প্রণয়স্পর্শী পর্ব ২০+২১

#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#বিংশ_পর্ব

— ” আমার বউ যেখানে বসবে আমিও তো সেখানেই বসবো তাই না মিস না না মিস নয় মিসেস হুম মিসেস মেঘলা এহসান৷ ❞
হঠাৎ শোভনের এমন ব্যবহারে ভিতরটা নরে উঠলো মেঘলার বেহায়া মন যেন ছুটে যাবে এখনি আর আবেগ গুলো উপচে পরবে৷ কি করছে শোভন? এ কোন শোভনকে দেখছে? এমন অস্বাভাবিক আচরন এর মানে কি? কি চায় এ লোকটা? মেঘলাকে একেবারে দূর্বল করে দিতে চায়? যাতে করে আরো বেশি কষ্ট দিতে পারে? দূর্বলতার সু্যোগ নিয়ে আরো কষ্ট দিবে? না এখন নিজেকে কঠর রাখতেই হবে শোভনের এমন ব্যাবহারে গললে চলবে না৷
মেঘলা কোমড় থেকে শোভনের হাতটা ছাড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” এসবের মানে কি স্যার? এমন অসভ্যতামো করছেন কেন? ছাড়ুন আমায়৷ ”
শোভন শুনলো না মেঘলার কথা বরং আরো চেপে বসে কোমরটা শক্ত করে ধরে কানের সামনে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
— ” আমাকে অসভ্য বানিয়ে দিয়ে অসভ্যতামো সহ্য করবে না তা কি করে হয় বলো তো সুন্দরী? আমায় নিজের মায়ায় ফাসিয়ে অসভ্য যখন বানিয়েছো এর দায় ভার ও তো তোমারই নিতে হবে তাই না বউউউ৷ ”
কেঁপে উঠে মেঘলা এবার শোভনের মুখে “বউ” শব্দটা ওকে আরো দূর্বল করে দিচ্ছে, আচ্ছা হঠাৎ শোভনের কি হলো এমন করছে কেন? শোভন তো মেঘলাকে সহ্যই করতে পারে না তবে এসব এর মানে কি?
মেঘলার অসহ্য লাগছে সব কি হচ্ছে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কি হলো শোভনের৷
মেঘলা নড়ে চরে বসে রাগী কন্ঠে বলে,
— ” হোয়াট? কে আপনার বউ? ”
শোভন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
— ” তুমি বোধহয় ভুলে গেছো আমাদের বিয়ে হয়েছে আরো দু’মাস আগেই৷ ”
শোভনের এমন কথা শুনে বিস্ময় চোখে তাকায় শোভনের দিকে পরক্ষনে কোমর থেকে ছিটকে শোভনের হাতটা সরিয়ে উঠে দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” হোয়াট? কিসের বিয়ে? এটা কে বিয়ে বলে? না৷ এ বিয়ে মানি না আমি দূরে থাকুন আমার থেকে৷ ”
বলে উঠে আহানার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে মেঘলার এটা কি খেলনা নাকি? যখন ইচ্ছে হবে বলবে আমি বিয়ে মানি না আমায় ফাসিয়ে বিয়ে করেছো আবার যখন ইচ্ছে হবে বলবে তুমি আমার বউ৷ কি চাইছে টা কি? আবার এমন ভালো ব্যবহার করে নিজের উপর বিশ্বাস আনিয়ে অপমান করে কষ্ট দিতে? না এটা কখনো আর হবে না, যে বিয়েটার কোনো সময় মূল্যই ছিলো না আজ হঠাৎ বউ বউ করছে কেন?
মেঘলাকে এমন রেগে থাকতে দেখে আহানা বলে,
— ” কি হয়েছে তোর এমন করছিস কেন? ”
মেঘলা আড়ষ্ঠ হয়ে শোভনের দিকে তাকিয়ে আহানাকে বলে,
— ” উনি এখানে কি করে এলেন? আর কেন এসেছেন? ”
আহানা জানতো এমন কিছুই হবে তাই দুরে এসে দাড়িয়ে ছিলো৷
আহানা আমতা আমতা করে বলে,
— ” আমি ওকে বলিনি ও কিভাবে এখানে আসলো তাও জানি না৷ ”
শোভন এসে মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে বাকা হাসি দিয়ে বলে,
— ” আরে রেগে যাচ্ছো কেন? বউ যেখানে হাসবেন্ড তো সেখানেই থাকবে তাই না? আমি কি আমার সুন্দরী বাচ্চা বউকে একা ছেড়ে দিতে পারি? ”
শোভনের এহেন ঠোঁট কাটা কথা বার্তা শুনে মেঘলা আহানার দিকে তাকায়, আহানা বিয়ের ব্যাপারটা জানতো না কিন্তু আহানাকে দেখে স্বাভাবিক-ই লাগছে চেহারায় কোনো বিস্ময় ভাব নেই৷
মেঘলা কিছু বলবে এর আগে আহানা কিঞ্চিত ঠোঁট চেপে হেসে বলে,
— ” তুই তোর বউকে সামলা আমি একটু আশ-পাশটা ঘুরে আসছি৷ ”
বলেই আহানা চলে গেলো৷ আহানার এমন কথায় মেঘলা অবাক হয়ে আহানার যাওয়ার দিকে তাকায় পরক্ষনে রাগ দেখিয়ে আহানার পিছু পিছু যাবে এর আগেই শোভন হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেশাক্ত কন্ঠে বলে,
— ” এমন করছো কেন? আগে তো এমন করতে না তুমি জানো তোমার ইগনোর গুলো কতটা পোড়াচ্ছে আমায়? এমন করে ভস্ম না করলেও পারতে আমাকে, নিজের মায়ায় ফেলে এখন আমাকে ইগনোর করা হচ্ছে? কেন এমন করছো? আমি যে আর আমার মধ্যেই থাকতে পারছিনা আমার বুকের বা পাশটা জুড়েই তোমার বিচরন, আমি জানি আমি এতোদিন অনেক বাজে ব্যাবহার করেছি তোমার সাথে তার জন্য দুঃখিত৷ এখন আমার তোমাকে চাই খুব করে চাই৷ ”
শোভনের এমন কথায় মেঘলা তাচ্ছিল্য হাসলো, যখন ও শোভনকে ভালোবাসতো তখন অপমান ছাড়া কি পেয়েছিলো? বিয়েটাকেও তাচ্ছিল্য ভাবে দেখেছিলো শোভন৷ এ ও বলেছে ও একটা উটকো ঝামেলা ফাসিয়ে বিয়ে করেছে৷ এখন সেই মানুষটাই তার অনুভূতির কথায় মেঘলাকে বলছে? মানবে না মেঘলা কেন মানবে? কম তো অপমান করেনি, দাম ও দেয় নি মিডলক্লাস মেয়ে বলেও অপমান করেছে৷
মেঘলা তাচ্ছিল্য কন্ঠে বলে,
— ” আমার মতো মিডলক্লাস মেয়ে আপনার সাথে যায় না স্যার, আর এসব আমাকে বলবেন না৷ এ বিয়েটা মানি না আমি আর না মানি আপনাকে৷ আগেই বলেছি দূরে থাকুন আমার থেকে৷ ”
বলে চলে যেতে নিলেই হঠাৎ শোভন সেই অনাকাঙ্ক্ষিত কথাটি বলে যা শোভন কেন কারো জানারই কথা না,
— ” তুমি তো আমায় ভালোবাসো তবুও কেন এমন করছো?”
শোভনের কথায় কেঁপে উঠলো মেঘলা কি বলছে শোভন? ও কি করে জানলো? ও তো কাউকে বলেও নি এমন কি আহানাকেও না তাহলে?
মেঘলা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
— ” কে বললো এসব আপনাকে? আর কিসের ভালোবাসা? আমি কাউকে ভালোবাসি না আর আপনাকে? উহুম প্রশ্নই উঠে না৷ ”
মেঘলার কথায় শব্দ করে হাসলো শোভন তাতে মেঘলা আরো ঘাবড়ে যায়৷
শোভন মেঘলার মুখো-মুখি দাঁড়িয়ে বলে,
— ” তুমি আমায় ভালোবাসো আমি জানি, আর তোমায় ডাইরিতে নিজে লিখে রেখেছো আমি পড়েছি সে-দিন, তোমার সেন্স ফিরছিলো না তাই আমি ওখানেই বসে ছিলাম তোমার ঘরে আর তখনই তোমার টেবিলের উপর ডাইরিটা পাই আমি৷ ”
মেঘলা ডাইরির কথা শুনে আরো ঘাবড়ে গেলো, তাহলে কি শোভন সব পরেছে? ডাইরিতে সে গুলো ছাড়াও আরো অনেক কিছু লিখা ছিলো ওইগুলো পরেছে?
মেঘলা আমতা আমতা করে বলে,
— ” কিসের ডাইরি? মিথ্যে বলছেন কেন?”
মেঘলার কথা শেষ হতেই শোভন গিয়ে ওর গাড়ি থেকে আকাশি রং এর কভার পেজ ওয়ালা একটা ডাইরি নিয়ে আসলো৷ মেঘলা ডাইরিটা দেখে একটু স্বস্থি পেল এটা নতুন ডাইরিটা যার মাঝে সব শোভনকে নিয়েই লেখা৷
শোভন ডাইরির মাঝের পাতা খুলে দেখিয়ে বলে,
— ” এগুলো মিথ্যে?”
মেঘলা ছো মেরে ডাইরিটা নিয়ে কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে,
— ” না মিথ্যে না, হ্যাঁ আপনাকে ভালোবাসতাম৷ কি হয়েছে তাতে? এখন ভালোবাসি না, যা ছিলো এক পাক্ষিক ছিলো কি পেয়েছি আমি? অপমান আর অবহেলা৷ কেন আপনাকে ভালোবেসে নিজের সম্মান নষ্ট করতে যাবো? ও এই ডাইরি পরে দয়া করে আমাকে নিজের বউ বউ বলছেন? প্রয়োজন নেই আপনাকে আমার চলে যাবো আমি, কোনো পেপার টেপার মানি না দেখি আপনি আমায় কি করতে পারেন৷ এসব অনুভূতি আমার কাছে মরিচিকা একটা আবেগে ভাসছিলাম মোহ-তে পরেছিলাম ভালোবাসা ছিলো কিনা জানি না৷ ভালোবাসি না আপনাকে শুনেছেন? ভালোবাসি না৷ ”
বলে ডাইরিটা ছুড়ে গিয়ে নদীতে ফেলে দেয় আর সাথে সাথেই গালে ঠাস করে থাপ্পড় পরে৷
শোভন দিয়েছে চোখ লাল হয়ে আছে বোঝায় যাচ্ছে খুব রেগে আছে কিন্তু সে দিকে তোয়াক্কা করলো না মেঘলা ও নিজেও রেগে আছে৷ দয়া দেখাতে এসেছে ডাইরি পড়ে? দয়া প্রয়োজন নেই আর লোকটাকে তো না-ই শোভনকে সহ্য হচ্ছে না মেঘলার৷ আবার আরেক গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মেঘলার মাথা ঘুড়ে যায় এবার তবুও দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়ায়৷
শোভন হাত ধরে নিজের কাছে এনে গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
— ” সাহস বেড়েছে অনেক তাই না? কিছু বলছিনা তাই যা খুশি বলছো? ওটা ফেললে কেন? আর কি বললে? চলে যাবে? এতোই সোজা? নিজের প্রণয়স্পর্শী হয়ে আমায় প্রনয়ে আসক্ত করেছো তুমি তোমার শাস্তি কঠিনতম দিবো আমি, আমার প্রণয়ে প্রণয়স্পর্শী করবো তোমায় আবার৷ নিজের জাদুতে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে নিজেই পালাচ্ছো? তবে শুনে রাখো সেগুরে বালি, তুমি চাইলেও তুমি আমার তুমি না চাইলেও তুমি আমার৷ শুনে রাখো মেয়ে আরেকদিন যদি যাওয়ার কথা বলো ঠ্যাং ভেঙে রেখে দিবো৷ তুমি আমায় ভালোবাসো আর নাই বাসো আমাকে তোমার চাই বা না চাই৷ কিন্তু তোমাকে আমার প্রয়োজন আমি তোমাকে চাই তাতে তোমার মত থাকুক বা নাই থাকুক,
প্রণয়স্পর্শী হয়ে আমার মনের আঙিনায় এসে নিজের নেশায় আমাকে আসক্ত করে দূরে চলে যাবে? তা তো হবে না আমি আবার মত্ত হবো তোমার নেশায় এবার সর্ব-কালের জন্য তা তুমি চাও বা না চাও৷ ”
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#একবিংশ_পর্ব

চারোদিকে আধার ঘেড়া পরিবেশ না খুব একটা আধার নয় এ যে আলো আধারের মিলে মিশে একাকার হওয়া পরিবেশ৷ রাত হয়েছে বেশ খানেকক্ষন আগে এখন ঘড়িতে আট-টা দশ বাজে৷ আকাশে আজ মস্ত চাঁদ উঠেছে আর এর চার-পাশ ঘিরে আছে গুটি গুটি ঝমকালো চকচকে হিরের ন্যায় তারা৷ আজও জ্যোৎস্নায় ঘেরা আকাশ, চাঁদ এর আলোটা নদীর স্বচ্ছ পানিতে পরে ঝলমল করছে নদীটা৷
একেবারে শেষ সিড়িতে পা ভিজিয়ে আনমনে বসে আছে মেঘলা, পাশে পা উঠিয়ে বসে আছে আহানা এর একটু দূরে মোটা একটা আম গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মেঘলার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে শোভন৷
আশে পাশে পিনপতন নিরবতা মনে হচ্ছে কিছুক্ষন আগেই কোনো একটা ঝড় বয়ে গেছে আর ঝড়ের পর চারোদিক যেমন নিস্থব্দ হয়ে যায় তেমন হয়ে গেছে৷ আজ মেঘলা শোভনকে অনেক কথায় শুনিয়েছে বিনিময়ে অনেক ধমকও খেতে হয়েছে৷
হঠাৎ-ই নিরবতায় ফোরন কেটে নদীর পাড় থেকে কিছুটা দূর চায়ের টং থেকে আবছা গানের স্বর ভেসে আসছে৷

তাকে অল্প কাছে ডাকছি
আর আগলে আগলে রাখছি
তবু অল্পেই হারাচ্ছি আবার

তাকে ছোঁবো ছোঁবো ভাবছি
আর ছুঁয়েই পালাচ্ছি
ফের তাকেই ছুঁতে যাচ্ছি আবার

অভিমান পিছু নাও
তাকে পিছু ফেরাও
তার কানে না যায় পিছু ডাক
আমার মুখ বুজেই তাকে ডাকছি আবার

অন্যদিকে মন থাকলেও গানটা কানে ভেসে আসতেই আড় চোখে শোভন এর দিকে পরখ করে চোখ ফিড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো৷ কিছু ভাবছিলো মেঘলা এতোক্ষন,শোভনের হঠাৎ পালটে যাওয়াটা কেমন যেন লাগলো তবুও যেমনই করুক শোভন ওর সামনে গলবে না, কিছুতে না৷ নিজেকে শক্ত রাখতে হবে আচ্ছা যতটা শক্ত রাখার চেষ্টা করছে আদৌ কি মেঘলা পারবে তা?
এতোই সহজ? চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষটা এমন পাগলামো করবে মন কি এমন কঠিনই থাকবে?
নিজেকে কি আদৌ ঠিক রাখতে পারবে?
বেহায়া মন যে ছুটে গিয়ে শোভনের ডাকে সারা দিতে চায় কিন্তু না ও দেবে না সারা কেন দিবে? কম তো কষ্ট দেয়নি৷ মেঘলা নিজেই স্থির করলো ভিতরটা যদি ভেঙে চুড়মারও হয়ে যায় তবুও সে বাইরে দিয়ে মচকাবে না, শোভনের সামনে আর নিজেকে দূর্বল রাখবে না৷ মানুষ দূর্বল মানুষকেই বেশি কষ্ট দেয়৷ এতোদিন অনেক কষ্ট পেয়েছে আজ শোভন ওর ডাইরি পরে ভালোবাসা নামক সিমপ্যাথি দেখাচ্ছে কাল আবার ওর স্বার্থে আঘাত লাগলে অপমান করবে না তার নিশ্চয়তা আছে?
এক পাক্ষিক ভালোবাসায় কষ্ট ছাড়া আর কিছুই হয়তো পাওয়ার থাকে না? জীবনটা-ই বিষাদ ঘেরা আলোর রেশ দেখাই যায় না, আচ্ছা এমন ওর সাথেই হয় কেন?
হঠাৎ মেঘলার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে শোভন শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” পানি থেকে পা উঠাও ঠান্ডা লেগে যাবে৷ ”
শোভন এর এমন কেয়ারিং কথা বার্তা শুনে হাসলো আহানা, আজ ওর সত্যি শান্তি শান্তি লাগছে৷ শোভন যে দিন জেনেছে মেঘলা ওকে ভালোবাসে প্রথম অনেক রাগ হয়েছিলো পরক্ষনে প্রতিদিন ওর ডাইরির বাচ্চা বাচ্চা কথা গুলো পরে ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পরে,মেঘলা ইগনোর করায় ব্যাপারটাতেও আরো বেশি জড়িয়ে পরে অতঃপর সবটা আহানাকে জানায় এমন কি বিয়ের কথাও৷ বিয়ের কথা শুনে আহানা বেশ অবাক হয়েছিলো সাথে রাগও করেছিলো যে দু’দুটো মাস মেঘলাও এক সাথে থেকেছে অথচ মেঘলা কিছুই বলেনি আর শোভনও কিছু বলেনি পরক্ষনে শোভন বুঝিয়ে বলায় রাগ কমেছিলো৷
কিন্তু বিয়ের কথাটা শুনে আহানার বেশ আনন্দ লাগছিলো কারন ও সব সময় এটাই চেয়ে ছিলো যে সাপে নেওলে যুদ্ধ ছেড়ে কোনো পরিণয় ঘটুক৷
কি অদ্ভুত আল্লাহর লিলা খেলা ভাগ্যে হঠাৎই ওদের মিলিয়ে দিল কাকতালীয় ভাবে বিয়েটা থেকে শুরু করে মেঘলার শোভনের সহকারী নার্স হিসেবে জয়েন করা পর্যন্ত সব আহার কাছে একটা ইন্টারেস্টিং মুভির মত লেগেছে৷

— ” কথা কি কানে যায় না?
পা উঠিয়ে বসো নয়তো চলো বাড়ি যাবো৷ ”
শোভনের কর্কশ কন্ঠে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে আহানা৷ মেঘলা উত্তর না দিয়ে পা তুলে বসলো ও আর শোভনের সাথে কথা বলবে না ও কঠর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যা ভেবে রেখেছে তা করার আগ পর্যন্ত চুপই থাকবে কোনো কথা বলবে না৷ এতোদিন ওকে এতো এতো ভাবে কষ্ট দিয়ে এখন দয়া দেখাতে এসেছে যে ওকে ছোট করেছে প্রথম থেকেই কথা বলা উচিত ছিলো না ওর ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার শোভনের নেই৷৷
আর সময় তো কথা বলে মাথা খেয়ে নেয় ধমক দিলেই পুরো ঝেকে ধরে আজ এই মেয়ে কথা বলছে না কেন?
শোভনের রাগ হলো আর সময় হলে মেঘলার মৌনতাও পছন্দ করতো কিন্তু আজ ওর মৌনতা একদম ভালো লাগছে না শোভনের৷ মেঘলার দিকে তাকিয়ে দেখে কিছু একটা গভীর ভাবে ভাবছে আচ্ছা এই মেয়ের মাথায় কিছু চলছে নাকি?
নয়তো এই মেঘলা তো চুপ করে থাকার মেয়ে-ই নয়, কি ঘুরছে এর মাথায়?
ভালো কিছু তো নিশ্চয়ই ঘুরছে না সব সময় তো শোভনকে কিভাবে জ্বালাবে তাই ভাবে৷
সবার মাঝেই আবার নিরবতা বিরাজ করছে, পানির আওয়াজে পরিবেশটা মনো-মুগ্ধকর লাগছে নদীর পাড়ের কিছুটা দূর অনেক গুলো বাঁশ গাছ সেখান থেকে কয়েকটা ঝি ঝি পোকার ডাক কানে ভেসে আসছে৷
আহানার আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না তাই উঠে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখে মেঘলাকে বললো,
— ” এই মেঘলা যাবি না?
ন-টা বেজে গেছে এখন না বের হলে যেতে যেতে বারোটা বেজে যাবে৷ ”
মেঘলা উত্তর দিলো না এবারো সে তো গভীর চিন্তায় মগ্ন কিছু নিয়ে৷ শোভন অবাক হলো কি হলো মেয়েটার এতোক্ষন চেচিয়ে ঝগড়া করে এখন আবার নিশ্চুপ হয়ে গেলো?
হঠাৎ-ই সবুজ ঘাস গুলোর উপর কোত্থেকে একটা ডাহুক পাখি এসে ডানা ঝাপটে দাড়ালো৷
ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ পেয়ে পিছনে ঘুরলো মেঘলা, ডাহুকটা আপন মনে কিছু খুজছে আর ডাকছে তা দেখে অজান্তে হাসলো মেঘলা অনেকদিন পর এ পাখি দেখলো৷ শহরে-র দিকে এ পাখি খুব একটা দেখা যায় না তবে গ্রামে শরৎ এলেই ডাহুকের দেখা মিলে৷
শোভন মুগ্ধ নয়নে মেঘলার নজর কাড়া হাসির দিকে তাকালো, হাসলে মেয়েটাকে এতো সুন্দর লাগে?
কই আগে তো খেয়াল করেনি, নাকি খেয়াল করলেও পাত্তা দেয় নি? হিমেল বাতাসে অবাধ্য চুল গুলো মুখের কাছে লেপ্টে গেলো উষ্টো যুগল এর ওই সুন্দর হাসিটাও ঢেকে দিলো৷ কিঞ্চিত বিরক্ত হলো শোভন চুল-গুলোর উপর, কেন ওর প্রেয়সীর মুখ ছুয়ে দিবে? কেন ওই নজর কাড়া হাসিটা ওর চোখ থেকে আড়াল করে দিলো চুল গুলো? ঘোর অন্যায় করলো, ওর প্রেয়সীকে ছোয়ার অধিকার শুধু ওর৷ শোভনের মনে হচ্ছে চুল গুলো ঘোর অন্যায় করলো যার শাস্তি কঠিন হওয়া উচিত৷
নিজের কান্ডে নিজেই হাসলো শোভন, মাথাটা আজ কাল একে বাড়েই গেছে মস্তিষ্ক মন সবই গেছে৷ আজ-কাল ওর মন মস্তিষ্কে তো ওই মেয়েটাই দখল করে নিয়েছে সব কিছু ওর আর থাকছে কই? মেয়েটা ওকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে নাকি? ভেতর বাহির পুরোটাই নিয়ে নিস্তেজ করে দিয়েছে ওকে, ক্ষনে ক্ষনে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে এই মেয়ে কি সে খেয়াল রাখে?
শোভন হেসে মিনমিনিয়ে বলে,
— ” আমার ভিতর ও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুরে৷ ”

চলবে,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here