প্রণয় রেখা পর্ব -০৮+৯

#প্রণয়_রেখা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৮.

সকাল সকাল মাহিয়া বায়না ধরল সে স্কুলে যাবে না, সে আজ ঘুরতে যাবে। বাবা এতদিন পর এসেছে এখন ঘুরতে না নিয়ে গেলে আবার অনেকদিনের জন্য বাসায় বন্ধী হয়ে যেতে হবে তার। কিন্তু বাবাকে যে সরাসরি গিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলবে সেই সাহসও পাচ্ছে না সে। মোহনাকে অনেকবার অনুরোধ করেছে বাবাকে বলার জন্য। কিন্তু মোহনাও বাবার ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। তাই এখন মাহিয়া তার মা’র পেছন পেছন ঘুরছে। লায়লা বেগমের মাথা সকাল থেকেই মাহিয়া নষ্ট করে ফেলছে বাবাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলার জন্য। অবশেষে শত চেষ্টার পর তার মা রাজি হলেন। রাজি না হয়েও উপায় নেই, মেয়েটা যা জ্বালাচ্ছিল..

টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। খাওয়ার মাঝখানেই হঠাৎ মাহবুব সাহেব বললেন,

‘কী ব্যাপার মাহিয়া, তুমি আজ এখনো স্কুলে যাওনি যে?’

মুখের খাবার মুখে নিয়েই ঘাপটি মেরে বসে রইল মাহিয়া। মা’কে চোখের ইশারায় বাবাকে বোঝাতে বলল। লায়লা বেগম খানিকটা নড়ে চড়ে বসলেন। নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে বললেন,

‘তুমি কি আজকে একটু ফ্রি আছো?’

‘কেন?’

গম্ভীর সুরে প্রশ্ন ছুড়লেন মাহবুব সাহেব। লায়লা বেগম আমতা আমতা করে বললেন,

‘না মানে, তুমি যদি ফ্রি থাকো তাহলে আজ একটু মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে যাবো ভাবছি।’

‘ওদের স্কুল ভার্সিটি খোলা না?’

মাহিয়া সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল,

‘না বাবা, বন্ধ।’

মোহনা আঁতকে উঠল। এ তো পুরো মুখের উপর মিথ্যে কথা। মেয়েটার কী সাহস! মাহবুব সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন,

‘আজকে আবার কীসের বন্ধ?’

‘ঐ বাবা আসলে, আমাদের স্কুলে একটা প্রোগ্রাম আছে তাই আজ আর ক্লাস হবে না।’

‘আচ্ছা। কিন্তু, মোহনার ভার্সিটি তো খোলা।’

‘না না আপুর ভার্সিটি ও অফ।’

মোহনা রাগী চোখে তাকাল। তাকে কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দিচ্ছে না। মাহিয়া চোখ পিটপিট করে মোহনাকে ইশারা দিল। মাহবুব সাহেব মোহনাকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘তোমার ভার্সিটিতে ও কি প্রোগ্রাম মোহনা?’

মোহনা হালকা হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘না, তবে আজকে আমার তেমন কোনো ইম্পরটেন্ট ক্লাস নেই। তাই আজকে ভার্সিটিতে না গেলেও চলবে।’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা, চলো না আজ একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।’

মাহবুব সাহেব অনেক ভেবে চিন্তে বললেন,

‘ঠিক আছে। খেয়ে দেয়ে রেডি হও।’

মাহিয়া খুশিতে আত্মহারা। বাবা যে এত সহজেই রাজি হয়ে যাবে সেটা সে ভাবতেই পারেনি। খুশিতে সে খাবারই গিলতে পারছে না।

মোহনা বেলকনিতে গিয়ে তার গাছগুলো দেখছে। বেশকিছু গোলাপ গাছ আছে তার। অনেক ফুল ফুটেছে সেখানে। ফুলের গাছগুলোতে পানি দিয়ে মোহনা আবার রুমে ফিরে আসে। এসে দেখে মাহিয়া অনেকগুলো ড্রেস বের করে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মোহনা তখন তাকে ধমক দিয়ে বলে,

‘এখনও এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি রেডি হো।’

‘কোন ড্রেসটা পরি বলতো?’

‘যেকোনো একটা পর না রে বাবা। এত কনফিউজড হওয়ার কী আছে?’

বোনকে বলে মোহনা আলমারি খুলে একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

মোহনা রেডি হয়ে ফোন নিয়ে বসল। দেখল এশা আর রাফাত তাকে অনেকগুলো কল দিয়েছে। সে তাদের মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিল যে সে আজ ভার্সিটিতে যাবে না। তারপর কিছুক্ষণ ফোন ঘাটল সে। একটা ব্যাপার খেয়াল করল যে কাল থেকে লরিন আর তাকে কোনো কল দেয়নি। তাকে বিরক্ত করেনি। হয়তো সে বুঝতে পেরেছে। যদিও মোহনার মনে কোথাও একটা ঠিকই খারাপ লাগা কাজ করছিল। এই কয়দিনে সে এটা বুঝেছে যে ছেলেটা আসলেই খুব সরল সোজা। ছেলেটার সাথে সত্যিই তারা অন্যায় করেছে। কিন্ত যদি ছেলেটা বিদেশি না হয়ে দেশি হতো তাহলে হয়তো মোহনা একবার হলেও ভেবে দেখতো। কিন্ত এখন ওকে নিয়ে ভাবতেও মন সায় দেয় না তার। খারাপ লাগলেও বাস্তব কে তো মেনে নিতেই হবে।

.
.

মাহিয়া মুখ গোমড়া করে হাঁটছে। মোহনা তার পেছন পেছন গিয়ে বলল,

‘কী রে, ঘুরতে এসেও মুখ এমন পেঁচার মতো করে রেখেছিস কেন?’

মাহিয়া ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে বলল,

‘বাবাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেই বাবা এই লালবাগের কেল্লাতেই নিয়ে আসে। কেন দুনিয়াতে কি ঘুরার জায়গার অভাব পড়েছে। কিছু হলেই বাড়ির কাছে এই জায়গায় হাঁটতে নিয়ে চলে আসে। এমন জানলে আমি আসতামই না।’

মাহিয়ার কথা শুনে মোহনা হেসে উঠে। মাহিয়ার মাথায় হাত রেখে বলে,

‘থাক বাবু রাগ করে না। আরেকদিন না হয় অন্য কোথাও যাবো।’

রোদের আজ বেশ তেজ। গরমে যেন সবাই তিক্ত হয়ে উঠেছে। এই রোদে কেউই তেমন ঘুরতে বের হয়না। মাহিয়ার মন একটু পরপর ফুঁসে উঠছে। অনেক হেঁটে এখন ক্লান্ত হয়ে এক জায়গায় বসে আছে সে। তার মা বাবা একটু ভেতরের দিকে। মোহনাও তার পাশে বসে আনমনে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। এই জায়গাটা নতুন নয়। দেখতে দেখতে এখন বেশ পুরোনো হয়ে গিয়েছে। তাও যে কেন তাদের বাবা তাদের এইখানেই নিয়ে আসে কে জানে। ছোটবেলায় প্রথম যখন সে এখানে এসেছিল সেইদিন যে সে কী পরিমাণ খুশি হয়েছিল সেটা বলে বোঝানো যাবে না। এই বড়ো বড়ো পুরোনো দালানগুলো তাকে বেশ আকৃষ্ট করেছিল। মনে আছে এখনও তার সেইসময়ের কথা, বাবার হাত ধরে সে পুরো মাঠ দৌড়ে ছিল। কী নিদারুণ সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো!

এদিক ওদিক দেখতে দেখতেই মোহনা দৃষ্টি হঠাৎই কিছু একটা দেখে থমকে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল সে। মানুষগুলোকে চিনতে খুব একটা ভুল হলো না তার। বিস্ময়ে সে কথা বলতে পারছে না যেন। লরিন দিশার সাথে এইখানে কী করছে? মাহিয়া বলল,

‘কী হয়েছে আপু?’

‘দেখ, ঐটা দিশা না?’

মাহিয়া মোহনার দেখানো ইশারার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘হ্যাঁ, এটা তো দিশা আপু। পাশে কে, বয়ফ্রেন্ড নাকি?’

‘না, লরিন।’

‘লরিন? মানে ঐ বিদেশি ছেলেটা?’

‘হুম।’

‘কিন্ত ও দিশা আপুর সাথে কী করছে?’

মোহনা চিন্তিত গলায় বলল,

‘আমিও তো বুঝতে পারছি না। লরিন এই সময় এখানে দিশার সাথে? ব্যাপারটা সন্দেহজনক। আচ্ছা, আবার দিশাই সেই নয়তো যে লরিনের কাছে আমার সব ইনফরমেশন দিচ্ছে?’

‘হ্যাঁ হতেও পারে।’

মোহনা তার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে তাদের কয়েকটা ছবি তুলল। তারপর সে ডায়েল নাম্বারে গিয়ে দিশার নাম্বারে কল লাগাল। প্রথম কয়েকবার দিশা কলটা কেটে দিচ্ছিল। কিন্তু মোহনার লাগাতার কলের কারণে বাধ্য হয়েই এক পর্যায়ে তাকে কলটা রিসিভ করতে হলো,

‘হ্যাঁ, বল।’

‘দিশা, কই তুই?’

‘ক-কেন? আমি তো বাসায়।’

‘আজ ভার্সিটি তে আসবি না?’

‘না রে দোস্ত। শরীর টা একটু খারাপ তাই যেতে ইচ্ছে করছে না।’

‘ওহহ তাই? শরীরটা খুব খারাপ তাই না? ইশ, শুনে খুব খারাপ লাগছে। আচ্ছা শোন, আমাদের ক্লাস তো শেষ, আমরা বরং এখন তোর বাসায় চলে আসি, কী বলিস?’

‘না না কেন? কষ্ট করে আমার বাসায় কেন আসতে যাবি?’

‘তুই না অসুস্থ, দেখবি আমাদের দেখে একদম সুস্থ হয়ে যাবি।’

দিশা ইতস্তত কন্ঠে বলল,

‘না মানে আমি ঠিক আছি। আমার তেমন কিছু হয়নি। একটু মাথা ব্যাথা শুধু। তোদের এর জন্য আর কষ্ট করে আসতে হবে না। ক্লাস শেষ হলে বাড়ি চলে যা।’

‘আচ্ছা তাহলে আসবো না। তুই রেস্ট নে। কাল দেখা হবে।’

কল কাটার পর দিশা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। আরেকটু হলেই বিশাল গন্ডগোল লাগত। সে লরিন কে বলল,

‘আমাকে এখন যেতে হবে লরিন, কাল আবার কথা হবে। এখন আসি, বাই।’

দিশা তাড়াহুড়ো করে সেখান থেকে চলে গেল। দিশা চলে যাওয়ার পর লরিন ও আর সেখানে দাঁড়াল না। সেও তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

চলবে…#প্রণয়_রেখা
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৯.

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে মোহনা তার বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। মাহিয়াকে পাঠাল দুই কাপ চা বানিয়ে আনতে। এশারের নামাজ তখন শেষ হয়েছে মাত্র। অনেক মুসল্লিরা রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। কেউ আবার এক পাশে দাঁড়িয়ে খোশগল্প করছে। সেই দৃশ্য দেখতেই দেখতেই হঠাৎ মোহনা দেখল লরিনের মতো দেখতে একটা ছেলে মাথায় টুপি দিয়ে রাস্তার সাইড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আকস্মিক এমন দৃশ্যে মোহনা আরো সতর্ক হলো। খুব গভীর মনোযোগে দেখতে লাগল ছেলেটাকে। কেন যেন মনে হলো ছেলেটা লরিন। দূর থেকে মুখটা অতটা বোঝা যাচ্ছে না। ছেলেটা মোহনার বাসা পাড় হয়ে বেশ খাটিকটা পথ চলে গিয়েছে। কিন্তু মোহনা তার উপর থেকে এখনো দৃষ্টি ফেরায়নি। আর তখনই সেই ছেলেটাও একবার ঘুরে তাকাল। দূর থেকে সে অস্পষ্ট আলোকে মোহনাকে দেখতে পেল। মোহনাও এবার বুঝতে পারল এটাই লরিন। সে নামাজ পড়েছে? তাহলে কি ও মুসলিম?

লরিন বেশিক্ষণ তাকাল না। সে তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে উল্টো পথে হাঁটা ধরে। মোহনাও আর তাকে দেখতে পায় না। লরিন চলে যাওয়ার পর মোহনা রুমে চলে আসে। ফোনটা হাতে নিয়ে সে লরিনের ফেইসবুক আইডি’টা আনব্লক করে আইডিতে ঢোকে। স্ক্রল করতে করতে তার সব পোস্ট দেখতে থাকে। বেশ কিছু পোস্ট নিচে যেতেই সে তার আগের বছরের ঈদের ছবি দেখতে পায়। তার পাশে আরো অনেক মানুষ ছিল। হয়তো সবাই তার পরিবারের লোকজন। একটা ছবিতে সে মাঝে ছিল আর পাশে দুজন বৃদ্ধ লোক ছিল; একজন মহিলা আর একজন পুরুষ। তাদের দেখেই মোহনার মাথায় প্রথম যে চিন্তাটা এল সেটা হলো, “মানুষ দুজন নিশ্চয়ই লরিনের মা বাবা।” বৃদ্ধ লোকটির সাথে লরিনের চেহারার মিল আছে। লরিনের মতো তার চেহারাটাও হালকা লম্বাটে ধরনের। আরো কিছু পোস্ট নিচে গেল সে। লরিনের আরো বেশ কিছু ছবি পেল। হয়তো বন্ধু বান্ধব নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাওয়ার ছবি।
অনেকক্ষণ মোহনা লরিনের আইডি ঘেটে দেখল। ততক্ষণে সে তার চাও শেষ করে ফেলল। একটা আশ্চর্যের জিনিস হলো লরিনের আইডি তে সে এখন অবধি তেমন কোনো মেয়ের ছবি পায়নি। এর নিচে আছে কিনা জানে না। তবে এইটুকু পর্যন্ত তেমন কোনো মেয়েকে দেখতে পায়নি সে। সব দেখে আইডি’টা আবার ব্লক করে ফোনটা পাশে রাখল। তারপর সে মাহিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘জানিস মাহিয়া, লরিন ছেলেটা না ভালো। খুব বেশি যে ভালো তা বলছি না। তবে ভালোই।’

মাহিয়া তার কাছে এগিয়ে এসে বলল,

‘খুব সুন্দর ও তাই না?’

মোহনা বিরক্ত গলায় জবাব দিল,

‘বিদেশি ছেলেরা এমনিই সুন্দর হয়।’

‘না, কে বলেছে তোমাকে? সব ছেলে সুন্দর হয় না। অনেকেরই শুধু গায়ের রঙ’টাই ধবধবে ফর্সা কিন্তু চেহারা সুন্দর না। কিন্তু লরিন যেমন ফর্সা তেমনি দেখতেও সুন্দর। আমার কাছে তো ওকে টাইটানিক ছবির জ্যাকের মতো লাগে।’

‘হয়েছে হয়েছে, এখন একটু বেশিই বলে ফেলছিস।’

‘এই আপু ও জ্যাক হলে তো তুমি ওর রোজ। বাহ, কী দারুণ ব্যাপার। এবার একটা জাহাজ পেলে আমরাও টাইটানিক চ্যাপটার টু বানিয়ে ফেলব, কেমন?’

মোহনা হেসে ফেলে বোনের কথা শুনে। মাহিয়াও তার হাসি দেখে আরো বেশি উৎসাহিত হয়। আর তার এইসব আজগুবি কথা তখন চলতেই থাকে।
.

.

পরদিন সকালে মোহনা ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে দিশা ক্লাসে বসে খাতায় কিছু লিখছে। সে দিশার পাশে গিয়ে বসে। আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,

‘তোর শরীর এখন কেমন? আগের থেকে সুস্থ আছিস তো?’

দিশা ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘আমার আবার কী হয়েছে?’

পরক্ষণেই থতমত খেয়ে বলল,

‘না মানে, কালকে একটু শরীর খারাপ ছিল তবে আজকে একদম ঠিক আছি।’

মুখে হাসি ফুটিয়ে মোহনা বলল,

‘যাক ভালো।’

মোহনা আর কথা বাড়াল না। দিশাও অন্যদিকে ফিরে ফোন দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ পর রাফাত আর এশাও চলে এল ক্লাসে। রাফাত অন্য একটা বেঞ্চে বসল। আর এশা বসল মোহনার পাশে। এশা মোহনা আর দিশাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল,

‘তোরা দুজন কাল ভার্সিটিতে আসিসনি কেন?’

দিশা মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলে,

‘আসলে আমি একটু অসুস্থ ছিলাম বলে আসিনি। কিন্তু মোহনা তো এসেছিল।’

এশা বলে,

‘কই? মোহনাও তো আসনি।’

দিশা মোহনার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘এই মোহনা তুই না বললি তুই কাল ভার্সিটিতে এসেছিস, মিথ্যে বলেছিস?’

মোহনা কিঞ্চিত হেসে বলল,

‘হু।’

দিশা তখন নাক মুখ কুঁচকে বলল,

‘কেন, এখানে মিথ্যে বলার কী ছিল?’

‘ঐ ইচ্ছে হলো আরকি। মাঝে মধ্যে একটু আধটু মিথ্যে বলা লাগে। নাহলে মানুষ তোর সব কথা সত্যি বলে ধরবে না, বুঝেছিস?’

দিশা বুঝল না। কিছুক্ষণ রাগী চোখে সে মোহনার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার ফোন টিপায় মনোযোগ দিল। এশার বোধগম্য হলো না কিছুই। সে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘কী হয়েছে?’

মোহনা মুচকি হেসে বলল,

‘কিছু না।’

দুইটা ক্লাস শেষ। তৃতীয় ক্লাসের আগে আধ ঘন্টা ব্রেক। এই আধঘন্টা মোহনা, এশা আর রাফাত তাদের ক্যান্টিনের বসে কাটায়। খাবারের মধ্যে ঐ একটা সিঙ্গাড়া আর এক কাপ চা’ই খাওয়া পড়ে তাদের।
এশা সিঙ্গাড়ায় বড়ো সড়ো এক কামড় বসিয়ে বলল,

‘এবার বল সকালের কাহিনীটা কী হলো?’

রাফাত কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,

‘কী কাহিনী?’

‘মোহনা জানে সব। এই মোহনা বল।’

মোহনা চায়ের কাপটা রেখে টেবিলের উপর দুইহাত রেখে একটু ঝুঁকে বসল। তারপর গভীর নিশ্বাস ছেড়ে সব ঘটনা তাদের বলতে আরম্ভ করল। সবশুনে এশার খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর রাফাত চটে গিয়ে বলে,

‘হেতির হাবভাব প্রথম থেকেই সন্দেহজনক ছিল। শালী হেতির ভোলাচন্দ্র কে রেখে এখন আবার এই বিদেশির পেছনে পড়ল কেন?’

‘কী জানি? আমিও তো তাই ভাবছি।’

এশা গটগট করে পানি গিলে বলল,

‘আরে মাইয়ার স্বভাবই এমন। সুন্দর পোলা দেখলেই মনের ভেতর কাতুকুতু দিয়ে উঠে।’

রাফাত বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,

‘মনের ভেতরে আবার কাতুকুতু কেমনে দেয়?’

‘এইসব তুই বুঝবি না। তুই বরং এক কাজ কর, কিছুদিন দিশার উপর নজর রাখ। যদি ওই সেই ব্যক্তি হয়, তবে ওকে আমরা কঠিন শাস্তি দিব।’

‘তোর এইসব কঠিন শাস্তি আমার ভালো করেই জানা আছে। শাস্তির নামে সারাবছরের এসাইনমেন্ট ওকে দিয়ে করাবি। ফাঁকিবাজ কোথাকার।’

এশা ভাব নিয়ে বলল,

‘না, এবার এর থেকেও কঠিন শাস্তি হবে। এসাইনমেন্টের সাথে সাথে প্রেজেন্টেশনের স্লাইডগুলোও ওকে দিয়েই তৈরি করাবো, ভালো আইডিয়া না?’

কেউ আর তার এই প্রশ্নের জবাব দেয় না। এশা তখন গাল ফুলিয়ে বসে আরেকটা সিঙ্গাড়াতে কামড় বসায়।

_________________

ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে মোহনা এশাকে নিয়ে একটা সুপার শপে যায়। কিছু কেনা কাটা করতে না, একটু এ.সি র বাতাস খেতে। তবে সেখানে গিয়ে এটা ওটা দেখতে দেখতে এক জোড়া ঝুমকা মোহনার খুব পছন্দ হয়ে যায়। কুন্দনের উপর কাজ করা বেশ বড়ো আর ভারি ছিল ঝুমকা গুলো। দাম বলেছিল এক হাজার দুইশত টাকা। দাম শুনে কেনার ইচ্ছা মোহনার ফুঁস হয়ে গেল। এই টাকা দিয়ে সে সুন্দর একটা জামা কিনে ফেলতে পারবে। এত টাকা দিয়ে ঝুমকা কিনে পরা আর টাকাকে পানিতে ফেলে দেওয়া একই কথা। সে এশাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। হেঁটে হেঁটেই বাড়ি ফিরছিল দুজন। এশার বাড়ি আগে পড়াতে সে বাড়িতে চলে যায়। বাকি রাস্তা মোহনাকে একা যেতে হবে। আর কিছুটা পথ সামনে যেতেই কোথ থেকে যেন একটা বাচ্চা ছেলে তার কাছে দৌড়ে আসে। একটা প্যাকেট মোহনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

‘আপু, নিন।’

মোহনা প্যাকেট টা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘কী এটা?’

কিন্তু ছেলেটা কিছু না বলেই এত জোরে দৌড়ে পালাল যে মোহনা আর তার হদিশ’ই পেল না। সে রাস্তার মাঝে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কেবল সেই প্যাকেটটাই দেখতে লাগল আর ভাবতে লাগল, এটা কে পাঠিয়েছে।

চলবে…

(আপনাদের রেসপন্স দেখে আমি হতাশ🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here