতার কথা শুনে তিথি হাসি মুখে বললো,
——-“হয়েছে হয়েছে আর আমার প্রশংসা করতে হবে না। এখন বিছানা থেকে উঠ। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। একটু পর তো আমাদের বেরুতে হবে। আয় আজ আমি তোকে সাজিয়ে দেই। ছোট বেলার যেমন সাজিয়ে দিতাম।”

তিথির কথা শুনে পূর্ণতা উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললো,
———“সত্যিই তুমি আমাকে সাজিয়ে দিবে তিথি আপু?”

———“হুঁ তো।”

তিথি পূর্ণতাকে একটা খয়েরী রঙের শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। দুচোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে শাড়ির সাথে ম্যাচ করে লিপস্টিক আর দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। এতেই পূর্ণতাকে খুব সুন্দর লাগছে। পূর্ণতার সব সাজ কমপ্লিট করে তিথি তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে বললো,
——-“আমার বনুটাকে আজ তো সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে। নজর না লাগে যেন চান্দের গায়।”

প্রতিত্তরে পূর্ণতা জিজ্ঞেস করলো,
——-“এটা কার শাড়ি তিথি আপু?”

——-“কার আবার আমার।”

——-“তুমি আমাকে তোমার শাড়ি দিয়ে দিলে?”

——–“কেন আমি তোকে দিতে পারি না বুঝি? শুধু কি তোর প্রিয় ভাইয়াই তোকে গিফট দিতে পারে? তুই তো আমারো বোন। যদিও আমি তোর সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করি তবু ও আমিও কিন্তু তোকে ভালোবাসি।”

পূর্ণতা তিথিকে বাচ্চাদের মত করে জাপটে ধরে বললো…. আমিও তোমাকে ভালোবাসি তিথি আপু। আমার প্রিয় আপু।

#চলবে….

(আজকে গল্প দিতে চাইছিলাম না তবুও দিলাম। এবার বলুন পাঠক-পাঠিকারা খুশি হয়েছেন তো?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here